এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মাঘ-মণ্ডল ব্রত

    সবিতা সেন
    ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • মাঘ মাসের শীতের রাত – কুয়াশা আর কাঁপুনিতে, ভোর যেন হতেই চায় না। এর মধ্যে পাঁচটা তন্বী মেয়ে, এ বাড়ী ও বাড়ী থেকে ডাকাডাকি করে, একসঙ্গে হয়ে নদীর ধারে এলো। মৃদু আলোর আভাস আকাশে। নদীর জল কালো, ঠাণ্ডা, স্থির। অবিবাহিতা, বিবাহ উন্মুখ মেয়েগুলি একসঙ্গে হয়েছে – মাঘ মণ্ডল ব্রত করবে বলে। ঠাণ্ডায় গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এক ছিটে তেল হাতে, গলায় মুখে আলতো করে মেখে নিলো – ব্রতের স্নানে তো সাবান চলবে না।

    ঠাণ্ডা কালো জলে, সব কটি মেয়ে এক সাথে নামলো – ঝুপ ঝুপ করে তিনটি ডুব দিয়ে গলা জলে দাঁড়িয়ে, কাঁপতে কাঁপতে একসঙ্গে বলে উঠলো ব্রতের মন্ত্র – ‘‘উঠ উঠ সূরজ ঠাকুর ঝিকিমিকি দিয়া।’’ সূরজ ঠাকুরও লক্ষীছেলের মতো একটু একটু আলো ছড়াতে শুরু করলো। ভেজা কাপড়েই পাট কাঠির গোছাতে আগুন ধরিয়ে গোল হয়ে ওরা বসলো আগুন পোয়াতে। শুরু করলো ব্রতের যতো গান। চারদিক আলোকিত করে সূর্য্য একটু একটু ওপরে উঠতে লাগলো। নরম আলোয় চারদিক স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এবার বাড়ী ফেরার পালা। পাট কাঠির আগুনটা জল দিয়ে নিভিয়ে আবার গান গাইতে গাইতে বাড়ীর দিকে রওনা হলো মেয়েগুলো। এই ব্রত পালনের প্রস্তুতির মেয়াদ একমাস। পুরো মাঘ মাসের প্রতিটি দিন একই ভাবে পালন করতে হবে। মাঘ মাসের সংক্রান্তির দিনে হবে ব্রত উদযাপন – ঘটা করে সূর্য্য বন্দনার পুজো।

    প্রস্তুতির একমাস ধরে সূর্য্যবন্দনার পাশাপাশি, মেয়েরা আরও একটা কাজ করতো। মাঘ মাসের শেষ দিনে, যেদিন পুজো হবে, সমস্ত উঠোন জুড়ে হবে আলপনা আর ছবি আঁকা। সবাই আঁকবে যার যার ইচ্ছে মতো। কেউ হয়তে বেলপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে তৈরী করে সবুজ গুঁড়ো রঙ, কেউবা হলুদ গুঁড়িয়ে হলুদ রঙ, কেউবা শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো করে লাল রঙ বানায়। পাউডারের সঙ্গে, কাপড়ে দেবার নীল মিশিয়ে আকাশী রঙ। কাঠ কয়লা গুঁড়ো করে কালো রঙ, অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়িয়ে হয় ঘন নীল। সারা মাস ধরে এই ভাবে আলপনার প্রস্তুতি চলে।

    পরের দিন একই ভাবে মেয়েদের সূর্য্যবন্দনা, গান আর ঠাণ্ডা কালো জলে স্নান – তার পর আগুন পুইয়ে, গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফেরা। হঠাৎ অনিমা গান থামিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘‘আচ্ছা, কেতকীর কি হলো বলতো? ও কেন নাইতে আসছে না? এই ব্রত তো মাঝপথে বন্ধ করা যায় না।’’
    কেতকীর বাড়ী আমবাগান পার হয়ে। আমবাগানটা বড্ড অন্ধকার আর নির্জন। তাই মেয়েরা ওর বাড়ী পর্য্যন্ত যায় না। কেতকী নিজেই চলে আসে। গত সাতদিন ধরে ওতো আসছে না। অসুখ বিসুখ হোলো কিনা কে জানে!

    কেতকীর বাড়ীর কাছে তরু আর গণেশ জেলে, ওদের আট বছরের ছেলেকে নিয়ে একটা সুন্দর মাটির ঘরে থাকে। খড়ের ছাউনি, উঠোনে গাঁদা ফুলের মেলা। তরুর খুব গাছের সখ। তুলসী মঞ্চের চারদিক ঘিরে ফুলে ভরা টগর গাছ। সিঁড়ির পাশে সন্ধ্যা মালতী। সেই সুবাস সন্ধ্যার ধূনোর গন্ধর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। এতো সুন্দর পরিবেশে বাস করেও একজন মানুষের হৃদয় পাপে পরিপূর্ণ। সে হচ্ছে গণেশ। নিজের সাজানো সংসারেও তৃপ্ত নয়। ও চায়, কাছের বাড়ীর সুন্দরী মেয়ে কেতকীকে। খালি ছোঁক ছোঁক করে কেতকীর বাড়ীর আশপাশে।
    কেতকী ভোর রাত্রে বাড়ীর থেকে বের হয়, নদীর ঘাটে যাবে বলে। কেতকীর সঙ্গে দেখা হয় গণেশের। অনেকক্ষণ গল্প করে তারপর টিউবওয়েলের জলে গা মাথা ভিজিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। কেতকীর বৃদ্ধ বাবা মা বুঝতেই পারে না কি ঘটছে। ওর বন্ধুরা স্নানের ঘাটে ওকে নিয়ে নিষ্ফল আলোচনা করে। তারপর একদিন কেতকী আর কলের জলে গা ভিজিয়ে বাড়ী ফিরলো না। বেলা বাড়লো, দিন গড়িয়ে রাত হলো, কেতকী ফিরলো না। পরের দিনও না। আর কোন দিন এলো না ফিরে। বৃদ্ধ বাবা মায়ের কান্নায় চারদিক উথাল পাথাল হয়ে উঠলো।

    দুদিন বাদের মেয়েরা নদীতে অন্ধকার জলে চান করতে নেমেছে, পায়ে জলঝাঁজির মতো কি যেন লাগলো। না জলঝাঁজি তো নয়! এ তো মানুষের মাথার চুল মনে হচ্ছে। চিৎকার, ভয়, হাত ধরাধরি করে মেয়েগুলো জল থেকে উঠে এলো। আগুন পোয়ানো মাথায় উঠলো। ওদের মনে পড়লো, কেতকীর মাথার চুল ছিলো খুব লম্বা।
    পুলিশ এলো, কেতকীকে জল থেকে ওঠানো হলো। জলে ফোলা সাদা চেহারা – কেতকীকে কেতকী বলে সনাক্ত করা গেলো ওর হাতের 'K' লেখা আংটিটা দেখে। মৃত - শরীরের অনেক জায়গায় মাংস খুবলে নেবার ক্ষত। গ্রামের মোড়ল গামছায় নাক চাপা দিয়ে কাছে এসে দেখে বললো, - ‘‘নদীর বড় বড় বোয়াল মাছগুলো বড্ড মড়াখেকো হয়।’’
    পুলিশ মৃত কেতকীকে নিয়ে গেলো পোষ্টমর্টেমের জন্য – তাতে জানা গেলো মেয়েটিকে কেউ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জলে ফেলে দিয়েছিলো। নদীর ঢেউএর টানে দেহটি ঘাটের কাছে চলে আসে।

    মৃত্যুর অমোঘ অঙ্গুলি হেলনে বন্ধ হলো ব্রতপালন। শোক এবং আতঙ্ক ঘিরে রইলো গ্রামটিকে। কিন্তু গণেশকে আর কোথাও দেখা গেলো না। গণেশ উধাও।
    পুলিশ আবার এলো – গ্রামের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। একজন চাষী জানালো সে খুব ভোরে নিজের জমিতে যাচ্ছিলো সেচের কাজে। ও দেখেছে কেতকী আর গণেশকে পায়ে হেঁটে নদীর দিকে যেতে।

    গণেশের বউ ক’দিন ধরেই খেয়াল করছে শেষ রাত্রে গণেশ বিছানায় থাকে না। জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘‘একটু বাদেই তো মাছ ধরতে যাবো, তাই জালগুলো একটু গুছিয়ে রেখে এলাম।’’ আজ কিন্তু লোকটা সেই যে গেছে এখনও ফেরেনি। গোয়ালা এসে বাঁশের পলকা গেটে খট খট করছে, রোদ চলে এসেছে উঠোনের মাঝখানে। লোকটা গেলো কোথায়? এখনও ফিরছেনা কেন? ভাবতে ভাবতেই একদল পুলিশ এসে বাড়ীতে ঢুকলো।
    ‘‘এটা কি গণেশ দাসের বাড়ী? ওকে ডাকো।’’
    ‘‘ওতো বাড়ীতে নেই।’’
    ‘‘কোথায় গেছে?’’ ‘‘জানি না।’’
    ‘‘জানি না বললে তো হবে না, এতো সকালে গেলো কোথায়?’’
    তরু নিরুত্তর।
    একজন মহিলা দারোগা এগিয়ে এলো।
    ‘‘চুপ করে থাকলে হবে না। ও কোথায় কাজ করতে যায়? ঠিকানা বলো।’’
    - ‘‘সায়েব, ওতো নিজের নৌকো নিয়ে মাছ ধরে নদীতে। সেই মাছ বিক্রী করে বাজারে।’’
    - ‘‘ওকে তো নদীতেও দেখা গেলো না, বাজারেও পাওয়া গেলো না! ঘরে লুকিয়ে বসে আছে নাকি? হাবিলদার, ওদের ঘর সার্চ করো।’’

    দুজন হাবিলদার ব্যাঘ্রবিক্রমে ঘরের মধ্যে ঢুকলো। দুমদাম আওয়াজ করে মাটির কলসী ভাঙ্গার শব্দ। তরু ভয়ে ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপছে। ময়লা কাঁথা, তালি দেওয়া লেপ, তেলচিটে বালিশ, কুলুঙ্গি – সব কিছু ঘেঁটে পাওয়া গেলো ওদের ছেলের একটা লাট্টু আর একটা বালিশের নীচে কিছু শুকনো কাঠ চাঁপা ফুল।

    হতাশ হাবিলদারেরা ঘর থেকে বেরিয়ে জানালো - ‘‘কিছু পাওয়া যায়নি স্যার, তো আমরা কি লাট্টু আর শুকনো ফুলগুলো সঙ্গে নিয়ে যাবো?’’ দারোগাবাবু মুখ লাল করে, বিকট গর্জন করে বললেন, ‘‘না, ঢের হয়েছে, এবার চলো। ওহে তরুবালা, গণেশ বাড়ী ফিরলেই, থানায় পাঠিয়ে দিও। মনে থাকে যেন।’’

    নদী দিয়ে জলস্রোত বয়ে যায় অবিরাম, মানুষের জীবনও থেমে থাকে না। গণেশের কোন খবর পাওয়া যায় নি। তরুর ভয় আর কান্না বাঁধ মানে না। তরুর ছেলে স্কুলে গেলে বন্ধুরা প্রশ্ন করে, ‘‘তোর বাবা কোথায় গেছে রে?’’ নিরুত্তর ছেলে মনে মনে গুমরে কাঁদে।

    হঠাৎ সেই গ্রামে একটা হৈ চৈ শুরু হোলো অবন সাধুকে নিয়ে। ও আগে ছিলো একটা স্কুলের মাষ্টার – অবিনাশ মাষ্টার বলে ডাকতো সবাই। সে এখন অবন সাধু – মহাতান্ত্রিক। সারাদিন শ্মশানকালীর মূর্তির সামনে বসে জপতপ নিয়ে থাকে। সারারাত জেগে, কি যে করে তা কেউ জানে না। কেবল মাঝে মাঝে ‘ব্যোমকালী’, ‘কাত্যায়নী’ বলে চিৎকার শোনা যায়।
    খড় দিয়ে ছাওয়া একটা মাটির ঘরে শ্মশানকালীর মূর্ত্তি পুজো হয়। সেটাই নাকি মন্দির। কিন্তু সেই মন্দিরের পিছন দিকে একটা সুড়ঙ্গের সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি ধরে নামলে গর্ভগৃহ – একটা মস্তো ঘর – সেখানে বিশাল কালীমূর্তি – তার সামনে একটা হাড়ি কাঠ।

    দারোগার ইনফরমাররা খবর নিয়ে এলো – ‘‘ওই মন্দিরে অনেক খারাপ কাজ হয় স্যার। অমাবস্যা তিথিতে বড় বড় গাড়ীতে করে কিছু লোক, অবনসাধুর কাছে আসে। তখন খুব পুজোআর্চা হয়, ছাগল বলি হয়। আর তার পর সারা রাত ধরে বলির প্রসাদ রান্না হয়, কারণবারি আর হুল্লোড় চলে। শেষ রাতে গাড়ীগুলো চলে যায়। আর ওদের সঙ্গে কিছু কালো চশমা পরা মহিলাও থাকে। গ্রামের লোকেরা প্রশ্ন করলে বলা হয় – ওরা সব অবন সাধুর ভক্ত। ব্যাপারটা আপনি একটু দেখুন স্যার। এখনও পর্য্যন্ত কেতকীর খুনীকেও তো খুঁজে পাওয়া গেলো না।’’
    কেতকী নিধনের উত্তেজনাটা একটু থিতিয়ে যাওয়াতে, গ্রামের লোকেরা নতুন একটা খোরাক পেয়ে একেবারে উদ্বেল হয়ে উঠলো। তবু একটা কথা সবার মনে বিঁধে ছিলো, গণেশ নামের লোকটা গেলো কোথায়? তবে কি গণেশই খুনী?

    দারোগাবাবুর মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। কি ভাবে এগোনো যায়? কোন স্পষ্ট অভিযোগ না পেলে তো একজন সাধুসন্তের ডেরায় হানা দেওয়া যায় না। এই সময় একজন পাকাচুলো বৃদ্ধ চাষী এসে জানালো – ওর পাঁচ বছর বয়সী নাতিকে গত দুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা মাঠে গরু চরায়, তারা অবন সাধুর আশ্রম থেকে বাচ্চার কান্না শুনতে পেয়েছে।
    F.I.R. হোলো। দারোগাবাবু সন্ধ্যের অন্ধকার নামতেই, একদল হাবিলদার নিয়ে অবন সাধুর আশ্রমে হাজির।
    ‘‘অবন সাধু কোন জন?’’
    ‘‘আমিই অবন সাধু’’ – পরনে রক্তাম্বর, মাথায় ঝুলন্ত জটার ওপর লাল পাগড়ী। চোখ দুটি গঞ্জিকা সেবনে লাল – এবং অতি উদ্ধত দৃষ্টি।
    - ‘‘এই মন্দির তোমার?’’
    ‘‘না, এই মন্দির আমার মাতৃরূপিনী করালবদনা শ্রীশ্রী কালীমাতার মন্দির। স্বপ্নে পাওয়া মায়ের আদেশে, আমার বসতবাটিতেই মন্দির করেছি।’’
    ‘‘তুমি তন্ত্রসাধক?’’
    ‘‘হ্যাঁ’’
    ‘‘পূজার সময় বলি হয় এখানে?’’
    ‘‘হ্যাঁ’’
    ‘‘নরবলি হয়?’’
    ‘‘না’’
    ‘‘তবে পাঁচ বছরের বাচ্চাটা হারিয়ে কোথায় গেলো?’’
    ‘‘জানি না’’
    ‘‘জানিনা মানে কি?’’
    ‘‘সবই মহাকালীর লীলা।’’
    ‘‘বাজে কথা না বলে, ঠিককঠাক উত্তর দাও।’’
    ‘‘কি উত্তর চান?’’
    ‘‘ভালয় ভালয় সব স্বীকার করো, নইলে তোমার মন্দিরের তল্লাসী নেবো।’’
    ‘‘ওই মহাপাপটা করলে, মায়ের অভিশাপে আপনি নির্বংশ হবেন।’’
    ‘‘ শুনেছি, তুমি একজন শিক্ষক ছিলে, তোমার এই দুর্মতি হোলো কি করে?’’
    ‘‘মহাব্রহ্মাণ্ডের অধিশ্বরী, আদ্যা শক্তি, করালবদনা, কালীকাত্যায়নী আমাকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, বিষয় চিন্তা ছেড়ে যেন আমি মহাকালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সাধনায় ব্রতী হই।’’
    ‘‘সাধনা তো ভালোই চলছে মনে হয়। শিষ্যরা তো আরামেই রেখেছে তোমাকে। দিব্যি তো শাঁসে জলে চেহারাটি – সঙ্গে নেশার রমরমা। তা এসবের জন্য পয়সা জোগায় কে?’’
    ‘‘মা আছেন, তাই আমিও আছি।’’
    এই সময় একটা শিশুর কান্না মেশানো চিৎকার শোনা গেলো। সবাই সচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। দারোগাবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, ‘‘ভেতরে চলো।’’
    ‘‘দরজা বন্ধ আছে ভেতর থেকে।’’
    ‘‘ভাঙ্গো দরজা।’’
    দরজা ভেঙ্গে হুড়মুড় করে ঢুকলো পুলিশ। ভেতরের মন্দির ধূপধুনোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। আস্তে আস্তে দৃষ্টিপাত সহজ হোল। মা কালী মহাশক্তির পায়ের কাছে মুখ বাঁধা একটি বছর পাঁচেকের শিশু প্রায় অচেতন।

    পুলিশ দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করলো। এবার ওই বড় ঘরের আশেপাশে কতকগুলো দরজাবন্ধ ছোট ছোট ঘর – তার দিকে এগোলো। লাথি মেরে একটা একটা করে দরজা ভাঙ্গতে লাগলো। ভেতরে পূজোর বাসনপত্র, বলির সরঞ্জাম। একটা বোঁটকা গন্ধ জানালাহীন ঘরগুলোতে। শেষ ঘরটিতে দেখা গেলো একজন পুরুষ মানুষ হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে। পুলিশের ডাকে মাথা তুললো না লোকটি। এবার চুলের মুঠি ধরে মাথাটা তুলতে পুলিশের পেছন থেকে একজন বলে উঠলো,
    ‘‘এই তো গণেশ ! খুন করে এখানে এসে লুকিয়ে আছে।’’

    তান্ত্রিক বাবাজী আর গণেশ সমেত, মন্দিরের সব কটি চেলাচামুণ্ডাকে কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশ গাড়িতে তুলে ধূলো উড়িয়ে চলে গেলো।
    কেবল কেতকীর মা আজও নদীর ধারে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদে একমাত্র সন্তানকে হারাবার কষ্টে। নদীর জল বয়ে চলে আপন মনে।

    তবে ওই গ্রামে আর কখনো মাঘ-মণ্ডল ব্রত হয়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন