এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ব্রাহ্মসমাজঃ ইতিহাস ও বর্তমান

    Atoz
    অন্যান্য | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৭৭৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৫৪377517
  • অর্জুন অভিষেক, এলেবেলে, আর অন্যরাও কেউ যদি উৎসাহী হন,
    এই যে টই । হাত খুলে লিখুন। আমরা ঋদ্ধ হই । আগাম ধন্যবাদ।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০১377555
  • আগের আলোচনা সূত্র এখানে এনে দিলাম।

    Rেঃ বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from Atoz on 28 September 2018 01:55:10 IST 125612.141.5689.8 (*) #

    অর্জুন অভিষেক, আপনাকে ছাড়া আর কাকেই বা এই অনুরোধ করি? অনুরোধটা হলঃ ব্রাহ্মধর্মের কী হল, তার এখনকার অবস্থা কী, কিছুই কেন শোনা যায় না আজকাল যে অমুকে ব্রাহ্ম তমুকে ব্রাহ্ম ? এইটা নিয়ে আলাদা টই খুলে লিখবেন? ব্রাহ্মধর্মের সূচনা থেকে তার পরিবর্তন, তারপরে এখন তার কী হল সেই নিয়ে? বাংলার সাহিত্যে ও বিজ্ঞানে ব্রাহ্মদের অবদান, অন্যদের সঙ্গে তাদের মতের মিল ও অমিল ইত্যাদি নিয়েও? বসু বিজ্ঞান মন্দির কি আসলে ব্রাহ্মসমাজের ছিল? বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের দিনগুলোতে কি ব্রাহ্মরাই তাদের ছেলেমেয়েদের ওখানে পাঠাতেন?

    Avatar: অর্জুন অভিষেক

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from অর্জুন অভিষেক on 28 September 2018 02:10:50 IST 342323.223.674512.41 (*) #

    এই রে। আমি? বিষয়টা ইন্টারেস্টিং এবং আমার পছন্দের সন্দেহ নেই। এই গত শনিবার এক ব্রাহ্ম আত্মীয়ের শ্রাদ্ধ বাসরে ভবানীপুর ব্রাহ্ম সম্মিলনীতে গেছিলাম।

    খুব তাত্ত্বিক বিষয়। ব্রাহ্মরা সারাজীবন হিন্দুদের গোঁড়ামোকে কটাক্ষ করতে করতে নিজেরাই খুব গোঁড়া হয়ে অদ্ভুত ভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লেন।

    ওদের সমাজের কিছু Stalwart পরবর্তীকালে ওদের সমাজের থেকে উৎসাহ হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, লীলা মজুমদার ও সত্যজিৎ রায়।

    লীলা মজুমদার ও সত্যজিৎ লিখিত ভাবে ব্রাহ্মসমাজের সমালোচনা করেছেন।

    ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে ভাল কাজ করেছেন দিলীপকুমার বিশ্বাস ও David Kopf ।

    আপনার প্রশ্নগুলো বেশ ভাববার @Atoz

    Avatar: অর্জুন অভিষেক

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from অর্জুন অভিষেক on 28 September 2018 02:21:07 IST 342323.223.674512.41 (*) #

    জগদীশচন্দ্র বসু ব্রাহ্মসমাজ বিষয়ে কি খুব উৎসাহী ছিলেন? পরবর্তীকালে উনি ও লেডি বসু ছিলেন নিবেদিতার সবচেয়ে কাছের দুই বন্ধু। নিবেদিতা দ্বারা জগদীশচন্দ্র খুব প্রভাবিত ছিলেন। কিছুদিন আগে অবলা বসুকে নিয়ে একটা লেখা লিখতে গিয়ে পড়লাম ওরা দুজনেই গীতা পাঠ শুরু করেন । নিবেদিতার সঙ্গে ১৯০৭ এ দুজনেই কেদারনাথ ভ্রমণে যান। ব্রাহ্মসমাজের অনেকের বিশেষ আপ্ততি ছিল তাদের এই হিন্দু তীর্থ ভ্রমণ নিয়ে। জগদীশ চন্দ্রের একটি রচনায় সেই ভ্রমণের কিছু কথা আছে। অবলা বসু আবার ব্রাহ্মধর্মের অন্যতম দিকপাল নেতা দুর্গামোহন দাশের কন্যা।

    এরা সকলেই কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন।

    Avatar: Atoz

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from Atoz on 28 September 2018 02:42:06 IST 125612.141.5689.8 (*) #

    রায়বাড়ির মানে সুকুমার রায়দের বাড়ির অনেকেই তো দিকপাল ছিলেন নানাদিকে, সুকুমার রায় নিজে তো বটেই, ওঁর ভাইরা, বোনেরা, অন্য আত্মীয়স্বজনরা। এঁরা অনেকেই মনে হয় ব্রাহ্ম ছিলেন। কিন্তু তারপর যে কী হল, সেই ব্যাপারটা সেভাবে জানা যায় না কোথাও। এতসব ঝঞ্ঝাট ঝামেলা করে নতুন একটা ধর্মমত গ্রহণ, ব্রাহ্মপরিবারে পরিবারে বিবাহসম্বন্ধ, ছেলেমেয়েদের সেইভাবে সেই মতে মানুষ করা---তারপর কী হল? এঁরা কি সবাই পুনরায় হিন্দুধর্মে ফিরে গেলেন? লীলা মজুমদার তো বিবাহসূত্রে হিন্দু হয়ে গলেন। সত্যজিৎ রায়ের ব্যাপারটা ঠিক কীরকম? উনি কি ঘোষণা দিয়ে ছেড়ে দিলেন?

    Avatar: এলেবেলে

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from এলেবেলে on 28 September 2018 08:06:14 IST 230123.142.67900.45 (*) #

    এ লেখা অনেক আগে পড়েছিলাম, হঠাৎ আবারও আলোচনায় উঠে আসায় আবারও পড়লাম।

    @Atoz, ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে আলাদা টই খুলুন। এখানে আলোচনা করলে ব্যাপারটা বিসদৃশ হবে বলে আমার ধারণা। সেই নতুন টইতে এই অধ্মও অংশগ্রহণ করতে পারে।

    Avatar: অর্জুন অভিষেক

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from অর্জুন অভিষেক on 28 September 2018 10:13:05 IST 341212.21.90067.90 (*) #

    'আবোল তাবোল', 'হ য ব র ল' র সৃষ্টিকর্তা কিন্তু ব্রাহ্মধর্ম ও তার প্রসার নিয়ে সবিশেষ উৎসাহী ছিলেন। ওই পরিবারে একমাত্র যিনি এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

    সুকুমার রায় 'অতীতের কথা' নামে সরল ভাষায় কিশোরদের জন্যে কবিতা আকারে ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লেখেন।

    উদ্দেশ্যঃ নূতন প্রজন্মের কাছে ব্রাহ্মসমাজের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।

    Avatar: Atoz

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from Atoz on 28 September 2018 21:46:22 IST 125612.141.5689.8 (*) #

    টই খুলে দিয়েছি। হাত খুলে লিখুন আপনারা।

    Avatar: Paakhi

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from Paakhi on 28 September 2018 22:33:22 IST 90067.174.7889.172 (*) #

    নীনাদি প্রচুর তথ্য দিতে পারতো, কিন্তু দেবার সময় আছে কি আর ।।।
    ঐ ব্রাহ্মজগতের কথা বলছি আর কি

    Avatar: অর্জুন অভিষেক

    Re: বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # এক

    Comment from অর্জুন অভিষেক on 28 September 2018 23:24:01 IST 342323.223.9004512.153 (*) #

    ব্রাহ্ম সমাজ সংক্রান্ত আলোচনা অন্য কোথাও হোক।
    ডিরোজিওকে নিয়ে আলোচনাটা চলুক এখানে।

    আমার অজস্র ব্রাহ্ম আত্মীয় আছে (ছিল)। সেটা কথা নয়, আলোচনাটা ইতিহাস প্রেক্ষিত ও তাত্ত্বিক করতে হবে।

    ব্রাহ্মসমাজে যারা যাতায়াত করেন তারা খুব বেশী খোঁজ খবর রাখেন না, কমবেশী ইন্সেুরিত্য ভোগেন। ব্রাহ্মধর্মটা তাদের কাছে পারিবারিক স্ততুস স্য়্ম্বোল র মত হয়ে গেছে। তারা বইয়ের বাইরে কিছুই জানেন না। আলোচনা করে হতাশ হয়েছি। উল্টে ফ্ত োর্রে্ত করে দিয়েছি।

    একটু সময় লাগবে, এই বিষয়ে পোস্ট দেব।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.160 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৯377566
  • উনিশ শতকের সবচেয়ে গোলমেলে জায়গা হল ব্রাহ্মধর্ম। হিন্দুধর্ম থেকে আলাদা অথচ হিন্দু আচারবিচার পালনে ত্রুটিহীন, খ্রিস্টান ধর্ম থেকেও আলাদা অথচ ইংরেজপ্রীতি মারাত্মক। কিন্তু শেষে হিন্দু রক্ষণশীলতার চরম উদাহরণ।

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবল সমর্থক এবং কলোনাইজেশন তত্ত্বের উদ্ভাবক রামমোহন একেশ্বরবাদের উপাসনা নামক এক হাঁসজারু অথবা অশ্বডিম্ব প্রসব করেন। এলিট নব্য বড়লোক সম্প্রদায় স্বার্থের খাতিরে এই ধর্মে দলে দলে যোগ দিতে থাকেন। বিশ শতকের বাংলায় প্রায় সব মেধাবী তরুণের দিকচিহ্ন যেমন ছিল নকশালবাড়ি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া, ঠিক তেমনই উনিশ শতকের বঙ্গদেশে রক্ষণশীল হিন্দুদের থেকে নিজেদের আলাদা প্রমাণ করতে সমাজের কেষ্টবিষ্টুরা ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

    শিকড়হীন এই ধর্মের একশো শতাংশ লোক যেহেতু হিন্দু ছিলেন তাই তাঁদের আচরণে রক্ষণশীল হিন্দুদের অনেক কিছুই ফুটে বার হত। ১৮২৭ এর ২৪ জুন অ্যাডাম লিখছেন 'All the rules in the present state of Hindu Society he [Rammohan] finds it necessary to observe, relate to eating and drinking. He must not eat of the food forbidden to Brahmins nor with persons of a different religion from the Hindu or of different caste or tribe from his own'।

    ব্রাহ্ম রামমোহন 'সহমরণ বিষয় প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তক সম্বাদ'-এ নিবর্ত্তক-এর হয়ে বলছেন 'যাহা কিছু মনু কহিয়াছেন তাহাই পথ্য জানিবে। এবং বৃহস্পতির স্মৃতি। মনুস্মৃতির বিপরীত যে স্মৃতি তাহা প্রশংসনীয় নহে। বিশেষত বেদে কহিতেছেন যেহেতু জীবন থাকিলে নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম্মানুষ্ঠান দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ হইলে আত্মার শ্রবণ মনন নিদিধ্যাসনের দ্বারা ব্রহ্ম প্রাপ্ত হইতে পারে অতএব স্বর্গ কামনা করিয়া পরমায়ুসত্ত্বে আয়ুর্ব্যয় করিবেক না অর্থাৎ মরিবেক না। অতএব মনু যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি আপন ২ স্মৃতিতে বিধবার প্রতি ব্রহ্মচর্য্য ধর্ম্মই কেবল লিখিয়াছেন এই নিমিত্ত এই শ্রুতি ও মন্বাদি স্মৃতি দ্বারা তোমার পঠিত অঙ্গিরা প্রভৃতির স্মৃতি সকল বাধিত হইয়াছেন যেহেতু স্পষ্ট বিধি দেখিতেছি যে স্ত্রীলোক পতির কাল হইলে পর ব্রহ্মচর্য্যের দ্বারা মোক্ষ সাধন করিবেন'। কোথায় একেশ্বরবাদ!

    অন্ত্যজ হিন্দু ও দরিদ্র মুসলমান সম্পর্কে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন তিনি নিঃসংকোচে বলেন 'যবনী কি অন্য জাতি পরদার মাত্র গমনে সর্বথা পাতক এবং সে ব্যক্তি দস্যু ও চণ্ডাল হইতেও অধম কিন্তু তন্ত্রোক্ত শৈব বিবাহের দ্বারা বিবাহিতা যে স্ত্রী সে বৈদিক বিবাহের স্ত্রীর ন্যায় অবশ্য গম্যা হয়’।

    রামমোহনের ভাবশিষ্য দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম হওয়া সত্ত্বেও দ্বারকানাথের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান বিশুদ্ধ হিন্দু পদ্ধতিতে করেন, রবীন্দ্রনাথের উপনয়নের বন্দোবস্ত করেন এবং ওই উপনয়ন কালে ব্রাহ্ম রাজনারায়ণ বসু ঠাকুরবাড়ি থেকে 'শূদ্র' হওয়ার অপরাধে বিতাড়িত হন। দেবেন্দ্রনাথ এতই অভিনয়পটু ছিলেন যে দুর্গাপুজোর সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়ে পুজোর ক"টা দিন অন্য কোথাও সরে পড়তেন!

    নীরদ সি চৌধুরী 'আত্মঘাতী বাঙালী'-তে লিখেছেন 'কিন্তু তিনটি ব্যাপারে না ব্রাহ্ম, না নব্য রক্ষণশীল বাঙালী কেহই ঢিলা দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। এই তিনটি এই - স্ত্রীলোকঘটিত অনাচার, অর্থঘটিত অসততা ও মদ্যপান'। বিনয় ঘোষ ‘বাংলার নবজাগৃতি’-তে লিখেছেন 'রামমোহন এমনকী মহর্ষিও তাঁদের পাল্কিবেহারাকে ব্রাহ্মসমাজে নেবার বা ব্রাহ্ম করার কথা ভাবতেন কি? তাদের ছেলেদের লেখাপড়া শেখানোর কথা ভাববার প্রশ্নই ওঠে না'। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই নতুন ধর্মমত সমাজের সীমিত পরিসরে চালু থাকায় এবং সেই নিয়ে পুরোদস্তুর দলাদলি বজায় থাকায় কেশব সেনের পরে পরেই ব্রাহ্মধর্ম তার কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব হারায়।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৪377577
  • অনেক ধন্যবাদ, এলেবেলে। কলকাতার এলিট সমাজেও ব্রাহ্মসমাজের লোকেদের নিয়ে মনে হয় নানারকম আকর্ষণ বিকর্ষণের খেলা চলত। শরৎচন্দ্রের অনেক লেখাতেই ব্রাহ্মদের নিয়ে তীব্র কটাক্ষ। অ্যানেকডোটও পাওয়া যায় যেখানে শরৎচন্দ্র ব্রাহ্মদের নিয়ে নিন্দাসূচক কথা বলছেন। এদিকে মৈত্রেয়ী দেবীর "ন হন্যতে" তে পর্যন্ত একজায়্গায় ব্রাহ্মিকাদের নিয়ে কটাক্ষ, নাকি তাঁরা খুব নাক-উঁচু ছিলেন, কিন্তু তাঁদের দর্প চূর্ণ অমৃতাদের রূপ আর সাজ দেখে। ঃ-)
    কেউ কেউ আবার নাকি বলতো ঠাকুরবাড়ির সুন্দরী কন্যাদের বিয়ে করার আগ্রহে নাকি ভালো ভালো জলপানি পাওয়া কৃতী ছেলেগুলো সব ব্রাহ্ম হয়ে যেত! ঃ-)
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.9004512.153 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬377599
  • @Atoz

    আপনার আপাত ভাবে কৌতূহল নিরসনের জন্যে একটি লেখা থেকে উদ্ধৃিতি দিচ্ছি

    "আমার স্বামীর চেয়ে আমার ভাসুর প্রায় বারো বছরের বড় ছিলেন, কিন্তু গল্প জমত আমার সঙ্গে। ব্রাহ্মদের ওপর উনি প্রসন্ন ছিলেন না। হেরম্বচন্দ্র মৈত্রে ওঁদের কি রকম আত্মীয় হতেন। তাঁর ব্রাহ্মত্ব আমার ভাসুর বরদাস্ত করতে পারতেন না। নানা রকম সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য সরস গল্প বলে প্রমাণ করতে চাইতেন যে লোকটি পণ্ডিত হলেও অত্যন্ত হাস্যকর রকম সঙ্কীর্ণমনা। মনে কনে একটু চটতাম, তবে সন্দেহ হত সেটাই বোধ হয় ওঁর আসল উদ্দেশ্য। তাই রাগটা চেপে যেতাম। ভারি বুদ্ধিমান ছিলেন। একদিন বললেন 'তুমি যে বল ব্রাহ্ম সমজের কাছে বাঙালী সমাজ অনেকখানি ঋণী- স্ত্রী শিক্ষা, স্ত্রী স্বাধীনতা, কিছু সামাজিক দুর্নীতি দূর করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে- বেশ, সবই আমি মেনে নিলাম। তা এখন সে সব চেষ্টা সফল হয়েছে তো? শুনে আমি মহা খুশী হয়ে বললাম, 'হ্যাঁ, ঠিক তাই।' ভাসুর বললান, 'তাহলে ব্রাহ্ম সমাজের টিকে থাকার আর কোনো দরকারই নেই বোঝা যাচ্ছে। এভাবে বাঙালী সমাজকে মিছিমিছি খণ্ডিত করে না রেখে, তুলে দেওয়া হচ্ছে না কেন?' আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। '

    ('পাকদণ্ডী' - লীলা মজুমদার)

    বিশ শতকের চল্লিশের দশকে একজন জন্মসূত্রে ব্রাহ্ম ও হিন্দুর এই কথোপকথন, দুই ধর্মের মানসিক টানাপড়েনের একটা হাল্কা আঁচ দেয়।

    বাকীটা ক্রমশ।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬377588
  • আর একটা জিনিস লক্ষ করুন, মুসলমানদের ধর্ম একেবারে ঘোষিতভাবে একেশ্বরবাদী, আল্লাহর কোনো শরিক নেই, এটা দিয়েই শুরু করতে হয়। মুসলমানদের মধ্য থেকে অনেকেরই তো তাহলে ব্রাহ্মধর্মে আসার কথা ছিল, ব্রাহ্মধর্ম যদি একেশ্বরবাদী ধর্মই হয়। মূল দর্শন এক, বেশি কনফ্লিক্ট তো হবার ছিল না।
    কিন্তু কোনো মুসলমানকে কি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করতে দেখা গেছে? আদিপর্বের রামমোহন যখন নেই, নতুনরা ব্রাহ্মধর্মের হাল ধরেছেন, তখন? এটা হলে তো একটা বিরাট সমন্বয় হতে পারত ব্রাহ্মধর্মের জমিতেই, নতুন ধর্মটা জমেও উঠত অনেক বেশি।
    কিন্তু হয় নি। সঠিক কারণটা কী?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৮377610
  • অনেক ধন্যবাদ, অর্জুন অভিষেক।
    "পাকদন্ডী" আছে, প্রায়ই পড়ি। সত্যি কথা বলতে কি, "পাকদন্ডী" আর অন্যান্য লেখকদের অন্যান্য কিছু লেখা পড়েই ব্রাহ্মসমাজ বিষয়ে এইসব প্রশ্নগুলো মনে আসতে থাকে।
    লীলা মজুমদারের মায়েরা ছিলেন তিন বোন। এই তিনটি মেয়ের মা যখন মারা যান, তখন এই তিন বোন শিশুমাত্র। এই তিনটি মেয়েকে বিলিয়ে দিয়ে ওদের বাবা সন্ন্যাস নিয়ে চলে যান। অনাত্মীয় ব্রাহ্মরা মানুষ করেন দুটি মেয়েকে। বড় মেয়ে হোস্টেলে মানুষ হয়। মেজো মেয়ে( লীলার মা) উপেন্দ্রকিশোরের পরিবারে মানুষ হয়, সবচেয়ে ছোটো মেয়েটিকে এক ব্রাহ্মদম্পতি দত্তক নেন।
    লীলা তার এক বড়মাসীর সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত লিখেছেন পাকদন্ডীতে, একেবারে ভালোমন্দ সব মিশিয়ে তার মানুষ রূপটি। এই মাসী সারাজীবন ব্রাহ্মধর্মের প্রতিটি অনুশাসন মেনে এসেছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ, সমালোচনা শুনলে কষ্ট পেতেন। অথচ স্বামী মারা যেতে হিন্দুবিধবার সব নিয়ম মেনে বাকী জীবন কাটালেন।
    ওই সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া দাদামশায় ও মনে হয় ব্রাহ্ম থেকে আবার হিন্দু হয়ে গিয়েছিলেন বলে মনে করতেন অন্য ব্রাহ্মরা। কিন্তু সন্ন্যাসী যিনি হয়ে গিয়েছেন তাঁর কি আর এসব হিন্দু না ব্রাহ্ম তার বিভেদ থাকে?
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.9004512.153 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৫377621
  • @এলেবেলে, ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে তার মতামতের একটা নির্যাস দিয়েছেন। কিন্তু আরো বিশদে জানতে হলে ধারাবাহিক ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। ব্রাহ্মসমাজ অর্থ শুধু দেবেন্দ্রনাথ নন। কেশবচন্দ্র সেনকে বাদ দিলে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে কিছুই জানা হয়না।

    কেশবচন্দ্র ছিলেন খুব ইন্টারেস্টিং মানুষ, বুদ্ধিমান, তেজদীপ্ত আবার তেমনি গণ্ডগেলে।

    তারপরে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ও তার ভূমিকা।

    @এলেবেলে আজকাল নীরদচন্দ্রকে খুব করছেন। নীরদচন্দ্রের অনেক বাংলা লেখায় পাবেন ' আমার পরিবার ব্রাহ্মভাবাপন্ন'। তার মা মৈমনসিংহের কিশোরগঞ্জের মত একটি ছোট শহরে ব্রহ্ম সংগীত গাইতেন, সে নিয়ে খুব গর্ব ছিল তার ও পুরো চৌধুরী পরিবারের। নীরদবাবুর এক ভাতৃবধূ আমাকে বেশ গর্ব করে বলেছিলেন ' আমরা ত ব্রাহ্ম'। তাহলে নীরদবাবু 'অটোবায়গ্রাফিতে' কি করে তার বাড়ির দুর্গা পূজার কথা লিখলেন সেটা জিজ্ঞেস করাতে কোনো উত্তর পাইনি।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.9004512.153 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২০377632
  • *@এলেবেলে আজকাল নীরদচন্দ্রকে খুব quote করছেন।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২০377518
  • ও বাড়ির কর্তাব্যক্তিরাও দেবেন ঠাকুরের কায়্দায় পুজোর ব্যবস্থা করে দিয়ে ওই ক'টাদিন সরে পড়তেন হয়তো। ঃ-)
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.9004512.153 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩377529
  • @Atoz হ্যাঁ, এ গল্প তো তিনি 'আর কোনোখানে' আর 'পাকদণ্ডী' তে লিখেছেন। একটা কমিউনিটি থেকে আরেকটি নূতন গঠিত কমিউনিটিতে মানুষ যখন চলে আসে তখন তাদের মধ্যে একটা 'মাইনরিটি' বোধ থেকে 'গোষ্ঠী' বোধ তীব্র হয়। পরস্পরকে আঁকড়ে থাকে। তাই পিতৃ মাতৃহীন শিশুদের ব্রাহ্ম অনাত্মীয়রা দেখাশোনার ভার নিতেন, পালন করতেন নিজের সন্তানদের মতন। তখন অনেক ব্রাহ্ম পরিবারেই এই রকম আশ্রিত অনাত্মীয় থাকত।

    ইন্টারেস্টিংলি, এই দাদামশায় লীলা মজুমদারকে জীবনে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করেছিলেন। তরুণী বয়েসে তিনি একা, দাদামশায় যে আশ্রমে শেষজীবন কাটিয়েছিলেন সেখানেও যান এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নাড়াছাড়া করে দেখেন। এই দাদামশায়ও লেখক ছিলেন, কি নাম ছিল যেন ওর রামানন্দ ভারতী? উনি ১৮৯০ র দশকে মানস সরবর যান ও সে নিয়ে 'হিমারণ্য' নামে একটি ভ্রমণ কাহিনী লেখেন।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.9004512.153 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৩377540
  • দেবেন ঠাকুরের বাড়ির পৌত্তলিক পূজা বন্ধ হয়েছিল ১৮৫০ র মধ্যেই, নইলে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকথায় সেটা থাকত। গৃহদেবতার ভার নিয়েছিলেন দেবেন ঠাকুরের মেজ ভাই গিরীন ঠাকুরের স্ত্রী (গগন, অবন ঠাকুরের থাকুমা)। পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবংশও হিন্দু ছিলেন।

    তবে দেবেন ঠাকুর অসবর্ণ বিবাহ, বিধবা বিবাহের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। যার জন্যে প্রথম দিকে তার অন্যতম চ্যালা কেশব সেন বেরিয়ে আসেন এবং অচিরে হয়ে ওঠেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৮377548
  • ঠাকুরবাড়ির এক তরুণী বিধবা পুত্রবধূ, বিধবা হবার পর পিত্রালয়ে চলে যান। তাঁকে পুনর্বিবাহ দেবার ব্যবস্থা হচ্ছিল তাঁর বাপের বাড়ি থেকে, কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে রবীন্দ্রনাথ আপত্তি জানিয়ে সে বিবাহ ঘটতে দেন নি।
    এরকম একটা ঘটনার কথা কোথাও পড়েছিলাম। সত্যি কি এটা?
    পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ তো নিজের পুত্র রথীন্দ্রনাথের ব্যাপারেই বিধবাবিবাহের ব্যবস্থা করেন। তাই নয়?
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.454512.53 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৯377549
  • হ্যাঁ। একদম সত্যি।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২০377550
  • "মহাস্থবির জাতক" পড়তে গিয়ে আর এক গেরো। লেখক আতর্থী মহাশয়ের বাবা তো ব্রাহ্মধর্ম নিয়েছিলেন, তাঁর পরিবার ব্রাহ্ম। রীতিমতন নিয়ম করে ব্রাহ্মসভায় নিয়ে যেতেন বৌছেলেমেয়েদের। সান্ডে স্কুল ছিল ব্রাহ্মদের, সেখানে পাঠাতেন ছেলেদের। অথচ এই বাবা ভদ্রলোক নিজের তিনটি ছেলেকে শাসনের নামে এমন সাংঘাতিক পেটাতেন, যে তাকে একরকম ভায়োলেন্স ই বলা যায়। মারের চোটে বাচ্চাদের মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, বাবা রান্নাঘরে বঁটি খুঁজছেন খুন করে ফেলার জন্য, এরকম বর্ণনাও পাওয়া গেছে (কেজানে কতটা সত্যি কতটা চড়ানো, তবু কিছুটা সত্যি হলেও তো সাংঘাতিক! )। ব্রাহ্ম প্রতিবেশীরা চেয়ে চেয়ে দেখতেন, অথচ কোনো ব্যবস্থা নিতেন না! তিনটি ছেলের মধ্যে বড়টি তো বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হল, মেজোটি পালাতো কিছুদিন পরপরই(তারই কাহিনি মহাস্থবির জাতক)। কথা হল, এরকম অত্যাচারের প্রতিকার কেন করতেন না উদারমনস্ক ব্রাহ্মসমাজ? এই ছেলেদের তো বাপের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মস্কুলের হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করতে পারতেন কর্তৃপক্ষ?
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.454512.53 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৮377551
  • ভাইপো বলেন্দ্রনাথের স্ত্রী সাহানার। বলেন্দ্রনাথ মনযোগ দিয়ে সাহিত্যচর্চা করছিলেন এবং লেখালেখিও করছিলেন সিরিয়াসলি। শান্তিনিকেতনে 'পাঠভবন' র পরিকল্পনা তার। যদিও তা বাস্তব হবার আগেই তিনি মারা যান। মাত্র ২৯ নছর বয়েসে বিবাহের আড়াই বছরের মধ্যেই তার ম্যালিগনেন্ট ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়। বলেন্দ্রনাথের স্ত্রী সাহানার বয়েস তখন মাত্র সতেরো। সাহানা ছিলেন লখনৌ প্রবাসী এক উচ্চশিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। তার পিতা মাতা কন্যার দ্বিতীয়বার বিবাহের ব্যবস্থা করেন। দেবেন্দ্রনাথ তখনও জীবিত। তিনি ছিলেন অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহের ঘোর বিরোধী। তিনি প্রবল আপত্তি প্রকাশ করেন নাতবৌয়ের দ্বিতীয় বিবাহে। ঠাকুরবাড়ির বৌয়ের পুনর্বার বিবাহে তার অভিমানে আঘাত করবে হয়ত সেই জন্যে? অদ্ভুতই বটে! তবে তার চেয়েও অদ্ভুত, দেবেন্দ্রনাথ তার এই ছোটপুত্রটিকে লখনৌ পাঠালেন সাহানা ও তার বাবা মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিয়েটা বন্ধ করতে। রবীন্দ্রনাথ পিতৃ আজ্ঞা পালন করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিতার এই আপত্তির বিরোধিতা করে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা এক্ষেত্রে আমাদের স্থম্বিত করে। বেশ অবিশ্বাস্য।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪২377552
  • সতেরো বছরের একটি মেয়ে, সামনে সারাটা জীবন ...
    ঠাকুরবাড়ির অন্য মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন মনে আসে। রেণুকার বিয়ে, মাধুরীলতার বিয়ে --- কোনোটাই তো সে হিসেবে ভালো বিয়ে বলা যায় না। রেণুকাকে তো প্রায় বালিকা বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, পরে সে অকালে মারা যায়। মাধুরীলতাও তো অকালমৃতা, কীরকম একটা অদ্ভুত বিয়ে তার দিলেন রবীন্দ্রনাথ! পণ যৌতুক নিয়ে কী টানাহেঁচড়া! এর প্রভাব যে মেয়ের উপরে কীভাবে পড়বে সে যখন শ্বশুরবাড়িতে, সে তো মনে হয় রবীন্দ্রনাথের পক্ষে পুরোটা বোঝাই সম্ভব ছিল না। হয়তো মা মৃণালিনী খানিকটা অনুভব করতে পারতেন।
    "জীবনের ঝরাপাতা" বিষয়ে কথা উঠেছিল অন্য টইতে, "জীবনের ঝরাপাতা" পড়তে পড়তে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়, বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রকট হয়ে আছে সরলার অভিমান। সেই শৈশব থেকে অভিমান জমে জমে পাহাড়। এই সরলার বিয়েও তো প্রায় তাঁর অমতেই দেওয়া, আকস্মিকভাবে বিয়ে ঠিক, সরলা কিছু সেভাবে বোঝার আগেই দ্যাখে তাঁর গায়ে বিয়ের কনের সাজ! "জী ঝ" তে বর্ণনাটা প্রায় সেইরকমই।
  • দময়ন্তী | 230123.142.90067.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:১৫377553
  • জগদীশচন্দ্র ধর্ম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতেন না। যদিও ব্রাহ্মই ছিলেন। অবলা কোনোদিন গীতা পড়েছেন বলে তথ্য তো পাই নি। উনি নিষ্ঠাবান ব্রাহ্ম ছিলেন। ব্রাহ্ম সমাজের সেক্রেটারি ছিলেন শেষ দু বছর।নিবেদিতার সঙ্গে কেদারবদরী কেন, বিবেকানন্দের মৃত্যুর পর থেকে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নিবেদিতা অনেকটা সময় জগদীশচন্দ্রের সঙ্গেই ছিলেন। কাজে, ভ্রমণে। জগদীশ নিবেদিতার প্রভাবে কিছুটা হিন্দুভাবাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যভাবে হিন্দু ধর্ম চর্চা করেন নি।
  • এলেবেলে | 230123.142.9001212.61 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৩৮377554
  • @Atoz, আগে আপনার কথার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। আপনি লিখেছেন, 'কেউ কেউ আবার নাকি বলতো ঠাকুরবাড়ির সুন্দরী কন্যাদের বিয়ে করার আগ্রহে নাকি ভালো ভালো জলপানি পাওয়া কৃতী ছেলেগুলো সব ব্রাহ্ম হয়ে যেত!' (এর পরে একটা চিহ্ন দিয়েছেন, ওটার অর্থ আমি জানি না)। কিন্তু তা আদৌ নয়। আপনি যদি ভালো করে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন ঠাকুরবাড়ির সব পুরুষের নামের শেষে ইন্দ্র, সব মহিলার পদবী দেবী এবং প্রায় সব জামাই কুলীন ব্রাহ্মণ। অর্থাৎ রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দুত্বের চাষ।

    শুধু রবীন্দ্রনাথের যে উপনয়ন হয়েছিল তাই নয়, দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ গোঁফ-দাড়ি কামিয়েছিলেন এমনকি মস্তকমুণ্ডনও করেছিলেন। এহ বাহ্য, রথীন্দ্রনাথেরও উপনয়ন হয়েছিল এবং তিনিও তিন দিন 'শূদ্র' দর্শন করেননি। এই হিন্দুত্বের চাষ আরও বাড়ে জাতীয় সভা এবং হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে। রবি ঠাকুর স্বয়ং লিখেছেন যে ঠাকুরবাড়ির সহায়তায় হিন্দুমেলার জন্ম হয়েছিল। আর হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে ১৮৬৯এ সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় সভা যেখানে মুসলমান-খ্রিস্টানরা ছিলেন অপাঙ্‌ক্তেয়। গণেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরেরা ছিলেন এই সবের হর্তাকর্তা। কাজেই আপনার আরেকটি প্রশ্ন 'কিন্তু কোনো মুসলমানকে কি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করতে দেখা গেছে?'-র উত্তর এই চরম মুসলমান বিদ্বেষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আপনি যথার্থ বলেছেন যে একেশ্বরবাদ উচ্চারিত হলে অবধারিতভাবে ইসলামের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। কিন্তু আমি তো এই কারণে প্রথমেই ব্রাহ্মধর্মকে হাঁসজারু অথবা অশ্বডিম্ব বলেছি!

    এইবার @অর্জুন অভিষেক। উনি বলেছেন, 'ব্রাহ্মসমাজ অর্থ শুধু দেবেন্দ্রনাথ নন। কেশবচন্দ্র সেনকে বাদ দিলে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে কিছুই জানা হয়না।' ঠিকই কিন্তু জেনেও অতিরিক্ত লাভ কিচ্ছু হয় না। আমার মতে এই বাগ্মী, পণ্ডিত মানুষটি খাল কেটে যে কুমির ডেকে এনেছিলেন সেই ক্ষতিপূরণ সহজে হওয়ার নয়। বিচ্ছিন্ন কেশব সেন রামকৃষ্ণকে কলকাতার এলিট সমাজে পরিচিত করার অন্যতম হোতা এবং রামকৃষ্ণকে হাতিয়ার করে বিবেকানন্দ হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠিতে লেখেন, 'হ্যাঁ, রামকৃষ্ণ আমাদের ঠকিয়েছেন। সর্ব ধর্ম পরীক্ষার যে ব্যর্থ প্রহসন, সে সবকে তিনি মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ভাবগৌরবে মণ্ডিত করে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের কানে এই ‘সব ভালো’-র বাণী বড়ই মধুর শুনিয়েছে তাই প্রচার প্রতিষ্ঠার মোহে, কয়েকজন বিশিষ্ট পূজ্য সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তির কাছে, কলকাতার ‘ইংরেজী জানা বাবুদের’ কাছে অপ্রত্যাশিত শ্রদ্ধা পূজা সম্মান পেয়ে তিনি মাথা ঘুলিয়ে ফেলেছেন। তাই জ্ঞানের অপরিপক্ক অবস্থায় এক common patent mixture আবিষ্কার করে গেছিলেন, আর সেই দাওয়াই এর প্রশংসাপত্র পাওয়া গেল বিবেকানন্দ বিদেশে জয়ঢাক পিটিয়ে আসার পর। নিজেকে অবতার বানাবার আর পরবর্তী অনুচরদের কায়েমী গদী অটুট রাখার এ এক মোক্ষম ব্যবস্থা হল'। এই ইংরেজি জানা বাবুদের কাছে সেতুবন্ধনের কাজটি করেছিলেন কেশব সেন।

    উনি লিখেছেন, '@এলেবেলে আজকাল নীরদচন্দ্রকে খুব quote করছেন'। সত্যি কথা বলতে নীরদচন্দ্রকে কোট করার সময়ই আমার ওই 'গপ্পো' করার ব্যাপারটা মাথায় ছিল। কিন্তু নীরদ সি-তে যে @অর্জুন অভিষেকও আপত্তি জানাবেন তা বুঝতে পারিনি! তবে লেখাটায় অ্যাডাম, রামমোহন এবং বিনয় ঘোষও ছিলেন। বেশ নীরদবাবু যদি এই আলোচনায় ব্রাত্য হন (যদিও তা কেউ বলেননি) তবে ওই একই প্রসঙ্গে বিনয় ঘোষ রইলেন যিনি ‘বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা’-য় লিখেছেন 'রাজা রামমোহনের বাড়ীতে, প্রিন্স দ্বারকানাথের বাগানবাড়িতে, রাজা রাধাকান্ত দেবের গৃহে ... নাচ গান বাঈজী ও আতসবাজী পোড়ানোর বল্গাহীন, কুৎসিত আমোদ প্রমোদের প্রতিযোগিতা চলত'।
  • | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:১৩377556
  • আরিব্বাস! আমার একজন নেমসেক এসেছেন!
  • অভি | 7845.11.564512.82 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:১৩377557
  • যেকোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের যে দিকটা খুব করে বিরোধিতা করে প্রতিস্পর্ধা উঠে আসে, দেখা যায় সে অচিরে সেই গুণগুলিই আত্মস্থ করে। মহেশের মহাযাত্রা হয়। হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি তাড়াতে এসে তাই ব্রাহ্ম গোঁড়ামি একসময় মুক্তমনাদের উত্যক্ত করে দেয়। গোরার ছত্রে ছত্রে এই বিরক্তি। আর জোড়াসাঁকোর বাবামশাই প্রতিম পরেশবাবু পানুবাবু হতে পারেন না, কিন্তু বাস্তবে তাঁরাও কিছুটা গোরা কিছুটা পানুবাবুর মধ্যেকার দোলাচলে থাকেন। ব্রাহ্মসমাজের লিবারেল ফেস পরেশবাবু। সেই তিনিও যখন বলেন, এ দেশে মুসলিম এক হয়ে লড়তে পারে, হিন্দু শুধুই বিভক্ত হয়ে যায়, এমন চললে একে হিন্দুস্তান বলাই যাবে না ভবিষ্যতে, এরপর আর একেশ্বরবাদ দিয়ে ইসলাম আকর্ষণ না ভাবাই ভালো।
    শরৎচন্দ্র একটু প্যাথলজিক্যাল ব্রাহ্মবিরোধী ছিলেন মনে হয়, সেকালের অনেকের মতো। 'দত্তা' পশ্য। বরং অনেক ভালো খিল্লি করেছেন সুকুমার রায় নিজেই। চলচিত্তচঞ্চরী অবশ্য তাবৎ শিক্ষিত এলিটদের গালেই পড়ার কথা যাঁরা সমস্ত জ্ঞানবিজ্ঞানের পর জীবন জুড়ে চর্চা করে গেলেন থিওজফি, মেসমেরিজম, প্লানচেট আর হোমিওপ্যাথি। কাঁদো রে মন কাঁদো রে, আমার মন বাগানের শখের তরুর ফল খেয়ে যায় বাঁদরে।
    ভালো কথা, বিধান রায় ব্রাহ্ম ব্রাদারহুড থেকে দূরত্ব দেখাতেন কি? বিজয়া রায়ের আমাদের কথা-য় উল্টো দেখেছিলাম মনে হচ্ছে। সত্যজিৎকে নাকি এরকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ডাঃ রায় ব্রাহ্মদের ফেভার করেন, পথের পাঁচালী স্পনসর করে দিতে পারেন ইত্যাদি। ঠিক মনে নেই, ভুল হলে কেউ সংশোধন করে দিলে ভালো হয়।
    হিন্দু উত্থান সম্বন্ধে একটা প্রশ্ন আছে। বঙ্কিম সম্বন্ধে বিবেকানন্দের মতামত কী ছিল?
  • এলেবেলে | 230123.142.9001212.61 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৩১377558
  • বিবেকানন্দ ব্রাহ্মসভায় নিয়মিত যেতেন, মূলত গানের টানে। দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনি যখন রামকৃষ্ণের ভাবধারা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন তখন তাঁর মনে হয়েছিল এ ব্যাপারে অভিজাত, সংস্কৃতিমনস্ক ব্রাহ্মদের সঙ্গে নিতে পারলে তাঁর কাজ অনেকটা সহজ হবে। ১৮৯৯ সালের ২৩ জানুয়ারি নিবেদিতাকে বলেওছিলেন ‘Make inroads into the Brahmos’। সেই অনুমতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত নিবেদিতা মিস ম্যাকলাউডকে লিখলেন — Saradananda and I are to carry on a Crusade। কিন্তু সেই অভিযান সফল হয়নি। ওই একই বিবেকানন্দ ১১ই মার্চ ১৮৯৯, 'মার্গট, তুমি যতদিন ওই ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে তোমার মেলামেশা চালিয়ে যাবে ততদিন আমাকে বার বার সাবধান করে যেতেই হবে। মনে রেখো, ওই পরিবার বঙ্গদেশকে শৃঙ্গাররসের বন্যায় বিষাক্ত করেছে'। এই ঘটনার পর থেকেই বিবেকানন্দের ব্রাহ্মদের সম্পর্কে মোহ ঘোচে।

    বঙ্কিম সম্বন্ধে বিবেকানন্দ খুব একটা আপ্লুত ছিলেন না। ১৮৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর (২২ অগ্রহায়ণ, ১২৮৭) ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অধরলাল সেনের উত্তর কলকাতার শোভাবাজারের ৯৭বি বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বাড়িতে যখন রামকৃষ্ণ-বঙ্কিম সাক্ষাতের সুযোগ ঘটল, তখন দেখা গেল রামকৃষ্ণ তাঁর ভক্তিবাদকে অতিক্রম করতে পারছেন না, অন্যদিকে যুক্তিবাদের স্বতন্ত্র ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে বঙ্কিমচন্দ্রেরও প্রবল অনীহা। আর মূলত এই কারণেই রামকৃষ্ণ-ভক্ত অক্ষয় সেনের কাছে বঙ্কিম ‘অহঙ্কারে ধরাকে সরা জ্ঞান’ করছেন, শ্রীম-ও ঠারেঠোরে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে বঙ্কিম উন্নাসিক। আর এসবের মাঝে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল রামকৃষ্ণ ও তাঁর ভক্তমণ্ডলীর বঙ্কিমের প্রতি মনোভাব — তাঁরা মোটেও এই মানুষটিকে প্রসন্ন চিত্তে গ্রহণ করতে পারেন নি।
  • এলেবেলে | 230123.142.9001212.61 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৩৩377559
  • * ওই একই বিবেকানন্দ ১১ই মার্চ ১৮৯৯ (নিবেদিতাকে লেখেন)
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.015612.14 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৬377560
  • @দময়ন্তী

    কলকাতা পৌরসভা থেকে প্রকাশিত 'পুরশ্রী' পত্রিকার একটি সংখ্যা 'বাংলার বরেণ্য নারী' তে অবলা বসু সম্পর্কে লেখা রয়েছে, তিনি 'শ্রীমদ্ভগবদগীতা' পাঠ করতে শুরু করেন।

    'কেদারবদরী কেন' এটার অর্থ কি? নিবেদিতার প্রথম জীবনীকার লিজেল রেম' র বইটা পড়ে দেখবেন, ওখানে ১৯০৭ সালে নিবেদিতার সঙ্গে বসু দম্পতির কেদার ও হিমালয় ভ্রমণের কথা বিশদে বর্ণনা আছে। ব্রাহ্মসমাজ বসু দম্পতির হিন্দু তীর্থ ভ্রমণ একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি। অবলা বসুর বাবা দুর্গামোহন দাশ ও জগদীশ চন্দ্রের ভগ্নীপতি আনন্দমোহন বসু।

    নিবেদিতার অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন অবলা ও জগদীশ বসু। সেটা তো আমি উল্লেখই করেছি। নিবেদিতা, সিস্টার ক্রিস্টিন ও সারা বুলের সঙ্গে অবলা বসুর একটি ফটোগ্রাফ আছে। এখন অনেক জায়গায় প্রকাশিত হয়। গুগুলে টাইপ করলেই পাওয়া যায়।

    বিবেকানন্দ, নিবেদিতার সংস্পর্শে এসে জগদীশ চন্দ্র নিশ্চয় কিছুটা হিন্দু ভাবাপন্ন হয়েছিলেন কিন্তু ধর্ম নিয়ে সময় ব্যয় করার কত বেশী সময় তার কখনোই ছিলনা।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.015612.14 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৪377561
  • এই আলোচনাটা আমার ধারণা একদম শুরু থেকে কেঁচে গেছে। রামমোহন রায় শিক্ষিত ও ধনী হিন্দুদের নিয়ে, একেশ্বরবাদচর্চার নাম করে ঔপনিবেশিক শক্তিকে স্থায়ী করার অভিপ্রায়ে 'ব্রাহ্মধর্ম' প্রতিষ্ঠা করেন এবং দলে দলে, ইংরেজি শিক্ষিত যুবকেরা নানা সুবিধে, বিশেষ করে ধনী পরিবারের সুন্দরী কন্যাদের বিবাহ করে রামমোহন কৃত 'এলিট' সমাজের অঙ্গ হবার লোভে সাড়া দিয়েছিল, এই যদি conclusion হয় তাহলে এই আলোচনায় আমার আর আগ্রহ থাকছে না। কারণ এখানে আগে থেকে ঠিক করে নিয়ে এগোনো একটা সরলীকৃত ব্যাখ্যা। এখানে নূতন কোনো দিকই তুলে ধরবার কোনো উপায়ই থাকল না।

    আমি অনেক ব্যস্ততার মধ্যে আজ আমার অনেক বছর আগে কেনা শিবনাথ শাস্ত্রীর HISTORY OF THE BRAHMO SAMAJ' এবং 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ' বই দুটি নামিয়েছি। ভাবলাম আবার পড়ে বেশ কিছু পয়েন্টস তুলে ধরব। কিন্তু দেখলাম আলোচনাটা সূচনার আগেই শেষ হয়ে গেল।

    এছাড়াও আছে সুশোভন সরকার ও দিলীপ কুমার বিশ্বাসের মূল্যবান অ্যানালিসিস।

    একটা কথা আছে 'ধীরে বৎস, ধীরে' , অনেক সময় সেই ভাবে এগোতে হয়, নইলে ঘেঁটে ঘ হতে হয়।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.015612.14 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮377562
  • কেশবচন্দ্র সেন খুব গণ্ডগেলে লোক, সে কালই বলেছি এবং @এলেবেলে যা বললেন একেবারে 'খাল কাটা কুমীর' সন্দেহ নেই। কিন্তু দেবেন ঠাকুরকে দেখে নয়, কেশব সেনের জন্যেই যুবারা অনুপ্রাণিত হতেন ব্রাহ্মধর্মে আসতে। ব্রাহ্মধর্ম যে বাংলার বাইরেও প্রচার পেয়েছিল, যেমন বোম্বাই প্রদেশে 'প্রার্থনা সমাজ' এবং এর শাখা পৌঁছেছিল বর্মা থেকে সুদূর সিন্ধ প্রদেশ পর্যন্ত তার কারণ কেশব সেন। আবার 'কুচবিহার বিবাহ' বিতর্কের পরে যখন কেশব সেনকে সবাই রাতারাতি ত্যাগ করছেন, সেই সময় শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতার 'বুদ্ধিজীবি' জগতে উঠে এলেন এই 'ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি' র দেওয়ান রামকমল সেনের নাতির দৌলতে।

    রামকৃষ্ণ ও কেশব সেন দুজনেই দুজনের খুঁটি ছিলেন। এটা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। কেশব সেন জননীর আত্মকথায় (সারদা সুন্দরী সেনের 'আত্মকথা') এই বিষয়ে মুল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।

    আমার এক কট্টর বামপন্থী রাশীবিজ্ঞানী বন্ধুর সঙ্গে এই বিষয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হত। আমি যেখানে রামকৃষ্ণ ও কেশব সেন দুজনের কঠোর সমালোচক, সেখানে সে দুজনেরই বেশ ভক্ত। তার একটা কথা এখানে জানাতে ইচ্ছে করছে, বিশেষ করে @এলেবেলে'কে।

    ব্রাহ্মধর্মে শুরু থেকে যেটা সব চেয়ে শূন্য ছিল তা হল ভক্তিরস ও ভাবের বড় অভাব। কিরকম একটা চোখ বন্ধ করে সব তত্ত্বচর্চা। কেশব সেন (বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম) এই ধর্মে সেই রস সঞ্চার করতে পেরেছিলেন, সেই জন্যে কেশব সেনের আমলে এই ধর্মের রমরমা হয়েছিল। তার কথানুযায়ী সব ধর্মে লোক মজানোর জন্যে ওইটাই মোক্ষম কথা। কেশব সেন গেলেন, ব্রাহ্মধর্মও সাইডে চলে গেল।

    কেশব সেনকে হারানো ব্রাহ্মধর্মের সবচেয়ে ক্ষতি।
  • অভি | 7845.11.564512.82 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২১377563
  • হুঁ, এইটা বালক সত্যজিতের আক্ষেপ ছিল। সবই খুব গুরুগম্ভীর। অসত্য হইতে আমাদিগকে সত্যেতে লইয়া যাও। রসের কিছু, মজার কিছুর অভাব।
    আলোচনা করুন অর্জুন। শিবনাথ শাস্ত্রীর বইটি ছাড়া আর কোনোটিই পড়ি নি। অনেক কিছু জানার ইচ্ছে রইলো।
  • এলেবেলে | 230123.142.9001212.61 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩২377564
  • @অর্জুন অভিষেক, আমি একটু কাঠখোট্টা টাইপ! আমি কালকেই লিখেছিলাম 'কেশব সেনের পরে পরেই ব্রাহ্মধর্ম তার কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব হারায়'। আপনিও তাই লিখেছেন। তো কনক্লুশন তো একই হচ্ছে!! 'আগে থেকে ঠিক করে নিয়ে এগোনো একটা সরলীকৃত ব্যাখ্যা' কোথায় দেখছেন?

    ১৮৭৫ সালের ১৫ মার্চ বেলঘরিয়ায় জয়গোপাল সেনের বাগানবাড়িতে রামকৃষ্ণ ও কেশব সেন-এর পারস্পরিক সাক্ষাতে যে মুগ্ধতার সূত্রপাত তা বজায় ছিল ১৮৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি কেশবের প্রয়াণের দিন অবধি। মনে রাখা দরকার ১৮৭৫ সালের ২৮ মার্চ রবিবাসরীয় দ্য ইন্ডিয়ান মিরর-এ প্রকাশিত কেশব সেনের বিখ্যাত প্রতিবেদনটির সময় বিবেকানন্দ কিংবা কথামৃতকার শ্রীম কেউই তখনও রামকৃষ্ণ-সংস্পর্শে আসেননি। দ্য ইন্ডিয়ান মিরর-এ প্রকাশিত কেশব সেনের রামকৃষ্ণ বিষয়ক প্রতিবেদন যেমন মূলত কলকাতাবাসীর কাছে তাঁর সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছিল, তেমনই ১৮৭৯ সালের থিস্টিক কোয়ার্টারলি রিভিউ পত্রিকায় কেশব-অনুগামী প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের ‘The Hindu Saint’ প্রবন্ধটি বহির্ভারতে রামকৃষ্ণের পরিচিতি করায়। তবে আপনি যতই 'রামকৃষ্ণ ও কেশব সেন দুজনেই দুজনের খুঁটি ছিলেন। এটা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার' বলুন না কেন রামকৃষ্ণের ভক্তমণ্ডলী কোনোভাবেই কেশব সেনের কাছে তাঁদের গুরুর ঋণস্বীকারে রাজি ছিলেন না।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.015612.14 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫২377565
  • @অভি

    ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের পিতা প্রকাশচন্দ্র রায় ও জননী অঘোরকামিনী দেবী ছিলেন কেশব সেনের 'নববিধান' ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত। তার ওপর প্রকাশচন্দ্র কর্মসূত্রে প্রায় আজীবন বিহারের পাটনায়। 'নববিধান' ব্রাহ্মসমাজ কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ এর প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের কম সময়ে কেশব সেন প্রয়াত হন। নববিধান এর পরে শুধুই কেশব সেনের ও তার কিছু ভক্ত যথা প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের পরিবারের মধ্যে ছিলেন। এ সমাজের মূলত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কেশব সেনের দুই মহারাণী কন্যা, কুচবিহারের সুনীতি ও ময়ূরভঞ্জের সুচারু দেবী। নববিধানের অন্যান্যরা পরে সাধারণের অন্তর্ভুক্ত হন। বিধান রায় রাজনীতিতে আসার পরে ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ করে 'আচার্য' ইত্যাদি করবার পরিকল্পনা হয়েছিল। তিনি নস্যাৎ করে দেন। বিধান রায় রাজনৈতিক ভাবে যে পরিবারের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ 'দেশবন্ধু' চিত্তরঞ্জন দাশের পরিবার- সেই পরিবারই 'দেশবন্ধু' র হাত ধরে তখন মূল হিন্দু স্রোতে ফিরে এসেছে।

    আমার বক্তব্য ব্রাহ্ম সমাজ ঘিরে ব্রাদারহুড ফিলিং কাজ করলেও, ধর্ম প্রসার ও প্রচার নিয়ে একেবারেই উৎসাহী ছিলেন না বিধান বাবু। সত্যজিৎকে 'পথে পাঁচালি' র ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার অন্যতম কারণ অনুরোধ এসেছিল বেলা সেনের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন ডাঃ রায়ের সবচেয়ে কাছের প্রভাবশালী মানুষ ও সত্যজিৎ জননী সুপ্রভা রায়ের বান্ধবী।
  • অর্জুন অভিষেক | 342323.223.015612.14 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৯377567
  • @এলেবেলে,

    'কুচবিহার বিবাহ' বিতর্কে সমগ্র ব্রাহ্ম সমাজ কেশব সেনের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে না লাগলে, আর কেশব সেনও এত লুকোচাপা না করলে ইতিহাস অন্যরকম হত। ঐতিহাসিকদের মত রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের বাড়বাড়াই আদেও হত কিনা সন্দেহ! কেশব সেনের ভূমিকাকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না আর আদি লগ্নে রামমোহনকে ' কলোনাইজেশন তত্ত্বের উদ্ভাবক' এ বিষয়টা আরেকটু ঝাড়াই বাছাইয়ের দরকার বলে মনে হচ্ছে আমার। দিলীপ কুমার বিশ্বাসের মতে রামমোহন 'কলোনাইজেশন' র নেতিবাচক দিকগুলি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।

    আপনার উল্লেখ করা ১৮৭৫ সালে 'বেলঘরিয়ায় জয়গোপাল সেনের বাগানবাড়িতে রামকৃষ্ণ ও কেশব সেন-এর পারস্পরিক সাক্ষাতে'র তথ্যটি মূল্যবান। তবে পরস্পরের মুগ্ধতা কি তখন থেকেই শুরু হয়েছিল ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন