আগে মানে এই সত্তর আশির দশকে এরকম বেশ কিছু জ্যেঠু বা পিসীদের আমরা অনেকেই চিনতাম। এঁদের কেউ বলত ছিটেল, কেউ বলত বাতিকগ্রস্ত, কেউ কেউ বিরক্ত হত, বেশিরভাগই এঁদের নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে কোথাও একটা প্রশ্রয়ও ছিল সমাজে এঁদের প্রতি। এঁরা এঁদের বিশ্বাসমত সকলের যাতে ভাল হয় সেরকম চেষ্টা করতেন, ব্যক্তিগত অধিকার অনধিকারের তোয়াক্কা খুব একটা করতেন না। সেটা যে সবসময় ভাল হত তাও না, তবু এঁদের আন্তরিকতায় খাদ ছিল না। আরোপিত স্বাতন্ত্র্যে ঘরবন্দী থাকার সময় এঁদের কথা হঠাৎই বড্ড মনে পড়ছে। ... ...
আমাদের পরিবারের সাথে এখন খুব ঘুলেমিলে গেছে সোনামণি। ইচকি পিচকিও খুব খুশি তাদের নতুন মামি পেয়ে। এদিকে আমিও ওর হাতে দুজনকে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত। মা এখন হরিপদবাবুদের পুরনো কুলারে আমাদের থাকার জায়গা করে দিয়েছেন, আর মেয়েটাও অল্প কদিনে ঐ খুপচিটাকে কেমন ঘর বানিয়ে ফেলেছে। ... ...
বাজার করাটা নিঃসন্দেহে একটা শিল্প। তাতে বিশেষ কারিগরি দক্ষতা লাগে, ইচ্ছা লাগে, ধৈর্য লাগে, বুদ্ধি, দুষ্টবুদ্ধি লাগে, অতি দ্রুত অঙ্ক-কষার ক্ষমতা লাগে। বাপরে, এত কিছু যদি আমার এই এক দেহতেই থাকে, তাহলে বাজার কেন করব বাপু, অ্যাষ্ট্রনট হব, চাঁদে যাব, মঙ্গলে যাব। কিন্তু তা বললে চলবে কেন? বাজার অতি বিষম বস্তু, না করলে পেটে কিছু পড়বে না, তবে কিনা যাঁরা গৃহিণী নিয়ে ঘর করেন তাঁদের অবশ্য পেটে না পড়লেও পিঠে ঠিক পড়বে। ... ...
একদিনের গল্প, যা আসলে প্রতিদিনেরও... ... ...
ঘড়িটা কি স্লো যাচ্ছে? নাকি অপেক্ষা চিরকালই ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়? নইলে, কোন সকাল থেকে তৈরি হয়ে বসে আছি, তার দেখা নেই। অথচ নিশ্চিত আসবে বলে জানিয়েছিল। কতদিন যেন আসে নি। মাঝে কাটল কত মাস? নাকি অনেক অনেক বছর? ... ...
দীর্ঘ শীতে আইওয়ার বিস্তীর্ণ চাষের জমির কালো মাটি জমে বরফ। গ্রীষ্ম এলে রোদের তাপে মাটি আস্তে আস্তে নরম হবে, তবেই বীজ বোনা, ফসল ফলানো। কিন্তু মনের মধ্যে যখন বরফ জমে? আইওয়ার বংশানুক্রমিক চাষের কারবারী জর্জ মিলার কুড়িয়ে নিলেন ভালোবাসার উত্তাপ, বরফ গলে ধুয়ে গেল সাদা-কালোর বিভেদ। পনেরোই জানুয়ারি মার্টিন লুথার কিংএর জন্মদিন। তাঁর লড়াই ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’এর পথ ধরেই আমেরিকায় কালো মানুষের সমান অধিকার এসেছিল। এ লেখা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। ... ...
তখন আমি ছিলাম দারুণ গরীব এবং দারুণ সুখী, হেমিংওয়ের মতো বলতে পারলে ভালো হতো; কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তখন আমি থাকতাম ডাউনটাউন ব্রুকলিনের একটা বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে। আমার বাথরুমটা ছিল নিজস্ব আর শুধু এইটুকুর জন্যে আমি ঐ ঘুপচি অ্যাপার্টমেন্টটা ছাড়িনি। অনেকরকম ছোটখাটো কাজ করতাম আমি, যার মধ্যে রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি সবই ছিল। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়তাম। ... ...
ভাষাদিবসের দিনে এক পুরোনো গালগপ্পো ... ...
গরম লাগছিল প্রচন্ড। কিভাবে এই জ্বালা থেকে মুক্তি পাই, সাজেশন চাওয়ায় বিল্লি তৎক্ষণাৎ বললো, তিব্বত গেলেই পারো। আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম, "বলে কী! তিব্বত? যাওয়ার জোগাড় করতে করতেই তো ঘেমে নেয়ে মরে যাব!" বিল্লি একটুও না দমে বললো, "সে মরতে পারো, কিন্তু একবার চেষ্টা চরিত্তির করে যদি পৌঁছে যাও তিব্বতে, দেখবে এ জীবনের মতো গরম উধাও হয়ে গেছে! তাপ্পর যতই যাও বীরভূম বা আফ্রিকা, গরম আর লাগবে না। এমনকি বরাত থাকলে পরের জন্মে গ্রিনল্যান্ডেও জন্ম হতে পারে।" ... ...
না, গায়ে পড়তে বুঝি, হাতির বা অক্টোপাসের শুঁড় নয়, কেমন পাকানো পাকানো মাংসল দড়ির মতো আর তার সারা গায়ে কোনও চকচকে তরল। ফট করে বাঁহাত পেঁচিয়ে ধরতেই ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়াই। এহ্ হাতে চটচটে কীসব লেগে গেল। দিলরাজকে হাঁক দি, পালাও এখানে আর না!! কিন্তু সে পাগলের মতো বালি পাথরের খাঁজে, খুঁজে চলেচে তার মড়া বাচ্চার নাড়ি। ... ...
দ্রৌপদীর চিত্তহরণ করাটা কি মুখের কথা? অতবড় শালপ্রাংশু মহাভুজ বৃষস্কন্ধ পরম রূপবান মানুষটা? একহাতে বৃক্ষ উপড়ে ফেলতে পারেন এরকম চণ্ড মানুষটাও দ্রৌপদীর কাছ থেকে এক কণা ভালবাসা পাবার জন্য কেমন শিশু হয়ে যেতেন। ... ...
আজকাল দেখছি পাখিদের লাফালাফি বেড়ে গেছে চতুর্গুণ। সক্কাল সক্কাল, পাশবালিশটা চেপে ধরে তৃতীয় দফার ঘুম দেবার চেষ্টা করছি প্রাণপন, দেখি জানলায় ঠক্ ঠক্ করে টোকা দিচ্ছে কে যেন। এই লক করে দেওয়া জীবনে কার এত অনুপ্রবেশের উৎসাহ? বাধ্য হয়ে বাঁ চোখটা কোনরকমে খুলে দেখি এক ব্যাটা ছাতার পাখি দিব্যি গা ফুলিয়ে মোটাসোটা হয়ে ঠোঁট দিয়ে ঠুকে চলেছে কাঁচের জানলায়। ... ...
গল্পে যেমন ... ...
মেট্রো স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার পথে অটোটা ঠিক পাঁচবার বাঁক নেয় – অমিত হিসেব করে দেখেছে। সুধীন সমাদ্দারের বাড়ি ঠিক তিন নম্বর বাঁকের মুখে। সুধীন সমাদ্দারকে অমিত চেনে না। কিন্তু রোজই দেখে তাকে তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসে লিখতে। সুধীন সমাদ্দার ছোট ছোট কবিতা লেখেন আর লিখে বাড়ির দরজা বা বাইরের দেওয়ালে আটকে দেন। তলায় সই – সুধীন সমাদ্দার। ... ...