সত্য ঘটনা অবলম্বনে ... ...
আচমকা একটা খটখট শব্দটা শুনতে পেল - বন্ধুটির ট্যবলেট পর্দায় স্থির হল মোরসালিনের প্রজেক্টর। ভাবনায় ডুবে রয়েছে তার হৃদয়ের বন্ধু; তার আচমকা, অস্বাভাবিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। হঠাৎ কি মনে করে মোরসালিনের লেখাসমেত ইমেইলগুলো এক সাথে করল সে। নিঃশ্বাস পড়ছে না মোরসালিনের, শিহরিত নেত্রে চেয়ে রয়েছে বন্ধুটির ইমেইল পেইজে, হয়ত এখুনি কোন সম্পাদকের কাছে প্রেরিত হবে। ... ...
উত্তাল যমুনার বুকে দীর্ঘ এক ফালি চর - নাম ফুলেশ্বরী, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার মধ্যে পড়েছে চরটি। বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন যমুনার বুকে এই চর জেগে উঠেছে স্বাধীনতার পরেই, তবে বসতি গড়ে উঠেছে আরো কয়েক বছর পরে। বর্ষাকালে প্রমত্তা যমুনার স্রোতরাশি যখন উত্তাল হয়ে ওঠে সে-সময়ে ইঞ্জিন নৌকায় প্রবল ঢেউ ঠেলে বেড়াবাজার ঘাট থেকে ফুলেশ্বরীতে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। ... ...
সুমনা আয়নার দিকে অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে ছিল । বাইরে থেকে কিংশুক এসে চেঁচিয়ে উঠলো,"রমা! রমা!"বাড়িতে কাজের লোক বলতে রমাই একা। তাকে স্পেশালি রেখেছিল কিংশুক মা সুমনার দেখাশোনার জন্য। ... ...
গ্রাম হেকে শহরে যারা আসেন, তারা যেই আকাঙ্খা নিয়ে আসেন আর যেমন করে সেই আকাঙ্খা আঁকড়ে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রে একটা ব্যবধান থেকে যায়; স্বপ্ন আর বাস্তব, আশা আর প্রাপ্তির ... ...
একাকীত্বে জীবন কাটান বহু মানুষ এই কলকাতার বুকে৷ তাদেরই কারুর গল্পকথা ৷ ... ...
লোকটা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। চাকরি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে মৃত মানুষ নিয়ে কারবার। চাকরি দরকার, আমি রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু আমাকে নদীর পাড়ে, ঠিক শ্মশানের পিছনে নিয়ে আসল কেন বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে অন্ধকার থাকে সব সময়। শ্মশানে আগে আসলেও পিছনে আসা হয়নি। কিন্তু আমার সুপারভাইজারের কোন দিকে কোন খেয়াল নেই, তিনি হনহন করে হাঁটছেন আর বলছেন, "আসেন, জলদি আসেন। কাজ ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সময়ের এদিক সেদিক হয়ে মহা কেলেঙ্কারি!" আমি তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি, আর ভাবছি, সমস্ত ব্যস্ততা শেষ করেই তো মানুষ শ্মশানে আসে, এখানে এত কিসের তাড়াহুড়া? আমার সুপারভাইজার, যার নাম মোহাব্বত, তাকে যে জিজ্ঞাস করব, তার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন না। বিড়ি টানতে টানতে দ্রুত হাঁটছেন তিনি, পারলে দৌড় দেন! ... ...
"ওমা তাইতো! সাড়ে তিনটে বেজে গেছে। চল চল আমরা ছুটে যাই রাস্তা অবধি" বলে রাজু বিস্তৃত মাঠের ওপর দিয়ে ছুটতে শুরু করলো। দীর্ঘাঙ্গী হেমাঙ্গিনীও আঁচলটা কোমরে গুঁজে ভাইয়ের পিছনে ছোটে। সরমার দেওয়া কমলা কোটা শাড়ির সরু সুতোর মিহি বুনোনে অনেক চৌখুপিতে সৃষ্টি হয়েছে মায়াবী স্বচ্ছতা। হাতে চটি নিয়ে সবুজ ঘাসে ফরসা পা ফেলে ছুটন্ত হেমার সতেজ শরীরের আভা যেন ঐ শাড়ির অসংখ্য জালি বাতায়ন দিয়ে ফুটে বেরুচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে চরাচরে। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য! ... ...
গল্প লিখলাম। জানাবেন কেমন হয়েছে। ... ...
আওয়াজকে অনুসন্ধান করতে মোরসালিনের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় ছেলেটি। এক সময় সেখানে ফুটে উঠা আস্বাসের উপর ভর রেখে ছুটতে শুর করে… ব্লকের ঢালে গড়িয়ে যেতে যেতে সে পতঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। মোরসালিনের চোখ যতই ক্ষুদে বণিকটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে, ততই যেন ব্রিজটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। ছেলেটা যত নীচু হতে থাকে, ব্রিজটা ততই উঁচু হতে থাকে তার দৃষ্টিসীমাকে অদ্ভুত সব কনিক উপহার দিয়ে। ... ...
বাবা গাছগুলোকে নিয়ে পড়ে থাকলো। দিন নেই, রাত নেই - ওগুলোকে জলখাবার খাওয়াল, রোদে গোসল করিয়ে আনলো, দোকান থেকে মালমশলা কিনে নিজের হাতে বেঁটে আর পিষে স্প্রে করলো। বাবার মত অবসর থাকলে আমিও তো করতুম! চাকরি খোঁজা, ট্যুইশানির পাশাপাশি ক্লাব চালানো দুটো! পাড়ার কতগুলি ছেলেপুলে আমার দিকে তাকিয়ে, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আসে, শলা-পরামর্শ, আপোস-রফা; মাঝে মাঝে ট্যুর থাকে, ট্রেকিং চলে। আমি আনমনে গাছগুলি আর বাবাকে দেখতে থাকি। বাবা গাছগুলির সাথে এমনি মিশে থাকে যে, কোনটা গাছ, আর কোনটা বাবা -আলাদা করে চিনতে পারি না, প্রবল এক দৃষ্টি বিভ্রমে ভুগতে থাকি। ... ...