মেয়েছেলেরা বেশি রাত করে বাইরে থাকবে না। ওটা পুরুষের একচেটিয়া। লক্ষ্মীর স্বামী রোজ দেড় রাতে টলোমলো হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। ওকে চুল ধরে টেনে ওঠায়। সোয়ামির জন্য যত রাতই হোক জেগে বসে থাকতে হয় ওর বারোভাতারি মা শেখায়নি ?ধুপধাপ মারের চোটে বস্তি জেগে যায়। কিন্তু কেউ এগোয় না। বাবুরাও তো কারো ঘরেলু মামলায় দখল নেয় না।লক্ষ্মী তাই পা টেনে টেনে আমার ঘর মোছে, বাসন মাজা সাবান কাটা আঙুলে ঢুকে গেলে আঃ উঃ করে। আমারও কষ্ট হয়, কিন্তু ওর চোয়াড়ে বর এই সৌখিন ফ্ল্যাটে চড়াও হলে সম্মান যাবে এই ভয়ে চুপ থাকি। ... ...
দুধসাগর তারকরলি - - তা হোটেলখানি বেশ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, সামনে লোহার জমকালো গেট। রাতে এসে হর্ন বাজাতে এক রোগা পাতলা বাচ্চামত ছেলে এসে গেট খুলে বাঁদিকে হাত দেখালো। ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ঝুপসি গাছে ভরা, ভেতরের পথটিও ঠিক পাকারাস্তা নয় মাটির উপর ইঁট আর পাথরের টুকরো ফেলা। বাঁদিকে গাড়ি নিয়ে অল্প এগোতেই দেখা গেল আর এগোন যাবে না, মাটির পথ ধাপে ধাপে নেমে গেছে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - সিরিজের পর্ব ৪ - - - বিড় বিড় করে অস্পষ্টভাষী নন্দনবাবা নন্দী মাহাত্ম্য দিয়ে শুরু করে সমুদ্র মন্থনে পাক মেরে বিশ্বরূপ দর্শন ছুঁয়ে কী যে ঘন্ট পাকালেন মাথায় কিছুই ঢুকলো না। মহিলাটি শোনার চেয়ে বাবার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করতে ব্যাগ্ৰ। ব্যাটারি ডাউন হয়ে তাও বন্ধ হয়ে গেল। আমি মুখ নীচু করে হাসি চাপি। এক দশক কুয়েতবাসী মহিলা বাবাকে অতক্ষণ বকিয়ে, বাবামৃত আংশিক রেকর্ড করে বাবার ATMএ রাখলেন মাত্র দশটি টাকা! বাবা চকিতে দৃষ্টিপাত করেন আমার দিকে। তারা চলে যেতে আমার দিকে মর্মভেদী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝোপড়ার সামনে খোলা আকাশে দু হাতে ফ্রেমের ভঙ্গি করে বলেন, LCD স্ক্রিন মে ইয়ে ড্রামা ক্যায়সা লাগা? বলি, য্যায়সা অনোখা সওয়াল এ্যাসেহী লা-জবাব জবাব। অস্পষ্টভাষী বাবা হাসেন প্রাণ খুলে। ... ...
কিছু টাকা তোলার চেষ্টা কিরছি আমার মামার ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য।রোগটি জটিল ও ভীষণ ব্যয় সাপেক্ষ। আর্থিক অসঙ্গতির জন্য প্রথমে সরকারি হাসপাতালে (নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ) চেষ্টা করা হয়রছিল কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে নিউটাউন টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালের দ্বারস্থ হয়।ওনারা যা এস্টিমেট দিয়েছেন তাতে চিকিৎসার খরচ প্রায় ৫ লাখ(সমস্ত মেডিকেল চেকআপ, সিটিস্ক্যান, এম আর আই যা এস্টিমেশনের মধ্যে ধরা নেই)এখনো অবধি আমরা সমস্ত রকম ব্লাড টেস্ট, সিটি স্ক্যান এম আর আই, কোলনস্ ... ...
বইমেলাবিপুল দাসতখন প্রভু কহিলেন –- কলিযুগে একপ্রকার উৎসব অনুষ্ঠিত হইবে। ইহার নাম বইমেলা। প্রভু, এই মেলায় কি নাগরদোলা থাকিবে ?পৃথক কোনও ব্যবস্থা থাকিবে না। কিন্তু অজস্র নাগর ও অজস্র দোলা, বুলা, নীলা, পলা, লীলা, শিলা, ইলাগণ এই মেলায় পাকেচক্রে ঘুরিবে। প্রভু, এই মেলা সম্পর্কে বিশদে জ্ঞাপন করুন।তবে শ্রবণ কর। এই মেলায় ‘মোবাইল ফোন’ নামক এক প্রকার তারবিহীন দূরভাষণ যন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে। প্রভু, উহা কী প্রকার বস্তু ?যখন দেখিবে কেহ একটি অনধিক দশ আঙুল ও ... ...
ম্যাল রোডে ঢোকার মুখেই, দা ওয়ান অ্যান্ড ওনলি - কেভেন্টারস। ছাদে বসে দার্জিলিং চা - ফলোড বাই দা গাবদা পর্ক প্ল্যাটার - অনেকদিনের টার্গেট। খুশীর স্বাস্থ্য বাতিক - সে চিকেন প্ল্যাটার। যতটা ক্যালোরি বার্ণ হল প্রায় ততটাই আবার ভরে গেল। মেঘের আবার ডেজার্টও চাই - কাজেই তার জন্য আইসক্রিম। আমি আইসক্রিমের ভক্ত নই, খুশী তো খাবেই না এসব (সিঙ্গল কান্না)। কেভ'স এ আর কোন ডেজার্ট ও নাই। ... ...
বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গভীর মননশীল ও সমাজতাত্বিক বিশ্লেষণ। পুরো EPW লেভেল। ... ...
বিলিতি কম্পানির বড় সাহেবদের জন্য সাপ্লায়ার সমূহ প্রেরিত "ডালা"। যত বড় সাহেব ততো বড়ো চ্যাঙারি। তাতে বাছাই করা ফল-বাদাম - বিস্কুট - চকলেট - রসে ডোবানো আনারসের "সুদর্শন" চক্র যেমনি থাকতো... থাকতো Gold Coin Apple Juice, সোডাপানি আর লাঠি হাতে বুড়ো ছাপ কালো বাক্সের লালজলের বোতল। কেন জানি সেটা দেখলেই আমার 'আবোলতাবোল' এর 'কাঠবুড়োর' কথা মনে হতো ! ... ...
নেহাৎই ভাগ্যবান বলে চোখে দেখি আমি, কানে শুনি, ভাষা বুঝি মানুষের। নেহাৎ ভাগ্যের ফেরে বইমেলা যাই, কলকাতা শহর বেড়াতে। গ্রহ তারা অনুকূল বলে হয়ত প্রিয় বন্ধুরা ঘিরে রাখে দেখি পরম আদরে, পাখি ডাকে সকালের দিকে, বাইরে ঠান্ডা হাওয়া গরম চাদরে পোষ মানা বেড়ালের মতো খেলে চোখে মুখে। আরও বেশি পাই বটে অবরে সবরে আশ্চর্য লেখা কিছু কবিতা বা গদ্যের পোশাকে জলজ্যান্ত হয়ে কিছুক্ষণ দীপাবলী নিয়ে আসে এই ঘরে। কিছু ছায়াছবি রক্ত মাংস হয়ে সাদরে নিয়ে যায় তার অন্দরে। মানুষের কাছাকাছি এতদিন থাকা সত্ত্বেও অনেক নতুন কিছু ... ...
০১. সারা পৃথিবীতে ‘টারজান’ চরিত্রটি কমিক্স বই, উপন্যাস, সিনেমা ও কার্টুন ছবিতে প্রায় একশ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে নিজস্ব জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ছোট বেলায় ’টারজান’ বা তার প্রেমিকা ’জেন’ হতে চায়নি, এমন বালক-বালিকা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।টারজান একটি কাল্পনিক চরিত্র। এডগার রাইজ বারোজ এই কমিক্স চরিত্রের নির্মাতা। ’টারজান’ কথাটির অর্থ ‘শাদা মানুষ’। ‘টারজান অব দা এপস’ উপন্যাসে টারজান চরিত্রটি প্রথমে জনপ্রিয়তা পায়। মূল গল্পে দেখা যায়, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সভ্য জগত থেকে একটি পশ্চিমা শিশু আফ্রিকার ... ...
দেবাংশুদাকে, কিছু বলতে হলে অনেক কিছু লেখার নেই। ডান হাত নেহাতই বিধির বামে। আজ পর্যন্ত কিছু কী ভেবেছি তাকে নিয়ে। আর ভাবার আছেই টা কী! মাতাল, পার্ভর্রট, যেমন আমরা হয়ে থাকি ডালে-পাতায়। নাহ, কিছু ভাবিনি। ৯০ এর শেষে মুকুদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। তাই শিবির প্রশ্নে, আলাদাই ছিলাম আমরা। তাই কাগজে দেখি, রুমকি -পোসেনিজিত ও অন্যান্য ঘটনা, উজ্জ্বলা যেভাবে চানাচুরে বেঁচে থাকে। অভ্র নেই, তাই সামাল কিছুতেই দিতে পারছি না, এখন। বসন্তে আহাজারি চলছে। লিখতে পারছি না ও অন্যান্য স্বাভাবিক গার্হস্থ ঝামেলা। আজ সকালে বিশ্বাস ... ...
“আরে বরফ পড়ছে তো!”-”বরফ? সে কী? বৃষ্টি তো!-”আরে দেখ। সত্যি বরফ, জ্যাকেটে লেগে আছে”- তাইতো!আর তাই কিছুক্ষণ পরেই দুই-হাত পেতে ওই চোদ্দজনের নানান বয়সীরা শিশু হয়ে যায় বরফের কুচি হাতে ধরতে। আস্তে আস্তে বাড়ছিল সেই বরফকুচির প্রকোপ।একটু আগেই ওরা নাথাং উপত্যকায় ঘুরছিল। মাঝখানের অনেকটা সমতল জায়গার প্রায় তিন দিক ঘেরা বরফ ঢাকা পাহাড়ে। একদিকের পাহাড় বরফ কিছুটা কম, তারই দেয়াল ঘেঁসে প্রায় গোটা পঞ্চাশ ঘরের ... ...
শীত আসছে....মানে কোলকাতার শীত আর কি। কোলকাতার বাইরে সব্বাই শুনে যাকে খিল্লি করে সেই শীত। অবশ্য কোলকাতার সব কিছু নিয়েই তো তামাশা চলে আজকাল, গরীব আত্মীয় বড়লোকের ড্রয়িংরুমে যেমন। তাও কাঁথার আরামের মতোই কোলকাতার মায়া জড়িয়ে রাখে, বড় মায়া হে এ শহর ছাড়িয়ে মাঠ রাস্তা সব খানেই ছড়িয়ে থাকে টুক করে তুলে আনিলেই হয়। অন্য বড় শহরে রাজ্যে প্রদেশেও এরকমই মায়া ছড়িয়ে থাকে হয়ত আমি জানি না আসলে। ঘুরতে গিয়ে না, কোনো জায়গায় না থাকলে তো তার সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরী হয়না, যে সম্পর্কে খালি মন রাখা থাকে, ঝগড়াঝাঁটি রাগারাগি চলে ন ... ...
কুলদা রায়স্বপ্নময়কে প্রথম দেখি কুইনস লাইব্রেরীতে। নিউ ইয়র্কে। ম্যারিক বুলেভার্ডে। সামনে বাস স্ট্যান্ড। সারি দিয়ে বাস ঢুকছে। বের হচ্ছে। একটুও শব্দ নেই। ঠিক সামনেই লাইব্রেরী। শান্ত। সৌম্য। দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্নময়ের নাম এর আগে শুনিনি। আমার শোনার কথা নয়। আমি বাংলাদেশের গাঁ-গেরামের মানুষ। খুব বেশি হলে হামেদ খাঁকে চিনি। তাঁর বাপজানের নাম আসমত আলি খাঁ। গ্রাম লাহুড়ি। শঙ্করপাশা। হামেদ খাঁ তার জেব থেকে পুরনো একটা ছোট্ট নোটবুক বের করেন। তার পৃষ্ঠার একপাশে লেখা ধান-পানের হিসাবপাতি। আরেকপাশ ... ...
বেশ্যাদ্বার (দ্বিতীয় পর্ব)প্রসেনজিৎ বসু"কেন !? কেন এখন সমুদ্রলঙ্ঘন আর সম্ভব নয় ঋক্ষরাজ ?" রাম ও হনুমানের যৌথ প্রশ্নে জাম্বুবান বলতে শুরু করেন -- "প্রভু রঘুবীর ! অবধান করুন। দেবীপূজার লগ্ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আপনার বিজয়কামনায় দেবগণও নিজ-নিজ লোকে দুর্গারাধনারত, যাতে সকলের মিলিত প্রার্থনায় মহেশ্বরী আশু প্রসন্না হন। বরুণদেবও যথারীতি সমুদ্রগর্ভে দেবীপূজা করছেন। এমতাবস্থায় হনুমান যদি সমুদ্র ডিঙোতে যায়, তাহলে তা দেবীমণ্ডপ-লঙ্ঘনের মহাপাপে পরিণত হবে। চণ্ডিকা অবধারিতভাবেই কুপিতা হয়ে হ ... ...
একজন কোন কাজকেই পাত্তা দেন না। আরে সাদেক ভাই, আমি এই কাজ করার লোক? কোম্পানি আমার যে ট্রেড তার বাহিরে কোন জায়গায় আমাকে কোনদিন কাজ করাতে পারবে না। যেখানেই পাঠাবে, আমি এমন কাজ করব যে আমাকে ফেরত পাঠাবে। বলবে এই লোক দিয়ে চলবে না। আমিও চলে আসব, এসে রুমে ঘুমাব। অথচ আমরা সবাই জানি উনি খুব পরিশ্রমী। যে কাজেই লাগায় দেওয়া হোক তিনি একটুও গাফলতি না করে কাজ করেন। আমি যে ওষুধ কোম্পানিতে ছিলাম ওইখানে এখন উনি কাজ করেন। যাওয়ার সময় বললেন, কালকেই চলে আসব, দেইখেন! দুই মাস হতে চলল, ভাই এখনও একই কথা বলেন। দেইখেন, বেতন নিয়েই এমন কাজ শুরু করব যে আমাকে ফেরত দিয়া কুল পাবে না। আমি আর কী, শুনি শুধু! ... ...
ছবিতে আর কতটুকু বোঝা যায়। সাউন্ডস্কেপ হাজির করা গেলে হয়তো ভাল হত। জনতা কারফিউয়ের সকালকার কলকাতার যে রূপ দেখলাম, কোনও দিনই তা দেখি নি। আমার বাবারা কোল্ড ওয়ার, নকশালবাড়ি প্রজন্ম– মানুষী সভ্যতার একেবারে তুঙ্গ ক্লাইম্যাক্স। মৃদু হেসে বলা যায়, ওঁরাও ওঁদের যৌবনে দেখেন নি। ... ...
এই আধ্যাত্মিকতা এদেশের মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ, ভারতের জাতীয়তাও এই চেতনাই। কাউল-সেন দম্পতির উদাহরণ এইজন্য প্রাসঙ্গিক ছিল এই লেখায়। গান্ধীজি মানুষকে মানুষের সমাজকে রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধীজি বিভিন্ন আন্দোলন যখন উঠিয়ে নিয়েছেন, সেইসব পদক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু, দেশবাসীর বিরাট অংশের কাছে তারপরও গান্ধীজির জনপ্রিয়তা হ্রাস হয় নি। এবং আমরা দেখতে পাই, অসহযোগ থেকে আইন অমান্য, সবকটি ক্ষেত্রেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার কারণ রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। রাষ্ট্রনীতি রূপায়ণের থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সমাজের ক্ষমতায়নকে, সাম্যের লক্ষ্যে সমাজসংস্কারকেও। ... ...