এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর  জীবনানন্দ

  • জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য: ভূমেন্দ্র গুহ

    I
    বইপত্তর | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৫৪৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 59.93.221.96 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:২৬403969
  • আবার ভূমেন্দ্র :)
    "ডায়েরি লেখার অনেকটা সময়েই তাঁকে সীমাপরিসীমাহীন অর্থসঙ্কট তাড়া করে ফিরেছে-অবশ্য , কিছুটা মরূদ্যানের মত ছিল তাঁর বি. এম কলেজের চাকরির কয়েকটা বছর। এমন সময় গিয়েছে তাঁর, যখন আক্ষরিক অর্থেই মাত্র ক্ষুন্নিবৃত্তির সুযোগটুকুও তাঁর ছিল না; দুপুরের খাওয়া সেরেছেন একটা পেয়ারা চিবিয়ে। ..... চেষ্টায় ত্রুটি রাখেন নি, পায়ে পায়ে সকাল-বিকেল ঘুরেছেন, বাড়িতে-বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু যাঁরা দেখা করতে বলেছেন, প্রায়শই নির্ধারিত সময়ে গিয়ে অপেক্ষা করেছেন, দেখা পান নি।..কখনো কখনো ক্ষমতাধারী ব্যক্তিদের কারো কারো বাড়িতে তোষামোদ করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছেন, সাধারণ মাত্রায় মেধাবী কিন্তু করিতকর্মা অধ্যাপকদের নানান কলাকৌশলে পার্থিব সার্থকতায় সফল হয়ে উঠে চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় উপভোগ করতে ও দাম্ভিক হয়ে উঠতে দেখেছেন, তাঁদের কারু কারু হাঁপানি-টাপানি হলে রাত জেগে সেবাশুশ্রুষাও করেছেন, করেছেন বলে অযাচিত সুভাষিতাবলিও কম শোনেন নি, কিন্তু বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে নি।.... সেইসময়ে তিনি প্রায় কিছুই লিখতে পারছিলেন না, এতটাই হতাশাপীড়িত ও দারিদ্রলাঞ্ছিত তখন তিনি; প্রতিজ্ঞা করেছেন যে উপন্যাসটা শুরু করে মাঝামাঝি পৌঁছে থমকে গেছেন, সেটা আবার লিখতে আরম্ভ করবেন, কিন্তু করা আর হয়ে ওঠে না।পুরনো লেখাগুলো ডায়েরির পাতায় গুছিয়ে তোলা লিস্টি খুঁজে খুঁজে বার করেন, সাময়িকপত্রে প্রকাশিত করার দুর্দম ইচ্ছায় খামে ভরে পাঠান দু-একটা, কিন্তু মনোনীত হয়না, পত্রপাঠ ফেরত আসে... তরুণ কবিদের কবিতা নিয়ে কাব্যসংগ্রহ প্রকাশিত হয়, কিন্তু তাঁর নাম সম্পাদকদের মনেও পড়ে না। পাশাপাশি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর ও বুদ্ধদেব বসুর সাফল্য প্রশ্নাতীত; তিনি তাঁদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠেন, যদিও তাঁর প্রতি তাঁদের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব সম্বন্ধে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন না...কৃষ্ণনগর কলেজে চাকরির তদবিরে যান, চাকরি পান না, পরিবর্তে কৃষ্ণনগর থেকে ফিরবার পথে রাতের অন্ধকারে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত কলকাতাকে তথা বাংলাদেশকে, সাধে-আহ্লাদে তিনি পুনরাবিষ্কার করেন ।
    ... পাঞ্জাবে অধ্যাপনার চাকরি সহজেই পেতে পারতেন , পেতে পারতেন শিলং-য়ে, শুভানুধ্যায়ীরা সাধ্যসাধনা অনুরোধ-অনুযোগও কম করেন নি, কিন্তু তিনি বরং বেকার দারিদ্র্যক্লিষ্ট থেকেছেন, যান নি; বাংলার বাইরে আর নয়, এমন একটা ধনুর্ভঙ্গ পণ তাঁর ছিল। '
  • I | 59.93.214.226 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ ২৩:২০403970
  • ডায়েরিতে বার বার এসেছে তাঁদের নষ্ট দাম্পত্যের কথাও; এ কোনো গোপন কথা নয় যে, জীবনানন্দ-লাবণ্য একটি সার্থক দম্পতির আদর্শ উদাহরণ ছিলেন না, বুদ্ধদেব-প্রতিভা কিংবা নরেন্দ্র-রাধারাণীর মত সাহিত্যমাখা সংসার তাঁদের ছিল না। দুজনের ফ্রিকোয়েন্সিতে কোনোদিনও মেলেনি, লাবণ্য চেয়েছিলেন সাংসারিক স্বাচ্ছন্দ্য, জীবনানন্দ কবি হিসেবে সার্থকতা। আমাদের দেশে , অন্তত: সেইসময়ে এই দুই পথ এক হয়ে মিলে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অগত্যা দূরত্ব, অগত্যা শীতলতা, দুজন জ্যান্ত মানুষের মাঝখানে নো-ম্যান'স ল্যান্ড রচনা করে বিচ্ছেদের হিলহিলে সাপ, যার অন্য নাম কারুবাসনা।

    এছাড়াও ছিল আরো নানান বাধা, ছিল এক নষ্ট সম্পর্কের ভুত , কৈশোর থেকে যে সম্পর্কের বোঝা বয়ে বেরিয়েছেন জীবনানন্দ; সেই মহিলা, যাঁকে Y বলে উল্লেখ করেছেন জীবনানন্দ, যাঁর নাম বারে বারে ঘুরেফিরে এসেছে ডায়েরিতে। বিবাহোত্তর জীবনেও তাঁকে ভুলতে পারেন নি জীবনানন্দ, তাঁর জন্মদিনে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তিনি নিরুত্তর থেকেছেন; কখনো একটি "কৃপণ চিঠি' লিখে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যদিও বা, নিমন্ত্রণ স্বীকার করলে (জীবনানন্দের সঙ্গে) দেখা করতে নিদারুণ অনীহা দেখিয়েছেন। আর জীবনানন্দ " গভীর সন্তাপে উপলব্ধি করেছেন যে, এই সামান্য কয়েকটা মাস আগেও যে জিনিসটা এত জীবন্ত ছিল, ছিল জরুরি, তা কত তাড়াতাড়িই না নিবে গিয়ে ঠান্ডা নির্জীব হয়ে পড়তে পারল, এত দ্রুত মরণশীল এই সব মরণান্তিক সম্পর্কগুলি! আবার গভীর পরাঙ্মুখতার মুহূর্তে এমনও ভাবছেন প্রায় জিঘাংসার ধরণে, তিনি তো তাঁর Y-কে পুরুষের দুর্বিনীত অহঙ্কারে সন্তানবতী করে দিলেও পারতেন !'(ভূমেন্দ্র গুহ)
  • ranjan roy | 122.168.30.9 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:৪৪403971
  • ডাক্তারবাবু,
    আপনি সঠিকভাবেই এটিকে একটি বুক রিভ্যু না করে ট্রামলাইনের ফাঁকে ঘাসের মায়ায় ডুবে যাওয়া একটি মানুষের দহনজ্বালাকে আঁকছেন।
    আমরা হতাশ নই। আপনি আপনার মতন করে বলতে থাকুন।
  • rimi | 168.26.215.135 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ ২৩:০২403972
  • হ্যাঁ, এই লেখাগুলো খুব আগ্রহ সহকারে আমিও পড়ছি। বড় ভালো লাগছে।
  • Mandira | 98.207.187.245 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০১:১৫403973
  • খুব ভালো লাগছে পড়তে। পরের পর্বের অপেক্ষায়..
  • pragati | 121.246.71.76 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:৫১403974
  • ইন্দো, কি আর বলবো... অসম্ভব, অসম্ভব ভালো এই লেখা।
  • I | 59.93.200.83 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২০:১৫403975
  • এইখানে মৃণালিনী ঘোষালের শব
    ------------------------------

    নারী, যাকে ভালবাসলে সমস্ত নিখিল বিষ মধুর হয়ে উঠতে পারে, তাকে বাস্তবে জীবনানন্দ কোনোদিন খুঁজে পান নি। পাওয়া যাবে না, পাওয়া যায় না, সে-ও জানা কথাই; জীবনানন্দ অন্তত: জানতেন। সকল লোকের মাঝে একা একজন মানুষ, যে সম্ভবত: নিজেরি মুদ্রাদোষে আলাদা হয়ে যায়, যার কখনো কখনো মনে হয় জীবনে চাইবার মত জিনিষ খুব অল্প-শুধু সামান্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা আর একখানা খোড়ো ঘর, লেখালিখির জন্য নিরবচ্ছিন্ন অবসর-তাকেও জীবনগ্রন্থি জড়িয়ে নেয়, পাকিয়ে ফেলে, নষ্ট করে , নষ্ট করে দেয়। মনে হয়,বিয়ে না করলেই ভালো হত।

    দুজনের মনের মিল কখনো কী হয়েছিল? লাবণ্য দাশ সত্যি হয়তো চেয়েছিলেন জাঁক-জমকের জীবন, তাঁর বোনের সাংসারিক সৌভাগ্যের প্রতি ঈর্ষা ছিল তাঁর; তাঁকে দোষ দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু হায়, সে জীবন লেখকের নয়।
    টাকা-পয়সা ছাড়াও গেরস্থালীতে আরো সমস্যা ছিল। শাশুড়ী-বৌয়ের খটাখটি ছিল, "জীবনানন্দ স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেছেন, মা-র প্রতি, পাথরে-পাথরে ঠোকাঠুকি যতটা পারেন, মোলায়েম করে আনার প্রয়াস করেছেন, কিন্তু তিনি তো আর একা হাতে তালি বাজাতে পারেন না, স্ত্রীর দিক থেকে আর একখানা হাত এগিয়ে এসেছে কই; ফলত:, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সমীকরণটা নিরুৎসাহব্যঞ্জক হয়ে উঠেছে শনৈ: শনৈ:...'(ভূমেন্দ্র গুহ)।
    এই সব সময়ে আরো সব সম্পর্কের নিষিদ্ধ বীজ নড়েচড়ে উঠেছে, মাসতুতো বোন খুন্তির প্রতি "বাল্যের যে অপরিণত আকর্ষণ', তার টান বেড়েছে; কখনো ছু-র প্রতি; কখনো সহজ চলতি পথে পদস্খলন হওয়া এমন কী কঠিন ব্যাপার, চিন্তা করতে বসেছেন। গিঁট আরো পাকিয়ে গেছে,শক্ত হয়ে গেছে।

    এরই মধ্যে প্রথম সন্তানটি জন্মেছে, মঞ্জুশ্রী। তাকে তিনি জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন, কতকটা পেরেছেন, কতকটা নয়। এব্যাপারে ভূমেন্দ্র গুহ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন : "এই জন্মরোগা অবিরাম কাঁদুনে মেয়েটির তুলনায় তিনি একটি সুস্থ হাশিখুশী মেয়ে পেতে চেয়েছিলেন। তাহলেও, যখনই তিনি বরিশালে থেকেছেন, মেয়েটির আদর-আপ্যায়ন সেবা শুশ্রুষার দায় একাই বহন করেছেন তিনি, তাঁর মা-র সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়ে; তাঁর স্ত্রীর কাছে মেয়েটি যেন ছিল অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের ফসল। '
  • Blank | 59.93.212.58 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২০:৩৫403976
  • ডাগদার দা, বড় ভাল চলছে এটা ...
  • I | 59.93.200.83 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:৪৯403977
  • মনে পড়তে পারে মাল্যবান উপন্যাসের কথা, রোগা হাড়জিরজিরে মেয়ে মনু, মাল্যবানের ("ছোট্ট মেয়েটার ধঞ্চের কাঠির মত শরীরটা পড়ে আছে.... শুকনো সেলাইকাঠির মত কয়েকখানা হাড় আছে শুধু' )। মেয়েটা দিনদিন আরো শুকিয়ে যায়, কারণে -অকারণে তাকে উৎপীড়ন করে উৎপলা, মাল্যবানও; দাম্পত্যজীবনের অমৃতকে মনে হয় বিষফল। নিজে সে বিয়ে করেছিল,বাপ হয়েছিল, "হীন কুৎসিত উচ্চুন্ডে জীবনবীজ ছড়িয়েছিল', ভাবতে ভাবতে তার মন চড়-চড় করে । "একটা পাখি সৃষ্টি করে তাকে যদি ইঁদারার অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হয়'-ভাবে মাল্যবান।

    এইভাবে জীবনবীজ নষ্ট করে তারা, মাল্যবান ও উৎপলা। উৎপলার পায়ের ওপর পড়ে ভেঙে যায় একটা পাখির ডিম, পাখি-মার বেকুবি লক্ষ্য করে মাল্যবান : "ডিমটাকে ফেলে দিয়েছে...নিজের অজান্তেই... ডিম যে পড়ে গেছে, ভেঙে গেছে , সেদিকে খেয়াল নেই, হারানো নষ্ট ডিম সম্বন্ধে কোনো চেতনা নেই...' পাখিটা তখন "মাল্যবানের জুড়ির মতই বোকাবোকা বেকুব।' পাখির ওপর আক্রোশ উৎপলার , সে জাল পেতে পাখির ছানা ধরতে চায় একটা একটা করে, ধরে ঠাকুরকে দিতে চায়, মাংস খেতে বেশ।

    মাঝরাতে মাল্যবানের ঘরে আশ্রয় নেয় একটা বেড়ালছানা। ঘুমিয়েছিল, বেড়ালের শিশুর কান্নায় জেগে ওঠে মাল্যবান। ভাবে রাস্তার দিকের জানলা দিয়েই এটাকে আবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা, তার পর জানলা বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। ভুলে যাওয়া যেতে পারে এই মৃত্যুর কথা, কেননা পৃথিবীতে বেড়াল-কুকুরের বাচ্চারা এইভাবেই হয় পথ কেটে নেয়, নয়তো মরে গিয়ে শান্তি পায়।
    আবার ভাবে "এই বাচ্চাটার বাপ-মার কথা , কেমন হাত-পা ঝেড়ে জীবনকে ঝাড়ছে তারা; এই বাচ্চার ঝাড়টাকে জন্ম দেবার আগে কালোকিষ্টি রাতে আর জ্যোৎস্না রাতে পরীতে পেয়েছিল সেই ধাড়ি বেড়ালদুটোকে ; কী না করেছিল তারা;... কিন্তু এখন তারা গত ঋতুর, সমস্ত বিগত ঋতুর , কৃতকর্মের দায়িত্বের থেকে খালাশ।... মানুষকে তো এ রকম আচার-ব্যবহারের জন্যে ঢের গভীর শাস্তি দিত জীবন। থাক, তবুও এর বাপ-মাকে কোনো শাস্তি দিতে চায় না সে।'
    ভাবনার মোড় আবার ঘুরে যায় মাল্যবানের ; "সমস্ত ট্রাম-বাস-লরির নটখটি ঘড়ঘড়ির চেয়ে এ-কান্না ঢের আলাদা জিনিশ',সে ভাবে, "এ জিনিশ সহ্য করতে হলে সৃষ্টিটাকেই বুঝে দেখতে হবে, উপনিষদের ও আইনস্টাইন হোয়াইটহেডের ঈশ্বরের হিশেবের মিল-গরমিলটাকে; অনেক সহানুভূতি সহিষ্ণুতার দরকার। মাল্যবান কেমন অসময়ে তা হারিয়ে ফেলল।"
    অসহিষ্ণুতায় কঠিন মাল্যবান লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নামে, তেরিয়া হয়ে বেড়ালছানাটাকে চেপে ধরে; ধরে, এমন জোরে তাকে দেয়ালে আছড়ে মারল যে, দুই মুহূর্তের মধ্যে সে কাতরাতে কাতরাতে মরে গেল।

    এক মুহূর্তের মধ্যে ব্যাকড্রপ বদলে গেল; যা ছিল ঘরোয়া , ছাপোষা এক সেট, তার জায়গায় দেখা দিল গভীর কালো আকাশ, তার সমস্ত নক্ষত্রগুঁড়ি , আগুনগুঁড়ি নিয়ে, সেখানে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন মাইল জুড়ে জ্বলে যাচ্ছে সব, পুড়ে যাচ্ছে, পুড়ছে হিলিয়াম, পুড়ছে হাইড্রোজেন। কোথাও কোনো সজলতা নেই, আগুনে পুড়ে গেছে মহাকাশ। এ এমন এক জগৎ যেখানে কোনো বাবর তার মুমূর্ষু সন্তানের জন্য জানু পেতে বসে না, তার জানু পেতে বসার আকাঙ্খা নষ্ট হয়ে যায় এ কালবেলায়, নষ্ট শশা ও চালকুমড়োর মত,কচি মুণ্ড ঝুলে থাকে যামিনীর নখরে ও দাঁতে; শবচক্র মহাবেলা, সন্ততিকে স্বপ্নে রাখতে চেয়েও হৃদয়ে কঠিন হয়ে বধ করে যায় অনিচ্ছুক জন্মদাতা।

    একজন না-লেখক ,যে লেখে , সে এইভাবেই প্রতিদিনের হাড়মাংসের গন্ধে ভরে ওঠা জীবন থেকে তার লেখা খুঁজে নেয়। তার আর কোনো বৃহত্তর অভিজ্ঞতা নেই, সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষ দেখে না,তার পুঁজি নেই; প্রকৃত প্রস্তাবে লেখা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই বলেই সে লেখে, না লিখলে বাঁচবে না বলে লেখে। অন্য কোনো ভাবে লেখা যায়? সে জানেনা।
  • b | 117.193.33.206 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:৩০403979
  • আলোচনা বা ডাউনলোডের পাতায় একত্তর করে রাখা হোক।
  • ranjan roy | 122.168.21.89 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০০:০০403980
  • লাবণ্য দাশ সম্বন্ধে দু'চার কথা:
    -----------------------
    ডাক্তারবাবুকে পথভ্রষ্ট করছি না। শুধু গান গাইতে গাইতে জলের গেলাস থেকে এক ঢোঁক গলা ভেজানোর সময় সামান্য ইন্টারল্যুড্‌।
    ১৯৫৯-৬০ অব্দি পার্কসার্কাসের শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস্‌ স্কুলে লাবণ্যদির কাছে ক্লাস ফাইভ অব্দি পড়েছি।
    ফর্সা ছোটখাটো চিজেল কাট্‌ চেহারা, চশমার ফাঁকে তীব্র চোখের চাউনি। কড়া ব্যক্তিত্ব,কাটা কাটা বাক্যে আলাপচারিতা। কোনদিন হাসতে দেখিনি। সাদা সিল্কের শাড়ি-ব্লাউজ, নাকে পাউডারের ছোপ। ইংরেজি ভালই পড়াতেন। আমি কিঞ্চিৎ প্রশ্রয় পেয়েছিলাম। ব্লাড্‌ প্রেসার ও হার্টের অসুখ ছিল। নিয়মিত ট্যাবলেট খেতে হত।
    জীবনানন্দের মৃত্যুদিবসে চুপ করে থেকে বলতেন-- এই দিনে উনি চলে গেছিলেন, আজকে পড়াতে ইচ্ছে করছে না।
    বাড়ি ফিরলে মা-কাকিমার উৎসুক প্রশ্নের সম্মুখীন হতাম। --লাবণ্য দাশ কেমন দেখতে? কেমন সাজগোজ করেন?
    বাড়ির গসিপ থেকেই জানতে পেরেছিলাম -- লাবণ্যদি রঙ্মহল নাকি স্টারে ""ঘরে বাইরে'' নাটকে মেজবৌরাণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যা নাকি কবির পছন্দ ছিল না। ট্রামলাইনের ফাঁকে ঘাস দেখতে গিয়ে ছিটকে পড়া নাকি আত্মহত্যা?
    ""সুরঞ্জনা, অই খানে যেওনাকো তুমি,
    কথা বোলোনাক অই যুবকের সাথে।
    ফিরে এসো সুরঞ্জনা, নক্ষত্রের রূপালি আগুনভরা রাতে।""
  • ranjan roy | 122.168.21.89 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০০:০৮403981
  • "দেশ''পত্রিকায় প্রকাশিত লাবণ্য দাশের স্মৃতিচারণে জানা যায় ফুলশয্যার রাতে কবি যে গানটি গাইতে অনুরোধ করেছিলেন তা হল--""জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে''।
    পরে লাবণ্য হেসে জিজ্ঞেস করেছিলেন-- তুমি প্রথম রাত্রেই জীবনমরণের সীমানা ছাড়াতে চেয়েছিলে কেন, বলতো?
    লাবণ্য জানতে পারেন নি-- ""উটের গলার মত কোন এক নি:স্তব্ধতা'' যার আজন্মসঙ্গী তার নিয়তি যে লাশকাটা ঘরে অপেক্ষা করছে।
    সরি, ডাক্তারবাবু, আপনি বলুন।
  • I | 59.93.195.223 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:৩৫403982
  • রঞ্জনদা , আরো।
    আর, অত আপনি-আজ্ঞে কেন?
  • AB | 135.214.40.162 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:০২403983
  • ঠিক করলাম দিনের শুরুতে এই থ্রেডের লেখাগুলো আর পড়ব না

    কাজকম্মো চৌপাট হয়ে যায় তাহলে
  • I | 59.93.208.25 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:৩৪403984
  • "উৎপলা এবং মাল্যবান দুজনে দুজনের উপর নিজের হিংস্রতা বিকিরণ করে, দুজনে দুজনের বাচ্চাকে হত্যা করে। কিন্তু দুজনের বাচ্চা তো আসলে একই বাচ্চা : মনু। উভয় দিক থেকে হিংস্র মৃত্যুর আক্রমণে মনু ক্রমে মরে যেতে থাকে'।(ত্রিদিব সেনগুপ্ত, মাল্যবান : একটি না-উপন্যাস)
    কিন্তু কেন জীবনানন্দকে এত হিংসা লিখে উঠতে হল? সে প্রশ্নও তুলেছেন ত্রিদিব সেনগুপ্ত। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে, তিনি আমাদের ভুলে যেতে বলেছেন যে মাল্যবান আসলে একটি উপন্যাস; তা, বস্তুত একটি ডিসকোর্স, জীবনানন্দের ডিসকোর্স, বলেন ত্রিদিববাবু। সেই জীবনানন্দ , "যিনি তাঁর নিজের জীবনে শুধুই চ্যুত হতে থেকেছেন ওয়েজ লেবার থেকে'(ত্রিদিব)। আর সেই বেদনাকে বহন করছেন তিনি, তার অসহায়তাকে, ক্রোধকে। "আর সেটা দিয়েই তাঁর শিল্পীসত্তার অবয়ব নির্মিত হচ্ছে'-আবার ত্রিদিব।

    এর সাথে আমরা জুড়ে নিতে পারি জীবনের আর সকল গর্ত ও ভাঙাচোরা খানাখন্দ, জীবনানন্দের। তাহলে হয়তো পৌঁছে যাওয়া যাবে সেই মর্ষকামিতায়, যা শাসন করে বেড়িয়েছে জীবনানন্দের গদ্যকে। মনুকে যখন মারতে চায় মাল্যবান, বা ঐ অসহায় বেড়ালছানাটিকে, তখন সে তো নিজেকেই মারে, কেননা তারা-মনু, ঐ বেড়ালছানাটা-মাল্যবানেরই অংশ, তারই শিশু তারা, তারই ভেতরের শিশু তারা। এই পৃথিবীতে তাদের থাকার জায়গা নেই, বাঁচার জায়গা নেই, অক্ষম পিতা জীবনানন্দ তাঁর সন্তানের সুস্বাস্থ্য, সুখী ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে পারেন না, অসহায় কবি জীবনানন্দ পারেন না তাঁর লেখালিখির জন্য অনুকূল অবসর ও স্বাচ্ছন্দ্য নির্মাণ করতে, এ পৃথিবীতে অন্তত: নয়,তাই নিদারুণ ব্যর্থ ক্রোধে ও নিষ্ফলতায় তিনি নিজেকেই কামড়ে-ছিঁড়ে রক্তাক্ত করেন;হেরো বলে, রথের চাকা ভূমিতে অর্ধেক বসে গেছে বলে, যখন শরসন্ধান করছে অবিবেকী শত্রু, অন্য এক দুনিয়ায় যে তার স্নেহভাজন অনুজ হতে পারত।
  • I | 59.93.208.25 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০০:২২403985
  • অবশ্য এমনটা নয় যে জীবনানন্দ তাঁর ব্যক্তিগত রাগ-হতাশা ও গ্লানি সত্যি সত্যি নিজের জীবনে ঝেড়ে ফেলছিলেন তাঁর সন্তানের ওপর। নয় যে, তার সাক্ষ্য দিয়েছেন ভূমেন্দ্র গুহ। শুধু জীবনেই বা কেন, সাহিত্যেও সর্বত্র এই একই ধ্বংসকামিতা ছড়িয়ে নেই; অনেক সময়েই আছে এক মায়াবী কারুণ্য, অন্ত:সলিলা বেদনা আর চেপে রাখা প্রার্থনা-যা হবার নয়, তার জন্য-আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
    মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয় ১৯৩১ সালে, কারুবাসনা যখন লেখা হচ্ছে তখন তার বয়স ২ বছর ৭ মাস। হেমের মেয়ে খুকুরাণীর বয়সী। একদিন রাত্রে বিছানায় শুয়ে সেই খুকুরাণীর সঙ্গে কথা বলছে হেম-
    ""-তুই জেগে আছিস যে রে
    -বিত্তি
    -হ্যা, বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম, কেমন লাগে?
    -বাবা।
    -কী মা?
    -মিছছি কোথায়?
    -মিছরি?
    -মিছছি খাব।
    ... একটু চুপ থেকে-মিছরি খেলে পিঁপড়ে কামড়ায়।
    জীবনী শক্তি ঢের কম; পিঁপড়ের কথা শুনে নিস্তব্ধ হল।
    মাথায় হাত বুলতে বুলতে-তোমার নাম কি খুকু?
    ...অন্ধকারের ভিতর দু-তিনটে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে-আমাল নাম?
    -হ্যা।
    -কুকুলানি।
    এমন নিরপরাধ, এমন মিষ্টি অথচ এমন মর্মস্পর্শী।
    অন্ধকারের ভেতর আমার চোখের জল দেখল না মেয়েটি।...
    ... বাতাস দিতে দিতে -খুকুরাণী।
    -উঁ
    -আমি কলকাতায় চলে যাব যে-
    ... হ্যাঁ তুমি চলে যাবে।
    -আর আসব না?
    মাথা নেড়ে বললে-না আর আসবে না।
    ...-কলকাতায় চলে যাব , আর আসব না-
    মাথা নেড়ে-না আসবে না, দাদু আছে, ঠাকুন আছে, মা আছে, ভুলু আছে, রবি আছে, খোকন আছে।
    -আর বাবা?
    -রবি, ভুলু, খোকন, মিনু আছে, খেলা করবে।
    আজকের জন্য এর এই রকম, ভবিষ্যতে এমনি কোনো ভবিতব্যতার বেদনায় কিংবা সফলতার শান্তিতে হারিয়ে যাবে তুমি-কোলাহলে-কোলাহলে দূরের থেকে দূরে তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলব, আমাকে হারিয়ে ফেলবে তুমি-হয়তো পলক ফেলতেই দেখব, জীবনে তুমি অনেক দূরে অগ্রসর হয়েছ, পরের ঘরে চলে গেছ, দূরের বন্ধু হয়েছ,বছরের পর বছর ঘুরে গেলেও তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয় না। তাগিদও বোধ করো না, তুমিও না, আমিও না।
    ... ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল।
    খুকি ঘুমিয়ে গেছে, মশারির চালের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বৃষ্টির আওয়াজ শুনছে।
    আরো অনেক গভীর রাতে খুকির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, হয়তো কোনো মেয়েদেরই স্কুলে মাস্টারি করবে কিংবা বিধবাশ্রমে যাবে, কিংবা অবলাশ্রমে, হয়তো কোনো নারী কল্যাণ সমিতির সাহায্যের জন্য দরকার হবে। কিংবা হিন্দু মিশনের। অথবা পৃথিবীর সমস্ত সাহায্য, সহানুভূতি ও কৃপার অগোচরে জীবনের অন্ধকার সমুদ্রের পরিহাস ও অট্টহাসির ভিতর হাহাকার করে ফিরবে।

    পরের দিন রাতে বিছানায় আমার পাশে খুকিকে শুইয়ে দিয়ে-
    -খুকুরানী?
    -উঁ?
    -আমার সঙ্গে কলকাতায় যাবে?
    -হ্যাঁ
    -মেসে গিয়ে থাকতে হবে।
    -আগ্রহের সঙ্গে- আমি জাব তোমাল সঙ্গে বাবা।
    ...-মেসের বাবুদের ঝালাপালা করবে না তো?
    -কলব না
    -তারা যদি কান মলে দেয়, কাঁদবে না।
    -না।
    -তাদের মুখের পানের ছিবড়ে যদি তোমাকে খেতে দেয়, খাবে?
    -হ্যা খাব।
    -মেসের বাবুরা বড় দুষ্টু যে রে খুকি, বিড়ির আঁস দিয়ে তোমার পিঠে ফোশকা ফেলে দেবে, চুরুটের ছাই দেবে তোমার নাকে-চোখে ঝেড়ে, দিন-রাত চুল টেনে-টেনে পাখির বাচ্চার মত মাংস বের করে দেবে তোমার মাথায়। ফড়িঙের মত করে দেবে যে রে।
    অবোধ ভাবে শুনছিল মেয়েটি।
    ধীরে ধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে-না রে, মেসে গিয়ে কাজ নেই।
    একটু চুপ থেকে,- আমারও আর ইচ্ছে করে না যেতে। তোমাকে নিয়ে খড়ের ঘরে সারাটা জীবন যদি কাটাতে পারতাম খুকুরানী।''
  • Tim | 71.62.2.93 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:৫১403986
  • ইন্দোদা, অসাধারণ হচ্ছে লেখাটা । থেমোনা।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:০৫403987
  • আরো একটি গল্প আছে 'বত্রিশ বছর আগে'। যত দুর মনে পরে, অভয়, মেয়ে টুকুন, স্ত্রী স্বর্ণ, আর একটা মশারির গল্প। অন্য অনেক চরিত্রের মতই, অভয় কলকাতায় মেসে থাকে, চুরুট খায়, দেশে বাড়ীতে এসেছে।রাত্রে তিনজনে শুয়ে পড়ার পরেও ঘুমোতে পারে না। টুকুনকে হাওয়া করতে হয়, মশারিটা খুলে ফেলে মশা তাড়িয়ে আবার ঠিক করতে হয়, ইত্যাদি। আর স্ত্রী স্বর্ণ সারাদিনের পরে ক্লান্ত। এই সব করতে করতে অভয়ের বত্রিশ বছর আগের নিজের কথা মনে পরে। যখন সেও টুকুনের মতই ছিল, রাত্রে শুয়ে ক্লান্ত মাকে উত্যক্ত করে তুলতো। আর মশারিটাকে কোনো এক জন্তুর মত ভয় পেত। আগে এসব তার মনে হয়নি। আজ টুকুনের মধ্যে নিজেকে আর ক্লান্ত স্বর্ণর মধ্যে মাকে দেখে 'চোখের জলে হৃদয় নরম' হয়ে গেল। দেখল স্বর্ণও তার মায়ের মতই সব সয়ে যায়। মনট একরকম আমোদ ও তামাশায় ভরে উঠল। (লেখাগুলোতে 'আমোদ' , 'তামাশা', 'রগড়' শব্দগুলো ঘুরে ফিরে আসে।)

    এই গল্পের অভয়/জীবনানন্দ, মাল্যবান/জীবনানন্দ - র থেকে কতই আলাদা নয় কি? লেখাগুলো পড়তে গিয়ে এরকম সমস্যায় কি দেখা দেয় না, যে চরিত্রগুলোতে কতখানি জীবনানন্দকে আরোপ করা হবে? দেবেশ রায়ের তো এরকমই একটা আপত্তি ছিল।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৩৬403988
  • কিন্তু আরোপ না করারই বা কি আছে? যার দিনলিপি আর literary notes কখনো কখনো এক হয়ে যায়, সে লেখকের ক্ষেত্রে এরকম তো ঘটবেই।
  • b | 203.199.255.110 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৩:৫৫403990
  • এই পর্বের কি কি কবিতা আছে? তাহলে একটু মিলিয়ে মিশিয়ে দেখতাম। রামযশ কলেজ-এর দিনগুলো কি রূপসী বাংলা লেখার দিন?
  • saikat | 202.54.74.119 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৭:০৭403991
  • রূপসী বাংলা কোন পর্যায়ের লেখা বাড়ী গিয়ে না দেখে বলা যাবে না। ইন্দোদা একটু বলুন এ ব্যাপারে । তবে জীবনানন্দের লেখালেখির পর্ব ভাগ নিয়ে দুটো কথা বলা যায়।

    ১। যে ভাবে কবিতার বইগুলি বেরিয়েছিল - ঝরা পালক, ধূসর পান্ডুলিপি হয়ে সাতটি তারার তিমির - পান্ডুলিপির সাক্ষ্য অনুযায়ী সব সময় লেখা লেখিতে বিষয়ের এরকম স্পষ্ট ভাগ ছিল না। ফলে জীবনানন্দ 'ক্লান্তির কবি' থেকে 'ইতিহাস সচেতন' কবি তে progress করেছিলেন , এরকম অধ্যাপক সুলভ মত সব সময় দাঁড়ায় না। 'অন্ধকার' কবিতাটি নিয়ে দেবেশ রায় মনে হয় এরকম কিছু লিখেছিলেন।

    ২। ভূমেন্দ্র গুহর মত অনুযায়ী জীবনানন্দ দুটি বিশেষ সময়ে গদ্য লিখেছিলেন। একটা পর্ব ১৯৩০ - ৩৪/৩৫। অন্যটা ১৯৪৮। দুটি সময়ের মধ্যে একটি মিল আছে। দুটি ক্ষেত্রেই নয় কোন চাকরি ছিল না, কিংবা চাকরি রাখতে পারছিলেন না। তাহলে কি গল্প উপন্যাস লিখে টাকা রোজগারের কথা ভেবেছিলেন? বন্ধু স্থানীয়দের মধ্যে তো সবাই - বুদধদেব বসু, অচিন্ত্য কুমার, প্রেমেন্দ্র মিত্র - গদ্য লিখছিলেন। তাহলে ধরে নেয়া যায় কি জীবনানন্দেরও সে রকম একটা ইছে্‌ছ (বানানটা পারলাম না) হয়েছিল? তদুপরি যখন বেকার জীবনের অখন্ড সময় আছে।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৮:১১403992
  • একটি তথ্য -

    'বত্রিশ বছর আগে' গল্পটির রচনাকাল ১৯৩১/৩২। জীবনানন্দর জন্ম তো ১৮৯৯। আর মাল্যবান লেখা হয় ১৯৪৮-র জুন মাসে।
  • I | 59.93.197.86 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:১৯403993
  • ভালো লাগছে। লোকজন কϾট্রবিউট করছে। একা একা লিখতে লিখতে বোর হয়ে গেছিলাম : )
  • I | 59.93.197.86 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:২৩403994
  • সৈকত, এই থিমটা in fact জীবনানন্দের ক্ষেত্রে oft repeated। অজস্র গদ্যে ফিরে ফিরে আসবে, সে আর তোকে (তুই বললাম) নতুন করে কি বলবো।
    আর হ্যা; এটা খুব সত্যি কথা। জীবনানন্দের লেখা(গল্প-উপন্যাস) খুব আত্মজৈবনিক।
  • I | 59.93.197.86 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:২৪403995
  • ichchhe= ইচ্ছে
  • I | 59.93.197.86 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:৪৩403996
  • রামযশ কলেজে জীবনানন্দ চাকরি করেছেন ১৯২৯-৩০ নাগাদ। আর রূপসী বাংলা-র রচনাকাল যদিও জানা যায় না(জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত) ,লোকে ধারণা করে কবিতাগুলি ধূসর পান্ডুলিপির কাছাকাছি সময়ে লেখা, অর্থাৎ ১৯৩৬-এর আগে-পরে।
  • I | 59.93.161.204 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:১০403997
  • ১৯৪৮-এ জীবনানন্দ খুবই bitter, যদিও দুটো সময়েই("বত্রিশ বছর আগে' আর "মাল্যবান') তিনি বেকার ছিলেন।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১০:৪৬403998
  • প্রতিক্ষনের , 'রূপসী বাংলা, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত' বইটার দেবেশ রায়ের ভুমিকাটা দেখলাম। যে খাতাটা থেকে কবিতা নিয়ে 'রূপসী বাংলা' ছাপা হয়, তার ওপরে লেখা ছিলো March, 1934

    আর বইটিতে যে ভাবে কবিতাগুলো দেয়া হয়েছে, খাতাটিতে সব কবিতা সে ভাবে ছিল না। ভূমিকা কবিতাটাই সে রকম একটা কবিতা যেটা 'তৈরি' করা হয়েছিল ২-টি আলাদা কবিতাকে জুড়ে।

    এরকম ও কেউ বলেছে যে জীবনানন্দের পক্ষে রূপসী বাংলার মত sweet sixteen গোছের নাম দেয়া সম্ভব ছিল না। 'বাংলার ত্রস্ত নীলিমা' বলে একটা বইয়ের কথা এক সময়ে ভেবেছিলেন।
  • d | 117.195.36.126 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২০:১১403999
  • আরে সবাই থামল কেন?
  • dri | 68.7.14.234 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:৫৩404001
  • ভ্যালেন্টাইন দিনে, ইন্দোর বোরডম কাটাতে, ইন্দোকে খোঁচাতে এই পোস্ট।

    কারুবাসনায় জীবনানন্দ তাঁর ছেলেবেলার ভ্যালেন্টাইন নিয়ে দু চার কথা বলেছেন --

    "সেই বনলতা -- আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত সে। কুড়ি-বাইশ বছরের আগের সে এক পৃথিবীতে; বাবার তার লম্বা চেহারা, মাঝ-গড়নের মানুষ -- শাদা দাড়ি, স্নিগ্‌ধ মুসলমান ফকিরের মত দেখতে। বহুদিন হয় তিনিও এ পৃথিবীতে নেই আর। কত শীতের ভোরের কুয়াশা ও রোদের সঙ্গে জড়িত সেই খড়ের ঘরখানাও নেই তাদের আজ; বছর পনেরো আগে দেখেছি মানুষজন নেই, থমথমে দৃশ্য, লেবুফুল ফোটে, ঝরে যায়, হোগলার বেড়াগুলো উইয়ে খেয়ে ফেলেছে। চালের উপর হেমন্তের বিকেলে শালিখ আর দাঁড়কাক এসে উদ্দেশ্যহীন কলরব করে। গভীর রাতে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপেঁচা চুপ করে উড়ে আসে। খানিকটা খড় আর ধুলো ছড়িয়ে যায়। উঠানের ধূসর মুখ জ্যোৎস্নার ভিতর দু-তিন মুহূর্ত ছটফট করে। তার পরেই বনধুঁধুল, মাকাল, বঁইচি ও হাতিশুঁড়া অবগুন্ঠনের ভিতর নিজেকে হারিয়ে ফেলে।

    বছর আষ্টেক আগে বনলতা একবার এসেছিল। দক্ষিণের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চালের বাতায় হাত দিয়ে মা ও পিসিমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললে সে। তার পর আঁচলে ঠোঁট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কেন যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিড়কির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক-গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ার ভিতর দিয়ে চলে গেল সে। নিবিড় জামরুল গাছটার নীচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।

    তারপর তাকে আর আমি দেখি নি।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন