সেকালে কাঁসাই নদীতে 'সুতি' নামের একটা খেলা প্রচলিত ছিল। মাছ ধরার অভিনব এক পদ্ধতি, বহু কাল ধরে যা চলে আসছে। আমাদের পাড়ার একাধিক লোক সুতি খেলাতে অংশ নিত। এই মৎস্যশিকার সার্বজনীন, হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ে জনপ্রিয়। মনে আছে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় একদিন নদীর কাছে গিয়ে দেখি আমাদের পাড়ার প্রতিবেশী জনাব রাজা সুতিতে একটি মাঝারি রুই তুললেন। মাছটিকে খেলিয়ে টেনে তুলে এনে মাছের খাবি খাওয়া ঠোঁট মুখের কাছে নিয়ে কীসব অদ্ভুত মন্ত্র বিড়বিড় করে জপতে লাগলেন। এইসব লোকাচার খেলারই অঙ্গ।যাই হোক, এবার নবমী ... ...
আজকে সরাসরি গুল গল্পতে চলে যাই। যাবার আগে দুটো কথা। কেউ কেউ লিখছেন মুখার্জি কমিশনে কী বলা হয়েছিল? কোন আমেরিকান গ্রাফোলজিস্ট এর রিপোর্টে কী আছে দেখেছেন কিনা? ইত্যাদি কিছু প্রশ্ন। আমি আগেও বলেছি আবার বলছি যে আপাতত মেনেই নিচ্ছি, যে গুমনামি বাবা যিনি নিজেকে নেতাজী বলে দাবী করছেন বা গুমনামি বাবা যাকে অনুজ ধর নেতাজী বলছেন তিনিই নেতাজী, এবার সেই গুমনামি ওরফে নেতাজী ওরফে ভগবানজী বা মহাকাল নিজের মুখে যা যা বলে গেছেন, সেগুলো কতখানি বিশ্বাসযোগ্য সেটাই কেবল আলোচনা করছি। গতকালই ... ...
আজ শুরুতেই একটু ইতিহাস নিয়ে চর্চা হোক। গুমনামির গুল গল্পে পরে আসছি। কেউ একটা বই লিখে দিলেই সেটা ইতিহাস হয়ে যায় না। অযোধ্যায় রাস্তায় অনেক চটি বই পাওয়া যায়, সেখানে অমুক সন্ত তমুক মহারাজ রাম ঠিক কোন জায়গায়, কবে কোন মুহূর্তে জন্ম নিয়েছিল,তার বিবরণ আছে। অবশ্যি নানান বই তে নানান বিবরণ। তাতে কি? তাদের সবাই দাবী করেন যে ঘোড়ার মুখ থেকে বার করা তথ্য, এসব বলে গেছেন অমুক মহারাজ, তমুক মহারাজ। এদের আবার নিজেদের মধ্যেও রোজকার ক্যাঁচাল। যেমন ঝগড়া গুমনামির ফলোয়ারদের মধ্যেও। একদল বলে ... ...
CONUNDRUM বই এর একটা মজা হল গুজব, মিথ্যে আর মাঝে মধ্যে ইতিহাস বলার একটা ভনিতা কে বজায় রাখা। যেখানে গুমনামি বাবা বলছেন উনি হো চি মিন কে যুদ্ধ শেখাতে গিয়েছিলেন, তার পরেই বলা হচ্ছে কে কে কখন গুমনামিবাবা কে হ্যানয় এ দেখেছেন, এরকম কে কে রাশিয়া তে দেখেছেন তার কথা আছে, কে কে চীনে দেখেছেন সেই গল্পো আছে, কখন তাকে বাঙলাদেশে দেখা গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রমাণ করার চেষ্টা যে গুমনামি বাবা যা বলছেন তার কিছুটা হলেও সারবত্তা আছে। এবং এসব গুজব নতুন নয়। নেহেরুর শেষকৃত্যের সময় ইনি ... ...
কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন যে এই গুমনামি র সঙ্গে আর এস এস - বিজেপির সম্পর্ক টা কোথায়?তাহলে একটু ইতিহাস দেখে নেওয়া যাক। ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৯, রাত ৩ টের সময় আযোধ্যার আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো। এবং বিদ্যুতের চেয়েও বেশি বেগে খবর পৌঁছে গ্যালো "রামলালা নিজেই অবতীর্ণ হলেন তাঁর জন্মভূমীতে", বাবরি মসজিদ কে ঘিরে সেখানকার হিন্দু সাধুদের যে দাবি ছিল তা হয়ে উঠল আর এস এস হিন্দু মহাসভার দাবী। সেই থেকে শুরু মন্দির ওঁহি বানায়েংগের আন্দোলন। আসল ঘটনা জানার পর পরেরদিন ই অযোধ্যা থানার ... ...
গুমনামি = নেতাজী = মহাকাল = গুমনামি। আমি বলছিনা একথা বলেছেন অনুজ ধর এবং তাঁর বই এ একে একে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে উনিই নেতাজী । তর্কের খাতিরে আমি মেনে নিয়েছি যে উনিই নেতাজী। তারপর গুমনামি বাবা যা বলেছেন (অনুজ ধর এর বই তেই মাত্র যা আছে) তা নিয়ে আলোচনা করছি, সঙ্গে কোন পাতায় তা লেখা আছে সেটাও উল্লেখ করছি। বই এর শেষ অধ্যায় এ তিনি একটা escape route রেখেছেন এই বলে যে উনি Post Trauma Stress Disorder এর রোগি ছিলেন, তাই মাঝে মধ্যে hallucinate (ভুলভাল দেখা বা শোনা) ... ...
অনুজ ধর আবার বলেছেন যে গুমনামি বাবা নেতাজী। আমরাও আপাতত মেনে নিচ্ছি উনি নেতাজী। আমাদের প্রশ্ন কেবল এই যে নেতাজী কি এইসব উদ্ভট গালগল্প বলতে পারেন? পাঠকরা খেয়াল করুন বিরিঞ্চি বাবার মত বা আমার মতে তার চেয়েও বড় এই জোচ্চর এই গুমনামি ওরফে মহাকাল ওরফে নেতাজী এক জায়গায় বলছেন “তিনি মুক্তি বাহিনী তৈরি করতে চান, যে বাহিনীতে মুসলমান আর কমিউনিস্ট রা থাকবেনা!” (পাতা ৩৮৫-৩৮৬) মরে গেলেও এই কথা নেতাজীর মুখ দিয়ে বের হবে এ কথা কোনো বাঙালি বিশ্বাস করতে পারে বলে আমার মনে হয় না, যদি না ... ...
আগেই বলেছি যে CONUNDRUM বইতে অনুজ ধর যেভাবে, যা যা যুক্তি দিয়ে গুমনামি বাবা কে নেতাজী বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, আপাতত তার সবটা মেনে নিয়ে ধরে নিচ্ছি যে গুমনামি বাবা নেতাজী, নেতাজী গুমনামি বাবা। এবার সেই নেতাজী ওরফে গুমনামি বাবা ঐ বই তেই যা যা বলেছেন পাতা ধরে ধরে সেটাই তুলে ধরছি এবং পাঠকদের জিজ্ঞেস করতে চাইছি যে এই অর্বাচীনের মত কথা বলা কি নেতাজীর পক্ষে সম্ভব? আমি মনে করি অত্যন্ত নিম্নস্তরের জোচ্চরের পক্ষেই এভাবে এই কথাগুলো বলা সম্ভব। গত অধ্যায়ে আমরা দেখেছিলাম ... ...
আগের পর্বে দেখেছিলাম গুমনামি ওরফে নেতাজী ১৯৪৯ সালে চীন চলে আসছেন। আসার আগে নিকিতা ক্রুশ্চেভ এর সঙ্গে বসে অপেরা দেখে ফেলছেন (পাতা ৭৪০)। দেখে “দাশভাদানিয়া” মানে বিদায় বন্ধু বলে চীন চলে গেলেন। সেই বছরেই পয়লা অক্টোবর পিপলস লিবারেশন আর্মি মাও এর নেতৃত্বে চীনের ক্ষমতায়। তো ঠিক সেই সময়েই মাও এর সঙ্গে মোলাকাৎ হয়েছিল কিনা তা কিন্তু গুমনামি বাবা বলেন নি। অবশ্য নিকিতা র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি চীনে গেলে মাও এর কাছেই তো যাবেন। মোদ্দা কথা হল, দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। উনি মা ... ...
যদিও সরকারি ডিএনএ আর হাতের লেখা পরীক্ষায় ডাহা ফেল, কমিশনের রিপোর্টে clinching evidence নেই বলে পরিস্কার জানানো হয়েছে, যদিও নেতাজী পরিবারের অধিকাংশ সদশ্য বিরোধিতা করেছেন, যদিও আই এন এ র প্রায় কেউই মেনে নেন নি, যদিও ফরোয়ার্ড ব্লক দলের কেউই মেনে নেন নি তবুও আসুন তর্কের খাতিরে মেনে নিই যে CONUNDRUM বই এর লেখক যা প্রমাণ করতে চেয়েছেন তা সঠিক। অর্থাৎ নেতাজীই গুমনামি বাবা অথবা গুমনামি বাবাই নেতাজী। তাহলে এই বই এ সবথেকে সত্যি কথাগুলো কী ? কমিশন, প্রমাণ, তথ্য, এসব বাদ দি ... ...
রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর বউদির সঙ্গে প্রেম আর নেতাজী ফিরে আসবেন, বেঁচে আছেন, বিয়ে করেছেন কিনা, এই দুটো বিষয় নিয়ে যত অখাদ্য বই লেখা হোক না কেন, পাবলিশারতো জুটে যাবেই, বিক্রি বাট্টাও কম হয় না। সেটা অনেকে বুঝেছেন, বুঝেছেন অনুজ ধর ও। কাজেই নেতাজী নিয়ে প্রায় একই গাল গল্প ছাপিয়েই যাচ্ছেন। একবার বাংলা তে, একটু পালটে নিয়ে সেটাই আবার ইংরিজি তে। তো ওনার ‘নেতাজী ফিরেছিলেন’ আর CONUNDRUM বই দুটো পড়ে এই লেখা। একটা পুরো দস্তুর জোচ্চর হামবাগ নিম্ন স্তরের ফেরেব্বাজ কে ... ...
কথামুখ — প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো, আমার ইতিহাসের প্রথাগত পাঠ মাধ্যমিক অবধি। তবুও অ্যাকাডেমিক পরিসরের বাইরে নিছকই কৌতূহল থেকে গান্ধী বিষয়ক লেখাপত্তর পড়তে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই অবিসংবাদী নেতাটি সম্পর্কে যে ধারণা লাভ করেছি আমি, তা আর পাঁচজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাওয়ার ইচ্ছে থেকেই এই দুরূহ কাজে হাত দেওয়া। মূল লেখা শুরু করার আগে কিছু প্রাথমিক কথা বলে নিতে চাই। প্রথমত, পড়ার ছন্দ ও গতি অব্যাহত রাখতে লেখার ফাঁকে ফাঁকে কেবলমাত্র গান্ধীর নিজের লেখাপত্র ছাড়া অন্য রেফারেন্স ... ...
শহরে হেমন্ত আসে না। আসতে আসতে দু'দুটো ঢাউস জোড়া ব্রিজের মুখে সে কর্পুরের মতো উবে যায়। বিকেল নাগাদ একটা অজানা ঠাণ্ডা গন্ধ ছড়ায়। কারোর হঠাৎ মন কেমন করে। প্রয়োজনীয় কথার ফাঁকে ফাঁকে অকারণ ক্ষণবিরতি। এক মুহূর্তের কিছু বা বিস্মরণ। কোথাও কি যাবার ছিল? কেউ আসবে? কী জানি। পথচলতি লোকজন অকস্মাৎ একেকবার চোখ তুলে অকারণ আকাশ দেখে নেয়। কী দেখল কেন দেখল, জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না। ... ...
গরু বাগদির মর্মরহস্য - মাঝে কেবল একটি একক বাঁশের সাঁকো। তার দোসর আরেকটি ধরার বাঁশ লম্বালম্বি। সাঁকোর নিচে অতিদূর জ্বরের মতো পাতলা একটি খাল নিজের গায়ে কচুরিপানার চাদর জড়িয়ে রুগ্ন বহুকাল। খালটি জলনিকাশির। ঘোর বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে পচা লাশের মতো। যেহেতু এই খালে চার চারটি রাইস মিলের ধানসেদ্ধ জল পড়ে, তাই লোকমুখে নাম পচুয়াখাল। খালটি মাতলায় গিয়ে পড়েছে। গরু বাগদির কথা কেউ কখনও শোনে না। অথচ সে বোবা, এমন নয়। অপ্রয়োজনীয় কথা বলে না। ... ...
অযোধ্যার নবাবির পত্তন করেছিলেন প্রথম সাদত আলি। পারস্যের লোক। দিল্লির মুঘল বাদশা তাঁকে অযোধ্যার নাজিম করে দেন। সেই নাজিমই লক্ষ্ণৌর কাছে ফয়জাবাদের রাজধানী স্থাপন করে অযোধ্যার নবাবি শুরু করেছিলেন। তৃতীয় নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে রাজধানী চলে আসে লক্ষ্ণৌতে। সেই থেকে অযোধ্যা আর লক্ষ্ণৌ সমার্থক হয়ে ওঠে। তদ্দিনে দিল্লির অস্তগামী ছায়া পড়েছে লক্ষ্ণৌতে। লক্ষ্ণৌ তখন হিন্দুস্তানী সংস্কৃতির শুধু ধারক-বাহকই নয়, তার অগ্রডোমও বটে। ... ...
'আচ্ছা, সারা দেশে মোট কতজন ক্যান্ডিডেট এই পরীক্ষাটা দেয়?', লোকটা সিগারেটে একটা টান দিয়ে প্রশ্ন করলো।-'জানা নেই। তবে লাখ দশেক তো হবেই।', আমি বললাম।- 'বাব্বা! এতজন! সিট কতো ?'-'বলতে পারব না। ভাল কলেজ পেতে গেলে মেরিট লিস্টে যথেষ্ট ওপরে নাম থাকতে হবে।'-' তার মানে একটা লম্বা মেরিট লিস্ট হবে নিশ্চয়। তা, সবাই সবার নাম দেখতে পাবে ?'এই প্রশ্নে একটু অবাক হলাম। একটু বিরক্তিও বোধ হলো। ... ...
আমি যখন কলকাতার সওদাগরি অফিসে কাজ করতাম , তখন আমার একজন সহকর্মী ছিলেন। তিনি পাঁচ গ্রেডের কর্মী ছিলেন। এই পাঁচ গ্রেডের একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। পাঁচগ্রেড হলো অফিসার গ্রেড তাই কোনো ওভার টাইম নেই। এদিকে চার গ্রেড পর্যন্ত চুটিয়ে ওভারটাইম। তাই ওজনে কম হয়েও চার গ্রেডের কর্মীরা পাঁচ গ্রেডের থেকে অনেক বেশি মাস মাইনে পেতেন । তো আমার বয়জেষ্ঠ সেই সহকর্মী মনের দুঃখে গান গাইতেন "জন্ম পাঁচে মৃত্যু পাঁচে, ভাবনা কিরে ভাই , ওভারটাইম নাই , সাড়ে চারটে বেজে গেলে বাড়ি চলে যাই" ... ...
এমন হয়, প্রায়শই হয়। কথাবার্তায় উঠে আসে কোনও কোনও নাম। আমাদের লেখকের ক্ষেত্রেও তাই হলো। লেখক ও তার বন্ধু হাসানুজ্জামান ইনু সেইদিন রাত আটটা ন’টার দিকে জিন্দাবাজারে হাঁটছিলেন। তারা বাদাম খাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন যে রিকাবিবাজার যাবেন, ও সেখানে গুড়ের চা খাবেন। তখন শীতের সময়। চারিদিকে পড়েছে শীত। মানুষজন গরম কাপড় পরে বের হয়েছেন। অনেকে ব্যস্তভাবে হাঁটছেন, অনেকে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠা খাচ্ছেন। ব্যস্ত রাতের পূণ্যভূমি। এমন অবস্থায় আমাদের লেখক ও তার বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে বললেন ... ...
তোমার বাড়ি মেঘের কাছে, তোমার গ্রামে বরফ আজো?আজ, সীমান্তবর্তী শহর, শুধুই বেয়নেটে সাজো।সারাটা দিন বুটের টহল, সারাটা দিন বন্দী ঘরে।সমস্ত রাত দুয়ারগুলি অবিরত ভাঙলো ঝড়ে। ... ...
[আজ বের্টোল্ট ব্রেশট-এর মৃত্যুদিন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে যিনি সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ব্রেশটিয় আঙ্গিক, সেই মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি সামান্য লেখা।] ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কীভাবে যেন পরিচালক ত্রয়ী সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল এক বিন্দুতে এসে মিলিত হন। ১৯৫৫-তে মুক্তি পাচ্ছে ‘পথের পাঁচালী’; একই বছরে মৃণাল করছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’; আর ভারতীয় সিনেমার প্রকৃত পথপ্রদর্শক হিসাবে যাঁর সম্মানিত হওয়ার কথা সেই ঋত্বিকের ১৯৫২ সালে তৈরি ‘নাগরিক’-এ অভিনয় করছেন গীতা সোম যিনি পরের বছরে ঘরনি হবেন মৃণালের। ... ...