ছোট গপ্পো । মাইথনকে, ছোট শহর বললে, তার নিরিবিলি পরিবেশটাকে, উপেক্ষা করা হয়। তবে, মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার নিয়মিত আসেন, বাজারে সব সরঞ্জাম সহজলভ্য, নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি স্থানিয় প্রশাসন সজাগ - শহুরে সাচ্ছন্দ্য যথেষ্ট। ... ...
সুমাতা তো অনেকেই হয়। কিন্তু কুমাতা হলে? গল্পটা কেমন হবে? ... ...
পায়ে শট ছিল না সেরকম। গায়েগতরে খেলা তো দূরের কথা। তবু গোলটা চিনতো। বক্সে বল পেলেই পায়ের ডগা দিয়ে টুক করে গোলে ঢুকিয়ে দিতো। মানস থাকলে বলতেন - সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার। পল্লব থাকলে বলতেন - পরিভাষায় যাকে বলে, ফক্স ইন দ্য বক্স। ... ...
খালিশপুরে হাউজিং বাজারের বিহারী পট্টির এক চিমসার মধ্যে সে সাইন্দা থাকে! চায়ের কাঁপে চুমুক দেয় আর চিনচিন করে বিড়িতে টান মারে! ফলে আমরা রত্ন আবিষ্কারের মতন ঝকমকি উল্লাসে উজ্জ্বল হয়ে যাই তারে নজরে পেয়ে! আমরা নাড়াই তারে! আমরা জিজ্ঞাস করি, কাকা দেশের অবস্থা দেখছেন? করোনার মধ্যে সারা দেশে কি টাল্টুবাল্টু কারবার? ... ...
সুজিত ডাক্তার চোঁয়া ঢেঁকুরের রুগী দেখতে এসে আধঘন্টার মধ্যে লিভার ক্যান্সার প্রেডিক্ট করে "খুবই ভয়ের ব্যাপার" বলে শেষ করেছেন। সেই থেকে ভিড় জমে গেছে সান্যালের আঙিনায়; গুমরে-ডুকরে বিলাপ উঠছে -- ডাক্তারবুড়োর সহজ কালমেঘের অঙ্কে যে সমস্যা মিটতে পারতো, এখন মনে হচ্ছে অঙ্কলজিস্ট ছাড়া গতি নেই। মুড়িমাসিও নাকিসুরে কেঁদে বললো, তার মুড়ির ধুলো চোখে ঢুকে করকর করছিল, সুজিত ডাক্তার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক ঝলক দেখে নাকি বলেছে, রেটিনা ফেটে গেছে। ... ...
জানিস পেখম রাস্তা,বিদ্যুৎ, জল,যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুই আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু আমরা এক গভীর অসুখে ভুগছি রে, কবে যে নোংরা রাজনীতির ভাইরাস আমাদের প্রত্যেকের মনকে সংক্রমণ করেছে। এ রোগও মরশুমে প্রকট হয়। মরশুম বলতে ভোটের সময়। ফুটবল মাঠের মত ভোটের মাঠেও নিজের দলের খেলোয়াড় ছাড়া সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী।আর কোন পরিচয় থাকেনা। সারা বছর ভুলাভালা সাদাসিদা ছেলেটাও তখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার । হাসিখুশি মিশুকে বৌদিটাও তখন গুপ্তচর। যত পৌরুষ,যত বীরত্ব, যত বুদ্ধিমত্তা আশ্বিনমাসে ধানের শিষের মত ফুলে বেরোয়। ... ...
নীলাভ আলোর ঝলকে প্রস্তরীভূত শরীরের ভেতর আদিম অন্ধকারের স্বাদ থেকে জেগে উঠে দেখলাম কোনো ব্যথা নেই, কোনো স্মৃতি পর্যন্ত নেই যে কবে শরীরের অনুভূতিসম্পন্ন স্নায়ুকোষগুলি একে একে নষ্ট হয়ে ঝরে গেছে। মৃত্যুর পরে সময়ের কোনো চেতনা অনুভব করিনি আর। তাই জানিনা কতদিন শুয়ে আছি এই গ্রহের মাটিতে প্রায় জীবাশ্ম হয়ে, পাথরের দৃঢ় শরীরে গেঁথে আছে আমার কঙ্কাল, তবু জেগে ওঠবার প্রেরণা সংগ্রহ করে নিতে হলো নীল আলোর বৃত্তটায় করোটির কোটরদুটো ধাঁধিয়ে যাবার ফলে। ... ...
সে সময় পুরুলিয়া মানে কিষেণজি। আমাদের যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বাঘমুন্ডির দু'জন স্কুল শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় তখন সারা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। ... ...
গাছ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ে আর এক আশ্চর্য ভয়ের গল্প ... ...
রাঁধুনি মৃদু হাসলেন। গ্রীষ্মের দুপুরের লু-এর মতন সেই হাসি। ডানহাত দিয়ে বাঁ-হাতের ব্লাউজের হাতা কনুই অবধি তুলে দেখালেন। দেখলাম - ব্লাউজের নিচের হাতের চামড়ার রঙ বাকি দেহের, মুখের রঙের চেয়ে একেবারে আলাদা - ফ্যাটফ্যাটে সাদা। ... ...
ঘরবন্দী স্মৃতিকথন -- ছোটবেলায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেটি ছিল টালির ছাউনির দু'কামরার ঘর। বারান্দা প্লাস্টারের। তার ওপর সিমেন্টের সর নেই। এবড়ো খেবড়ো হেতনেয় বসে চলত হুটোপুটি। খানিক পা ঘষলেই চামড়ায় সরু সরু দাগ পড়ত...সমান্তরাল; যেন স্কেল দিয়ে মাপজোখ করে কেউ বুঝি খোলস থেকে কয়েক পরত রং তুলে নিয়েছে। তিন হাত উঁচু সেই বারান্দার পাশেই ছিল ঘেঁটু ফুলের জঙ্গল। ... ...
ইতিহাস আশ্রিত এই গল্পটায়, যেটুকু কল্পনা মিশেছে, তাতে মানুষের নিজের পরিচিতি খোঁজাকে বুঝতে চেয়েছিলাম। খুব উঁচুদরের সাহিত্যকর্ম নয়। একটা প্রচেষ্টা মাত্র। ... ...
-ওই বেজান বেড়াটার জন্য কত চোখের পানি, কত ঘৃণা, কত যন্ত্রণা, কত যুদ্ধ। যার জান নাই তার লাগি কত জান যায়, আমি রাতের আন্ধারে বেড়াটারে খুইলা লই। যেহানে বেড়া নাই সেহানে দেশভাগ নাই। সব এক, কে কইবে কোনটা দেশ আর কোনটা বিদেশ? ... ...
কিছু শোনা, কিছু কল্পনা ... ...
দুইদিন পর রোজিনা আচলের কাপড় ঘঁষতে ঘঁষতে যখন ছেলের জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করা শুরু করেছিল, রওশানারা তাকে থামিয়ে দিয়ে কণ্ঠটা চিকুন করে জানতে চেয়েছিলেন, “আগে ক, পোলার কুনো ব্যারাম আছেনি?” এক গাল হেসে দিয়ে রোজিনা মোটা কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিল, “ যেই হারে ব্যায়াম করে, ব্যারাম আইবো কোথ থনে? নিশ্চিন্ত থাহেন ফুবুয়াম্মা, পোলারে একটা কাশ দিতেও হুনে নাই কেউ কহনো। ‘’ ... ...