চার বন্ধু জীবনের সামনে টুইস্টের লোভে বিপজ্জনক কাজে নিজেরা জড়িয়ে যাচ্ছে।সেটা নিয়েই এই উপন্যাস। ... ...
কলম্বাস বাবু শুধু ভারতকে নিয়েই কনফিউশনে ভোগেন নি – ক্যারাবিয়ান দ্বীপে পৌঁছেও বেশ ছড়িয়ে ছিলেন, ছড়ানোর মধ্যে এক অন্যতম উদাহরণ হছে চিলি-এর সাথে পেপার-কে ঘুলিয়ে ফেলা! ক্যারাবিয়ান দ্বীপ সান সালভাদরে (আজকের দিনের ওয়াটলিং দ্বীপ) পৌঁছে ঝাল ঝাল খাবার খেয়ে তিনি মনস্থির করে নিলেন যে যা থেকে ঝালের স্বাদ আসচে তাহাই ব্ল্যাক পেপার! কালো মরিচের স্বপ্নে তাঁর মন আচ্ছন্ন ছিল তখনো! যতক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন যে সেই ঝাল কালো মরিচ থেকে নয় বরং ছোট কুঁড়ি জাতীয় ফল এর জন্য এর জন্য দায়ী – ততক্ষণে বড় দেরী হয়ে গেছে। স্প্যানিশরা এই ছোট কুঁড়ি ফলকে পেপার বলে ডাকতে শুরু করে দেয় – সেই থেকে নামটা প্রচলন হয়ে গেছে! ... ...
লোকনৃত্য সমাজকে সংহত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ... ...
আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের পুজো বলে ঠাকুর দালানে পুজোর কাজে সাহায্য করার লোকের অভাব হয় না। পিসিমণি বা বড় দিদিরা ঠাকুর দালানে বসে ফল কাটা কুটি করে – আর ওপাশে কম বয়েসীরা ফুল ইত্যাদি দিয়ে মালা গাঁথে, চন্দন বাঁটে বা বেল গাছের ডাল থেকে সুন্দর করে নরম দেখে তিনটি করে বেলাপাতা গুলি সাজিতে সাজিয়ে রাখে। চন্দন দুই প্রকারেরই থাকে – শ্বেত এবং রক্ত চন্দন। আর বলাই বাহুল্য ঠাকুরের জিনিসে যারা হাত দেবে তাদের অবশ্যই স্নান করে কাচা জামা কাপড় পরে আসতে হবে। হাসি, ঠাট্টা, গল্প করতে করতে কাজ হয়। ছোট বেলায় এই দালানে খুব একটা বসে থাকার সময় থাকত না এই সময় – কিন্তু বড় হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে গেলে এমন সময়টাই খুব সদব্যবহার করা যেত সবার সাথে ক্যাচ-আপ করার জন্য। ... ...
শত্রুপক্ষের ওরা আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল – আমরা গিয়ে আশ্রয় নিলাম জঙ্গলের মধ্যে সেই বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে। একটানা সারাদিন, এমনকি গোটা সপ্তাহ ধরেও এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দলে ছিল একজন রেডিও অপারেটর মেয়ে যে মাত্র কয়েকমাস আগে মা হয়েছে। সেই বাচ্চার তখনো স্তন্যপান করার বয়স, কিন্তু ওদিকে মেয়েটির বুকে দুধ নেই – খেতেই পাচ্ছি না আমরা দিনের পর দিন তো কি করে বুকে দুধ আসবে! আর তাই দুধ না পেয়ে বাচ্চাটা মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছিল। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতিতে বাচ্ছার কান্না ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত বিপদজনক – কারণ শত্রুপক্ষ যদি একবার কান্না শুনতে পেয়ে যায় তাহলে কেউই বাঁচব না আর – আমাদের তিরিশ জনের দলের একজনও নয়। আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – গেলাম সেই মেয়েটির কাছে – তার দিকে তাকালাম – কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউই মুখ ফুটে বলতে পারল না কমান্ডারের সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণে নিজেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল – বাচ্চাটিকে যাতে করে বেঁধে সে বহন করছিল সেটা ধীরে ধীরে নামালো – ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
অনেক দিন ধরেই মনের ভেতর কিছু কথাবার্তা বুজগুরি কাটছিল। আজ এক বন্ধুর ফোন করে সোজা পথে হাঁটতে চাওয়ায় কি ভীষণ প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হয় তার রাগী রাগী উগরে দেওয়া অভিমান ভরা কথাগুলো ঠেলে গুতিয়ে আমাকে একটা কথাই বলিয়ে নিল, 'চলো অলক্ষ্মী হয়ে যাই'। ... ...
আমি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম পৃথিবীর কোন দেশের টুরিষ্টদের সবচেয়ে বদনাম – কিন্তু সমস্যা হল এই র্যাঙ্কিং এর তো কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আর তা ছাড়া নিজের দেশকে কে আর খারাপ বলতে চায়! তবুও দেখেছিলাম যে শিষ্টাচার বিহীন টুরিষ্ট কিছু কিছু দেশের নামের পুনরাবৃত্তি হয়েছে – যেমন ইংল্যান্ডের ছেলে ছোকরাদের। যারা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরা জানেন যে সেই ফুটবল ফলো করতে গিয়ে নানা দেশে ঘুরে এই ভাবে এরা হুজ্জুত বাধিয়ে বেড়ায়! এদের তো ‘ফুটবল হুলিগান’ ও বলা হয়। এছাড়া আছে রাশিয়ান টুরুষ্ট – এদের ব্যবহার নাকি খুব খারাপ – জার্মান টুরিষ্টদের নাম আছে, অষ্ট্রেলিয়ানদের নাম আছে তালিকায় – চাইনীজ টুরিষ্টরা তো আছেই - এবং বেশ কিছু তালিকায় ভারতীয় টুরিষ্টদের নামও আছে শিষ্টাচার মেনে চলে না বলে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। ... ...
সমন্বিত ইতালির দ্বিতীয় রাজা প্রথম উমবার্তো এবং তাঁর স্ত্রী রাণী মার্গারিটা নেপলস্ ভ্রমণে আসবেন বলে ঠিক হল ১৮৮৯ সালে। চারিদিকে হই হই লেগে গেল – থাকা ইত্যাদি তো ঠিক আছে, কিন্তু রাণী এখানে এসে খাবেন কি! তো ডাক গেল তখনকার নেপলসের বিখ্যাত পিৎজা বানানো শেফের কাছে – পিজারিয়া ব্র্যান্ডির রাফায়েলে এস্পোসিতো। তাঁকে বলা হল তুমি বাপু নানা রকম পিৎজা বানিয়ে রাজা রাণীকে পরিবেশন কর। আর গতানুগতিক জিনিস না বানিয়ে, মাথা ঘামিয়ে নতুন কিছু বানাও। রাফায়েলে এস্পোসিতো বানালেন বেশ কিছু রকমের পিৎজা - তিনি একটা পিৎজা বানালেন লার্ড, কাচ্চিয়াকাভাল্লো, এবং বেসিল দিয়ে, একটা বানালেন ছোট ছোট মাছ দিয়ে, আর একটা বানালেন ট্যামাটো, মোজারেল্লা এবং বেসিল সহযোগে। এই শেষের ডিসটি তখনো নেপলস্-এর বাজারে পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে। এবং এই পিৎজা খেয়েই রাণী কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ... ...
সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে – “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?” বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে। ... ...
আর এই ‘স’ এবং ‘হ’ এর মিলিত অবস্থাকে বলেছেন ‘সহজ’ অবস্থা। সহজানন্দ লাভের জন্য সহজযানী সাধকেরা ‘সহ জ’ অর্থাৎ জন্মের সহিত জাত দেহকেই আশ্রয় করে থাকেন। ... ...
আর্য শব্দের উৎস ও এই নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীর উৎস- দুটো নিয়েই আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। ইতিহাসের একটা প্রশ্নের উত্তর কখনই একটা সূত্র থেকে পাওয়া যায় না, বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন প্রাগৈতিহাসিক যুগকে ঘিরে। তাই আমরা পাঁচরকম আঙ্গিকে উত্তরটা খোঁজার ও বোঝার চেষ্টা করব- সাহিত্য, ভাষা, জেনেটিক্স, আইকোনোগ্রাফি ও শিল্প। এগুলি সবই ইতিহাস গঠনের রসদ। এই পর্বে দেখব জেনেটিক্সএর আঙ্গিকে। ... ...
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কোলকাতার ছবির কোলাজ, ব্যক্তিগত স্মৃতির টুকরো। ইতিহাস হওয়ার দায় নেই। ... ...
কৈশোরে গড়ের মাঠে (তখন মনুমেন্ট ময়দান নয়, গড়ের মাঠই বলা হত) ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে মাউন্টেড পুলিশের তাড়া খেয়ে (ঘোড়সওয়ার পুলিশ) গ্যালারিতে বসার পর টের পেলাম — এটা ঘটিদের, থুড়ি মোহনবাগান সাপোর্টারদের এলাকা। মুখে কুলুপ এঁটে ওদের কথোপকথন শুনতে গিয়ে জানলাম — খেলার মাঠে বাঙালদের কোড নেম ‘জার্মান’! কেন? কে জানে! ... ...