‘’কিন্তু সেই দিনটিতে …সেই ভয়ংকর দিনটিতে … সেদিন …সেদিন তো আমাকে, তোকে … দুজনকেই চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল ওর উপর! কিন্তু ও তো সেদিন …সেদিন …পুরো নিথর….আহারে! আর নড়ার শক্তি ছিল না বাছার আমার! আর কোন শক্তিই অবশিষ্ট ছিল না দেহে ..সব শেষ হয়ে গিয়েছিল…সব …’’ কথা শেষ করতে পারে না পাতলা; হঠাৎ চতুর্দিকে ঘন ধুলোর পর্দা পড়ে যায়, বাতাসের দাপটে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়, তারের উপর বেঁধে রাখা অবয়ব দুটো আর কেউ কাউকে দেখতে পায় না! কিছুক্ষণের মধ্যেই অঝোর ধারায় পড়তে শুরু করবে ভারী অথচ হালকা সব মেঘের দল, যারা লম্বা সময় ধরে ধৈর্য ধারণ করে বসেছিলেন আ-কাশ বিস্তৃত নীলিমার গায়ে হেলান দিয়ে! ... ...
গোরেস্তানে মধ্যরাত্রে পঙ্খিরাজ টানা গাড়ি নামে! গাড়ি ভরা লাশ! গোরেস্তানের নীরবতায় ঝিঁঝিঁর ঝিমঝিম টানা সুরের মধ্যে ঝুমঝুমি বাজিয়ে পঙ্খিরাজ গাড়িটা নাজেল হয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আর ঘোড়ার ক্ষুরের ক্লান্ত শব্দ চারদিকের মৌনতার মধ্যে রহস্য ঢেলে দেয়! ... ...
একটা টি সেট আর একটি মেয়ে!এই নিয়েই কথকতা। ... ...
ধর্ষণ কি শুধুমাত্র শারীরিক? নাকি অনেক বেশি মানসিক? ... ...
এই বাংলায় লেখকের তো অভাব নেই। কিন্তু শুধু লিখে মোটা টাকা রোজগার করছেন এমন লেখকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। হয় কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়, নয় সরকারি চাকরি করে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে এক নতুন উচ্চতায় স্থাপন করলাম। লেখালিখির যা জ্ঞান আছে তাতে মনে হল ঘরে বসে হাজার হাজার টাকা রোজগারে কোনও সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। ... ...
কিন্তু সেই ছিল আমার সত্যিকারের স্মার্ট ফোন… না ভুল হচ্ছে, স্মার্ট বললে তাকে অপমান করা হয়, সেই ছিল স্মার্টেস্ট। আমার সেই ফোনটার একটা জীবন ছিল, সে আমার কথা শুনতো, আমায় বুঝতো। সে যে আমাকে চিনতে পারত, বিশ্বাস হয় না? হাতে নিলে টের পেতেন, কেমন গাইগুই করছে! তার একটা ভাষা ছিল - আমি বুঝতে পারতাম; তার একটা আলতো স্পন্দন - সে শুধু আমার কাছেই ধরা দিত। তারও ছিল চাওয়া-পাওয়া, আমায় সে মুখ ফুটে বলেনি, কিন্তু আমি জানতাম, আমি তার কান্না অনুভব করতে পারতাম। কিন্তু কি যে হল! কি করে এতটা অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম? ... ...
আমার ছেলেবেলায় স্কুল-বাস ধরতে যাবার পথে একটি কাঠের-পুলের পাশে একটি পাগল বসে থাকতো।।।একবার দেখলাম পাগলটি চলে গেছে ।।কিছুদিন পর দেখলাম আবার সেই রিকশা স্ট্যান্ডের পাশেই একটি পাগলী এসে বসেছে।।।বাকিটা কল্পনা , গল্পের খাতিরে ... ...
দ্বিতীয় গল্প। প্রথমটা ছিল নুরুন্নাহার বানুর ঘটনাটি। এখন তার বান্ধবী জোলেখা বানুর ঘটনা। ... ...
পি.জি ওডহাউসের একটা গল্পকে গাউনের বদলে শাড়ি পরালে কেমন হয় - মানে অনুবাদ না করে রূপান্তর করলে কী দাঁড়ায় ব্যাপারটা, সেটাই দেখার চেষ্টা করেছে এই লেখা। ... ...
দেহটা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল পিঠের সিংহাসনটাতে, কিন্তু তেলের কাঁটার সাথে সঙ্গত করতেই কিনা, গাড়িটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। সিগনাল বাতি নেই, তাও এই জ্যাম! ‘’রাস্তায় নামলেই পাব্লিকের নাটকের আল্লাদ উডে… পাংখা গজান আরম্ভ করে…’’, বিড়বিড় করতে থাকে মারুফ গায়ের ক্যাটক্যাটে হলদে গেঞ্জিটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। গেঞ্জিটা বুক পর্যন্ত উঠাতেই বেরিয়ে পড়ে রোমশ শরীরটা, এক রত্তি মাংস বাড়তি নেই কোথাও, হাড্ডিগুলো গড়েপিটে উঠেছে সেখানে বাইশটি বছর ধরে, তেল-মসলার কারুকাজ ছাড়াই। কিন্তু এই শরীরটারই চাকায় চাকায় বেজে চলে রাজপ্রাসাদী তান, যখন এক মনে আল্লা-খোদা করে যেতে থাকে তার পিছনে দন্ডায়মান এক দল নিরীহ ও নিপীড়িত যান! সংগীতটা আরো সুমধুর হয়ে উঠে, যখন সে বড় রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকে পড়ে। তখন জায়গার অভাবে তার জ্যাকটাকে সাইড দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে মরাকান্না জুড়ে দেয় আগের থেকেও নিরীহ ও নিপীড়িত কিছু যান। মারুফ আপন মনে হেসে উঠে! এমন কোন প্রাণী আছে যে রাস্তার বুকে চড়ে বেড়াবে আর তাকে সমীহ করবে না? তাকে নিয়ে রাস্তার সবার দুশ্চিন্তা, অথচ কারো মুখে রা পর্যন্ত নেই! পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, এমনকি মন্ত্রী- মিনিস্টারের গাড়িকে গুণতে চায় না পাব্লিক আজকাল! কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলে না, গালাগালির তুবড়িও ছুটে আসে না। কি করবে, মানুষ যে ময়লা সহ্য করতে পারে না; টিয়ার গ্যাস, গুলি হজম হলেও ময়লা হজম হতে চায় না তাদের! বাসার পায়খানাটার মতই ঘেন্না একে তাদের! ... ...
কয়েকটা নিঃসঙ্গ রেখা, যারা তার অবয়বটুকুকে ফুটিয়ে তুলেছে, তাদের সাথে সংলগ্ন হয়ে একমনে সেলাই করছিল জানলার পাশে বসে; হাতের বইটা মুড়ে আমি বললাম — এত কম আলোয় চোখ ঠেরে ঠেরে সেলাই কোরোনা অনু, চোখ খারাপ হয়ে যাবে। সে তাকাল না আমার দিকে, যেন শুনতে পায়নি, এত বেশি দূরত্বে রয়েছে; তারপর চোখ তুলে হাসল। বলল — বিকেল ফুরিয়ে এল, তুমি হাঁটতে গেলে না? ... ...
এক সময় ঝটিকা অভিযানটি সম্পন্ন করে প্রদর্শনীতে থাকা বাক্সগুলোর থেকে কম দামী কিছু মিলবে কিনা জানতে মোরসালিন তরুণীটির দিকে প্রথমবারের মত ভাল করে তাকায়- গোলাপী ফাউন্ডেশান উপচে উপচে পড়ছিল তার রক্তে-মাংসে-গাত্রে। বেশ আড়ষ্ট হয়ে পড়ে সে, আর অনেকটা গায়ে পড়ে অকারণে একটা ব্যাখ্যা জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করে, ‘ইয়ে…মানে…বাচ্চাদের জন্য …কিছুক্ষণ খেলেটেলে তো নষ্ট করে ফেলবে, তাই বেশী দামিটা…?’ সেলস গার্ল যেন সব বুঝতে পারে, তার ভীষন মায়া পড়ে যায় ক্রেতাটির উপর। বাণিজ্যিক চাকরি নীতিভ্রষ্টা হতে কসুর করে না এক পারিবারিক চাকরির অমোঘ টানে…অতি সস্তা একটি মেকাপ বক্স যেটি খেলতে খেলতে নষ্ট করে ফেলা যাবে, তার একটি বিকল্প উৎসের নাম চুপি চুপি বলে দেয় সে। ... ...