"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৩ - - - জানতে চাই, ওখানে যেতে পারি? চুরি ছিনতাই বা বণ্যজন্তুর ভয় নেই তো। কথা বলে বুঝি, প্রায় চার কিমি দুর, শ তিনেক ফুট উঁচু পাহাড়ে ওঠার পথে কিছুটা সিঁড়ি আছে বাকিটা গিরিশিরা ধরে উঠতে হবে। হাঁটায় বা ওঠায় আমার অসুবিধা নেই। লোকজন কেউ যায়না, তাই লুটবেটা কাকে? ফলে চোর ছ্যাঁচোরও নেই। পান্না টাইগার রিজার্ভ থেকে কচিৎ কখনো ডোরাদা বা দিদিমণি হাওয়া খেতে এদিক ওদিক গেলেও এতোটা আসেন না, ভর দুপুরে তো নয়ই। সুতরাং বাস্তবিক বিপদের কোনো ভয় নেই। ... ...
হল্যান্ডের গাঁ-গঞ্জে, পথে-ঘাটে আমলকীর দেখা না মিললেও স্কিফোল এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোলেই ডিসেম্বরের শীতের হাওয়া আপনার শরীরে নাচন লাগাবেই। আর তার সঙ্গে যদি থাকে বৃষ্টি, তবে ষোলো-আনা পূর্ণ! এবার যদিও দিন-দশেকের জন্যে যাওয়া আর কাজের চাপের জন্য খুব বেশী ঘোরাঘুরি হয়ে ওঠেনি, তবুও বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষের তরঙ্গ রোধিবে কে! সুতরাং তার-ই মাঝে ‘হরে মুরারে’ বলে বেরিয়ে পড়া; তবে এবারের ঘোরাঘুরি খুব-ই সংক্ষেপে সারা, তাই এই লেখা অনেকটাই হবে যাতায়াতের পথ আর ছবি-নির্ভর। আগের বার নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে আর আশেপাশের বেশীর ভাগ জায়গাই দেখা হয়ে গিয়েছিল, তাই এবার ভেবেছিলাম সুযোগ পেলে পাশের দেশ বেলজিয়ামে-ও ঢুঁ মেরে আসবো। আর আগেরবার জ্যানসে স্ক্যানসের প্রসঙ্গে কিন্ডারডাইকের কথাও উঠে এসেছিল, তাই মাথায় ছিল সেটাও যদি দেখে আসা যায়। ... ...
আমাকে যদি কেউ চট করে জিজ্ঞেস কর, ভাই বেড়াতে বেড়িয়ে তোমার অনুভূত এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ওভার-হাইপড জিনিস কি? খুব বেশী না ভেবে যে জিনিসটির কথা আমার মনে সর্বপ্রথম চলে আসবে তা হল – ভেনিসে গন্ডোলা চেপে ঘোরা!বেশ কিছু ইতালি বা মলটা দেশের বন্ধু বান্ধব থাকার জন্য গন্ডোলা নিয়ে আজকের দিনের ওভার-হাইপড ব্যাপারটা আগেই শুনেছিলাম। কিন্তু যা হয় আর কি – জেনেশুনেই বিষ পান করতে হয় আমাদের সবাইকেই মাঝে মাঝে। বিশেষ করে যেখানে এই গন্ডোলার সাথে কিভাবে যেন রোমান্টিকতা জুড়ে যায় – তার পর আর কিভাবে এ জিনিস চাপা থেকে নিজেকে এড়াতে পারেন যদি কেবল আপনারা দুটি-তে ঘুরতে যান! গন্ডোলা যার রোমান্টিক চাপে পড়ে চেপেছিলেন, নৌকাবিহার শেষে সে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে – “কি দারুণ, না?” আপনি বুদ্ধিমান হলে শুধু “হুঁ” বলে চুপ করে যাবেন - ... ...
নামদাফায় যদিও বিগ ক্যাট প্রজাতির চার রকম প্রাণীর (টাইগার, লেপার্ড, স্নো লেপার্ড, ক্লাউডেড লেপার্ড) সন্ধান পাওয়া যায় তবে এতটা নীচে লোক চলাচলের পথের এত কাছে তারা আসে না, বলা ভাল তাদের আসার দরকার হয় না (ভাগ্যিস!), জঙ্গল এখনো যথেষ্ট ঘন এবং জঙ্গলের অনেকটাই মানুষের, অন্তত শহুরে মানুষের জন্য প্রায় অগম্য স্থান। কিন্তু চোরাই কাঠ পাচারকারিদের উৎপাতে বেমক্কা বন নিধনের ফলে নামদাফার জীববৈচিত্র্য অনেকটাই ঝুঁকির মুখে। আর কতদিন তথাকথিত উন্নয়নের জাঁতাকল ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নামদাফা বাঁচবে জানি না, এখনো অন্তত অনেকটাই আছে। এমনকি নদীর ওইপারের কোর এরিয়াতে না ঢুকলেও প্রজাপতিই যে কতরকম দেখা যায়, পাখি সেও তো কতরকমই দেখা যায় আর দেখা যায় নানারকম রঙ বেরঙের পোকা। ও হ্যাঁ নামদাফায় কিন্তু প্রচুর অজস্র জোঁক। এখানে পাঁচ রকম বিভিন্ন প্রজাতির জোঁক দেখা যায়। শুকনো আবহাওয়ায় এমনিতে জোঁক কম হলেও ডিসেম্বরেও কিছু জোঁক দিব্বি মানুষের গোড়ালি কিম্বা জুতোমোজা ও জিন্সের ফাঁক গলে পায়ের গোছে ঝুলে পড়েছে। ... ...
“কবর দাও বা চিতায় পোড়াও, মরলে সবাই মাটি” না, প্রাচীন মিশরের মানুষ অবশ্যই এভাবে ভাবতেন না, বরং জীবনানন্দের কথা ধার করে বলা যায় “মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়”; আর মৃত্যুর পরের মানবটির জন্যে গড়ে ওঠে একের পর এক স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা! মরলে মানুষ কোথায় যায়, মৃতেরা এ-পৃথিবীতে না ফিরলেও প্রাচীন মিশরে আনুবিস আর ওসাইরিসের পরীক্ষায় পাশ করলে আর এক সুখের দুনিয়ায় (‘দুয়াত’) পৌঁছে যাওয়া যেত। যেখানে যমদূত-দের চাবুক খেতে না হলেও দেবতাদের তুষ্ট করার জন্যে চাষবাস ইত্যাদি করতে হতো আর মৃত্যুর পরেও জীবিতাবস্থার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যেত। আত্মা নাকি অবিনশ্বর, তায় যদি পাওয়া যায় তিন তিনখানা আত্মা, তাহলে আর দেখে কে! প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করতেন জীবিতাবস্থায় মানুষের একটি আত্মা থাকে, তা হল ‘কা’, এই কা শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মৃত্যুর পর আরও দুই আত্মা এসে হাজির হয়, একজন হল ‘আখ’, আরেকজন ‘বা’। ‘বা’ পাখির রূপ ধরে সমাধি থেকে বেরিয়ে দিনের বেলায় বাইরের পৃথিবীতে ঘুরতে পারে (এরপর মিশরের আকাশে পাখি দেখলে কি মনে পড়বে ভাবুন একবার); আর আখ হল সেই আত্মা যাকে পরীক্ষায় বসতে হয় ওসাইরিস, আনুবিস, মাত প্রমুখ দেবদেবীর সামনে। এই যে পিরামিডে বা পরবর্তীতে ফারাও বা রাণীদের সমাধিতে মমির সঙ্গে কেটে রাখা প্রত্যঙ্গ, ধনদৌলত, ব্যবহৃত জিনিসপত্র এসব দেওয়া হত, তা ঐ কা-এর সুবিধার্থে। মমিফিকেশনের কথা তো আগেই দ্বিতীয় পর্বে বলেছি, এবার বুক অব দ্য ডেড-এর কথা, কারণ আজ আমরা যাব ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ। ... ...
ক্যাম্পসাইট থেকে সকালের নরম আলোয় অ্যালুমিনিয়াম পাতের মত বরফচুড়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকি তাঁবুর বাইরের বসার ঘরে। পাতলা নেট ভেদ করে ঠান্ডা লাগে, কিন্তু কাল রাত্রের মত নয়। রাতে -২ অবধি নেমেছিল তাপমাত্রা। শ্বাস প্রশ্বাসও অনেক স্বাভাবিক আজ। একটু পরেই সুজ্জিমামা হালকা সোনালী রঙ দেয় চুড়ায়, মোটা ব্রাশে স্ট্রোকের পর স্ট্রোক – অ্যালুমিনিয়ামের পাতখানা কাঁসার রঙ ধরে। ক্যাম্পসাইটে ঘুরে বেড়াই এদিক ওদিক। মানসীরা উঠে পড়েছে অনেকক্ষণ, অভিও উঠে ছবি তুলছে এদিক ওদিক। রান্নার তাঁবুতে গিয়ে গরমজলের কথা জিজ্ঞাসা করতে ওঁরা সোলার গিজার দেখিয়ে দেন। একটা মাঝারি জলাধারের সাথে অনেককটা সোলার প্যানেল লাগানো আর একটা কল। ... ...
'নগর' স্টাইলে মন্দিরগুলো কোনো গাঁথুনি ছাড়াই শুধু পাথরের ব্লক বসিয়ে বসিয়ে বানানো। প্রায় সব পূর্ব মুখী, সূর্যোদয়ের দিকে। অধিষ্ঠান হচ্ছে মন্দিরগুলোর কমন ভিত্তি। তার ওপরে ধীরে ধীরে অর্ধ মন্ডপ, মন্ডপ, মহামন্ডপ, অন্তরাল এবং সবশেষে গর্ভগৃহ। সূর্য ওঠার সময় সূর্যের আলো ধীরে ধীরে দরজা দিয়ে ঢুকে গর্ভগৃহের মূর্তির ওপর পড়বে, মন্দির স্থাপত্যগুলো সেভাবেই তৈরী। গর্ভগৃহের চারদিকে প্রদক্ষিণ করার জায়গা। গর্ভগৃহের ওপরে মন্দিরের বাইরের দিকে প্রধান মিনারটাকে শিখর এবং ছোট ছোট মিনারগুলোকে উরুশৃঙ্গ বলে। শিখরের একদম ওপরে বসানো থাকে একটা কলসী। মন্দিরগুলোর বাইরের এবং ভেতরের বেশিরভাগ মূর্তিই কোনোরকম যৌন অনুষঙ্গ ছাড়া তৎকালীন সাধারণ জীবনযাপনের গল্প। এছাড়াও মন্দিরগুলোর গায়ে কিছু কিছু জায়গায় আছে ব্রহ্মার মূর্তি যেটা অন্য কোথাও দেখা যায় না। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১৭ …তৃতীয় শতাব্দীতে গুপ্ত রাজবংশ থেকে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ গ্যারিসন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ইস্তক - সুদীর্ঘ ১৫০০ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে নানা শাসনের দখলে থেকেছে কালিঞ্জর কেল্লা। দুর্গটি কবে নির্মিত হয়েছিল সঠিক জানা যায় না। তবে আগ্রা এবং অউধের ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে গুপ্ত রাজবংশের সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে কালিঞ্জার দুর্গ জয় করেছিলেন। ASIএর প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম কালিঞ্জর কেল্লার প্রাচীনত্ব ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর মতে এই কেল্লার নির্মাণ হয় ২৪৯ খ্রিস্টাব্দে। শিবের আর এক নাম কালিঞ্জর (কাল = সময়, জর = ক্ষয়) অর্থাৎ 'সময় ক্ষয়কারী' বা কালজয়ী। কথিত আছে সমূদ্রমন্থনে ওঠা হলাহল পান করে কন্ঠ নীল হয়ে যেতে শিব এখানে এসে সময়কে পরাস্ত করে মৃত্যুকে জয় করেছিলেন। তাই কালিঞ্জর কেল্লা বলতে কালজয়ী কেল্লাও বোঝায়। ... ...
মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলা রাজপুতরা ছিল চান্দেলদেরই মত আরেকটি রাজপুত রাজাদের বংশ , এক বিন্দু রক্ত থেকে যাদের জন্ম বলে বংশের নাম বুন্দেলা। মধ্যযুগে চান্দেলদের পতনের পরে বুন্দেলাদের রাজ্যের এলাকা পরিচিত হয়ে ওঠে বুন্দেলখন্ড নামে। টিকমগড়ের কাছে গড় কুন্দর ছিল বুন্দেলা রাজপুত বংশের রাজধানী। এই সিরিজে মধ্যপ্রদেশের খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ নদী বেত্রবতীর কথা আগেও এসেছে। যমুনার এই উপনদীর ধারেই আছে উজ্জয়িনী ইত্যাদি প্ৰাচীন জনপদ। পনেরোশো সালে রুদ্র প্রতাপ সিং জঙ্গলের মাঝে বেত্রবতী নদীর ধারে ওরছার পত্তন করেন এবং রাজধানী সেখানে সরিয়ে আনেন। ওরছা শব্দের অর্থ গোপন। কালক্রমে সংস্কৃত বেত্রবতী নামটা বুন্দেলি ভাষায় অপভ্রংশে বেতওয়া হয়ে যায়। ... ...
আফ্রিকায় নেকড়ে না থাকলেও নীলনদে কুমীরের কোনো অভাব ছিল না। এবং সেসব নাকি ছিল বেশ হিংস্র, বিশেষতঃ এই কোম ওম্বো-র আশেপাশে তাদের প্রচুর সংখ্যায় মিলত। মিশরের মানুষজন নীলনদ পারাপার করতেও ভয় পেতেন রীতিমতো। সেই ভয় আর বিপদ কাটাতে সুতরাং আবির্ভাব হলো দেবতা সোবেক-এর। সোবেক এর দেহ মানুষের হলেও মুখমন্ডল কুমীরের। হোরাসের মুখ যেমন বাজপাখির। সোবেক-এর সঙ্গে হাথোর কেন এক মন্দিরে যুগ্মভাবে পূজিত, সে রহস্য এখনও অধরা! ভক্তরা যেভাবে তাদের ভগবান-কে পেতে চায়; নইলে এই সোবেক ছিলেন হোরাসের কাকা সেথ-এর অনুসারী। অতএব হোরাসের পরম শত্রু। বলা হয়, সেথ যখন হোরাসের কাছে পরাজিত হলেন, তার সঙ্গীসাথীরা কুমীরের রূপ ধরে নীলনদ বেয়ে পলায়ন করেন, সোবেক তাই এই কুমীর-এর প্রতীক এবং দেবতা। আর সোবেক-এর পুজো করলে কুমীরের হাত থেকে মুক্তি। ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...
ঘনাদা থুড়ি বেণুদা তখন বলছেন রিঙ্কুর সাথে তাঁর প্রেমের গল্প। ‘বুzলেন আমি তো মুসলমান আর ও হিন্দু, তা রেজেস্ট্রি করেসি, হিন্দুমতে আর মুসলমান মতেও বিয়ে করেসি। তিনবার বিয়ে করেসি। তা হিন্দু বিয়ায় জিগ্যাস করে গোত্র কী? আমি বলে দিসি হিমু গোত্র। পুরুতেও বিয়া পড়ায় দিসে।‘ ... ...
সামনের জলে সেই প্রতিফলনের ছবি সুস্পষ্ট! চৌখাম্বা, মন্দানি, সুমেরু, খর্চাকুন্ট আর কেদার – বাকি শৃঙ্গরা ঢাকা পড়েছে ওক, দেওদার, রডোডেনড্রনের বনানীর পেছনে, তার-ও ছায়া জলে। আমাদের দেখাদেখি আরও চার-পাঁচজন পর্যটক এসে জড়ো হন সেই জায়গায়। সকলেই আমরা নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে সেই স্নিগ্ধ ভোরের অলৌকিক দৃশ্যটুকু শরীর-মনের অলিন্দে পূর্ণ করে নিতে থাকি। তবু এই পূর্ণতার কি সীমা আছে! না শেষ আছে! “অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে। অমৃতভবন কোথা আছে তাহা কে জানে।। হেরো আপন হৃদয়মাঝে ডুবিয়ে, একি শোভা! অমৃতময় দেবতা সতত বিরাজে এই মন্দিরে, এই সুধানিকেতনে।।“ ... ...
রিলিফগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ জাতকের গল্প , জলের ওপর হাঁটা ইত্যাদি অতিপ্রাকৃত ঘটনা বা মিরাকল , মারবিজয় , মৃত্যুর পর গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ নিয়ে কুশিনগরের মল্ল এবং আরো সাতজন রাজার মধ্যে যুদ্ধ এরকম নানা ছবি খোদাই করা হয়েছে। গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ আটটা রাজ্যের মধ্যে ভাগ হয়। তার কয়েক শতাব্দী পর অশোক সমস্ত দেহাবশেষ সাতটা রাজ্য থেকে সংগ্রহ করে ৮৪০০০ স্তুপ তৈরি করে আবার তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। একমাত্র নেপালের শক্তিশালী নাগ বংশের অধিকারে থাকা রামগ্রামের দেহাবশেষ অশোক সংগ্রহ করতে পারেননি। এই বিদিশার এক বণিকের মেয়ের সঙ্গে অশোকের বিয়ে হয়েছিল বলে নিরিবিলি পাহাড়ের ওপর এই সাঁচিকে তিনি একটা বড় স্তুপ তৈরীর জন্য বেছে নিয়েছিলেন। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১৯. এ লেখাটি ‘রিয়াবুতু’ নামক ত্রিপুরার একটি ওয়েবজিন প্রকাশ করেছিল ২৪.১.২৪. তবে সেখানে লেখাটি পাঠিয়েছিলাম সংক্ষিপ্ত আকারে। এখানে রইলো বিশদে। বেতয়া নদীর তীরে উত্তরপ্রদেশের ললিতপুর জেলার একটি প্রান্তিক গ্ৰাম দেবগড়। স্থানটি জৈন ও হিন্দু ধর্মের প্রেক্ষিতে পুরাতাত্ত্বিকদের কাছে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ওখানকার পুরাকীর্তিগুলি আছে ASI এর তত্ত্বাবধানে। দেবগড় পাহাড়ে রয়েছে ভগবান মহাবীর বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ২০১৯ এর ৭ ও ৮ই মার্চ পর্যটকবিরল নির্জন সুন্দর সেই স্থানে দুটি রাত ছিলাম। সেখানে কয়েকজন স্থানীয় মানুষের সাথে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতা, ধর্মশালার ম্যানেজার ও এক কর্মী পরিবারের সহৃদয়তা এবং সর্বোপরি এক নির্লোভ অটোচালক রামুর আচরণ আমায় অভিভূত করেছিল। তাই পাঁচবছর পরেও স্মৃতিতে তা অমলিন। এ লেখার প্রোটাগনিস্ট - রামু ... ...
বেশী বেড়ালেও বিপদ, আবার কম বেড়ালেও। অন্তত ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু মিথ বা অতিকথন বা ভ্রান্ত ধারণা গড়ে তুলতে। বেশী বেড়ানো মানেই বেশী জানা নয়, আর পুরোপুরি ঠিক জানা তো নয়ই। কিন্তু হয় কি বেশী বেড়ালে আমাদের মধ্যে অনেকসময় একটা ভ্রান্ত ধারনা চেপে বসে যে আমি যেটা জানি বা যার মুখোমুখি হয়েছি, সেটাই চরম সত্যি! এর বাইরে আর কিছুই হতে পারে না। আমার অভিজ্ঞতার বাইরেও যে অন্য কেউ অন্য ভাবে সমগ্র জিনিসটা দেখতে বা অনুভব করতে পারে, সেটা মানতেই চাই না আমরা – এতটাই সঙ্কীর্ণমনা এবং অধৈর্য্য হয়ে উঠি অনেক সময়। আর এই ব্যাপারগুলোই বেশীর ভাগ সময় জন্ম দেয় ‘মিথ’ এবং ভ্রান্ত ধরণার। এর কিছু কিছু ব্যাপার হয়ত ক্ষেত্র বিশেষে সত্যি, কিন্তু সেগুলোই একমাত্র সত্যি নয় বা চিরন্তন সত্য নয়। তেমন কিছু বিষয় নিয়েই ভাবলাম আজকে কিছু লিখি ... ...
আমার কলকাতা ঘুরার জন্য আমি একটা ছোটখাটো তালিকা বানিয়েছি। এক নম্বর হচ্ছে ৮ থিয়েটার রোড। মুশকিল হচ্ছে থিয়েটার রোড বলে কোন রোড এখন আর নাই, এখন হচ্ছে শেক্সপিয়ার সরণি। আরও মুশকিল হচ্ছে আমি কেন থিয়েটার রোড যেতে চাই এইটা কেউ জানেও না। ভারতীয় সরকারও না, বাংলাদেশ সরকারও না! কী একটা আশ্চর্য কাণ্ড না? অথচ আমার কাছে কলকাতা এই কারণেই, আট নাম্বার থিয়েটার রোডের জন্যই বিশেষ। আমার কাছে কলকাতা প্রাচীন দালানের জন্য আকর্ষণীয় না, ভিক্টরিরা মেমোরিয়াল না দেখে দেশে ফিরলে বিন্দুমাত্র আফসোস হবে না, যাদুঘরের জন্য না, কম দামে জিনিস পাওয়া যায় এই কারণে না, আমার কাছে কলকাতা বিশেষ কারণ এই পথে এক সময় সুনীল শক্তিরা রাত জেগে শহর পাহারা দিয়েছে। বিশেষ কারণ এইখানে এমন কিছু মনিষীর আগমন ঘটেছিল যারা বাঙালি জাতির দিক পথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। শহর হিসেবে ঢাকার থেকে ঢের নবীন শহর কলকাতা, অথচ বাঙালি জাতির উপরে এর প্রভাব পড়েছে অনেক অনেক বেশি। আর প্রধান কারনই হচ্ছে এই মনিষীরা। আমি একটা টান অনুভব করি কারণ এখানে, এই ১৩৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে এক সাধক বাস করতেন, যার জীবন আমাকে অদ্ভুত ভাবে টানে। মনে হয় সব ছেড়ে শিবরাম হয়ে যাই। এই কয়দিনে কতদূর দেখতে পারব জানি না। চেষ্টা করব যতদূর যাওয়া যায় যাওয়ার। ... ...
সামনে দিগন্তজোড়া ক্যানভাসে চলছে রঙে রেখায় ছবি আঁকা। কমলা থেকে লাল হয়ে মেরুণ হয়ে সূর্য টুপ্পুস করে নেমে যায়, ডুব দেয় দিবাঙে। বিশাল উপত্যকা ছড়িয়ে থাকে রূপোলি থেকে নীল হয়ে পার্পল হয়ে যাওয়া দিবাঙের ধারাগুলো বুকে নিয়ে, কমলালেবু গাছেরাও সেজে ওঠে লাল কমলার নানা শেডে, সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে আরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট কি একঘন্টা পশ্চিম আকাশ ধরে রাখে রঙের ছোপ। ওখান থেকে নেমে ভেতরের প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়াই, খাবারঘরের জানলা দরজা দিয়ে লালে লাল আকাশ আর মাথার উপরে পেট্রোল ব্লু আকাশ ধীরে ধীরে মুছে নেয় মনের উপর লেপ্টে থাকা কালো অন্ধকার। ‘কলুষ কল্মষ বিরোধ বিদ্বেষ হউক নির্মল,হউক নিঃশেষ-‘ সুচিত্রা মিত্রর জোরালো বলিষ্ঠ গলার সাথে মিশে যেতে থাকে আমার গলা। ... ...