মেঘ ইতিমধ্যে প্রায় সব কর্মীদের সঙ্গেই ভাব জমিয়ে ফেলেছে, মাঝে মাঝেই গিয়ে আড্ডা মেরে আসছে। খেয়েদেয়ে বাইরে বেরোতে দেখি ঠান্ডা বেশ কম আজ, বাইরে বেশ ঝলমলে, যদিও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা নেই। ওদিকটা একই রকম - মেঘাচ্ছন্ন। টাইগার হিল যাবার কোন মানেই হত না। বিকাশবাবু হাজির যথাসময়ে গাড়ি নিয়ে - রাজভবনের সামনেই। পটাপট উঠে পড়লাম। গাড়ি চলল আগের দিনের রাস্তা ধরেই ... ...
সারাদিন পাহাড়পথ ভেঙে আপনি ক্লান্ত। আরাম করে বসুন এই ছোট্ট ক্যাফেটায়, আমার উল্টো দিকের চেয়ারে। টেবিলে দু'টো বিয়ারের বোতল। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে হিমালয়ান্ ব্লুজ। ... ...
ফ্রায়েডরাইসে গার্নিশ করেছে কাঁচা বাঁধাকপি দিয়ে! তাজ্জব হয়ে বাঁধাকপির জাল সরিয়ে দেখি তার নীচে একস্তর সরু সরু ঝুড়িভাজা গোছের কিছু একটা। বাই মোটামুটি অন্যতম প্রধান পদ মিজো ক্যুইজিনে, কিছু অপরিচিত মশলা দেওয়া ছিল চিনতে পারিনি, স্বাস্থ্যকর এই খাবারটা খেতেও ভাল বেশ। পাশের দুই ঘরের বাসিন্দারা আজই বিকেলের দিকে এসে পৌঁছেছেন। এঁরা এখন বেরোবেন রাতের আইজল দেখতে। কথায় কথায় জানা যায় একজন কোন্নগরের বাসিন্দা, যদিও এখন কুচবিহারে থাকেন কর্মসুত্রে। আরেকজনের মেয়ে সম্প্রতি করমসূত্রে পুণেবাসিনী হয়েছে। আলাপ জমতে দেরী হয় না। বাকীরা কেউ গৌহাটি কেউ ডিমাপুর থেকে এসেছেন, মোট ৮ জনের দল। এঁরা কেউই সেই হাফলঙের সহযাত্রীদের মত গাঁকগাঁকে নন, বলাই বাহুল্য। আর শুধু কালকের দিনটা আইজলে, দেখা যাক কদ্দুর কী দেখে ওঠা যায়। ... ...
নিকোলাস পাড়া। নাফাখুম থেকে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা ঝিরি পথ দিয়ে হেঁটে পাহাড় টপকে এক অদ্ভুত জায়গায় পৌছালাম।এই পাড়া প্রতিষ্ঠা করেছে নিকোলাস ত্রিপুরা। পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়ার মত নতুন এক নতুন ঠিকানা তৈরি করেছে নিকোলাস। তার গল্প পুরোপুরি আমি জানি না, আমি যা এখন পর্যন্ত জানি তা হচ্ছে এ এক অদ্ভুত জায়গা। আমরা এসে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধা নেমে এসেছিল। তারপর থেকেই জাদুবাস্তবতার জগতে চলে গেছি যেন। এখানে পাহাড়ের কোলে কুসুম গরম সুর্য টুপ করে ঢলে গেল। কয়েক বাড়ি আদিবাসিদের সন্ধ্যা আসল সরল পথে। যে সমাজ আমরা দেখে অভ্যস্ত তার সাথে তুলনা কই? শিশুরা অবাক দৃষ্টিতে আমাদের দেখছে। আমরা আমাদের নিয়ে ব্যস্ত। খাড়া পাহাড় উঠে আমরা ক্লান্ত, তারচেয়ে আসলে আমরা ব্যস্ত নতুন জায়গার চারপাশ দেখতে। এরপরই যেন শুরু হল জাদুর খেলা। শা করে তারা চলে আসল আমাদের কোলে। ঝকঝকে লাখ লাখ তারা যেন আমাদের ঘিরে নেচে চলছে। আমাদের সাথে মজা নেওয়ার জন্যই যেন দুই একটা তারা দৌড়াচ্ছে এদিক ওদিক। হুট করেই খেয়াল করলাম আমাদের সকল কাজের সমাপ্তি হয়েছে। আগামীকাল ভোরে নতুন পথে রউনা হওয়ার আগে আমাদের ঘুম আর খাওয়া ছাড়া কোন কাজ নাই। এই গ্রামের মানুষ অন্য সময়ে কী করে এই সময়ে? সন্ধ্যায় চা নাস্তা খাওয়া মানুষ আমরা। এরপর নানা অকাজে ব্যস্ত থাকা আমরা বুঝেই উঠতে পারছি না এদের জীবন। এই গ্রামে পানির ব্যবস্থা নাই। পানি নিয়ে আসে ওরা অনেক নিচে থেকে। নেই কোন পয়নিস্কাশনের সুস্থ কোন ব্যবস্থা। নেই মানে নেই। বন হচ্ছে এদের ভরসা স্থল। এই সমাজ কীভাবে আমাদের বুঝে আসবে? আসার কোন সম্ভাবনা আছে? আমার মনে হয় না। ছনের ঘর। ঘর উঁচু করেছে বাঁশ দিয়ে খুটি দিয়ে। তাড়াই বাঁশের বেড়া হচ্ছে মেঝে। আমরা যা দেখি তাই মুগ্ধ হই, বা মুগ্ধ হওয়ার ভান করি। কৃত্রিমতায় পূর্ণ জীবন কি জানে সত্যিকার মুগ্ধ হওয়া কাকে বলে? ... ...
পৃথিবীর আরো নানাবিধ জিনিসের মত বাটিকের উৎপত্তি নিয়েও টানাবাহানা আছে – বিশেষ করে যখন আজকে যাকে বাটিক বলি তেমন ডিজাইনের কাপড় দেখা গেছে ভারত, চীন, মিশর থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা জায়গায়। এই সব জিনিস নিয়ে বিতর্ক শেষ হয় না – কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! তবে মোটামুটি আজকাল যা স্বীকৃত তা হলে বাটিক পদ্ধতির উৎপত্তি হয়েছিল আজকের দিনের ইন্দোনেশীয়া দেশের জাভা দ্বীপে। বাটিক শব্দটির উৎপত্তি জাভা থাকে, মূল শব্দ ছিল ‘আমবাথিক’। জাভানীজ ভাষায় ‘আমবা’ মানে হচ্ছে চওড়া বা বৃহৎ এবং ‘থিক’ শব্দের অর্থ ‘বিন্দু’। এই ভাষাতেই বাথিকান শব্দের অর্থ আঁকা বা লেখা। কালের ক্রমে ইন্দোনেশীয়ার মূল স্রোতে যখন বাথিকা মিশে গেল তখন ‘থিক’ শব্দবন্ধ উচ্চারিত হতে লাগল ‘টি’ দিয়ে এবং সেই থেকেই আজকের বাটিক শব্দটি। ... ...
প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্টদের সংঘের মাঝেও অনেকে কোনো সংঘে যোগ না দিয়ে নিজেদের মত করে এঁকেছেন। ... ...
উদয়পুরে এত সবুজতার কারণ পিচোলা এবং ফতেহ সাগর এই দুটো হ্রদ। পিচোলা হ্রদের মাঝখানে একটা দ্বীপে আছে জগ মন্দির। গরমকালে রানারা ওখানে গিয়ে থাকতেন, এখন সেটা একটা পাঁচতারা এবং যথেষ্ট দামী হোটেল। আর একটা দ্বীপেও 'লেক প্যালেস' বলে একটা হোটেল আছে , সেটা টাটাদের। মূল রাজপ্রাসাদেরও ক্যাম্পাসের ভেতরে দুটো বাড়ি হোটেল হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। ... ...
এটা আমরা সবাই জানি বা ইতিহাস পড়ে দেখেছি যে প্রাচীন কালে সাম্রাজ্য, রাজত্ব, রাজা ইত্যাদি অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ জিনিসগুলো হাত ধরাধরি করে চলত ধর্মের সাথে – তা সে প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টধর্ম বা পরের দিকে ইসলাম – যাই হোক না কেন। ভারতের বাইরে হিন্দু মন্দিরের সবচেয়ে প্রাচীন উপস্থিতি টের পাওয়া যায় আজকের দিনের ভিয়েতনামে, খৃষ্ট পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত – সূর্্য দেবতা, শিব এবং বিষ্ণুকে নিবেদিত। আমি উপরে যে ‘বৃহত্তর ভারত’ এর উল্লেখ করেছি তা একসময় বিস্তৃত ছিল আজকের দিনের মায়নামার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম জুড়ে। সংস্কৃতে লেখা পাথরে খোদাই পাওয়া গেছে ভিয়েতনামে খৃষ্টীয় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীতে ভিয়েতনামে বা চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীতে কাম্বোডিয়াতে। সেই সময় থেকে শুরু হয়ে দেখা গেছে প্রায় ১৪শ শাতাব্দী অবধি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সব দেশে স্থানীয় প্রভাব যুক্ত হিন্দু মন্দির তৈরী হয়েছে। অনেকসময় হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্ম পুরোপুরি আলাদা না থেকে জন্ম দিয়েছে এক মিশ্র ঐতিহ্য এই দেশগুলিতে এবং মন্দিরে এই সব ছাপ রয়ে গেছে। পরের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মূলত বৌদ্ধ ধর্ম থেকে যায় কেবল মাত্র মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশীয়া ছাড়া – এই দুই দেশে ইসলাম ধর্মে এসে বৌদ্ধধর্মকে প্রতিস্থাপন করেছিল। ... ...
সিন্ধু সভ্যতা এবং মূর্তি গ্যালারি ... ...
ব্রোঞ্জ , মিনিয়েচার ছবি এবং মুদ্রা গ্যালারি ... ...
ভয়েজার-১ এর কথা ... ...
গতদিনের মেঘ আর কুয়াশার পর এই দৃশ্য যে দেখব, আমরা কেউ-ই ভাবিনি, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ক্যামেরা বের করতেও ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়! ডানদিক থেকে আলোর একটা সরু রেখা হঠাৎ আকাশকে রাঙিয়ে দিতেই সম্বিৎ ফিরল! তখনো এভারেস্ট দেখার কথা ভাবিনি। তার জন্যে আমাদের আর-ও একটু বাঁদিকে সরে যেতে হবে ফালুটের রাস্তায়। এরপর শুরু হয়ে গেল আশ্চর্য অপার্থিব রঙের খেলা, একেবারে টুকটুকে লাল থেকে কমলা হয়ে উজ্জ্বল স্বর্ণাভ হয়ে ওঠার পালা, ডানদিক থেকে একে একে পান্ডিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা, শিমোভো, গ্যেচা বা গ্যোচা, কাবরু ডোম, কাবরু উত্তর ও দক্ষিণ, রাথোং, আর সবশেষে কুম্ভকর্ণ ১ ও ২ – দিগন্তজোড়া তথাগত-শরীর, শায়িত এবং নিদ্রিত। ‘Sleeping Buddha’। সবচেয়ে আশ্চর্য হল, একটুকরো মেঘ ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘা শিখরের উপরে জমে রয়েছে যেন যুবরাজ সিদ্ধার্থের রাজছত্র হয়ে। আমরা এসে দাঁড়িয়েছি সেই রাজদরবারে, একেবারে যথার্থ রাজদর্শন বটে! ... ...
সে ঘাড় দুদিকে নেড়ে নেড়ে বলে ‘তু ডেঞ্জার হ্যায় রে ম্যাডাম নেই নেই ম্যায় আ যাউঙ্গা’। ঠিক আছে বাবা, তাই হবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪.১৫তে আবার বেরোই পায়ে হেঁটে এদিক ওদিক ঘুরতে। চারিদিক একেবারে শুনশান, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে শুধু একটা সেলুনের একপাল্লা খোলা। মিনিট চল্লিশেক এদিক ওদিক হেঁটে ফিরি নশরিঙে আবার। কাল খুব সকালে বেরোন তাই আজকেই টাকাপয়সা মিটিয়ে রাখতে হবে। রাতের খাবারে অর্ডার করি ডিমাসা টাইপ ফ্রায়েড রাইস আর চিকেনের ঝোল। এই ফ্রায়েড রাইসে দেখি বেশ কয়েকরকম শাক দিয়েছে কুচিয়ে, পালং ছাড়া বাকী শাকেদের চিনতে পারলাম না। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এই প্রথম পর্বটি এই সিরিজের প্রাককথন। ... ...
ব্যাপার হচ্ছে এসব জানা বোঝা সত্ত্বেও আমার একটা দার্জিলিং প্রীতি জোরদার রয়ে গেছে। তার কারণ, ছোটবেলায় দুই বছর বাবার কর্মসূত্রে ছিলাম এই শহরে। গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে ফাইভ, সিক্স। খাদের ধারের রেলিং টা, টুং সোনাদা ঘুম পেরিয়ে। স্মৃতির শহর - বিস্মৃতিরও শহর - কারণ সেই ১৯৮৩ তে দার্জিলিং ছাড়ার পর ফিরে এসেছিলাম ২০০৫ এ - বাইশ বছর পর। তারপর আবার কেটে গেছে পনেরো বছর। হয়তো আরো যেত। কিন্তু আমার পুত্র বাদ সাধিল। ... ...
গ্যোর......হাঙ্গেরিয়ান রাপসডি ... ...
দুটো জিনিষ আবিষ্কার করলাম - ঠান্ডা বেশ ভালই আছে, আর নেট নেই। গেস্ট হাউসের একটা ওয়াই ফাই আছে বটে, কিন্তু সেটাও না থাকারই মত - মাঝে মধ্যে কোন কোন স্পটে দাঁড়িয়ে হয়তো একটু কানেক্ট হল - এরকম ব্যাপার। অগত্যা শুধু পাহাড় আর আমরা। স্নান টান সেরে ডাইনিং হলে লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম। তারপর বেরোলাম হাঁটতে। ক্যাশ টাকা সব শেষ, তাকদায় এটিএম পাব, তাই ঠিক হল, এখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে তাকদা যাব, তারপর যদি দেখি পারছি, তাহলে হাঁটতে হাঁটতেই ফিরব, আর না পারলে কোন গাড়ি ধরে ... ...
আগের পর্ব : পর্ব - ১ পর্ব - ২ পর্ব - ৩ মেঘমা থেকে বেরিয়ে ঘন্টাখানেক চলার পর বেশ কিছুটা উঠেই দেখি গাড়ির রাস্তা হাজির। তবে এই সময়ে গাড়ির ঝামেলা তেমন নেই, যারা যাওয়ার, চলে গেছে এতক্ষণে। রাস্তা থেকে দূরে চেয়ে দেখি মেঘের আড়ালে পাহাড়ের লুকোচুরি আর রোদের আলো-ছায়ার খেলা তখন-ও চলছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের পাহাড়ের ঠিক উল্টোদিকে, টোংলু পৌঁছনোর আগে তার দেখা পাওয়া যাবে না। গেলেও এত বেলায় এই মেঘ আর কুয়াশায় সে মুখ দেখাবে বলে মনে হয় না। নিত্যম কিছুক্ষণ পরে জানালো, আর ঠিক তিনটে বাঁক পার হলেই টোংলু। প্রথমদিনের টার্গেট শেষ করার আনন্দে আমরা হই হই করে উঠলাম। শেষ বাঁকটা পার হয়ে ... ...
আজ একটা বিচিত্র ভ্রমণের গল্প বলবো আপনাদের। প্ল্যান করে তো সবাই ঘুরতে যায়। দুপুরে খেতে বেরিয়ে কখন ঋষিকেশ চলে গেছেন? আমি গেছি। ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...