এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ট্রেকিং-এর গল্প

    RATssss
    অন্যান্য | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ | ৯০৮০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • arjo | 24.214.28.245 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:১৬393418
  • সকালে যখন তন্দ্রা কাটল তখন আলো ফুটেছে আর লোকজনেরও ডাক এসেছে। অবধেশের কমপ্লিট, সর্ফু আর সন্দীপন দা এবারে যাবে। আমি বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। দেখি গাড়ু হাতে বাবাজী ও চলেছেন, গায়ে একটি সুতো-ও নেই। আমাদের দেখে একগাল হাসলেন।

    তখন বয়স ছিল অল্প তাই খাই খাই বাতিক ও ছিল না। অতএব সেদিন ব্রেকফাস্ট অফ। তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিয়ে বেরোনোর আগে গেলার বাবাজীর ঘরে। সেদিন বাবাজী স্বমহিমায়।

    আমরা:- আচ্ছা বাবাজী চলতে হ্যায়।

    বাবাজী:- কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি।

    বাবাজী:- এক চিজ ইয়াদ রাখ্‌না বেটা। বিষ দো পর বিশ্বাস মাত দো।

    আমরা:- প্রণাম। বহোত শুকরিয়া।

    বাবাজী:- কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি।

    আমরা চলতে শুরু করলাম। শান্ত ক্ষীরগঙ্গা ফেলে বিকেল নাগাদ এলাম পুলগায় মনে হল এখানে কত লোক আর কি আওয়াজ। সেদিন রাতে মুলত আমারি জন্য আমরা ৭০০ টাকা দিয়ে একটা মুরগী কিনে খেয়েছিলাম। ওরা মুরগী বিক্রি করত না কারন শীতকালে ডিম ই ছিল ওদের প্রধান অবলম্বন। রাতে গরম গরম গরম রুটি আর মুরগীর ঝোল খেয়ে বেশ তাজা লাগল নিজেকে। দীর্ঘদিন প্রোটিন না খেলেই আমি আবার দুর্বল বোধ করি।

    এর পরের ঘটনা সেই থোড় বড়ি খাড়া। পরেরদিন আমরা এলাম মণিকরণে, সন্দীপন-দার ম্যান্‌জমেন্ট এর জন্য টাকা বাজেটের অনেক বেঁচে যাওয়াতে আমরা থাকলাম পার্বতি হোটেলে - ওখানকার সবথেকে ভাল হোটেল। তার পরের দিন কুলু এবং ডিলাক্স বাসে করে ফিরে এলাম হোস্টেলে।

    এই ট্রেকিং থেকে আমার প্রাপ্তি বাবাজীর অমোঘ উপদেশ। জীবনে বারে ছড়াই আর নিজেকে নিজে বলি "কোয়ি নেহি জী কোয়ি নেহি কোয়ি নেহি"। সেই তখন থেকেই জীবনের নানা ওঠা পড়া আর গায়ে লাগে না।

    (সমাপ্ত)
  • Shuchismita | 141.218.214.156 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:৫৬393419
  • ভীষন ভালো লাগলো :)
  • RATssss | 24.24.228.247 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১২:৪৭393420
  • দারুন...
    হিমালয় টানছে বড্ড।

    পরের গল্প শুরু হোক :-)
  • nyara | 67.88.241.3 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৪:৫৬393421
  • এটা ঠিক গল্প নয় - কারণ আমার কিছু মনে নেই। তাড়া খেয়ে যা মনে আছে তাই লিখে দিতে বাধ্য হচ্ছি। তাছাড়া এই ট্রেকটা বোধহয় অনেকেই করেছেন। তবে একটা ব্যাপারে ১০০% গ্যারান্টি। এ লেখা কারুর কোন কাজে লাগবে না মানে এতে কোন কাজের তথ্য নেই। আর একটা কথা, সব স্টেটমেন্টের আগে একটা করে 'বোধহয়' বসিয়ে নেবেন।

    ১৯৯৫-এ খুব অ্যাডভেঞ্চার পেয়েছিল। একে-ওকে বার, হুপ ও হিড়িক খাইয়ে দল হয়েছিল ৮ জনের। হয়েছিল বলা ভুল। হব-হব করছিল এমন সময়ে বস্টন থেকে ইন্দ্রনীল আর বর্ণালী ঝরে গেল। রইল বাকি ছয়। বস্টন থেকে দুই, নিউ জার্সি থেকে দুই আর কলাম্বাস (ওহাইও) থেকে দুই।

    ঘুরেঘারে লাস ভেগাস হয়ে গ্র্যাক্যা কি করে পৌঁচেছিলাম ভাল মনে নেই। তবে দুটো জিনিস মনে আছে। এক, আমি আর পুষ্পল মেসিস থেকে স্নিকার কিনেছিলাম। সেই প্রথম আমার মেসিসে জিনিস খরিদ। দুই, বড় গাড়ি পাওয়া যায়নি বলে দুটো গাড়ি নিতে হয়েছিল। লাস ভেগাস থেকে উইলিয়ামসে যাবার পথে রাত্তির বেলা দুটো বজ্জাত এইট্টিন হুইলার কিছুতেই লেন ছাড়ছিলনা দেখে অপ্রতিম ভয় পেয়েছিল।

    টেন্ট, হাইকিং গিয়ার - মানে ব্যাগপ্যাক-ট্যাগপ্যাক সব প্লাস খাবার-দাবার তুললাম গ্র্যাক্যার জেনেরাল স্টোর থেকে। ওটা সবথেকে সুবিধেজনক কারণ মালপত্র বওয়ার হ্যাঙ্গাম করতে হয়না অথচ প্রায় প্রফেশনাল গিয়ার পাওয়া যায় সুলভে। তবে আগে থেকে বুক করে রাখবেন কারণ গরমে হাইকারে থিকথিক করে গ্র্যাক্যা। আর দরকার ব্যাক-কাϾট্র পারমিট। সেটা পৌঁছে গ্র্যাক্যা আপিশ থেকে নামমাত্র মুল্যে জোগাড় করতে হয়। আগে গেলে আগে পাবেন। তবে পাবেনই যে এরকম কোন কথা নেই। কোটা-ফোটা আছে বোধহয় যে একদিনে এতজনের বেশি লোককে পারমিট দেওয়া হবেনা। তার সোজা কারণ হল নিচে ক্যাম্পসাইট তো আর অঢেল ও অগুন্তি নয়। আর পার্মিটের এক্সপায়ারি আছে। মানে এবার গিয়ে পার্মিট নিয়ে ভাবলেন যে পাঁচবাচর পরে খোকা একটু বড় হলে এসে এই পার্মিটে ট্রেক করব - সে গুড়ে কিচকিচে বালি।

    প্রথম রাত্তির ওপরে ক্যাম্প করে থাকার প্ল্যান ছিল। পরেরদিন কাকভোরে অধ:গমন। গরমে গ্র্যাক্যাতে প্রায়ই ফায়ার হ্যাজার্ড এতই বেশি থাকে যে ওপেন এয়ারে কোনরকম আগুন জ্বালানো নিষেধ। সেদিনও তাই ছিল। বিড়ি খেলাম গাড়ির ভেতর। তারপরে শুরু হল বাঙালির প্ল্যানিং। উরিত্তারা, সে কি জিনিস! পেট্রোমক্স সোঁ সোঁ করছে, রেঞ্জার এসে বার দুয়েক ওয়ার্নিং দিয়ে গেল 'কোয়ায়েট টাইমে গোলমাল করছ' বলে, চারদিকের সব টেন্টে লোকে ফাটিয়ে ঘুমোচ্ছে আর আমরা ছটি বাঙালী লড়ে যাচ্ছি ছটা ব্যাগে মালপত্র ভাগাভাগি করতে। দুটো কনস্ট্রেন্টে অপটিমাইজেশন চলছে - সবাইকার ব্যাগের ওজন মোটামুটি সমান হতে হবে আর প্রত্যেকের ব্যাগে বেসিক মাল থাকতে হবে যাতে হারিয়ে গেলেও ভুখা না মরে। মানে সামিটের আগেরদিন তেনজিং আর হিলারিও এত প্ল্যানিং করেনি, সেদিন আমরা যা করেছিলাম। যা প্রয়োজন তার বেশি মাল নিয়ে নাবা যাবেনা। তার অনেক কারণ। তবে অবিনশ্বর কারণটি হল, যা মাল নামবে সব আবার আমাদের পিঠে চড়ে ন' মাইল উঠে আসবে। নিচে কিচ্ছুটি ফেলে আসা যাবেনা। মায় রেচনজাত পদার্থও আমাদের ব্যাগে চড়ে লোকালয়ে ফিরে আসবে। পরে জেনেছিলাম ব্যাপারটা অত ভয়াবহ নয়। তবে সামান্য ট্র্যাশ আর ইয়ে ছাড়া সবই নিয়ে উঠে আসতে হবে।

    এই ওঠা নিয়ে আমাদের গভীর চিন্তা ছিল - পারব তো? অপ্রতিম মুশকিল আসান করে দিল। বলল, 'ভাব কি? যারাই নাবে, সবাই উঠে আসতে পারে নাকি? হাতির মাথা। যারা থেকে যায় তাদের নিয়ে একটা পুরো প্যারালাল সিভিলাইজেশন আছে নিচে। সেখানে থেকে যাব। খালি দেখতে হবে যে আমার লাইনে নিচে কাজ হয় কিনা!' যাক, দুশ্চিন্তা গেল।

  • RATssss | 63.192.82.30 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:১৩393422
  • শুরুতেই জমে গেছে ... এই কারনেই এত ঠেলছিলাম :-)
    অসীম আশায় বসে আছি পথ চেয়ে :-)
  • r | 125.18.17.16 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১২:০৭393423
  • হায় রে সেই সইত্যযুগ, সেই স্যান্ডি, সর্ফু, অভধেশ, আর্য!! এইসব খাটাখাটনি করে কেউ কেউ সি ই ও-ও হয়ে গেল! (দীপ্তেনদার সি ই ও নয়, সত্যি সত্যি)।
  • nyara | 67.88.241.3 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০১:৪৪393424
  • পরেরদিন ভোরবেলা - আক্ষরিকভাবে কাকডাকা ভোরে - সবাই উঠব-উঠব করছি, হঠাৎ টেন্টের অন্তরাল থেকে অপ্রতিম প্রস্তাব করল, "গুরু কাটিয়ে দাও।' বলে কি রে! তবে অপ্রতিম সম্বন্ধে যে সব কিংবদন্তী চালু আছে তার সঙ্গে 'কাটিয়ে দাও' খাপে খাপ মিলে যায় বলে আমরা যতটা অবাক হতে পারতাম ততটা হলামনা। মাভৈ: বলে অপ্রতিম আর সুদেষ্ণার ব্যাগপ্যাক হাঁটকে কয়েকটা জরুরী জিনিস বের করে আমাদের ব্যাগে যেরকম পারি ঢুকিয়ে নিলাম। বাঙালীর প্ল্যানিং, হুঁ হুঁ বাওয়া।

    প্রথমদিকে নাবাটা খুব ফুরফুরে। হাল্কা ঠান্ডা মতন, রোদ্দুর লাগছেনা গায়ে, পিঠে বোঝা তত ভারী হয়নি, আড্ডা মারতে মারতে নাবা। আমরা নাবছিলাম সবথেকে সোজা ট্রেল - ব্রাইট অ্যাঞ্জেল - দিয়ে। একটু লম্বা ট্রেল। কিন্তু মাঝামাঝি ইন্ডিয়ান গার্ডেন বলে একটা রেস্ট এরিয়া আছে। সেখানে জল পাওয়া যায়, রেস্ট নেওয়া যায়। হিসেবমত মোট ন' মাইল নাবতে হবে। আধাআধি জায়গায় ইন্ডিয়ান গার্ডেন। তারপরে আরও একটু নেবে কলোরাডো রিভার। সেখান থেকে একটু চড়াই হেঁটে তারের ব্রিজ ধরে কলোরাডো রিভার পেরিয়ে ওপারে কিছুটা এগিয়ে ব্রাইট অ্যাঞ্জেল ক্যাম্পসাইট।

    আমরা নাবছি, আরও কিছু হাইকার নাবছে আর নাবছে দলে দলে খচ্চর। পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে। একবারে খাদের ধার ঘেঁষে। প্যামফ্লেটে লেখা আছে খচ্চরদের রাইট অফ ওয়ে। "খচ্চর দেখিলে এক পাশে সরিয়া দাঁড়ান। টুঁ শব্দটি করিবেন না। অন্তত: একশো গজ না যাইলে নড়িবেন না। নহিলে খচ্চররা ঘাবড়াইয়া গিয়া পদাঘাতে আপনাকে খাদের গহ্বরে ফেলিয়া দিলে কোম্পানি দায়ী নহে" - মানে এসব প্যামফ্লেটে যেরকম লেখা থাকে। কাজেই খচ্চর আসতে দেখলেই আমরা এবড়ো-খেবড়ো পাথরের গায়ে ক্যালেন্ডার হয়ে যাচ্ছিলাম। পরে দেখলাম খচ্চরদের নামে নেহাতই বদনাম রটিয়েছে। আমাদের দেখলে খচ্চরগুলো লজ্জায় মুখ নাবিয়ে হাগতে হাগতে চলে যাচ্ছিল।

    একটু পরেই টের পেলাম রোদ্দুর। রোদ চড়ছে আর জল তেষ্টা পাচ্ছে। কিন্তু প্রাণ খুলে জলও খেতে পারছিনা। কারোরই ট্রেকিং-ফেকিং-এর অভিজ্ঞতা না থাকায় কতটা হেঁটেছি তার কোন ধারণাই ছিলনা। যদি মাঝপথে জল ফুরিয়ে যায়? পথে কোন রেঞ্জারের দেখা পেলে জিগেস করছিলাম 'দাদা, আর কতদূর?' আস্তে আস্তে যত বেদম হচ্ছি তত আমাদের চারজনের দলে ছানা কেটে যেতে লাগল। আমরা হাঁটার গতি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়ে গেলাম। পরে জেনেছিলাম সেটা নাকি ট্রেকিং-এর নিয়মবিরুদ্ধ। দলের গতি হবে সবথেকে আস্তে হাঁটা ট্রেকারের গতির সমান। সবাই একসঙ্গে হাঁটবে।

    (কিরকম সন্দেহ হচ্ছিল বলে মুশকিল আসান শ্রীযুক্ত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে জিগেস করলাম। বললেন যে ব্রাইট অ্যাঞ্জেলে নাকি দেড় আর তিন মাইলের মাথায় দুটো খুচরো রেস্ট এরিয়া আছে এবং সেখানে জল পাওয়া যায়। আমার একদম মনে পড়ছেনা।)

    ট্রেল অধিকাংশ জায়গাতেই বেশ সরু। তবে একদম পরিষ্কার, ভুল হবার কোন চান্স নেই। রাস্তায় মাঝে মাঝে ঝোপঝাড় আছে। মাঝে মাঝে পাথরের গা বেয়ে সরু জলের ধারাও - যা খেলে পেটের ব্যথা অবশ্যম্ভাবী - কিন্তু বেশির ভাগ রাস্তাই বেশ ঊষর। ট্রেলে পাথর গুড়ো হয়ে গিয়ে বালি হয়ে গেছে। কয়েক জায়গায় নুড়ি সাইজের পাথর। পা হড়কে যেতে পারে। পিঠের ব্যাগপ্যাক মোটমুটি কমফর্টেবল, কিন্তু ক্রমশ: ভারী হচ্ছে। আর টেন্টটা গুটিয়ে ব্যাগপ্যাকের তলার দিকে স্ট্র্যাপে হরাইজন্টালি বাঁধা - সেটা হাঁটার তালে তালে ক্রমাগত পায়ের ডিমে গুঁতো মেরে যাচ্ছে। প্রথমে অস্বস্তিকর, তারপরে বিরক্তিকর আর শেষে বেশ বেদনাকর।

    হিসেবমতন ভেবেছিলাম যে যদি এগারোটা সাড়ে-এগারোটার মধ্যে ইন্ডিয়ন গার্ডেনে পৌঁছতে পারি তাহলে অন-স্কেজিউল থাকব। পথে খুব বেশি রেস্ট নিইনি তাই। প্রচন্ড হাঁপিয়ে যখন ইন্ডিয়ন গার্ডেনে পৌঁছলাম তখনও এগারোটা বাজেনি। লীহ্‌।
  • nyara | 67.88.241.3 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:০৬393425
  • ইন্ডিয়ান গার্ডেনে পৌঁচেছি গরমে-রোদে কাতর হয়ে আর অসম্ভব ক্লান্তি নিয়ে। ছায়া দেখে সব চিৎপটাং। একটু ধাতস্থ হবার পরে ব্যাগ থেকে স্টোভ আর প্যাকেটের খাবার বের করে খাবার তৈরি করা হল। মনে হচ্ছে ওয়াইল্ড রাইস খেয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়ার পরে মিনিট পনের বিশ্রাম নিয়ে আবার পানসী বেলঘরিয়ার দিকে চালানোর কথা। এমন সময়ে অর্ণবের মাথা থেকে হাই-ভোল্টেজ স্পার্ক বেরল। বলল, "দেখ, আগেই যখন এসে পড়েছি তখন আরও বেশিক্ষণ রেস্ট-টেস্ট নিয়ে বেরোই। ক্লান্তি দূর হবে, দেহে বল ফিরে আসবে, মন শান্ত হবে, শরীর ঠান্ডা হবে, দাঁত পরিষ্কার হবে, জামাকাপড় উঙ্কÄল সাদা দেখাবে ... - বেশ পুর্ণ উদ্যমে বাকিটা মেরে দেব। প্রচুর সময় হাতে আছে। আটটার আগে তো সন্ধ্যে হবেনা। আর ইতিমধ্যে রোদটাও একটু পড়বে।' আমরা হুঁহাঁ করতে করতে কনভিন্সড হয়ে গেলাম। মাথায় ব্যাগপ্যাক দিয়ে ফুরফুরে হাওয়ায় ছায়ায় সুনিবিড় দিবানিদ্রা হল। তখনও আমরা কারুরই নাক ডাকত না।

    ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন খুব গান্ধিজীর কথা মনে পড়ছিল। বাপু বার বার বলেছিলেন, 'ওরে, আরাম হারাম হ্যায়'। হারাম বলে হারাম! অবসাদে মাথা তাজ্জিম তাজ্জিম করছে। ব্যাগপ্যাকে যে মালপত্র ঢোকাব সে শক্তিই নেই, কাঁধে তুলে হাঁটা দেওয়া তো দূরস্থান। গায়ে রোদ লাগলে সরে বসে সোনার তনু বাঁচানোর ক্ষমতাও নেই। সবাইকার একই অবস্থা। ফ্যালফ্যালে শূণ্য দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে সবাই অবস্থা ময়না করার চেষ্টা করছি। কোথায় কি অবস্থায় আছি মনেই পড়ছে না। গন্তব্যের কথা চড়াক করে মনে পড়তে কিঞ্চিৎ ধাতস্থ হলাম। তারপর মুলত: গন্তব্যে পৌঁছনোর উদ্বেগের ঠেলায় আবার ট্রেল ধরতে পেরেছিলাম। এটা কেউ বলে দেয়নি বলে ঠেকে শিখতে হল - ট্রেকিং-এর সময়ে কখনও লম্বা ব্রেক নিতে নেই। ছোটো ছোটো অনেকগুলো ব্রেক নিন - কোই পরোয়া নেহি। কিন্তু এমন ব্রেক কখনও নেবেননা যাতে পেশী-টেশিরা ভেবে বসে যে সেদিনকার মতন তাদের কাজ শেষ। তাহলে একেবারে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা হবে কিন্তু।

    অর্ণবের চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে করতে, ধুঁকতে ধুঁকতে আর চরৈবেতি জপতে জপতে আবার হন্টন। অসম্ভব রোদ আর গরম। বোতলের জল এত গরম হয়ে গেছে যে চা করতে গেলে মনে হয় ও জল একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে। তাই জল খেয়ে ডিহাইড্রেশন কমলেও কোন তৃপ্তি হচ্ছেনা। মনে হয় জল পেট অব্দি পৌঁছচ্ছেও না। মাঝপথেই বাকিসব অর্গান শুষে নিচ্ছে। কাজেই 'আসছে আসছে' করতে করতে যখন সত্যি একটা ঢিপি পেরিয়ে কল্লোলিত কলোরাডো নদী দেখতে পেলাম মনে হল 'ইয়াল্লা' বলে চেঁচাই। এই সেই কলোরাডো নদী যে হাওয়া-টাওয়ার সঙ্গে ষড় করে অত্যন্ত অধ্যবসায়ের সঙ্গে কয়েক লক্ষ বছর ধরে পাথর ক্ষইয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামক এই আশ্চর্য জিনিস বানিয়েছে। এ অনেকটা সেই বাঙলা প্রবাদের মতন, 'নেই তাই হাঁটছ, থাকলে কোথায় যেতে?' (এর উত্তর হবে বুঝতেই পারছেন, 'গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ক্ষয়ে যাওয়া লাল পত্থর'। সমঝদার লোগোঁকে লিয়ে ইশারাহি কাফি হ্যায়।)

    ওখানে কলোরাডো নদীর ধারে বেশ প্রশস্ত একটা ফাঁকা জায়গা। অনেক হাইকার বিশ্রাম নিচ্ছে। বেশ একটা সীবিচ সীবিচ আবহাওয়া। খালি দুপাশে প্রায় খাড়া উঠে যাওয়া পাহাড়ের মতন পাথরের দেওয়াল বলে সমুদ্রের ধারের দিলখোলা ব্যাপারটার বদলে একটা কিরকম গা ছমছমে ব্যাপার আছে। কেন জানিনা এই জায়গাটা দেখে আমার জয়ন্তি ফরেস্ট বাংলোর পাশের জয়ন্তি নদীর দৃশ্য মনে পড়ে গেল। ওখানেও নদীর ওপারে প্রায় খাড়াই উঠে গেছে জয়ন্তি পাহাড়। তবে কলোরাডো নদী অনেক বেশি খরস্রোতা। আমরা গিয়ে জলে হাত দিতেই শক খেয়ে পেছিয়ে এলাম। কি ঠান্ডা রে ভাই! একেবারে কনকনে ঠান্ডা। এই গরমের মধ্যে অত ঠান্ডার জন্যে একেবারেই তৈরি ছিলাম না। বরফ গলা জল এত হন্তদন্ত হয়ে চলেছে যে একটু জিরিয়ে গরম হয়ে নেবার সময় পায়নি। দেখলাম ঝানু ট্রেকাররা পাড়ের দিকের কাকচক্ষু, পায়ের-চেটো-ডোবা জলের নিচে বালিতে বোতল পুঁতে জল ঠান্ডা করছে। যদ্দিন বাঁচি তদ্দিন শিখি। আমরাও তদ্রূপ করিলাম। বিশ্বাস করবেন না, পাঁচ মিনিট পরে সেই বোতল তুলে জল খেতে গিয়ে দাঁত কনকন করতে লাগল এত ঠান্ডা হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান গার্ডেনের খাওয়া-ঘুম যা করতে পারেনি কলোরাডো নদীর ঠান্ডা আর অল্প স্যাঁতস্যাঁতে হাওয়া অক্লেশে তাই করে দিল - আমাদের চাঙ্গা।

    (অহেতুক বড় হয়ে যাচ্ছে। পরেরটা থেকে টু দি পয়েন্ট। ততক্ষণ ছবি দেখুন সাহেব-মেমের ট্রেকিং-এর: http://www.silogic.com/canyon/trip.html)
  • a | 220.226.70.145 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২১:৫৪393426
  • আরে যাতা তো!!!

    টু দা পয়েন কেন? মামুর সার্ভারে কি জায়গা কম পড়িয়াছে?? চালিয়ে যান দাদা, বেড়ে হচ্ছে

    যারা লিকেচেন, দারুণ লিকেচেন।

    যারা লেকেন নি, জলদি লিখুন। হিমালয় হবে না? হিমালয়??
  • RATssss | 63.192.82.30 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:১৩393428
  • ন্যাড়াদা আবার ল্যাখেন জলদি - ছোটহাতের এ কেমন আপনার ল্যাখা পড়ে গুলাইয়া ফ্যালসেন - দু-দুটো হিমালয়ের দুই পারের হাঁটাহাঁটি দ্যাকলেন না - নয়ত ঐ গুলানেরে হিমালয়ে ধরলেন না!!!! তবে কি হিমালয় মানে অন্য কিছু? তাই যদি হয় ধৈর্য্য ধরেন, তৈরি থাকেন - `' আসিতেছেন খানিক পরে :-) গোয়েচালা, এবং এভারেস্ট বেস ক্যাম্প :-) সহ কয়েকটি ঘ্যামা ঘ্যামা ট্রেক আছে ওনার ঝুলিতে

  • nyara | 67.88.241.3 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:৩৫393429
  • কলোরাডো নদী অব্দি এসে গেছি মানে অনেকদূর এসেছি, এরকম একটা ধারণা ছিল। কাজেই বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে আবার চলতে শুরু করেছিলাম। অনেকক্ষণ হেঁটেও যখন ক্লান্ত হয়ে পড়া ছাড়া আর বিশেষ পরিবর্তন দেখলাম না তখন খেয়াল হল, 'আরে, এ তো চড়াই উঠছি আমরা।' আর যেই সেটা একবার মাথায় ঢুকল অমনি ক্লান্তি আরও ঝেঁকে আসতে লাগল। কলোরাডো রিভারের পরে ট্রেলের ল্যান্ডস্কেপ আর পার্সপেক্টিভ কিছুটা বদলে গেছে। এখন মোটামুটি আমরা কলোরাডো রিভারের সমান্তরাল যাচ্ছি। মানে যেতে বাধ্য হচ্ছি। সুযোগ পেলে নির্ঘাত ওখানেই থেকে যেতাম। এমন রোদ আর ধুঁকুনি যে শেষ পর্যন্ত পাথরের ছায়ায় বসে জিরোতে বাধ্য হলাম। কিন্তু শান্তিতে যে জিরোব তা কি আর যো আছে। কেউ না কেউ মনে করাবেই যে ক্যাম্পসাইটে গিয়ে সূর্য ডোবার আগে টেন্ট টাঙাতে হবে। কাজেই আবার হ্যাঁক্কো হ্যাঁক্কো করতে করতে এগোনো। গরম থেকে বাঁচতে একটা টোটকা আবিষ্কার করলাম। যেই মনে করছি, 'আজকেই এই, কাল পুরোটাই ওঠা' অমনি শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেবে শরীরে শীতল আমেজ এনে দিচ্ছে।

    অবশেষে কলোরাডো রিভারের ওপর দিয়ে তারের সাসপেনশন ব্রিজ পাওয়া গেল। ওপারে গেলেই ব্রাইট অ্যাঞ্জেল ক্যাম্পসাইট। প্রায় এসে গেছি। কিন্তু এই তারের ব্রিজটা আগে পেরোতে হবে। কাঁধে বোঝা, পিঠ নুয়ে গেছে, সারাদিন চলতে চলতে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটা অভ্যেস হয়ে গেছে এমন অবস্থায় ঐ লম্বা ব্রিজ পেরনো খুব স্বস্তিকর কিছু নয়। কারণ পায়ের দিকে তাকালেই দেখবেন নীচে, মানে বেশ অনেক নীচে, সবজেটে কালো কলোরাডো বয়ে চলেছে তুমুল স্রোতে। বুক দুরদুর করবেই করবে। কে এ অবস্থায় কি করে জানিনা, আমি সাহেব ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর অগাধ আস্থা রেখে আর 'ফ্যাকটর অফ সেফটি' জপতে জপতে পেরিয়েছিলাম।

    তারপরে বিশেষ কিছু মনে নেই। মানে কোনরকম বিঘ্নবিপদে পড়িনি। তবে মনে হচ্ছে ক্যাম্পসাইট যতটা কাছে হবে ভেবেছিলাম তত কাছে পড়েনি।

    ক্যম্পসাইটটা একটা তিরতিরে ঝোরার পাশে। এদেশের ক্যাম্পসাইট যেরকম হয় - একটা ফাঁকা জায়গা টেন্ট খাটাবার জন্যে, একটা বারবিকিউ পিট, একটা পিকনিক টেবিল আর একটা ট্র্যাশক্যান। বারবিকিউ পিট আর পিকনিক টেবিলটা মনে পড়ছে না, ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু ট্র্যাশক্যানটা পরিষ্কার মনে আছে। কারণ ব্যাঙ্কের লকারের মতন আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধ করা ট্র্যাশক্যান ওই প্রথম দেখেছিলাম। গল্পটা হল যে ওই ক্যানে মানুষে ট্র্যাশ ফেলতে বা বের করতে পারবে কিন্তু ভাল্লুক বা স্কাঙ্ক পারলে চলবে না। ওখানে নাকি ভারি স্কাঙ্কের উপদ্রব। সাহেবদের কেতাই আলাদা!

    বাথ্রুম সেরে, টেন্ট-ফেন্ট খাটিয়ে চতুর্দিক ময়না করতে বেরলাম। তখনও সূর্য অস্ত যায়নি, কিন্তু রোদ নেই এত নিচে। রোদ তখন পাথরের গা বেয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে। বুঝতে পারছিলাম ঝপ করে অন্ধকার নেবে আসবে। ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বসে ঠান্ডা হতে হতে গভীর এক্সিসটেন্সিয়াল ফিলোজফি আলোচনা হল আমার আর শ্রাবণীর।

    - আচ্ছা, কাল যদি ফাইনালি উঠতে না পারি।
    - এয়ার লিফট করে নিয়ে যাবে।
    - এয়ার লিফটের পয়সা কে দেবে?
    - আমাদেরই দিতে হবে।
    - ও বাবা, তাহলে তো মরে যাব।

    কাজেই বোঝা গেল জীবন বাঁচাতে যে করেই হোক নিজেদের পায়েই উঠতে হবে কাল। স্থির হল চারটেয় উঠে সাড়ে চারটের মধ্যে বেরিয়ে পড়ব। এখন গিয়ে ম্যাশড পট্যাটো খেয়ে টেন্টে ঢুকে শরীরের পরিচর্যা করা যাক ঘুমতে ঘুমতে।
  • a | 220.226.76.13 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১২:৫১393430
  • জঘইন্য!!! মিস করলাম কি করে??

    মিশটেক

    গোয়েচালা জলদি।।।।

    ন্যারাদা চালিয়ে যান দাদা
  • nyara | 64.105.168.210 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:০৯393431
  • "আশ্চর্য জানোয়ার মশাই। নিজের পেটে নিজের ওয়াটার সাপ্লাই। সেই নিয়ে চলেছে, চলেছে, চলেছে"। সোনার কেল্লা নামক বায়াস্কোপে লালমোহনের মুখে উটের এমন অমোঘ বর্ণনা যাদের মনে আছে, তারা খানিকটা আমাদের ওঠার গল্প আঁচ করতে পারবেন। নিজের পিঠে নিজের লাইফ লাইন, সেই নিয়ে উঠছি, উঠছি, উঠছি। আপোন গড বলছি, এ ছাড়া আর কিচ্ছু মনে নেই। ঐ 'উঠছি, উঠছি, উঠছি'র মধ্যে অ্যাকচুয়ালি একটা উঠছি, বাকিদুটো ট্রেলের ধারে পাথরে পশ্চাৎ ঠেকিয়ে হাপরের মতন দম নিচ্ছি। পাথর না পেলে হাতের কাছে যদি কিছু পাই তাই ধরে। তাও না পেলে দাঁড়িয়ে দঁড়িয়ে। বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, ওঠা শুরু করার পনেরো মিনিটের মধ্যে নিজেকে নিজে প্রমিস করতে হচ্ছিল অন্তত দশ পা না গিয়ে বসব না। ইয়েস, দশ পা - টেন স্টেপস। এবং প্রমিস যখন করতে হচ্ছিল, তখন বুঝতেই পারছেন, অধিকাংশ সময়েই সে প্রমিস রাখা সম্ভব হয়নি। ভাগ্যিস মহর্ষি জনিয়ে গেছেন যে 'কেউ কথা রাখেনি', নইলে আর আয়নার সামনে দাঁড়ানোর যো থাকত না।

    কখন যে কলোরাডো নদীর বাঁক পেরোলাম, কখন ইন্ডিয়ান গার্ডেন এল এবং গেল, কি খেলাম, কতক্ষণ বিশ্রাম নিলাম কিচ্ছু মনে নেই। শুধু মনে আছে যে অন্ধকার নেবে আসছে, আর আমি তখনও হাঁটছি। চতুর্দিক অন্ধকার। মাঝে নিচে ক্ষীণ আলোর রেখা। আমার পেছনে পড়া কোন ট্রেকার টর্চের আলোয় ট্রেল চিনে উঠে আসছে। আমাদের সঙ্গে কোন আলো নেই। অন্ধকারের যে সামান্য আলো, তাইতে পথ চলছি। সেটাও আর বেশিক্ষণ থাকবে না। হঠৎ একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দূরে - বহুদূরে - একটা সরু কিন্তু উঙ্কÄল আলোর রেখা। বুঝলাম ওটা নর্থ রিমের গা ধরে সন্ধ্যের আলো জ্বলে গেছে। সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখি ওপর থেকে একটা টর্চের আলো। এ সময়ে কে ট্রেক করতে নাবে বাবা! ট্রেকার নয়। একজন রেঞ্জার নাবছে। আমাকে দেখে কুশল জিগেস করল। বলল আর বেশি নয়, প্রায় এসে গেছ। তরপরে জনাতে চাইল আমার পেছনে আর কেউ আছে কিনা। আমি বললাম অন্তত দুজন আছে জানি। রেঞ্জার তাদের খোঁজে চলে গেল। বোঝা গেল সন্ধ্যেবেলা গরুদের গোয়ালে নিয়ে আসার দায়িত্ব এর।

    ব্যস, তারপরে আরও কিছুক্ষণ হাঁচোড়-পাঁচোড় করে অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্সের চুড়ান্ত ঘটিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম। ওপরে উঠে কাঁধ থেকে ব্যগটা নাবাতেই, মাইরি বলছি, বিশ্বাস করবেন না, মনে হল দেহে হাতির বল। নিজেকে কিরকম জগাই-জগাই মনে হতে লাগল। সাতটা জার্মান ট্রেকার বসে গজল্লা করছিল। ভাবলাম একবার মহড়া নেব কিনা। কিন্তু সে ইচ্ছেয় ক্ষান্ত দিলাম কারণ তখনও পুষ্পল ওঠেনি। পুষ্পল মেজাজী ছেলে। নিশ্চয়ই কোন মনে মতন দৃশ্য দেখে সেঁটে গেছে। কাজেই আমি আবার নিচে নাবলাম। এবার তো পিঠে ব্যাগও নেই। কাজেই প্রায় উড়ে উড়ে নাবছিলাম। কিছুদুর গিয়ে পুষ্পলের দেখা মিলল। পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে নর্থ রিমের আলো দেখছিল বোধহয়।

    এই হল গিয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ট্রেক করার গল্প। আর কোনদিন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ট্রেক করব কিনা জানিনা, তাবে আর কষ্মিনকালেও বার খেয়ে এসব লেখার চেষ্টা করব না। ট্রেক করার থেকে সেটা ঢের বেশি টিডিয়াস।
  • sinfaut | 117.195.196.24 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২৩:৪৬393432
  • গোচালা
    =========

    আমরা গোচালা গেছিলাম দুবার। প্রথমবার ২০০১ এ, আর পরেরবার ২০০৩। ট্রেন ধরলাম। শিলিগুড়ি পৌঁছোলাম। তারপর গাড়ি ভাড়া করলাম। ও,আমাদের টিমের পরিচয় করে দিই(নাহলে ঠিক জমেনা) - সায়ন্তন, সন্দীপ,পঙ্কজ, জীবনানন্দ(কি কান্ড!) আর আমি।
    সায়ন্তন - বর্ন লিডার। বিয়ে বাড়িতে শেষপাতে খায়, প্যান্ডেলে ক'কিলো পেরেক লাগবে জানে। স্বাভাবিক গাড়ির সামনের সীটটা ওর :-(। সন্দীপ কলকাতা বড় হওয়া রাজস্থানী। রাজস্থানীরা ওকে বাঙালি বলে গালাগাল করে। ট্রেকিং করতে করতে দিওয়ালির
    লাড্ডুর কথা মনে পড়লে বাড়ি ফিরে যায়। প্রতিবার ও একটা স্বপ্ন নিয়ে আসে, বেশ সিনেমায় যেমন ভ্যালি-ব্যালি ওয়ালা পাহাড় দেখায় অমন হবে, কিন্তু হায় সে স্বপ্ন সফল হয়নি আজো। উল্টে হাঁপাতে হাঁপাতে খাঁটি ইন্ডিয়ান চড়াই ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের বাপান্ত করেছে, এই শেষ আর আসবোনা কোনোদিন। পরেরবার আবার এসেছে, এমনকি আমাদের গুঁতিয়ে এনেছে। কি চায় নিজেই জানেনা। পঙ্কজ - নাটক করে(স্টেজে নয়), রোগা লিকলিকে, বিড়ি খায়। প্রথমবার পাহাড়ে এলো। পাহাড়ে, ট্রেকিং তো দুরের কথা। স্বাভাবিক উৎসাহ সব থেকে বেশি। কখন "ক্রিভাষ" দেখা যায়, ঐ গ্লেসিয়ার নেমে আসছে ইত্যাদি। আর জীবনানন্দ? হেঁ হেঁ,
    নিজের নামটা পষ্ট বাঙলায় বলতে পারে কিনা আমার সন্দেহ আছে। খাঁটি মেরিকান অ্যাকসেন্টে ইংরাজি বলে, শিলং এর ছেলে। দাঁত মাজতে মাজতে কেউ কথা বললে তার নসিয়া হয়, ঠান্ডা লাগলে স্নিz করেন... এবম্বিধ আরও নানারকম বিলাতি ব্যাপারস্যাপার আছে। তবে ছেলেটা বড় ভালো। যাকগে এবার গাড়ি।

    উঠে পড়লাম। এই গাড়িটা ছিল একটা টুরিস্ট কম্পানির যারা শুধু বিদেশি লোক চালান করে। তো , য়াকসাম থেকে একটা পার্টিকে আনতে হবে, খালি না গিয়ে আমাদের তুলে নিলো। ভাড়া ১২০০ টাকা। তাহলে কি জানলেন? গোচালা যেতে গেলে য়াকসাম যেতে হয়। য়াকসাম কি করে যায়? শিলিগুড়ি -- জোরথাং-- গেজিং -- য়াকসাম। ছয় থেকে আটঘন্টার রাস্তা। এবার এইসব ব্যানাল ডিটেল আমারে শুধাবেন না - ছয় না আট? কম না বেশি? ওসব আমার মনে নেই। আমারে লিখতে দিন। গেজিং যাওয়ার আগে লেগশিপ বলে একটা ছোটো গ্রাম পড়ে যেখান থেকে গেজিং এর পথ সোজা উপরে উঠে গেছে। সেখানে আমাদের স্মার্ট ড্রাইভার এক কার্টন বীয়র নিলেন। তার নাম হিট। পাঁচজনকেই গোটা একেকটা বোতল ধরিয়ে দিলেন। গেজিং পেরিয়ে যাবার কিছু পর থেকে চাষ বা বাস যেগুলো এযাবৎ দেখে আসছিলাম সেসব প্রায় কিছুই থাকলোনা। শুধু সারসার পাহাড়, গাছ আর আকাশ। যখন আমরা কেলিয়ে গেলাম তখন আমরা পৌঁছোলাম য়াকসাম।
  • vikram | 89.234.101.179 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০০:১০393433
  • এরা গেসে গোচলে আমরা গেছিলাম অচলে। :-)
  • Shuchismita | 141.218.214.156 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৫:৩১393434
  • গ্র্যা.ক্যা.টা মিস করেছিলাম কি করে! অসাধারন! দুর্ধর্ষ! অতুলনীয়! ভাগ্গিস নামার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি!
  • nyara | 64.105.168.210 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৯:৩৪393435
  • ইয়ে, একটা ভ্রম সংশোধন করার আছে। গোচালা বেশিদূর এগোনর আগেই সেটা করে ফেলি।

    আমি লিখেছি যে ইন্ডিয়ান গার্ডেনে প্ল্যানের থেকে বেশিক্ষণ জিরিয়ে নিয়েছিলাম বলে শরীর জবাব দেব-দেব করছিল। পুষ্পল আর শ্রাবণী জানাল ব্যাপারটা নাকি ঠিক তার উল্টো হয়েছিল। আমাদের কপিবুক প্ল্যান ছিল রোদ পড়লে তবে আবার হাঁটা শুরু করার। অর্ণব নাকি ঠেলে 'আগে গেলে সোনা পায়' ফিলোজফিতে আমাদের ক্লান্ত শরীরকে অকারণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। অর্থাৎ ইন্ডিয়ান গার্ডেনের পরের থেকে যা ক্লান্তি সে যথেষ্ট রেস্ট-না-পাওয়া-জনিত। অবশ্য সে যাই হোক অর্ণব যে গণ-খিস্তি খেয়েছিল এ স্পষ্ট মনে আছে।

    সরি ফর দা ইন্টারাপশন।
  • sinfaut | 66.232.102.157 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১০:১৫393436
  • ...

    প্রায়ন্ধকার। টিপটিপ বৃষ্টি, আর পাহাড়ি লোকালয়ে যেমন হয় তেমনি লোমশ সব কুকুর এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে, আবার ল্যাদ খেয়ে শুয়ে পড়ছে। মোটমাট চার-পাঁচটা হোটেল, প্রায় সবকটাই খালি। অতএব জায়গা পাওয়া নিয়ে নো দুশ্চিন্তা। ঢুকে গেলাম একটায়। কিন্তু আমাদের কালকের জন্য পোর্টার কাম গাইড ঠিক করতে হবে। ঠিক হলো দু-ভাই যাবে। খাওয়া-দাওয়া ছাড়া পার ডে দিতে হবে...কত? জানিনা, ভুলে গেছি। তারা রান্নাও করে দেবে। আর কেলিয়ে গেলে বলহরি করে তো দেবেই। তখন কে যেন বললো, এখানে ড্যানির বাড়ি আছে। কোথা? হো ই উপরে। আওয়াজ এলো যাওয়া যাক, অ্যাক্লাইমাটিজেশন(বাপস!) হবে। আমি বললাম, যাবোনা, পাতি যাবোনা। এখন আমি পকোড়া খাবো আর লেপের ভিতর শুয়ে থাকবো, তোমরা যাও অ্যাক্লে-ঐ করতে। জানিনা কেন আমার কথা সবাই মেনে নিলো।

    পরেরদিন সকালে দু-ভাই এলো, মালপত্র গোছানো ছিল, হাঁটা শুরু হলো। ঘন্টাখানেক যাওয়ার পর একটা ঝোরা এলো,ঝোলানো সাঁকোর উপর দিয়ে সবাই পেরোলাম। তারপর শুরু হলো জঙ্গল। উফ্‌ফ, কি জঙ্গল রে ভাই। বাঘের ভয় না, ভালুকের ভয় না, কোথাও কিচ্ছু না। শুধু গাছ আর গাছ, দূরের কিছু দেখা যায়না। খালি মাথা নিচু করে উঠছি আর গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। এটা কি? এর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘার ট্রেল? তার উপর যেখানে বসি সেখানেই ঢুলতে থাকি, কি ঘুম পায়। যাগ্গে শেষমেশ পৌঁছলাম বাখিম। বাখিমে একটা কাঠের বাড়ি আছে, যার অনেক জায়গায় কাঠ নেই। তো, সেখানে শুলো তিনজন, আমি আর সায়ন্তন শুলাম একটা টেন্ট খাটিয়ে বাড়িটা থেকে একটু উপরে। বাখিম নিয়ে বলার কিছু নেই। পরে যখন স্টকার দেখেছি তখন ঐ কাঠের বাড়িটাকে
    চেনা চেনা ঠেকেছিল, এইটুকুই।

    অনেকে প্রথমদিনেই য়াকসাম থেকে বাখিম পেরিয়ে একেবারে ছোখা চলে যায়, তাদের প্রণাম। বাখিম থেকে ছোখা মাত্র দুঘন্টার (মনে হয়)রাস্তা,কিন্তু পুরোটাই ষাট ডিগ্রি খাড়াই, কখনো কখনো সত্তর...নো থামাথামি। তো, পঙ্কজ এখানে একটা রেকর্ড করলো, ও এক ঘন্টা পঁচিশ মিনিটে ছোখা পৌঁছে গেলো। আমি পৌঁছোলাম তার পনেরো মিনিট বাদে (কি করে জানিনা, নিশ্চয় বেরোনোর আগে মাল খেয়েছিলাম)। তখনই বুঝেছিলাম এ ছেলের প্রভূত দম। পরে ও সন্দীপের ব্যাগ প্লাস নিজের ব্যাগ বয়ে প্রায় হাফ কোনো এক রাস্তা গেছিল। ছোখা একটা দারুন জায়গা। ঐ জঙ্গল ছেড়ে ওঠার পর বেশ কিছু লোকের বাস, হেলিপ্যাড টাইপ গোল মাঠ, যেখানে সবাই তাঁবু গাড়ে, কিছু ফুলকপি, কিছু বাঁধাকপি, কটা মুরগি ইত্যাদি দেখা যায়। এটা একটা তিব্বতি গ্রাম। অনেকদিন আগে নাকি এরা এখানে চলে এসেছিলো। সন্ধেবেলা বাঁশের বড় মগে করে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নেড়ে নেড়ে খেলাম ছাং। কি যাতা খেতে, কিন্তু হেবি কিক। তারপর আমি আর সায়ন্তন দাবি করলাম ফ্রায়েডরাইস বানাবো। অন্ধকারে নেশার ঘোরে একটু ভুল হয়ে গেছিলো। কোনো এক মশলার বদলে কফি ঢেলে দিয়েছিলাম রাইসে। আমি আর সায়ন্তন তো দিব্বি খেলাম, বাকিরা খিস্তি করলো। খেয়ে দেয়ে সবাই বসলাম ঐ মাঠের কিনারে। ছোখা এলে আত্মবিশ্বাসটা একটু বেড়ে যায়। কারন, দুদিন ধরে যে বাঘটা মেরে আমরা উপরে পৌঁছোলাম সেই য়াকসাম থেকে এখান পর্যন্ত পাহাড়গুলো বেশ নিজের পায়ের তলায় দেখা যায়। দূরে, নিচে য়াকসামের আলো জ্বলছে। আর আকাশ? এতো তারা আমি কখনো কোথাও দেখিনি যা দেখেছি হিমালয়ের নানা জায়গায়। তখন সায়ন্তন আর আমার সদ্য প্রেম(ইয়ে, কথাটা কেমন শোনালো...দুজনেই দুজন আলাদা আলাদা মেয়েকে ভালোবাসি), স্টেলার কমিউনিকেশন থিওরিটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি, এমন সময় এই রোমান্টিক মুড বিগড়ে দিলো সন্দীপ আর পঙ্কজের আলোচনার টপিক - "কলকাতায় স্পেয়ার পার্টসের দোকান ও বিভিন্ন বাইকের মাইলেজ"।

    (চলবে)
  • sinfaut | 66.232.102.157 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১১:০৮393437
  • মা, তুই এবার ছুটি দিতে বল... ইত্যাদি। আররে ধুৎ, কোনো দরকার ছিলোনা। সত্যি।।
  • sinfaut | 66.232.102.157 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১১:০৯393439
  • যাহ:, এ হে।
  • sinfaut | 66.232.102.157 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১৩:৫৬393440
  • হুমম, এই হলো ছোখা: http://picasaweb.google.com/sujoy.imran/Trekking/photo#5089883116510157378
    ঘুম ভাঙ্গলো একটা আওয়াজ পেয়ে, চোখ খুলে দেখলাম জীবো দাঁত বের করে হাসছে। আমরা সবাই লাফ দিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হলাম।

    অবশেষে, জীবনের কঠিনতর সংগ্রামের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে মানুষের সফিস্টিকেশন কেমন করে ঝরিয়া যায় দেখিয়া যারপরনাই খিল্লি হলো। সে যাক, খেলাম, তাঁবু গোটালাম (ঐ সকালের ঠান্ডায় এটা একটা জঘন্য কাজ), বেরিয়ে পড়লাম। আমরা মোটামুটি সাতটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়তাম। আবার হাঁটা, আবার ঠিক একিরকম চড়াই, কিংবা হয়তো আগেরদিনের থেকেও বেশি। কিন্তু এতদিনে কিছুটা অভ্যেস হয়ে গেছে বলে অতটা অসুবিধা হচ্ছেনা। আজ যাবো জোংরি, ফেডং হয়ে। সেই একিরকম জঙ্গল, রোডোডেন্ড্রন আর কিসব গাছ পেরিয়ে ফেডং পৌঁছলাম তিনঘন্টা বাদে। এখানেও পঙ্কজ ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। দলপতি বললো ও সবাইকে খেদিয়ে আনছিলো তো তাই সবার শেষে আসতে হলো। এ জায়গাটার আলাদা করে নাম দেওয়া হয়েছে কেন বুঝতে পারলামনা। খুব ছোটো একটা মাঠ মতো, চার ধারে জঙ্গল। পুরোটা স্যাঁতস্যাঁতে, ঝিম ধরা, পোকার একটানা ডাক শোনা যায় এমন একটা জায়গা। এখানেও কাউকে ক্যাম্প করতে হতে পারে ভেবে করুণা হল। মনে হয় রাতে ঘুমিয়ে সকালে উঠে স্পঞ্জের মতো গা থেকে জল নিংড়োতে হবে। একটা পচা
    কাঠের বেঞ্চিতে বসে আমরা খেলাম।
    এক্ষনে কি খেলাম বা কি খেতাম সেটা বলে নিই। ডালিয়া, খিচুড়ি, আলু ভাজা , স্যালাড হলো বড়সড় খাবার। আর যখনতখন খাবার হলো - খেজুর, আমসঙ্কÄ,চকোলেট (প্রথম দিনেই শেষ), লজেন্স, চানাচুর, লাড্ডু, কাজুবাদাম, গ্লুকোজ দেওয়া জল, রাম আর সিগারেট। কলা আপেল যা এনেছিলাম সে প্রথমদিনেই খাওয়া হয়ে গেছে, নাহলে এমনিতেই পচে যেত।
    হ্যাঁ, তারপর ফেডং থেকে তো উঠতে হবে জোংরি। আসলে ফেডং একটা জাংশন, যার ডান দিকে সোজা রাস্তা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গেছে থানসিং আর বাঁ দিকে উঠে গেছে জোংরি। আমাদের জোংরি থেকে আবার নেমে আসতে হবে ঐ থানসিং ভ্যালিতেই। যারা জোংরি না গিয়ে গোচালা যেতে চান, তারা ঐ ডানদিকের পথটা ধরেন, যেমন আমরা ধরেছিলাম ২০০১ এ।

    এবার আর কতটা উঠতে হবে তার হিসেব দিই।

    য়াকসাম থেকে ছোখা ১৬ কিমি, অল্টিটিউড গেন ৩১৫০ ফুট। ছোখা থেকে জোংরি মাত্তর ৯ কিমি, অল্টিটিউড গেন ৬৬০০ ফুট! বোঝেন।
    তো, এই স্বর্গীয় পথ আমরা হাইফাঁই করতে করতে চড়লাম। কিন্তু দৃশ্য দেখে আর আমাদের কষ্ট হলোনা। আস্তে আস্তে জঙ্গল কমে এলো, পাথুরে গুল্ম চোখে পড়লো, দূরের জিনিস দেখতে পাওয়া গেল... আর আর জীবোর ফোঁসফোঁস করে নিশ্বাস শোনা গেল। রোদ ঝলমল করছে, পাখিরা প্রচুর কিচিরমিচির করছে, মোটকথা আমাদের কোনো আপশোষ নেই, মনে হতে শুরু করেছে এ এক দারুন জায়গায় এসেছি। জোংরি যাওয়ার এই পথে সব থেকে উঁচু জায়গা দেওরালি, সেখান থেকে আবার কিছুটা নেমে জোংরি পৌঁছাতে হয়।
    এখানে তাঁবুতে ছিলাম না কাঠের বাড়িতে একদম মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে, এতদূর কঠিন পথ পেরিয়ে এই উচ্চতায় এসে যেরকম থমথমে পরিবেশ কল্পনা করা যায়, জোংরি তার থেকে ঠিক উল্টো।

    লোকজন কলবল করছে, বিদেশিরা দুহাতে স্টিক নিয়ে এসে পৌঁছে একে ওকে জড়িয়ে ধরছে, কোনো বাঙালি বিস্ময় প্রকাশ করছে এখানেও মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করে ভীষন চেঁচিয়ে বাড়িতে জানান দিচ্ছে কোথায় আছে সে,এইরকম সব। তবে জোংরি আসা মানে মোটেই এই ট্রেকার্স হাটে আসা নয়, পরেরদিন সূর্য ওঠার আগে এক ঘন্টা চড়তে হবে সামনের পাহাড়, যেখান থেকে সূর্যোদয়ের আলোয় দেখা যাবে একে একে বাঁদিক থেকে রাঠোং, ফ্রে পিক(সব থেকে সামনে), কাব্রু, কাঞ্চন, তারপর সামনের বিস্তীর্ন রুক্ষ থানসিং ভ্যালি আবার ডানদিকে পান্ডিম আর তেনজিং খাং। রোদটা প্রথমে লাগে কাঞ্চনের গায়ে, তারপর রাঠোং কাব্রু তে রঙ আসে। তখনো মাঝের ঐ থানসিং ভ্যালি অন্ধকার, ঠান্ডা, হলদে ঝোপে ভরা। প্রেক চু নদী বয়ে যাচ্ছে কোথায়? সেই বাখিমের প্রথম ব্রীজের তলা পেরিয়ে আরও নিচে। এবার পান্ডিম এর পিছন থেকে রোদের রঙ লাগতে থাকে আর বিশাল উপত্যকা জুড়ে পান্ডিম আর তেনজিং খাং এর ছায়া সরে সরে যেতে থাকে। আর আমরা প্রায় উড়ে যেতে থাকি ঠান্ডা হাওয়ায়। ছবি-টবি তুললাম। তারপর বেশ কিছুক্ষন থাকার পর রোদটা ভালোমত উঠে গেলে নেমে গেলাম হাটে। আজ পুরোটা নামতে হবে থানসিং ভ্যালি পর্যন্ত। তবে ভ্যালি পৌঁছানোর আগে আমরা থেকে যাবো কোকচুরন। কিন্তু তখন একটা খবর শুনলাম, জীবোর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ও আর যেতে চায়না। ও ফিরে যাবে য়াকসাম, সেখানে আমাদের জন্য ওয়েট করবে। ঠিক আছে, ওকে বিদায় জানানো হলো। আমরা দুদ্দাড়িয়ে চললাম অন্য রাস্তায়, কোনো চড়াই নেই। প্রথমে জোংরি পাহাড়ের উপর সমতল হলদে ঘাসে ছাওয়া জায়গার উপর দিয়ে তারপর আবার জঙ্গল সিধে নিচের দিকে। বেশ তাড়াতাড়ি কোকচুরন পৌঁছে গেলাম।

    এখানে বড্ড জঙ্গল আর সবুজ, আবার সেই স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। দূরে পান্ডিম দেখা যাচ্ছে। এখানে তাঁবুতে থাকার কোনো প্রশ্ন নেই, হেজে যাবো। তাই একমাত্র কাঠের দু কামরা ঘরে স্লিপিং ব্যাগ বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘরের দরজাটাও ঠিক করে বন্ধ হলোনা। রাতে বাঘ-ভাল্লুকের ভয় পেতে পেতে ঘুমিয়ে পড়লাম। যাদের ভূতের ভয় আছে, তারা এই ঘরে একরাত কাটিয়ে দেখতে পারেন, অনবদ্য অভিঞ্জতা। মোমবাতির আলোয় রান্না করা আর তারপর সামনের নদীর জলে ঐ রাতের অন্ধকারে বাসন ধুতে যাওয়ার থ্রিলটা অনুভব করবেন।
    এই হলো কোকচুরন: http://picasaweb.google.com/sujoy.imran/Trekking/photo#5089882184502253986
  • sinfaut | 117.195.194.220 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২৩:২৩393441
  • পরেরদিন সকাল আসতে বড্ড ভালো লাগলো। অন্ধকারে কোকচুরন এতটাই ডিপ্রেসিং। আবার চলতে থাকা। প্রেক চু এখানে বেশ কলকলিয়ে বয়ে চলেছে, তারউপর কাঠের গুঁড়ি ফেলা আছে। পেরিয়ে গিয়ে এবার আমাদের পুরো পথটা জুড়েই এ নদী থাকবে বাঁ হাতে। রাস্তা খুব চড়াই না, মোটামুটি সমতল। শুরুর দিকে একবার বেশ কিছুটা উঠতে হয় তারপর আবার সমান। এইভাবেই চলবে যতক্ষন না থানসিং পেরিয়ে আরো অনেকটা যাচ্ছি। থানসিং উপত্যকার গড় উচ্চতা বারো হাজার ফুট। নিশ্চয় এপ্রিলের পর থেকে এখানে দারুন সব ফুল ফোটে, কিন্তু আমরা যে সময় গেছিলাম (অক্টোবর)তখন পুরো উপত্যকা হলুদ, বিবর্ণ, বেঁটেখাটো গুল্ম জাতীয় ঝোপঝাড় ছাড়া কিচ্ছু নেই। আর সেই ঝোপ থেকে এমন একটা মিষ্টি ঝিম ধরানো গন্ধ বেরোচ্ছে যা ঐ উচ্চতায় মাথা ঘোরা, বমি পাওয়া ইত্যপ্রকার উপসর্গ দারুন ভাবে ডেকে আনে। উপত্যকার বাঁ দিকে খাড়া উঠে গেছে দেওয়ালের মতো পাহাড়, যাদের মাথায় বরফ লেগে আছে। কয়েক জায়গায় খাঁজ থেকে বেশ খানিকটা বরফের স্তর নিচে নেমে এসেছে। তাছাড়া কোটর, গুহা, ভয় ভয় ছায়াময় অন্ধকার তো আছেই। কিন্তু সবথেকে যা বেশি করে মনে হয় তা এর grandeur, যার সামনে মাথা নত না করে উপায় নেই। ডানদিকে আপাতত অতটা খাড়া পাহাড় নেই, ধীরে ধীরে স্লোপ করে উঠে গেছে। কিন্তু এইদিকেই আরেকটু পরে আছে সেই দুই বিখ্যাত শৃঙ্গ - পান্ডিম আর তেনজিং খাং।

    আর এই হলো থানসিং :
    http://picasaweb.google.com/sujoy.imran/Trekking/photo#5089883116510157346
    ছবিটা পিছন ফিরে তোলা।
  • arjo | 168.26.215.54 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০১:০৪393442
  • বেশ হচ্ছে। কোনো এক্সটার্নাল প্রেসারে চাপ না খেয়ে নিজ গতিতে এগিয়ে চলো আমরা তোমার পিছনে আছি। :-)
  • dri | 129.46.154.111 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৩:০৫393443
  • সিঁফোর লেখার মধ্যে কিন্তু একটা কিক আছে! ভাল্লাগছে।
  • d | 192.85.47.11 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১০:২৯393444
  • সিফো'র লেখাটা খুব সাবলীল। ভারী সুখপাঠ্য।
  • সিঁফো | 117.195.195.153 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২০:৪৩393445
  • থানসিং এ আছে একটা কাঠের ঘর আর একটা ওয়াচ টাওয়ার, যেটাকে জোংরির সেই মাথা থেকেও দেখতে পাওয়া যায়। এখানে খানিক থেমে, আমাদের দুপুরের খাওয়া সারা হলো। এখান থেকে সমিতি লেক সাত কিমি মত, উঠতে হবে দুহাজার ফুট বা তার থেকে কিছু বেশি। আবার চলা শুরু হলো। উচ্চতার কারণে এতক্ষনে আমাদের চারপাশের ভূগোল, উদ্ভিদ বৈচিত্র বদলে গেছে, হাওয়াতে অক্সিজেন কমেছে কিছুটা, বোঝা যাচ্ছে এ ঠিক আমাদের চেনা জায়গা নয়। যা সামনে আসবে তাও আমাদের এতদিনের চেনা নয়। সবার কথা কমে আসে। উঁচু কোনো পাহাড়ের মাথা থেকে উড়ে যাওয়া প্রিডেটর শ্রেণীর কোনো পাখি নৈ:শব্দকে দৃশ্যমান করে তোলে। আর হাল্কা ভেসে আসে একটা গুমগুম আওয়াজ, বাঁদিকের ঐ দেওয়ালপাহাড় থেকে খসে পড়ছে পাথর। পথ প্রথমে হলুদ ঘাসের মধ্যে দিয়ে চলে, তারপর ঘাসও আস্তে আস্তে কমতে থাকে, গ্লেসিয়াল মোরেইন শুরু হয়, উঁচু নিচু ঢিবি ঢাবা, ঝুরো মাটি, আর নুড়ির রাজ্য শুরু হয়, তার সাথে চড়াইটা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সাত কিলোমিটার এর মাত্র শেষ এক-দুই কিলোমিটারেই আমাদের চড়তে হবে দেড় হাজার ফুট মতো। শেষ হাঁপ ধরা চড়াই পেরিয়ে দেখতে পাই, সমিতি লেক। ছোট্টো একটা কাঠের বাড়ি, কিছু জ্বালানি কাঠ জড়ো করা আছে সামনে। আজ এখানে থাকা হবে।

    আমরা যখন পৌঁছেছি তখন বেলা পড়ে এসেছে, ঠান্ডা মাইনাসের কোনো এক ঘরে। ঘরে ঢুকতে যাবো সেই সময় শুরু হলো ক্যাঁচাল। দুই বিদেশিনী এক সিকিমি গাইডের সাথে একটা ঘরে, অন্য ঘরটা খালি কিন্তু তেনাদের দাবি তারা ওখানে মালপত্র রাখবেন। দাবিটা দুই মহিলার যত না তার থেকে বেশি গাইডবাবুর। আমরা বললাম, বেশ মাল থাকুক আমরাও থাকি। তখন শুরু হলো তম্বি - আমরা আসলে দুই বিদেশি মহিলা দেখে ছোঁকছোঁক শুরু করেছি, আমাদের কুমতলব আছে ইত্যাদি। আর এইসব আলাপের মাঝে মহিলাদ্বয় নির্বিকার ও কিছুটা জড়সড় (যেমন প্রায় ৯০% বিদেশি এদেশে এসে বা সব দেশে হয়ে থাকে ), তারা ঘরের মধ্যে দিব্বি চুপটি করে বসে আছে। আমার তখন দাউদাউ করে ঐ ঠান্ডার মধ্যে জ্বলছে; হেবি ঝগড়া শুরু করলাম। ঝগড়াটা প্রায় হাতাহাতির পর্যায় এসে থেমেছিল। আর আমরা থেকেছিলাম ঐ ঘরেই।

    সমিতি লেক ঠান্ডা, নিস্তরঙ্গ। লেকের ধারে যেরকম মোচ্ছব দেখে আমরা অভ্যস্ত সেটা নেই বলে কেমন মনে হয়, সমিতি শূন্যতার মধ্যে আয়না ধরে পড়ে আছে, আর গোপনে আশপাশ থেকে অবয়ব শুষে নিচ্ছে। সোজা দিকে উত্তরদিকে তাকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা। তার ছায়া পড়েছে জলে। কিন্তু সবথেকে অসাধারণ লাগে পান্ডিমের ছায়া দেখে... পান্ডিমকে দেখে। একটা নামকরা বিশাল শৃঙ্গ মাত্র দু'শ মিটার দূর থেকে চোখের সামনে উঠতে শুরু করেছে দেখে ঠিক বিশ্বাস হয়না। সমিতি লেকের উচ্চতা ১৪৭৬০ ফুট, এখানে আবহাওয়ার কোন ঠিকঠিকানা নেই, তাই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা ঘরের মধ্যে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কালকের যাওয়াটা যেন সফল হয়। কারণ, আগেরবার ঠিক এখান থেকেই আমাদের ফিরে যেতে হয়েছিল সায়ন্তনের শরীর খারাপ লাগতে থাকায়। আমরা সমিতি তে রাত কাটাইনি সেবারে, সন্ধ্যেতে আবার কোকচুরন ফিরে গেছিলাম।

    (উঁচুতে উঠে গম্ভীর হয়ে গেলাম নাকি রে বাবা!)
  • RATssss | 63.192.82.30 | ০১ মার্চ ২০০৮ ১১:১৮393446
  • তারপর?
  • সিঁফো | 117.195.194.254 | ০১ মার্চ ২০০৮ ১৪:৩৬393447
  • পরেরদিন পাঁচটার আগে গাইড ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল। তখনো পুরোপুরি অন্ধকার। ঠান্ডায় অসাড় হাত-পা, কোনোমতে খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের সাথে যে দুজন পোর্টার এসেছিল তাদের মধ্যে একজন এই প্রথম এখানে এলো। এখানে বেশ বয়স্ক একজন গাইডের সাথে আমাদের দেখা হয় যে আমাদের একজন পোর্টারের আত্মীয়, ঠিক হলো সেই বয়স্ক গাইড আমাদের সাথে যাবে তার ভাইপোকে নিয়ে আর আরেকজন সমিতিতে রয়ে যাবে। বেরিয়ে তো পড়লাম কিন্তু যাবো কোনদিক দিয়ে? যেকোনো ভাবেই আমাদের পেরোতে হবে সমিতি লেক। তার জন্য একটা রাস্তা আছে আমাদের হাতের পিছন থেকে উপর দিয়ে বেশ কিছুটা ঘুরপথে, সময় বেশি লাগবে। আর আরেকটা উপায় হলো লেকের বাঁ দিক দিয়ে একেবারে ধার ঘেঁসে বড় বড় (মানে সত্যিই বড় ) পাথর উপর লাফিয়ে লাফিয়ে পেরোনো। এতে তাড়াতাড়ি তো হবে কিন্তু ঝুঁকি অনেকখানি, বিশেষ করে ঐ আবছা আলো অন্ধকারের ভোর বেলা। পৌরুষ জাগ্রত করে দ্বিতীয় পথ ধরলাম। বুড়ো গাইড অদ্ভুত অবহেলায় ছুটতে থাকলো, আর আমরা ঘুম চোখে কেল্লাল্লা বলে লাফ মারাতে থাকলাম। এখানে বলে রাখি বোল্ডারগুলোর হাইট ছয় থেকে দশ ফুটের মতো, পা গলে পড়ে গেলে কাঁধে কাঁধে বলহরি হয়ে যাবে। অবশেষে লেক পিছনে ফেলে আমরা অনেকটা উপরে এসে পৌঁছলাম। সমিতির উপরের এই জায়গাটকে বলে জেমাথাং, পুরোটাই উপরের গ্লেসিয়ারের ঠেলে দেওয়া নুড়ি পাথরে তৈরী। আরও প্রায় একঘন্টা হাঁটার পর সামনে দেখা গেল বরফের শৃঙ্গ, পাশাপাশি, মৌন। আমরা ভাবলাম এবারে পৌঁছে গেছি, ঐ তো কাঞ্চনজঙ্ঘা। একদম শেষ চড়াইয়ে উঠে আমাদের ভুল ভাঙ্গলো। যে শৃঙ্গগুলো দেখা যাচ্ছে মাত্র দু-তিন কিলোমিটার দূরে সেগুলো কাঞ্চনের চ্যালা চামুন্ডা, আসল জায়গা আরো তিন কিলোমিটার মত। আমরা যেখানে বসে আছি ঠিক তার মাথায় পান্ডিম, ঐ পাহাড়টাই উঠে একদম শৃঙ্গে পৌঁছে গেছে। সূর্য এখনো পান্ডিমের পিছনে, তাই ছায়ায় দাঁড়ালেই হাত-পা জমে যাচ্ছে। এই পাহাড়ের উল্টো দিকে হাতের নাগালের মধ্যে চ্যালার দল। আর সামনে যা দেখা যাচ্ছে তা বড়ই করুণ। বেশ কিছুটা নিচে জমে যাওয়া পাথুরে খটখটে লেকবেড। এই জমি পেরিয়ে আরো কিছুটা গেলে গোচালা। তো , এর মধ্যে করুণ কোনটা? বলছি, আমরা যেখানে বসে আছি সেখান থেকে সোজা চল্লিশ ফুট আশি ডিগ্রি ঢাল বেয়ে নেমে ঐ লেকবেডে পৌঁছাবো। তখন আমি আর সন্দীপ ভাবছি, এখন তো নেমে যেতে পারবো কিন্তু ফেরার সময়? তখন ঐ আশি ডিগ্রি দেওয়াল বাওয়ার শক্তি থাকবে গোটা ট্রেকিংএ এই জায়গায় এসে আমার প্রথম মনে হলো আমি বোধহয় পারবোনা। এরকম মনে হওয়ার সব থেকে বড় কারণ,সকালে ভালো করে খেতে না পারা। আর এখন বোঝা হাল্কা করার জন্য খুব সামান্যই খাবার এনেছি আমরা। আমার মাথা হাল্কা চক্কর দিতে শুরু করেছে। সবাই পুড়কি খাওয়ালো, তার সাথে বিস্কুট আর গ্লুকোজ জল। মোটামুটি ঠিক হলাম, কপাল ঠুকে আবার চলতে শুরু করলাম। গ্লেসিয়াল লেকের উপর দিয়ে পা ঠুকে ঠুকে চলতে থাকলাম, একটু দাঁড়ালেই ঠান্ডায় মনে হচ্ছে হাত-পা গুলো নেই হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়াতে না পারি কিন্তু এই মৃত লেকের মাঝখানে এসে আমি একটু সাহিত্য করব।

    এখানে চলতে থেকে যেটা সবথেকে অনুভব করা যায়, সেটা হলো মানুষের নিজস্ব সময়ের ধারনা এখানে অচল। আমাদের সুখ-দু:খ বা বাঁচা -মরার ব্যবধানগুলো যে কাঠি দিয়ে মাপি সেই তাতে করে হয়তো কিছুটা বরফের ঝরে যাওয়া বা ঐ উপর থেকে একটা পাথরের গড়িয়ে নিচে পড়ার মত পরিবর্তনগুলোকেই শুধু ধরা সম্ভব। আর বাকি যা কিছু সব শান্ত, মৌন, অতন্দ্র। এখানে আমারা ভীষন ভাবে বহিরাগত। হাত দিয়ে ছুঁয়ে এখানে কোনো অদলবদল সম্ভব নয়, বসবাস তো নয়ই। এখানে আমাদের মেয়াদ খুব বেশি করে আধ ঘন্টা, তার মধ্যেই ছবিটবি তুলে আনন্দে কলকল করে আবার সম্ভ্রমপূর্ণ দূরত্ব বজায় রেখে ফিরে যাওয়া। নাহলে কখন দুর্বিপাক হয় কিছু বলাই যায়না।

    আমরা সমিতি ফিরে এলাম সাড়ে এগারোটা নাগাদ। খেয়ে দেয়ে আজ ফিরবো ছোখা। কঠিন কাজ , সকালের ঐ ধকলের পর আরো প্রায় সাতঘন্টা হাঁটা। তবে চড়াই নেই বলে তেমন চিন্তা নেই। থানসিং উপত্যকার উপর দিয়ে জোর কদমে হেঁটে , কোকচুরন পেরিয়ে যখন ছোখার আলো দেখতে পেলাম তখন আমরা টর্চের আলোয় রাস্তা দেখছি, সাড়ে ছটা বেজে গেছে।

    পরেরদিন ছোখা থেকে নামলাম য়াকসাম, শেষ তিন ঘন্টা টানা ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজে।

    (শেষ)
  • Tim | 204.111.134.55 | ০২ মার্চ ২০০৮ ০৬:৪৭393448
  • দুর্দান্ত ভ্রমণকাহিনী। খুব গতিময় কলম সিঁফোর। সাবাশ!
  • Ishan | 12.226.83.103 | ০২ মার্চ ২০০৮ ০৭:৪৪393450
  • জ্জিও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন