[ তখন ছেলেটি প্রস্তুত হচ্ছে নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হবে বলে। সেসবের জন্যে এখানে ওর কোচিং ক্লাস শুরু হয়। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন অলোক দেখে যে ছেলে কোচিং থেকে আগেভাগেই বাড়ি চলে আসে জ্বর আর হাত-পায়ে ব্যথার কারণে। হাত আর পা ফুলে ওঠায় স্থানীয় ডাক্তারবাবুদের শরণাপন্ন হতেই হয়। দুতিনবার ডাক্তার দেখানোর পরেও জ্বর আর কমে না ছেলের। ফোলাটাও বাড়তেই থাকে। এরমধ্যে রাজপুর অঞ্চলের এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি দেখেবুঝে স্টেরয়েড দিতে শুরু করেন।] ... ...
অতএব ততদিনে “রাজা মানে রাজাই, তাঁর আবার বর্ণ বিচারের প্রয়োজন কি?” এমন ধারণা চলে এসেছে। এটাই হিন্দু ধর্মের লক্ষণ - হিন্দু সমাজে বর্ণভেদ তখনও ছিল, আজও আছে, কিন্তু রাজা, রাষ্ট্রীয় প্রধান, উচ্চবিত্ত এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বর্ণ বিচার করবে কোন নির্বোধ? ... ...
[ সেই চুরাশি’র ডিসেম্বরের সকাল নটায় উঠেছিলাম করোমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাধারণ স্লিপার ক্লাস এস থ্রি-তেই। হারাধনের দশটি ছেলেমেয়ে। মাঝের স্লিপারগুলোর ভাঁজ খোলা হতো রাতের বেলায়। অবরে সবরে দুপুরের ভাতঘুমের জন্যে লাঞ্চের পরেও। ওঙ্গলে—বিজয়ওয়ারা জং—ইলুরু পেরিয়ে সাঁইসাঁই ছুটে চলা করোমণ্ডল এক্সপ্রেসের পরবর্তি স্টপেজ রাজামুন্দ্রী আসবো আসবো করছে। প্রায় বিকেল হয় হয়। হঠাৎ আমার মা-র অস্বস্তি শুরু। বুকজ্বালা দিয়ে শুরু হয়ে চোখ উলটে প্রায় যায় যায় অবস্থা ! ] ... ...
অতএব দেখা যাচ্ছে, ভগবান যিশুর ভারতবাস যথেষ্ট ঘটনাবহুল। ইজরায়েলের আগেই, তিনি ধর্মপ্রচারের সূচনা করেছিলেন এই ভারতেই, অন্ততঃ বৈশ্য এবং শূদ্র বর্ণের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে। যদিও তার ফল হয়েছিল মারাত্মক। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে যাওয়াতে তাঁর এদেশেও প্রাণনাশের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর নিজের দেশেই হোক অথবা ভারতে, সব দেশেই পুরোহিত সম্প্রদায় এবং রাজন্যবর্গদের চরিত্র যে একই, ধার্মিক ভারতে এসে অন্ততঃ এটুকু স্পষ্ট উপলব্ধি তাঁর হয়েছিল। ... ...
পথ চলার বিবরণ ... ...
আজ থেকে মাত্র কয়েকশ’ বছর আগে (১৭৫৬-৫৭ সি.ই.), নবাব সিরাজদ্দৌলাকে সরিয়ে ক্লাইভ ও তাঁর অনুগত মিরজাফরকে সিংহাসনে বসাতে বণিক মহতাব চাঁদ ও স্বরূপ চাঁদের (ইতিহাসে যাঁরা “জগৎ শেঠ” (Banker of the World) উপাধিতে বিখ্যাত) ভূমিকা এবং তাঁদের বিপুল অর্থব্যয়ের হিসেব জানলে চমকে উঠতে হয়। অতএব রাজাকে রাজা বানিয়ে তুলতে (king-maker) বণিকসম্প্রদায়ের প্রভাব আজও যেমন আছে, সে সময়েও ছিল – এমন অনুমান করাই যায়। ... ...
[ বাচ্চা মেয়েটি তখন সদ্যই সন্তানসম্ভাবা। মেয়েটির গোটা শরীর জুড়ে শুরু হ’ল অসহ্য ব্যথা আর যন্ত্রণা। এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে পারে না সে এমন প্রলয়ঙ্করী ব্যথা। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার ব্যানার্জি, মুখার্জি, পাল, চৌধুরী ইত্যাদি নামী নামী ডাক্তারবাবুদের চেম্বারে ছুটোছুটি শুরু হ’ল। কিন্তু ব্যথা আর কমেই না। বরং অযথা ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে খেয়ে সে মেয়ে প্রায় নিস্তেজ। কিছুদিনের মধ্যেই বিছানা হ’ল তার আশ্রয়।] ... ...
চেনা মানুষ অচেনা গল্প ... ...
তাঁর নির্দেশের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ, অতএব তিনি মাগধী প্রাকৃত এবং আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষাই ব্যবহার করেছিলেন তাঁর নির্দেশগুলিতে। এর অপরিসীম গুরুত্ব বুঝে সংস্কৃতর পাশাপাশি গড়ে উঠতে লাগল প্রতিটি অঞ্চলের ভাষা এবং তাদের নিজস্ব লিপি। অর্থাৎ আজ আমি বাংলাভাষায় এই যে লেখাটি লিখছি এবং আপনি যে সেটি পড়ছেন, তার পিছনে সম্রাট অশোকের অসাধারণ এই অবদান স্বীকার করে আমরা যেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় প্রণত থাকি। ... ...
[ কাঠ্ঠোকরা পাখীর জলে ছোঁ মারার মতো কেড়ে নিলেন কাগজখানা ক্যান্টিন ম্যানেজারের হাত থেকে। দেখলেন কি লেখা আছে তাতে ! এরপরে অর্ডার বেরোলো, - ‘আমি বসে আছি এখানেই। সকালের চা, ব্রেকফাস্ট, তারপরের ফলের রস আর আজকের নন-ভেজ লাঞ্চ এক্ষুনি আনান এখানে’ ইয়েসো ম্যাম ইয়েসো ম্যাম করতে করতেই ক্যান্টিন ম্যানেজার প্রায় পালাতে পারলে বাঁচেন। এর মধ্যে পেশেন্ট বলে উঠল ‘ম্যাম, অতো আমি এখন খেতে পারবো না ! কিছু একটু হলেই হবে আমার !’] ... ...
শুধু প্রতিরক্ষাই নয়, নন্দরাজারা সেচ ব্যবস্থার জন্যেও বহু ক্যানাল এবং জলাধার নির্মাণ করিয়েছিলেন। রাজ্যের সমস্ত ভূমি এবং ভূসম্পদ ও জলসম্পদের অধিকারী যে রাষ্ট্র এবং সেই যাবতীয় সম্পদই যে করযোগ্য ভারতবর্ষে সে ধারণারও প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন নন্দরাজারাই। ... ...
দীক্ষিতের প্রথম পাঠ নির্দিষ্ট মাপের ভিক্ষাপাত্র নিয়ে লোকালয়ে ভিক্ষা করা। ভিক্ষাপাত্র একবার পূর্ণ হলেই লোকালয় থেকে আশ্রমে ফিরতে হত। সেখানে সকলের সঙ্গে বসে সেই ভিক্ষালব্ধ খাদ্য নিবিষ্ট মনে আহার করতে হত। নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিক্ষা গ্রহণের এই প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান দিয়েই শুরু হত দীক্ষিতদের সাধনা। এই সাধনায় দীক্ষিতের অহংকার, লোভ ও ঔদ্ধত্য বিনাশ হয়, বাড়ে ধৈর্য এবং মানসিক স্থিতি। ... ...
[ এবারে প্রশ্ন হলো আমার শরীরে এই হেপাটাইটিস ‘বি’ এলো কোত্থেকে ? এই দুই নার্সিং হোমের মাঝের সময়্টায় আমি তো নিই-ই নি কোনো রক্ত, বা ফুঁড়তেও হয়নি কোনো সিরিঞ্জের ছুঁচ ! তাহলে ? এ তো আর হাওয়ায় বা জলে ভেসে আসার জীবানু নয়। একমাত্র সেই লখীন্দরের বাসর ঘরের ছ্যাঁদার মতো আমার শরীরে এই বিষ নিঃসন্দেহে এসেছিল ওই সেই দক্ষিণ কলকাতার বিশিষ্ট নার্সিং হোমের - সেই স্টকে থাকা বিশেষভাবে পরীক্ষিত রক্তের থেকেই। আর তো কোনো মাধ্যমই ছিল না হেপাটাইটিস ‘বি’ আগমনের।] ... ...
শিবরাম কিন্তু আর এগোল না। নানুকে ফিরে আসতে বললেও সে ফিরছিল না। তবুও শিবরাম তাকে একা ফেলে যেতেও পারছিল না। অগত্যা দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের সম্মতির অপেক্ষা করছিল। এমন সময় তারা দেখল ভাঙা থামের পাশ থেকে কেউ একজন উঁকি মারছে। শিবরাম ভয় পেল ঠিকই কিন্তু কাপুরুষের মত পালিয়ে গেলনা। সে ভাল করে দেখল। একটি মহিলা তার দিকে তাকিয়ে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তার রুপের ছটায় শিবরামের চোখ আঁটকে যাওয়ার জোগাড়। পড়নে দামী শাড়ি, সারা গা ভর্তি চকচকে গয়না। বেশ পরিপাটি করে সেজে সে এসেছে এখানে। ... ...
স্বস্তি জোড় হাতে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল, নিচু হয়ে প্রণাম জানিয়ে বলল, “গুরুদেব, আজকে আপনাকে একদম অন্যরকম লাগছে কেন?” গৌতম আরও এগিয়ে স্বস্তিকে কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাই? ঠিক কী রকম লাগছে বল তো?” স্বস্তি গৌতমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক কী বলতে পারব না, তবে একদম অন্যরকম। আপনি যেন কোন নক্ষত্রের মতো। সবে ফুটে ওঠা পদ্মফুলের মতো। কিংবা... কিংবা... গয়াশীর্ষ পাহাড়চূড়ার ওপরে পূর্ণিমার চাঁদের মতো”। ... ...
[ এমনিতেই যে কোনো এমার্জেন্সিতে আমরা যে রক্ত নিয়ে আসি তার কোনো কাগজপত্তর পেশেন্ট পার্টির হাতে দেওয়াই হয় না। একমাত্র বর্তমানে ওই রক্তের পাউচের ওপরে যে কাগজ বা লেবেলটি সাঁটা থাকে সেটা যদি কেটে রেখে দিতে পারেন, তাহলে অন্তত ভবিষ্যতের আইন আদালতে কাজে লাগলেও লাগতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা খুব কম। এই প্রসঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম কলকাতার এক প্রাইভেট ব্লাড ব্যাঙ্কের এক বন্ধুর সাথে। সে অনেকদিন ধরেই জড়িয়ে আছে এই ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে। আমার প্রশ্ন ছিল যে ওদের থেকে নেওয়া রক্ত থেকে আমার যদি হেপাটাইটিস বি হয় তাহলে প্রমাণ করবো কি উপায়ে ? ] ... ...