চিকিৎসক পেটানো, গোটা ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক মোড়ে ঘুরিয়ে নিজেদের দায় মোচন অসম সরকারের। ... ...
গত ১৫/৫/২০২১ অর্থাৎ ঈদের ঠিক পরেরদিন শান্তিপুর থানার অর্ন্তগত বেলতলার বাবলাবন গ্রামে স্থানীয় শনি মন্দিরের গ্রিলে গোমাংস ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তা অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতার ও মারপিটের ঘটনাও ঘটে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল ও ফাটায়। এলাকায় এখন ও উত্তেজনা রয়েছে । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা ও শান্তিপুর জন উদ্যোগের পক্ষ থেকে ১৯/৫/২০২১ তারিখে একটি তথ্যানুসন্ধান করা হয়। ... ...
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের তাহলে কী হবে? অ্যাবানডানড? যারা এই দুঃসময়েও পার্টিকে ভোট দিল, পাশে দাঁড়াল, তারা অপাংক্তেয়? তা অবশ্যই নয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক অভিমুখ অবশ্যই গরীব, মেহনতি মানুষ - কৃষক, শ্রমশিল্পী - কিন্তু মধ্যবিত্ত মানুষ তার বাইরে পড়ে না। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার আসলে নামেই মধ্যবিত্ত, শ্রেণীগতভাবে তাদের অবস্থান নিম্নবিত্তের থেকে খুব একটা ভাল নয় - এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" না হলে এই মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নটাও, আবারও, প্রশ্নটা যত কঠিন, উত্তরটা তত নয়। বৃহৎ শিল্প মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ায় বলে যে মিথ প্রচলিত আছে, সেই মিথ বার্স্টিং করার সদিচ্ছের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর। ... ...
এবারের ভোট শুধুমাত্র পার্টি, দলীয় কর্মী, সমর্থক আর কিছু সুবিধেবাদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এবারের ভোটে বিপুল ভাবে সামিল হয়ে পড়েছিল সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ।বিজেপির মত আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে রুখে দেওয়ার প্রয়োজনটা অনুভূত হয়েছে সেই সিভিল সোসাইটির অন্দর থেকেই। ... ...
যেটা চিন্তার সেটা হলো এই দর্শন, এই রাজনীতি। ইরাক যুদ্ধের সময় বুশ সিন্ড্রোম বলে কুখ্যাত হয়েছিলো যে উক্তিটি – “যদি তুমি আমার বন্ধু না হও, তবে তুমি আমার শত্রু”। এক সাম্যাজ্যবাদীর যে দর্শন মানায়, তাতে যদি বামপন্থী বলে দাবী করা কেউ আস্থা রাখে, তবে বুঝতে হবে সমস্যা গভীরে। এ দর্শন সাম্রাজ্যবাদ তথা ফ্যাসীবাদের দর্শন, যে তার মদমত্ত অহংকারে বন্ধু চিনতে ভুল করে, বা বলা ভালো বন্ধু চিনতে অস্বীকার করে। এ দর্শন বাম বলে কথিত পরিসরে জোরেশোরে মান্যতা পাচ্ছে মানে এ রাজ্যে বিজেপি ভোটে যতই হারুক, সে তার “কার্বন ফুটপ্রিন্ট” ছেড়ে গেছে। আজ না হলে তা বিষবৃক্ষ হয়ে ওঠার আগেই তাকে নির্মূল করে ফেলার কাজে সচেষ্ট হতে হবে। ... ...
অতএব পেনসিল কী বলে দেখা যাক। পেনসিলের কাজ হিসাব করা - সেই কারণে সাট্টার হিসাবরক্ষককে পেনসিলার বলা হয়। তা পশ্চিমবঙ্গে যে সাট্টা খেলাটা হল, তার হিসাব তাহলে কী দাঁড়াল? নাটশেলে - ১। তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সির প্রেডিকশন তুচ্ছ করে বিপুল ভোটে জয়ী; ২। বিজেপি প্রবলভাবে পরাজিত হয়েও প্রধান বিরোধী শক্তি, বস্তুত একমাত্র বিরোধী শক্তি (বিধানসভায়); ৩। বামেরা, সিপিএম এবং জোটসঙ্গীরা আরও একবার প্রত্যাখ্যাত - এবারে সম্পূর্ণভাবে। অঙ্ক সহজ এবং ম্যান্ডেট এতটাই স্পষ্ট যে মেনে না নিয়ে আমার মত ঘোর সিপিএম সমর্থকেরও উপায় নেই। ... ...
সরকারের দায়িত্বহীনতায় এখনো যদি ধর্মীয় দলাদলির উর্ধ্বে উঠে প্রশ্ন না তোলা হয় নাগরিক সমাজ থেকে, সামনে দুঃসহ দিন অপেক্ষা করছে। বেঁচে থাকার তাগিদে সরকারকে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বাধ্য করতে হবে। এভাবে নাগরিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কোনো নির্বাচিত সরকারের নেই। ... ...
রাম রাজনীতির উত্থানের পেছনে বাম ভোটের ভূমিকা ... ...
এখন কি হেফাজতের নেতারা খুশি। কারণ তারা তীব্র আন্দোলন তৈরি করেছে। মানুষ মরেছে, পুরো দুনিয়া দেখেছে মোদি আমাদের দেশে কত অজনপ্রিয়, মানুষ কত তীব্র ভাবে মোদির সফর ত্যাগ করেছে।পুলিসের ভূমিকায় তাদের এই কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন? এর চেয়ে বড় প্রচার তো আর সম্ভব না, তাই না? পুলিস যদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকত, আপনারাও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে তো এমন দৃশ্য পেত না কেউ, তাই না? হেফাজত বা আন্দোলনকারীরা যা চেয়েছে তা পেয়েছে, এখন কী হবে? যে পরিবার গুলো তাদের প্রিয়জন হারিয়েছে তাদেরকে কি হেফাজতের নেতারা গিয়ে বলবে আপনার সন্তানের, আপনার প্রিয়জনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের আন্দোলন পুরো দুনিয়ার নজরে এসেছে? এবং এতে করে ওই পরিবারের সবার মনে শান্তি নেমে আসবে? সাথে এই নেতারা কি এটাও বলবে যে এই আন্দোলন আসলে কোন উপকারে আসে নাই। যে ঘটনার জন্য এই প্রতিবাদ তার উপরে খুব একটা প্রভাব পড়বে না! বরং এই দেশে কত উগ্র ধর্মালম্বীরা বাস করে এইটা প্রমাণ করে মোদি আরও বেশি করে সাম্প্রদায়িকতার প্রচার ও প্রসার করে যাবে! এমন কী এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ফলাফলেও পার্থক্য তৈরি হতে পারে! এই খবরে নিশ্চয়ই নিহতের আত্মা শান্তি পাবে? ... ...
নন্দীগ্রামে কী হয়েছিল, সবাই জানি। কেন হয়েছিল, সেটা আমার কাছে আজও পরিষ্কার নয়। অধিকারীদের খাস তালুকে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এতবড় তাণ্ডব চালিয়েছিল কোন মোটিভে? জমি দখল? অথচ তার আগেই সরকারী ঘোষণা হয়ে গেছে যে নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব হচ্ছে না, সেজ হচ্ছে না? লক্ষণ- শিশিরের যুদ্ধ? ওইরকম সময়ে, যখন গোটা বাংলা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের দিকে তাকিয়ে টানটান বসে আছে? আমার অঙ্ক মিলছে না। এটা রাজনৈতিক হারাকিরি, সেটা বোঝার জন্য থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লাগার কথা নয়। কিছুই পাবার ছিল না, হারাবার ছিল অনেক (যদি সবটা তখনো না বোঝাও গিয়ে থাকে) - তবুও এই কাণ্ড? এই স্কেলে? ... ...
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ। ইংরেজ আমল। 1854 সালের বড়ি বন্দর থেকে থানে পরীক্ষামূলক ট্রেনের পরে ট্রেন লাইন পাতা হচ্ছে দেশের দিকবিদিকে। 1870 সালে পাতা হয়েছে হাওড়া এলাহাবাদ মুম্বাই লাইন। জুড়ে গেছে ভারতের দুই প্রান্ত। সেই সময়ে কোলহাপুর থেকে কলকাতায় বদলী হয়ে এলেন পোস্টমাস্টার গোপাল বিনায়ক জোশী। চৌঠা এপ্রিল। 1881। সঙ্গে ষোল বছরের বৌ। আনন্দী। সে বছরই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়তে চেয়ে আবেদন করলেন দুটি কন্যা। ডি আবরু আর অবলা বোস। অনুমতি না পেয়ে তারা চলে গেলেন মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে। মেয়েদের জন্য তারা দরজা খুলেছে 1875 সালে। আমাদের গল্পের আরেক কন্যা কাদম্বিনী তখন বেথুনের বি এ ক্লাসের ছাত্রী। অঙ্ক নিয়ে লড়াই চলছে। কে বলেছে মেয়েরা অঙ্ক পারে না? ... ...
মনে করা যাক আজ থেকে ৫০০ বা ১০০০ বছর সেই সময়ের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় পরিস্থিতিতে যে নিয়ম তৈরি হয়েছিল তা আজকের বহু বহুগুণ বদলে যাওয়া সমাজে কেন মেনে চলতে হবে সে প্রশ্ন তোলা বা তা নিয়ে তর্ক করাটাও অনিয়মের মধ্যে পড়ে। ক্লাস টুর বাচ্চাটার গল্প থেকে একটু সরে আসা হয়েছে, তার কথাও এখানেই শেষ হতেই পারত, তবে কিনা এটা তো ঠিক গল্প নয়, তাই একটা "তার পর" রয়েছে। তবে আপাততঃ ওই শিশুর ছোট্ট জীবনে যে নতুন নিয়মটা যোগ হল তা হচ্ছে প্রশ্ন করতে নেই। আর বৃহত্তর সমাজে এরই অনুসিদ্ধান্ত হল প্রশ্ন করতে দিতে নেই। ... ...
একাল সেকালের জগা খিচুড়ি ... ...
তথাগতবাবু এবং তিওয়ারিজির এইসব কাজকর্ম, বলাবাহুল্য, পাহাড়প্রতিম মূর্খামি ছাড়া আর কিচ্ছু না। তাঁরা জানেনই না, বিজেপি এবং আরএসএস তো হিন্দুত্বকে আদৌ কোনো ধর্ম মনে করেনা। সে কথা বহুবার সজোরে বলাও হয়েছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত স্বয়ং বলেছেন, হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়, একটি জীবনচর্যা। অর্থাৎ জীবন যাপনের পদ্ধতি। যা আদৌ ধর্মই নয়, তাতে আঘাত করলে ধর্মীয় ভাবাবেগে কীকরে আঘাত করা হয়, মাননীয় তথাগত বা তরুণজ্যোতি কি তা বলতে পারেন? আরএসএস কী মনে করে, তাঁরা কি সেসবের ধার ধারেননা? নাকি আদৌ জানেনই না? ... ...
১৯৫৬ সালের কথা। বাংলা-বিহারকে জুড়ে দিয়ে পূর্বপ্রদেশ নামক একটি রাজ্য তৈরি করার প্রস্তাব আনল তৎকালীন রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়। বাংলা ভাগের সর্বনাশ করার পর, পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দি বলয়ের অংশ বানিয়ে ফেলার চেষ্টার সেই শুরু। সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন, ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৫৬, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণ সিংহ, এক যৌথ বিবৃতিতে এই সংযুক্তির প্রস্তাবকে সমর্থন করলেন। সর্বশক্তিমান কংগ্রেস হাইকম্যান্ড প্রস্তাবে শিলমোহর দিল। এ প্রস্তাব কার্যকরী হলে বাঙালিজাতির বিপর্যয়ের ষোলকলা পূর্ণ হত, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তখনও বিহার টুকরো হয়নি, চার কোটি বিহারবাসীর সঙ্গে, আড়াই কোটি বাঙালিকে যোগ করলে নতুন রাজ্যে বাঙালিরা সংখ্যালঘু হতেন। বাঙালিরা সব দখল করে নেবে, বিহারবাসীদের এই আতঙ্কের কথা তখনই শোনা যাচ্ছিল, বছর-বছর নিশ্চয়ই বাড়ত। তার উপর পূর্ব বাংলা থেকে আসছিলেন অসংখ্য উদ্বাস্তু। দেশভাগের দায় তাঁদের নয়, কিন্তু দায়িত্ব পুরোটাই নিতে হচ্ছিল। হিন্দুদের পরিত্রাতারা তখন কাঁথাকম্বল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। এই অবস্থায় আরেকটা আসাম তৈরির ছক একদম পাকা ছিল, যেখানে ভূমিপুত্রদের আতঙ্কের দোহাই দিয়ে দশকের পর দশক ধরে বাঙালি খেদানো চলবে এবং বছর পঞ্চাশ-ষাট পরে খানিক গণহত্যা, আর তারপর সর্বদলসম্মত এন-আর-সি করে পাকাপোক্তভাবেই খেদিয়ে দেওয়া হবে। ... ...
এই মধ্যবিত্ত থেকে ক্রমশঃ তলিয়ে যেতে থাকা মানুষগুলোকে না রিপাব্লিকান, না ডেমোক্র্যাট - কোন পলিটিকাল এস্ট্যাব্লশমেন্টই নিজেদের ভাবেনি। এর সঙ্গে আর একটা জিনিস বুঝতে হবে। অ্যামেরিকানরা ধর্মভিরু লোক। তারা চার্চে যায়। তাদের সবাই যে ইভেঞ্জেলিকাল তা নয়, কিন্তু বহু অংশই। আবার তারা ইউনিয়নেও চাঁদা দেয়। এরাই সুইং ভোটার। এদের ইভেঞ্জেলিকাল টাল্লি দেখে ডেমোক্র্যাটরা ধরে নেয় এর রিপাব্লিকানদের ভোটার। আবার রিপাব্লিকানরা ধরে নেয় এরা তো ঘরের লোক, ভোট দেবেই। এদের নিয়ে ভাবার কিছু নেই। ঠিক সময়ে প্রো-লাইফের কলকাঠি নাড়লেই হবে। ... ...
ছকটা সহজ, সেই কারণেই এই ছক ভাঙাটা খুব কঠিন। বিজেপি কোন গোপন তাস আর খেলছে না। তারা সরাসরি আমাদের ভিতরের লুকানো ফ্যাসিস্ট প্রবৃত্তিকে বাইরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের ভিতরের শয়তানকে জল বাতাস দিয়ে জাগিয়ে তুলছে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? লড়াইটা কিন্তু আমাদের নিজেদের সঙ্গেই ... ...