সিনেমা হলের আলো যেমন এক এক করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়, তারপর বিজ্ঞাপন, ফিল্ম ডিভিসনের তথ্যচিত্র শেষ করে সিনেমা, লীলাময়ীর চোখের সামনে তেমনি অল্প অল্প করে বসুশ্রীর স্ক্রীন ফিরে আসছিল - বাড়িওলা ঘর থেকে বেরোতেই সৌমিত্র দিনের বেলা আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় - মাথার কাছের জানলার পর্দায় মস্ত ফুটো - বর্ষার জল ঢুকছে, সৌমিত্রর কাটা কাটা নাক মুখ, ট্রামে বসে আছে- জানলার বাইরে কলকাতা, কপালে একগুছি চুল, তারপর জানলার ওপারে ডুম জ্বলা ঘরে একটি মেয়েকে দেখে বাঁশি দিয়ে জানলার পাল্লা বন্ধ করে দিচ্ছে সৌমিত্র, আধশোয়া হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে, হা হা করে অকারণ হাসছে - ঢেউ খেলানো চুল সৌমিত্রর, মোহন অঙ্গুলি, টিকোলো নাক, চিবুকের ভাঁজ, ডান গালের নিচের দিকে একটা তিল- পটে আঁকা ঠাকুর দেবতার মত মুখ- "দীর্ঘজীবী হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও " কে যেন বলছিল। ... ...
“Chocolate can only be made with love.” বলেছিল বেলজিয়ামের চকোলেটিয়ার লুকাস পেটার্স| কোকা বিনের জাদুকর সে| ভেনেজুয়েলা থেকে এসে সেরা কোকা বিন তার হাতের জাদুতে তুলতুলে চকোলেট হয়| বংশপরম্পরায় চকোলেটিয়ার তারা| লুকাসের বাড়ি কম ফ্যাক্টরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল গতবছর, ব্রাসেলসে| ভালোবাসার নৌকোয় পাড়ি দিয়ে কেমন করে সে পার হলো করোনা-সাগর, আজ তারই গল্প| ... ...
একা থাকতে কিছুটা ভয়ই পাই আমি। আকাশপাতাল চিন্তা করতে একেবারে ভালবাসি না, তবু ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা থাকলে সেসব কীভাবে যেন এসেই যায়। তাদের থেকে পালাতে চাইলেই আমি বাইকে উঠে বসে এক্সিলারেটর ঘোরাই। গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গলিতে আসতে না আসতেই বুঝতে পারি আমি পালাতে সক্ষম। কারণ বাইক চালাতে চালাতে অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসে না। আসা সম্ভব নয়। এলে, দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ... ...
গল্প ... ...
মধুর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা পড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে লোকটাকে আচমকা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করল সে। পারলো না, আরও দু জন লোক কাছেই ছিল, একজন মধুকে ল্যাং মারল, সে উলটে পড়ে যেতেই চার জন মিলে তাকে ধরে পিছমোড়া করে হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দিল। তারপর কোমরে দড়ি পরিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল পাশের গলির দিকে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশের গাড়ি। মধুকে তাতে তুলে বেরিয়ে গেল গাড়িটা। আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। ... ...
কফিহাউসের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল ধীমানের। কফিহাউস বলতে যাদবপুর কফিহাউস। কলকাতায় কফিহাউস মোট তিনটে, অন্তত ধীমান তাই জানে। কিন্তু অন্য দুটো কফিহাউস ধীমানের তেমন পছন্দ নয়। কলেজ স্ট্রীটের কফিহাউসটা একটা প্রাগৈতিহাসিক, অন্ধকার গুহার মত মনে হয় আর সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এরটায় ঢুকলেই মনে হয় কোন অফিসের ক্যান্টিন। যাদবপুর কফিহাউস সে তুলনায় অনেক বেশী খোলামেলা, এখানে অনেক বেশী আলো হাওয়া। ... ...
গল্প। ... ...
জোলো বাতাসে কুয়াশার ঘেরাটোপকে আমার বাপের বাড়ির মশারির মতো লাগছিল, এই পথঘাট ফলত স্বপ্নের এবং অবাস্তব - মানুষজন যেন জোব্বা পরা মরুবাসী অথবা মেরুপ্রদেশের; কুয়াশার সর ক্রমশ এমন ঘন আর রহস্যময় হয়ে উঠছিল যে চেনা পাড়াকে অজানা দ্বীপ বোধ হচ্ছিল - কুয়াশা ফুঁড়ে যে কোনো মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রকাণ্ড কাছিম অথবা ক্ষুদে পেঙ্গুইনের দল, অ্যালবাট্রসের পাখার ঝাপট লাগতে পারে গায়ে। ... ...
১৬৭৯ সালের ১৮ অক্টোবর শিবাজির নৌবাহিনীর হাতে বম্বের ইংরেজরা সত্যিই শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। শম্ভাজির নৌবলাধ্যক্ষ কনহজি শঙ্খপালের বাবা বিঘ্নেশ কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু দৌলত খান,জর্জ কোল, থ্রপ, ব্র্যাডবেরি আর ওয়েলশ্ এর নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। মারাঠা গ্রামীণ শাসনের রূপ, আর নারী স্বাধীনতা ঐতিহাসিক সত্যি। এছাড়া বাকিটার পুরোটাই কাল্পনিক গল্প। ... ...
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অমলবাবু বুঝলেন মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আসলে এটা কাল রাতের রেশ। রাত তখন প্রায় বারোটা। হাই উঠে গেছে গোটা পাঁচেক, ঘুম ঘুম পাচ্ছে। এমন সময় এল। কবিতার লাইন। কবিতা যারা লেখেন তাঁরা জানেন, কবিতা খুব মারাত্মক জিনিস। একবার এলে, যতক্ষণ না লিখে ফেলা হচ্ছে, পেটের ভেতরটা গুড়গুড় করে, মন আনচান। লিখে ফেললে তবে শান্তি। অমলবাবুও দেরি করেন নি। স্ত্রী সুরমা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। চট করে কবিতাটা লিখে ফেলেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট। কিন্তু কটা লাইক পড়ল সেটা দেখার জন্য বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারেন নি অমলবাবু। ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছিল। কটা লাইক পড়ল সেটা দেখার জন্য আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন। ... ...
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার সম্পর্কের রহস্য এখন জানি। সন্তানের জন্য সবটুকু উজাড় করে দেওয়া যায়। হাত ধরে তাকে রাস্তা চেনানো, খানাখন্দ পার করে দেওয়া, তারপর বড় রাস্তায় তুলে দিয়ে দুগ্গা দুগ্গা করে তার যাত্রাকে সফলতায় পূর্ণতাপ্রাপ্তির নিরন্তর শুভকামনা জানিয়ে যাওয়া।আর কী বা করতে পারে কোনো বাবা মা? ... ...
“ইস্ কী গরম! কতবার না বলছি, জানালাগুলো খোলা রাখবা! আলো-বাতাস নাই ঘরটাতে, এই জন্যই তো অসুখ-বিসুখ ছাড়ে না’’ বলেই পর্দাটা টানতে শুরু করলো সুহা। ওর মা এভাবে বলতো, এখনো বলে, সংসার থা করে জাঁকিয়ে বসেছে, অথচ এখনো ভাইয়ের উপর শাসনটুকু চালানো চাই। এদিকে পর্দাটা ছিল ভারি, আর সুহার কোমল হাতে তা পুরো মেলতে সময় নিচ্ছিল। ওদিকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন টুকরো জোড়া লেগে লেগে একটি আস্ত বাড়ি গড়ে উঠছিল জানালার ওপারে। যখন পুরো পর্দাটা সরে গেল, একটি অচেনা জগতের দরজা যেন খুলে গেল আমার চোখের সামনে। এই ঘোর অমাবস্যাতেও সেখানে আলোর বন্যা। তার তীব্র প্রদাহ শুষে নিল আমার সব, থেমে গেল ভাবনা, চিন্তা, স্পন্দন। শুধু এইটুকু মনে আছে, মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী আমার উপর চাপা পড়ল যেন। ... ...
হ্যাঁ হ্যাঁ বুয়েছি, আপনি বলছেন এ চাপ তো রাবণের মায়ের, ছেলের কোথায়? আরে মশায়, দশ খানা মাথায় ঘুম আসাটা কি চাট্টিখানি কথা? এক মাথা চ্যাঁ ভ্যাঁ করলে পাশের জনের, থুড়ি, পাশের মাথার কানে চলে যাবে, ব্যাস, যেটুকু ঘুম এসেছিল তার বারোটা।... আবার কী বলছেন? রাবণের কান কটা? কেন, কু---- না না, ঠিকই তো বলেছেন। মাথাগুলো তো সবকটাই পাশাপাশি আটকানো, কানের জন্য কোনও অ্যালাউন্স তো নেই। তাহলে বোধহয় দুটোই কান -- ফার ইস্টের একটা আর ফার ওয়েস্টের একটা। এতে অবশ্য একটা সুবিধে -- কান বেশি থাকলে কামমলাও বেশি খেতে হত। ... ...
মুখে বসন্তের দাগ , মাথার ডাক্তার , রসিয়ে কেচ্ছা জুড়েছে পেটে পড়তেই : না চিনতাম না। কিকরে চিনবো ? তখন সবে ট্রান্সফার হইছি। একদিন দুপুরে হাজির। দিব্যি আপিসবন্ত মানুষ। বলে কীনা একটা কুকুরকে স্বপন দেখছে রোজ । ... ...
আলাদা বলেই এর একটা নাম রেখেছিলেন বিপ্লব - সানাই। ছোটবেলায় বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় যে পাড়াতে ওঁরা থাকতেন সেখানে একটা রাস্তার কুকুরের ওই নাম ছিল। কুকুরটা ডাকতো একটা অদ্ভুত গলায়, কেউ একজন ওই নাম দিয়েছিল, সেটা চালু হয়ে যায়। নামের কথা ভাবতে গিয়ে ওইটাই মনে এসেছিল তাঁর। এতদিন কোথায় ছিলে? ফিস ফিস একটা বনলতা সেনীয় প্রশ্ন করলেন বিপ্লব। ... ...