১।আর একটু পর উড়ে যাবভয় করেকথা ছিল কফি খাবফেরার গল্প নিয়েকত সহজেই না-ফিরেফুল হয়ে থাকা যায়যারা ফেরে নি উড়ার শেষেতাদের পাশ দিয়ে যাই ... ...
একাদশ শতকের প্রথমদিকে অতীশ দীপঙ্কর বৌদ্ধধর্ম ও সংশ্লিষ্ট জ্ঞানভাণ্ডার নিয়ে বাংলা থেকে তিব্বতে গিয়েছিলেন সেখানকার রাজার বিশেষ অনুরোধে। অতীশ তিব্বত এবং সুমাত্রা (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) সহ পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃর্ণ ভূভাগে বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের বিস্তারে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং এক মহামানবে পরিণত হন। তাঁকে বিশেষভাবে জানাবোঝার এক আগ্রহ তৈরি হয় সেখানকার বিদ্বৎসমাজে। তাঁদের কেউ কেউ চলে আসেন অতীশের দেশে, যে দেশ তাঁদের পরম পুজ্য গৌতম বুদ্ধেরও। অতীশের তিব্বত যাত্রার দুশো বছর পরে অতীশকে নিবিড় ... ...
অন্তরীক্ষে এই ঊষাকালে অতসী পুষ্পদলের রঙ ফুটি ফুটি করিতেছে। অংশুসকল ঘুমঘোরে স্থিত মেঘমালায় মাখামাখি হইয়া প্রভাতের জন্মমুহূর্তে বিহ্বল শিশুর ন্যায় আধোমুখর। নদীতীরবর্তী কাশপুষ্পগুচ্ছে লবণপৃক্ত বাতাস রহিয়া রহিয়া জড়াইতে চাহে যেন, বালবিধবার কুঞ্জে কিশোর রাখালিয়া। থাকিয়া থাকিয়া এমন শরতের নদী, বাতাস তাহার অববাহিকায় অস্ফুট জড়িমা, আমাকে যদি চাহ তবে মুখ ফুটিয়া কহো, দাও, নচেৎ পাপড়ি ছিঁড়িয়া করতলে পিষ্ট করিয়া শুঁকিয়া দেখ, শুঁটকি মাছের ঘ্রাণের ন্যায় সামুদ্রিক নির্বিকল্প। ... ...
জানলার কাছে বসন্তের নরম রোদে সার দিয়ে সাজানো আছে কাঁচের বড় বড় বয়াম। মুখ গুলো ঢাকা আছে পরিষ্কার সাদা কাপড়ের ফেট্টিতে। বয়াম গুলোকে বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না তার মধ্যে কি রসদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু যারা এই বাড়িতে রোজ ভাত খেতে আসে তারা ঠিক জানে। ভাতের পাতে লেবু, নু্ন, লঙ্কা দেওয়ার পাশাপাশি উড়ে বামুন ধনঞ্জয় একটু করে শালপাতায় ছুঁয়ে দিয়ে যায় বয়ামের সেই লুকোনো সম্পদ। কামরাঙা, কতবেল, জলপাই কিম্বা কোনদিন পাকা তেঁতুলের আচার। নতুন কাস্টমাররা অবাক হয়ে যায়। আর পুরোনো লোকেরা ভাবে আজ ... ...
দক্ষিণের কড়চা - যদি ভাবো জবালা মেঘ সঞ্চরমান, তবে চোখ মুছে ফ্যালো ঘাসে, নদীঘাটের শরবনে। যদি ভাবো জবালার কোলে জল, তবে চোখ মেলে দ্যাখো এই পূর্বাশা অন্তরীপ। এখন ঘন আলকাতরায় লেপে গেছে আকাশের মনস্তাপ। মনস্তাপই তো। সাড়ে তেরো মাইল দূরে শেষ বাস এসে থেমে যায় তেলোর চকে। তারপর পায়ে হেঁটে রোজ জবা কাঁকড়ার ঝোড়া নিয়ে বাড়ি ফেরে, ফিরতে ফিরতে যেদিন তার ঋতুঃক্ষরণ হয়, মাতুয়া খালের জলে থাই ধুয়ে ছেঁড়া ন্যাকড়া পরে নেয়। কোমরের ঘুনসিতে মাদুলির মধ্যে হাড়গিলের হাড় নড়ে ওঠে। ... ...
ধর্ষণের মামলায় ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্টের মুখ বন্ধ খাম পেশ করা হল আদালতে। একটা বেশ বড় খাম। তাতে থাকার কথা চারটে ছোট ছোট খামে খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটির চুলের নমুনা। ঘটনাস্থল থেকে সিট ওই নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছিল। সেগুলোর ডি এন এ পরীক্ষাও করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কোর্টে পেশ করার পর খাম খুলে দেখা গেল সব ফক্কা। ... ...
সত্তরের শেষে বা আশির দশকের প্রথম দিকে , যখন-ও পর্যন্ত আনন্দবাজারের কভার পেজে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ময়দানি গুঁতোগুঁতি আর ব্যাকপেজে আর্জেন্টিনা বা ইতালির বিশ্বকাপ জয় ছাপা হতো , প্রণয় রায়ের 'ওয়ার্ল্ড দিস উইক' চায়ের দোকানের মাতব্বর খোকন-দা কে পেরেস্ত্রৈকার বোদ্ধা করে তোলে নি তখন-ও পর্যন্ত, সেই সময় আমার মতো একনিষ্ঠ খুদে বাঙালের ইস্টবেঙ্গলের উয়াড়ির কাছে এক গোলে হেরে যাওয়া কে শ্মশানে-র হাহাকার মনে হতো। সেটাকেই বলে সমর্থন ... ...
আমার বন্ধু উমা কথাবার্তায় খুব চৌকশ, দেখতে সুন্দর, আর খুব হাসিখুশী। ও একটা লিটল ম্যাগাজিন চালাতো। সেই সুবাদে পরিচয়। একদিন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দূর্গা পূজার মেলায় উমাকে দেখি এক যুবকের হাত ধরে ঘুরতে। ও আমাকে দেখে ডেকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলেন, আমার বন্ধু, পেশায় লেখক। আমি ভাবলাম, দুজনেরই যখন লেখালেখির প্রতি এতো ঝোঁক, তাহলে ওদের মানাবে ভালই। উমার লেখক বন্ধু চাপ দাড়িতে সুদর্শন। ... ...
দক্ষিণের কড়চা - সুদাম গুছাইতের চোখে চালশে ধরা পড়েছে বছর আষ্টেক। তাও চশমা ধরণের কোনো বস্তু তার নাকের ওপর এখনও ওঠেনি। তার গতায়াত গঞ্জবাজারের সিডির দোকান অবধি। বাকিটা দিনগত।নিউ শান্তি চিত্রমন্দিরের খড়ে ছাওয়া একখানি হলঘর। চারপাশে হিজল গেঁওয়া গাছগাছালির ছায়া পড়ে আছে আলগোছে। একটি ছোট ডোবাও রয়েছে। বাসন্তীর একটি বৈশিষ্ট্যহীন গঞ্জের দুটি বধু হাঁড়ি তিজেল নিয়ে গরাণকাঠের গুঁড়ির ওপর ঘাটের মায়ায় ধোয়াধুয়ি শুরু করলে ঠুং ঠাৎ শব্দ কানে আসে। ভরদুপুরে গা-লাগোয়া হাড়িয়ার ঠেকে অস্পষ্ট রবে ... ...
আমগো সব আছিল। খ্যাতের মাছ, পুকুরের দুধ, গরুর গোবর, ঘোড়ার ডিম..সব। আমগো ইন্টারনেট আছিল, জিও ফুন আছিল, এরোপ্লেন, পারমানবিক অস্তর ইত্যাদি ইত্যাদি সব আছিল। আর আছিল মাথা নষ্ট অপারেশন। শুরু শুরুতে মাথায় গোলমাল হইলেই মাথা কাইট্যা ফালাইয়া নুতন মাথা লাগাইয়া দিত। এই যেমন গণশার করসিল। যন্তু...জানোয়ার.... ওই মানে হাতের কাসে যা পাওয়া যায় আর কি। তারপর হইল কি, লোকজন ইস্যামত মাথা কাটতে আরম্ভ কইর্র্যা দিল। কারুর লাল মাথা কাটি সবুজ কইর্র্যা দিল, তো কাউরে মুকুলেই কাইট্যা করি দিল ... ...
রাম: আজ ডালে নুন কম হয়েছে। একটু নুনের পাত্রটা এগিয়ে দাও তো।রামের মা: গতকাল যখন ডালে নুন কম হয়েছিল, তখন তো কিছু বলিস নি? কেন তখন ডাল তোর বউ রেঁধেছেন বলে? বাবা: শুধু ডাল নিয়েই কেন কথা হচ্ছে? পরশু তো মাছেও নুন কম হয়েছিল। তার বেলা? তোমাদের যত চিন্তা শুধু ডাল নিয়ে, তাই না? মাছের কথা কে বলবে? মাছের কেজি বাজারে কত করে চলছে জানো? বাজারে যাও তো আর না, জানবে কোথা থেকে?তিন বছরের ছেলে: মাথ বালো না। আমি তিকেন কাবো।কলেজে পড়া বোন (গম্ভীরভাবে): শুধু ডাল বা মা ... ...
মারীচ বলল, "না আমি যাব না। আমার পেটে ব্যথা কর্চে।"সেই কথা শুনে রাবন নয় মুখে দাঁত খিঁচিয়ে বললে, "হতচ্ছাড়া যাবি না মানে? দেশের জন্য এটুকু করতে পারবি নে? নিজের পেটটার দিকেই খালি নজর, না? ওদিকে যে আমার কচি মেঘনাদ আকাশের ওপরে দাঁড়িয়ে কনকনে ঠান্ডায় সোনার লঙ্কা পাহারা দিচ্চে, ওর কথাটা ভাববি নে?" মারীচ প্রবলবেগে শিং নাড়িয়ে বলল, "সে তোমার তোমার নংকা, তোমার বেটা পাহারা দিচ্চে, তাতে আমার কি? সোনা, রূপো যাই হোক না কেন, আমাকে তো আর ভাগ দিচ্চ না। ... ...
শক্তির কবিতা পড়লে কখনো কখনো মনে হয় ভেতরে বারুদ ঠাসা রয়েছে। অনেকে শক্তির কবিতায় জটিলতা খুঁজে পান, কেউ পান গভীর আস্তিক্য। আমার শক্তি পাঠ করে মনে হয়েছে তিনি ভীষণ প্রশ্ন করতে ভালোবাসেন, আর নিরন্তর উত্তর খুঁজে চলেন। এবং, তাঁর কবিতায় থাকে বিনির্মাণের ঝোঁক। একটি বিখ্যাত কবিতা পড়ে যা মনে হলো লিখছি। ... ...
ক্লাশ নাইন-ই হবে। লক্ষ্মণবাবু চশমার একটা ডাঁটিতে আঙুল দিয়ে তুলে, স্বাভাবিক মুদ্রাদোষে, প্রশ্ন করলেন: ‘লীন তাপ বলতে কি বোঝো?’ পরক্ষণে, একটু থেমে, আবার প্রশ্ন: ‘কে বলবে?’ আমার পাশে যে সহপাঠী বসে ছিলো সে প্রশ্ন শুনে কেমন একটা উশখুশ করছিলো। সে হঠাৎ হাত তুললো। গোটা ক্লাশ অবাক। যার কথা বলছি সে পড়াশুনোয় ভালোও নয়, খারাপও নয়, কথা সেটা নয়; কিন্তু, সে, সচরাচর প্রশ্ন শুনে উত্তর দেওয়ার জন্য হাত তোলে না। তারপর, ধরা যাক, তার নাম- কৃষ্ণেন্দু; তো, কৃষ্ণেন্দু দাঁড়ালো, লক্ষ্মণবাবু তার দিকে তাকালে ... ...
ভুবন মাঝি নাকি আত্মহত্যা করেছিল। ভুবন মাঝি কি আত্মহত্যা করেছিল? ভুবন মাঝি কি সত্যি মরে গেছে? 'তুমি বেধবা হইছ বলে কি আমি নাও বাওয়া ছেড়ে দেব?' গভীরতম রাতটিতে লক্ষ্মী বাগদিকে এই ছিল ভুবনের কথা। 'তোমাকে আমি কী দিয়া বাঁধি বলত?' লক্ষ্মী কোমরের লুঙিটা ঈষৎ নামিয়েছিল এবং তখন তার নাভিমূলে হাঁসুয়ার ভাঁজ। নিতাই যখন হুপিং কাশিতে শেষদিন কেঁপে কেঁপে উঠছিল, গলায় নীল সাপের মতো মরে যাওয়ার ভয় পেঁচিয়ে গেছে, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন তালা ঝুলছে। ... ...
গঙ্গাপদ একজন সাধারণ নিয়মানুগ মানুষ। ইলেকট্রিকের কাজ করে পেট চালায়। প্রতিদিন সকাল আটটার ক্যানিং লোকাল ধরে কলকাতার দিকে যায়। কাজ সেরে ফিরতে ফিরতে কোনো কোনোদিন দশটা কুড়ির লাস্ট ডাউন ট্রেন। গঙ্গাপদ একটি অতিরিক্ত কাহিনির জন্ম দিয়েছে হঠাৎ করে। ইদানিং গঙ্গাপদ ভয় পাচ্ছে না কোনো কিছুতে। কবে থেকে ঠিক এটা শুরু হয়েছে, সে নিজে তো জানেই না, আমরাও জানি না। এই অতিরিক্ত কাহিনির দরুন গঙ্গাপদ ঠিক বিশিষ্ট কোনো চরিত্র হল বলা যাবে না, কিন্তু গঙ্গাপদ একদিন মার খেয়ে গেল। ... ...
মেডিক্যাল কলেজে আমি ১৯৭৮-এর ব্যাচ। ক্লাস শুরু হয়েছিল ১৯৭৯-এর জানুয়ারীতে। শুরু থেকেই আমি মেডিক্যাল কলেজ ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস’ অ্যাসোশিয়েসনের সদস্য। এমসিডিএসএ ১৯৭৭-এ গড়ে উঠছিল আভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার অবসানে, কলেজের গণতান্ত্রিক ও সমাজ-পরিবর্তনকামী ছাত্র-ছাত্রীরা এই সংগঠনের সদস্য। ’৭৭ থেকে ’৮৩ ছাত্র-সংসদ ছিল এমসিডিএসএ-র নেতৃত্বে। ’৭৯-এর এপ্রিলের ছাত্র-সংসদ নিরবাচনে জিতে আমি ক্লাসের পাঁচজন শ্রেণী-প্রতিনিধির মধ্যে একজন। ১৯৭৯-এর শেষার্ধে মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদ ও এমসিডিএসএ-র উদ্যোগে ... ...
আমার শিক্ষক জীবনটি নয় নয় করে আট দশ বছর জিইয়েছিল। কাজ পাচ্ছি না তো শিক্ষাদান কর। সুতরাং প্রাইভেট টিউশন নামক জীবিকায় ক্ষুন্নিবৃত্তি, কলাটা মুলোটা এবং সন্ধ্যের টিফিন। যেহেতু গণিতশাস্তর পড়াতাম, তাই অধিকাংশের কাছে বেহ্মদত্যির মতো ছিলাম। আমাকে দেখামাত্তর ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবা যতটা নিশ্চিন্ত, খুদে নাগরিকটি ততোধিক মর্মাহত হত। মুখের আলোটি তৎক্ষণাৎ ঘনমেঘে অবলুপ্ত। কী মুশকিলেই না পড়তাম! মুশকিলের আসান তো চাই। প্রথমে ফাঁদ পাতলাম। তারপর চাঁদ পাতলাম। ... ...
গাঙ ফিরবেন বাবু? ওরা দুজনেই চোখ তুলে বাম দিকে তাকাল। একটি ছোট ডিঙি নৌকা। নৌকার লোকটি কী বলল তাদের ঠিক ঠাহর হয়নি। বাতাসে জলের সরসর শব্দ। পিছনের গেঁওয়া গাছের মাথায় বড় বাতাসের ঝাঁকুনি। গাঙ ফিরবেন লাকি গো? ওরা বুঝল এ গাঙফিরানি ডিঙি। ওপারে মিঠালি বাদি। যে-ঘাটে ওরা দাঁড়িয়ে আছে সেটি পটুয়াখালি ঘাট। মধ্যে বিদ্যাধরী ছলাৎছল। সূর্য মধ্যগগনে। মেয়েটির কপালে উড়োচুল। শালের পাড়ের আলপনায় মুখটি বেশ দেখায় যেন। যেন এইমাত্র ধুয়ে সাফা করে ক্রিম ... ...
বড়ি দেওয়ার কথা বলছি। এ রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলা মেদিনীপুর। অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলাতে ঘরে ঘরে বড়ি দেওয়ার চল। বড়ির ডালের অনেক রকমফের। সে সব আপনারা আমার চেয়ে বহুগুণ বেশি জানেন। আপনাদের সঙ্গে সে ব্যাপারে পাঙ্গা নিতে গেলে আমি ভির্মি খাব। আমি অন্য কথা বলি বরং। শীত এল তো ঘরে ঘরে উসখুস মা কাকিমা জ্যেঠিমাদের মধ্যে। কেউ শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। ... ...