শৈশবপ্রস্তর ভিন্ন অন্যথা বিস্ময় নাই। মেহেন্দির ঘ্রাণ ও বর্ণ উভয়ত পুলকপ্রদ। বৃষ্টিবৎ ছুটিয়া যায় উৎসাহী হেলার দল। যেথা অন্ড ছিল, তা হইতে জায়মান কুতকুতে অর্বুদ চক্ষু। আয়ু, তোমাকে জন্মাবধি এমন দৃশ্য আরো দিতেছে নির্ভার রৌদ্র। ... ...
"অমর-আকবর-অ্যান্থনি" ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রের নাম ছিল অ্যান্থনি গঞ্জালভেজ, শুধু তাই নয় অমিতাভের লিপে গানও ছিল 'মাই নেম ইজ অ্যান্থনি গঞ্জালভেজ'। এই অ্যান্থনি কোন কবির কল্পনা নয়। হিন্দি ছবির এক বিখ্যাত বেহালাবাদক-তথা-অ্যারেঞ্জারের নাম ছিল অ্যান্থনি গঞ্জালভেজ। সুরকার-জুটি লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের পেয়ারেলাল বেহালা শিখেছিলেন এই অ্যান্থনির কাছে। শোনা যায় রাহুল দেব বর্মনও কিছুদিন অ্যান্থনির ছাত্র ছিলেন। "মাই নেম ইজ অ্যান্থনি গঞ্জালভেজ" গানটি পেয়ারেলালের গুরুদক্ষিণা বলা যেতে পারে। ... ...
রোজিকে পালাতেই হত। চোদ্দ বছরের বিবাহিত জীবনে নর্মান তাকে শুধুই শারিরীক অত্যাচার করেনি। ধর্ষণ করা, কয়েকটা দাঁত ফেলে দেওয়া (যার একটা আবার রোজি গিলেও ফেলেছিল) অথবা কিডনি নষ্ট করে দেওয়া বা একবার লাথি মেরে গর্ভপাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না নর্মানের অত্যাচার। নর্মান ধীরে ধীরে তাকে এটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে এটাই রোজির নিয়তি। কারণ সে একটা মেয়ে। তার শক্তি নেই এই অত্যাচার কেটে বেরোবার। এই মানসিক নিষ্ক্রিয়তা পুরোপুরি চেপে বসবার আগেই রোজ ড্যানিয়েলসকে পালাতে হত। নাহলে সে একদিন শরীরে এবং মনে বিকলাংগ হয়ে যেত। ... ...
কুম্ভলগড়ের সাধু১৯৯২ এর পুজোর ছুটিতে রাজস্থান যাওয়া হল। পঞ্চমীর দিন স্কুল ছুটি হয়ে বেরোনো। ফেরা ভাইফোঁটা কাটিয়ে স্কুল খোলার আগের দিন। ইন্ডিয়ান রেলে সার্কুলার টিকিট বলে একরকম টিকিট পাওয়া যায়। আগে থেকে কোথায় কোথায় থামা হবে প্ল্যান করে রেলওয়েকে জমা দিতে হয়। শুরু এবং শেষের স্টেশন এক হতে হবে - এই হল শর্ত । একমাস বা চল্লিশ দিন - এইরকম কিছু একটা সময়ের জন্য ভ্যালিড থাকে এই টিকিট। একসময় ইউরোপে ঘোরাঘুরির জন্য ইউরোরেলের খোঁজখবর নিয়েছিলাম। সেখানেও আছে এমন ব্যবস্থা।আমি তখন ক্লাস এইট, ভাইয়ে ... ...
আমাদের অনেকের বাড়িতেই টেপ রেকর্ডারে বেজে গেছে হেমন্তের গান, একের পর এক। কখনও ঘোরের মধ্যে শুনেছি, কখনও বহুদিন পর, কখনও কিছুদিনের তফাতে। কিছুটা আলো-আঁধারের গান গেয়েছেন হেমন্ত; কখনই শোকে সম্পূর্ণ নিমজ্জন নেই সেই কণ্ঠে, আবার আনন্দের পাল তরতরিয়ে ছুটেছে, এমনও নয়। একটি একটি করে গান গাইতে গাইতে তিনি এগিয়েছেন, জড়িয়ে গেছে আশেপাশে কত নাম তাঁর সঙ্গে। সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ বললেই এঁদের মানিকজোড় নামটি হেমন্তের; এমনকি মহানায়ক উত্তমকুমার বললেও হেমন্তই মহানায়কের কণ্ঠ। ... ...
দাদাভাই বৌদিভাই-এর টানাপোড়েন টা আমাকেও মাঝে মাঝে ভাবাত। আমি জানতাম আমাদের এই সম্পর্কটাও সমাজের চোখে কোনওদিন স্বীকৃতি পাবে না। যেখানে দাদা ভাই আর বৌদির আইনি, ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এক লহমায় 'না' হয়ে যেতে পারে সেখানে আমার আর রণ’র ভালবাসা আমাদের, একান্তই নিজেদের। টুবাই, ওর দিদি, বৌদিভাই, রণ-র তুতো-বোনেরা বিষয়টা নিয়ে সকলের আড়ালে অল্প অল্প মজা করলে, আজকাল রণও সে মজাতে যোগ দেয়। একটা অলিখিত স্বীকৃতি, প্রচ্ছন্ন ভালবাসা, সব সময়ই আমাদের দুজনকে ঘিরে থাকে। ওটুকুই আমার পাওয়া। রণ তো শুধু আমার ভালবাসা না, রণ’র নাচও তো আসলে আমার ভালবাসা। রণ’র রেওয়াজ, রণ’র অনুষ্ঠান, রণ’র নাচের পোশাকের যত্ন সবই আসলে বড় বেশি আমার। আস্তে আস্তে রণ’র সাথে রণ’র প্রতিটা অনুষ্ঠানে আমি নিজের অজান্তেই রণ’র ছায়াসঙ্গী। ঘুঙুর আর সেতারের মিলমিশ আমায় এক অন্যরকম জগতে হারিয়ে নিয়ে যায়। পড়াশোনার সাথে সাথে এভাবেই শাস্ত্রীয় নৃত্য কত্থক হয়ে ওঠে আমার সংসার, আমার প্রেম আমার ভালবাসা। ... ...
দিনান্তে যেটুকু বাড়ি ফেরা জড়িয়ে ধরে একটা মানুষ বাঁচে তার গায়ে কতটা ‘আমি’ লেগে থাকি আর কতটা ‘আমার’ সেটা কি ঠিক করে কেউ জানে? এই ‘আমার’-টা কিন্তু কাঠবেড়ালী বা পাশবালিশ যা খুশি হতে পারে। অথবা শুধু একটা অবস্থান হতেও বা আটকাচ্ছে কে? মনের শরীর বর্জন, ভীড়ের সামিল গর্জন থেকে নিজের অবস্থান, তারপর?...... হোক না সে আমার থেকে বিদ্যা-বুদ্ধি-পাড়ায়-অবস্থায় একেবারে চন্দ্রবিন্দু-কেটি মেলুয়া আলাদা, হোকনা অন্য, অচেনা, আনকোরা, হোকনা কঠিন, কোন সহজ জিনিসটা রাত জাগার ভালোলাগা এনে দেয় শুনি?আড়ালে থেকে যাওয়াদের ... ...
গলাবাজি করতে কে না ভালোবাসে? কে না ভালোবাসে যে তিনি বলবেন আর বাকিরা শুনবে। আরও ভালো হয় যদি তার বক্তব্য যারা শুনছেন তারা সক্কলে মিলে একবাক্যে সায়ও দিয়ে দিলেন। তার সাথে সাথে এ আপ্লুত সায়ও দিলেন যে-এই কথাটাই এদ্দিন আমিও বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারিনি, আহা আপনি যেন স্বাক্ষাত ফ্রয়েড। কার না ভালোলাগবে এইরকম একটা মাস সাপোর্ট পেয়ে গেলে তার বক্তব্যের সমর্থনে? বাস ট্রাম মেট্রোয় কারোর সাথে ঝামেলা লাগবার পর সহযাত্রীরা এগিয়ে আসেন আপনার হয়ে, তখন ভালো যে লাগেনা, নিজেকে যে বেশ একটা কেউকেটা বলে মনে ... ...
প্রতিবছর শীতকাল পড়লেই অবধারিতভাবে চোখে ভেসে ওঠে আমার পাড়া থেকে এক কিলোমিটার দুরের সিরিটি শ্মশানের ছবি। মনে পড়ে যায় তার কারণ এখানে এক ডিসেম্বরের সন্ধেবেলায় আমি প্রথম লাশ দেখেছিলাম। পুড়তে নয়, ভেসে যাচ্ছিল আদি গংগার গা বেয়ে। তখন কুয়াশা জড়ানো সন্ধ্যে। দুই পাশের মেয়ে বউরা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বলছিল “আহা গো, কার বডি?” লাশ “আমি স্বেচ্ছাচারী” বলেছিল কি না খবরে প্রকাশ নেই।বস্তুত আমাদের পাড়ায় এই জীবিত মৃতের কথোপকথন, কুয়াশার মনোরম মনোটনাস ম্যাজিক মোমেন্ট, রহস্য কথকতা প্রবাদ এসব জিনিস শুরু হয়ে যায় সত্তর ... ...
যুদ্ধ নিয়ে শেষ কথা হচ্ছে যারা যুদ্ধ করে তাঁরা যুদ্ধ চায় না, যারা বা যাদের যুদ্ধে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তাঁরাই যুদ্ধের পক্ষে রায় দেয়। সোজা এবং সরল কথা এটা। কয়েকদিনের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনায় এ কথা আরও বেশ ভাল ভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে।ভারতীয় জনগণ কেন যুদ্ধ চায় তার হয়ত নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে, পাওয়া যাবে পাকিস্তানের পক্ষেও। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বাংলাদেশের মানুষ কেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ চাচ্ছে তার কোন উত্তর নেই। উত্তর বোধহয় উপরের কথাটাই, যাদের যুদ্ধ করার সম্ভাবনা নাই তাঁরাই যুদ্ধ চায়… ... ...
এটা ২০৩৭ সাল। এবং অামেরিকার গ্লোবাল ডমিনেশন সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।তবে সকলেই যে নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে গিয়েছে তা নয়। এ সম্পর্কে যথাসময়ে বলা যাবে। আপাতত শুধু এটুকু জানিয়ে রাখা যাচ্ছে যে আট দশক আগে গুয়াতেমালা-ফুয়াতেমালা, চিলি-ফিলি ও আরও যে কয়েকটি পোকামাকড়কে, যেমন কিউবা ও অ্যাঙ্গোলা, দু'আঙুলে ধরে টিপে ফাটিয়ে দেবার যে কর্মসূচী গ্রহণের মধ্যে দিয়ে ব্যাপারটা শুরু করা গেছিল তা এখন পরিপূর্ণ। এবং এই দীর্ঘ গুয়াতেমালা-পর্ব ও চিলি-পর্বের পরে অষ্টাদশ পর্ব সমাপ্ত করতে যথানিয়মেই আসে ইরাক ও আফগানিস্তান। এবং মা ... ...
শহরে একজন বড় পীরের মাজার আছে তা আপনি জেনে থাকবেন, পীরের নাম শাহজালাল, আদি নিবাস ইয়ামন দেশ। তিনি এস্থলে এসেছিলেন এবং নানাবিদ লৌকিক অলৌকিক কাজকর্ম করে অত্র অঞ্চলে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। গত হয়েছেন তিনি অনেক আগেই, কিন্তু তার মাজার এখনো জাগ্রত। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা আসেন, আসেন ভক্ত আশেকান। নানাজন নানা মানত করেন, গান বাজনা করেন, অনেকে বলেন এইসব বেদাত। এইভাবেই চলে আসছে আর আমরা এই মাজারকে দরগা বলে ডাকি। ঘটনাটি এই দরগাকে নিয়ে, বা দরগার বিস্ময়কর আমগাছটিকে নিয়ে। আমগাছটি সাধারণ আমগাছ, ... ...
কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ... ...
অন্ধকার কুড়িয়ে রাখছে শূণ্যতা, শূণ্য হয়ে যাচ্ছে ছাইদান আমাদের ঘরে।'এভাবে চলবে বরাবর' কথাগুলো ভালো মনে বলেছিলে তুমি?ছাদের ঢালে সুরভিত বরগার মধ্যে মথ খুঁজে ফেরে মিহি তাজা ধুলো।নিভিয়ে দাও বা খেই ধরে অগ্রসর হও - যা তোমার মন চাইছেডার্করুমের ভেতরের আলো। মানদণ্ডের ক্রমানুসারে, খোদিত অক্ষর বা প্রতীক,বহ্য এবং তীক্ষ্ণ - ধুত্তেরি একদম ফক্কা। আবার হারিয়ে ফেলেছি। ছায়াখানি পড়ে থাকে শুধু। দূর থেকে বহুদূর অবধি শেষমেষ। ডার্ক রুমের অন্ধকার আবার ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের। আগে ... ...
ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল হয়তো সামাজিক বিধি-বিধান থেকে অথবা আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু সেই ধর্মই এখন সারা বিশ্বের অন্যতম উদ্বেগের মূল কারণ ... ... ...
পাশের গ্রাম বিসলি থেকে সাইমন এলেন কাল সন্ধ্যেয়। মা ইউক্রেনিয়ান, তাঁর বাবা জন্মেছেন মুসুরিতে, ইংরেজ , কলকাতার ডন বসকো স্কুলে পড়েছেন! সাইমনড় স্ত্রী ইরিনা ইউক্রেনিয়ান দিদিমা নাৎসিদের অগ্নি চুল্লী থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ইংল্যান্ডে আসেন। সাইমন একদা বার্লিনে কাজ করেছেন ভালো জার্মান বলেন। আমাদের সংগ্রহশালা থেকে টিনের খাবার, জামা কাপড় নিয়ে গেলেন। জানা গেলো এতো সামগ্রী জড়ো হচ্ছে যে এবার যাত্রা হবে ট্রাকে। সারি সারি ট্রাক চলেছে পোল্যান্ডের দিকে। ওষুধ পত্র পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে ছোট প্লেনে। বালিগঞ্জের বিভিন্ন ফারমাসি থেকে আমার যোগাড় করা দুশো আমক্সিসিলিন উঠবে সেই প্লেনে। ঘড়ির কাঁটার মতো চলছে কাজ। ... ...
আরে দাদুভাই, আর কইয়ো না। আজ এক্কেরে বেকুব বইনা গেসি। বিকাল বিকাল লেকে যাইতাসি। ওই সাদার্ণ এভেনিউয়ের মাঝের ঘাসের বুলেভার্ডে পোলাপানরা তো ঘুড্ডি উড়াইতাসে। তা উড়াক যত ইচ্ছা। হঠাৎ দেখি গোল পার্কের দিক থিকা একখান কাটা ঘুড্ডি, সঙ্গে অনেক মাঞ্জাসুতা, ভাসতে ভাসতে আইতাসে এদিকে। ব্যাবাক পোলাপান লাগাইলো দৌড় ! তাগো সব্বাইরে পিছনে ফেইল্যা আগে আগে আইতাসে একটা কালা ভূশন্ডি ছ্যামরা -- খালি গা আর দড়ির হাফ-প্যান্টুল পরা ! সে যে কি ছুট -- কি কমু ! ... ...