বলেছিলাম আর পোস্ট করব না। কিন্তু পাঠকের দাবিতে শার্লককে অবধি ফিরতে হয়েছিল। আমি তো চুনোপুঁটি। তাই প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পোস্ট করলাম। বই হলে জানাব সকলকে। সেখানে আরও কিছু সংযোজনের ইচ্ছা আছে। ... ...
খুকীর বছর পাঁচেক বয়স পর্যন্ত ওরা ছিল কটকে। অধিকাংশ সময় বাবা থাকত না বাড়ী। কোথায় কোথায় সব ট্যুর করে বেড়াত। ট্যুর শব্দটাকে ভারী অপছন্দ করত ও। বাড়ীর খুব কাছে ছিল কাটজুড়ি নদী। বিকেল বেলা পরমেশ দাদা খেলতে নিয়ে যেত সেখানে। বাড়ীতে কেউ এলে সেখানে একটা পিকনিক মত হত। কাটজুড়ি নদীতে চরা-ই বেশী। খুকীর কির’ম ধারণা হয়ে গেছিল নদীর থেকে পুকুরে বেশী জল থাকে। সেই যে সেবার কোন্নগরে বেড়াতে গিয়ে পুকুর দেখতে চাইল আর ... ...
ছাদের পাঁচিল টপকে পাশের ছাদে গিয়ে খেলার সময় কখনও টের পাই নি যে দু’একটা কুচোকে বাদ দিলে বেশিরভাগই আমাদের দু’ভাইয়ের থেকে বয়সে বড়। ক্রমশঃ ওদের মুখের ভাষা বদলাতে লাগল। আমরা নতুন নতুন শব্দ শুনে ভোকাবুলারি বাড়াতে লাগলাম। যেমন, তিনক্লাস উঁচুতে পড়া নন্টে হয়ত ঝগড়া হলে ফন্টেকে বলল — যা না , এখানে টাইম পাস না করে নিজের মালের পেছনে ছোট্ ! ... ...
ইন্দ্র রায় রোড ধরে হেঁটে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোডে ওঠার মুখটায় ডানদিকের কোণায় ‘দাঁ পেপার হাউস’, রাস্তা থেকে বেশ অনেকটা উঁচু বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। দোকানের ভেতরে নতুন খাতার গন্ধ, নতুন উডপেন্সিল আর রবারের গন্ধ, হলদে গোলাপী চার্টপেপারের গন্ধ, নতুন বইখাতায় মলাট দেবার ব্রাউন পেপারের গন্ধ ম’ ম’ করে। আর আছে রং পেন্সিল, রং কলম আর রঙ বাক্স। মোম দেওয়া রঙ পেন্সিলের ছোট বাক্স ড্রয়িং ক্লাসের দিন ইস্কুলে নিয়ে যেতে হয়। আমারটা বারো রঙের ছোট্ট বাক্স, সুলগ্না খুব সুন্দর আঁকতে পারে, ওর বাক্সে আঠেরটা রঙ। ত্রিসীমার একটা ইয়াব্বড় বাক্স আছে তাতে ছত্রিশটা রঙ, একদিন ইস্কুলে দেখাতে এনেছিল। ... ...
প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্রসাধনায় কল্পিত হয়েছে মানব শরীরের দুটো নাড়ী। শরীরের বামদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘ইড়া’, আর ডানদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘পিঙ্গলা’। বৌদ্ধ সাধনায় এই দুটি যথাক্রমে শুন্যতা ও করুনার প্রতীক। ... ...
আগে যাঁরা ভাগাড়পাড়া স্কুলের গল্প পড়েছেন তাঁদের অনেক জায়গাই রিপীটেশান মনে হবে। বস্তুত ঐটা আর এদিক ওদিক লেখা আরো কিছু কুড়িয়ে বাড়িয়েই এটা চলবে। আরেকবার ফিরেদেখা। কেউ যদি পড়ে মন্তব্য করেন সম্ভবতঃ উত্তর দেব না, কারণ এটা আমার নিজের জন্যই নিজের সাথে কথা বলা। আগাম মাপ চেয়ে রাখলাম। ... ...
দুর্গোপূজো শেষ, বিজয়াদশমীর বিসর্জন সবে শুরু। বিকেল পাঁচটা নাগাদ অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সময় দূর থেকে কোথাও অবাঙালী পাড়ায় রাবণ জ্বলছে, বাজি পুড়ছে। তার দূরাগত গুরুগুরু ধ্বনি মিলিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ঘড়ি ধরে দরজায় কড়া নড়ে উঠত। বাচ্চারা টের পেতাম ঢাকুরিয়া থেকে দুই জোড়া পিসিমা-পিসেমশায়রা এসেছেন! যাঁদের পদবি ছিল মজুমদার, বাঙাল উচ্চারণে মন্দার!দরজা খুলতেই ধোপদুরস্ত ধুতিপাঞ্জাবি পরা বিপুলবপু... ... ...
আম্ফান পরবর্তী করোনার দিনগুলি ... ...
আমি জয়দীপ, যে মনে করে সেক্সুয়ালিটি তার পরিচয় না, তবুও নিজের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সোচ্চার। বহু বছর ধরে। একই সাথে এইচআইভি নিয়ে যাপন করছি ২০০৬ থেকে এবং এইচআইভি নিয়েও কিভাবে ভালো থাকা যায় তার প্রচার ও এইচআইভি নিয়ে মিথ ও মিস কনসেপ্শন পরিবর্তনের কাজ আজ আমার কর্মজীবনের অঙ্গ। এতগুলো বছরের লিঙ্গ রাজনীতির স্বপক্ষে বিপক্ষে চলতে চলতে কখন নিজের অজান্তেই জড়িয়ে গেছি আন্দোলনের সাথে তা আজ আমার জীবনের সাথে মিলে মিশে গেছে। সেই সঙ্গে নিজের জীবনের ছোটবেলা, বড়বেলা, হোমোবেলার স্মৃতি ভাগ করে নিতেই শুরু করছি পুরোনো কথার ঝাঁপি। ... ...
- 'দ' য়ের হইল মাথায় ব্যথা। দাদু শ্লেটে চক পেনসিল দিয়ে একটা বড় করে 'দ' আঁকলেন। -- চন্দ্র আইলেন দেখতে। এবার দ'য়ের পাশে একটা চন্দ্রবিন্দু আঁকা হল। -- তাইন দিলেন বাইশ টাকা। দাদু দয়ের পেটের নীচে বিচ্ছিরি করে ২২ লিখলেন। ... ...
কিশোর কবি সুকান্ত এসব ছড়া লিখেছিলেন সম্ভবতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলিতে বেলেঘাটায় বসে। আমাদের বাড়িতে রেডিও এল ১৯৫৭ সালে, তখন ক্লাস টু’তে পড়ি। এর আগে কাকারা রেডিও ভাড়া করে আনতেন মহালয়ার একদিন আগে, বাড়ির সবাই ভোর চারটেয় উঠে ‘শ্রীমহিষাসুরমর্দিনী’ শুনবে যে! সেটা আসলে কালীবাবুর ইলেক্ট্রিকের দোকানে তৈরি লোক্যাল সেট, খালি কোলকাতা ক’ স্টেশন শোনা যায়। ... ...
সমস্ত ঝড় একদিন থেমে যায়। সব পাখি একসময় ঘরে আসে। কিন্তু কেউ কেউ ঘরে ফেরেনি। কেউ কেউ স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বুকে নিয়ে জীবনভর অপেক্ষা করে, হয়ত কোন একদিন ঘুর্ণি হাওয়ায় উড়ে আসা শালপাতায় ভর করে ডাক আসবে ফেরারি ফৌজের ... ...
দাদু আমাকে বিদ্যাদিগগজ মহাধনুর্ধর করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিজে মুখে মুখে শেখাতে লাগলেনঃ “তিরিশ দিনেতে হয় মাস সেপ্টেম্বর, / সেইরূপ এপ্রিল, জুন আর নভেম্বর। / আটাশ দিনেতে সবে ফেব্রুয়ারি ধরে, / বাড়ে তার একদিন চারিবর্ষ পরে। ... ...
“শুয়োরের বাচ্চা জনগণ, / বছর বছর নির্বাচন?” --সব তো হল। বোমা বাঁধা, কামানের গোলা, এক ঘুসিতে একটা ছেলের ঠোঁট ফাটিয়ে দেওয়া, বই পোড়ানো, স্যারের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া; আর কিছু বলার নেই? ... ...
সুন্দর ব্যাপারটা আপেক্ষিক – কারণ আমার চোখে যা সুন্দর, তা আপনার কাছে লাগতে নাও পারে! তবে কিনা একটা ব্যাপার থাকে – যেমন ঐশ্চর্য্য রাই সুন্দর, এ নিয়ে মনে হয় না তেমন কেউ দ্বিমত হবেন। তাই যদি কেউ ভিয়েতনাম ঘুরে এসে থাকেন এবং এই শহরে সময় কাটিয়েছেন এমন থাকেন, তাহলে মনে হয় তাঁরা আমার সাথে একমত হবেন যে, ভিয়েতনামের সবথেকে সুন্দর শহর খুব সম্ভবত ‘হোই-আন’। ভিয়েতনামের দক্ষিণে হো-চি-মিন সিটি থেকে উত্তরে হ্যানয় যেতে পারেন বা ভাইস ভার্সা। কিন্তু ভিয়েতনামের মধ্যভাগটা যেন কোন ভাবেই মিস করবেন না – মধ্য ভিয়েতনামেই আছে, হুয়ে, মাই-সন, হোই-আন, ডা-নাং এই সব সুন্দর জায়গা গুলি। একে একে লিখব যদি সময় পাই বা উৎসাহ থাকে। আজকে একটু হোই-আন নিয়ে ফিরে দেখা যাক। ... ...
ফেরারি ফৌজের রোল কল? ডেকচিতে ফুটন্ত ভাত উথলে উঠেছে। বিজনদা উঠে গিয়ে ঢাকনা তুলে দুটো ভাত টিপে আবার চাপা দিল। --আর দু-তিন মিনিট; তার পরেই নামিয়ে দেব। ... ...
ফেলুদার সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় করিয়ে দেয় তোপসে। জানায় ফেলুদা তার মাসতুতো দাদা। ফেলুদা, ফনি ডাক্তারের সাথে দেখা করে। তোপসেকে একটা মুখোশ কিনে দেয় 'নেপাল কিউরিও শপ' থেকে। প্রবীর মজুমদারের সাথে দেখা হয়, তার মুখ থেকে তার হোটেলের খবর বের করে নেয়। তিনকড়িবাবুর আসল পরিচয় জানতে পারা যায়। তিনকড়িবাবুও ডঃ ফনি মিত্রের কাছে গেছিলেন। এবং তাঁর বয়ান থেকেই প্রথম জানা যায় ফেলুদার সিগারেটের নেশা আছে। এর আগে ফেলুদাকে সিগারেট ধরাতে দেখা যায়নি। এরপরে আছে। এই রাতেই রাজেনবাবুকে মুখোশ পরে ভয় দেখায়, অপরাধী। ... ...
রণজয়ের বৌদি-ই প্রথম যে আমার আর রণর সম্পর্কটা আন্দাজ করেছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলেনি কোনও দিন। রণর তুতো বোনেরাও রণর সাথে সাথে আমাকে ভাইফোঁটা দিত।সবাই মিলে মাঝে মাঝে কখনওসখনও সকলের আড়ালে আমাকে রণর বৌ বলে মজা করতে ছাড়ত না, যা হয়তো আমাকে মনে মনে অন্যরকম সুখ দিত। মনে মনে আমিও যেহেতু রণর বৌ,তাই সংসারের মঙ্গলের দায় তো আমার ওপরেও কিছুটা বর্তায়।সম্পর্কটা শুধু আমরা দুজনের যাপনেই সীমাবদ্ধ থাকলেও অতগুলো বছর আগে তো ওটাই ছিল আসলে আমার সংসার। তথাকথিত ভাবে নিজেকে মেয়ে না ভাবলেও মনে মনে নিজেকে রণজয়ের বৌ ভাবতে কোথাও কোনো অসুবিধা ছিলোনা আমার। আসলে আজও তো অভিধানে অন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাইনা। ৩৭৭ পরবর্তী সমযে আজও তো সমকামী বিবাহের নেই কোনো আইনি স্বীকৃতি। আর অতগুলো বছর আগে সেসব তো কষ্টকল্পনা। ... ...