এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর  জীবনানন্দ

  • জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য: ভূমেন্দ্র গুহ

    I
    বইপত্তর | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৫৪৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 122.168.208.96 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৩০404002
  • আচ্ছা, বকমোহনা নদীর ব্যাপারে কেউ কিছু জানেন? মানে, সত্যিই এমনি কোন নদী বরিশালে আছে কি না?
    জীবনানন্দের কবিতায় যেমন ধানসিঁড়ি নদী, তেমনি গদ্যরচনায় বকমোহনা নদীর প্রসঙ্গ।
    কোন গল্পে মনে নেই নায়ক বহুদিন পরে কোলকাতায় এসে তার বয়:সন্ধির নায়িকার সঙ্গে দেখা করলো। আজ সে বিবাহিতা, ভরা সংসার।
    কিন্তু ড্রইংয়ের রুমের মধ্যে কথা বলতে বলতে জেগে উঠলো আবেগ। নায়িকা রাজি সমর্পণে,কিন্তু নায়ক নয়। আগে যা হয়েছিল বকমোহনা নদীর ধরে ঘাসফুল আর ফড়িংয়ের মাঝে, আজ তা' ড্রইংরুমের সোফায়! নায়ক মেনে নিল না।
    গল্পটার নাম কারু মনে আছে? আমার মনে নেই। খালি মনে আছেপ্রথম যৌবনের অসম্ভব ভাললাগা, অমনি নায়ক হতে ইচ্ছে করা।

  • I | 59.93.211.4 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৩:৪৭404003
  • আমি উৎপলা নামে একটা উপন্যাস লিখছি
    ---------------------------------------
    মাল্যবান পড়তে বসে যে ব্যাপারটা খুব চোখে লাগে তা হল উৎপলার চরিত্র। একটি সোজাসাপ্টা একরৈখিক চরিত্র, কড়া কালো রং দিয়ে আঁকা, অল্প কিছু ধূসরতার হিন্ট বাদ দিলে। যেন উৎপলা নামের যুবতীটি আঁকিয়ে জীবনানন্দের স্টুডিয়োতে এসেছে আশা নিয়ে; আর জীবনানন্দ তাকে পোজ দিতে বলে উঠে গিয়ে একটি বঙ্কিম আয়না নিয়ে এসে স্থাপন করলেন তার সামনে। সেই আয়না, যাতে মানুষের রেখাসমূহ বেঁকেচুরে মানুষের ক্যারিকেচার প্রতিবিম্বিত হয়, মুখটা লম্বা হয়ে গেছে, নাকটা শুওরের মত, চোখদুটো কুতকুতে হয়তো, ঠোঁটের কোণ ঝুলে পড়েছে। এবং জীবনানন্দ খুশী হয়ে আসল মডেল ফেলে, উৎপলাকে ফেলে উৎপলার ক্যারিকেচারকেই এঁকে যাচ্ছেন যত্ন করে।
    উপন্যাসে মাল্যবানের বকলমে জীবনানন্দ বিভিন্ন সময়ে যে সব মন্তব্য করে চলেছেন উৎপলা সম্বন্ধে, তার থেকে ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার হবে:
    সমীচীন কচ্ছপের চামড়ার মত কঠিন
    ভাল বংশের সুন্দর শরীরের নিচু কাণ্ড
  • I | 59.93.211.4 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:০০404004
  • (একটা ফোন এসেছিল; উঠে গিয়ে ধরতে না ধরতেই সেই ফাঁকে টুংকাইবাবু এসে incomplete লেখাটাকে পোস্টটোস্ট করে দিয়ে বসে আছেন।
    যাগ্গে, যা বলছিলাম ...contd.)

    -"ভাল বংশের সুন্দর শরীরের নিচু কান্ডজ্ঞানের নিরেস মেয়েমানুষ'
    ্‌"চেহারা যদি কালো, খারাপ হত, তাহলে তো চামারের মেয়েরও অযোগ্য হত'
    -"কত যে সজারুর ধাষ্টামো, কাকাতুয়ার নষ্টামি, ভোঁদড়ের কাতরতা, বেড়ালের ভেংচি, কেউটের ছোবল আর বাঘিনীর থাবা এই নারীটির '

    ""উৎপলাকে কেন এরকম হতে হল? উদ্ভট এবং কুৎসিত?''-প্রশ্ন তুলেছেন ত্রিদিব সেনগুপ্ত। মাল্যবানের একটা ফেমিনিস্ট রিডিং জরুরি, তাঁর মনে হয়েছে। বলেছেন, ""মাল্যবান পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল একটা উপন্যাস লেখার কথা, যার নাম : "আমি উৎপলা নামে একটা উপন্যাস লিখছি।' মাল্যবানের ঘটনাধারাকেই ব্যবহার করা, শুধু অন্য আর একটা সম্ভাব্য দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনা।' একে তিনি বলতে চেয়েছেন "মাল্যবানের বকলমে জীবনানন্দের দাম্পত্য সংক্রান্ত হতাশা ও বেদনার মনোলগ'।
    এবং শুধু তো মাল্যবান নয়, নারীর সঙ্গে জীবনানন্দের এই ঘৃণা ও ভালবাসার সম্পর্ক ছড়িয়ে আছে তাঁর সকল গদ্য জুড়ে, যদিও মাল্যবানে সেই ঘৃণার ভাবটাই প্রধান। খুঁজলেই পাওয়া যাবে এমন গোছা গোছা উদাহরণ। এই তো, হাতের কাছেই রয়েছে জীবনানন্দ সমগ্রের তৃতীয় খণ্ড, প্রতিক্ষণ প্রকাশনীর; "পালিয়ে যেতে' গল্পটাকে ধরা যাক , আগাগোড়া প্রথম পুরুষে লেখা, ব্যবসায়ে ফেল পড়া প্রোটাগনিস্ট দেশের বাড়িতে ফিরে এসেছে। নীলিমা নাম তার বৌয়ের, সে তাকে গঞ্জনা দিচ্ছে কম না-""সেই বিয়ের থেকেই আমাকে শোনালে মানুষের জীবন খুব একটা সুন্দর রচনার জিনিষ। তা আজ অবধি একটা কোঠা বাড়ি হল না, গ্রামোফোন নেই, অর্গান নেই, সেলাইয়ের কল নেই, মেহগিনি কাঠের টেবিল , দেরাজ নেই, ছাপর খাট নেই, ঝালর বাতি নেই, একটা সেলাইয়ের কল অব্দি নেই।''

    যদিও এইসব বধির নিশ্চল সোনার পিত্তলমূর্তির প্রতি অপ্রেমেই শুধু থমকে নেই জীবনানন্দের লেখালিখি, সে কথা আমরা জানি, এবং সে কথায় পরে আবার আসা যাবে-তবু কারো কারো মনে হয়েছে জীবনানন্দের এইসব পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট মন্তব্যগুলি যথেষ্ট প্রনিধানযোগ্য, এই একচোখোমির একটা যোগ্য প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ, জীবনানন্দের আত্মকেন্দ্রিকতা এবং স্ত্রী লাবণ্যর প্রতি উদাসীনতার ব্যাপারটা এর সঙ্গে জড়ানো, যেহেতু জীবনানন্দের লেখালিখি ও তাঁর জীবনযাপনকে আলাদা করে দেখা যায় না কখনো। কেতকী কুশারী ডাইসন এঁদের একজন।
  • I | 59.93.219.209 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২০:৪২404005
  • তাহলে এবার কেতকী কুশারী ডাইসন। বইয়ের নাম ""তিসিডোর''(আনন্দ পাবলিশার্স)। জীবনানন্দের সফলতা-নিষ্ফলতা নামের উপন্যাসের একটা ক্রিটিক্যাল রিভিউ এই বইয়ের একটা সুতো (বারবার এই এত বড় নাম কেতকী কুশারী ডাইসন লেখা বেশ চাপের, বুদ্ধদেব- অনুরাগিণী ভদ্রমহিলাকে আমি এবার থেকে বু. ব-র পথে কে. কু .ডা বলে লিখব)। এছাড়াও আরো অজস্র জিনিষ রয়েছে, অনার পোপ ও মার্গারেট ক্লার্ক নামে লেখকের দুই অসমবয়সী বন্ধুর জীবনী, তাঁদের ডায়েরীর অংশ, তিসি- যিনি এই বইটা লিখছেন, যিনি কে. কু. ডা কিন্তু আবার কে. কু . ডা নন- তাঁর ঘরগেরস্থালির বিবরণ আছে , দুই ছেলে ও ইংরেজ স্বামীর কথা আছে, তাঁদের ভেনিস বেড়াতে যাওয়ার কথা আছে, বু.ব-র সঙ্গে তিসির আলাপ-পরিচয়ের কথা,ইরাক যুদ্ধ,মেয়ে দময়ন্তীকে লেখা বু. ব-র চিঠি আছে, রবীন্দ্রনাথের পারস্যভ্রমণ, ইজরায়েল-হেজবোল্লা,গীতা, ডিমের আর্থ-সামাজিক ভূমিকা-তালিকাটা একটু বেশী লম্বা হয়ে যাচ্ছে? তা হোক, ৮৫৫ পাতার বই ! সম্পুর্ণ নতুন "জাঁরে' (ঠিক বানান হল না, বু. ব অথবা তাঁর ভক্ত কে . কু. ডা-র অনুসরণে জ-য়ের তলায় দুটো ফুটকি দেওয়া গেল না, দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা সম্ভবত: এখানে নেই) লেখা এই বইটি, দাবী লেখকের।
    সে হোক, এবার আসল কথায় আসি। সফলতা-নিষ্ফলতা উপন্যাস সম্বন্ধে কিছু ধরতাই দিয়ে দেওয়া সম্ভবত: এখানে উচিৎ হবে। এই উপন্যাস লেখা হয়েছে প্রোটাগনিস্ট নিখিলকে ঘিরে, সে একজন কবি, লিখে পয়সা-নামধাম কিছু করতে পারেনি, বর্তমানে কলকাতার মেসে থাকে। সে ও তার অন্যান্য লেখকবন্ধুরা-কেউ অতিবিখ্যাত, কেউ অনতি-বাণেশ্বর-শঙ্কর প্রমুখ-এদের ইন্টার অ্যাকশন দিয়ে সাজানো উপন্যাসখানা। শঙ্কর একদিন কথায় কথায় নিখিলের মেয়ের সম্বন্ধে "ন্যাংটো' ও "নেংটি' এই দুটি বিশেষণ ব্যবহার করে। এখান থেকে কে. কু. ডা কোট করতে পারি আমরা :
    ""কথাগুলো শঙ্করকে দিয়ে বলালেও জীবনানন্দের নিজের কোনো কোনো অবসেশন ("আপনারা সকলেই মরে গেলে ভালো হ'ত'), এমন কি তাঁর কণ্ঠস্বরের অ্যাক্‌সেন্টটুকুও ধরতে পারি আমরা-"জানি না কি? সব জানি' বা "বধূটি'র মত ভাষাব্যবহারের মধ্যেও।
    এতদিন চাপা দিয়ে রাখা ১৯৩২-এর এই বিক্ষুব্ধ রোমন্থন যখন ঢাকনা খুলে আমাদের এই সময়ে পড়ি, এর ভিতরে দৃশ্যমান পারিবারিক সম্পর্কের শ্রীহীনতার ছবিটা লক্ষ্য না করে পারিনা। ব্যক্তিগতভাবে এটাই আমাকে সব থেকে বেশী কষ্ট দেয়। কন্যাসন্তান প্রসঙ্গে "ন্যাংটো মেয়েটা' বা "নেংটিটি'র মত ভাষা কি এখনো ব্যবহৃত হয়?... আমরা বুঝতে পারি, এই ভাষার মধ্যে কন্যাসন্তানটির প্রতি অনেকখানি অবজ্ঞাও ভরে দেওয়া আছে। খুব বেশীদিন আগেকার কথাও নয়, তবু আমার মনে হয় যেন প্রত্নলিপি পড়ছি। আর সেই সাংকেতিক লিপির পাঠোদ্ধারও করতে পারি আমরা। মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাই, আজকের ন্যাংটো মেয়েটা আগামী কাল বধূ হয়েছে, সমস্ত সমাজের এক্স-রে দৃষ্টির ফোকস্‌ তার পরনের কাপড় ভেদ করে তার ন্যাংটো নিম্নাঙ্গের ওপরে ন্যস্ত।... আমি আমার শৈশবে আমাদের পরিচিত চক্রগুলির ভিতরে ( যার ভেতরে বু. ব-ও আছেন-মন্তব্য আমার) এই ধরনের ভাষা শুনি নি। ''
    আমার বীরেন্দ্র চট্টো মনে পড়ে গেল হঠাৎ(ন্যাংটো ছেলে ইত্যাদি)। হায়, তার জন্য কোনো কে.কু.ডা কলম ধরেন নি কবিকে ভর্ৎসনা করে, বলেন নি, সেই ছেলেটি , যে আকাশে হাত বাড়ায় আর যার খিদেয় পুড়ছে গা, সে বড় হয়ে উঠলে(যদি বড় হয়ে উঠতে পায়) সমাজের দৃষ্টির "ফোকস্‌' তার নগ্ন নিম্নাঙ্গে আবদ্ধ হবে কিনা। বীরেনবাবু, আপনি আপনার "ন্যাংটো ছেলে -সমেত' জোর বাঁচা বেঁচে গেলেন !
  • I | 59.93.219.209 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:০৮404006
  • আরো কে. কু. ডা :
    ""প্রভাতবাবুর (*প্রভাত কুমার দাশ-মন্তব্য আমার) বইখানার পৃ: ১৪৪-৪৫ থেকে কয়েকটি বিনিশ্চায়ক উদাহরণ দিই :

    ১৭.. ৩৩ তারিখে লিখেছেন : "...The same old rejection- কথা বন্ধ... তুমি আমার কি benefit করেছে চার বছরের মধ্যে?....her great concern and solicitudes for me step by step brought down to this callous negativity....'। ১৬.১২.৩৩ তারিখে লিখেছেন : "Our marriage is scrap.... সারাদিন কাঁদে... আমায় ধুলোয় মিশিয়ে দেয়.... মুক্তি চায়... উঠে পড়ি... কি করব? আত্মহত্যা? হার্ট ফেল? শীতের রাতে অন্ধকারে পুকুরে ডুবে মরব? .... আগে এরকম করার পর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইত..।'...৩১..৩৪ তারিখে লিখেছেন : "L-terrible অবস্থা for 3-4 days- দরজা বন্ধ, নাওয়া না, খাওয়া না, শুধু মুড়ি-দিনের পর দিন-কোনো অনুনয়-বিনয় কিছু না...will starve to death.... এ বাড়ির সবাই তারপর... ওকে ভূতে পায় নাকি?...'

    হ্যা, এক অর্থে ভূতে পাওয়াই বলা যায় একে। আজকের দিনে মনের এই অবস্থাকে আমরা বলি ব্রেকডাউন বা ভাঙন, বা গভীর ডিপ্রেশন, বিষাদের খাদে ডুবে যাওয়া। সেকালে ব্যাপারটাকে কোনো ক্লিনিকাল নাম দিয়ে চিণ্‌হিত(*এই বানানটা কিভাবে লেখে?-মন্তব্য আমার) করার রেওয়াজ ছিল না। কিন্তু এই বর্ণনায় মানসিক ভাঙনের সমস্ত লক্ষণ বিদ্যুতের আলোয় চকিতে উদ্ভাসিত নৈশ দৃশ্যের মত জ্বলে ওঠে। বেচারী লাবণ্য, তাঁর স্পষ্টত:ই " ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন' হয়েছিল এ সময়ে, ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই তিরিশের দশকে , তাঁর পরিবেশে, তাঁর বরিশালের ব্রাহ্ম শ্বশুরালয়ে সেই অবস্থার কোনো স্বীকৃতি অথবা চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব ছিল না। ... আমরা দেখতে পাচ্ছি লাবণ্যর উচ্চশিক্ষিত এম. এ -পাশ বিদ্বান স্বামীও ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছেন না।.... পারিবারিক জীবনের এই বিশেষ অবস্থা জীবনানন্দের অগাস্ট ১৯৩৩-এ লেখা উপন্যাস কারুবাসনা-তেও যথেষ্ট বিশ্বস্তভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে। এই তথ্যগুলি জানার পর আমরা জদি শঙ্করের লম্বা লেক্‌চারটি আবার পড়ি, তা হলে বুঝতে পারি যে নিজের কথাগুলৈ জীবনানন্দ শঙ্করের মুখে বসিয়ে দিয়েছেন ।''
  • d | 117.195.42.27 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:২৪404007
  • ন'য় হ নয় ওটা হ'য় ন।
    chihnit = চিহ্নিত
  • I | 59.93.210.238 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:৩৪404008
  • আরো একবার মাল্যবান। এবার উদ্ধৃত করলাম দেবারতি মিত্র :

    ""...একজন শিক্ষিত, নিম্নমধ্যবিত্ত মল্যবান সমাজচিন্তা, স্ত্রীপুরুষ-সম্পর্কচিন্তা এবং আত্মচিন্তা করে দেখতে পেল: উৎপলা তাকে কেবল প্রত্যাখ্যান করবে "অথচ মাল্যবানকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, রুচির বিরুদ্ধে, অপ্রেমে, কামনার টানে, বেশী লালসায় রিরংসায় উৎপলার মত একজন ভাল বংশের সুন্দর শরীরের নিচু কাণ্ডজ্ঞানের নিরেস মেয়েমানুষের কাছে ঘুরে-ফিরে আসতে হবে নিজের মৃত্যু পর্যন্ত কী নিদারুণভাবে, কেমন অধমের মত...'

    ... কখনো সম্রাট শনি শেয়াল ও ভাঁড়
    সে নারীর রাং দেখে হো হো করে হাসে।
    হয়তো উৎপলাকেই এই প্রগাঢ় বিদ্রুপ। তবু, শেষ পর্যন্ত-

    নারি, শুধু তোমাকে ভালোবেসে
    বুঝেছি নিখিল বিষ কী রকম মধুর হতে পারে।

    হয়তো এই অসহায় প্রেমভাষণও উৎপলাকেই।

    ... শুরুতেই মাল্যবানের দীর্ঘ উদ্ধৃতিতে নিশ্চয় বোঝানো গেছে নারীর শরীর ও সৌন্দর্যের প্রতি জীবনানন্দের বাসনা ও টান একজন সুস্থ, স্বাস্থ্যবান পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। আরো বোঝানো গেছে সেই বাসনা ছিল অবদমিত। এই অবদমিত বাসনা গদ্যে নিষ্ঠুর , ধারালো, শোকার্ত হয়ে দেখা দিয়েছে, কিন্তু কবিতায় তাঁর মেয়েদের প্রতি মনোভাব সাধারণভাবে বিষণ্ন, উঙ্কÄল ,মুগ্‌ধ, তিক্ত-ইতিহাস সময় ও প্রকৃতির সুদূর ও রহস্যময় ছায়ায় আলোয় তারা দীপ্তিমতী, শক্তিমতী, রূপবতী।''(জীবনানন্দের কবিতায় মহিলা, প্রেমিকা, অপ্রেমিকা এবং কন্যা : দেবারতি মিত্র)

    এখানে বলার কথা এটাই যে, আমি মোটামুটিভাবে দেবারতির সঙ্গে একমত। আর একটু ফুট কেটে বলতে চাই-বিপজ্জনক জেনারালাইজেশনের ভয় সঙ্কেÄও- জীবনানন্দের গদ্যের মেয়েরা তাঁর প্রতিদিনের দেখা মেয়ে, -স্ত্রী, Y, ছু, মা, মেয়ে প্রভৃতি; আর কবিতায় তিনি লিখে রাখেন তাঁর মনোজগতের নারীকে, যাকে রচনা করেছেন তিনি স্বয়ং- বেতের ফলের মত নীলাভ ব্যথিত চোখের, কড়ির মত শাদা মুখের সেই বনলতা সেন, অন্ধকারে মুখোমুখি বসবার সেই মেয়ে, চোখে যার হিজল কাঠের রক্তিম চিতা জ্বলে; আর সে আগুনে পুড়ে যায় শঙ্খমালা,পুড়ে যায় সোনালী ডানার চিল। পৃথিবীতে যাকে তিনি পান নি কোনোদিন, অথচ স্বপ্নে যার নিত্য আনাগোনা।
  • I | 59.93.210.238 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:৪২404009
  • হাজার কথা না বলে একখানা কবিতা বললেই চুকে যায় :

    ....ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
    অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
    ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;

    আমারে সে ভালোবাসিয়াছে,
    আসিয়াছে কাছে,
    উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
    ঘৃণা করে চলে গেছে-যখন ডেকেছি বারেবারে
    ভালোবেসে তারে ;
    তবুও সাধনা ছিল একদিন,-এই ভালোবাসা;
    আমি তার উপেক্ষার ভাষা
    আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
    অবহেলা করে গেছি; যে নক্ষত্র-নক্ষত্রের দোষ
    আমার প্রেমের পথে বারবার দিয়ে গেছে বাধা
    আমি তা ভুলিয়া গেছি;
    তবু এই ভালোবাসা-ধুলো আর কাদা-।...
    (বোধ : জীবনানন্দ দাশ)
  • Saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:২৮404010
  • মাল্যবান মনে হয় শুধুই নষ্ট দাম্পত্যর কহিনী নয়। 'শিশ্নোদর তন্ত্রী সভ্যতা' আর 'মূল্যবিশৃঙ্খলার পৃথিবী' - এই দুটো phrase একটা সময়ে লেখাটাতে ঢুকে পরে। এবং মাল্যবান তো দেখেছিল একটা 'ভোঁতা নেপালী ছুরিকে' তার দিকে এগিয়ে আসতে।
  • Saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৪৪403818
  • মাল্যবান লেখাটি নিয়ে একটা আশ্চর্যের কথাই হয়ত বা, যে জীবনানন্দের গদ্যের পান্ডুলিপির মধ্যে এই লেখাটির পান্ডুলিপি যে অবস্থায় পাওয়া যায়, দেখে মনে হয় যে ছাপানোর জন্য press copy করেই রাখা যেন।
    অথছ 1948 সালে লেখ হচ্ছে যে উপন্যাস, তাতে না আছে সমসাময়িক কোন ঘটনার ছাপ (দেশভাগ, স্বাধীনতা) কিংবা দিন বদলের কথা। একটা হেরো মানুষের কথা তার বদলে। তখনকার বাংলা বাজার কি তৈরী ছিল?
  • Saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৪৫403819
  • * লেখা
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৩:৫৭403820
  • রঞ্জনদা, আপনি যে গল্পটার কথা বলছেন, সেটার নাম মনে হয় 'গ্রাম শহরের গল্প'। তবে ১০০% sure নই। দেখে বল্টে হবে। নায়িকার নাম কি 'শচী' ছিল? আপনি মনে হয় সত্তরের দশকে পরেছিলেন। সেই সময়ে তিনটি গল্পের একটা collection বেরিয়েছিল।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৩:৫৮403821
  • * বলতে
  • h | 203.99.212.224 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫০403822
  • আমার মনে হয়, জীবনানন্দের মূল সমস্যা হল নিজের লেখার লিটেরারি ট্র্যাডিশন খুঁজে পাওয়ার সমস্যা। কখন কোন লেখায় কোন বিষয় আসবে, কি ভাবে আসবে, সেটা সম্পর্কে তাঁর নিজের যে নির্মিতি সেটা তাঁর পাঠের জগতে বাংলা ভাষায় তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই খুঁজে পান নি, কারণ তিনি পরবর্তী কালের আমাদের জীবনানন্দ।সেই উপলব্ধির সন্ধান টা মনে হয় তাঁকে খানিকটা ছুটিয়ে মেরেছে।
    এটা আমার মত কলেজ-বয়সের বাইরে জীবনানন্দ না পড়া লোকের মনে হত। বার বার মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে।

    অবদমিত সেক্স, দাম্পত্যে অশ্রদ্ধা ও অশান্তি, একটা অক্ষমতার প্রবল তাড়না এই গভীর ভাবে বিষয় গুলোকে বিষয় করতে পারছেন না তা নয়, কিন্তু সেটা তাঁর কাছেই, কালোত্তর সাহিত্য সম্ভারের অংশ হতে পারে কিনা তাঁর বার বার সংশয় থেকে যাচ্ছে। নিজেকে বিষয় করে তোলা, নিজেকে বেশ ন্যাংটো করে বিষয় করে তোলা, আমার ধারণা তাঁর সময়ে, তাঁর বৌদ্ধিক সঞ্চারে, অতটা সোজা ছিল না।

    খুব স্বাভাবিক ভাবেই, খুব ই আগ্রহ নিয়ে আই/সৈকত/রঞ্জন্দা ইত্যাদি দের কথা শুনছি।
  • h | 203.99.212.224 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫১403823
  • *গভীর ভাবে পার্সোনাল
  • b | 203.199.255.98 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৭:০৩403824
  • একটি ব্যক্তিগত স্টেটমেন্ট: জীবনানন্দের গদ্য, কিছু কিছু জায়গাতে জগদীশ গুপ্তের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। আমি অবশ্যই জীবনানন্দের সব গদ্য পড়িনি। যেনারা পড়েছেন, একটু বিশদ করে লিখুন না।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৭:১০403825
  • h কয়েকটি দামী কথা বলেছেন। যেমন 'সংশয়'। সমসময়ের ছাপ যা কিনা মাল্যবানে সে ভাবে পাওয়া যায় না, পরবর্তীকালে লেখা 'জলপাইহাটি' আর 'সুতীর্থ' উপন্যাসে কিন্তু সেগুলি ছড়িয়ে আছে। হিন্দু মুসলমান দাংগা (বানানটা???) , বিপ্লবের প্রসংগ ঘুরে ফিরে আসে। এরকম কি বলা যায় যে, নিজের লেখালেখি নিয়ে সংশয়ী জীবনানন্দ 'সমাজ সচেতন' লেখা লিখতে চাইছিলেন?

    কিন্তু লেখাগুলোতে কি শ্রমিক কৃষক চরিত্র ছিল? নাকি ঐ টালমাটাল সময়ে দাড়িয়ে মধ্যবিত্ত কিছু চরিত্র - যেমন মধ্যবিত্ত তিনি নিজেও - হারীত, নিশীথ, সুতীর্থ কি ভাবছে , কি করতে চায়, কোন পথ ঠিক, কোনটা বেঠিক, বিনা রক্তপাতে বিপ্লব হয় কিনা এই সবের ঘূর্ণিপাকে যারা পড়ে গেছে -- তাদের নিয়েই উপন্যাস লিখতে চাইছিলেন? আত্মপ্রক্ষেপ কি এখানেও ঘটছিল?
  • h | 203.99.212.224 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৭:৪৩403826
  • যে সময়টা ধরে জীবনানন্দ লিখছেন, তখন বঙ্কিমবাবুরে ধরলে, নাগরিক বাংলা সাহিত্যের বয়স বেশি নয়।এক শো র উপুরি চাপুরি। এবং অসহ্য চাপের ব্যাপার হল, সামাজিক/ঐতিহাসিক/ আর রাজনৈতিক এই তিনটে খোপে তখনো মোটামুটি নভেল নামল আর্টফর্মটার চলাফেরা। মোদ্দা ব্যাপারটাই নতুন। তার উপরে গাল দেওয়ার জন্য , ব্যক্তির বাইরে বিষয় কি কি? সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তবাদী আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা আর 30s, 40s এর টাল মাটাল, আর যদি তুমি বামপন্থী বা 'আধুনিক' হও, তোমার হাতে গাল দেওয়ার জন্য একটা আলাদা জিনিস রয়েছে, সেটা হল আর্লি ক্লাসিসিজম। এর বাইরে বিষয় যে নেই তা নয়, আছে, মরালিটি, কিন্তু সেটা সামাজিক উপন্যাসের 'ঝর ঝর করিয়া কাঁদিয়া ফেলিলো' অথবা 'চুপ করিয়া পড়িয়া রহিলো' টাইপের চাপে আচ্ছন্ন; ইতিহাস-রচনা, সেটা ন্যাশালিস্ট হিস্টরিওগ্রাফিতে নিমজ্জিত। এইবার এই যে বিষয়ের ক্রাইসিস, সেটা আমরা এখন নাটকীয় করে তৈরী করছি, যদি জীবনানন্দের সমসাময়িক হতাম, কখনই আমাদের মত ক্যালানের কলমে, বিষয় কম পড়তো না। কিন্তু জীবনানন্দ তো পরে জীবনানন্দ হবেন, তাঁকে তো অন্য কিছু করতে হবে। যিনি নিজের বিষয়ের জগতের নির্মাণ করছেন, তাতে চলাফেরা স্বছন্দ হবে বলে শুধু নয়, দিগন্তপ্রসার করবেন বলে খানিকটা, যিনি সচেতন ভাবেই অনন্য অথচ খুব স্বাভাবিক ভাবেই অন্তত সমসাময়িক পাঠাভ্যাস থেকে নির্বাসিত হতে চান না, তাঁর কাছে, আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে, পড়ে থাকছে বা বিষয় হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছে একটা সেন্স অফ টাইম অ্যান্ড স্পেস। যেটা মূলত: মৃত অথবা আর্ত সম্ভাবনার সময়। ব্যক্তিগত অর্থে বা কখনো কখনো তার বাইরেও।
    জীবনানন্দ পড়তে গিয়ে, গদ্য বা কবিতা দুটো তেই, এই একটা মনে হওয়ার বা দু চারটে এদিক ওদিক বইয়ে। চাপ থেকে আমি কিছুতেই মুক্ত হতে পারি নি। অথচ কোন গাইডেন্স পাইনি, স্কুল বা একাদশ দ্বাদশের পাঠক্রমে। এই জন্যে আমার ভালো করে যত্ন করে অনেক ডিটেলে জীবনানন্দ কখনো পড়া হয় নি।

    এই তোমাদের আলোচনা শুনে আবার পড়তে ইচ্ছে করছে।
  • h | 203.99.212.224 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৭:৪৭403827
  • গাল কিন্তু একটা ইম্পর্ট্যান্ট মোটিভেশন। মানে কারে গাল দেব টা , ঠিক কখন দেবো, কতটা দেব, এইটা লেখার লাইনে একটা স্বীকৃত চাপ। জীবনানন্দ, প্রখর ভাবে প্রাইভেট হলেও, এই চাপ থেকে মুক্ত ছিলেন বলে মনে হয় না।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৮:১৪403829
  • নাকি জীবনানন্দ মনে করতেন যে লেখক শুধু 'বাহির' কেই দেখবে না, নিজেকেও দেখবে? ভূমেন্দ্র গুহর সাক্ষ্য অনুযায়ী, দেশভাগের পরে বরিশাল থেকে চলে আসার সময়ে বাড়ীর দলিলপত্র ফেলে দিয়ে আসেন, কিন্তু trunk ভর্তি করে গদ্যগুলো নিয়ে এসেছিলেন কোলকাতায়। এ কি শুধুই নিজের সৃষ্টির প্রতি মায়া? নাকি নিজের কাছে লেখাগুলো ছিল প্রয়োজনীয়?

    অন্য আর এক দিক থেকে যদি দেখি, জীবনানন্দ তো ইংরেজী সাহিত্যের মাস্টারমশাই, বাংলা সাহিত্যের লেখক। বিশ্বসাহিত্যটাও তো পড়া আছে। বিবিধ লেখালেখিতে তো dostoyevsky,thomas mann, joyce-এর উল্লেখ আছে এবং সে সবের প্রসংগ এলে যেন সমসাময়িক বাংলা গল্প উপন্যাসকে একটু ছোটই করে ফেলছেন। তাহলে উপন্যাসে কি থাকে আর কি থাকে না, নিজেকে কতখানি লুকিয়ে লিখতে হয়, এ সবও তো তার জানা। তাহলেও কেন দিনের পর দিন ঐ রকম লিখে যাওয়া?
  • Somnath | 117.194.196.32 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৮:৪৩403830
  • কারণ লেখক উপন্যাস সৃষ্টি করেন না, উপন্যাস নিজেই নিজেকে লেখে। লেখক শুধু প্রসেসটাকে ফলো করেন। লিপিবদ্ধ করেন। "অথর ইজ ডেড'। ইত্যাদি। লোকটা এসব জেনে কিংবা ভেবে, বুঝে লিখতো। অসহায় ভাবে লিখতো কারণ না লিখে ওঁর কোনো উপায় ছিলনা।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৯:০৩403831
  • h যেমন বললেন - sense of time and space। এই জিনিসটা শুধুই ১৯৪৮ পরবর্তী লেখালেখিতেই নেই, সেটা ছড়িয়ে আছে ৩০-র দশকের লেখাগুলোতেও - একটা বিশেষ ভাবে হয়ত। বাঙালী মধ্যবিত্ত পরিবার, তার বিভিন্ন সদস্য, তাদের কাজকর্ম - এইটা একটা দিক। কেউ বা কলকাতায় চাকরী করে, কেউ tuition করে। এমন কিছু রোজগার নয় যে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোলকাতায় থাকা যাবে। অতএব মেসে থাকা। কোনো জ্যাঠা কাকা উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী, পরিবারের মধ্যে তাদের একটা আলাদা মর্যাদা। পরিবারগুলি প্রায় সবক্ষেত্রেই পূর্ববঙ্গের। এই ব্যপারটা মনে হয় দেশভাগের আগের প্রজন্মের অনেকেরই জীবনে ঘটেছে। এটাও তো একরকমের সমাজ বাস্তবতা, যেটা কিনা বেরিয়ে আসছে অত্যন্ত personal লেখার মধ্যে দিয়ে।

    আর এই সব চরিত্রের গোয়ালন্দের স্টীমারে দেশে ফেরা - আমি তো ভ্রমণকাহিনী হিসেবেই পড়ি।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৯:১৫403832
  • h-এর ভাষা এবং বক্তব্য পড়ে inferiority complex -এ ভুগি।
  • ranjan roy | 122.168.22.82 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২১:২৬403833
  • সৈকত,
    একদম ঠিক। নায়িকার নাম শচী, সত্তরের দশকে পড়া।
    কিন্তু "বকমোহনা' নামে কোন নদী সত্যিই আছে বা ছিল? নাকি ওটা জীবনানন্দের নির্মাণ?
  • h | 61.95.144.10 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:০৫403834
  • পশ্চিমের তাবড় ঔপন্যাসিকরা, অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের আমাদের গত বিশ ত্রিশ বছরে আবিষ্কৃত মহান ঔপন্যাসিকেরা, প্রায় কেউ নিজেরে একেবারে বাদ দিয়ে ল্যাখেন নি। অন্তত: সেরা রচনা গুলোয়। লেখা সম্ভবত: একেবারে সম্ভব ও নয়। কাম্য কিনা তাও জানি না আর। এই সময়ে পৌঁছে। আমি অবশ্য বলছিনা, বিষয় দ্বারা নির্দেশিত রিয়ালিজম একেবারে মৃত। প্রতিবেদন ধর্মী সাহিত্যের হাতে তার এক ধরণের নব উন্মেষ হয়েছে হয়তো।
    উপন্যাসের যে বক্তব্যকে বা যে সিচুয়েশন কে জীবনানন্দের ক্ষেত্রে আমাদের তীব্র ভাবে পার্সোনাল মনে হচ্ছে, সেটা কোন এক ভাবে, একটা নেগেটিভ অর্থে, হয়তো অতিপরিচিতের, অতিঅভ্যাসের, অতিচাকুরেপনার, অতিপুতুলনাচের এক ধরণের ক্রিটিক। এইটাই আমার মূল বক্তব্য। যে অ্যাকিউট কাল ও স্থানিক বোধের পরিচয়, জীবনানন্দের রচনায় প্রায় সর্বত্র, সেখানে স্থান হয়তো সত্যি ই ক্লস্ট্রোফোবিক, কিন্তু একটা আশ্চর্য্য কালচেতনা আমাদেরকে প্রায় বাধ্য করে ছাপোষা দৈনন্দিন, অস্বস্তিকর ভাবে পরিচিত জীবনানন্দকে তাঁর থেকেই অনেক বড় করে দেখতে।

    বউকে এবং হয়তো মেয়েদের অশ্রদ্ধা করার প্রমাণ পেয়ে শুধু নয়, অতি প্রাইভেসী বা ন্যাকামির পার্সিকিউশন ম্যানিয়া র উপকথাগুলো এত বিরক্ত করে, মাঝে মাঝেই মনে হয় চার পাঁচ দশক পিছিয়ে ধমকে আসি, চোপ বে হাইপোকন্ড্রিয়াক, তবু তার পরেও মনে হয়, এরি হাতে এমন এক একটা লাইন আছে শব্দ আছে, কি আর করবো ক্ষমাই করে দি, অথবা ক্ষমা চেয়ে নি, দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী দু:সহ সময়টাকে তাঁর সঙ্গে হেঁটে বেড়াই নি বলে। এই বালের কলকাতা শহরে।
  • dri | 75.3.201.181 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০৯:২২403835
  • এক মিনিট। এক মিনিট।

    গদ্যেও বেতের ফল রয়েছে। কারুবাসনায় মেয়ের বর্ণনায় বেতের ফল এসেছে।

    -- 'তবে আমার বিছানা ভিজিয়ে দিলে কেন? মারি?' পাখার ডাঁট তুলে ধরি। শিশুর হৃদয়ে কোনো ভাব খেলা করে বিদীর্ণ মুখে বড় একটা ফুটে ওঠে না। পাখার ডাঁটের দিকে একবার তাকায়, আমার মুখের দিকে একবার তাকায়, কপাল ও ভুরুর সরলতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, ঠোট নড়ে, বেতফলের মতো চোখ তুলে চালের বাতার দিকে নিগূঢ়ভাবে তাকিয়ে থাকে।
  • I | 59.93.167.216 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৩৩403836
  • সৈকতের point to be noted। মাল্যবান অবশ্যই শুধুমাত্র নষ্ট দাম্পত্যের কাহিনী নয়। বস্তুত: জীবনানন্দের মত জটিল ও বহুস্তরাণ্বিত শিল্পীর কোনো লেখাই তা নয়।
    এবং জীবনানন্দ সময়কে অস্বীকার করেন নি। সমসময় তাঁর লেখায় প্রবলভাবে ছাপ ফেলে গেছে, তাঁর লেখাকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে নতুন সংকর খনিজ বের করে এনেছে। নইলে তো তিনি শুধুমাত্র "রূপসী বাংলা'র কবি থেকে যেতেন, যেমনটা চেয়েছিলেন তাঁর এক-আধজন "বিশুদ্ধ কবিতা'র পতাকা কাঁধে তোলা কবি-সতীর্থ।
  • I | 59.93.167.216 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৫১403837
  • এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু কথা বলবার আছে; মানে লোকের কাছ থেকে ধার করা কথা আর কি :)
    তবে তার আগে লেখালিখি নিয়ে।
    একটা সময় ছিল যখন ভাবতাম জীবনানন্দ কোন কিছু না ভেবেই,- মানে লেখা কিভাবে হবে, কি লিখতে হবে-এইসব না ভেবে কেবল লেখা পেয়েছে বলে লিখে গেছেন। এই ভাবনার পেছনে কিছু ইনফ্লুয়েন্স হয়তো কাজ করেছিল। মায়ামাসীর বাড়ি যখন পড়তে যেতাম দশ-বারো ক্লাশে, মায়ামাসীর আঁতেল ছেলে ( শমীন্দ্রনাথ মজুমদার,যে এখন নামী আর্টিস্ট, হেমেন মজুমদারের কেমন যেন নাতি) জ্ঞান দিয়েছিল- জীবনানন্দকে দ্যাখ, কিভাবে ঘোরের মধ্যে, স্বপ্নের মধ্যে লিখে যাচ্ছে, হাতের কাছে যা শব্দ পাচ্ছে তাই নিয়ে বসিয়ে দিচ্ছে। তো, এইটা মনের ভিতর থেকে যেতে পারে।
    আবার আর একটু বড় হয়ে যখন সন্দীপন পড়লাম, ঐ সোমনাথ যা বলল, লেখক নিজে লেখে না, লেখাটা তাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়; শেক্সপীয়র যেমন সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে হ্যামলেটের পিছন পিছন ঘুরে বেড়িয়েছিলেন, দেখি তো , ব্যাটাচ্ছেলে কোথায় যায়!
    এখনো অবশ্য পুরোপুরি সরছি না ঐ জায়গা থেকে; এখনো বিশ্বাস করি জীবনানন্দ অনেক সময়েই ভুতে পাওয়ার মত করে লেখার পিছন-পিছন ঘুরে বেরিয়েছেন।
    কিন্তু একই সঙ্গে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, জীবনানন্দ সজ্ঞানে লেখার ফর্ম নিয়ে ভেবেছেন, কনটেন্ট নিয়ে ভেবেছেন; তাঁর ঐসব অলৌকিক কথামালা শুধুমাত্র আকাটা প্রতিভার স্বত:স্ফূর্ত নি:সরণ নয়। সেসব প্রমাণ নিয়েও পরে আসছি। দেখতে থাকুন।
  • h | 203.99.212.224 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:১০403838
  • এই 'ঘোরে' লেখা আর 'সচেতন' ভাবে লেখা, এই যে একটা duality , যেটা বেসিকালি, 'চলতি' বনাম 'বিশুদ্ধ আর্ট' duality র বা বিশুদ্ধ বনাম অশুদ্ধ duality র একটা প্রোজেকশন, এটা আমার মনে হয় অধিকাংশটাই বানানো। উইসডম বা নতুন ধরণের ভিসন, এইটা পেতে গেলে হয় ব্যাপক স্ব-আরোপিত রেক্লুসন লাগবে অথবা এক ধরণের 'ট্রান্স' লাগবে এই দুইটাই আমার ধারণা গুল। অথবা ধর্মীয় উইসডম এর ধারণার ঐতিহ্য। তার মানে এই নয় যে আমি ভার্বোজ, আধুনিক অর্থে রেশনাল, উইসডম ছাড়া আর কোন উইসডমকে অস্বীকার করছি। তা নয়, কিন্তু আমার মনে হয়, মানুষের সচেতনতা এমন একটি বস্তু সেটা সম্পর্কে তার সঙ্কÄ¡ নিয়ে লোকে অনেক ভেবেছে, কিছু বেসিক প্রশ্নের উত্তর হয়তো পেয়েওছে, তবু সচেতন ভাবে ছাড়া অন্য কোন ভাবে, জীবনানন্দর মত একজন প্রখর ভাবে সময় ও স্থানে আক্রান্ত লোক, স্রেফ ঘোরে পড়ে লিখে যাচ্ছে, এইটা আদৌ সম্ভব নয়।
    হ্যাঁ এটা মেনে নিতে অসুবিধে নেই, জীবনানন্দীয় মেটাফরের জগৎ যেটা তিনি হাতে করে তৈরী করেছেন, সেটা তাঁর একান্ত নিজস্ব এবং সেই মেটাফোরের জগৎটার সচেতন কনসিস্টেন্সি তিনি নিজেই রেখেছেন। এবং এই নির্মাণটার লিটেরারি ট্র্যাডিশন তাঁকে নিজেকেই তৈরী করে নিতে হয়েছে। বড় লেখকের এইটা দায়। রিয়ালিজম(ডিকেন্স অর্থে), হাই মর্ডানিজম, হাই মর্ডানিজম, সুর রিয়ালিজম, একসিস্টেনশিয়ালিজম, ম্যাজিক রিয়ালিজম, ইনফ্রা রিয়ালিজম ইত্যাদি যে কটি শব্দ বই বা উইকি তে দেখা যায়, তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময়ে নিজেদের জগৎ নিজেরা নির্মাণ করে নিয়েছে, যখন লিটেরারি ট্র্যাডিশনের মধ্যে রাজকন্যে কম পড়িয়াছে, নিজের মত করে গড়ে নিয়েছে।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:২৪403840
  • একটা সম্পূর্ণ অন্য প্রশ্ন h - কে। ইনফ্রা রিয়ালিজমের উল্লেখ করলেন। bolano পড়েছেন নাকি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন