এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ট্রেকিং-এর গল্প

    RATssss
    অন্যান্য | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ | ৯০৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shuchismita | 141.218.225.160 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:২৩393565
  • পামিতাদি, গ্র্যন্ডক্যানিয়নের সুর্যোদয় কেমন লাগলো? সে গল্প তো এখনো পেলাম না :)
  • Paramita | 63.82.71.141 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৩২393566
  • এবার ৫ মাস + বাহাত্তুরেদের নিয়ে সুর্যোদয় দেখা হয়নি এবার, সূর্যাস্ত হয়েছে। কিন্তু সাউথ রিম থেকে বলে সে সুর্যাস্ত শুধুই গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি। তবে সূর্যাস্তের আলো পড়ে পুরো ক্যানিয়নে, সেইভাবে পূবদিকে সুর্যাস্ত দেখাই বিধান। সে বেশ ভালো, নতুন রকম। আগে একবর জিসিতে গেছিলাম, সেবার সূর্যোদয় দেখেছিলাম, পাহাড়ের গায়ে খুবই সুন্দর। কিন্তু ডিটেল কাজ ভুলে ভুলে গেছি, কম্পেয়ারড টু আরো আগে দেখা টাইগার হিলের সূর্যোদয়।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৭:০৪393567
  • পামিতাদি, সান্দাকফুর পাশে টাইগার হিল কিস্যু না। কিন্তু একটু ভাগ্যের সাহায্য দরকার। সান্দাকফু থেকে সূর্য ওঠাটা হয়ত অত ভালো করে দেখা যায় না তবে মাত্র ৮০ কিমি দুরের কাঞ্চনজঙ্ঘাকে অসম্ভব অপার্থিব সুন্দর লাগে। কোন ভাবে চেষ্টা চরিত্র করে একবার সান্দাকফুর সূর্যোদয় দেখে এসো, তেমন পরিস্কার ওয়েদার পেলে - জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিবে না। হেঁটে যেতে না পারলে জীপে যাওয়া যায়। ১৯৫০সালের ল্যাণ্ডরোভার। ওতে চড়ে পাহাড়ে উঠতে ও নামতে অনেক বেশী ভয় লাগে, একসময় মনে হয়, হেঁটে চলে যাই। একরাত সান্দাকফুতে ট্রেকার্স হাটে থেকে সূর্যোদয় দেখে ফিরে আসা যেতেই পারে জীপে চেপে - হাজার পাঁচেক টাকায় হয়ে যাওয়া উচিত।
    কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরো সুন্দর লাগে জংরী থেকে, তবে সূর্যোদয় জংরীর থেকে সান্দাকফুতে অনেক বেশী সুন্দর। আর জংরীতে কোনো ভাবেই ট্রেকিং ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ০৮:১২393568
  • ফালুট পৌছতে হবে আজই। বারবার মনে হচ্ছে যদি ফালুটের বুকিং টা না থাকত তবে সান্দাকফুতে আরো একটা সূর্যোদয় দেখলে মন্দ হত কি! সাহস করে দলের কাছে প্রস্তাবটা রাখলাম। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হল সারাদিন কাঞ্চনের সঙ্গে কাটানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই, তার জন্য রাম্মাম ও ফালুটের বুকিং নষ্ট করার কোন মানে হয় না। আর তাছাড়া আমাদের নতুন প্রেমিকাকেতো ফেলে যাচ্ছি না, সে তো পুরো রাস্তাতেই আমাদের সঙ্গে থাকবে। সারা রাস্তায় বিভিন্ন ভাবে তাকে দেখবো আমরা, আগামীকাল ফালুট থেকেও সূর্যোদয় দেখবো। এ শুধু সান্দাকফুতে না থেকে একটু এগিয়ে যাওয়া - কাঞ্চনজঙ্ঘা সঙ্গে রয়েছেই। ভাত আলুসেদ্ধ ডিম বানাতে রাজী হয়ে গেল আমাদের বাড়ির মালকিন, আমরা দৌড়লাম বাড়িতে ছোট্ট করে ফোন করে দিতে। ফোন টোন সেরে খেয়ে দেয়ে রওনা দিতে দিতে বেলা ১০টা বেজে গেছে। জোর কদমে হাঁটা শুরু হল। ৬ -৮ ঘন্টা লাগার কথা ফালুট পৌছতে। ৬ ঘন্টার মধ্যেই পৌছতে হবে নয়তো সূর্যাস্ত দেখা যাবে না। পিঠের খাবারের বোঝাও অনেক কম, ওল্ড মঙ্ক শেষ।
    সান্দাকফু - ফালুট রাস্তার অনেকটা ভাঙ্গা ছিল তখন। পা মচকানোর সমুহ সম্ভাবনা পদে পদে। তবু কি পথের দিকে তাকিয়ে শুধু হাঁটা যায়! মাঝে মাঝে রোডোডেন্ড্রনের ফাকে হারিয়ে গেলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে প্রায় সর্বদাই। প্রতিটা খাঁজ কাঞ্চনজঙ্ঘার চেনা হয়ে যাচ্ছে। ঝকঝকে রৌদ্রকরোজ্জল দিন, কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে তুলে আমরা ক্লান্ত হইনি এখনো। তবে রিল ফটোগ্রাফি - কতটা ভালো আসছে কে জানে। স্টকের ফিল্মের সংখ্যা গুনে গুনে ছবি তুলতে হচ্ছে, রেশনিং করে কি আর মন মতো ছবি তোলা যায়।
    জঙ্গল ঘন হচ্ছে কখনো, আবার কখনো খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে চলেছি। কাঞ্চনজঙ্ঘা রয়েছে আমাদের সঙ্গে। বেশী ওঠা নামা নেই এই পথে, বেশ সমতলেই রয়েছি আমরা, হাঁটার গতিবেগ বেশ বেশী আজ, অনেকটা সময় প্রায় দৌড়েছি আমরা সমান তালে। মাঝে মাঝে থমকেছি কাঞ্চনজঙ্ঘার টানে। দুপুর ১টা নাগাদ পৌছেছিলাম একটা ছোট্ট গ্রামে। একটা দোকান কাম বাড়িতে চলছিল বাজরার রুটি বানানো। আলু-র সবজি সহ বাজরার রুটি খেলাম সবাই মিলে। জঙ্গলের হরিনও দেখতে পেলাম খেতে খেতে। পুরো পরিবার নিয়ে ওরাও লাঞ্চ করছিল ঘাস লতা পাতা।
    আবার জোরকদমে হাঁটা, বিকেল ৪টের একটু পরেই পৌছলাম ফালুট। সান্দাকফু তে ছিলাম ১২০০০ ফুট উঁচুতে , ফালুটের উচ্চতা ১১৮০০। দুরত্ব ২১ কিমি। প্রায় ৬ ঘন্টায় ২১ কিমি হেঁটেছি - ওঠা নামা প্রায় ছিলনা বললেই চলে। ট্রেকার্স হাটে ব্যাগ পত্র রেখে দৌড়লাম দিনের শেষ দেখতে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবেলাও আমাদের নিরাশ করল না। তবে সূর্যাস্তে কেমন যেন বিষন্নতা, চলে যেতে হচ্ছে বলে মনটা যেন খারাপ। অস্তগামী সূর্যের হলুদ রঙে সোনালী সাজে সাজল সে, এর পরে লাল শাড়ী পরে লজ্জায় অধোবদন হয়ে বিষন্ন ধুসর হয়ে রইল। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম আমরা। সন্ধ্যের অন্ধকার নামলে ধীর পায়ে হেঁটে ফিরলাম ট্রেকার্স হাটের হ্যাজাকের সামনে। কেরোসিনের হীটার চলছে, হাতপা গরম করবার জন্য মোজা গ্লাভস ছেড়ে চতুর্দিকে বসলাম আমরা। গলু আর চোর বের হল কাϾট্রলিকারের খোঁজে, আধাঘন্টা পরে ফিরে এল ছাগলের দুধ নিয়ে। গরম দুধে ছাতু মেখে জম্পেশ হল রাতের ডিনার। ট্রেকার্স হাটে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল জার্মানি থেকে আসা একটি ছেলে ও মেয়ের। কত গল্প করেছিল ওদের বাড়ির। সারা বছর কাজ করে পয়সা জমিয়ে ওরা ভারতে এসেছিল ৩ মাসের জন্য। কত কত যায়গা ওরা ঘুরে বেড়িয়েছিল, তার ১০ শতাংশও আজও আমার দেখা হয়নি।
    গল্পে গল্পে রাত হল অনেক- স্লীপিং ব্যাগে ঢুকতে ঢুকতে রাত প্রায় দুপুর - সকালে ৪টেতে অ্যালার্ম বাজার আগে যতটা ঘুমিয়ে নেওয়া যায়।
    (চলবে)
  • `' | 66.232.102.157 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ১০:৫৯393569
  • দেখবেন নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা আট মাইল, পান্ডিম তিন মাইল, আর কাব্রু রেঞ্জ পাঁচ মাইল দুর থেকে? তাহলে চলে যান গোয়েচালা। তবে সাবধান ব্যাথা হয়, খুব ব্যাথা। ;-)
  • RATssss | 24.24.228.247 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ১১:১১393570
  • বড্ড গোয়েচালার গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে, কালকের মধ্যে আমি জনতাকে রিম্বিকে ফিরিয়ে আনছি - তার পরে তোমার সাথে যাবো গোয়েচালা (ব্যাথা ট্যাথা সব সহ - পুরো ডিটেলে পুরো দল সহ)
  • Arijit | 128.240.229.65 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ২০:০৬393571
  • আমার দেখা সেরা সুর্যোদয় বদ্রীনাথে - হোটেলের বারান্দা থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে নীলকন্ঠ - ভোরবেলায় সে প্রথমে লালচে হয়, তারপর আস্তে আস্তে উঙ্কÄল সোনালী - দেখার মতন। আর সুর্যাস্ত গঙ্গোত্রী থেকে ফেরার পথে - আকাশে রঙ, আর উল্টোদিকে ভাগীরথী-১,২,৩-এর গায়ের রঙ।
  • arjo | 168.26.215.54 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ ২০:১৬393572
  • র‌্যাটাসুর লেখা ভালো হচ্ছে। বেশ একটা ধারাবাহিক ধারাবাহিক ভাব আছে।
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:২৭393573
  • রাতে ঘুম হচ্ছিল ভালোই। হঠাৎ ঘুম ভাঙল খচর খচর শব্দে। ঘরের দেওয়ালে কেউ একটা আঁচরাচ্ছে বা গা ঘসছে। কাঠের বাড়ি, ভেতরে আমরা। খুব ইচ্ছে করছে একবার বাইরে গিয়ে দেখি দুষ্টুমিটা করছে কে। কিন্তু যদি হিংস্র জানোয়ার হয় কিছু! ঐ দেওয়ালে জানলাও ছিল না। আলো না জ্বালিয়ে অন্য দুই জানলায় আমরা প্রায় দম বন্ধ করে বসে রইলাম অনেকক্ষন। আওয়াজ থেমে গেল কিছুক্ষন পরে, কিন্তু শত চেষ্টা করেও কাউকে দেখা গেল না। সাহস করে দরজা দিয়ে উঁকি মেরেও কাউকে পাওয়া গেল না। সকাল হতে বাকি নেই বেশী। সাজগোজ করে আবার একবার সূর্যোদয় দেখতে বের হলাম আমরা। কাঞ্চনজঙ্ঘা আজ ও কনের সাজে, কালচে লাল সোনালী রঙের বাহারে নতুন ছবি এঁকে সকাল হল আমাদের সামনে। আজ আমরা বিদায় নেব কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছ থেকে, সুন্দর করে সেজে হাসছে যেন সে আজ। হাসিমুখে বিদায় কি একেই বলে! সবার একই প্রেমিকা - সবার মুখে খালি তার নাম - কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবার আসিব ফিরে তোমার কাছে - শত শত বার। পেছনে ফেলে কাঞ্চনকে আবার হাঁটা শুরু। আজ বেশিরভাগ টাই নিচে নামা। খাবারের স্টক শেষ করবার জন্য আজ দুপুরে খাওয়া হল পুরো হাবিজাবি। পাইনের ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটানা হেঁটে দুপুর নাগাদ পৌছলাম গোর্খেখোলা। দারুন সুন্দর এই ছোট্ট ঝরনা। সুন্দর একটা কাঠের সেতু পেরোলাম আমরা। সেতুর পাশেই একটা ছোট্ট বাড়ি। একটুকরো পিকচার পোস্টকার্ড। মন ভরে গেল পিছনে পাহারের জঙ্গলে তাকিয়ে। ঘন জঙ্গলে কোথা দিয়ে যে আমরা হেঁটে এসেছি তা কেউ বলতেই পারবে না। সবুজ কে সাথী করে চলতে থাকা । মাঝে মধ্যেই পথের বাঁকে হঠাৎ করে কাঞ্চন দেখা দিয়ে অবাক করে দিচ্ছে বারবার। ঝকঝকে দিনে চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা - এ সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যদি কেউ গ্রীষ্মে সান্দাকফু যান, গোর্খে খোলায় স্নান করতে ভুলবেন না - শীতে অবশ্যই চাপের ব্যাপার। বিকেল ৩টে নাগাদ পৌছলাম রাম্মাম। সুন্দর সবুজ ছোট্ট গ্রাম। ইতি উতি ঘুরে বেড়ালাম আমরা। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না।সবথেকে সুন্দর ট্রেকার্স হাট এখানে। হালকা রান্নার বন্দোবস্ত আছে। আজ ছাতুর শেষ দিন - টিক্কা বানানো হল সকলে মিলে। আগুন পোয়ানোও হল সঙ্গে সঙ্গে। এ অঞ্চলে প্রচুর ভাল্লুকের উপস্থিতি। দেখা পেলাম না কারোর। তবে গতকাল রাতে খচখচিয়া-টা কি ভাল্লুক ছিল - খুব দু:খ হল সকাল বেলায় রওনা হবার তাড়াহুড়োয় পায়ের ছাপ টাপ খোঁজাও হয়নি।

    শেষ দিনে হাঁটা শুরু করলাম সকালেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে। খাবারের ওজন নেই , ব্যাগগুলো যেন ছোট ছোট। অনবরত নিচে নামছি আমরা তাই জ্যাকেট গায়ে। হাঁটার বেগে গা গরম হচ্ছে কম। এর মাঝে চোরের হাচ্চি কাশি - নাকবন্ধ। মাল না খেতে পেয়ে নাকি ওর সর্দি লেগেছে। শেষ দিনে প্রথম দু-এক কিলোমিটার নামা ছিল বেশ, তারপর একদম সমান রাস্তা। সফল ট্রেকিং ট্রিপের শেষ পর্যায়ে, গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে চলেছি আমরা। আবার কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে মাঝে মাঝে। উল্টো দিকের থেকে ট্রেকার্স দলের সঙ্গে দেখা হচ্ছে অনবরত। এরা আমাদের উল্টো রাস্তায় সান্দাকফু যাবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মানেভঞ্জন - সান্দাকফু - ফালুট - রিম্বিক অনেক সহজ ট্রেক। মডারেট আখ্যা মেলে এর। কিন্তু উল্টোটা মানে রিম্বিক - ফালুট - সান্দাকফু - মানেভঞ্জন কে স্ট্রেনাস ট্রেক রুট বলা হয়।
    হঠাৎ করে রাস্তা অনেকটা নিচে নেমে এল। পৌছলাম শ্রীখোলা। ডিম পাউরুটি দিয়ে লাঞ্চ সেরে শুরু হল শেষ চড়াই। ১-২ কিলোমিটারের চড়াইএর শেষে আবার সমান রাস্তা , অল্প অল্প করে নিচে নামছে, মাঝে মধ্যে একটু উঠছে। কোন ঘটনা নেই এইদিনে শুধু হাঁটা ছাড়া। বিকেলের দিকে পৌছালাম রিম্বিক। রিম্বিকে প্রধান-জীর গেষ্টহাউসের কথা অনেক শোনা। হাটবার ছিল রিম্বিকে আজ, বিকেল বেলাতেও তাই দার্জিলিং যাবার বাস। আমাদের যাবার কোন তাড়া নেই। প্রথম কাজ হল শিলিগুড়িতে দিদির বাড়িতে ফোন করা। আগামীকাল বিকেলের যা পাওয়া যায় তে কলকাতা ফেরার বন্দোবস্ত করা। প্রধান-জীর গেষ্ট হাউস ও রিম্বিকের কথা না বললে সান্দাকফুর গল্প শেষ হয় না। একটা ছোট পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে অনেকটা উপরে প্রধান-জীর গেষ্টহাউস। ৩০ টাকা জনপ্রতিতে থাকা খাওয়া দুবেলা। রাতে কষা চিকেন ও রুটি, সকালে আলু পরোটা - শুধু এ খেতেই রিম্বিক যাওয়া যায়। এর পরেও রয়েছে আরো অনেক উপরি পাওনা। সন্ধ্যে বেলা গ্রাম থেকে ২-৩ টি ছেলে এল গেষ্টহাউসে। রান্নাঘর কাম ড্রয়িংএ হ্যাজাকের আলোয় কেরোসিন হীটারের চারদিকে বসে চলল গীটার বাজিয়ে গান। নেপালী গানের পাহাড়ী সুরে মাতোয়ারা হলাম আমরা। সঙ্গে প্রধানজীর উপহার মিষ্টি হাসি। এত সহজে সকলকে আপন করে নেন, মন দিয়ে শুনতে চান আমাদের ট্রেকিংএর গল্প। এমন তো কত কত দল প্রতিদিন ট্রেক করে ফেরে। সবার কাছথেকে হয়ত একই গল্প শোনেন। তবু সফল ট্রেকের গল্প শুনতে গিয়ে এমন ভাবে আমাদের ভাঙ্গা হিন্দিতে উৎসাহিত করেন - যে ইচ্ছা করে এর পরে শুধু ট্রেকই করব। রাত বাড়লে অভিভাবকের মতন সকল কে খাইয়ে দাইয়ে ঘুমোতে পাঠান। তার আগে বন্ধুর মতন আমাদের থেকে সিগারেট নিয়ে উল্টোদিকের পাহাড়ে দার্জিলিং দেখান। গোটা পাহাড়ে হাজার হাজার টুনি লাইট। এপারে জোনাকির আলো, ওপারে দার্জিলিং। দীপাবলিতে সেজেছে যেন গোটা পাহাড় টা। যেটা দিনের আলোয় পুরো পাল্টে গিয়ে নোংরা কুৎসিত লাগে, বাড়িগুলোকে মনে হয় গোটা পাহাড়ের উপর বিচ্ছিরি আবর্জনা। - রাতে সে-ই কত সুন্দর।

    পরদিন সকালে উঠে আর বাইরে যাবার ইচ্ছে ছিল না। রিম্বিক থেকে কাঞ্চন দেখা যায় না যে! কিন্তু অ্যালার্ম বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল জনতা। ৫টাতেই অ্যালার্মের শব্দে উঠে লেপ মুড়ি দিয়ে জানলা দিয়ে তাকিয়ে রইলাম। আকাশে রঙের ছটা ছড়িয়ে সকাল হল। গোটা আকাশে এত রঙ আগে দেখিনি। বেশ আলস্য বা ল্যাদের সমাহার সকলের মধ্যেই। আর হাঁটাহাঁটি নেই। খানিকক্ষন পরে প্রধানজী ২-৩ বালতি গরম জলের ব্যবস্থা করলেন। ৭ দিন পরে ভাল করে মুখে চোখে জল দিয়ে বড় ভাল লাগল। প্রধানজী ১০টার দার্জিলিংএর বাসের প্রথম ৬টা সীট আমাদের জন্য রিজার্ভ করে ফেলেছেন সকাল বেলায়। আমরা পেটপুরে খেয়ে দেয়ে শুধু বসলাম বাসে। প্রচুর সবজি বস্তা চাপিয়ে একতলা বাস প্রায় দোতলা। তিনঘন্টা দোলনা খেতে খেতে দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ড। ২টো নাগাদ শিলিগুড়ির বাস - তার আগে ১ ঘন্টার দ্রুত শপিং। সন্ধ্যের মুখে শিলিগুড়ি। দ্রুত রিক্সা নিয়ে দিদির বাড়ি। ৮ দিন পরে প্রথম স্নান। সভ্যতায় ফেরত আসা। সকালের পরে পেটে কিছু পরেনি। খিদেয় পেট চুইচুই। নাকেমুখে কোন রকমে গুঁজে রাত ১০টায় ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ফেস ট্রান্সপোর্টের একটা ঘ্যামা বাসে চেপে কলকাতা ফেরা। ১০-১২ রিল ছবি প্রিন্ট হয়ে এল পরের হপ্তায়। যাঁরা দেখতে চান -আমার রহড়ার বাড়ি চলে আসুন - দেখে আনন্দ পান - সঙ্গে তারামা-র সিঙ্গারা :-)
  • RATssss | 63.192.82.30 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:২১393395
  • কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য

    ১। ট্রেকার্স হাটে বুকিং অনসাইটে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে হয়। অ্যাডভান্স বুকিং করা যেতে পারে Darjeeling Gorkha Hill Council Tourism এর অফিসে। কলকাতা থেকে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজমের অফিসের সাহায্যে বুকিং করা যায়।
    ২। প্রায় সমস্ত পয়েন্টেই ফোনের সুবিধা আছে, মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া যায় না এখনো।
    ৩। সমস্ত ট্রেকার্স হাট ও লজে ভাল টয়লেট ও বাথরুম আছে তবে গরম জলের দাম বড্ড বেশী। বেসিক খাবারের বন্দোবস্তও সব যায়গায় পাবেন।
    ৪। পুরো রুট খুব সেফ। তবে টাকা পয়সা সঙ্গে রাখুন লোকজনকে না দেখিয়ে জামাকাপড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে। রুকস্যাকে না রাখাই ভালো।
    ৫। পোর্টার নিতে চাইলে মানেভঞ্জন থেকে নিন, পুরো ট্রিপের জন্য নেওয়াই ভালো। পোর্টারের থাকা খাওয়া ছাড়াও দিনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে। ভালো করে কথা বলে নেবেন। ট্রিপের শেষে পয়সা দেবেন। একজন পোর্টারকে ২৫ কেজির বেশী ওজন দেবেন না। ভালো পোর্টার গাইড হিসাবেও বেশ ভাল কাজ করবে আপনার সঙ্গে।
    ৬। পাহাড়ে পেট খারাপ সহজেই হয়, জল ওষুধ দিয়ে খান। লোকাল দোকানের বীয়ার ও অন্যান্য অ্যালকোহল ড্রিঙ্কস খাবেন না। লোকাল দোকানে বোতলে জল পাবেন - সেটাও ওষুধ দিয়ে খান।
    ৭। বেশী ঘুমোন ও খুব সকালে উঠুন। দরকার মত রেষ্ট নিন। সন্ধ্যের অনেক আগেই দিনের হাঁটা শেষ করুন।
    ৮। বেশী বড় দলে যাবেন না। হাঁটার গতিবেগের উপর নির্ভর করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলুন।

    --- শেষ

    এবার অন্যরা বলবে - গোয়েচালা, গঙ্গোত্রী, অমরনাথ, কেদার-বদ্রী হাইকিং ট্রেকিং চলতে থাকুক।
  • `' | 66.232.102.157 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ ১০:৩৭393396
  • এই এই, তুমি সান্দাকফুতে ছাং খাও নাই? বাঁশের গামা মগে? কি কড়া খেতে, সাংঘাতিক জিনিস। আর একটা জিনিস মনে পড়লো, ঐ শ্রীখোলাতে একটা দোকান আছে, রেস্টোরেন্টও বলা যায়। ওখানে এগ চাউমিন খেয়ে আমার দারুন লেগেছিলো। এমনিতে আমার দোকানে চাউমিন ভালো লাগেনা, ওখানে লেগেছিলো।
  • RATssss | 24.24.228.247 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ ১১:২৬393397
  • ছাং কি জিওলিন দিয়ে খাওয়া যায়? জনতা দিকভ্রষ্ট হবেন না, ঘাবড়ে যাবেন না, এমন কি কথাও ঘোরাবেন না - গোয়েচালা চাই... আওয়াজ তুলুন...
  • Arijit | 128.240.229.3 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ ২২:৩০393398
  • বদ্রীনাথে কোনো ট্রেকিং নাই। কেদারনাথ যেতে ১৬কিমি, গোমুখ যেতে ১৯কিমি হাঁটা আছে বটে - কিন্তু এগুলো ঠিক ট্রেকিং কি?

    বহু বছর আগে গেছি - ৮৮ সালে, আস্তে আস্তে মনে করে লিখবো।
  • arjo | 168.26.215.54 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৮ ০০:২৩393399
  • ইন্দুর বাবুর কথামতন লেটুস খেয়ে এসে শুরু করে দিলাম আমার ঐ দু একটি ট্রেকিং এর ঝুলি থেকে একটি। এটা একটা কৌশল ও বটে যাতে র‌্যাটাসুর বা অরিজিত তার পরের টা গুছিয়ে ওঠার আগে দ্রি আবার টেকনিকাল কচকচি শুরু না করেন।

    মণিকরণ থেকে ক্ষীরগঙ্গা

    অবশেষে ঠিক হল ক্ষীরগঙ্গাই যাওয়া হবে। অনেকদিন ধরেই একটা ট্রেকিং এর ভুত মাথায় চেপেছিল। এবার সেটা না নামালে আর হচ্ছে না। আর সত্যি বলতে কি একটা সোশ্যাল প্রেসারও ছিল। এদিক ওদিক যত বন্ধু বান্ধব সবাই কোথাও না কোথাও গেছেই। কত সব বড় বড় নাম শুনি আর নির্বাক হয়ে যাই। আর চোখের সামনে ছিল সন্দিপন দা। কাজ নেই কম্ম নেই হুট বলতেই বেরিয়ে পড়তে ট্রেকিং এ আর ফিরে এসে রামের সাথে গল্প। তা অনেকদিনের এই না পাওয়ার বেদনা ভোলাতে আমি, রিমি, সর্ফু আর অবধেশ ধরলাম সন্দিপন দা কে। পরীক্ষা শেষে ট্রেকিং এ যাব। অনেক গবেষণা র পর ঠিক হল যাব ক্ষীরগঙ্গা। আমাদের জন্য একেবারে আইডিয়াল। মণিকরণ থেকে মাত্র ৩২ কিমি কিন্তু দারুন সুন্দর।

    আমি সুখী বেড়াতে গিয়ে ভালমন্দ খেতে ভালবাসি, আরামে থাকতেও ভলবাসি ফ্রন্টফুট কমিট করার পর থেকেই ভাবছি বাজে বার খেলাম না তো। কিন্তু যাকগে যাক আর ভেবে কাজ নেই যাকে বলে ইজ্জত কা সওয়াল।

    নির্দিষ্ট দিনে ISBT থেকে বাসে চেপে চললাম কুলুর দিকে।

    দিল্লী থেকে কুলু অনেকটা সন্ধ্যে নাগাদ বাসে চাপলে নামতে হয় সক্কাল বেলায়। মাঝরাতে এক জায়গায় রুটি, পেঁয়াজ, কাঁচালংকা, আচার সহযোগে মটর পনীর। তারপর চায়ের সাথে একটা গোল্ড ফ্লেক। বাসে উঠে সাথের ওয়াটার বটলে দু চার চুমুক রাম্নাম ব্যস গ্র্যন্টি রইল ঘুম আসবেই আসবেই।

    খুব সকালে বাস থামল কুলুতে। এই কুলু থেকেই একদিকে গেলে বহুখ্যত মানালি আর অন্যদিকে তখন ও "চাক্কা চাক্কা চড়্‌কা' খ্যত না হওয়া মণিকরণ। মণিকরণ তখনো মূলত একটি ধর্মস্থান। তাই মণিকরণগামী বাসে ভিড় অপেক্ষাকৃত অনেক কম। আমরা তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে আবার মণিকরণের বাসে। কুলু থেকে একদিকে বিপাশা আর অন্যদিকে পার্বতি। বিপাশার ধারে মানালি আর পার্বতির ধারে মণিকরণ। কুলু থেকে মণিকরণ মাত্র ২৫-৩০ কিমি হবে। পাহাড়ী রাস্তায় সময় লাগে ঘন্টা দুয়েক। রাস্তাটা দারুন সিনিক। পার্বতি নদীর ধার ধরে রাস্তা নদীর ওপারে মাঝারি মাপের টিলা পাহাড় আর তার মাথায় কুয়াশা।

    মণিকরণ এমনিতে অন্য কোনো উদ্যেশ্য না থাকলে একেবারে প্ল্যান করবেন না। প্রথমেই যা চোখে পড়ে, দুদিন বাদে এবং আমার ধারনা দুই বছর পরেও একই জিনিস চোখে পড়বে
    - পার্বতি নদীর ওপর অপুর্ব একটি ব্রিজ
    - একটা গুরুদ্বার
    - অসংখ্য ঘোড়ার এবং গাধার ইয়ে
    - একটা বড় বাড়ি - পার্বতি হোটেল

    তবে মণিকরণ কে কেন্দ্র করে অনেক ছোটো ছোটো ট্রেকিং রুট আছে, শুনেছি খুব সুন্দর। অনেক হোটেল আছে সবকটাই একইরকম বাজে। তবে নদীর ধারে যদি থাকেন তাহলে পাবেন natural hotspring। একটা ছোট্টো কুঁড়ে ঘর সেখানে চান করতে পারেন পার্বতি র natural গরম জলে। ডিসেম্বরে ক্ষীরগঙ্গা শুনে অনেকেই নাক কুঁচকে ছিল। যাইহোক ছানমিন করে জানা গেল যে যাওয়া যায় কিন্তু "লেড়কি আউর বাচ্ছা লেকে কভি ভি নহি"। ব্যস যাও বা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আরাম প্রিয় আমি করছিলম - তার দফারফা। সব শেষ। ঠিক হল পরের দিন আমরা রওনা হব পুলগার দিকে।

    (চলবে)
  • d | 59.162.93.118 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৮ ১১:২০393400
  • আরে এই সন্দীপন (সন্দিপন নয়) গুরগাঁওতে থাকতেন না? ইনিই তো ট্রেকিং করতে গিয়ে ভুত না পরী কি যেন দেখেছিলেন। ওপাড়ায় বলেছিলেন বহুদিন আগে। সেই গল্পটা আর শোনালেন না। :((
    রাঙা একবার এঁর ফোন নাম্বার দিল, ভ্যালী অফ্‌ ফ্লাওয়ার্সের পুরো ফান্ডা নিলাম এঁর থেকে। তখনই সেই গল্পগুলো জানতে চাইলাম ...... তো উনি খুব অবাক হয়ে গেলেন। বললেন পরে বলবেন।
    ইনি তিনিই তো?
  • RATssss | 24.24.228.247 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৮ ২৩:৩৬393401
  • আর্য গেলে কোথায় বাপু!!!!
    ছেলেপিলেকে খোঁচা না মারলে কাজ হয় না দেখি :-)
  • arjo | 168.26.215.54 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০১:১১393402
  • কে যে কে তা জানতে অনেক আঁক কষে বের করতে হবে যে উনি আর আমি যাঁর কথা বলছি তিনি আলাদা কিনা। এইসব জটিল হিসেব নিকেশ বাপু এখানে করতে পারব না। d আর্যোভট্ট@জিমেল.কম এ যোগযোগ করতে পারো।

    চলুন এইসব কেন্দ্রীয় চক্রান্তে কান না দিয়ে এগিয়ে চলি পুলগার পথে -

    "লেড়কি" র খোঁটা যে এত মারাত্মক হবে ভাবি নি। রিমি একটু বেশি ই পার্সোনালি নিয়ে ফেলেছিল। অবশেষে অনেক ঝামেলা র পর ঠিক হল "লেড়কি" রা যে পারে সেটা বোঝাতেই রিমি মানে আমরা যাব ক্ষীরগঙ্গা। কিন্তু আপাতত আগামী চারদিনে ঠান্ডা রাস্তায় প্রায় ৬০ কিমি।

    প্রথম গন্তব্য পুলগা। মণিকরণ থেকে প্রায় ২২ কি.মি.। সোজা রাস্তা কোনো রকম জটিলতা নাই। রাস্তার ধারে দু একটি চা-বিড়ি র দোকানো ছিল। ইচ্ছে হলে চা খান বা ইচ্ছে হলে নদীর ধার ধরে ট্রেকিং এর স্বাদ নিন, মাঝে মাঝে পাথরের ওপর বসে বিড়ি ব্রেক । বেশ একটা ডুয়াল কম্বো। আমার মতন নভীশদের পক্ষে একেবারে আদর্শ। প্রথম বরফ দেখা গেল তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। ততক্ষণে আমরা নদীর ধার থেকে রাস্তায় কারন ঠান্ডা বেশ বেড়েছে, জলের কাছাকাছি বেশ ঠান্ডা লাগছিল। যতদুর মনে পড়ছে তখন বাজে আড়াইটে। আমাদের অংক অনুযায়ী পুলগা আর ঘন্টা খানেক। তখন কে জানত সেই অংক কত ভুল। আমরা তো বরফ দেখে আত্মহারা, তখন তো আর বরফ এত সহজলভ্য ছিল না তাই সবাই মাত্র ২ ইনচি বরফে গড়াগড়ি খেয়েছি, হিন্দি সিনেমার স্টাইলে লোফালুফি করেছি, স্লাইড করে নামতে গিয়ে প্যান্ট ভিজিয়েছি। মোটামুটি আধা ঘন্টা পরে যখন আমাদের প্যান্ট, জামা আর জুতো বেশ ভিজেছে তখন মনে হল না এবারে এগোনো উচিত। আবার চলতে শুরু করলাম আমরা। তখন পাহাড়ে আস্তে আস্তে অন্ধকার নামছে আর আমাদের ও ঠান্ডা লাগছে। সব থেকে অসুবিধা হয়েছিল ভিজে জুতো নিয়ে। এইটা একটা খুব গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার। জুতো খুব ভালো হওয়া দরকার তা না হলে ছোটো থেকে বড় যেকোনো ট্রেকিং এ সমস্যায় পড়বেন। প্রসঙ্গত আমাদের পায়ে ছিল সরোজিনী মার্কেটের ফুটপাথ থেকে কেনা অত্যন্ত রদ্দি জুতো, তখন দাম নিয়েছিল প্রায় ৩০০ টাকা, বলেছিল ট্রেকিং এর জন্য ওটাই নাকি সব থেকে ভাল। দেখতেও বেশ ছিল আর কিনে প্রচন্ড গর্ব হয়েছিল কিন্তু পরে বুঝেছিলাম ঐ জুতো পরে না যায় সমতলে হাঁটা - প্রচন্ড ভারি আর পাহাড়ে নয় কারন স্লিপ করে আর বরফ ও আটকাতে পারে না। মানে একেবারে পার্ফেক্ট উদাহরন জুতো কেমন হওয়া উচিত নয়।
    ঠিক যেখান থেকে আমরা ভুল দিকে গেলাম সেখান থেকে আমাদের হিসেব অনুযায়ী আর ঠিক ৪৫ মিনিটের রাস্তা বাকি ছিল। প্রায় ১ ঘন্টা চলার পর আমরা বুঝলাম যে আমরা পথ হারিয়েছি। ততক্ষণে অন্ধকার প্রায় নেমে এসেছে, আর আমরা একেবারে গভীর জঙ্গলে। সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ। ঠান্ডাও বেশ ভালই পড়েছে। আমাকে আর রিমি কে একটা dead end এ বসিয়ে আর সবাই গেল রাস্তা খুঁজতে। প্রথম প্রথম মনে বেশ পুলক হচ্ছিল বেশ একটা adventure হচ্ছে বলে, কিন্তু মিনিট পনের বসে থাকার পরেই বুঝলুম জঙ্গলে শীতকালে সন্ধ্যের মুখে পথ হারানো খুব একটা কাজের কথা নয়। প্রসংগত বলে রাখি যে আমাদের সাথে কোনো tent ছিল না। স্লিপিং ব্যাগ ছিল কিন্তু সে ঐ সরোজিনী মার্কেট থেকে কেনা খুবই সস্তার একটা জিনিস। আর তখন বুঝি নি কিন্তু ঠান্ডা ছিল শুণ্যের বেশ খানিকটা নীচে। আমরা বসে আছি আর ভাবছি তাহলে কি রাতে এই জঙ্গলে কাটাতে হবে?

    (চলবে কিন্তু কোনো তাড়া নয় - এইটা ইন্দুর বাবুর জন্য)
  • dri | 129.46.154.111 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:৩৬393403
  • আর্য্য, জমে গেছে! আস্তে আস্তে ছাড়ুন, খেলিয়ে খেলিয়ে।
  • Paramita | 63.82.71.141 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:৪৩393404
  • "পারফেক্ট উদাহরণ জুতো কেমন হওয়া উচিত নয়" - হাসি ঝিলিক দিয়ে গেল।
  • Tim | 128.173.157.49 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৩৬393406
  • ইন্দুদা আর আর্য, দারুণ হয়েছে/হচ্ছে লেখাগুলো। আরো অনেক ট্রেকিং এর গপ্প চাই।
  • arjo | 168.26.215.54 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:০১393407
  • আমরা বসে আছি আর ঠান্ডায় কাঁপছি। আধঘন্টা কাটার পর যখন সিরিয়াস টেনশন শুরু হয়েছে তখনই সবাই ফিরে এল। মুখে বিজয়ীর হাসি। আমরা ভাবলাম পুলগা নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া গেছে। খুব উৎসাহিত হয়ে এগোতে লাগলাম। খানিক পরে সর্ফু বলল "জলদি করো নেহি তো ও নিকাল যায়গি"। এবার বোঝা গেল। ওরা রাস্তা খুঁজে পায়নি, পেয়েছে একটি লোক যে কাঠ নিয়ে আসছে। দুর থেকে দেখেছে সে আসছে আর আমাদের স্ট্র্যটেজি হল তাকে ফলো করা। অনুমান সে নিশ্চয়ই পুলগা যাচ্ছে। তাই এখন পা চালিয়ে তাকে ধরতে হবে। আমরাও দ্রুত পা চালালাম। কি আশ্চর্য্য আমরাও এক ঘন্টার পথ আধ ঘন্টায় পেরিয়ে গেলাম। অবশেষে সেই fork এ যেখান থেকে আমরা হারিয়ে ছিলাম সেইখানে। আর সামনেই আমাদের পথ প্রদর্শক সেই কাঠ বাহক। সন্দীপন-দা তাকে বিড়ি খাইয়ে তরিবত করছিল যাতে সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। তার পিঠে অন্তত ৪০ কিলোর বোঝা, খাড়াই রাস্তা তা সঙ্কেÄও তাকে ফলো করা খুব কঠিন কাজ। প্রায় একশ ফুটের একটি চড়াই উঠেই দেখতে পেলাম সাদা বরফের চাদরে ঢাকা একটি গ্রাম। তখন সন্ধ্যে, বুঝি নি এত কাছে ছিল পুলগা।

    পুলগার রাত -

    তখন আমরা সবাই খুব ক্লান্ত। কোনোরকমে থাকার জায়গা খুঁজে পেলেই হয়। গ্রামে ঢুকে দু একজন কে জিগ্যেস করায় বোঝা গেল যে শীতকালে থাকার জায়গা ব্যাপারটি একটু চাপের। দু একটি থাকার জায়গা আছে বটে কিন্তু তাদের মালিকরা শীতকালে সমতলে যায় টাকা রোজগারের জন্য। আর একজন এখানে আছে কিন্তু....। আমরা অবিলম্বে সেই ব্যক্তির হদিস খুঁজে গেলাম তাঁর কাছে। নেহাত সামান্য ধুমায়িত অবস্থায় ছিলেন তাই তাঁর মেজাজ ভাল ছিল তাই আমাদের ও থাকার বন্দোবস্ত হয়ে গেল। শোনা গেছে গত শীতে ধুতরোর বীজ খেয়ে সে নাকি পাগল ছিল। সে আমাদের বলেছিল ধুতরো খুব বাজে জিনিস খবরদার খাবেন না। নেশা করতে হলে চড়স খান। প্রসংগত বলে রাখি পার্বতি ভ্যালি চড়সের জন্য বিখ্যাত। অনেক সময়েই এদিক ওদিক শিল্পি কাটিং হাতে মাউথ অর্গ্যান হাতে বিদেশি দেখা যায়। কিন্তু ভুল করেও শিল্পি ভাববেন না। ওনারা আমার থেকেও বাজে বাজান। ভাল করে লক্ষ করলে বোঝা যায় আসলে বাবার নাম জপ করছেন। আর তাই মনে হয় ওখানকার লোকজনের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো।

    যাইহোক রাতে থাকার জায়গা হল। সেই ভদ্রলোকই খাওয়ার বন্দোবস্তো করে দিলেন এমনকি পরের দিনের পোর্টারের ব্যবস্থাও উনিই করে দিলেন। এর পর ব্যপারটা একটু সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় দু একটি গ্রাম পড়বে কিন্তু বেশির ভাগ টাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। ক্ষীরগঙ্গা র উচ্চতা হচ্ছে প্রায় ৩০০০ মিটার। পুলগা থেকে ক্ষীরগঙ্গা ১০ কিমি। আর পুলগা ঐ ২০০০ মিটার মতন হবে। তাই বেশ খানিক টা চড়াই ভাঙতে হবে আমাদের। ক্ষীরগঙ্গায় এক বাবা থাকেন তাঁর চেলাদের নিয়ে, বাবার জন্য চাল, ডাল নিয়ে যাওয়াটাই দস্তুর। তাহলে তিনি তাহলে আমাদের রান্নাও করে দেবেন। অতএব পোর্টারই ভরসা।

    আমরাও তাড়াতাড়ি রুটি আর সবজী আর ডাল দিয়ে খাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। ঘরে ছিল আদিম পদ্ধতিতে তৈরি কিন্তু দারুন এফেক্টিভ ফায়ার প্লেস। কাঠ জালিয়ে চুল্লীর দরজা বন্ধ করে দিন, ধোঁয়া সোজা আকাশে কিন্তু ঘর দিব্যি গরম। খানিক বাদে প্রাথমিক ধোঁয়া বেরিয়ে গেলে চুল্লীর দরজা খুলে সরাসরি আগুনের আঁচ পোহান।

    সেদিন রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠে টের পেলাম ঠান্ডা কতটা আরো টের পেলাম লোকে কেন এত কষ্ট করে। সেদিন ছিল পূর্নিমা। জোৎন্সা ভেজা পাহাড়ের সেই দৃশ্য আমি কোনোদিন ভুলব না। বরফে ঢাকা পাহাড়ে চাঁদনি রাতে কেন চোখ ঝলসে যায় সে কথা বুঝলাম সেইদিন। এর আগে এবং পরে আমি অনেক বিখ্যাত এবং অখ্যাত পাহাড়ে ঘুরেছি কিন্তু রাতের পুলগার ঐ দৃশ্য আমি কোনোদিন ও ভুলব না।

    (চলবে - বানম্ভুল এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় একটু চাপে রয়েছি, রিভাইস করা যায় নি)।
  • arjo | 168.26.215.54 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:০৬393408
  • কিছু ছবি অবশ্যই আমাদের নয়। তখন আমাদের সাথে কোনোরকম ক্যামেরাই ছিল না।

    http://www.travelblog.org/Photos/64945.html
  • rini | 24.24.228.247 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৭:০১393409
  • তারপর!!!
  • arjo | 168.26.215.54 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:১২393410
  • ক্ষীরগঙ্গার দিকে -

    পরদিন খুব ভোরে আমরা চলতে শুরু করলাম ক্ষীরগঙ্গার দিকে। আমাদের পোর্টার জী অনেক আগে আগে আর আমরা তার থেকে অনেক পিছনে পিছনে। এখানে রাস্তা হারানোর ভয় ছিল না তাই পোর্টার জী নিশ্চিন্তে অনেক আগে চলেছেন। আমরা ধীরেসুস্থে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে (আসলে হাঁপাতে হাঁপাতে) চলেছি। কথা ছিল প্রথম যে গ্রাম পড়বে সেখানে আমরা খানিকটা বিশ্রাম নেব। প্রথম গ্রাম পড়ল প্রায় ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর। গ্রাম বলতে আমারা যা বুঝি এই পাহাড়ী গ্রামগুলো আদৌ তার ধারে কাছে নয়। এখানে সাকুল্যে ১০-১২ ঘর লোকের বাস। তাও ঘর বাড়ী কেমন যেন খাপছাড়া। মানে যে যেখানে ঠিকমতন জায়গা পেয়েছে সেখানে বাড়ী তুলেছে। তারফলে ঐ ১০-১২ ঘর ও ঠিক ডেন্স নয়। পাহাড়ের ঢালে ঢালে বাড়ী। তবে মনে হয়েছিল লোকজনের আর্থিক অবস্থা ভালই। এদের জীবিকা ছিল আপেল চাষ। মূলত আপেল এক্সপোর্ট করা। আমরা গ্রামে ঢোকা মাত্রই কেমন যেন একটা চাঞ্চল্য পড়ে গেল। পোর্টার জী অনেক আগে এসে বলে দিয়েছেন "মেহমান" আসছে যেন ঠিকমতন আপ্যায়ন করা হয়। আমাদের নিয়ে বসানো হল সবথেকে বড় বাড়ীর বারান্দায় আমাদের বসানো হল। ওদিকে দেখেছি বাড়ীর কর্তা স্থানীয় একজন একটা ঘরের তালা খুলছেন। সেই ঘর থেকে বেরলো লাল আপেল, আমাদের জন্য। আর পরে চা। দুইই অমৃত। স্বাদের জন্য না আপ্যায়নের জন্য সে এখনো বুঝি নি। পরে জেনেছিলাম সেটা ছিল পোর্টার জীর শ্বশুরবাড়ী।

    এর পর ট্রেক বেশ কঠিন। আমার এতেই নাভিশ্বাস উঠছিল আর এর পরেও প্রায় ৮ কিমি ভাবলেই নিজেকে কেমন বলির পাঁঠার মতন মনে হচ্ছিল। লাল টুকটুকে আপেল, গরম চা খাইয়ে বলা হচ্ছে কি পারবি তো? যাইহোক আমরা আবার চলতে শুরু করলাম। এবারে বন জঙ্গল পেরিয়ে সোজা ক্ষীরগঙ্গায়। আবার অনুভব করলাম একটা ভাল জুতো কতটা জরুরি। বিশেষত যখন ঢাল বেয়ে নীচে নামা হয় তখন। ভালো গ্রিপ না থাকলে অবধারিত পদস্খলন। আমিও একবার ঝপাস হয়েছিলাম যার পরিণতি ভয়ংকর হলে আপনারা আর এই লেখা পড়তে পারতেন না। আর জায়গায় জায়গায় অবস্থা এমনই ছিল যে সত্যি তখন মনে হচ্ছিল ডিসেম্বরে আসার সিদ্ধান্ত টা একটু বাড়াবাড়ি ই হয়ে গেছে। যাক ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে বিকেল গড়িয়ে যখন প্রায় সন্ধ্যে তখন পৌঁছলাম ক্ষীরগঙ্গা। একটু ভুল বলা হল তখনো আমাদের প্রায় ২০০ ফুটের একটা চড়াই ভাঙতে হবে আর সেখানে বরফের গভীরতা প্রায় কোমর সমান। বুঝি নি যে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ সামনে।

    (চলবে)
  • arjo | 168.26.215.54 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:২১393411
  • সেই ২০০ ফুট উঠতে আমাদের সময় লেগেছিল প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট। ওদিকে আমাদের জুতোয় বরফ ঢুকে অবস্থা খুবই সঙ্গীন। আবার বলে রাখি স্পেশাল ট্রেকিং এর জুতো পায়ে না দিয়ে ট্রেকিং এর কথা মাথাতেও আনবেন না। বুঝতেই পারছেন এখনো আমার শোক কতটা গভীর! অবশেষে আমরা ক্ষীরগঙ্গায়। পৌঁছেই পা ডোবালাম natural hotspring এ। উফ্‌ফ কি আরাম।

    এরপর আমরা বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম আর তাঁর ভেটও দিতে হবে যদি রেগে যান তাহলে তো আমাদের খাওয়াও মায়া। বাবার ঘরটি গনগনে আগুনের আঁচে দারুন আরামদায়ক। আর ঘরটিও মোক্ষম, কোনোদিক দিয়ে কোনোরকম হাওয়া ঢোকার চান্স নেই। ঘরে ঢুকে খানিক উত্তাপ নিয়ে বাবাজীর সাথে কথোপকথন

    আমরা :- আপকে দর্শন কে লিয়ে আয়ে হ্যয় হাম্লোগ।

    বাবাজী :- কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি

    আমরা :- আপকে লিয়ে ইয়ে থোরা বহোত চাউল ওর ডাল লায়ে থে।

    বাবাজী :- কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি

    আমরা :- আজ রাত হাম্লোগ আপকে প্রসাদ খানেকে ইচ্ছা রাখতে হ্যায়।

    বাবাজী :- কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি

    ওদিক থেকে পোর্টার জী ইশারা করলেন এবারে চলে যেতে হবে। মানে কার্যসিদ্ধি, রাতে আমাদের খাওয়া জুটছে।

    বাবার চেলাদের কাছে শুনে বুঝলাম যে থাকার জায়গা মানে ট্রেকার্স হাটের মতন যে ঘরগুলি দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে যেটা পছন্দ হয় সেটাই আমাদের। অনেক খুঁজে যেটায় সব থেকে কম ফুটো আমরা সেটা দখল করলাম। আশা রাতে কম হাওয়া ঢুকবে। বাবাজীর চেলারা আমাদের দয়া করে কিছু কাঠ দিয়েছিল রাতে আগুনের জন্য। আর শুনিয়েছিল যে এমনিতে ওরা কাউকেই দেয় না কারন এই কাঠ ওরা সারা বছর ধরে জমা করে শীতের জন্য। আমারও মনে হয়েছিল অকাট্য যুক্তি।

    আমরা আরো কাঠ জোগাড় করলাম কারন ঠান্ডা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠছে কেমন যেন মনে হচ্ছে রাতে জ্বালাবে। তারপর খাওয়ার সময়। আবার বাবার ঘরে। পাতে পড়ল খিচুড়ী আর আচার। গরম ঘর আর ক্ষুধার্ত আমরা এই দুয়ের কম্বিনেশান এ সেই যৎকিঞ্চিৎ খাবারো মনে হয়েছিল অমৃত। সেই টেস্ট এখনো ভুলি নি।

    যারা আমার মতন হিন্দী জানেন না তাদের জন্য "কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি" র মানে হল - take it easy

    (আগামীকাল সমাপ্য)
  • RATssss | 63.192.82.30 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:৩৬393412
  • ছক্কাস বাবাজী তো!!!
    ইয়ে বাবাজীকো হাম ভি দেখনে কা ইচ্ছা প্রকাশ করতা হু। কোমর পর্যন্ত বরফে হাঁটছিলে কি করে তার এট্টূ ডিটেল দাও ... তার উপরে ঐ জুতো! আমার বরফে হাঁটতে গেলেই মনে হয় পায়ে কাঁটা লাগানো জুতো না থাকলে বড্ড অসুবিধা - মানে পদে পদে পদস্খলনের সম্ভাবনা :-)
  • tania | 198.95.226.224 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:১৮393413
  • গোলা হচ্ছে এই সুতোটা!
  • UM | 70.233.75.221 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:৫৬393414
  • আগামী কাল কবে আসবে ???
  • arjo | 24.214.28.245 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৩:৫০393415
  • কেন আগামীকাল :-)

    আজই হয়ত।
  • arjo | 24.214.28.245 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৪:৩৭393417
  • ভরপেট খেয়ে বাবাজীর ঘর থেকে বেরিয়ে টের পেলাম ঠান্ডা যতটা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি। এমনকি সিগারেটে টান না দিয়েই দৌড়ে আমাদের কুঁড়েতে এসে আগুন জ্বালালাম। সন্দীপন দা বলল নিশ্চয়ই -৭, -৮ হবে। আমার এখন মনে হয় সেদিন ওখানে -১০ এর নীচে ছিল তাপমাত্রা। খানিক আগুন পুইয়ে আমরা ঢুকলাম স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে। ঘরে একটাই বেঞ্চ ছিল সেটা দেওয়া হয়েছিল রিমিকে। অবিলম্বে চারিদিক থেকে নাক ডাকার ঘড়্‌ঘড় শব্দ। শুধু আমার চোখে ঘুম নেই। ঠান্ডায় কাঁপছি। আমার মনে হয়েছিল নিশ্চয়ই জ্বর এসেছে। সারা গায়ে হাত পায়ে অসম্ভব ব্যথা। শুয়ে ভাবছি এর থেকে বাবাজীর ঘরের পাশে বাবাজীর কুকুরের সাথে থাকলেও হত। বাবাজীরা আমাদের সেখানে থাকার অফারো দিয়েছিল। কিন্তু রিমির আবার কুকুরে অ্যালার্জী আর আমারো কুকুরের স্মৃতি খুব একটা ভাল নয়। সে ঘর আমাদের এই ঘরের থেকে অনেক ভাল ছিল। আমাদের ঘরে বড় বড় দুটো জানলা আর সেখানে দুটো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা দেওয়া। কিন্তু তাতে কিছুই হয় না। আমি কাঁপছি আর ভাবছি কাল আবার অতটা হাঁটব কি করে। খানিক বাদে পাশের থেকে শুনলাম উফ উফ। সন্দীপন দা বলল ভীষণ ঠান্ডা লাগছে। ওদিক থেকে সর্ফু বলল মুঝে ভি। অবধেশ বলল ম্যয় তো শোয়াহি নেহি। আস্তে আস্তে উঠে বসে রাম নামের বন্দোবস্ত করলাম। ওদিকে আগুন প্রায় নিভে এসেছে। আমরা বুঝলাম যে রাতে ঘুমোনো সম্ভব নয়। আর ঠান্ডার মোকাবিলার জন্য আগুনই অবলম্বন। ঠিক সেই সময়েই এলেন পোর্টার জী আরো কিছু কাঠ আর হাতে একটা বোতল নিয়ে। বোতলে হিমাচলের লোকাল মদ আর কোক মেশানো। আমরা সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে আর মদে ছোট্ট ছোট্ট চুমুক দিয়ে কাটিয়ে দিলাম। একেবারে ভোরের দিকে আমার চোখ একটু বুঁজে এসেছিল।

    (আজই সমাপ্য)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন