আমরা তো ভুলি নাই শহীদ...দিনাজপুর প্রতিনিধি খবর দেওয়ার আগেই ফুলবাড়ি গণবিদ্রোহে গুলি চালানো প্রথম খবর পাই আন্দোলনের বন্ধুদের কাছ থেকে। তখনো গুলি আর টিয়ার শেল বর্ষণ চলছিলো (২৬ আগস্ট, ২০০৭, বিকেল বেলা)। আমি খবরটি নিশ্চিত করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুরে পরিচিত সাংবাদিকদের টেলিফোন করা শুরু করি। অফিসে জানাই, টপমোস্ট নিউজ রেডি হচ্ছে।দিনাজপুরের সাংবাদিকরা তখন গুলিবর্ষণের খবরে মটর সাইকেলে ফুলবাড়ি রওনা হয়েছেন। পরিস্থিতির এতোটা অবনতি হবে তারা ভাবতেই পারেননি। তাই সেদিন সবাই দিনাজপুর সদরেই অবস্ ... ...
দাগ কাটতে গেলে ঝকমক করার দরকার নেই। একথা বিশ্বাস করি বলে আমরা ওসবের কারবারে নেই। ফলে জগৎ জোড়া জালে যখন গিজগিজ করছে জাল-সিরিজ, তখন আমরা, আমরা, গুরুচণ্ডা৯ সদলবলে ও সগর্বে হাঁটছি উল্টো-পাল্টা দিকে। উল্টো দিকে নয়, উল্টোপাল্টা দিকে। দৃশ্যশ্রাব্য আমাদের ভালই লাগে। ঝিম মেরে সিনেমা টিনেমা দেখি, পারলে দু-একটা বানিয়েও ফেলি। কিন্তু আমরা ঋত্বিক ঘটকও নই, যে, পুরোনো জিনিসকে লাথি মেরে "উন্নততর" মাধ্যমে চলে যাবার তাড়া আছে। আমরা উন্নততর বা ওটিটি প্লাটফর্ম কিসুই নই, নিজেদের তালে চলি। আমরা তাই সিরিজ বা সিরিয়াল নয়, নিয়ে এসেছি চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিককে। স্রেফ অক্ষরে। প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি শনিবার। আমাদের ওয়েবসাইটে। ... ...
মামা শুধু গল্প বলত এমন না। মামা গল্প বলার সময় তা পরিবেশন করত। চোখ, মুখ, হাত পা, কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে গল্প বলত মামা। ক্লাইম্যাক্সে যাওয়ার আগে থামত চোদ্দবার, আরও কয়েক দিক থেকে গল্পটা বুঝাত, পরিস্থিতিটা বর্ণনা করতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি পরিষ্কার না হচ্ছেন যে আমরা পুরোপুরি বুঝছি কী পরিস্থিতি ছিল সেই সময়, অন্ধকার কত গাঢ় ছিল, বাতাস কেমন ছিল, উনার ঠিক কত সামনে ঘন কালো পাহাড়ের মত কী জানি একটা দাঁড়িয়ে আছে, ওইটা দেখে উনি তাৎক্ষনিক কী চিন্তা করলেন, তারপর কী করলেন ইত্যাদি ইত্যাদি তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণনা করে, হাত নেড়ে, গলার স্বর উঠিয়ে নামিয়ে আমাদেরকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দেওয়ার পরে তিনি যেতেন পরের ধাপে। এরপরে কী হইল শোনো...! ... ...
বিদেশে বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের রস গ্রহণ করার উপায় বাতলাবার জন্য বকায়দা অ্যাপ্রেসিয়েশন কোর্স পড়ানো হয় শুনেছি। এদেশে চলচ্চিত্রের জন্য সেরকম কিছু সীমাবদ্ধ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাকি অন্য মাধ্যমগুলি, যেমন চিত্রকলা, সঙ্গীত, কাব্যসাহিত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি, সাধারণ গ্রহীতা ঠিক কীভাবে উপভোগ করবে, তার কোন স্বীকৃত ও সুলভ দিকনির্দেশ পাওয়া যায়না। এর মূল কারণ মনে হয় আমাদের দেশে সব শিল্পের পাঠই গুরুমুখী, তাই এই অন্তর্মুখী প্রবণতাটি অতি প্রবল। অতএব যেসব রসিক ব্যক্তির মনোজগতে রস উপভোগের বাসনা প্রবল, কিন্তু তাঁদের ... ...
আমাদের সংস্থান ভিন্ন। আমাদের আনন্দ আলাদা, অভিমান আলাদা। আমাদের পদশব্দও আলাদা। আমাদের পাপ আলাদা। লকার আলাদা। কোনো কোনো মুহূর্তে বৃত্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়েছিলে, তাই কাটাকুটি খেলা। সন্ধ্যে নামার আগে তেচোখো মাছেরা খলবল করে অখন্ডিত আলোয়। তখন জলতলে ছায়া নামছে বলে কুঁচবক উড়ে যাবে দূর শিরিষের চূড়োয়। একটি বৃত্ত ক্রমশ মিলিয়ে গেল বলে আরেকটি বৃত্তের ঢেউ দিই। এই তো মেলেছে পার্বণ তোমাকে নির্বাসন দিইনি বলে। ঢেউ ঢেউ তরঙ্গ তরঙ্গ ... ...
জানেনই। খাওয়াও যৌনতা। ... ...
"অমরত্বের প্রত্যাশা নেই , নেই কোনো দাবী-দাওয়া , এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া..." রাস্তায় চলতে চলতে অবচেতনে মনে আসছিল ভ্যান গঘের জীবন, জানি না কেন 'জাতিস্মর' গানটাই ভেসে উঠছিল তার সঙ্গে। ১৮৫৩ থেকে ১৮৯০ - একটা লোকের মাত্র ৩৭ বছরের জীবন,যে হঠাৎ তার ২৭ বছর বয়সে আবিষ্কার করে ফেললো যে সে শিল্পী হতে চায়, চিত্রশিল্পী; আর ঠিক পরের দশটা বছর সেই চিত্রশিল্পই তার নশ্বর জীবনকে এনে দিল অমরত্ব! মিউজিয়ামের চারতলায় ধাপে ধাপে হলঘরের মত স্টুডিও-তে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা ছবির সম্ভার, অধিকাংশ-ই ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের, তবে বেশ কিছু ছবি আছে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত মুহুর্তের আর মানুষের যেমন পল গগ্যাঁ, বার্নার্ড, কোনিং প্রমুখের। ... ...
তোমারি তুলনা তুমি....আজ তাঁর জন্মদিন। আমার জংলা ডায়রির কয়েকটা ছেঁড়া পাতা উড়িয়ে দিলুম তাঁর ফেলে যাওয়া পথে।দাঁড়াও পথিকবর....জন্ম যদি তব অরণ্যে," সবুজ কাগজেসবুজেরা লেখে কবিতাপৃথিবী এখন তাদের হাতের মুঠোয়"(বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)মহাভারতের কালে অঙ্গ ও বঙ্গদেশ শুধুই অরণ্য ছিলো। কিন্তু বাঙালির অরণ্যপ্রীতির ইতিহাস বিশেষ প্রাচীন নয়। রাজা রামমোহন বেশ কিছুদিন চাতরার জঙ্গলমহলে আমিন ও মুন্সির কাজ করেছিলেন প্রায় দু'শো ব্ছর আগে। যে চাতরা আজকের দিনেও প্রায় দুর্গম একটি ... ...
১.সে এক পেল্লাই দেশ। নয় নয় করেও কমসে কম তাতে ১০০ কোটি প্রজাগণ, চারিদিকে তারা যুক্তির শো-পিস দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছে, মগজে কলকলিয়ে ওঠা জ্ঞানের ভান্ডারদের সেখানে চৈত্রসেল সুলভ 'সাজান' ডজন-ডজন জিবি বুদ্ধির কেনাবেচা চলে প্লট না থাকা বাংলা সিরিয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ডে ষাটের মেলোডির ঢেঁকুর তোলার ধুনে। রাজসভাও আছে একখানা। রাজাকে সাহায্য করতে পরিষদবর্গের ঢাল-তরোয়াল, যাকে বলে ফিবোন্যাকি সিরিজের লিমিট।একদিন রাজামশাই হুকুম দিলেন :"প্রজাগণ, জেনে রাখ সবেআজি হতে তবদিগে মুখোশ পরিতে ... ...
বাবা আমার নাম রেখেছিল কুন্দনন্দিনী, বিষবৃক্ষের নায়িকা। কিন্তু আমার বয়ে গেছে অমন ন্যাকাবোকা মেয়ে হতে। আমি একেবারে রোহিণী, হ্যাঁ, ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র রোহিণী। আমি যা চাই তা আদায় করে নিতে পিছপা হই না।আমি দিদির মত অত ভাবের ঘোরে থাকি না। বেশি সংস্কৃত সাহিত্য আর বৈষ্ণব পদাবলী পড়লে অমন হয়। দিদির ওই ‘মথুরা নগরে প্রতি ঘরে ঘরে যাইব যোগিনী হইয়ে’ ভাব আমার পোষায় না। আসলে ওই যারা অমন ‘ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলে আর পেলাম না’ ভাবে থাকে তারা হয় নিজেকে ঠকায়, নয় হিপোক্রিট। ... ...
ঝকঝকে একটা সকালে ঘুম ভাঙলো থাচুংসে ক্যাম্প-সাইটে। আহা! এরকম আকাশ, এরকম ওয়েদার যদি আরও দু-তিনটে দিন থাকে! আজ আমাদের যাওয়ার কথা ১৬,৫০০ ফুটের কাং-ইয়াৎজে-২ বেসক্যাম্পে। ২,৬০০ ফুটের মতো অল্টিটিউড গেইন হবে। গতকাল হাঙ্কারের ফোনবুথ থেকে আমাদের ক্লাইম্বিং-গাইডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। মানালির ছেলে। কিরণ কাপুর। ওকে বলা হয়েছে আগামীকাল বেসক্যাম্পে পৌঁছে যেতে। চোকদো থেকে নিমালিং হয়ে কিরণ সরা ... ...
শুনছেন, ইচ্ছে করলে আমার টেবিলে এসে বসতে পারেন। ঢের জায়গা আছে। একটা লোকের আর কতটুকু জায়গা চাই? না, না, আমার কোন অসুবিধে হবে না। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি চাইলে চুপটি করে বসে থাকতে পারেন, আমিও তাই। তবে কি জানেন, কথা বলা আর চুপ করে থাকা-- দুটোই একসঙ্গে করা যায়। এটা খুব কম ... ...
যুদ্ধ বা সামাজিক পরিবর্তন কি শিল্পকে পালটায়, না শিল্পীকে পালটায়? নাকি কোনো কিছুই পালটায় না, সবই সাময়িক? ... ...
মজার গল্প শুনেন। তখন নিয়ম করে ইফতার খেতে যাই। ভলেন্টারি মসজিদে গেছি ইফতার খেতে। এইটা একটু দূরের একটা মসজিদ। একটু নিরিবিলি। বাস থেকে নেমে একটু হাঁটলেই মসজিদ। একটু বলতে এক দেড়শ মিটার হবে হয়ত। আমার সাথে আরও দুইজন। এই সময় বাঘের মত একটা কুকুর কই থেকে জানি এসে হাজির। আমি ঠিক কুকুরপ্রেমি টাইপ মানুষ না। দেশি কুকুরকে মাঝে মধ্যে ঘাড় গলা হাতায় দিছি, ওরা আরামে শুয়ে পড়ছে। কুকুর প্রেম বলতে আমার এই পর্যন্তই। আর যা আছে খিঁচে দৌড় দেওয়ার স্মৃতি। আমি আগে পিছনে একটা কিংবা এক পাল এমন গল্প বহু আছে। কিংবা এক পাল আমাকে ঘিরে ধরেছে আমি কানের হেডফোনের সাউন্ড পুরো বাড়িয়ে দিয়ে গুটি গুটি পায়ে ওদেরকে পার হচ্ছি, আমার যুক্তি হচ্ছে ওদের চিৎকার না শুনলে আমি ভয় পাব না আর ভয় না পেলে আমি দৌড় দিব না, আর আমি দৌড় না দিলে ওরাও চিৎকার করেই থেমে যাবে। রাত বাজে সাড়ে তিনটা না চারটা, আমার বুদ্ধি কাজে লাগছিল, আমি কোন বিপদ ছাড়াই পার হতে পেরেছিলাম। ... ...
কলকাতায় বন্ধু যারা ছিলেন তারা হয় শহর ছেড়েছেন, নয় বন্ধুত্ব, কেউ কেউ দুটোই। শেষ বন্ধু যারা থেকে গেছেন তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত। মনে আছে মনাশে থাকার সময় একবার পুজোয় তাঁদের ফোন পেলাম, এবং আমি যে জঙ্গলে থাকতাম সেখানে যে পুজো ইত্যাদি হয়না, আমি যে মোটের ওপর পুজোর হাত এড়াতে পেরেছি সেটা জানিয়ে তাঁদের আমি আশ্বস্ত করেছিলাম, নিজেও আশ্বাস খুঁজে পেয়েছিলাম। এমনিতেও আমার বাড়ির কাছে এমন কোন বিরাট পুজো হয়না, মাইকের অত্যাচারও নেই। ছোটবেলায় সবারই একটু পুজোর গল্প থাকে, মাইক থাকে, কিছু লুপে শুনতে বাধ্য হওয়া ... ...
ফেলুদার সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় করিয়ে দেয় তোপসে। জানায় ফেলুদা তার মাসতুতো দাদা। ফেলুদা, ফনি ডাক্তারের সাথে দেখা করে। তোপসেকে একটা মুখোশ কিনে দেয় 'নেপাল কিউরিও শপ' থেকে। প্রবীর মজুমদারের সাথে দেখা হয়, তার মুখ থেকে তার হোটেলের খবর বের করে নেয়। তিনকড়িবাবুর আসল পরিচয় জানতে পারা যায়। তিনকড়িবাবুও ডঃ ফনি মিত্রের কাছে গেছিলেন। এবং তাঁর বয়ান থেকেই প্রথম জানা যায় ফেলুদার সিগারেটের নেশা আছে। এর আগে ফেলুদাকে সিগারেট ধরাতে দেখা যায়নি। এরপরে আছে। এই রাতেই রাজেনবাবুকে মুখোশ পরে ভয় দেখায়, অপরাধী। ... ...
চা-ওয়ালা ছেলেটা হো হো করে হাসল, তারপর বলল, “জমি কিনতে গেছিলাম।” আমার মুখ দেখে ছেলেটা কিছু একটা বুঝল। বলল, “বিশ্বাস হল না, না ?” আমি চুপ। সত্যিই বিশ্বাস হয়নি। “কিছু মনে করবেন না স্যার, আপনি কত মাইনে পান? পাঁচ হাজার? সাত হাজার? দশ হাজার?” আমি চুপ। ১৯৯৬ সালে দশ হাজার টাকা মানে বেশ ভাল মাইনে। আমি তার চেয়ে অনেক কম পাই। “আমার ডেইলি প্রফিট ৫০০ টাকা। সেল নয়, প্রফিট,” বলল ছেলেটা। ... ...
ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বালেশ্বরে। চাঁদিপুরে গেছিলাম সাতদিনের জন্যে। গিয়ে দেখি প্রেশারের ওষুধ আনিনি। বালেশ্বরে গেলাম ওষুধ কিনতে। বলল, "আনিয়ে দেব, কাল আসুন।" বাজারে চা খেতে গিয়ে আলাপ হল ভদ্রলোকের সঙ্গে। স্বাস্থ্যবান, দেহাতি চেহারা। খেটো ধুতির ওপর মোটা সুতির পাঞ্জাবি, গলায় তুষের উড়ুনি। ভদ্রলোক যে কোন প্রদেশের বোঝা মুশকিল। আমার সঙ্গে পরিষ্কার বাংলায় কথা বললেন, দোকানির সঙ্গে উড়িয়ায়, সঙ্গে দুজন আদিবাসী মজুর ছিল - তাদের সঙ্গে কোন এক উপভাষায়। আমার জঙ্গলপ্রীতির কথা জেনে বললেন, "আসুন না। জঙ্গল দেখে য ... ...
শুধু পয়লা মে নয়, বছরের প্রতিটি দিনই তাঁর গান আমার সঙ্গে থাকে। কখনও শুনি, কখনো গাইতে চাই, কখনও বা আলোছায়ার মতো গানগুলি মাথার ভিতরে আসে যায়। কতোদিন হলো? বছর চল্লিশ? বেশিই হবে হয়তো বা। ---------------------------------ভার্সাটাইলের বাংলা 'বহুমুখী'। ব্যপ্তিটা ঠিক ধরা যায়না এই প্রতিশব্দে। ভারতীয় সঙ্গীত ও তার বৈচিত্র্যের ব্যপ্তিকে আকাশ বা সমুদ্র কোনও প্রতীকেই যথেষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়না। তিনি ছিলেন সেই নীহারিকাপ্রতিম ব্যাপ্তির অলখ নিরঞ্জন । কতো রকম গান, কতো ভিন্নমুখী, কতো ভিন্ন পারদর্শিতার ... ...