এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ট্রেকিং-এর গল্প

    RATssss
    অন্যান্য | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ | ৯০৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৪৬393532
  • ট্রেকিংএর বড় ভয় সাপ ও জোঁক।
    জোঁকের জন্য নুন রাখুন পকেটে। জঙ্গলের ট্রেক গুলোতে হাঁটু অবধি জুতো (গামবুট ধরনের) ব্যবহার করুন। সাপটি বিষধর নয় ২০০% শিওর না হলে, সাপে কামড়ানো রুগীকে ৪৮ ঘন্টা হাঁটাবেন না। শুইয়ে রাখুন। বাঁধন দেবার জন্য কাপড়ের দড়ি ফাস্ট এডের মধ্যেই রাখুন। যথেষ্ট সাবধান হয়ে শব্দ করে চলুন, ঠাণ্ডায় সাপ কম থাকে - এটা ধ্রুব সত্য নয়।

    ট্রেকিং বেড়ানোর ট্রিপ। যথেষ্ট ফ্লেক্সিবল রাখুন ট্যুর প্ল্যান। প্রথম দিন সবথেকে কম হাঁটা রাখুন, শরীর কে উচ্চতায় খাপ খাইয়ে নিতে দেবার যথেষ্ট সময় দিন। যত ট্রেক এগোবে, তত বেশী দুরত্ব একদিনে কভার করতে পারবেন।

    রাউন্ড লুপ ট্রিপ (কোন এক জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে একদিনে কোন দ্রষ্টব্য দেখে রাতের মধ্যে তাঁবুতে ফিরে আসা) করলে যাবার ও আসবার / ওঠা ও নামবার সমান সময় রাখবার চেষ্টা করুন।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৫৪393533
  • কলকাতা ট্রেকিংএর সমস্ত জিনিষপত্র ভাড়ায় পাবেন বা কিনতে পারেন UBAC-এ
    ঠিকানা:-
    UBAC Mountaineering Association.
    34 Mahatma Gandhi Road,Calcutta - 700009


    হিমালয়ের প্রায় সমস্ত ট্রেকিং রুটের ম্যাপ, ডিটেল, ট্যুর প্ল্যান ও এদের কাছে পাবেন। বুকিং করতেও এরা হেল্পাবে।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৫৮393534
  • UBACএর ফোন নং
    +৯১ ৩৩ ২৩৫১২৬২৮
    +৯১ ৩৩ ২৩৫৪৩৬২৭
  • ranjan roy | 122.168.77.134 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ ১৫:৫৯393536
  • Tan , আমি একটু নাক গলাচ্ছি। নিজের ফার্স্টহ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকে। Youth Hostel Internationalএর লাইফ মেম্বার হয়ে যান। না হলেও যোগাযোগ করুন ওদের সঙ্গে। ঠকবেন না।
    কোলকাতার অফিসটা একেবারে মৌলালীর মোড়ে।
    এদের অনেকগুলো আইডেন্টিফায়েড ন্যাশনাল ট্রেকিং রুট ও স্টেট লেভেল রুট আছে।এদের সারাবছর সীজনাল ওয়েল প্ল্যান্ড ট্রেকিং ক্যালেন্ডার আছে। এদের সঙ্গে গেলে দরকারমত পাহাড়ে চড়ার ছোটখাট ট্রেনিং ও অ্যাক্লেমাটাইজেশন ট্রেনিং করিয়ে দেয়। সারাভারত থেকে আসা আপনার আমার মত আনাড়ী ট্রেকার দের সঙ্গে পরিচয় হয়। আর আপনারা যে some Do's and Donts নিয়ে ভাট কচ্চিলেন তার দরকার হবে না। হেল্‌থ কেয়ার, ফার্স্ট-এড, রানাবান্না এসব নিয়ে মাথাঘামাতে হবে না। ওরা প্রফেশনাল ট্রেকার।
    আমি দুটো ট্রেক এর কথা বলছি।
    দুগ্গোপূজোর সময় ছত্তিশগড়ের সরগুজা জেলার অম্বিকাপুর কেন্দ্র থেকে (ষষ্ঠী থেকে দশেরা) অব্দি ট্রেকিং হয় পাহাড়ের ওপর মইনপাট (সরকারী নাম কমলেশ্বরপুর)পর্য্যন্ত। রোজ জঙ্গলের পথে হাঁটতে হয় অন্তত: কুড়ি কিলোমিটার। রাত্রিবাসের ক্যাম্প, (যেমন টাইগার পয়েন্ট, ফিশ পয়েন্ট) আগে থেকে ঠিক করা থাকে। পেছনে ফেরার প্রশ্ন নেই। শুধু এগিয়ে যাওয়া। প্রথমদিন বেস ক্যাম্পে প্যারাসোলিং করায়। একটা জীপের পেছনে এক কিলোমিটার লম্বা দড়ি বেঁধে আপনার কোমরে বেঁধে দেয়। আর পিঠে বাঁধে প্যারাশুট। জীপ একটু দৌড়ুলে ছোট্ট লাফ দিন। খুলে যাবে প্যারাশুট। আর আপনি এক কিলোমিটার উঁচুতে হাওয়ায় ভাসছেন। তারপর জঙ্গলে চলার নিয়ম-কানুন ও ছোট পাহাড়ে চড়া নিয়ে ফান্ডা দেয়। আর সাত্‌পুরা রেনে্‌জ ছিন্দোয়ারা-ভোপাল বেল্টে এর চেয়েও দারুন একটা ট্রেকিং রেন্‌জ আছে, সময়টা ক্রিসমাসের ছুটি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে।
  • Blank | 59.93.198.162 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ ২০:১৮393537
  • Youth hostel এর অনলাইন মেম্বার হওয়া যায়। খুব কাজের জিনিস, তবে হিমালয়ের চুড়ায় ওদের কোনো থাকার জায়গা নেই :-)
  • tan | 131.95.121.132 | ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০১:১৯393538
  • ঝিন্দ? ঝরোয়া?
    আহ রঞ্জনদা, থ্যাংকু। আপনার পরামর্শটা খুব মনে ধরলো।
    নর্মদার সেই মার্বেল পাথরের উপরের ঝর্ণা ধুয়ানধার কেউ দেখেছেন? কেমন? আর উৎসটা? অমরকন্টকে?

  • Arijit | 77.103.111.51 | ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:২৪393539
  • ইউকেতে রিমোটস্য রিমোট এলাকায় একখান YHA পাওয়া যায়। ফ্যামিলি হলে অত লাভ হয় না, স্পেশ্যালি ছোট বাচ্চা থাকলে - তখন ডর্মিতে থাকার নিয়ম নেই - তিন/চার বেডের কামরা সব হোস্টেলে থাকে না - পেয়ে গেলে ভালো। জেনারেলি কোয়ালিটি বেশ ভালো, এক্সেপ্ট প্যারিসেরটা - আমাদের দেখা সবচেয়ে ওঁচা ইউথ হস্টেল।
  • `' | 66.232.102.157 | ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ ১২:০২393540
  • কয়েকটা রুটেই গ্রামে খাবার পাওয়া যায়। যেমন সন্দাকফু বা গোমুখ-তপোবনে কোনো খাওয়ার বয়ে নিয়ে যেতে হবে না। কিন্তু যদি হাই-অল্টি ট্রেকিং করতে হয় তো নিজেদের খাবার বয়ে নিয়ে জেতে হবে। আর এইসব খাবারের সরযঁআমের জন্যই পোর্টারের দরকার। একসাথে ফুটিয়ে নেওয়ার মতো খাবার যেমন খিচুড়ি বা দালিয়া এইসব খাওয়াই সুবিধে। প্রেসার কুকার, ছোটো কড়া, প্লেট, ছোটো স্টোভ এসব বয়ে নিয়ে যেতে হবে। চাল, ডাল, আলু, চাতু, খেজুর, আম্‌সত্ব, চিনি, দুধ গুঁড়ো, মশলা, ম্যাগি এসব তো নিতে হবে। অন্য কোনো সব্জি হয়তো রাস্তায় পাওয়া যেতে পারে।

    আরেকটা জিনিস জরুরি, সকালের ব্রেকফাস্ট। খালি পেটে হাঁটা কক্ষনো উচিত নয়। গা গোলাবে মাথা ঘুরবে। দর্কারে সকালে খেয়ে পেটে চাপ পড়লে রাস্তায় যেতে যেতে হাগুন, কিন্তু তবু খান। নাহলে হাই-অল্টি তে প্রচুর ব্যাথা হবে। আর আমার মনে হয় মাঁস-টাঁস না খাওয়াই ভালো, এমনিতেই অতো উঁচুতে সেদ্ধ করতে দম বেরিয়ে যায়, তার উপর যে পরিস্থিতিতে রান্না হবে সেটাকে ঠিক হাইজিনিক বলা যায় না, পাহাড়ে পেট খারাপ হওয়ার চান্সও থাকে, তাই ওসব বাদ দেওয়াই ভালো। নেমে এসে নাহয় খাবেন। আর মন খারাপ বা পেট খারাপ বা আর কিচু খারাপ হলে না হয় রাম/ভোদকা খাবেন, কে বারণ করছে? মাতাল না হলেই হলো। আমি তো সকাল এ টেন্ট গোটাবার আগে এক পেগ র ঢেলে নিই। ;-)
  • `' | 66.232.102.157 | ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ ১২:১২393542
  • ইষ্‌হ, পাশে বাংলা দেখতে না পেয়ে প্রচুর বানাম্ভুল করলাম।
  • Arijit | 77.103.111.51 | ১৫ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৩২393543
  • ফুল ইংলিশ ব্রেকফাস্ট খাবো - টোস্ট, বেকড বীনস, সসেজ, বেকন, ফ্রায়েড এগস, মাশরুম, টম্যাটো, ব্ল্যাক পুডিং, অরেঞ্জ জ্যুস।
  • Arijit | 77.103.111.51 | ১৫ জানুয়ারি ২০০৮ ০৪:৩৩393544
  • এট্টু কর্নিশ ক্লটেড ক্রীম? বিকেলের চায়ের সঙ্গে?
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৭ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:৫০393545
  • সান্দাকফু - হাঁটা শুরুর আগে

    ট্রেকিং এর গোড়ার ট্রিপ - সান্দাকফু। যারা অল্প সল্প ট্রেক করে শান্ত সুন্দর জায়গা বেড়াতে আগ্রহী তাদের জন্য। বড় ট্রেক করবার আগে মকসো করতেও ভরসা সান্দাকফু। নতুন দল, প্রথম ট্রেক সবার জন্য

    অনেকদিন ধরে মন খারাপ করে ছিলাম আমরা ৬ বন্ধু, চাকরি পেয়ে ২ জন কলকাতার বাইরে, আমারও যাবার সমন চলে এল বলে, এর পরেও কি কোনদিন আর বেড়াতে যাওয়া হবে সবাই মিলে! মনটা তাই খারাপ। কেউ একটা বললে :- বেড়ানোর দল ভেঙ্গে যেতে পারে, কিন্তু তা বলে বেড়ানো বন্ধ হবে কেন? কেমন যেন মনে ধরল কথাটা আমাদের। শুরু হল বেড়ানোর প্ল্যান - দার্জিলিং। ঠিক হল কালীপুজোর রাতে রওনা হব, শিলিগুড়িতে পার্থর দিদির বাড়িতে সকলের ভাইফোটা প্রতিপদে, পরের দিন দার্জিলিং - ৪ দিন থাকার প্ল্যান। নতুন সদস্যরা দলের সঙ্গে মানিয়ে নিক ছোট্ট ট্রিপে। সবাই মিলে মহালয়ার দিন সকালে বসা হবে, তার পরে টিকিট কাটা - ইত্যাদি। নতুনের মধ্যে মোষ (ভালোনাম মহীতোষ) আর গলু । পুরোনো চারজন - পার্থ, চোর, মক্ষী আর দানু (মানে আমি)। (এগুলো কলেজ লেভেলের নাম - অন্য কেউ ডাকলে উত্তর পাবে না)
    দেখতে দেখতে চলে এল মহালয়া, সক্কাল সক্কাল পার্থর বাড়িতে পৌছে গেছি। পুরো জনতা উপস্থিত ১০টার মধ্যেই। তারপরে তিন চার ঘন্টার উত্তাল আলোচনায় দার্জিলিং পাল্টে গেল সান্দাকফুতে - ৪ দিনের থাকা পাল্টে গেল ৭ দিনের হাঁটায়। ট্রেকিং যেহেতু, পরিকল্পনা অনেক বেশি, তাই ২ ঘন্টার বিরতিতে আবার আলোচনা শুরু - দায়িত্ব ভাগ করা।
    পরের দিনই টিকিট কাটা হল শিয়ালদহ থেকে এনজিপি - দার্জিলিং মেল।
    দুজনে ছুটলো ইউব্যাক-এ ট্রেক ডিটেল আনতে। আপিস থেকে ফিরে পরপর ২-৩ দিন ধরে চলল আলোচনা - পর্যালোচনা। তৈরি হল সান্দাকফু ট্রিপ প্ল্যান - ৭ দিন হাঁটা। ট্রেকার্স হাটে থাকা, খাওয়া গ্রামে গঞ্জে। বেড়ানোর গল্পে প্ল্যানের গল্প না লিখে আমরা সোজা চলে যাই কালীপুজোর রাতে ৯ই নভেম্বর (?)। শুধু দুটো তথ্য জানিয়ে রাখি - সান্দাকফুর ট্রেকার্স হাটে বুকিং পাওয়া যায় নি - জনগন বলেছে দরকার হলে কালিপোখরীতে থেকে সান্দাকফু দেখবে। আর ফেরার টিকিট কাটা হয় নি, জানা নেই জনতা ঠিক ঠাক হেঁটে সময় মতন ফিরতে পারবে কি না - মতান্তরে সবকটা ফিরতে পারবে কি না :-)

    প্রবল শব্দে মাইক বাজছে চতুর্দিকে - কালিপুজো/দীপাবলীতে সবই মাতোয়ারা, সকাল বেলায় ইউব্যাকের সামনে আমরা হাজির। নেওয়া হল রুকস্যাক, ম্যাট, স্লিপিং ব্যাগ। বৈঠকখানা বাজার থেকে কেনা হল প্লাস্টিক সহ হাবিজাবি অনেক কিছু। জিনিষ পত্র সব নিয়ে দলপতি পার্থর বাড়িতে সবাই পৌছলাম একে একে। আগে থেকে ভাগ করে রাখা ছিল কার ব্যাগে কি থাকবে, আমার হাতে ক্যামেরা আর পিঠে ওল্ড মঙ্ক। যদি শ্বাস কষ্ট হয়, এ আশঙ্কায় ঔষধের বান্ডিলও আমার কাছে। বিকেল ৫ টার মধ্যেই সবাই ব্যাগ বেঁধে রেডি। মাত্তর ৩ সেট জামা কাপড় - এক পিস পরে যাওয়া, এক পিসে হাঁটা ও একপিসে ফেরা। সাড়ে সাতটায় দার্জিলিং মেলের স্লীপারে আমরা ৬ জনের বাওয়ালী শুরু হল। চলল অপটু হাতে অল ব্রে খেলা। পার্থর মা-র দেয়া লুচি - আচারের - রাতের খ্যাটন খেয়ে লম্বা ঘুম। সকালে শিলিগুড়ি। দিদির বাড়িতে চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় খেয়ে ফেরার জামা-কাপড় দিদির কাছে জমা রেখে বিকেল বিকেল রওনা দিলাম। তার আগে দিদিকে অবশ্য অনেক করে বোঝাতে হয়েছিল হেঁটে হেঁটে কেন বেড়াতে যেতে হয় :-) যদিও দিদি কিছুতেই মানেনি এটা আমাদের মতন বাচ্চাদের করা উচিৎ। জামাইবাবুকে ফিট করা হল - আমরা রিম্বিক থেকে ফোন করব - তার পরে তিনি প্রথমে ট্রেনের টিকিট চেষ্টা করবেন - না পেলে বাসে কলকাতার টিকিট কাটবেন।
    --- এতদুর প্ল্যানড ট্রিপ - সফল না হয়ে যায়!!!
    শুরু হল ভুলভাল করা : শিলিগুড়ি বাস স্ট্যাণ্ডে বিকেলে মানেভঞ্জনের বাস পাওয়া যায় - প্রথম তথ্যটাই ভুল। ট্রেকার দলের সঙ্গে বিপুল খিচাটানি করে ১৫০০ টাকায় রফা হল, সে আমাদের মানেভঞ্জন বাজারে নিয়ে যাবে। বিকেল ৪ টে নাগাদ শুরু হল চড়াই চলা। মিরিকের রাস্তা পেরিয়ে, পাঙ্খাবাড়ির রাস্তায় ঘুমের দিকে চলা। সন্ধ্যের মুখে পৌছলাম মকাইবাড়ি টী এস্টেটের সামনে। কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক, বৃষ্টি হচ্ছে অনবরত। আবহাওয়া দেখে আমাদের মুখ গোমড়া। এমন বিতিকিচ্ছিরি ওয়েদারে ট্রেকিং করে হবে কি! কিছুই তো দেখা যাবে না! বাইরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। জীপের হেডলাইটে হাত দশেক দেখা যাচ্ছে, ড্রাইভার বাবুও কেমন যেন কনফির অভাবে ভুগছেন। হিলকার্ট রোডে পৌছনোর মুখে পার্থ প্রোপোজাল দিল, আজ রাতে ঘুম বা দার্জিলিং চলে যাওয়া হোক, আগামীকাল ভোরে মানেভঞ্জন। মনে ধরল আমাদের সকলের, সোজা পৌছলাম শ্রেষ্ঠা লজ। ম্যালের রাস্তায় এই লজে আমরা বহুবার এসেছি, মালিক বেলঘড়িয়ার ছেলে, প্রচুর আনন্দ করে আমাদের বরন করলে। সঙ্গে সঙ্গে পরের দিন সকালের ৫টায় জীপও বুক করা হয়ে গেল। আমরাও সেদিয়ে গেলাম হিটারের চারপাশে।

    (চলবে)
  • nyara | 67.88.241.3 | ১৭ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:১৭393546
  • বাপধন, মহাকালের খাতায় যখন লিখেই রাখছ তখন ভ্রমণের সনটা অন্তত দিয়ে দাও। সময়ের একটা রেফারেন্স থাকুক। দিব্য হচ্ছে।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৭ জানুয়ারি ২০০৮ ০৪:০৩393547
  • পরের দিন সকাল ৪টের সময় অ্যালার্ম বাজল, গলু বাইরে বেড়িয়ে জরিপ করে বললে, প্রচন্ড মেঘ আর কুয়াশা, বৃষ্টির মতন শিশির পরছে, সারারাত নাকি অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে (কি করে বুঝল কে জানে) ড্রাইভার নাকি এত বাজে ওয়েদারে আসবে না। তাই ও এখন আরো একটু ঘুমোবে বলে ঢুকলো লেপের ভেতর, সুব্বারাওয়ের উপর অসীম ভরসায় আমরা শুরু করলাম বাথরুমে যাওয়া আসা। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় পৌনে ৫ টায় জীপ হাজির। প্রায় ছোটাছুটি করে আমাদের শেষ মিনিটের প্রস্তুতি শুরু হল। দার্জিলিং কে বাই বলে চল্লুম মানেভঞ্জন। দেড় ঘন্টার রাস্তা পৌছতে প্রায় ৩ ঘন্টা লাগল। মানেভঞ্জন বাজারে নামলাম তখন প্রায় সকাল আটটা। প্রথমেই কাজ খাওয়া। পুরোদমে ব্রেকফাস্ট করে পেট ঢাপুস করে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে আমাদের হাঁটা শুরু হল। প্রথম দিনের হাঁটাতে আমরা অলরেডি ৩ ঘন্টা পিছিয়ে। জোরে হেঁটে মেকআপ করে নেবার কোন সম্ভাবনা নেই। ইচ্ছে ছিল প্রথম দিন গৌরিবাস পর্যন্ত যাবার। ট্রেকার্স হাটের বুকিংও ছিল গৌরিবাসে। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে হাঁটার তালও অনেক ঢিমে। এর উপরে প্লাস্টিক - মাথা সহ রুকস্যাকের উপরে, ভেতরে আমরা ঘেমে নেয়ে একসা। একটু চলে গা গরম হল, জ্যাকেট খুলে মাথায় টুপি, রুকস্যাকের উপর প্লাস্টিক তখন, ভিজতে ভিজতে হাঁটা, দাঁড়ানো যাচ্ছে না, হাওয়ায় কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে মুহুর্তে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, হাঁটার জোর বাড়ানো ঠিক হবে না কোন ভাবেই, ধীরে ধীরে দেখতে দেখতে চলতে থাকা যাক, গৈরিবাসের বুকিংএর পয়সা গুলি মারো। দুদিনে সান্দাকফু পৌছনো সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে, তিনদিনে যাবো আমরা। থেকে যাব প্রথম দিন টংলু তে। প্রথম দিনের হাঁটাটা হঠাৎ করে কমে যাওয়াতে কেমন যেন আনন্দ জাগল মনে, কেমন একটা নিশ্চিন্তি। অল্প খানিকক্ষন পরেই শুরু হল গভীর জঙ্গল - সাংগ্রীলা(?)। জনপ্রতি কি একটা দামও নিয়েছিল ফরেস্টে ঢোকবার আগে। বৃষ্টি থেমে এসেছিল বিকেলের দিকে। ১১ কিলোমিটারের চড়াই শেষ করে টংলু পৌছলাম বিকেল ৩টে নাগাদ। মেঘে ঢাকা চতুর্দিক, তবু কি সুন্দর লাগছে সবকিছু। গাছগুলো মনে হচ্ছে বেশী সবুজ, পাহাড়ী কুকুর গুলো কি সুন্দর লোম গায়ে। ছোট্ট ছোট্ট গ্রামে ৭-৮ ঘর করে মানুষের বাস, তার মাঝেই একটা দুটো চা-এর দোকান। বহুবার চা খেলাম আমরা। ছাগলের দুধের চা বলে হয়ত, প্রবল ঠাণ্ডায় ভেজা গায়ে হাঁটার জন্য হয়ত - কি ভালো লাগছিল চা খেতে। একটু পরে পরেই মোষ বলে পার্থ- চা। পার্থর একটা নাম পাওয়া গেল এতদিনে পার্থচা থেকে পচা।
    টংলু পৌছে প্রথম কাজ খাওয়া। পাওয়া গেল একটা ছোট্ট দোকান - খিচুরি বানিয়ে দেবে গরম গরম। ৫-৭টাকা দাম নিয়েছিল জনপ্রতি তবে গরম গরম খিচুরি ছিল অমৃতের মত। আমাদের স্টকের কুরকুরে সহযোগে ভরপেট খাওয়া হল। কতটা খিদে পেয়েছিল বুঝলাম। খাবার পরে এবার রাত্রিবাস - তার জন্য শিখর লজ তো আছেই। গোটা সান্দাকফু ফালুট ট্রেকের পথে যে কতগুলো শিখর লজ। থাকার দামটাও একদম একদর। ৩০টাকা জনপ্রতি সঙ্গে ডিনার ও ব্রেকফাস্ট ফ্রি। (দামটা নিশ্চই এখন কিছুটা বেড়েছে - এটা ১৯৯৬-৯৭ সালের গল্প)
    একটা বড় ডরমিটরিতে ব্যাগ পত্র রেখে একটু গরম হলাম প্রথমে :-) ওল্ড মঙ্ক কা জবাব নেহী :-) বাইরে বৃষ্টিও থেমেছে, সন্ধ্যে হতেও বেশ খানিকক্ষন বাকী। টুংলিং পাহাড়ের মাথা থেকে সূর্যাস্ত নাকি দারুন দেখায়, কিন্তু আকাশের যা মুখ তাতে তো সূর্যর দেখাই পেলাম না সারাদিনে তো সূর্যাস্ত। সবাই মিলে গেলাম গ্রাম পরিদর্শনে। গ্রামের বাচ্চারা আমাদের দেখলেই দৌড়ে আসে, মিঠাই চায়। পকেট ভর্তি করে লজেন্স নিয়ে গলু চলেছে বিলোতে বিলোতে। খুশী হয়ে মিষ্টি হেসে ওরা দৌড়ে চলে যায়। টংলুতে দু-একটা জীপও আছে, রেশন দোকান মায় প্রাইমারি স্কুল দেখে বিস্তর খুশী হলাম। সন্ধের মুখে ফিরে এলাম শিখর লজে। খাবার ঘরে চলল হীটার পোয়ানো বাইরের নিচ্ছিদ্র অন্ধকার দেখা, জোনাকির আলো ছাড়া আর কিছুই নেই সামনে। ৩৫০০ মিটার উপরে উঠে এসেছি, তাই নিয়ম জারি হয়েছে মদ্য পানের উপর। মালের অভাবে গান শুরু করলে পচা। সুরতাল বিহীন কিছু বেসুরো চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে একটু পরেই শুনতে পেলাম "খানা লাগা দু সাব'। খেয়ে দেয়ে জমাটি ঘুম রাত আটটাতেই।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ ০৭:১২393548
  • ঘুমের মাঝে একটু সান্দাকফুর রাস্তার কথা বলে রাখি। মসৃন কালো চৌকো চৌকো পাথর ফেলা রাস্তা, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় ইট ফেলা বুঝি। এটা আসলে জীপ চলবার রাস্তা। দু কদম পরে পরেই চৌকাঠের মতন ছোট্ট উচু একটা পাথরের লাইন। জীপ নামবার সময় বা উঠবার সময় পিছলে না যাবার জন্য। তবে জীপে করে এরাস্তায় কোন ভিআইপি যাতায়াত করেন বুঝিনি প্রথম দিন। পরে অবশ্য দেখেছিলাম এক কাহিল ট্রেকিনি কে জীপে তুলে ফেরত আনতে। আমাদের দেশে হেলিকপ্টার পাওয়া মুশকিল তবু এই রাস্তায় চাইলে ২-৪ ঘন্টার মধ্যে জীপের সাহায্য পাওয়া যায়। গ্রামবাসীরা জীপের সাহায্যে চাল ডাল আলু সহ বিভিন্ন খাদ্যও রিম্বিক/মানেভঞ্জন থেকে নিয়ে আসে। তবে কালিপোখরি থেকে সান্দাকফুর রাস্তায় শেষ ৪ - ৫ কিলোমিটার এতটা চড়াই যে ঐ ১৯৫০ সালের ল্যাণ্ডরোভার মাল নিয়ে চড়তে পারে না। ভরসা তখন মানুষ। বাজারে বা রেশন দোকানে বিশাল সাইজের চালের বস্তা দেখেছি আমরা সকলেই। বোধহয় ৫০ কেজি করে হয় একএকটা। একটা দড়ি দিয়ে সেটা মাথার সঙ্গে বেঁধে পিঠে ফেলে এক অদ্ভুত কেতায় গ্রামের লোকেরা সেগুলো নিয়ে আমাদের পাস কাটিয়ে অবলীলায় চলে যায়। পায়ে ছেঁড়া হাওয়াই চটি। সে দেখে নবীন ট্রেকারের ধারনা হতে পারে হাওয়াই চটি ইস মোর এফেকটিভ দেন নাইকের স্নিকার :-) ভাগ্গিস এ যাত্রায় এক্সট্রা চটি নিয়ে আসা হয় নি - নয়ত চেষ্টা করে দেখার সখটা দমন করা বেশ কঠিন হত।

    তবে পুরো রাস্তাটাই জীপএর রাস্তা নয়। পায়ে চলার জন্য অনেক সময়ই শর্টকার্ট পথে ছোট রাস্তায় / বেশী খাড়াই রাস্তায় চলা। ওজন নিয়ে চড়াইতে চলার জন্য হাঁটা শুরু মাত্রই ঘামে ভিজে যাওয়া, আর দাঁড়ালেই ঠাণ্ডায় কাঁপুনি - এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথম রাতের আর একটা অভিজ্ঞতা বলে রাখি। দ্রুত অনেকটা উপরে উঠে এসেছি আমরা। অল্পেতেই রেগে যাওয়াটা একদম স্বাভাবিক। এতভালো বন্দোবস্ত থাকা সত্তেও দলের দু জন প্রচণ্ড খেপে গিয়েছিলো। অভিজ্ঞ দলপতি পার্থ তাদের দ্রুত ঘুমোতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হালকা ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করলে। একটা ভালো ঘুমের পরে সকালে সকলেই ফ্রেশ।

    অন্ধকার থাকতেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল সবার। তবু বেশ খানিকক্ষন অলস ভাবে বিছনায় পরে রইলাম। মক্ষীর দায়িত্ব ছিল সকলকে তুলে খাওয়ানো। ছাতু ও আচার সহযোগে ব্রেকফাস্ট হল। আর দু চামচ করে মধু। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতায় আমাদের পোষাকের প্রচুর পরিবর্তন। ঢিলে ট্র্যাকশ্যুট আর সঙ্গে একটা হাফ হাতা টি শার্ট আজকের জন্য। আকাশে আলোর ছোঁয়া লাগার একটু পরেই আমাদের হাঁটা শুরু হল। আজ আকাশে মেঘের আধিক্য কম কিন্তু এখনো আকাশের নীল দেখা যাচ্ছে না। ঠাণ্ডা হাওয়ায় প্রথমে কষ্ট হলেও একটু পরেই আবার ঘাম ঝরা শুরু হল। আলো ফুটছে চারিদিকে, পাহাড়ি ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা। মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ি গোলাপ - পাগল করা গন্ধ তার। আর আছে অর্কিড। হিমালয়ের এই অঞ্চলে এত অর্কিড দেখা যায় - তবে তারা বুনো, ফুলের সৌন্দর্যে পাশ নম্বর পাবে না - হয়ত এই সময়ে সুন্দর ফুলের অর্কিডরা ফোটে না। গাছের গায়ে মস ভরে আছে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। কতটা করে জল ধরে রেখেছে তারা। পাগল করা সবুজের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা হেঁটে। শুধু আমরা কেন - কত লোকইতো ট্রেক করে চলেছে - অনেক বিদেশী ছেলে মেয়েও। হাই - হ্যালো করতে করতে এগিয়ে যাওয়া, কুশল আদান প্রদানের সঙ্গে আরো কত জিজ্ঞাসা - কে কোথা থেকে এসেছে, রাতে কোথায় ছিল, আজকে কতদুর হাঁটবে, কবে দেশে ফিরবে, কলকাতায় থাকবে কি না, এমন কি বাড়িতে কে কে আছে তাও। একই দিকের ২-৩ টে দলের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গেল সারাদিনে।

    (চলবে)
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০৪:০৩393549
  • আজ আর শুধু একঘেঁয়ে ওঠা নয়, চড়াই তো আছেই কিন্তু উৎরাইও যে মন্দ নয়। নিচের দিকে নামতে হলে প্রায় দৌড়ে নামছিলাম আমরা। একটু নিচে নামার পরে একটা বেশ কঠিন ওপরে ওঠা থাকবেই। ৪-৫ বার নামা ওঠা করে বেশ বুঝে গেছি তখন - নামা দেখলে আনন্দের কিছু নেই। গৈরিবাস অনেকটা নিচে উপত্যকার মধ্যে। টুংলিং পেরোতেই প্রচন্ড খিদে চাগার দিয়ে উঠতে লাগল। জলের স্টকও প্রায় শেষ। বিস্কুট - চা খাওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। ছোট্ট ছোট্ট গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা গেছে। কোনক্রমে ভাঙ্গাচোরা একটা মাথা গোঁজার ঠাই আছে সকলের। হাইজিনের চিন্তা কেউ করে না। তাই সারাদিনের সমস্ত প্রকৃতির কাজ প্রকৃতিতেই করেছি আমরা। টিস্যুর স্টক বাঁচাতে খবরের কাগজ, জঙ্গলের পাতার ব্যবহার হয়েছে যথেষ্ট। টুংলিং থেকে গৈরিবাস পর্যন্ত পুরোটাই প্রায় নিচে নামা। দুদিকেই খাত নেমে গেছে এমন একটা সরু রাস্তা দিয়ে প্রায় দৌড়েই চলেছি আমরা। অবশ্য রাস্তার ভয়াবহতা টা বেশী বুঝতে পারিনি। ঘন মেঘের ভেতর দিয়ে শুধু মাত্র রাস্তাটাই দেখা যাচ্ছিল। যত নিচে নামছি তত ঘন হচ্ছে মেঘ। মেঘের ভেতরে থাকলে তো আর মেঘ লাগে না, মনে হচ্ছে চারিদিকে কুয়াশা। কে বলবে দিনের বেলায় মাত্র ১১টা বাজে। চপচপে ভেজা হয়ে গৈরিবাস পৌছতে দুপুর বারোটা বাজল। বেশ তিন চারটে দোকানে খাবার বন্দোবস্ত। তবে সব যায়গায় এক দর। ৫-৬ টাকা করে ভরপেট খিচুরি। কোনটাই বানানো নেই। অর্ডার দিলে বানিয়ে দেবে। বেশ পরিস্কার ঝকঝকে তকতকে নিকোনো দোকান। খিচুড়ি তৈরি হতে হতে ঘামে জলে ভেজা জামা ছেড়ে গরম জামা চাপালাম সকলেই। আর নিজেকে গরম রাখতে বিড়ি ভরসা। এক দুই ঢোঁক রাম খেলে কেউ কেউ। কিন্তু কারন বারি অল্প পেটে পরলে কি গা গরম হয়! বড় শালপাতার থালায় গরম - পাতলা খিচুরি আলু সহযোগে হাপুস হুপুস চলল যতক্ষন না পেট ঢাপুস হয় :-)
    আবার শুরু হল হাঁটা। এই রাস্তাটা কখন ভারতে আছে কখন নেপালে বোঝা খুব দায়। প্রথম দিনেই মানেভঞ্জনের পরে প্রথম জনপথ ছিল চিত্রে, তার পরে মেঘমা। এখন জানলাম মেঘমার থেকে যে রাস্তায় আমরা টুংলিং এসেছিলাম সেটা নেপালের ভেতর দিয়ে। ভারতীয় নন এমন ট্রেকাররা ঐ রাস্তায় যেতে পারেন না। তাদের জন্য একটু ঘুরপথে আরোএকটা রাস্তা আছে যেটা নেপালের সিমান্তের ভেতরে ঢোকে না। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন হয়ে গেল - অথচ জানলামই না । অবশ্য এর কোন দু:খ সান্দাকফু ট্রেক রাখে নি। মাঝে মধ্যেই সীমান্তের নির্দেশক কংক্রিটের সাইনপোস্ট নজরে আসে, যার একদিকে ইন্ডিয়া অন্যদিকে নেপাল লেখা। টুক করে একটা ছোট্ট লাফ দিলেই নেপালে পৌছে যাওয়া যায়, কেউ কোথাও নেই বাধা দেবার।
    গৈরিবাস থেকে আবার উপরে ওঠা। তবে এবারে প্রথম দিনের মতন কষ্ট হচ্ছে না। হাঁটতে হাঁটতে হয়ত অভ্যস্ত হয়ে পরেছি আমরা। শুধু মাঝে মধ্যে আমাকে ইনহেলারের ফুস ফুস নিতে হচ্ছে।

    (চলবে)
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৩৩393550
  • গৈরিবাসে খাওয়াদাওয়া সেরে রওনা হতে হতে প্রায় একটা দেড়টা বেজেছিল। টানা তিন চার ঘন্টার হাঁটা এবার। সন্ধ্যে হবার আগেই পৌছতে হবে কালিপোখরি। কেমন যেন অবাক করা নাম।ং মার্কা নাম না হলেই কেমন সন্দেহ জাগে কে দিল নামটা । আসলে এখানে একটা পাহাড়ের মাঝে সুন্দর ছোট্ট পুকুর আছে। কালো টলটলে জলের জন্যই জায়গার নাম কালিপোখরি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ পৌছলাম কালিপোখরির পারে। পোখরির চারিদিকের গাছগুলোকে কে যেন পুড়িয়ে দিয়েছে। এ অঞ্চলে তো দাবানলের সম্ভাবনা নেই তবুও গাছগুলো পোড়া কেন? উত্তরটা পাওয়া গেল না কারো কাছে। একে ওকে জিজ্ঞাসা করে পৌছে গেলাম ট্রেকার্স হাট। সাজানো গোছানো সুন্দর কাঠের বাংলো। ঝকঝকে তকতকে খাট বিছানা দেখে মন ভরে গেল। তবে গতরাতের মতন লেপ তোষকের বন্দোবস্ত নেই। নিজের নিজের স্লীপিং ব্যাগে প্রথমবার ঘুমোতে হবে। ট্রেকার্স হাটে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত নেই। তাই ভরসা কাছাকাছি গ্রামের বাড়ি। খিচুরি খেতে হবে রাতেও। পার্থ আর আমি বেড়োলাম অন্য কিছু পাওয়া যায় কি না খোঁজ করতে। ডিমের ঝোল রুটির বন্দোবস্ত হল। তবে এক্ষেত্রে দামটা একটু বেশী পরল। নো পরোয়া - মুখ তো বদলালো। অন্ধকার হলে কিছুই করার নেই, মেঘের জন্য আকাশও দেখা যায় না, এতটা রাস্তা চলে এলাম আমরা এখনো পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার মুখ দেখলাম না। মনটা তাই খারাপ। পাহাড়ী ঠাণ্ডায় সিগারেট খেয়ে কোন ফিলিং হচ্ছে না, আসলে ঠাণ্ডায় মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে এমনি এমনি। আমরা সিগারেটখোরের দল একটা টান দিয়ে মিনিট খানেক ধরে ধোঁয়া ছাড়ছি।
    আজ আমাদের ট্রেকের দুরত্ব ছিল সবচেয়ে বেশী। ১৫ কিলোমিটার হেঁটেছি আমরা আজ। ট্রেকার্স হাটে গরম জলের সুন্দর বন্দোবস্ত। দুটো বালতিতে গরম ঠাণ্ডা জল নিয়ে ডুবিয়ে রাখা। বেশ খানিকক্ষন গরম ঠাণ্ডা জল করে উঠলাম। মনে হচ্ছে দাঁড়াতে পারছি না। সকলেরই এক অবস্থা। আমাদের কালাপোখরিতে ২ দিনের বুকিং আছে, সিদ্ধান্ত হল যদি বেশী অসুবিধা হয় ফুলে ওঠা পা গুলোকে আরাম দিতে আমরা একদিন দরকার হলে কালিপোখরিতে থেকে যাবো। পায়ের ব্যাথায় ঘুম ও হল না ভাল করে। বেশ কয়েক বার রাতে ঘুম ভাঙল স্লীপিং ব্যাগের অপ্রসস্থতার অনভ্যাসে। তবু ক্লান্ত শরীর ঘুমিয়েছিল ভালই নিশ্চয়। বিশ্রামও পেয়েছিল অনেকটা। সকালের অ্যালার্ম ৫টার বদলে ৭টা করে দেওয়া হয়েছিল আজ। উঠে একে অপরের দিকে "কিরে কেমন আছিস' গোছের তাকানো। অতি আশ্চর্য, সবাই সুস্থ আর চাঙ্গা। দেরী করে ওঠার জন্য বেশ লজ্জিত। দ্রুত খাওয়াদাওয়া করে তৈরি হয়ে নেওয়া হল। যেহেতু আমাদের বুকিং আছে আরো এক দিন, ফিরে আসতে পারি জানিয়ে পুরো মালপত্র নিয়েই রওনা দিলাম। আশা গ্রামে কোথাও না কোথাও থাকার যায়গা পেয়ে যাবো। আজ হাঁটার পরিমান খুব কম কিন্তু বেশ কঠিন খাড়াই ওঠা। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এল বিখেভঞ্জন। এখান থেকে সান্দাকফু মাত্র ৪ কিমি। কিন্তু ম্যাপে শুধু প্যাচানো রাস্তা দেখানো আছে। দুপাসে রোডোডেনড্রনের আর পাইনের গাছ, মৃদু রেজিনের গন্ধে মাতোয়ারা। আলো বেড়েছে অনেক তবে এখনো ঘন কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা চারিদিক। মাটির দিকে চোখ রেখে আস্তে আস্তে হাঁটছি আমরা। ধীরে ধীরে বাড়ছে আলো, হালকা হচ্ছে চারিদিক। প্রকৃতির এক অপূর্ব পরিবর্তন ঘটছে চোখের সামনে। উত্তেজনায় আমাদের মুখে কথা নেই, অবশ্য চড়াই ভাঙার জন্য কথা বলার মতন অবস্থাতেই নেই কেউ, সাঁই সাঁই করে দম পড়ছে, অনবরত ইনহেলার নিচ্ছি আমি। আমার থেকে ইনহেলারের ভাগ অন্যেরাও নিল কেউ কেউ। সিগারেটে টান দেবার মতন দম নেই কারো। তবু এগিয়ে চলেছি আস্তে আস্তে। প্রায় ২ ঘন্টা সময় নিলাম আমরা। অবশেষে আমরা মেঘের উপরে, পরিস্কার আকাশ মাথার উপর। আর মাত্র কিছু দুরেই সান্দাকফু - পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরো ৪ টে বাঁক বাকি - বলে গেল উল্টোদিকের থেকে নেমে যাওয়া আর একটা দল। চারটে বাঁক - শেষ হচ্ছে না কেন? কটা বাঁক পেরোলাম কেউ গোনে নি। হঠাৎ করে সামনে গাছ গুলো আর উপরে নেই, রাস্তাটা সমান হয়ে গেছে, আমরা পৌছে গেছি সান্দাকফু। আমাদের উপরে কোন মেঘ নেই তবে এখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে না, পুরো মেঘে ঢাকা। মজা লাগল সান্দাকফুর মাথায়ও ইন্দো নেপাল সীমান্তের চিহ্ন দেখে। অনেকটা টেবলটপ মাউন্টেনএর মতন। মধ্যিখানে অনেকটা সমান জায়গা। ট্রেকার্স হাটটাও ঠিক মধ্যিখানে। আর একপাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা অন্য দিকে ২-৩ টে গ্রামের বাড়ি। কুকুর ছাগল গরু চরে বেড়াচ্ছে। অবাক হতে হয় এরা এখানে থাকে কি করে! এতো প্রায় গুহা মানবের জীবন। শুধু পশুপালন এদের জীবিকা। মাথায় ঐ বিরাট বস্তা নিয়ে খাবার নিয়ে আসা। এটাই হয়ত এদের জীবন - সামনে ১৮০ ডিগ্রি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে হয়ত এদের পেট ভরে - কে জানে!
    ট্রেকার্স হাটে স্থান নেই, তবে গ্রামবাসীরা আমাদের এবারেও ফেরালো না। একটা বেশ বড় ঘর পাওয়া গেল, সঙ্গে দুপুরের খিচুড়ি - ঐ একই অস্বাভাবিক কম দামে। ঘরে আবার কাঠের বাঙ্ক বেডের বন্দোবস্ত। তবে কোনক্রমে বানানো কাঠের বাড়ি, হাওয়া বাতাসের অবাধ যাতায়াত। একটা সিমেন্ট মাখার কড়াইতে কয়লা জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন গৃহ কত্রী। মোটা জ্যাকেট চাপিয়ে আগুন পোয়ানো - আর অপেক্ষা করা যদি মেঘ সরে যায়। বড় বড় টুকরো করে পেঁয়াজ দেওয়া খিচুড়ির ঝোল খাওয়া হল। প্রবল ঠান্ডায় খিদের মুখে গরম খিচুরি অমৃতের সমান। সারাদিন রাত সময় সান্দাকফু দেখার। খেয়ে দেয়ে কাঞ্চনের দিকে মুখ করে বসে রইলাম - মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকিও দিল সে মাঝে মধ্যে। সেই অল্প দেখায় তার বিপুল বিস্তৃতির খানিক আভাস পেলাম। বেশ জোরালো হাওয়া চলছিল। রঙ বেরঙের কাপর লাগানো বৌদ্ধ ধর্ম পতাকা গুলো রঙ ছড়াচ্ছিল চারিদিকে। সান্দাকফু কথার অর্থ হল বিষাক্ত ফলের বা গাছের জায়গা। তাই এখানে প্রকৃতিতে সাড়া দিতে গেলে অতিরিক্ত সাবধানতা গ্রহন করা উচিত।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৪৭393551
  • বিকেল নাগাদ সামনের মেঘের চাদর সরে গেল অনেকটা। সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের সামনে। প্রতিটা খাঁজ যেন হাত বাড়ালেই ছোয়া যাবে। এরিয়াল ডিস্ট্যান্স মাত্র ৮০ কিলোমিটার। সত্যি মনে হচ্ছিল এই দৃশ্য দেখবার জন্য বার বার আসা যায় সান্দাকফু, এমন কি বাড়ি বানিয়ে থেকেও যাওয়া যায় সান্দাকফু, খাবার দাবার না হয় নাই থাকল। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নেপালীরা দেবতা বলে পুজো করে। তাই হয়ত পর্বতোরাহীদের কাঞ্চনজঙ্ঘায় চড়তে অনুমতি সহজে দেওয়া হয় না। তবে এভারেস্টের মতন এর তো একটা শৃঙ্গ নেই। গোটা আকাশ জুড়ে কাঞ্চন। শ্বেত শুভ্র কাঞ্চন যেন স্নিগ্‌ধতা, এত বড় হয়েও কত কাছের। এ ব্যাপ্তি সৌন্দর্য ক্যামেরায় আনবার দায়িত্ব ছিল আমার, ফ্লিম এসএলআরে এসেছিল কিছু, কিন্তু এত বিস্তার ধরার মতন ফটোগ্রাফার আমি নই, অত ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সও আমার ছিল না, তাই মনের ক্যামেরাতেই বেশিরভাগটা রয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সূর্য পশ্চিমে - আর শুভ্রতায় রঙ লাগল কাঞ্চনের। সাদা থেকে রঙিন হয়ে ধুসর হয়ে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল আমাদের চোখের সামনে। আমরাও ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ঢুকলাম স্লীপিং ব্যাগে। মক্ষী সকল কে দায়ীত্ব নিয়ে ছাতু মাখা ও আচার খাওয়ালে। আমরা স্লীপিং ব্যাগ থেকে মুখ বের করে শুয়ে রইলাম - আর মেজর মিল ডাইরেক্ট মুখে সার্ভ করলে মক্ষী।
    (চলবে)
  • Jay | 90.200.160.142 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ২৩:৪৯393554
  • দারুন!!
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ২৩:৪৯393553
  • তারপর?
  • tan | 131.95.121.132 | ২২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৩৭393555
  • তারপরে কি হলো?
  • Paramita | 63.82.71.141 | ২২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৪১393556
  • সত্যি জিনিস পড়ার একটা আলাদা মজা আছে। খুব ভালো হচ্ছে।
  • dri | 129.46.154.111 | ২২ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৪৫393557
  • খুউব ভাল্লাগছে। মনে হচ্ছে ছুঊট্টে চলে যাই সান্দাকফু। র‌্যাট কি অ্যাজমার সাথে সিগ্রেট খেতে নাকি? অসুবিধে হত না?
  • Arpan | 202.91.136.4 | ২২ জানুয়ারি ২০০৮ ১০:৩৯393558
  • প্রোটিন নিউট্রিশন বার দিয়ে কি খাবারের কাজ চালানো যায়?
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০১:২৬393559
  • ধন্যযোগ সকলকে - পরের কিস্তি আসিতেছে :-)

    প্রায় দশ বছর পরে সান্দাকফুর স্মৃতিকথা লিখতে বসে অনেক কিছুই বাদ পরে যাচ্ছে - সে কারনে আন্তরিক দু:খিত। ছোট ছোট গ্রামের নামগুলোও ভুলে গেছি। ইচ্ছা করছে আবার একবার ঘুরে এসে লিখি ভালো করে - কিন্তু কবে হবে আবার যাওয়া - ভগা ও জানে না! সবাইকে তাই বলি - যদি দার্জিলিং বেড়াতে যাবার প্ল্যান করেন অক্টোবর - নভেম্বরে বা ফেব্রুয়ারী - মার্চে, নিতান্ত ওয়েদার খুব খারাপ না থাকলে সেটা পাল্টে সান্দাকফু করে দিন - ঠকবেন না। মডারেট ট্রেক - ৭ - ৮ দিন পাহাড়ে কি ভাবে কেটে যাবে - ফেরার পথে মনে হবে খালি ফিরে ফিরে আসি এ স্বর্গে। শরত ও বসন্তে সান্দাকফু ও কাঞ্চনজঙ্ঘা অত্যন্ত সুন্দর - এ সৌন্দর্য অনুভব করার - লেখা ছবিতে ফোটানোর জন্য কলমের জোর আমার নেই।
    অ্যাজমা আমার ছিল ছোটবেলা থেকে, সিগ্রেট বয়সের নিয়মে শুরু হয়েছিল একসময় - অ্যাজমার অ্যাটাকের সময়টুকু বাদ দিয়ে সিগ্রেট চলত ভালোই। এই ট্রেকিংএর গল্প যে সময়ের (১৯৯৬-৯৭) তখন দিনে গড়ে ২০টা করে সিগারেট খেতুম। হাঁটার পথে সিগারেট তেষ্টা পেলে খেয়েছি অনেক-ই তবে অবশ্যই দিনের টোটাল সিগারেটের কোঠার আর্ধেকেরও কম।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০১:৩৬393560
  • নিউট্রিশন বার দিয়ে খাবারের কাজ নিশ্চই চালানো যায়। তবে সারাদিনের ট্রেকের পরিশ্রম এত বেশী যে নিউট্রিশন বার হজম হয়ে খিদে পেতে বেশী সময় লাগে না - বেশিক্ষন পেটে থাকে - মানে সহজ পাচ্য নহে - এমন জিনিষ খান। সঙ্গে ইন্সট্যান্ট ক্যালোরি জোগান দিতে প্রোটিন বার, ক্যাডবেরী চকোলেট - সব চলবে। খালি পেটে হাঁটবেন না - হাই অল্টিচিউডে বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি অনেক সমস্যা হতে পারে। রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ে কোন রকম সমস্যা থাকলে ডাক্তারের বিশদ পরামর্শ ছাড়া কোন রকম অল্টিচিউড ট্রেকে যাবেন না।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৪৬393561
  • ঘুমোতে পারলাম না সারারাত। না না একটাও মশা নেই। কোন রকম উত্তেজনা বা ভয়ও ছিল না। স্লীপিং ব্যাগে ইচ্ছেমতন গুটি শুঁটি মারা যায় না এটা তো একটা বড় সমস্যা বটেই, তার থেকে বড় সমস্যা হল হাওয়া ও ঠাণ্ডা। কাঠের বাড়ি, দুটো কাঠের ফাঁকে গরু-মানুষ না গললেও বরফ ঠান্ডা হাওয়ার যাতায়াতের কোন অসুবিধা ছিল না। এত ভালো এয়ার ভেন্টিলেশন ওয়ালা বাড়িতে আমাদের প্রথম রাত্রিবাস। তাতেই বড্ড অসুবিধে। তার উপরে ঘরে জ্বালানো আগুনটাকে ঠিকঠাক জ্বালিয়ে রাখাও একটা কাজ। দুজন দুজন করে অল্টারনেটে জেগে থাকা তার জন্য। আমার ভাগে ছিল রাত ৩টে থেকে ভোর অবধি। তিনটের সময় তুলে দিলে পার্থ। আগুন উসকিয়ে বাইরে বেড়োনোর সাজগোজ করলাম দুজনে। পায়ে উলের মোজা, উলিকটের চাপা ইনার , জিন্সের প্যান্ট ও জামা, সোয়েটার দুটো, তার উপরে মোটা জ্যাকেট, মাফলার, মাথা ঢাকা টুপি, গ্লাভস। দেখতে পুরো মহাকাশচারী :-) তুলনায় পার্থ কত স্লীক ও সুন্দর ওর চামড়ার জ্যাকেট ও প্যাণ্টে। ভোর চারটে নাগাদ দুজনে বেড়িয়ে এলাম ঘরের বাইরে। আকাশে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে, তারা গুলোও যেন কত বেশী উঙ্কÄল। হাত বাড়ালে ছোঁয়া যাবে কি ওদের! পাহাড়ের মাথায়, তাই কি আকাশটা আমাদের এত কাছে!
    উত্তর আকাশে তাকিয়ে দেখি কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। শ্বেতশুভ্র পবিত্রতা ও তার বিস্তৃতি আমাদের বাকরূদ্ধ করে দিলে। ফিরে গিয়ে ডেকে তুললাম সকলকে, এ দৃশ্য নিজে দেখে যদি সাথীদের না দেখাই - নিজেকেই ক্ষমা করতে পারব না যে! সবাই অবাক হয়ে দেখেছি এ সৌন্দর্য। প্রচন্ড ঠাণ্ডায় মেঘেরা সবাই নিচে নেমে গেছে, সান্দাকফু ও কাঞ্চনজঙ্ঘার মধ্যে মনে হচ্ছে এক মেঘের উত্তাল সমুদ্র নিচে বয়ে চলেছে, উপরে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখছি আমরা। কখনো মনে হচ্ছে কাঞ্চন এক তরুনী সাদা সিফন শাড়ি পরে উত্তাল হাওয়ায় তার আঁচল উড়িয়ে আমাদের সামনে নিজের মনে হাওয়ার গানে নাচ করছে। আবার কখনো তাকে লাগছে এক বৃদ্ধা সাদা পোশাকে ঈশ্বরের সেবায় রত। দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে রয়েছি আমরা। প্রবল ঠাণ্ডায় হাত আর কান অবশ হয়ে গেছে যেন। আগের দিনের বৃষ্টির জল যেটুকু জমে ছিল এখানে ওখানে - সেগুলো এখন বরফ। ঝোপ-ঝার সবের গায়ে গুড়ো বরফের উপস্থিতি। মেঘ গুলো যেন বরফ হয়ে ঝরে পরেছে সারারাত। এর মাঝে কফি হাতে গ্রামের এক মহিলা আমাদের সকলের কাছে ঘুরে যাচ্ছেন। ট্রেকার্স হাটের ৪০-৫০ জনও এসে পরেছে ততক্ষনে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে তাকিয়ে রয়েছি আমরা। ধিরে ধিরে আকাশ পরিস্কার হয়ে আসছে, ডানদিকে পুব আকাশে আলো। কাঞ্চন তার সাদা বসন সরিয়ে লাল শাড়ি পরে বিয়ের সাজে সাজতে বসল যেন। ময়ূরকন্ঠি রঙের বেনারসি কি তার? নাকি কালচে মেরুন টা পরল প্রথমে, ভাল লাগল না, সরিয়ে রেখে লালচে মেরুন টা, তার পরে লাল বেনারসি যার সারা গায়ে সোনালী জরির কাজ। আমার প্রেমিকা কাঞ্চন আজ যাই পরুক না কেন - আমি তো অবাক হয়ে তার সৌন্দর্যে বাকহারা। কে একটা চিল্লিয়ে বলল - ওরে ছবি তোল। কিন্তু এ ছবি কি তোলা যায়! তবু সাটার টিপলাম বেশ কয়েক বার। তবে হিসেব করে, এ সুন্দরীকে তো বারবার দেখা যায় না - রিল পাল্টাতে গিয়ে ওর থেকে নজর হটাতে আমি রাজি নই। ঘোর অন্ধকারে চাঁদের আলোয় তার প্রেমে পরেছিলাম - আলো আসতে আসতে সবাই তার প্রেমে পাগল। চোখে এক ঘোর লেগে। সূর্যোদয় সম্পূর্ণ হলেও কাঞ্চনের দিক থেকে অন্য দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। এর মাঝে ট্রেকার্স হাটের ট্রেকিং দলের একটি ছেলে চেনালো পশ্চিমে এভারেস্ট - কাঞ্চনের পাশে নেহাতই একটা কুৎসিত ঢিপি। সকাল ৮টা নাগাদ কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রেমে পাগল আমরা কজন ফিরে এলাম ঘরে, আজ আমরা ফালুট যাবো, পুরো রাস্তায় ডানদিকে থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবু গোছগাছ করবার ফাঁকে ফাঁকেই বারবার দরজাদিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখছিলাম স্বপ্নের নারীকে, আমার কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।
    দার্জিলিংএর টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখে যাঁরা অভিভুত হয়েছেন, তাদের জন্য এখানে বলে রাখি, সান্দাকফু থেকে সূর্যোদয় টাইগার হিল থেকে অন্তত ১০০ গুন বেশী ভালো লাগবে। ১৮০ ডিগ্রি ভিউ পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার। একটা রঙিন চকচকে সিনেমার শুরু হচ্ছে যেন। আজ পর্যন্ত আমার দেখা অনেক সূর্যোদয়ের মধ্যে সান্দাক্‌ফুর টা সবচেয়ে সুন্দর। হাজারো রঙে আঁকা একটা বিশাল ক্যানভাস, নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে ও পায়ের নীচে মেঘের গালিচার প্রক্ষেপনে সান্দাকফুর সূর্যোদয় পাগল করা সুন্দর। এ কাঞ্চনের জন্য হাজার বার যেতে রাজি, এ জীবন বাজি রাখতেও রাজি :-)
  • Shuchismita | 141.218.225.160 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৫:৩৭393562
  • এতোদিনে পড়লাম। দুর্দান্ত লাগছে।
  • Paramita | 63.82.71.141 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:১৩393564
  • আমি যত সিনসিনারিওলা জায়গা দেখেছি, তার মধ্যে এখনো অবধি টাইগারহিলের সুর্যোদয় একনম্বর। ঐ সাদার মধ্যে রঙের খেলার জন্য। সান্দাকফু কখনো যাওয়া হবে কিনা জানি না। লোভ জাগাচ্ছো। শেষে আমাকেও ট্রেক করতে হবে নাকি রে বাবা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন