এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • স্মৃতি মেদুরতা

    M
    অন্যান্য | ১৩ মার্চ ২০০৯ | ৩৯৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kallol | 119.226.79.139 | ২৬ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৩৬407335
  • সাদা সাড়ি সবুজ পাড় সবুজ ব্লাউজ আর সাদা কেডস। সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে এভাবেই আমার পাশে পাশে হেঁটে যেতো সে আমাদের কোয়ার্টার পর্যন্ত। আষাঢ়মেঘবরণ ছিলো সে। দু-বেনুনী ঝুলিয়ে কত কথাই না বলতো। বেশীরভাগই উপদেশ টাইপ। আমি মুগ্‌ধ হয়ে শুনতাম। শুনতাম কি? কে জানে। হয়তো শুধুই চেয়ে থাকতাম, তার মুখের দিকে। কপালে দস্যিপানার কাটা দাগের নীচে জোড়াভুরু আর খুব বড় বড় দুটি কাজলটানা চোখ। এসব এখনো দেখতে পাই। চোখ বোঁজারও দরকার পরে না। কখনো উল্টো দিক থেকে সাইকেল আসছে দেখে ছল করে তার হাতের আঙ্গুল ছুঁয়ে গেছি, সে ভ্রুক্ষেপই করেনি। ডান হাতের মধ্যমায় একটা পলা ছিলো। কথায় কথায় আমায় গাধা বলাটা তার বড় প্রিয় লব্জ ছিলো। সে আমার ষোল বছরের তপ্ত দুপুরের ফিঙ্গে ডাকা কৈশোর। আমার লাল মাটির পথের ধারে ঝুপসি হয়ে থাকা গাছ। আমার তালবাগীচার দিগন্তে হারানো মাঠে হঠাৎ বৃষ্টি।
    দুকুড়ি বয়স বেড়ে এখন হেমন্তের টান। শীত আর ততো দুর-অস্ত নয়। এমন নয় যে তাকেই খুঁজে ফিরেছি এই সারা সময়। কিন্তু দেখা তো হয়, হয়ে যায়, কতো চেনা-আধা চেনা এমনকি অল্প চেনা মানুষের সাথেও। এই এতো বয়সেও হঠাৎ হঠাৎই তাকে দেখতে বড়ো ইচ্ছে করে। কেমন আছে সে? এই অর্কুট-ফেসবুক অধ্যুষিত দুনিয়ায় কতো কেউ তো কতো কাউকে খুঁজে পায় বলে শুনি। আমি তো পাই না তাকে।
    সে হয়তো ঠিকই বলতো। গাধা। গাধাই ছিলাম। নইলে তাকে হারালাম কেন।
    আমার চেতন-অবচেতনের সাঁঝে ঝুপ করে নেমে আসে রাত। আমি বারান্দায় বসে ভিজতে ভিজতে অপেক্ষায় থাকি। পিছনে শূণ্য ঘরের দরোজা, খোলা থাকে, খোলাই থাকে.....................
  • PM | 2.50.55.119 | ২৬ অক্টোবর ২০১১ ২০:৪৬407336
  • বড় ভালো লিখলেন কল্লোলদা। আমার-ও অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেলো। একাধারে মন ভালো আর খারাপ করা লেখা। বউ-কে পড়ে শোনালাম আপনার লেখা। ও-ও দেখছি মন খরপ মুখ নিয়ে বসে আছে
  • a | 208.240.243.170 | ২৬ অক্টোবর ২০১১ ২০:৫৯407337
  • কল্লোলদা, নিজে লিখতে পারি না এত ভালো, কিন্তু তোমার লেকা পড়ে মনে হল ঠিক এটাই বলতে চেয়েছিলাম।

    ধন্যযোগ
  • ranjan roy | 14.97.25.182 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ০০:০৮407338
  • কল্লোলের লেখা পড়ে মনে হল সত্যি তো, আমাদের মাঠে পাকাধান কাটা হয়ে গেছে,এখন পড়ে আছে কিছু গুঁড়োগাঁড়া আর কাটা ধানের রুক্ষ গোড়া। শীত পুরো দস্তুর জাঁকিয়ে আসছে।
    পার্কসার্কাসের শিশু বিদ্যাপীঠ গার্লস্‌ স্কুলে ফাইভ অব্দি পড়েছি। মেয়েটি বয়সে কিছু বড়। কোন কারণে জুনিয়রদের সঙ্গে পড়ছে। সাদামাটা চেহারা, পরনে অধিকাংশ দিন সাদা ব্লাউজের সঙ্গে আকাশী স্কার্ট। মাথার কোঁকড়া চুল লাল ফিতে দিয়ে আটকানো। তবে চোখ দুটো! একেবারে অন্যরকম। তাকালে মনে হত শুধু হাসছে নয়, কেমন করে দেখছে। চোখ সরিয়ে নিতাম। কোন অজ্ঞাত কারণে একটু রূঢ় ব্যবহার করতাম।
    গল্প করতাম ক্লাসের মনিটর মেয়েটির সঙ্গে, ভাল গান গাইত।
    হায়ার সেকন্ডারি পরীক্ষার সময় নাকতলায় থাকি। এক বৈশাখের তপ্ত বিকেলে পার্কসার্কাসের বাড়িতে যাব বলে গড়িয়াহাট থেকে দশ নম্বর দোতলা বাসে উঠেছি। আকাশ কালো হয়ে আসছে, অনেক উঁচুতে ঝাঁকে ঝাঁকে চিল উড়ছে। হাওয়ায় ধূলো ভেজা সোঁদা গন্ধ। বছরের প্রথম কালবৈশাখি আসছে। মাথায় একটাই চিন্তা। ধূলোর ঝড় আর বৃষ্টি তেড়ে নামার আগেই যেন বাড়ি
    পৌঁছতে পারি।
    হটাৎ চোখে পড়ল সহযাত্রীদের মধ্যে একটি মেয়ে। জংলা রঙা শাড়ি, শ্যাম্পূ করা খোলাচুলের ঢেউ শ্যামলা মুখে মেঘছেঁড়া আলো যেন আলাদা ব্যক্তিত্ব দিয়েছে। গর্বিত মুখে এমন একটা আভা যে কন্ডাক্টার টিকিট দেওয়ার সময় প্রজার খাজনা দেয়ার ভঙ্গি করল। কিন্তু কোথায় যেন দেখেছি। আরে, এত সেই ছ'বছর আগে আমার গার্লস্‌ স্কুলের সহপাঠী মেয়েটি। কিন্তু এই কি সে? সেও বটে, নাও বটে।
    হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা সত্যি হয়েছে।
    আমাকে চিনেছে কি? বোধ্‌হয় হ্যাঁ, বোধহয় না। আমরা নামলাম একই স্টপেজে, বেকবাগানের মোড়ে। একবার আমার দিকে দেখল, তারপর গরবিণী পদক্ষেপে হেঁটে গেল। ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ছে ফাঁপানো খোলা চুল। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়া শুরু হল, আমি রাস্তা পালটালাম।
    আজও তাকে দেখতে পাই বছরের প্রথম কালবৈশাখিতে।

  • Somnath2 | 207.239.86.106 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ০১:৩৬407339
  • কল্লোলদা আর রন্‌জনদার লেকা পড়ে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। ওদিকে চূড়ান্ত সোসোন চলছে .. ক্ষি চাপ!
  • kallol | 115.241.127.92 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ১৩:০১407340
  • নবাদা বল্লো
    - এবার তুই ক্যাপটেন।
    সামনে আজাদ সঙ্ঘের সাথে ম্যাচ ওদেরই মাঠে। ফাইভ সাইড ম্যাচ। আমাদেরটা আজাদ সংঘের পাশের পাড়ার ক্লাব মিলন সংঘ। আমাদের সর্বেসর্বা নবাদা, নব সাহা, ল্যাংচ মিত্রের শিষ্য। ওদের তেমনই তারকদা।
    লেকের মাঠে আমাদের প্র্যাকটিস চলে। ঢাকুরিয়া লেকের পশ্চিম প্রান্তে যে চারটে আলিবর্দি খাঁয়ের কামান তার সামনের মাঠে।
    সঞ্জীব গোলে। বিশু আর তরুণ ব্যাক। আমি হাফে আর প্রসাদ স্ট্রাইকার।
    প্র্যাকটিস চলছে ওয়ান-টু এ। সেন্টারে আমায় সাইড পুশে দিচ্ছে প্রসাদ। আমি ব্যাক পাস করছি স্কোয়ারে বিশুকে। বিশু ওয়ান টাচে তরুণকে। তরুণ যতটা পারবে সামনে জমি নেবে, তারপর সোজা আমায়। আমি ততক্ষণ জায়গা নিয়েছি ওদের ডিফেন্সে ডান দিকের টাচলাইনের ধারে, আর প্রসাদ পৌঁছে গেছে ওদের পেনাল্টি বক্সে। আমি কাট করে ভিতরে ওদের গোললাইন থেকে প্রসাদকে দেবো। প্রসাদ ফিনিস করবে। প্রাকটিস চলছে বড়দের সাথে। শ্যামাদা আর নবাদা ডিফেন্সে, গোলে শিশিরদা। আমি বল ধরলেই শ্যামাডা ট্যাকেল করছে। প্রত্যেকটা ট্যাকেলেই আমি মাটি ধরছি। শ্যামাদার লোহা তোলা বডি। আমি চিরকালই ওয়ান ডায়মেনশনাল। ফলে প্রসাদ বলই পাচ্ছে না। নাবাদা মিটিমিটি হাসছে, আর বলছে,
    - মাথা খাটা, মাথা খাটা।
    বিশুকে বল্লাম
    - তরুণকে না দিয়ে সোজা আমায় ফরোয়ার্ড করতে, আমি যেখানে দাঁড়িয়েছি তার একটু তলায়। সেন্টার থেকে প্রসাদ আমায়, আমি বিশুকে। আমি দৌড়চ্ছি ডান দিকের টাচ লাইন ধরে, আমার যেখানে পৌঁছানোর কথা। শ্যামাদা আমায় কভার করছে। বিশু বল ছেড়েছে। আমি দৌড়তে দৌড়তে হাফটার্ন মেরে পিছনে। শ্যামাদা বোঝে নি। আমায় ধরতে স্প্রিন্ট তুলতে তুলতে আমার পায়ে বল। কাট করে ভিতরে ঢুকছি। শ্যামাদা কেটে গেছে। নবাদা প্রসাদের গায়ে। প্রসাদের বাঁ পাটা মাখনের মতো। নবাদা ওর ডানদিকে। আমার সেন্টার কাটবে। প্রসাদ বাঁদিকে সরছে। আমি জমি নিচ্ছি, জমি নিচ্ছি........... লব করছি নবাদার মাথার ওপর দিয়ে। প্রসাদ বুকে করে বল জমিয়েছে। নবাদা ভুল করলো, প্রথমেই ফাইনাল ট্যাকেলে গেলো। আমি চলে এসেছি স্কোরিং জোনে। প্রসাদ নাবাদাকে পিচানে নিয়ে বাঁ পায়ে ব্যাক হিলে আমায়। আমার বাঁ পায়ে বল আসছে। শিশিরদা এগোচ্ছে। ডান পায়ে বল নেবার সময় নেই। প্রসাদ চ্যাঁচাচ্ছে - পিছনে ম্যান। বাঁপায়েই শট নিলাম গেদে। শিশিরদার ডান দিক দিয়ে বল জালে।
    নবাদা এসে জড়িয়ে ধরেছে,
    - ঠিক এই ভাবে, এই ভাবে চাই সেদিন।

  • sayan | 115.184.99.235 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ১৩:২১407341
  • গোল হবে, এ তো জানাই ছিল। তবু হেমন্তের প্রাক্বালে শীতের আনাগোনা নিয়ে এত ইতস্তত, এত গোল কেন! যে চলে গেছে, তাকে মুঠি খুলে দু-পশলা দেখে যদি একটিবার মন উঙ্কÄল হয়, হোক না। যে আসছে, তাকে স্বাগত না জানিয়ে উপায় কী! শীত আসুক। আমার সোনালী ধান কেটে ঘরে তোলা হয়নি। তোমাদের তালবাগিচার ছায়াবীথিতলে না জানি এমন কত চুপকথার ঢেউ, বেমক্কা ডুবসাঁতারে এক্কেবারে সামনে এসে পড়ে, আর তোমরাও নিশ্চই কথার খেই হারাও। আমরা সবাই তাই, আমাদের অন্যান্য সবাইয়ের মত ...। আসুক শীত। শান্তির দিনগুলো স্বস্তিতে তোলা থাক অন্য কোথাও, যেখানে তাদের শরীরে বিবর্ণতার হলদেটে ছোপ আজ নয় কাল মেদুর স্মৃতিকে আরও পরিপূর্ণ করবে।
  • kallol | 119.226.79.139 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ০৯:১২407342
  • শীত আসবেই। তার নিয়মেই সে আসবে। আসলে শীত তো আর শেষ কথা নয়। শীত শেষ হবে, বসন্ত আসবে। আমাদের পোড়া বাংলাদেশে বসন্ত বললে মায়ের দয়া বোঝায়। বাংলায় বসন্ত আসে যদি তো আসে লাল মাটির দেশে। পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ায় তার ঝলক। সে বড় ক্ষণস্থায়ী। যদিও কাথায় বলে এক মাঘে........., তাবলে কি আর বার বার মাঘ আসে। বসন্ত এলে আমরা পুরোনো জামা আলনায় তুলে রেখে নতুন জামা পড়ে হোরী হ্যায় বলে উল্লাসে ছুটে যাবো, ফাগ ফাগুনের দেশে।
    তারপর আর ঋতু থাকে না, ঋতু বদলও নয়।
    তার আগে, একবার তার সাথে দেখা হয় যদি.............
  • pi | 72.83.90.203 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ১৯:০০407343
  • Name:madhuchhandapaulMail:[email protected]Country:

    IPAddress:14.96.213.235Date:24Oct2011 -- 10:51PM

    ছোটবেলা -১
    বিহারের মফস্বল সহরে জন্ম আর বেড়ে ওঠা । বাড়িতে অনেক ঘর, বারান্দা,উঠোন,ছাদ অনেক লোকজন, পুরণ জীর্ণদশাগ্রস্থ অনেক প্রবাসী, ভারতবর্ষ, শনিবারের চিঠি আর কিছু অচল পত্র ,সচিত্র ভারত। এই বইগুলো দিয়েই আমার ১০ / ১১ বছর বয়সে গল্প বই পড়ার শুরু । এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে ছিল কিছু জন্তু জানোয়ার ,একটা কালিন্দী নামের ভাল্লুক, চিলিম্পা নামের বাঁদরী আর একটা শেয়াল ,তার নাম মনে নেই।আসে থাকতো রান্নাঘরের সামনে উঠোনে একটা বিশাল উনুনের গর্তে ,উনুনটায় মনেহয় বছরে একবার আগুন পড়তো ,একটা বিশাল বড় হাঁড়িতে জল ফুটত তার ওপর । সামনের চোঙদিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে জমত অন্যপাত্রে , distilledwater হত বাড়ীতেই বাড়ীতে বেশকিছু ডাক্তার আর দুটো ডাক্তারখানার চাহিদা মেটা । শেয়ালটা উঠোনেই থাক , বাড়ীর অন্য কোথাও যেতনা ,মাঝে মাঝে রাতের দিকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আকশের দিকে মুখ তুলে হুক্কাহুয়া করে ডাকতো । কখন যদি আমাদের পো কুকর উঠোনে গিয়ে পড়ত দুজনে সাঙ্ঘাতিক ঝটাপটি বেঁধেঁ যেত ,সে সময় ওদের আলাদা করা খুব শক্ত ব্যপার ছিল ।
    আর একটা দৃশ্য মনে পড়ছে , আমার এক জ্যাঠতুত দাদা গলায় একটা সাপ ঝুলিয়ে ( নির্বিষ ঢোঁড়া অথবা হেলে হবে নিশ্চয় ) ঠাকুর ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আর আমাদের এক মাঝবয়সী ,নিরীহ ,হাসিখুশি, রসিক জামাইবাবু ভেতর থেকে নানা সম্ভব অসম্বব শপথ করে চলেছেন যেমন "আমি তোর কেনা হয়ে থাকব , তোর চাকর হয়ে থাকব (,এবং আরও সেগুল বলা ঠিক হবেনা এখান।) ।আতুই এটাকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়েযা ভাই "।
    এটা আমার শোনা কথা ,দেখা নয়। আমার সবচেয়ে ডাকাবুকো জ্যঠামশায় কি উদ্দেশ্যে কেজানে একটা মাটীর হাঁড়ীর মধ্যে জ্যেন্ত কাঁকড়াবিছে জমা করছিলেন , একদিন দুপুরে আমাদের ঠাকুমা সেই বিপজ্জনক হাঁড়ী জলন্ত উনুনে বসিয়ে তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করেন । কাচের লম্বা বাক্সে chemicale ডোবান ছোট মাপের ঘড়িয়াল দেখেছি ,যখন জ্যন্ত ছিল বাইরের উঠোনের বড়ো চৌবাচ্চায় থাকতো শুনেছি ।
  • pi | 72.83.90.203 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ১৯:০১407194
  • Name:madhuchhandapaulMail:[email protected]Country:india

    IPAddress:14.96.114.191Date:28Oct2011 -- 12:50PM

    ছোটবেলা ২
    বাড়িতে রাখা কিছু অদ্ভুত জিনিষ দেখে দেখে অভস্ত্য ছিলাম আমরা ছোট থেকে, কখন মনে সে গুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি ,যেমন বাড়িতে অনেকদিন ধরে থাকা একটা আসবাব দেখে আমরা সেটা নিয়ে ভাবিনা সেরকম !
    আমাদের দোতলার কলঘরের জানলায় একটা মানুষের মাথার আস্ত খুলি ওপরের চোয়ালের দাঁত সমেতরাখা ছিল অনেকদিন পর্যন্ত । ,ওটা আমার এক জ্যাঠামশাইয়ের সংগ্রহ কাউকে ভয় দেখনর জন্যে , ওটার চোখে ব্যাটারি দিয়ে আলো লাগান হয়েছিল শুনেছি । আমাদের কোন রকম বিকার ছিলনা ,দিব্যি যাওয়া আসা করতাম। আমাদের ডিসপেনসারি আর বাড়ির মাঝখানে একটা দরজা ছিল ওটা খোলাই থাকতো সবসময় ডিসপেনসারিতে ঢুকেই একটা শোকেশের ওপরে একটা বড় কাচের জারের মধ্যে একটা অপুষ্ট ,অপরিণত মানব ভ্রূণ chemicale ডোবান ।আআমরা দুপুরবেলা, বিশ্রামের জন্য বাড়ির সবাই ওপরে চলে গেলে ফাঁকা ডিসপেনসারি তে ঢুকে হলদে টিনের কৌটো থেকে glucose খেতাম ,কিছু মনেই হতনা ও একটু ঘাড় বেঁকিয়ে বসে থাকতো ।
    আমরা এর মধ্যেই বড় হয়েছি ,আমার মার কিন্তুঅনেকদিন মামারবাড়িতে কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে খুব খারাপ লাগত । মা বলত জন্তু জানর এর গন্ধে মার অসুবিধে হত ।আবাড়িতে ঢূকেই বাইরের উঠনে পায়রাদের ঘর। কাঠের কাঠামোয় জাল দিয়ে ঘেরা বেশ বড় ঘর একটা । ,ওটা ছিল আমাদের সব চাইতে বড় জ্যাঠামশাএর সম্পত্তি ,অনেক রকম পায়রা ছিল ,আমাদের শোবার
    ঘরের পেছনের বারান্দা ছিল ঐ উঠোনের দিকে, মাঝে মাঝে জ্যাঠামনি আমাদের ঘরের দিকে মুখ তুলে আমদের দুই বোনের নাম ধরে ডাকতেন আর আমরা দুড়দাড় করে নেমে আসতাম , পায়রার ডিম সেদ্ধ খেতে। । পায়রার ডিম সেদ্ধ হলে আমরা খেতাম আর পায়রার খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হত ,ওদের পুষ্টি হবে বলে । পায়রার ডিম খেতে মুরগীর ডিমের মতই , দেখতে একটু অন্যরকম সাদা অংশটা স্বচ্ছ ।
  • maximin | 59.93.216.8 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ১৯:১৮407195
  • কল্লোল তো তাকে হারিয়ে ফেলেন নি। আজও তার চোখদুটি কাজলটানা। কপালে তার সে-কোনকালের দস্যিপানার কাটা দাগ।
  • madhuchhanda paul | 14.96.139.239 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২১:৫৯407196
  • ছোটবেলা -৪
    ByMadhuchhandaPaulin গুরুচন্ডা৯ guruchandali•EditDoc•Delete
    বাড়িতে বাসন মাজতে ,ঘর মুছতে আসত কালিদাই। গায়ের রঙ খুব কালো ছিল বলে মনে হয় সবাই ওকে ঐ নামে ডাকতো । মাঝ বয়সী ,রোগা চেহারা ,সামনে আঁচল করে শাড়ী পরা, গলায় মোটা রুপোর হাঁসুলি ,গলায়, হাতে, পায়ে এমন কি কপালেও উল্কি করা ,দু কানের লতি মাঝখান থেকে কাটা মনে হয় ভারি গয়না পরার ফল ।আনেক পুরন লোক হওয়াতে খুব দাপট ছিল ,কথায় কথায় আমাদের ভয় দেখাত পিসিমাকে নালিশ করবে ।
    আসতো রাজিয়া ,কালিদাইয়ের মেয়ে খুব শক্তপোক্ত চেহারা । ও আমাদের বাড়ির চাল, গম ঝাড়ত বাছত । একটা যাঁতা বসান ছিল একটা ঘরে সেটাতে ছোলার ছাতু, যবের ছাতু পিষত ,উদুখলে কিসব কুটত । রাজিয়ার ছেলে গন্নি আমাদের বাড়ির আর ডিস্পেন্সারির ফাই ফরমাস খাটত । পরে অবশ্য কোন অন্য চাকরিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।
    রান্নার ঠাকুর আসতো । ,ওর আটামাখা দেখার মত ছিল বিরাট বড় কাঁসিতে ঢিপি করে আটানিয়ে দুহাতে দুমদাম করে কুস্তি করার মত করে ঠাসত । দুপুরে সবার খাওয়া হয়ে গেলে একদম আলাদা খেতে বসত আমরা কেউ কাছে গেলে বকত ,আমরা ছুঁয়ে দিলে ওর খাওয়া নষ্ট হবে কারণ আমরা ব্রাম্ভন নই ।অআবার সেই ঠাকুরই রাত্তির বেলা আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে চাইলে আমার ভাত মন্দিরের মত করে চূড়া করে তাতে আলু পটল ভাজা সাজিয়ে বলত মন্দির বানিয়ে দিয়েছি ,খেয়ে নাও।
    আসতো ছুটকী গয়লানি । রোদে পোড়া কালো রঙ রুক্ষ চুল,মুখে অজস্র আঁকিবুকি ,মিলের আধময়লা সাদা শাড়ি ,হাতে, গলায় ,পায়ে ভারি ভারি রূপোর গয়না আর উল্কি । দু পায়ের পাতার সামনে দুটো ভেতর দিকে বাঁকানো । বাইরের কলে ধুলো মাখা পা ধুয়ে পিসিমার কাছে গিয়ে বসতো । মাথার নিচু কানার ঝুড়ি নামাত ,অনেক গুলো দুধের কেঁড়ে সেটাতে ,পিসিমা সিংহাসন এ বসে হাঁটুর ওপরে কেঁড়ে বসিয়ে নিজের হাতে দুধ মেপে নিত ।
    বিকেলের দিকে আসতো কারুয়ার মা ,নাপতিনী । ছোটখাট ,ফোকলা মুখে হাসি ভরা ।

    হাতের পুঁটলিতে ঝামা, নরুন,আলতার পাতা, ছোট পেতলের বাটি। বড়োরা বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসত ও উঠোনে বসে ঝামা দিয়ে পা ঘষে ,নখ কেটে আলতা পরিয়ে দিত ।অআমাদের শুধু নখ কেটে দিত ,মিশনারি স্কুলে পড়তাম কড়া ডিসিপ্লিন আলতা পরা নেল পলিশলাগান একদম বারন। লম্বা ছুটিতে আলতা পরতাম কারুয়ার মা পায়ের পাতায় নানান ডিজাইন করে মনের সুখে আলতা পরাত।
    একজন গুড় ওয়ালা আসতো বাঁকে গুড়ের টিন ঝুলিয়ে । বড় টিকি ছিল মাথায় ,আমরা ওকে দেখলে বলতাম " টিক্কি মে রাধাকিষান "' ও অমনি বলত" নেহি নেহি সিতারাম বোল " রাধাকিষান এর বদলে সিতারাম বলতে হবে কেন বুঝতামনা ,বলতামওনা ।

    আমদের বুড়ো পুরুতমশাই মারা গেলেন , ওঁর ছেলে দুর্গাচরণ আসতো পুজো করতে ,একটু পাগলাটে ,খেতে খুব ভালোবাসত ,পুজো করতে পারতনা ঠিক করে বকুনি খেয়ে খেয়ে পুজো করত। পুজো করা হয়ে গেলে ছোটোকাকিমা যত্ন করে খাওয়াত।
    মধুছন্দা পাল। ১২//১১
  • madhuchhanda paul | 14.96.139.239 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২২:০৭407197
  • ছোটবেলা - ৩
    আমাদের পরিবারের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় আমাদের ১১ বছরে বিয়ে হয়ে ১৩ বছরে বিধবা হওয়া ,বাবাদের ছ'ভাই চম্পার একমাত্র পারুল দিদি আমাদের পিসিমার কথা । মোটাসোটা ,মাথায় কাঁচাপাকা চুলের ছোট খোঁপা, সাদা থান পরা , সমদর্শী ,স্থিথধী এমন এক ব্যক্তিত্ব যে তার গুন দিয়ে ছোট থেকে বড় সবাইকে বশীভূত করে রেখেছিল । ভাইদের সংসারের কেন্দ্রবিন্দু । পিসিমাকে ভয় পেতনা কেউ সমীহ করত সকলে । ভাইদের সংসার আগলে রেখেছিল দুহাতে করে । একটা লোহার মোটা পাতের বেশ বড়সড় চৌক টুলের মত ছিল , সেটাকে আমরা সিংহাসন বলতাম , সেখানে বসে পিসিমা সংসার পরিচালনা করত, হাঁটুর ওপরে গয়লানির আনা দুধের কেঁড়ে বসিয়ে নিজের হাতে দুধ মেপে নিত ,নিরামিষ উনুনে দুধ জ্বাল দিত , নানা রকম মিষ্টি বানাত । খই ভাজত । আমাদের খাওয়া দাওয়ার তদারক করত ।
    সকালে একটা মাঝারি হাঁড়ীতে চায়ের জল বসত আর একটায় চা ছাঁকা হত , গুঁড়ো পাতা দিয়ে তৈরি সেই চা করত আমাদের ছোটকাকা , কুস্তিকরা শরীর ,বলিষ্ঠ চেহারার আমাদের ছোটকাকা মাটীতে বাবু হয়ে বসে চা করছে এখনো যেন দেখতে পাই । আমাদের বড়সড় রান্নাঘরে সবাই জমা হত ,যারযার পদ অনুযায়ী কাপ ,কাপপ্লেট ,কাচের গ্লাস,কাজের লোকেরা তাদের কাঁসার পাত্রে চা পেত । পিসিমা চা খেতনা ,একটু দূরে বসত, ওখানে বসত আমাদের জ্যঠামনিও স্পেশাল কাপ প্লেটে চা নিয়ে । সেই সময়টা যেন ছিল পিঠোপিঠি ভাই বোনের অন্তরঙ্গ আলাপের সময় । জ্যাঠামনি হয়ত জানতে চাইল রাতে ঘুম ঠিক হয়েছিল কিনা । পিসিমা বলল ,মশারিতে মশা ধুকেছিল , ঘুমতে অসুবিধে হয়েছে । জ্যাঠামনি ব্যস্ত হয়ে উঠত । এই রকম সাধারন উঠল ।

    আরেকবার চা হত বেলা ১০ টা নাগাদ সেটা করত আমাদের ছোটকাকীমা । ভাল সুগন্ধি পাতা দিয়ে করা সেই চা হত শুধু বাড়ির লোকের জন্যে । সেই সময় যারা সকালে নিজেদের কাজে গেছে পারলে বাড়ি ফিরত । চেম্বার থেকে কিছুক্ষনের জন্যে বাড়ি আসতো । চায়ের সময় একটা পারিবারিক আড্ডাও বসতো । আমাদের ডাক্তার মেজজ্যাঠাবাবু কথা বার্তা বিশেষ বলতনা , বই পত্র নিয়েই থাকতো কিন্তু এই সময় ঠিক আসতো । হাসিঠাট্টা খুব চলত । সম্মান রেখে । সব বয়সের সব সম্পর্কের সবাই থাকতেন তো তাই ।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২২:০৮407198
  • স্মৃতি থেকে হঠাৎ আমার লেখা পাচ্ছে----সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির --ছেড়ে যাওয়া আপনজনেদের কত কথা--ঘটনা

    ভালবাসার কোনও বিকল্প নেই---মানুষের ভালবাসাটুকুই বোধহয় সঙ্গে থাকে চিরকাল---বাকি সব হারিয়ে যায় । আমার খুব মনে পড়ে যাচ্ছে আর একটি মানুষের কথা--
    না না সে কাজের লোক ছিলনা আমাদের বাড়ীর--বরং অকাজের লোক বলা যেতে পারে:-))

    সুরদাস! পরনে শতছিন্ন লুঙ্গি আর গেঞ্জী--ততোধিক ছেঁড়া একটি চাদর ---হাতে তাল তোবড়ানো এলুমুনিয়ামের বাটি---একটি চোখ ছিলনা!! হাঁটতও খুঁড়িয়ে। গলায় সুরের কোনো ঘাটতি ছিলনা, গলাও সুন্দর---ছুটির দিন সকালে আসত--এসেই গান ধরত কহত কবীরা---আমি ছুট্টে চলে আসতাম। বসে শুনতাম অন্তত তিনটে ভজন--বাঁধা ছিল রুটি তরকারি চা আর আটানা পয়সা। অনেক গল্পও করত আমার সঙ্গে---ওর মা মারা যেতে ---বাবা আবার বিয়ে করে ।ছোটবেলায় রুগ্ন ছিল--নানান অসুখে চোখ, পা সব হারিয়েছে ---বেশি খাটতে পারতনা তাই সৎ মা তাকে বারো বছর বয়সে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলসেই থেকে সে রস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে। আঝে মাঝে তকে আমি পুরোনো জামা কিম্বা গরম চাদর দিতাম ওমা কদিন পরই আবার য একে সেই----ছেঁড়া ময়লা বেশ---বলত খোঁখি চোরি হো গইল---খুব রেগে যেতাম চোরের ওপর--আর আমাদের পুরোনো ড্রাইভার যে নাকি আগলে বসে থাকত আমাকে যতক্ষণ সুরদাসের সঙ্গে গল্প করতুম----পরে হাসত আর বলত
    দিদি অপনে না দিউ ওকরাকেউ বেচবাচ কে দারু পী যতই----
    ড্রাইভারের ওপরও রেগে যেতাম।
    একবার মনে আছে ---সুরদাস এসেছে , কি ঠান্ডা সেদিন , পাটনার শীত ঠুকঠুক করে কাঁপছে ---গায়ে জ্বর---গান গাইতে পারছেনা কাশছে আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। হবি তো হ সেদিন ড্রাইভার বাবাকে নিয়ে বেরিয়েছে----আমার পাহারা নেই---আমি সটান ঘর থেকে বাবার নতুন গরম কোট সার্জেরওকে এনে দিয়ে দিলাম ! সেও ওটা নিয়ে কেমন যেন সটসট করে চলে গেল।
    টারপর তো মার কাছে কি বকুনি( ভাগ্যিস আমার মা মারতে পারতনা) কিন্তু বাবা আবার বল্ল
    যাকগে দিয়েছে বেশ করেছেঐ কোটের ওরই বেশি দরকার।
    মা বলে ও তো বিক্রি করে তাড়ি খাবে---

    আমার কি অভিমান বড়রা কেন সবর মধ্যে খারাপ দেখে---তাদের দু:খ বুঝতেই পারেনা---ভাবলাম আসুক সুরদাস---সবাইকে দেখিয়ে দেব ও কত ভাল---ওর গরম কোট পরে কেমন আরাম হচ্ছে---কাশছেনা-গান গাইছেকত্ত কি!!!!
    আ হতোস্মি!! কোথায় সুরদাস! সেইদিনের পর আর আসেনা সুরদাস----প্রায় একমাস পর একদিন রাস্তায় দেখি সেই শতছিন্ন বেশে ভিক্ষে করছে---আমাদের গাড়ী দেখে প্রায় দৌড়ে পালাল---আরে খুঁড়িয়েও নয়!! দু:খ আর রাগে আমার ছোট্ট মনটা সেদিন বড় কষ্ট পেয়েছিল কেন যে বড়দের কথাই সবসময় ঠিক হয় !!

    এর অনেক বছর পর----আমার বিয়ের দিন সকালে ----বুড়ো-থুত্থুড়ো সুরদাস হাতে মহাবীর-স্থানের প্রসাদ নিয়ে হাজির----বাবা আমাকে ডেকে দিল---ঝুঁকে পড়েছে সে বয়সের ভারে----আমার হাতে প্রসাদ দিয়ে বল্ল

    খোঁখি কহাশুনা মফ করি---রৌয়া রাণী হৈ, সসুরাল মে রাজ করি

    সেও কাঁদে আমিও কাঁদি-------আমার মনটা ভাল হয়ে গেল----বড়রা ঠিক কথাই বলে কিন্তু ছোটদের ভালবাসাও ফেলা যায়না-----
    আসলে ভালবাসাই ফেলা যায়না! কক্ষণো!
  • pepe | 108.1.202.239 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২২:৩২407199
  • মিনি কে মনে পড়ে গেল
  • madhuchhanda paul | 14.96.139.239 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২২:৩৫407200
  • বছরে এক দু বার দিদি বৌদিরা হয়ত আঁতুড় ঘরে যেত ।অদুতলার গোটা দুই ঘর খালিই পড়ে

    থাকতো , তারই একটা হত আঁতুড় ঘর ।অপ্রসব করানোর জন্যে আসতো মিস অ্যানি ,মিস টিরকি বা মিসেস চক্রবর্তী ।আয়ানি আর টিরকি গোলগাল হাসিখুশি লম্বা ঝুলের ফ্রক পরা ।অমিসেস চক্রবর্তী চটপটে ,খটখটে মহিলা , মুখের কোন আগলনেই ,যার তার সামনে যা খুশি বলে । জন্মের ছ'দিন পর বাচ্চার মাথার কাছে রাখা হত লাল কালি ভর্তি দোয়াত আর খাগের কলম ,ষষ্ঠীঠাকরুন জাতকের কপালে তার ভাগ্য লিখে দেন সেদিন । আট দিনেরদিন আটকড়াই , যদি ছেলে জন্মে থাকে তবেই ।অবাড়ির কোন একজন একটা কুলো উলটো করে ধরবে আর আটটা বাচ্চা ছেলে কাঠি দিয়ে সেই কুলো বাজাবে আর বলবে "আটকৌড়ে বাটকৌড়ে / ছেলে আছে ভালো ?" ছেলের ঘর থেকে কেউ বলবে "ভালো আছে।" তারপর ছোটরা পাবে আটরকম কড়াই ভাজা নকুলদানা মেশানো আর দুআনা করে পয়সা । এরপর মেয়ে হলে একমাসে আর ছেলে হলে একুশ দিনে ।অষষ্টি পুজো। সেদিন বাড়িতে বেশ লোকজন আসতো । একটা ছোট্ট চুপড়ি তে খই , একটা কড়ি আরও কিছু থাকতো মনে নেই ।অতবে একটা ছোট খোয়া ক্ষীরের তৈরী পুতুল থাকতো মনে আছে , বাড়ীর ছোটদের হাতে দেওয়া হত ।
    বছরে বেশ কয়েকটা লক্ষ্মীপুজো হত আমাদের বাড়িতে । আমাদের লক্ষ্মী ধান দিয়ে তৈরি হত । জলচৌকির ওপর চুড়ো করে ধান দিয়ে তার ওপর একটা কুনকে বসিয়ে চেলির টুকরো দিয়ে ঢেকে লক্ষ্মী হত ।অজলচৌকির ওপর সব রকম গয়না আঁকা হত । কাঠের পেঁচা সিঁদুর কৌটো দেওয়াহত । ঠাকুরের আসন থেকে চৌকাঠ অবধি আল্পনা আর লক্ষীর পা আঁকা হত ,এই কাজে আমাদেরও অধিকার ছিল । বাটিতে ঘন করে গোলা পিটুলি আর তুলো নিয়ে তিনতলা থেকে একতলার ঘরে ঘরে লক্ষ্মীরপা আর আল্পনা এঁকে বেড়াতাম । কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হতনা আমাদের বাড়িতে । কালীপুজর দিন মহালক্ষ্মীর পুজো হত । গোবর দিয়ে তৈরি অলক্ষ্মীকে বিদায় করে চাল বাটা দিয়ে তৈরি হলুদ রঙের লক্ষ্মী, নীল রঙের নারায়ণ আর সাদা কুবের কে বাড়িতে আনা হত বরণ করে । বিজদশমী বেশ বড় করে পালন করা হতো । পুরনো বাঙ্গালী পরিবার বলে অনেকেই আসতেন ।আনেক খাবার দাবার বানানো হত । পিসিমা তার বিশেষ জায়গায় বসে থাকতো । আমারা কাছে গিয়ে বসে লালকালি আর খাগের কলম দিয়ে দুর্গানাম লিখতাম ,পিসিমা মুখে একটু সিদ্ধির সরবত ঢেলে দিত । আসলে সরবত করত আমাদের ছোটকাকিমা বেশি করে আর রাতের দিকে আমার মা ছোটকাকিমা আরও কেউ কেউ সিদ্ধি খেয়ে একটু মজা করত, অবশ্যই লুকিয়ে । একটু নির্মল আনন্দ :) ।

    মধুছন্দা পাল । ১//১১।
  • madhuchhanda paul | 14.96.139.239 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ২২:৪৭407201
  • ছোটবেলা -৬
    ByMadhuchhandaPaulin গুরুচন্ডা৯ guruchandali•EditDoc•Delete
    আমাদের শহরে বাঙালিদের দুর্গাপুজো হত বাড়ি থেকে বেশ দূরে ,একলা যেতে পারতামনা দাদাদের কেউ না কেউ সারাদিন যাওয়া আসা করত ,কারো সাইকেলের হ্যান্ডেলে উঠে বসলেই হল । দুর্গাবাড়ী র বারোয়ারী পুজো । সারাদিন বাঙ্গালীদের ভিড়ে জমজমাট ।অএকচালার প্রতিমা ,খুব বেশি বড়নয় তাই দেখে দেখে আশ মিটতনা । পাকামন্দির দুর্গা বাড়ির ।অসামনে খোলা মাঠে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে ,স্টেজ বেঁধে রোজ সন্ধ্যেবেলা নানান অনুষ্ঠান হত। আমার দাদাদের ক্লাব একদিন নাটক করত ।অদাদা পিসিমার থান ,জ্যাঠাইমার সেমিজ ,বউদিদের শাড়ি নিয়ে যেত পরে নাটক করবে বলে ,একবার বড় বউদির নতুন ব্যঙ্গালোর শাড়ি হারিয়ে এল ,খুব বকুনি খেল বাড়িতে । গঙ্গার ধারে অনেকদিনের পুরনো শিবমন্দির , বুড়ানাথ এর মন্দির, বিশাল বড় চত্তর । মাএরা সেখানে নবমীর দিনগঙ্গা স্নান করতে যেত । আমারা ছোটরা পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম । আমাদের মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিত ,মা । কালীপূজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী ,সেদিন চোদ্দশাক খেতে হয় আর বাড়ির নানা জায়গায় ,বিশেষ করে অন্ধকার জায়গায় প্রদীপ জ্বালাতে হয় সবশুদ্ধ চোদ্দটা প্রদীপ দেওয়ার কথা ,আমাদের অতবড় পুরনো বাড়িতে অনেক অন্ধকার জায়গা তাই প্রদীপের হিসেব ঠিক থাকতনা ।
    পরদিন কালীপূজো। সকাল বেলায় আগের বছর ধুয়ে মুছে তুলে রাখা ঝুড়ি ভর্তি মাটীর প্রদীপ নামানো হত । তার কদিন আগে থেকে যে যখন সময় পেত পুরনো ছেঁড়া ধুতি দিয়ে সলতে পাকাতে বসে যেত। পূজোরদিন দুপুর থেকেই প্রদীপের ঝুড়ি, গোছা গোছা সলতে আর তেলের টিন নিয়ে প্রদীপ সাজানো হত। সন্ধ্যেবেলা থালার ওপরে প্রদীপ বসিয়ে বাড়ি সাজাতাম আমরা ,হাওয়ায় বার বার প্রদীপ নিভে যেত ।
    রাত্তির বেলা খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের এক দাদা চেম্বার বন্ধ হলে ছোটদের নিয়ে বাজারে আলো দেখাতে বেরত । চোখ বুজলেই দেখতে পাই আমরা দশ /বারটি চ্যাঙা ব্যাঙা চলেছি কলবল করতে করতে। আর অনেক আগে আগে আমাদের দাদা হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে ,রাস্তা ফাঁকা , চারিদিকে প্রদীপ ,মোমবাতি জ্বলছে ।
    আমরা খুব দোল খেলতাম ,কোন বারন ছিলনা ,বড়রাও খেলত নিজেদের দলে । সকালে রঙ খেলা । সব রকম রঙ খেলতাম ,কয়েকটা পেতলের পিচকারি ছিল বাড়িতে ,দোলের আগে সেগুলর ভেতরের পুরনো কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন করে কাপড় প্যাঁচাতাম । বিকেলে আবির খেলা সমবয়সীদের সঙ্গে , বড়দের পায়ে আবির দিয়ে প্রনাম করা। আমাদের এক জ্যাঠতুত দিদি থাকতো আমাদের বাড়ী থেকে খানিক দূরে । ,আমারা ছোড়দি বলতাম । ,বয়সে আমার মায়ের থেকে অনেকটাই বড়। তার ছেলেমেয়েরা আমাদের সমবয়সী বা কিছু বড় । ফুল ফলের খুব সুন্দর বাগান ছিল বাড়িতে , আমদের বাড়ি রঙ খেলার পর আমরা ছোড়দির বাড়ী যেতাম রঙ খেলতে ,ওখানে উঠোন ছিল মাটীর ভেজা উঠোনে পিছলে ধুপ ধাপ পড়তাম । তারপর ওখানেই স্নান এবং মাংস ভাত খাওয়া । এই নিয়ম ছিল ,সবসময় । বাঁদুরে রঙ উঠতে চাইতনা । স্কুলে বকুনি খেতে হত । মধুছন্দা পাল /১৫//১১
  • madhuchhanda paul | 14.96.76.144 | ২৯ অক্টোবর ২০১১ ১২:১৯407202
  • নীনার লেখা খুব সুন্দর ! বিহারের স্মৃতি কিছুতেই ভোলা যায়না ।
  • shrabani | 117.239.15.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৪৭407203
  • -বল তো, তোমার মনে ছিল আমাকে, মনে পড়ত?
    -হ্যাঁ রে, তোর নাহয় হাতির মত মাথা তা বলে আমাদের মগজে কি কিছুই নেই!
    -তাহলে?
    -তাহলে কী?
    -এতদিন কোথায় ছিলাম আমরা, এতগুলো বছর,তুমি আমি?
    -ছিলাম তো, আবার ছিলাম না। কিন্তু সব তোরই মনে আছে আমার কিছু নেই, হতেই পারেনা, এটা দ্যাখ, তোর মনে নেই, আমার আছে।

    -আশুতোষ হলে, কনভেনশন সবে শেষ হয়েছে, আমাকে সবাই গান গাইতে বলল। গান গাওয়ার সুযোগ পেলে তো ছাড়িনা, বাড় খেয়ে উঠে পড়েছি স্টেজে। কী উঙ্কÄল আলোকিত স্টেজ, পরিপূর্ণ হল যাকে বলে না সেই খচাখচ, এদিকে ওদিকে কতজন দাঁড়িয়েও আছে। ব্যস, সব সাহস গেল উবে, আড্ডায় গান গাওয়া আর এইরকম অডিয়েন্সের সামনে গাওয়া, হোকনা চারিদিকে চেনা লোক, তবুও। চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম ভয়ে।

    (....আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে, একদিকে জয় আর একদিকে নয়ন, রাত হয়ে গেছে, বাড়ি কিভাবে যাব তাই নিয়ে কথা হচ্ছে। হঠাৎ দেখি তুমি স্টেজে। কে একটা অ্যানাউন্স করল তুমি নাকি গান করবে। আমার কেমন দম বন্ধ হয়ে এল, পাশে জয় কিছু বলছিল, আমি শুনতে পেলাম না। তোমার জন্য একটা স্টেজভীতি আমার সারা শরীরে চারিয়ে যাচ্ছিল।)

    -গান শুরু করলাম, একটা নেপালী গান, গোর্খা মুক্তি আন্দোলনের ওপর লেখা। কী গাইছিলাম জানিনা, সুর তাল কিছুর খেয়াল নেই, শীতেও ঘেমে নেয়ে একসা।

    (.....আমি একদৃষ্টে তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম। তুমি সিলিং এর দিকে উটমুখ করে গাইছিলে(আজ জানলাম তোমার চোখ বন্ধ ছিল)। আমার মুঠোকরা হাতের চেটো ঘেমে যাচ্ছিল,গরমে শালটাকে খুলে সাইডে ফেললাম। আমার নজর গানের সুরে তোমার গলার ওঠাপড়ার দিকে।)

    -গান শেষ হল। চোখ খুললাম আস্তে আস্তে, সব কেমন ঝাপসা। হাততালির শব্দে একটু একটু করে সব কিছু যখন পরিস্কার হচ্ছে তখন প্রথম চোখ গেল তোর দিকে। দরজার ফ্রেমে নীলশাড়ি পরা তোর ছবিটা যেন ফ্রেম হয়ে গেল চিরদিনের স্মৃতিপটে।

    (....গান শেষ হল, আমি একটা লম্বা শ্বাস নিলাম। তুমি স্টেজে উঠেছ বলে আমার কেন এত ভয় হল ভেবে নিজেই নিজের ওপর কেমন অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম।)

    -সেই থেকে তোর কথা মনে হলে ঐ ছবিটাই ভাসত মনে, কারণ খুঁজিনি, সব কিছুর কি কারণ হয়!

    (.....আমিও তো কারণ খুঁজে পাইনি, ঢাকনাটাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। শুধু মনে আছে সবই তোমার প্রশংসা করছিল খুব হল থেকে বেরোতে বেরোতে, তখন খুশী হয়ে ভেবেছিলাম এমন গান কর তুমি, তোমার যেন একজন মনের মত গান জানা সঙ্গী হয়।)

    -দেখলি, তোর নির্ঘাত মনে নেই?
    -না:, অত কিছু আমার মনে নেই। তুমি মিছেই বল আমার হাতীর মাথা, আসলে বোধহয় মশার মাথা!
  • madhuchhanda paul | 115.117.253.225 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৮:৪০407205
  • আমাদের স্কুল ।

    আমাদের বাড়ীর মেয়েরা প্রায় সবাই-ই শহরের খৃষ্টান মিশনারিদের স্কুলে পড়াশোনা করেছি । একটা উঁচু ঘাসজমির ওপর স্কুল বাড়ী । ঘাসজমির মাঝখান দিয়ে বেশ কিছু সিঁড়ির ধাপ উঠে তবে স্কুলের গেট । তো একদিন সকালে আমাদের এক জ্যাঠতুত দিদি , স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীর হাত ধরে আমি আর আমার ১৯ দিনের ছোট জ্যাঠতুত বোন সেই গেটের ভেতর ঢুকলাম । আট বছর বয়েসে । উদ্যেশ্য ক্লাশ টু তে ভর্তি হওয়া ।অসে সময় বয়স নিয়ে এত কড়াকড়ি ছিলনা । পরীক্ষার পর দেখা গেল দুজনেই অঙ্কে ফেল । তাই ক্লাশ ওয়ান এ ভর্তি হতে হল । স্কুল থেকে বলা হল।অএন্যুয়ালের এর রেসাল্ট ভালো হলে একবারে ক্লাস থ্রী তে তুলে দেওয়া হবে । রেসাল্ট বেরোলে দেখা গেল শুধু ভালো নয় অতি ভালো হয়েছে দুজনেরই । কাজেই ক্লাস থ্রী । একতলা এল শেপের বাড়ী । একপাশে খানিকটা দোতলা । অফিসের কাজকর্মের জন্যে । ঢুকে বাঁ দিকে ফুলের বাগান । নিয়মিত পরিচর্যা করা । উলটোদিকে স্কুলবাড়ী , তার পেছনে মাঠ খেলার । পাঁচিলের ধারে একসারি এসবেস্টাস ছাওয়া ঘর , খুচরো ক্লাসের জন্যে । তার সামনেও বাগান । একটা বিশাল নিমগাছ অনেকটা জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে । আমরা বলতাম নিমতলা । কলকাতা থেকে একজন টিচার এসেছিলেন আমাদের স্কুলে পড়াতে , নিমতলা শুনে হেসেছিলেন , বলেছিলেন - ‘আমরা , কলকাতার লোকেরা নিমতলা বলতে অন্যকিছু বুঝি ।‘’ আমরা বিহারের মানুষ মাঝে সাঝে কলকাতায় আসি নিমতলা ঘাটের নামও শুনিনি । উনিই ব্যখ্যা করে দিয়েছিলেন । স্বাভাবিক ভাবেই বিহারী মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশী সব ক্লাশেই । ভার্নাকুলার পিরিয়ডে আমরা বাংলা ক্লাশ করতে নিমতলায় চলে যেতাম । মাটীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতাম । মিস বসতেন টুলে । হিন্দি ভাষীরা ক্লাশরুমে থাকতো । অন্য সব ক্লাশ একসঙ্গেই হত বাংলা আর হিন্দি মিলিয়ে , ওরাও বুঝত আমরাও । অসুবিধে হতনা ।
    বিশাল বড় হল ছিল একটা ।আয়ানেক্স । সেখানে আমাদের প্রেয়ার হত । স্কুল শুরুর আগে আর স্কুল শেষের পর । প্রেয়ার শুরু হত ঈশ্বর অথবা যীশুর মহিমা বর্ণনা করে আর শেষ হত আমেন দিয়ে । মোটামুটী একই রকম দুবার। অ্যানেক্স এর পর অনেক উঁচু পাঁচিল ওপাশে জেলা স্কুলের মাঠ । ছেলেদের স্কুল ।
    আমরা টিচারদের পদবীর আগে মিস যোগ করে ডাকতাম , যেমন , মিস কবিরাজ , মিস মণ্ডল , মিস তরফদার , মিস হরো ইত্যাদি । খৃষ্টান টিচারেরা সবাই মিস ছিলেন । বাইরে থেকে যারা পড়াতে আসতেন তাঁরা বেশির ভাগই মিসেস । একজন বিদেশী টিচার ছিলেন ,মিস পিকক খুব লম্বা । আমাদের পিয়ানো শেখানোর চেষ্টা করতেন । কত যে স্নেহ পেয়েছি তাঁর কাছে বলতে পারিনা । মিস কবিরাজ দিদিদেরও পড়িয়েছেন , অনেকদিন আছেন স্কুলে । কিছু দোষ করলেই ডান হাত দেখিয়ে বলতেন , ‘এই হাতে তোমার দিদিদেরও পড়িয়েছি । ‘ হাত দিয়ে কিকরে পড়াতেন জানা হয়নি । রেসাল্ট বেরোনোর দিন হেড মিস্ট্রেস নিজে প্রত্যেক ক্লাশে গিয়ে রেসাল্ট পড়ে শোনাতেন । আমার সময় এলেই চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে বলতেন , আরও ভালো করতে হবে । তোমাদের দিদিরা ‘......ইত্যাদি । লজ্জা করত ।
    প্রত্যেক বছর বড়দিনের ছুটির আগে যীশুর জন্মের ঘটনা অভিনয় করা হত । মিস পিকক খৃস্টমাস ক্যরল প্‌র্‌যাকটিস করাতেন পিয়ানোর সঙ্গে । কানে পরিস্কার ভেসে আসে মিস পিককের সরু গলার সঙ্গে আমাদের সমবেত গলার গান । আমরা বলতাম ‘মেষপালক’ বলতাম ‘বনিক’ বলতাম ‘উপঢৌকন’ । তো মেষপালক আর বনিকদের যীশুর জন্যে নিয়ে আসা ‘উপঢৌকন’ তৈরী করতাম আমরা । বেশ জমকালো দেখতে । তারপর সি এম এস স্কুলের হলে অভিনয় হত। ওটাও খৃষ্টান মিশনারীদেরই স্কুল , ছেলেদের জন্যে ।
    আমাদের স্কুলের কাছেই চার্চ । খুব বেশী না হলেও কখন সখন কোন কারনে নিয়ে গিয়েছে স্কুল থেকে । চার্চের মাঠ বেশ বড় সড় তার মাঝখানে চার্চ । দুরেদুরে দুএকটা বড় গাছ । সব মিলিয়ে একটা ছবি যেন ।
    ক্লাশ টেনের মেয়েরা সরস্বতী পুজো করতো । স্কুলের ভেতর পূজো করার অনুমতি ছিলনা । বাইরে কাছাকাছি কোন স্কুলের মেয়ের বাড়ীর বারান্দায় হত পুজো । আমাদের পুজোর পালার সময় এক বন্ধুর বাড়ীর বারান্দা আর বসার ঘর পেলাম । বাড়ী থেকে সে জায়গা অনেকটাই দূর । আমি আর আমার মানিক জোড় বোন আর সকলের মত দুপুর বেলা রিক্সা করে গিয়ে হাজির হলাম ঠাকুর সাজাতে । সঙ্গে সাইকেলে এক জ্যাঠতুত দাদা অনেক আগে আগে । পৌঁছে দিতে আমাদের । যদিও কোনই দরকার ছিলনা , কিন্তু বাড়ীর বড়দের নির্দেশ । আবার সন্ধ্যেবেলা নিতে আসবে । পুজোর ভাসান পর্যন্ত এই ডিউটি ওর । মনে হয়না খুশী হয়ে করতো বলে । অনেক আগে আগে চালিয়ে যেত সাইকেল । আমাদের পুজোরদিন সকাল দশটা নাগাদ একটি পরিচিত গাড়ী এসে রাস্তার উলটো দিকে দাঁড়াল । নামলেন আমাদের শহরের নামকরা এক ডাক্তার বাবু যিনি আবার বিখ্যাত একজন লেখকও । বাঙালি। ওঁর বাগান থেকে ভোররাতে কারা ফুল চুরি করে এনেছে উনি দেখেলেই চিনতে পারবেন , তাঁর বাগানের ফুল কিনা । তাই যেখানে স্কুল কলেজের পূজো হচ্ছে উনি ঘুরে ঘুরে দেখছেন । অবশ্য আমদের দেখে কি মনে হল জানিনা দেখতে এলেননা । পুজো হয়ে যাওয়ার পর , যাদের যাদের বয় ফ্রেন্ড হয়েছে তারা , বন্ধুদের জন্যে স্পেশ্যাল প্রসাদের প্লেট সাজাত । আলাদা করে সরিয়ে রাখত । আমরা খুব উৎসাহিত একবার দেখতে পাবো বন্ধুর বিশেষ জনকে । এই সুযোগে একবার , দুবার তো আসবেই ।
    পুজো মিটে যাওয়ার পর আমাদের রাঙাদি এক ভীষণ কথা বলল । আমাদের পরিচিত একজনের নাম করে জানাল ।অওঁদের আমায় ওঁদের ছেলের জন্যে পছন্দ হয়েছে ।, কথা বলতে চান । মা তখন কলকাতায় এসেছে । মা ফিরলেই কথা হবে । রাঙাদি বয়সে অনেক বড় , খুব মেনে চলি , কিন্তু সেদিন কত কিছু বলেছিলাম । খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল । অসহায় লাগছিল । মনে হচ্ছিল যাদের আমি এত ভালবাসি তারা আমার কোন কথা বুঝছেনা কেন । পরে শুনলাম সবটাই ঠাট্টা । ওঁরা কথা বলতে চেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তক্ষুনি না বলে দেওয়া হয়েছে ।
    এই মোটামুটি মনে পড়লো আমাদের স্কুলের কথা ।
    মধুছন্দা পাল । ৩১/১০/১১
  • Nina | 12.149.39.84 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ২২:৪৩407206
  • শ্রাবণী
    তোমার কলমটা সত্যি যেন কোন এক অচিনপুরের---স্বপ্নে ভরা --জানা-নাজানা ভাষায় কত কি বলে যায়---ঘোর লাগে তাই মনে ---দূরে --কোন দূরে মন ছুটে যায়---ধরতে পারিনা তাকে--ডাকি ওরে আয় আয় রোজকার কাজগুলো যে সব পড়ে আছে !! কিন্তু সে ছোটে তোমার কলমের পিছে--আরও দাও আরও দাও --করে----------
  • Nina | 12.149.39.84 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ২২:৫১407207
  • মধুছন্দা
    বিহারের মাঠে ঘাটের কথা , সেখানের শীতের রোদের আমেজ --নানান স্মৃতি তোমার লেখাগুলোতে নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠে ---কতশত আপনজনেরা যে সেইখানে দাঁড়িয়ে হাতছানি দেয় ---খুব ভাল লাগে তোমার লেখার সঙ্গে সেই দিনগুলোতে ঘুরে বেড়াতে---
    সেইসব বারোয়ারী পূজোমন্ডপ , কিন্তু কি ভিষণ ঘরোয়া পরিবেশ---সেই হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া দিনগুলো---শাড়ী পরে পূজোবাড়ী যাওয়া---চেনা সেই বন্ধুদের দাদাদের কেমন থমকে যাওয়া --মাথায় চাঁটি মারার বদলে সেই অবাক চেয়ে থাকা----হঠাৎ করে চারটে বেশি নারকোলনাড়ু প্রসাদ পেয়ে যাওয়া----কাত কি!!!
    সেই যে আমার সোনা রঙের দিনগুলি---
    খুব ভাল লাগছে তোমার লেখা পড়তে--মন দিয়ে পড়ছি। :-)
  • madhuchhanda paul | 14.96.7.155 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১০:৪২407208
  • নিনা , আমার লেখা তোমার ভালো লাগছে জেনে খুব আনন্দ পেলাম । আমি তো লেখক নই , হয়তো অনেক ভুলচুক হয়ে যায় । সেই দিনগুলো বারবার কড়া নাড়ে মনের দরজার তাই একটু ঘরের ভেতরে আনার চেষ্টা । ভালো থেক ।
  • Manish | 59.90.135.107 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৬:১৫407209
  • মধুছন্দা,শ্রাবনী,নীনা
    এই তিনজনের লেখাই ভালো লেগেছে।
    নীনার কাছে অনুযোগ : অতো ভালো লেখার হাত অথচ দেখো হয় কিপ্টেমি নয় আলসেমির কারনে বেশী লেখেই না।
  • Lama | 117.194.241.64 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ২২:৫৯407210
  • সবার লেখাগুলোই পড়তে খুব ভালো লাগছে- গরমের ছুটির শেষে মামাবাড়ি থেকে ফেরার দিনের মনখারাপের মত- শিরশিরে, ভেজা ভেজা...
  • Nina | 69.141.168.183 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০৪:৫১407211
  • মনিশ :-)
    আরে নারে ভাই--ভান্ডারে জিনিষের অভাব ---কিপ্টেমি নয়---তবে কুঁড়ে একটু আছি---পড়তে বেশি ভাল লাগে--আর এত ভাল ভাল লেখা চারিপাশে ---নিজের আগডুমবাগডুম গুলোর জন্য লজা করে --সত্যি!
    তবে আবার মাঝে মাঝে এত লেখা পায় যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেরিয়েই ছাড়ে :-)

  • madhuchhanda paul | 14.99.225.208 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫০407212
  • আমার এই সাধারন লেখা যাদের ভালো লেগেছে , নিজের গুনেই লেগেছে । আমি শুধু আমার সাধাসিধে ছোটবেলার কথা একটু মনে করি ।
  • post paster | 72.83.90.203 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০২:৩১407213
  • name:pipimail:country:

    IPAddress:129.74.191.152Date:10Nov2011 -- 01:30AM

    সান্দা,
    মেদিনীপুরের লোককে ঠিক ঘটির দলে ফেলিস না ভাই। ওরা ঘটি বাঙালের উর্দ্ধে। আর ইয়ে, ভাবিস না নিজের কোলে ঝোল টানছি তবে মেদিনীপুরের লোকেদের রান্নার তার আলাদা। এস্পেশ্যালি টক রান্নায়। আর যা যা লিখলি ঐ ঐ সব এককালে প্রায় দিনই বাড়িতে রান্না হত। কাঁকড়া অবশ্য রোজ হত না। হত কাকার মক্কেলরা যখন মাটির জালা ভত্তি করে কাঁকড়া দিয়ে যেত। তবে কালেভদ্রে বাড়ির পুকুরেই কাঁকড়া ধরা পড়ত। আর পুকুরে জাল ফেলে প্রতিদিনই মাছ ধরে তাই রান্না হত। তিমি ঠিক বলেছে পুকুরের মাছে অনেক সময় একটা পাঁক গন্ধ থাকে তবে সেটা সাধারণত গরমকালে যখন পুকুরের জল শুকিয়ে যায় তখন অথবা যে সব পুকুরের পাঁক পরিষ্কার করা হয় না। চোখ বুজলেই শুনতে পাই, রান্নাঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে জ্যেঠিমা কাউকে উদ্দেশ্য না করেই গজগজ করছে, বেলা হয়ে গেল এখনো মাছ এল না। থাক তবে, ছেলেপুলেরা ভাতে ভাত খেয়েই ইস্কুলে যাক। তারপরে দেখা যেত কাকা, জ্যেঠা, বাড়ির কাজের লোক, মুনিষ অথবা রাবণের গুষ্টির কেউ না কেউ গুটিগুটি বেরিয়ে ধুতি ছেড়ে গামছ পরে পৈতে গুটিয়ে মাছধরা জাল কাঁধে ফেলে চলেছে পুকুরের দিকে। পিছন পিছন খালুই হাতে চ্যাংব্যাংদের কেউ না কেউ। বলা বাহুল্য মাছ না খেলেও মাছ ধরায় আমার উৎসাহ ছিল বাকীদের ফেল করিয়ে দেবার মত:-) অতএব ঐ দলে যে আমি থাকব বলাই বাহুল্য। প্রতিবার জাল টানার সময় সব্বাই একদম চুপ করে যেত, কি হয়, কি হয় ভাব। তারপরে জল থেকে জাল টেনে ডাঙায় রাখা মাত্র ঘিরে ধরতাম কি মাছ উঠল দেখার জন্য। চারামাছ ফের জলে ছেড়ে দেওয়া হত। এই কাজের ভার পেয়ে ভারী খুশি হতম। ছড়া কাটতাম জলের প্রাণী জলে যাক, তোরা সবাই সুখে থাক। তারপরে মাছগুলোকে ঠাস ঠাস করে জলে ছুঁড়ে ফেলতাম। ওদের নাকি অমনি করেই জলে ফেলতে হয়। টুকিটাকা দিয়ে খালুই ভরে সবথেকে বড় মাছটা হাতে ধরে রান্নাঘরের দাওয়ায় ধড়াস করে এনে ফেলা হত। সাথে সাথে আশপাশ থেকে পেল্লাই আঁশবটি হাতে ঝি বৌদের দল বেরিয়ে আসত। আর আসত মিনি বেড়ালের দল মিউ মিউ করে ল্যাজ উঁচিয়ে। রান্নাঘরে দুখানা তিনমুখো উনুন হা হা করে সবসময় জ্বলত। ঠাকুমা বলত বৈশ্বানর:-) আঁচ খালি গেলে মহা হাঁকাহাঁকি করত ঠাকুমা। তাই কিছু না হোক দুধ ভত্তি এক মস্তা লোহার কড়াই আঁচে চাপিয়ে রাখা হত। অবশ্য গনগনানো আঁচে দুধের কড়াই বিশেষ বসানো হত না, সে হত ধিমে আঁচে। সেই দুধের জ্বালে মোটা মোটা সর পড়ত আর ঠাকুমা, কাকীমারা সেই সর তুলে তুলে বোতলে জমাত ঘি বানাবে বলে। কখনো কখনো পুরু সরে মোটা দানার চিনি লেপে ভাঁজ করে হাত রুটি দিয়ে কুচোগুলোকে খাওয়ানোর চেষ্টা হত। দুধে সর থাকলে সব্বাই খুব ঘ্যানঘ্যান করতাম কিন্তু এই বেলায় কেউ টুঁ করতাম না। নি:শব্দে কাড়াকাড়ি করে ও জিনিস পলক ফেলার আগে উঠে যেত। আমি অবশ্য এমনি এমনি খেতাম, রুটি গুলো খাওয়াতাম আমার প্রিয় গাই বাছুরকে।
    খেতে বসে দু তিনরকম মাছের পদ - ভাজা, ঝোল/ঝাল, টক। ইদিকে মাছ ভালবাসি না। দু তিন পদ তরকারী হতই, তাই দিয়েই পরমানন্দে ভাত উদরস্থ করতাম, শেষটায় দেখা যেত মাছ দিয়ে খাবার জন্য ভাত অবশিষ্ট নেই:-) চোঁ চোঁ করে টকের বাটি খালি করে দিতাম, টকের মাছের ভাগ পেত বিড়ালের দল। রোজ রোজ এই দেখে মা কাকীমার দল খেপে দিয়ে দিল আমার বরাদ্দ ডাল তরকারী বন্ধ করে। ভাতের পাতে শুধু মাছ আর মাছ। আর আমার মড়াকান্না দেখে কে! শেষটায় উদ্ধারকর্তা হয়ে আসরে নামত উকিল কাকা। ওকালতীর চোতে কাকীমারা পালাবার পথ পেত না। এক মা'ই জা একটু লড়ে যেত দেওরের সাথে। শেষমেষ রফাসূত্র বেরোল - মাছভাজার হাত থেকে পরিত্রাণ তবে ঝোলে পেটির মাছটি খেতেই হবে আর টকে আধখানা:-)
    দিনগুলো এখনো চোখের উপরে ভাসে অথচ চোখ খুললে দেখি কখন কোন তালে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে তারা।
    ধুস আকডুম বাকডুম কিসব বকছি।

  • post paster | 72.83.90.203 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০২:৩২407214
  • name:pipimail:country:

    IPAddress:129.74.191.152Date:10Nov2011 -- 02:07AM

    জাল ফেলাটা আঁক কষার মতন। প্রথমে তো পুকুরের ধার বরাবর একপাক দিতে হবে, চোখ থাকবে জলের দিকে। কোথায় মাছে বুড়বুড়ি কাটছে, বুড়বুড়ির ধরণ দেখে মাছ চিনতে হবে, কোথায় গাছের ছায়া জলের উপর, সেইখানে কোন কোন মাছের থাকার সম্ভাবনা বেশি, শেষ কবে মাছের চারা ছাড়া হয়েছিল তারা এখন কোন সাইজে পৌঁছেছে এইসব হিসেব নিকেষ খুব সতর্ক হয়ে কত্তে হবে। ভুলচুক হলে মাছ পালাবে হাতে থাকবে জাল! তাপ্পরে হাঁটুর উপরে গামছা তুলে কষি এঁটে হাঁটুজলে গিয়ে দাঁড়াও। ক্যালোরব্যালোর করা চ্যাংবাং গুলোকে একটা পেল্লাই ধমক দাও। গোল করলে মাছ পালায় জানো না? তার আগে জালের কাঠি সরিয়ে সরিয়ে জালটাকে ঠিক করে নিতে হবে (বড় ঘের জাল)। তারপরেতে কাঁধের উপর জালটাকে ব্যালান্স করে ত্রিভঙমুরারী মুদ্রায় হাতের উপর কান্নিক মেরে জালটাকে রেখে তিনবার দোলাতে হবে। তারপরে ঝপ! এই থ্রোটাই আসল। হিসেবের ইদিক উদিক হলে জাল পড়বে অন্যদিকে আর মাছ পালাবে আরেকদিকে। তারপর খানিক্ষণ একদম চুপ। পিপিলীকা কাঁদিয়া যায় পাতে। এরপরে হল ওস্তাদের মার। জাল টানা। এমনভাবে যেন বেচারা মাছগুলো বুঝতেই না পরে যে তারা আসলে বন্দী! একটু করে জালের দড়ি গুটূ আর একটু করে টান। একটু টান, একটু গুটানো। অবশেষে .... :-)

  • post paster | 72.83.90.203 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০২:৩৩407216
  • name:sayanmail:country:

    IPAddress:115.241.52.90Date:10Nov2011 -- 02:17AM

    পিপির লেখাটাকে কমপ্লিমেন্ট দেবার মত ভাষা আমার নাই। তবে পিপি এমন আগডুম-বাগডুম-ঘোড়াডুম লিখলে মাছ নিয়ে প্রতিদিন আলোচনায় রাজী। :-)

    ফুড়ুৎ করে উড়ে যাওয়া দিন, একটু চিৎ সাঁতার কেটে উল্টোদিকে গেলেই ফিরে পাই, বর্ণ-গন্ধ সমেত।
    মায়েরা আট বোন। মা সবচে বড়ো। একমাত্র ছোটমাসীর তখনও বিয়ে হয়নি। মামাবাড়িতে আমাদের গ্রুপের উইচিংড়েগুলোর সঙ্গেই তার গলায় গলায় দেখে দাদু আমাদের নাম দিল আঠা-কাঠি। বাড়ির দুর্গাপুজো, দশমীর মাছভাতের বাজারে গৌর জেলে'কে ডাকা হয়েছে। পুকুরে জাল পড়বে। সাহেববাবু হিসেবে আমার উচ্চতর খাতির ইত্যাদি। পুকুরটা প্রতি বর্ষার আগে নাকি কাটানো হয়। প্রতিষ্ঠিত পুকুর। মাঝপুকুরে জলের নীচে শুনি নাকি যক্ষ, ত্রিশূল ইত্যাদি আছে ও সেই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। তো, জেলেরা জালটা খুলে পুকুরের একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত সাঁতরে টেনে নিয়ে আসতো। জালটা গুটিয়ে যত কাছে আনা হচ্ছে, তত জলের নীচে ঝাটাপটি। কয়েকটা স্মার্ট নিমো লাফ দিয়ে ওপাশে পালাতো। বড়োগুলৈ ধরা পড়তো বেশী। বেশীরভাগ রুই, কালবোস আর চিংড়ি। সেই প্রথম একটা চিংড়ি দেখেছিলাম, তিন কিলোর একটু বেশী! কাঁকড়া ইত্যাদি রান্না হত না মামাবাড়িতে। দাদুদের দিকে পাঁচ শরীক। মাছের দাবী সব্বার। ভাগাভাগির সময় দাদুর মাতব্বরি দেখেছি। ভাগের মাছ বুঝে নিয়ে এনে উঠোনে ফেলা হত তারপর আঁশবঁটি ইত্যাদি বীব্‌হ্‌ৎসরস। আমি কিছু রূপোলি চকচকে লম্বাটে মাছকে (বাঁশপাতা মাছ!) সবার নজর এড়িয়ে জলে ছেড়ে দিতে থাকায় গৌর জেলে আমাদে ধমক-ধামক ইত্যাদি দিতে দাদু রক্ষা করে এবং জেলের চোখ ছানাবড়া ক'রে আমায় সঙ্‌গ্‌ৎ দিয়ে কিছু মাঝারি চিংড়িও ছেড়ে দেয় (পরে নাকি সেসবের দাম চুকিয়েছিল জেলেকে - সো লং ফর দাদু দ্য এক্স-হীরো! :-))। একটা আমবাগান ছিল, তার কোণে পেয়ারা গাছ (পেয়ারাগুলো টিয়াতেই খেতো, আধখাওয়াগুলো আমাদের মাথায় ফেলতো) , তার পাশে মাটি খুঁড়ে উনুন, তাইতে রান্না। (এখনও সেই ভিতর-লাল পাকা পেয়ারাগুলো মাথায় ঘুরছে। হতচ্ছাড়া টিয়াপাখীগুলো। ছোড়দি'ভাই পেয়ারার জেলি বানাতে পারতো খুব ভালো) মাঝের ঝাল ঝোল কালিয়া সন্তর্পণে এড়িয়ে চিংড়ির কোর্মার বাটিতে হাত দিতাম, মা-মাসী আড়চোখে দেখে মুখটিপে হাসতো, ছোটো কুচি করে কাটা ভাজা ভাজা নারকোলের টুকরোগুলির সুবাস বড়ৈ মোলায়েম, একটু ভাতে মেখে খেলেই যথারীতি পেট ভর্তি। আসব পেতে খেতে বসতাম বাড়িতে সবাই। আমার জন্য প্রতিবার দেখেছি নতুন আসন। উলের কীসব করা। পাশে ফ্রীল করা। যত বলি, আমার ঠান্ডা মেঝেতে বসতেই বেশী পছন্দ, কে শোনে সেই কথা। আমার আর ছোটমাসীর খাওয়া শেষ, এ ওর মুখ দেখছি আর কিছু আসে কিনা, দই এলো। মুখ ভার। উঠে সূজা রান্নাঘরে। সেখানে দিদুন। বলে, সাহেববাবুর কী চাই? নির্লজ্জ হাত দেখাই রসমালাইয়ের বাটির দিকে। কীসুন্দর একে একে অদৃশ্য হয় সেগুলো। পিছনে দেখি লাইন দিয়ে ন'মাসীর মেয়ে শিল্পা, লাজুক মুখে, সেও পায়। এবার গন্তব্য বাগানের অন্যধারটি, স্টিল আনএক্সপ্লোরড! ওখানে গন্ধরাজ ফুলের গাছ, একখানি কামিনী ফুলের গাছও, আর পাতকুঁয়ো। কপিকলে হেঁইয়ো টেনে তুলি জল, এমনি এমনি। কী ঠান্ডা। ওর নীচে একটি কচ্ছপ থাকে। মাঝে মাঝে লিফে্‌ট চড়ে সেও উঠে আসে। তাকে আবার বালতিতে করেই নামিয়ে দেওয়া হয়। হাঁটুময় ধুলোমাখা হলে রোয়াকে এসে বসি। ভেতরের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি তখনও মাছের মাথা ইত্যাদি নিয়ে রকমারি সুরে পেড়াপিড়ী চলছে। ইঁ:। এরপর বেরোয় লুডো, চাইনীজ চেকারের বোর্ড। কয়েক দান খুনসুটির পর মায়েদের খাওয়া শেষ মালুম হয় থালাবাসনের ঝনঝনানিতে আর উচ্চকিত হাসির রোলে। কিছু অত্যুৎসাহী "দেখি দেখি কী খেলছিস' বলে এসে ঠেলেঠুলে বসে পড়ে। বাকিরা একটু ঘুম। দশমীর পুজো কখন শেষ। সন্ধ্যেবেলা আরতি আর সিঁদুর। তারপর বিসর্জন। চকলেটবোমগুলো ফাটাতে ফাটাতে বাড়ি ফেরা। ভাবতাম, পূজো শেষ। আবার ইস্কুল। আবার বন্ধুবান্ধব। এখন টেরও পাইনা কখন কী হয়! টিভি আছে। মা বলে, আজ বেলুড় মঠের পুজো দেখিস সকাল বেলা। তাই সই। কোথাও তো এখনও ওরকমই সবকিছু, হইহুল্লোড়, হুটোপাটি। আমরা স্মৃতিতে আছি। মাছেতেও। :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন