প্রায় সকল অনার্য দেবতারাই এখন হিন্দু দেবতা। কিন্তু তাও দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক, দেবতাদের থেকে এখন সাধারণ মানুষের দূরত্ব বেড়ে উঠেছে বহুগুণ। আগে অনার্য মানুষরা দেবতাদের কাছে সরাসরি প্রার্থনা করতে পারতেন। কিন্তু এখন সে প্রার্থনার অনেক রীতি, অনেক পদ্ধতি, অনেক মন্ত্র, সে মন্ত্র আবার কোন আঞ্চলিক ভাষায় নয় – সে ভাষা দেবভাষা সংস্কৃত। আর এই সকল পূজার বিচিত্র বিধি-বিধান, বিভিন্ন দেব-দেবীর বিবিধ মন্ত্র যিনি জানেন, তিনিই পুরোহিত এবং তিনি অবশ্যই ব্রাহ্মণ। ... ...
সেকাল থেকে আজ পর্যন্ত, তীর্থে-তীর্থে এবং কলকাতা বা যে কোন বড়ো শহরের রত্নব্যবসায়ীদের চেম্বারে প্রায়ই স্বঘোষিত সিদ্ধ সাধকদের দেখা যায়। তাঁদের অনেকে আবার স্বর্ণপদক প্রাপ্ত – এই পদক কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে জানা যায়না। তবে এঁরা বশীকরণ করতে পারেন, আপনাকে যে কোন কাজে সার্থক করে তুলতে পারেন। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল বৈদেশিক আক্রমণের সময় এঁদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যোদ্ধাদেরই সীমান্তে লড়তে হয়ে। তাঁরা বশিত্ব দিয়ে বিপক্ষ সৈন্য বা সেনাপতিদের বশ করে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতেন, কিন্তু কোনদিন করেননি। অথবা সাধারণ আকৃতির সাধক মহিমা সিদ্ধি দিয়ে হঠাৎ বিশাল শরীর বানিয়ে, গরিমা সিদ্ধিতে তাঁদের পায়ের তলায় পিষে একজন শত্রুকেও বিনাশ করতে পেরেছেন - এমন শোনা যায় না। ... ...
তিনি হাতে ডু-অ্যাণ্ড-ডোন্ট লিস্ট ধরিয়ে দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম ‘ডু’ তাতে বিশেষ কিছু নেই, কেবল ‘ডোন্ট’ আর ‘ডোন্ট’। ১) কম করে ছ-মাসের আগে ঘর ছাড়া চলবে না, ২) ঘরে বান্ধবী টান্ধবী আসা চলবে না, ৩) ভোজন চলতে পারে, তবে পান চলবে না, ৪) বেশি রাত অবধি আলো জ্বালিয়ে রাখা চলবে না, ৫) ভাড়া তিন তারিখের বেশি বাকি রাখা চলবে না, ৬) ১১-টার বেশি রাত করে ঘরে ফেরা চলবে না, ৭) ঘরের দেওয়ালে পেরেক টেরেক পোঁতা চলবে না, ৮) ইত্যাদি আরও অনেক কিছু চলবে না... ... ...
এই ডবল ডোজের গোবর খেয়ে মহাভারতের শুদ্ধতা না হয় ফিরিয়ে আনা গেল, কিন্তু বাংলার পোড়া পেটের শুদ্ধতা বাঁচে কি করে? অফিসের ক্যান্টিনের খাবার টিফিন হিসেবে চলতে পারে, কিন্তু কালা ছোলে (আলকাতরার মধ্যে চাট্টি সেদ্ধ ছোলা ফেলে দিলে যেমন দেখায়) দিয়ে লাঞ্চ? অনেকে যেমন খায়, তেমনি পেপসি বা কোকাকোলা সহযোগে? নাঃ, অমন সাঙ্ঘাতিক ফিউশন আমার চলবে না। অতএব তিন কোর্সের লাঞ্চ চালু করলাম – ভাত, ডাল আর অমলেট। আমার আর তথাগতর সঙ্গেই এই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এক বাঙালি – দাশগুপ্ত। কালা ছোলে দিয়ে লাঞ্চ করতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তাঁকে আমার মেনু সাজেস্ট করেছিলাম। তিনি নাক সিঁটকে বললেন, “অমলেট! সেটা তো লোকে ব্রেকফাস্টে খায়”। ... ...
তাঁরা দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ। চা খেতে খেতে তাদেরই এক জন বললেন, "ইহার পূর্বে কি কোনও কেলেংকারি ঘটে নাই এই দেশে ? রাজনীতিকরা কি অভিযুক্ত হন নাই পূর্বে ? সে সকল লইয়া প্রবল তদন্ত হইয়াছে এবং তাহা যে অতি বৃহৎ গ্রিন ব্যানানা ব্যতীত অন্য কিছু প্রসব করে নাই, তাহা বুঝিতে চিন্তন বৈঠক নিষ্প্রয়োজন। অতয়েব, হে অর্বাচীন, তুমি নিশ্চিন্তে পানভোজনে নিরত থাক এবং বাহুমূলকে বাদ্যযন্ত্র রূপে ব্যবহার কর।’’ ... ...
এটা ছোটদের গল্প নয়। এটা একজন ছোট্ট মানুষের গল্প। নাম তার সাবু। সাবুকে আমরা এই ৫ পর্বের খুদে গল্পে খুঁজে পাই বয়ঃসন্ধির গোড়ায়। তার পৃথিবী বদলে যেতে দেখি আকস্মিক পরিবর্তনের ঝড়ে। তার কিশোর হৃদয়ে জাগতে দেখি নতুন অনুভুতি - হারানোর নীরব বেদনা, হেরে যাওয়ার ভয়, ক্ষোভ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু সব ছাড়িয়ে দেখিয়ে সাবুর কোমল মনে জীবনের প্রতি ভালবাসা। ... ...
দেবরাজ ইন্দ্র অসুর ও দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায়শঃ পরাজিত ও স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরিত্রাণের জন্য ত্রিদেবের শরণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে দেবী পার্বতীর কোলে থাকা একটি শিশুকে বধ করার জন্য তাঁকে প্রথমেই হাতে বজ্র তুলে নিতে হল! আবার শিশুরূপী দেবাদিদেবের হাতের ইশারায় তিনি একেবারে জড়বৎ পুতুল হয়ে গেলেন! দেখা যাচ্ছে ভাগবত এবং শৈব - উভয় পুরাণকারই সুযোগ পেলে বৈদিক দেবরাজ ইন্দ্রকে অপদস্থ করতে দ্বিধা করেননি। ... ...
ব্রজরাজ নন্দ, তাঁর দুই রাণি – রোহিণী ও যশোদা, বলরাম (যিনি বিষ্ণুর অংশ-অবতার) এবং ব্রজের সকল গোপ ও গোপীগণ স্বর্গ থেকে আবির্ভূত, তাঁরা কৃষ্ণের আগে জন্ম নিয়েছিলেন, শিশু ও বালক কৃষ্ণকে লালন-পালনের জন্য। রাজা কংসের চোখে ধুলো দিতে, কৃষ্ণের সঙ্গে একই সময়ে আবির্ভূতা হয়েছিলেন, দেবী যোগমায়া। দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গের এই সব সংবাদ কিছুই জানতেন না? কেমন দেবরাজ তিনি? নাকি পুরাণকারেরা কাহিনী কল্পনার সময়, এই দিকটি খেয়াল রাখেননি? নাকি অনার্য বা হিন্দু দেবতার কাছে বৈদিক দেবরাজের লাঞ্ছনার ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই উপস্থাপিত করেছেন? ... ...
"মহর্ষি বেদব্যাস আরও বিষণ্ণ হলেন। তিনি চার বেদের সংকলন করেছেন, অজস্র শিষ্যকে বেদের পাঠ দিয়েছেন। শূদ্র এবং নারীদের বেদপাঠ নিষিদ্ধ বলে, তিনি পঞ্চম বেদস্বরূপ মহাভারত রচনা করে, সকলের কাছে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করেছেন। তিনি উপলব্ধি করলেন, পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা সত্ত্বেও, তিনি পূর্ণ ব্রহ্মলাভ করতে পারেননি। সামান্য অপ্সরাগণও তাঁর মতো জ্ঞানবৃদ্ধের দৃষ্টিতে সমদর্শন দেখতে না পেয়ে, লজ্জিতা হয়, তাঁকে সাধারণ মানুষ বলেই মনে করে! সেদিন সরস্বতী নদীর তীরে বসে, নির্জন গোধূলিতে তিনি চিন্তা করতে বসলেন, তবে কী আমার জ্ঞান অসম্পূর্ণ এবং অপরিণত?" ... ...
২৫০+২৫০ = ৫০০ কিমি পথ মাড়িয়ে তিনদিন পথে বা খোলা জায়গায় থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতে আসা। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার বিধাননগরে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে। নারীর দল। পুরুষবিহীন। ১০-১২ জনের ছোটো ছোটো দল। নানা গ্রামের। ... ...
স্বয়ং ধর্ম এবং ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের আলোচনায় ধর্ম বলতে প্রচুর ঘৃতাহুতি ও বেদোচ্চারণ করে বিশাল যজ্ঞের অনুষ্ঠান এবং তারপর বিপুল দান-টান করে স্বর্গবাস সুনিশ্চিত করার প্রকরণ বলে মনে হল না। যজ্ঞ-টজ্ঞ নিয়ে দু চার কথা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা গৌণ, মুখ্যতঃ ধর্ম বলতে যা বুঝলাম, সংসার, সমাজ, প্রতিবেশী, গুরুজন, স্বজন-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের সঙ্গে সদাচরণ, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা। একথা ভগবান বুদ্ধ, সম্রাট অশোকও বলেছিলেন, তাঁদের আমরা “বুদ্ধু” বলেছি, বলেছি “নির্বোধ”। কারণ এই ধর্ম আচরণে সমাজের পুরোহিত বা ব্রাহ্মণ শ্রেণীর স্বার্থ সিদ্ধি হয় না। তাঁদের স্বার্থসিদ্ধির প্ররোচনায়, আমরাই “বুদ্ধু” এবং “নির্বোধ”-এর মত, ধর্ম নিয়ে প্রতিবেশী, সমাজ, বন্ধুজনের প্রতি আনৃশংস্যতার পরিবর্তে নৃশংস হয়ে উঠেছি বহুকাল। ধর্মের নামে আমরা কবেই খুইয়ে বসেছি আমাদের মানবধর্ম। ... ...
বাবা একদিন বললেন পনের-কুড়ি দিন তো হয়ে গেল, আর ফোন নয়; একবার ওই অফিসে গিয়ে খোঁজ নাও। আর এক বন্ধুও সেখানে চাকরি পেয়েছিল আর আমারই মত হাপিত্যেস করে বসে ছিল। দুজনে মিলে গেলাম ডালহৌসি পাড়ার সেই অফিসে যেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আর গিয়ে বুঝলাম মহামতি নিৎসে কেন ওই কথাটা বলেছিলেন। কথাটা হল, “যাবতীয় খারাপ জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বাজে হল আশা, কারণ মানুষের যন্ত্রণাকে সে ব্যাটা দীর্ঘায়িত করে।” ... ...
“ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুচ্যতে। / পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। / ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ”। (সন্ধি ভাঙলে – ওঁ পূর্ণম্ অদঃ পূর্ণম্ ইদম্ পূর্ণাৎ পূর্ণম্ উচ্যতে। / পূর্ণস্য পূর্ণম্ আদায় পূর্ণম্ এব অবশিষ্যতে।। /ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।) অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে নিরাকার রূপে যিনি পূর্ণ, এই জগতে সাকার রূপেও তিনি পূর্ণ, পূর্ণ থেকেই পূর্ণের সৃষ্টি, পূর্ণ থেকে পূর্ণ গ্রহণ করলেও, পূর্ণই অবশিষ্ট থাকেন। হে পরমাত্মন, সকল বিঘ্নের শান্তি হোক। এই পূর্ণতার সংজ্ঞা যদি অসীম (Infinity) ধরা যায়, সেক্ষেত্রে অসীম থেকে অসীম নিলেও, অবশিষ্ট অসীমই থাকেন বৈকি! ... ...
কয়েকটি মন্দির দেখি বনজঙ্গলে ঢাকা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এত বড় ঐতিহ্য। কিছু করছেন না? কে করবে? সবাই শিবলিঙ্গ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এদিকে কত ভালো ভালো মন্দির পড়ে আছে। তার মুখেই শুনলাম, ঠিক মতো বেতন হচ্ছে না, অস্থায়ী কর্মী বেশি। ... ...
কে বলে মানুষের পাশে আজ মানুষ থাকে না। ঘরে সাপ ঢুকেছে? ডাকো তাঁকে। বাড়িতে করোনা? অক্সিজেন চাই। ফোন দাও তাঁকে। করোনা? ঘরেতে কেউ আসছে না! খাবার বা ফলমূল দরকার? জানাও তাঁকে? বয়স্ক মানুষ। বাজার দোকান করার লোক নেই? খবর দাও তাঁকে। বাড়িতে ভূতুড়ে কারবার? প্রমোটারের কারসাজি? হাজির তিনি। ... ...
দিনে ১০-১২ ঘন্টা কাজ। বসার ব্যবস্থা নেই। আমার চেনা একজন কাজ করেন শপিং মলে। শুনলাম সেখানেও বসার নিয়ম নেই। ১০-১২ ঘন্টা বিউটি। হাজার দশেক টাকা বেতন। যাতায়াত সাজপোশাকেই কত খরচ চলে যায়? আগে শুনতাম ইউনিয়নের জন্য ঝামেলা। এখন তো দেখছি, ইউনিয়ন না থাকলেই ঝামেলা। ১০-১২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারেন মানুষ? ... ...
রাজ্যের বা সাম্রাজ্যের রাজা যদি, প্রধান অমাত্য ও সেনাধ্যক্ষদের নিয়ে সর্বদাই যুদ্ধে – সে নিজের রাজ্য রক্ষার জন্যেই হোক অথবা অন্য রাজ্য জয়ের জন্যেই হোক – ব্যস্ত থাকেন, প্রদেশ থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা আসতে বাধ্য। প্রশাসনিক দুর্বলতার পিছনে অবধারিতভাবে আসে দুর্নীতি। অর্থাৎ প্রাদেশিক থেকে গ্রামিক আধিকারিকরা মিলিতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মগ্ন হয়ে পড়তেন। অতএব একদিকে যেমন প্রশাসনিক আধিকারিকরা হয়ে উঠতেন অত্যাচারী আঞ্চলিক রাজা, অন্যদিকে সাধারণ প্রজাদের দুর্গতির সীমা থাকত না। ... ...
আজ রাখী পূর্ণিমা। বছরের এমন কিছু কিছু উৎসবের দিন আসে, যেদিন ছোটবেলার স্মৃতি মনে ভিড় জমায়। আজ তেমনই একটা দিন। সেই উপলক্ষে এই গল্পটি এখানে শেয়ার করলাম। সকলকে শুভেচ্ছা জানাই, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন। ... ...