লাল রঙের বড় বাড়িটার সামনে দিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার হেঁটে গেছে রাজিয়া। কখনো একা। কখনো ওর দলের সঙ্গে। কিন্তু কখনও ভেতরে ঢোকার সাহস হয় নি। বাড়িটার সামনে দুদিকে দুটো রোয়াক। তাতে অলস দুপুরে রিকশাওয়ালারা গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খেতে খেতে বিশ্রাম নেয়, অন্য সময়ে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমোয় রাস্তার নেড়িগুলো। দুটো রোয়াকের মাঝখানে একটা সবুজ রঙের কারুকাজ করা কাঠের দরজা। এত ভারী যে ছোটবেলায় রাজিয়ার ওগুলোকে লোহার বলে মনে হত। সেই বিরাট দরজাটা ডান পাশে আটকানো একটা শ্বেতপাথরের নামফলক। তার ওপর কালো দিয়ে প্যাঁচ ... ...
বন্ধুরা, রাগ করবেন না, এমন উত্তাল সময়ে ঠাট্টা করছি ভেবে। যথেষ্ট চিন্তার মধ্যেও, টেনশনের মধ্যেও, চিরকাল ঠাট্টা করতে করতেই বড়ো হয়েছি। তাই এই দুঃসময়ে এই পোস্ট দেখে মনে হবে ঠাট্টা। কিন্তু পড়ুন, যদি ধৈর্যে কুলোয়। ব্যাপারটা হলো– অনেকদিন অর্থমন্ত্রকের সংবাদ পাচ্ছি না। নানা বিশিষ্ট জনের লেখা, ট্যুইট ইত্যাদি পড়ে জানতে পারা যাচ্ছে, তিনি, অর্থাৎ এই ভারতীয় অর্থনীতি, এখন নাকি আই সিএইউ তে। ফলে দুশ্চিন্তা ব্যাপারটা বেড়ে গেলো। ফলে কেসটা ঠাট্টা নয়। আমরা এক সময়ে অর্থমন্ত্রক বলতে একটা জটিল ব্যাপার বুঝতাম ... ...
শীত ভাল করে পড়তে না পড়তেই মেলার সীজন শুরু হয়ে গেছে। গুরু এবারে ওমনিপ্রেজেন্ট – গাদাগুচ্ছের মেলাতে অংশ নেবার মনস্থ করেছে। একেবারে সূচনাপর্বেই সোনারপুর মেলা – বোতীনবাবুর দৌলতে তার কথা এখন এখানে অনেকেই জানেন। তো সেই সোনারপুর বইমেলাকেই পদধূলি দিয়ে ধন্য করব এরম একটা সুদুদ্দেশে শনিবার সন্ধ্যেবেলা বেরিয়েছিলাম। মারিয়া আগেই হাত তুলে রেখেছিল, তাই মারিয়ার সাথে গড়িয়ার মোড়ে দেখা করাই সমীচিন মনে করলাম। মারিয়া কামস টু গড়িয়া, সেথা হতে সোনারপুর অটো করিয়া, এই হল গে পেলান। ... ...
রামলাল রাস্তা পার হইতে যাইবেন, কিছু গেরুয়া ফেট্টি বাঁধা চ্যাংড়া যুবক মোড়ে বসিয়া তাস পিটাইতেছিল— অকস্মাৎ একজন তাহার পানে তাকাইল। রামলাল সতর্ক হইলেন। হাত মুষ্টিবদ্ধ করিলেন, তুলিয়া, ক্ষীণকন্ঠে বলিলেন, 'জ্যায় শ্রীরাম।'পূর্বে ভুল হইত। অকস্মাৎ কেহ না কেহ পথের এক মোড় হইতে অন্য মোড়ে অব্যর্থ ডাকিত, 'কে যায়?' সম্বিৎ ফিরিয়া রামলাল উচ্চারণ করিতেন, 'জয় শ্রীরাম।' দুর্বল শরীর, প্রখর গ্রীষ্মেও একটি গেরুয়া উত্তরীয় সর্বদা গলায় জড়াইয়া রাখিতেন। উহা একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কবচ। প্রখর গ্রীষ্মের হাল্কা ... ...
পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে ২০০র' কাছাকাছি দেশ, তার প্রায় প্রতিটিতেই বাঙালীর পদধূলি পড়েছে। তবে নিউজিল্যাণ্ড নামে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে একটি দ্বীপমালা আছে, সে দেশের সঙ্গে ভারতীয়দের তথা বাঙালীদের আশ্চর্য ও বিশেষ সব সম্পর্ক, অনেকে জানেন নিশ্চয়ই। সে সব সম্পর্কের সূত্রপাত আজ প্রায় দুশো বছরেরও বেশী, ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলে। উনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে, যখন ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ারও যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, তখন থেকেই ব্রিটিশ জাহাজের লস্কর হয়ে চট্টগ্রামের বাঙালী নাবিকরা নিউজিল্যাণ্ডে ... ...
মহামহিম মোদী নিঃসন্দেহে ইতিহাসে নাম তুলে ফেলেছেন। আজ থেকে পাঁচশো বছর পরে, ইশকুল-বইয়ে নিশ্চয়ই লেখা হবে, ভারতবর্ষে এমন একজন মহাসম্রাট এসেছিলেন, যিনি কাশ্মীরে টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে কাশ্মীরিদের উদ্দেশে টিভিতে ভাষণ দিতেন। যিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতবাসীকে টুইট করতেন। যিনি বাংলায় দশ কোটি লোককে রাষ্ট্রহীন করার কল বানিয়ে, তারপর তাদেরই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট না করার উপদেশ দিতেন। ... ...
এই ঘোর অন্ধকার সময়ে আরেকবার ফিরে দেখি ১৯৪৭ এর রক্তমাখা দিনগুলোকে। সেই দিনগুলো পার করে যাঁরা বেঁচে আছেন এখনও তাঁদেরই একজনের গল্প রইল আজকে। পড়ুন, জানুন, নিজের দিকে তাকান... ‘আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা হিন্দুস্তানে জন্মায়, বড় হয়, সারাজীবন কাটিয়ে যখন মারা যায় তখন তাদের দাহ করে সেই ছাই গঙ্গানদীর পুণ্যপ্রবাহে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তারা বয়ে চলে গঙ্গার স্রোতধারায়, যদিও গঙ্গার জল শেষপর্যন্ত গিয়ে মেশে সাগরে, সে জল তখন আর শুধু হিন্দুস্তানের নয়। আমরা মুসলমানরা এদেশে জন্মাই, বড় হই ... ...
ব্রিটিশরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যাবে এই ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে গেল, তখন দুটো প্রধান সমস্যা এসে দাঁড়ালো আমাদের স্বাধীনতার সামনে। একটি অবশ্যই দেশ ভাগ সংক্রান্ত। বহু আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, বহু রক্তাক্ত হিংসা দাঙ্গার পর্ব পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল দেশভাগ হচ্ছেই। অবিভক্ত ভারত - ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় যে সমস্যাটি দেখা গেল সেটি হলো দেশীয় রাজ্যগুলির ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা ... ...
একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অজয় রায় (৮৪) আর নেই। সোমবার ( ৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক অজয় দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে মুক্তমনা ব্লগার-বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জঙ্গিরা কুপিয়ে খুন করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অভিজিতের স্ত্রী, আরেক মুক্তমনা ব্লগার বন্যা আহমেদও জঙ্গি হামলায় আহত হন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই ব্লগ ... ...
পূর্ণেন্দু পত্রী মশাই মার্জনা করবেন - তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? আগুন জ্বালিয়ে হোলি খেলবি বলে আমরা তোকে দিয়েছি এক ট্রেন ভর্তি করসেবক। দেদার মুসলমান মারবি বলে তুলে দিয়েছি পুরো গুজরাট। তোর রাজধর্ম পালন করতে ইচ্ছে করে বলে পাঠিয়ে দিয়েছি স্বয়ং আদবানীজীকে, কড়ি নিন্দার সাথে আশীর্বাণী পাঞ্চ করিয়ে খাইয়েছি তোকে। সমস্ত বিরোধী দল, বিরোধী জাতকে বলেছি সরে যাও, নরেন এখন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলা খেলবে। তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? মঞ্চে আদবাণী, মুরলী মনোহরদের সাইড করে ... ...
আরজামাস বলে একটা শহর ছিল। ছোট্ট শহর, অনেক দূরের, অন্য মহাদেশে। অনেক ছোটবেলায় চিনে ফেলেছিলাম। ভৌগোলিক দূরত্ব টের পাইনি।টের পেতে দেননি আর্কাদি গাইদার নামের এক রুশ লেখক। মেদিনীপুর জেলার আদি ও অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, কিংবদন্তীপ্রতিম দেবেন দাস, আমার দিদিকে ছোটবেলায় একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। বইটির নাম- 'ইশকুল'। লেখকের নাম আর্কাদি গাইদার ... ...
একদিন দুঃসাহসের পাখায় ভর করে,ছুঁতে চেয়েছিলাম কবিতার শরীর ... ...
তুমি ভালবাসতে চেয়েছিলে।আমিও । ... ...
১৯৮৩ র শীতে লয়েডের ওয়েস্টইন্ডিজ ভারতে সফর করতে এলো। সেই সময়কার আমাদের মফস্বলের সেই শীতঋতু, তাজা খেজুর রস ও রকমারি টোপা কুলে আয়োজিত, রঙিন কমলালেবু-সুরভিত, কিছু অন্যরকম ছিলো। এত শীত, এত শীত সেই অধুনাবিস্মৃত কালে, কুয়াশাআচ্ছন্ন পুকুরের লেগে থাকা হিমে মাছ অবধি ঘাই মারতে ভুলে যেত। মাইরি! বললাম বটে লয়েডের ওয়েস্টইন্ডিজ, আসলে সেই শীতের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলো ম্যালকম মার্শাল নামের এক তরুণ ফাস্ট বোলার। কোণাকুনি দৌড়ে এসে বাঁহাত টা সামনে তুলে দ্রুত ডেলিভারি করতেন। হৃৎকম্পন শুরু হতো আপামর ভারতীয় দর্শক ... ...
প্রতিদিন পণ করি, তোমার দুয়ারে আর পণ্য হয়ে থাকা নয় ।তারপর দক্ষিণা মলয়ের প্রভাবে, পণ ভঙ্গ করে, ঠিক ঠিকখুলে দেই নিজের জানা-লা। ... ...
মহাভারতের কথা অমৃতসমান ২চিত্রগুপ্ত: হে দ্রুপদকন্যা, যজ্ঞাগ্নিসম্ভূতা পাঞ্চালী, বলো তোমার কি অভিযোগ। আজ এ সভায় দুর্যোধন, দু:শাসন, কর্ণ সবার বিচার হবে। দ্রৌপদী: ওদের বিরূদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই রাজন। ওরা ওদের ইচ্ছা কখনো অপ্রকাশ রাখেন নি। আমার অভিযোগ শুধুমাত্র আমার পঞ্চস্বামীর বিরূদ্ধে। চিত্রগুপ্ত: হ্যাঁ কৃষ্ণা, তোমায় দ্যূতক্রীড়ার পণ রাখা ওদের উচিৎ কার্য হয় নি। দ্রৌপদী: সে অভিযোগ থেকে তো আমি ওদের কবেই মুক্তি দিয়েছি। সেই দিন মনে রাখলে আমাকে পুনরায় অগ্নিতে প্রবেশ করতে হত। ... ...
রামপ্রসাদ সেনের কাছে আরও এক বার ফিরে আসা গেল। কার্তিকে যখন পুরোনো বাংলা বছর শেষ হতে চলেছে স্মরণোৎসব আর আকাশপ্রদীপে, সর্বস্বশৃঙ্খলে বাঁধা ইতিহাসের ভেতর থেকে একটি-দুটি ভূত হানা দেয়। ভূত মানে অতীতস্মৃতি যেমন, বিশ্বচরাচরে উপ্ত জীবনদায়ী মৌলও তো, ততটাই। কার্তিকের শেষে মাঠে থরে থরে ধান, দুর্গাসপ্তমীর কলাবউ স্নান থেকে সবুজের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা খানিক পরেই স্মৃতির খাতায় চলে যাবে। রামপ্রসাদকে, আবারও, ঠিক এই মোকামেই মনে পড়ে যায়। তাঁর নিদানটি সহজ: মন কৃষিকাজ জানে না। মানবজমিন যদি ... ...
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের অস্তিত্বকে ড্রয়িংরুমসাহিত্য-প্রিয় বাঙালি তাঁর জীবৎকালে বিশেষ মেনে নিতে পারেনি। সন্দীপনের ভাষা এবং বিষয়বস্তু দুটোই এর জন্য সমানভাবে দায়ী। সুনীলসাহিত্যের পাঠক সন্দীপন পড়তে গিয়ে যতিচিহ্ন থেকে যতিচিহ্নে হোঁচট খেত, রসভঙ্গ হয়ে যেত তাদের। কাউকে কাউকে বলতেও শুনেছি, "সন্দীপন আমি কেনই বা পড়ব! সহজ করে লিখতে পারাটাও সাহিত্যিকের একটা গুণ এবং সুনীল সেইদিক থেকে অনেক মহান লেখক!" সন্দীপনের মৃত্যুর পর এদিকে, তাঁর সেই ভাষা নিয়েই একচোট হইচই হয়েছিল বটে! আহাহা, সোনালী ডানার ঈগল, আহা ... ...
জেনিফার যেরূপ বলিয়াছিল শশী সেইরূপ সাজিয়া আসিয়াছেন। বিশুদ্ধ বাঙালির বেশ। গিলে করা সাদা পাঞ্জাবি ও সঙ্গে ধুতি। বাড়তি, একটি ওড়নাসম রঙিন উত্তরীয় রহিয়াছে।জেনিফারের অদম্য বায়না শশীকে শুনিতেই হয়। চলো শশী, কতকাল ক্যালকাটা যাই নাই। মনে পড়ে শশী, ওখানেই প্রথম দেখা, সেই স্টেজ, সেই গ্রিনরুম, যেখানে দোঁহে প্রথম দৃষ্টিপাত। কী করে জানিলে ডিয়ার, আমার প্রিয় ফুল, প্রিয় রঙ, প্রিয় চকোলেট ও কেক। বড় মিস করি শশী সেসব দিন। চলো, এইবেলা ক্যালকাটা যাই। জেনিফারের কথা ফেলিতে পারা যায় না। তথাপি ... ...
"ইনসাইড আস দেয়ার ইজ সামথিং দ্যাট হ্যাজ নো নেম,দ্যাট সামথিং ইজ হোয়াট উই আর। "হোসে সারামাগো, ব্লাইন্ডনেস ***হেলেন - ঘড়ির কাঁটাটাকে এক ঘন্টা বাঁয়ে হেলিয়ে দিলে, সৌম্য তখনও বসেছিলো শিখরের পাশে। বাইরে একটা ভ্যাপসা গরম ছাড়ছে। জানালার নিচে হানিসাকলের ভারি উগ্র মিষ্টি গন্ধ ফ্লাই স্ক্রিনের মিহি জালি ভেদ করে ঢুকতে চাইছে নাছোড়বান্দা। ধাপে ধাপে নিচে নেমে যাওয়া বুরিম অ্যাভেন্যুর ওদিকে চীৎকার করছে রোদ। এখান থেকে আকাশ দেখা যায় না । ... ...