বালাসাহেব মারা যাবার বছরখানেক পরে বোম্বে এসেছি। সন্ধ্যের ঝোঁকে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; আলো ফেটে রঙ নাবছে, রঙ থেকে ঝিনচ্যাক রঙ। ... ...
রামধনু সিরিজের দ্বিতীয় গল্প। ... ...
এইভাবে রিকশাদুটি ক্রমে গলির মুখে বাঁক নেয়। মঞ্জু দ্যাখে কী বিচ্ছিরি পাড়াটা! চারদিকে ঘিঞ্জি বস্তি, রাস্তার ধারে ময়লা জলে থেবড়ে বসে চান করছে মুশকো মুশকো লোক। সস্তা সাবানের ফেনা গড়িয়ে যাচ্ছে ম্যানহোলের দিকে। রোদে একটা বোঁটকা গন্ধ ঝুলে রয়েছে। কর্পোরেশনের ডাস্টবিন থেকে ভাত গড়িয়ে পড়েছে রাস্তায় ... ...
নিউজটা ছিল এ বছর সংঘটিত তুলকালাম বন্যার জন্য দায়ি ইঁদুর! ইঁদুরেরা বন্যা রক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছে তাই হুড়মুড় করে জল ঢুকে এলাকার পর এলাকা তলিয়ে গেছে! এরকম একটা ডাহা গাজাখুজে অপবাদের তীব্র প্রতিবাদ এবং বন্যাগ্রস্ত ইঁদুর সম্প্রদায়ের জন্য করনীয় ও ত্রাণ বিষয়ক জরুরী বৈঠকের ডাক দেন ইঁদুর সমাজের প্রধান ধেড়ে ইঁদুর! এবারই প্রথম প্রজাতিগত জাতীয়তার উপর আঘাত পড়ায় ইঁদুর সমাজের সকল দল উপদল গোত্র থেকে প্রতিনিধিরা একত্র হয়েছেন ইঁদুরদের এই আঞ্চলিক সভ্যতা রক্ষার তাগাদায়! ... ...
গল্প আর গল্পকার যখন এক হয়ে জয়, তখন কী কান্ড হতে পারে! ... ...
একটা মচমচে মাছ ভাজার গন্ধ তাতিয়ে দিতে লাগলো দীপকে! পড়ার টেবিলে আর মন বসল না; ‘বাবা নেই’ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ড্রইয়িং রুমের রিমোটটা হাতে তুলে নিল। ব্রেকিং নিউজটা এখন হেডলাইনে কনভার্ট হয়েছে, মানুষ ভেঙে পড়ছে প্রয়াত নায়কের বাড়িতে, একের পর এক সাক্ষাৎকার আসছে, ক্যামেরাম্যান হুমড়ি খেয়ে পড়েছে! ... ...
ওপরের তাক থেকে তিন চারটে বই টেনে নামাতেই একটা খাম মেঝের ওপর পড়ে গেল। টুলের ওপর থেকে রঞ্জন সাহা তাকিয়ে দেখলেন একটা বড়সড় ব্রাউন রঙের খাম। কিসের খাম বুঝতে পারলেন না। এই তাকটা খুব একটা ব্যবহার হয় না। মাসখানেক ধরে গৃহিনী তাগাদা দিচ্ছেন বই-এর আলমারির ওপরের তাকটা পরিষ্কার করার জন্য। আজ টুলে উঠে সবে কাজটা শুরু করেছেন, তার পরেই এই ঘটনা। ... ...
যদুনাথ সরকারের লেখা থেকে উপাদান নিয়ে, ইতিহাসের কিছু ঘটনা আর কল্পনা মিশিয়ে লেখা গল্প। শাজাহানের সময় নগ্ন সাধক সারমাদ সত্যিই গান আর কবিতার মাধ্যমে, তাঁর নিজস্ব দর্শন (যার খানিকটা গল্পে বলা আছে) প্রচার করতেন। তবে, এই গল্পে সারমাদের গানটা আমার লেখা। দশম শতকের পারসিক মনীষী মনসুর আল হাল্লাজের আনাল হক (সো অহং) বাণী সারমাদ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায় না। আবার করতেন না, সেটাও জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। ... ...
ঝুরো গল্পের সংকলন প্রকাশ করতে চাই ... ...
সজীবকে জানানো হয়েছিল সাপোর্টিং হ্যান্ড আসছে; কিন্তু কে ভাবতে পেরেছিল, সে হবে স্কুল বালিকার মত দেখতে, আর মুখ ফোলাবে কথায় কথায়! তিথী সজীবের সব কাজ নিজেই করে দিতে চাইতো, আর প্রায়ই আটকে যেয়ে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ স্বরে এমন চেঁচাতো যে সজীবকে গোল্লাছুট লাগাতে হতো। সেদিন কয়েকটা সেলস্ সেন্টার পরিদর্শনে বের হচ্ছিল, তিথী যেন ঘরের মেয়েটির মত বায়না ধরল। রেশমী চুলের ঢেউ তার মুখের বিস্তীর্ণ উপকূলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, গোলাপী ঠোঁট দুটো ভিজে সপ্সপ্ করছিল । সজীব কথা না বাড়িয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশায় উঠে গেল আর তারপর তিথীর দিকে রোমশ হাতটা বাড়িয়ে দিল; কিন্তু তিথী কি কারণে কি মনে করে ইঞ্চিখানেক পিছিয়ে গেল। এরপর রিকশার বাহু ধরে গদিতে নিজে নিজেই উঠে বসলো, যদিও পুরো পথ জুড়ে একটা ফাঁক রাখল তাদের দুজনের মধ্যে, সেই ইঞ্চিখানেক। ... ...
নিয়োগীদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। পুজো বহুদিনের; খাতায় কলমে হিসেব পাওয়া যায় দুই শতকের, তবে তার আগেও যে হতো – সে কথা প্রায় সবাইই বলেন এ বাড়ির। কলকাতার এই বাড়ি রাধানাথ তৈরি করে থাকতে শুরু করেন বছর ষাটেক আগে, অর্থাৎ এই বসতে পুজোর বয়স সেরকমই। বাড়ির পুজোয় বাড়ির গাছের ফুল থাকুক অঞ্জলির পাত্রে – সেই ইচ্ছায় রাধানাথ তখনই লাগিয়েছিলেন দোলনচাঁপা আর শিউলি। ... ...
ছোট পাড়ার এই রাস্তাটা আজ সন্ধেয় আলোয় সাজলো সম্পূর্ণ। দুটো গলি পেরিয়ে পাড়ার পুজো। আবছা সুরে সে পুজোর সূচনা ভেসে আসছে এত পথ। নিঝুম, হৈমন্তী রাস্তার উপর আলোর ঝালর, তারও উপরে কিছু বাড়ির বারান্দায় শৌখিন জ্বলা-নেভা আলো, আমাদের এই নিয়োগী বাড়ির গায়ে আলোর মালা, আর তারও অনেক, অনেক উপরে, হাল্কা হিমধরা আকাশে ইতস্তত তারাদের সংলাপ। বোধনের সময় হল। ... ...
সেডিজম্ ও সরস্বতী পুজোর খিচুড়ি প্রসঙ্গে ... ...
অস্তমিত সূর্যদেব তখন আকাশ - বাটি ভরে পায়েস খাচ্ছেন, লাল, নীল, কমলা, হলুদ, গোলাপি, ফিরোজা.. তাতে হরেক রকমের সর। আজ 'তার' জন্মদিন। রাধারাণীর ঘরে 'ম' 'ম' করছে পরমান্নের গন্ধ। বাতাস আজ ক্ষীরের মতো নিগূঢ়। গাছেরা উথলে ওঠা ঘন। ... ...
গাঁজাখুরি গরুর গপ্পো ... ...
কখনো কখনো পকেটে হাত বাড়ায়। আজ এক চিলতে দেখে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ফ্লাইওভারে অবস্থানকালে সে অনেক নীচের দিগন্ত ছাড়িয়ে যাওয়া সরু রেলপথখানি প্রতিদিন একবার হলেও দেখে নেয়, লাইনের বস্তিগুলোতে চলা জীবনপ্রবাহ তাকে বিষাদগ্রস্ত করে, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে চিন্তার খোরাক দান করে। সেখান থেকে ফ্লাইওভারে উঠে আসা হাতই হয়ত তার চোখের সামনে প্রসারিত হয়। কিন্তু একই হাত বার বার এলে বিস্বাদ লাগে ব্যাপারটা। পাতা হাতের বাজারও একই অর্থনীতি চলে মনে হয়, পাতা হাতেও নতুনত্ব চাই, ভিন্ন গল্পের স্বাদ চাই হাতের বিবৃতিতে। ... ...