শীতের বিকেলে বৃষ্টি হলে ঠান্ডা যেন চামড়া ফুটো করে হাড়ে ঢুকে যায় সটান, তার ওপর ভেজা ফুটপাথ শুকোতে অনেক সময় নেয়- রাতে শোয়ার জন্য একটা শুকনো জায়গা খুঁজছিল প্রফুল্ল। এমনিতে, মন্দিরের সামনের ফুটপাথে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকে। গতবছর একটা কম্বল পেয়েছিল - সেদিন কালীমন্দিরে শ্রাদ্ধ- প্রফুল্ল, কপিল, নাথু আর রঘুবীর ফুটপাথে বসে পিন্ডমাখা দেখছে- ন্যাড়া মাথা দুটো ফরসা ছেলে পুজো করতে করতে চোখ মুছছিল। কাজ মিটে গেলে ছেলেদুটো ওদের হাতে লাড্ডু দিল। তারপর টাকা, ধুতি আর কম্বল। গতবারের শীত এই কম্বলের নিচে দিব্যি কেটেছে; তারপর প্লাস্টিক মুড়ে রেখে দিয়েছিল। ... ...
মল্লিকবাজার মোড়ে প্রথমে অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায়, পরে বাচ্চা কোলে ভিক্ষা করত যে মেয়েটি, মেয়ো রোডের ছেলেটিরই বয়সি সে। কিশোরীর ওই পরিণতি কে করল? কেনই বা সে ওই বয়সে বাড়ি ছাড়া? জানা হয়নি। ফুটপাথে প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে শিশুর সারল্যে কিশোরী মায়ের সন্তানের সঙ্গে খেলা, মাতৃস্নেহে শিশুর যত্নআত্তি করার দৃশ্য যানজটে আটকে থাকা গাড়ির আরোহী, পথচলতি মানুষের চোখ টানত। প্রেস স্টিকার সাঁটা গাড়ির আরোহীর মনে প্রশ্ন তোলপাড় করে দিয়ে যেত, এই কিশোরী মা মৌলালির সেই নাবালিকা নয়তো? ... ...
গোবিন্দর শরীরে যে এত ঘুম জমে ছিল, সে নিজেও জানত না। দিনভর ঘুমাতে কসুর করেনি শুরুর ক’টা দিন। জাহাজের স্টকহোল্ডে কাজ করে শরীরখানা এমন দুমড়ে মুচড়ে যায়, সবসময় ঘুমের জন্য মুখিয়ে থাকে। দু’দিন এমনি গেল। তারপর বদনখান এমন ঝরঝরে হয়ে গেল, মোটে ঘুমই আসে না চোখে। শুয়ে থাকলে বরং গায়ে বেদনা। ওইটুকু তো ঘর, হাত-পা খেলানোর ঠাঁই নেই। পায়চারি করার পরিসর দূরস্থান। সে বেচারা কি করে? বিছানার উপরেই গ্যাঁট হয়ে বসে রইল রাতভোর। বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে আলো ফুটল, ঘরের হলুদ আলোর সঙ্গে ছায়া ভুবন তৈরি করল। মানুষের মন বড় অদ্ভুত। জাহাজের জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে উঠল গোবিন্দের। অথবা ঠিক জাহাজের জন্য নয়, শুধু একটু বাইরে যাওয়ার জন্য। একটু বাইরের আলো বাতাস, মানুষের মুখ, কারো সঙ্গে দু’টি কথা কইবার তরে পাগলপারা ছটফটানি। ঠিক যেমন একেকবার ফার্নেসে কয়লা ঢেলে গোটা শরীরখান শুকিয়ে যেত, আর ইচ্ছা হত দেয় এক ঝাঁপ মাঝদরিয়ায়, নিশ্চিত মরণ জেনেও, এখন তেমনি ধরা পড়ুক চাই যা খুশি হোক – বাইরে একদম যাওয়া চাই – এমন একটা বেপরোয়া ভাব তাকে গ্রাস করছিল। ... ...
অন্যদিকে ফ্রান্সের পুরনো ইহুদি বিদ্বেষ তার কণ্ঠ খুঁজে পেলো। কট্টর জাতীয়তাবাদী ফরাসিরা জেগে উঠলেন - ইহুদিদের জন্য ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা, ফরাসি সভ্যতা বিপন্ন । সে ক্রোধ এমনি রুদ্র রূপ নিয়েছিল যে এমিল জোলা আনাতোল ফ্রাঁসের মত মানুষের প্রাণ নিয়ে টানাটানি । একশোর বেশি জেলায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ , তাদের সম্পত্তির বিনাশ চলল -পুলিস নির্বাক দর্শক মাত্র ( হিটলারের বয়েস তখন ন বছর , গোয়েরিঙের ছয় : আইখমানের জন্মাতে আট বছর দেরি আছে )। কোন প্রমাণ ছাড়াই পুনর্বিচারে দ্রাইফুসের সাজা আরও দশ বছর বাড়ানো হল । তাঁকে জানানো হল তিনি মুক্তি পাবেন যদি অপরাধ স্বীকার করেন। পাঁচ বছর ডেভিলস আইল্যান্ডের কঠোর জীবনে ক্লান্ত দ্রাইফুস তাতেই সই করে মুক্ত হলেন ( ডাসটিন হফমান অভিনীত পাপিলন ছবিতে ডেভিলস আইল্যান্ড চিত্রায়িত হয়েছে)। সামরিক বাহিনীতে পুনর্বাসন হল দ্রাইফুসের। তিনি জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। । ... ...
মিনতি, মিনতির মতো মুখচোরা মেয়ে, সে-ও জিজ্ঞেস করেছে, কতো তাড়াতাড়ি? কতো তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিতে হবে? তখনো ধৈর্য হারায়নি উৎপল, বলেছে আটটার মধ্যে। তখন লক্ষ্মীকান্ত বলেছে, ঠিক আছে, আমরা ছটার সময় পড়তে বসে যাবো, আটটার মধ্যে পড়া হয়ে যাবে। উৎপল তো কখনও এরকম জবাব দিতে শোনেনি ওদের, ও রেগেমেগে বলেছে, কী পড়তে বসে যাবো পড়তে বসে যাবো করছো, একজনও বসবে না ডাইনিং হলের চেয়ারে। তখন নাকি তিন-চারজনে মিলে একসাথে বলেছে, ঠিক আছে স্যর, আমরা মেঝেতে বসবো। আর তারপর আস্পর্ধা দেখুন, ক্লাস সেভেনের নবীন ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেছে তখন, স্যরকেও কী মেঝেতে বসতে হবে ! বিশেষ কোরে নবীনের এই প্রশ্নে উৎপল খুবই আপসেট। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমিও একটু শঙ্কিত। ... ...
হাঁ করে গিলছিল আলেফ আর বসির। রেলের ইস্টিশানে নেবে অবধি দেখেছে এই শহরের রঙ-ঢঙ। যেন রোজকার উৎসব লেগে আছে। পথে পথে রঙ্গ রসিকতা, নাচ গানের আওয়াজ, গ্রাহকের প্রতীক্ষায় পশরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা, কিছুই চোখ এড়ায়নি তাদের। নিউ ইয়র্কের দশ-বিশ তলা ইমারত ওদের কাছে নতুন ছিল। কি তার চমক আর চেকনাই। আশবারি পার্কে দরিয়াপারের মেলা দেখে চুঁচড়োর দরগার বচ্ছরকার পরব ফিকে পড়ে গেছিল এ জন্মের মত। কিন্তু এই শহরের সাজ সহরত নকশা এমন, যেন চারদিকে আমোদের ভিয়েন বসেছে। এমন কোন রঙ তারা জানে না, যার কয়েক পোঁচ পড়েনি কোথাও না কোথাও। থেকে থেকে নিশেন উড়ছে। তাতে কত রকমের মুখ, জন্তু জানোয়ারের চেহারা দিয়ে চিত্র বিচিত্র করে রেখেছে। এই শহর তার উচ্ছল প্রাণ আর বেঁচে থাকার জীবন্ত ছবি নিয়ে শুরুতেই তাদের খুব টেনেছে। ... ...
আমরা তো কাজ করতাম কোম্পানি থেকে দূরে। জঙ্গল পাহাড়ের ভিতর। ওইসব কোম্পানির ব্যাপার। কোম্পানি বডি নিয়ে কি করবে, বডি পাঠাবে কিনা, সেসব খবর আমাদের কাছে আসত না। কে খবর দেবে! আমরা তো বোরিং করার জন্য ঘুরছি। শ্মশান মশান কোনও বাছাবাছি নেই। গু মুত যা থাক! যেইখানে বোরিং করে বোম ফাটিয়ে তেল আছে জানতে পারবে আমাদের সেইখানেই থাকতে হবে। কোম্পানির লোক যেখানে থাকতে হবে বলেছে, সেইখানে একটু পরিষ্কার করে জঙ্গল কেটে সাপ কোপ মেরে তাম্বু টানিয়ে থেকে গেছি। দু হাজার কুড়ির বাইশে মার্চ ওরা শ্মশানে জঙ্গলে পাহাড়ের ঠিক কোন খাঁড়াইতে ছিল সে জায়গার নাম ওদের জানা হয়নি। ওই জঙ্গল পাহাড় থেকে দূরে টি ভি চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখা গেল। ঘোষণা হল লকডাউন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, যে যেখানে আছেন সে সেখানেই থাকুন। খবর হল সারা দেশের ট্রেন বাস বর্ডার সবকিছু বন্ধ হল একুশ দিনের জন্য। ... ...
যেন ট্রেনে উঠেছিল লিপি- হুইশল দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে ট্রেন আর লিপি বার্থে উঠে বসছে, তারপর রেলের কামরা বদলে যাচ্ছে ওর বাপের বাড়ির পুরোনো ঘরদোরে - মলিন দেওয়ালে ঝুলে থাকা ছবি, ক্যালেন্ডার- খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকছে আর দেওয়ালে ছবি তৈরি হচ্ছে- বকুল গাছ, জবা, টগর, এই উঁচু নারকেল গাছ তারপর মেপল। লাল হলুদ ঝরা পাতার রাশ পেরোচ্ছিল ট্রেন খুব আস্তে, সে ট্রামে করে চলেছে এরকম মনে হচ্ছিল - তারপর একটা লম্বা ব্রিজে উঠল , স্পীড বাড়াল- ঝমঝম ঝমঝম ঝমঝম; ট্রেনের তীব্র গতিতে ভেঙে গেল বাপের বাড়ির দেওয়াল, ঘরদোর, দেওয়ালের ছবি- ... ...
দুপুরে খাওয়ার সময় পুলকেশও বসেন ওদের সাথে, এবং পুলকেশের বিশেষ অনুরোধে জয়মালিকাও। য়্যোরোপের গল্প হয়, পাঁচ জায়গায় সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছে জয়মালিকা, ধরণী মাতার আরাধনা যে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম আর ভারতের ইণ্ডিজেনাস পপুলেশনের দার্শনিক চিন্তার মহাসম্মিলনের ফসল, ভারতীয় ধর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতীক, আদিবাসী ধর্ম আর ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মিলনস্থল, এ চিন্তা নাকি আলোড়ন তুলেছে যেখানে যেখানে গেছে ও সেখানেই। ও যে বক্তৃতা দিয়েছে তার ইংরিজি অনুবাদ, এক একটি কপি পাঁচ য়্যুরো হিসেবে একশো কপি – যা ও সঙ্গে কোরে নিয়ে গিয়েছিলো – সবই বিক্রি হয়ে গেছে ! এসব আলোচনা খুব একটা প্রভাব ফেলে না সোমেশ্বরের ওপর, ও মনে মনে ভাবছিলো জয়মালিকা কী বাচ্চাদের পাদুকাবিহীন ফাটা-পাগুলো লক্ষ্য করেছে আজ ! ... ...
দ্রুত খাচ্ছিল মিঠু, বাটি থেকে চিকেনের শেষ পিস প্লেটে তুলে মনে হল -বড় দ্রুত ফুরিয়ে গেল খাওয়ার সময়টুকু। এই আলো আঁধারি, চিনে খাবারের গন্ধ, লাল রেক্সিনের পুরু গদি- ছাত্রদের কোলাহল নেই, মা'র চিৎকার নেই, সনতের এখানে আসার সম্ভাবনাও নেই - তার আরো খানিকটা সময় থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। হাত তুলে একটা ভ্যানিলা আইস্ক্রীম আর থামস আপ চাইল মিঠু। প্র্যাকটিকাল ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমর ধরে গিয়েছিল মিঠুর - তার ওপর ঝুঁকে স্লাইড চেক করা। ঢেকুর উঠল বার কয়েক। ফেরার সময় বাসের জন্য দাঁড়াতেও হল অনেকক্ষণ- সি এ এ নিয়ে মিছিল বেরিয়েছে আজ শহরে। ... ...
দুপুরের খাওয়া চল্লিশজন ছেলেমেয়ের জন্যে, ফাইফ সিক্স সেভেন আর এইট। পেট-ভরা ভাত দেওয়া হয় ওদের, সকালের মতো ফ্যানা-ভাত নয়, ফ্যান-গালা ভাত। আর মনে রাখবেন, ওদের পেট-ভরা মানে আপনাদের পেট-ভরা নয়। ভাত ওরা অনেক বেশি খায়, এবং যতটা খায় ততটাই দেওয়া হয়। আমার মনে হয় না পেট-ভরা নিয়ে কোন দুঃখ ওদের আছে। পেট ভরে। রোজই। তবে হ্যাঁ, তরকারির একটা মাপ আছে, সে মাপটা বুঝিয়ে দেওয়া আছে নিমাই আর সুনীলকে। সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা আমরা সবাই জানি, নিমাই আর সুনীলও জানে। ... ...
জুলাই ও নভেম্বর ১৯৩২ পর পর দু বার নির্বাচন হয়। কোন দল সরকার গঠন করতে পারে না। জানুয়ারি ১৯৩৩ আবার নির্বাচন। কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে নি (নাৎসিরা পায় ৩৩% ভোট) । ভোট ক্লান্ত জনগণকে রেহাই দেবার জন্য ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ হিটলারকে কোন রকমে একটা জোড়া তালি দিয়ে সরকার গঠনের অনুমতি দিলেন। ক্ষমতা দখল করেই মার্চে আবার নির্বাচন ডাকলেন হিটলার। ক্রুপ থুসেন সহ যাবতীয় শিল্পপতিরা তাদের কোষাগার খুলে দিলেন – প্লেনে চড়ে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনী প্রচার করলেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সংখ্যা গরিষ্ঠ হল না নাৎসি পার্টি -তারা পেলো ৪৩% ভোট। জার্মান জাতীয় দলের সঙ্গে একত্রে হিটলার আবার সরকার গঠন করলেন। দু মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের দরোজা বন্ধ হল। সে দরোজা আবার খুলবে দেড় দশক বাদে। ... ...
তাদেরকে সাদাদের কামরা থেকে নাবিয়ে দিল না কেউ। টিকেট দেখতে এসে লালমুখো গুঁফো লোকটা অনেকক্ষণ চোখ সরু করে সবার চেহারা জরিপ করল। এরা নিজেদের জান পেটের মধ্যে সিঁধিয়ে বসে ছিল। ভাবটা যেন কিছুই হয়নি, কিন্তু বুক গুড়গুড় করছে। শেষ অবধি লোকটা জিগেস করল, হিন্দু? চেকার আসার আগেই পাঁচকড়ি চোখ বুজে হরিনামে ডুবে গেছিল। মোকসাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। ফ্রম ক্যালকাট্টা। আর তুমি? লালমুখোর নজর ইরুবার দিকে। ইরুবা দাড়িতে হাত বুলিয়ে দাঁত বের করে বলল, হিন্দু ফ্রম কালকাত্তা। সে লোক ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল। কি নাম তোমার? ইরুবা এত কিছু ভেবে রাখেনি। বলল, ইরুবা। কোথায় যাচ্ছো? নিউ অরলিন। সে লোক এবার ইরুবার কাঁধে এক থাবা মেরেছে। কথা বলছো যেন মিসিসিপির নিগার, আর ভেক ধরেছো হিন্দুর? মুহূর্তে ইরুবা দিল এক লাফ, যেন জলজ্যান্ত হনুমান .... ... ...
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি। ... ...
লম্বা লম্বা শিক লাগানো পেল্লায় তার কপাট। সেই শিক ধরে ভিতরে চোখ রাখল ফায়জল। সঙ্গে সঙ্গে যেন আলিবাবার গুহার মত এক আজব দুনিয়া চিচিং ফাঁক হয়ে চোখের সামনে হাজির। কি বনবন করে ঘুরছে সবাই। সঙ্গে গান করছে কেউ মিঠে সুরে। ছোট-বড়, রোগা-মোটা, বাচ্চা-বুড়ো সবাই চরকি-ঘোরান ঘুরতে ঘুরতে খলখল করে হাসছে। জীবনটা এত মজার, এসব না দেখলে বোঝাই যায় না। পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে গেছিল ফায়জল, নিজেকে গুটিয়ে কারো সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি না করে। ভিতরে কত রকমের বাতি ঝুলছে। চলতে চলতে এক আয়নার সামনে গিয়ে তার চোখ কপালে। হুবহু তার মত একটা লোক, শুধু কেউ যেন হামান দিস্তা দিয়ে এমন পিষে দিয়েছে লম্বায় এক হাত আর চওড়ায় তিন হাত। পোশাক দেখে শুধু বুঝতে পারল, যে এটা তার নিজের সুরত। এমন সেই সিসার কেরামতি। এমনি অনেক সিসা দিয়ে একটা দেওয়াল মুড়ে রেখেছে। কোনখানে ফায়জল বেঁটে, তো কোথাও হিলহিলে লম্বা, আর এক জায়গায় সে হয়ে গেল বেলুনের মত গোল। যেন এখুনি হাওয়া বেলুন হয়ে উড়ে যাবে। আলেফ ডেকে না নিয়ে এলে সেখানেই বুঝি পুরো দিনমান কাটিয়ে দিত ফায়জল। ... ...
ভারতীয় ভারোত্তোলন তখন ধ্বংসস্তূপে। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারোত্তোলন দলের সাফল্যের জন্য তাদের কোচ বিজয় শর্মাকে লন্ডন অলিম্পিকের জন্য সহকারী কোচ নিযুক্ত করা হয়। বিজয় শর্মা, নিজে ভারোত্তোলক ছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ইউরোপেও কাটিয়েছেন। ২০১৪-য় পাতিয়ালায় ট্রেনিং-এর ভার নেবার পরে, কর্তাদের অনুরোধ করে ভারোত্তোলকদের জন্য আলাদা রান্নাঘরের ব্যবস্থা করেন। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে ভারোত্তোলকদের সরিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিক প্রোটিনের দিকে জোর দেন বেশি। ২০১৪-তেই মীরাবাঈ গ্লাসগোয় ৪৮ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ গেমসে রূপো জেতেন। ওদিকে ২০১৫-য় যখন ডোপিং-এর কাদায় ভারতীয় ভারোত্তোলন আবার ডুবছে, তখন বিজয় শর্মা মীরাবাঈ, সতীশ সহ কয়েকজনকে বটগাছের মতো আগলে রাখছেন। ২০১৪-র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স অনুযায়ী ভারত ২০১৬-র রিও অলিম্পিকে দু’জনের কোটা পায়। সেই অনুযায়ী ট্রায়ালও হয় এবং তামিলনাড়ুর সতীশ কুমার শিভলিঙ্গম এবং মীরাবাঈ যোগ্যতা অনুযায়ী পারফর্ম করে অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মীরাবাঈ চোট এবং ভুল ওজন নির্বাচনের কারণে রিওতে ওজন তোলার খাতাতেই নাম লেখাতে পারেননি। আসলে একবার বেশি ওজন দিয়ে শুরু করলে ফিরে যাওয়া যায় না কম ওজনে। ফলস্বরূপ ব্যর্থতা। ... ...
পালাবে কি ভাবে? কোম্পানি থেকে লোকে ডিউটি দিত। পাহাড় থেকে লাফ-ঝাঁপ মেরে যেই পালাতে গিয়েছে, ঠিক খপ করে ধরে নিয়েছে। ওই যে, রাত্তিরবেলা কোম্পানির লোকগুলো পাহারা দেয় না, ওরাই ধরেছিল। বুড়ো ছিল একটা। সেই ওনার হাঁটু ভেঙে গেল লাফ মেরে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে, টানতে টানতে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আবার। আর দুইজনের কেটে ছড়ে কি অবস্থা! একজন কেবল পালাতে পেরেছিল। খু-উ-ব বুদ্ধি ওর। ঠিক গাড়িতে উঠে পালিয়েছে। ফিক করে হেসে ফেলল সন্টু... ... ...
অর্চনার একজনের ওপর বিরাট ক্রাশ ছিলো। জনৈক 'লেদা রাজা'। যে যেখানে কারুর কোনো গুণের কথা বলুক না কেন, অর্চনা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতো "লেদা রাজার মত"। আমি তো কিছুতেই ভেবে পেতামনা যে কোনো রাজা 'ল্যাদা' হলে তাঁর এত ভক্ত হবার কী আছে! এদিকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন এই 'লেদা রাজা'টি কে, অর্চনা খালি ফিক করে হেসে বলতো "আমি কী জানি?" শেষে একদিন কৃষ্ণর গল্প শুনে সে সটান বলে বসলো "এটা তো লেদা রাজার গল্প। আন্টি মোটেই জানেনা, লেদা রাজার গল্পে শুধুশুধু ভুলভাল কান্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে!" সবাই মিলে তখন নানা প্রশ্ন, নানা মন্তব্য। কারুর রাগ হয়েছে, কেউ আন্টিকে বলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিয়েই অর্চনা আবার সেই – ফিক, "আমি কী জানি?" মোডে চলে গেছে। ... ...
পরিবেশটা সহজ করার জন্যেই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক উৎপল ঘোষণা করে স্কুলের ছেলেমেয়েরা এখন একটা সাঁওতালি গান শোনাবে, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সমবেত পরিবেশিত হয় ধারমু উদুঃক্ আকাৎ লেকা গানটি। গান শেষ হলে জয়মালিকা আবার তুলে নেয় মাইক। সে ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের থেকে যারা এসেছে তাদের উদ্দেশে এবার বলে তোমাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। তারা লেখাপড়া যেমন শিখবে সব ধরণের কাজও শিখবে তেমনি। এই যে আজ এখানে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে, মাইক লাগানো হয়েছে, এসব তোমাদের ছেলেমেয়েরাই করেছে। বড়ো বড়ো শহরের ছেলেমেয়েরা যেমন শেখে সেরকমই ভালো ইংরিজি আর বাংলা শেখাবার জন্যে আমাদের স্কুলে এখন কলকাতা থেকে এসেছেন সোমেশ্বর স্যর আর সম্ভৃতা ম্যাডাম। ... ...