ছেলেটাকে বলেছিলাম এই সব টিপস এক জায়গায় নিয়ে একটা বই লিখে ফ্যাল। সে ব্যাটা খুব হাসল, তারপর বলল এ সব খুব গোপন বিদ্যে, আর গোপন বিদ্যের কথা কোনও বইতে লেখা যায় না। আমি প্রতিবাদ করায় এক চোখ টিপে ফিসফিস করে বলল, “চুরি বিদ্যের কোনও মেড ইজি বই-এর সন্ধান জানা আছে না কি দাদা ?’’ ... ...
একদিন দুজন এসে বাবার রেকর্ড প্লেয়ার আর সমস্ত রেকর্ড নিয়ে গেল, দেড়শো টাকায় বিক্রি হয়ে গেছিল বাবার সংগ্রহের সমস্ত রেকর্ড। ১৬ আরপিএমের একবাক্স রেকর্ড ছিল মোজার্ট ও বেঠোভেনের বিভিন্ন সিম্ফনি। ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল বাবার বিশেষ পছন্দ ছিল। মা’র অল্প অপরাধবোধ ছিল এই সংগ্রহ বিক্রি করায়, বারেবারেই বলত ‘কে আর শুনবে ওসব।‘ তখনও বাবার অফিস থেকে টাকাপয়সা কিছু পাওয়া যায় নি, এমনকি সমস্ত আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি মেনে ও মিটিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতেও সাড়ে তিনমাস সময় লেগেছে। গাড়িটা বিক্রি হওয়ায় খানিক স্বস্তি মেলে। বাবার সেতারও গেল। ভাই তখনো হয় নি,বাবা সেতার বাজাচ্ছে, ইন্দ্র রায় রোডের বাড়ির পেল্লায় উঁচু উঁচু সিলিং ... বাইরের ঘরটা অন্ধকার, জানলার ফাঁক দিয়ে আকাশ থেকে উপছে পড়া জোছনা চেষ্টা করছে ঢুকে আসবার। রাগ রাগিণী কিছুই বুঝতাম না কিন্তু কিছুতেই নড়তে পারছি না সিঁড়ির কোণা থেকে ... চারিদিক থেকে ঝমঝম করে ঘিরে ধরছে সুর আর ধ্বনি, ধ্বনি আর সুর ... খুব আবছা মনে পড়ে। ... ...
পৌরাণিক উপাখ্যান আছে, মহামুনি অগস্ত্যের শিষ্য ছিলেন বিন্ধ্যপর্বত। একবার সূর্যের ওপর রাগ করে বিন্ধ্যপর্বত সূর্যের গতিরোধ করার জন্যে খুব বেড়ে উঠছিলেন। সে সময় বিন্ধ্যের বৃদ্ধি কমাতে অগস্ত্যমুনি বিন্ধ্য পার হয়ে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার মনস্থ করলেন। মহামুনি অগস্ত্য বিন্ধ্যপর্বতের সামনে দাঁড়াতেই, মহামুনিকে প্রণাম করতে বিন্ধ্য যখন মাথা নত করলেন, মহামুনি বললেন, আমি যতদিন না ফিরে আসি, এভাবেই মাথা নত করে থাকো। অগস্ত্য তারপরে দক্ষিণভারত থেকে আর ফেরেননি, বিন্ধ্যপর্বত আজও মাথা নত করে আছে এবং সূর্যেরও প্রদক্ষিণ পথ আজও রুদ্ধ হয়নি। কাহিনী যাই হোক, এর সার কথা হল মহামুনি অগস্ত্য দুর্গম বিন্ধ্যপর্বত পার হয়ে দক্ষিণ ভারতে যেতে পেরেছিলেন এবং তাঁর দেখানো পথে, পরবর্তী উত্তরভারতের রাজা, ঋষি এবং উপনিবেশ-স্থাপনকারী মানুষেরা, উত্তরের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি নিয়ে দক্ষিণে যাওয়া আসা শুরু করেছিলেন। ... ...
এতকাল জীবনের হারিয়ে যাওয়া পুরোনো গল্পগুলোকে খুঁজে বেড়িয়েছি। আজ পরিচিত জগৎ ছেড়ে একার বর্তমানে এসে বুঝেছি পিছনের দিকে হাঁটার কোনো মানে হয় না। তাই এখন আমি আমার নিজের গল্প নিজে তৈরি করছি, এক মধ্যবিত্তের সাধারণ গল্প। আর সেই গল্প কেবল আমার আর কুড়চির, মা আর ছেলের গল্প। সেই গল্প বাবা-চরিত্র বর্জিত। তবু নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভাবি, তার বাবাকে শাস্তি দিতে গিয়ে কুড়চিকে বঞ্চিত করছি কিনা। ভাবতে গিয়ে ফুঁসে উঠি, সে শুধু অরণ্যের সন্তান নয়, সে যে বনবীথিরও সন্তান। তাই সে সবটা বঞ্চিত হচ্ছে না; তার ইতিহাস, তার পরম্পরার একটা অংশ তার অজানা থেকে যাবে হয়তো। না, তাও তো নয়! সময় হলে তার সামনে আসবে কুড়চি। তারপরের সিদ্ধান্ত হবে কুড়চির নিজের, আর বাকিটা ভবিষ্যতের হাতে। ... ...
নিজের জীবন থেকে তুলে এনেছি কতো যে ঘটনা ... ...
মঞ্জুদিদি তারপরেও অনেকদিন, যতদিন না ওর বিয়ে ঠিক হয়, আমাদের বাড়িতেই ছিল। বেশ কিছুদিন আমার সাথে সরাসরি কথা বলত না, আমিও না। পরে আর মঞ্জুদিদির সাথে কখনো যোগাযোগ হয় নি। এখন বুঝি সেই সময় জিজির যা অবস্থা তাতে চার পাঁচশো টাকা হারানো কতটা তার জন্যও ভয়ানক ছিল। আমার অন্যায়টা- It was wrong on so many levels...। এই অন্যায়টার কথা কেউ জানে না, ভাইও না। আজ এখানে লিখে রাখলাম। শুধু মঞ্জুদিদির কাছে ক্ষমা চাইবার একটা সুযোগ যদি পেতাম। ... ...
বাস থেকে নেমে হেঁটে আসার সময়ে রাস্তাটা দেখতে দেখতে এলাম – যদি চাবিটা দেখতে পাই। বাড়ির যত কাছাকাছি আসছি তত বুক ঢিপঢিপানি বাড়ছে। গেট খুলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে এসে দেখলাম দরজা বন্ধ এবং শুধু ছিটকিনি দেওয়া, নো তালা। এবার কী দেখব ভেতরে গিয়ে ? কাঁপা হাতে ছিটকিনি খুলে ঘর যেমন রেখে গেছিলাম তেমনি রয়েছে, আর তালা এবং চাবি যেখানে থাকার কথা সেখানেই তারা শোভা পাচ্ছে। আহা, তখন যে ঠিক কেমন অনুভূতি হয়েছিল সেটা বোঝানো আর ‘পাউরুটি আর ঝোলা গুড়ের’ কম্বিনেশন কেন ‘সবার চাইতে ভাল’ সেটা ব্যাখ্যা করা একই রকম কঠিন কাজ। ... ...
জ্যোৎস্না নামের আলেকিত – সুরভিত সুষমায় মনে হয়েছে বরাভয়দানকারী আনন্দময় এক অস্তিত্ব আমাদের এই মরজগত ছাড়িয়ে ছড়িয়ে আছে হয়তো আকাশে আকাশে। আর গহন অন্ধকারের নিকষে নক্ষত্রখচিত আকাশ ও মাঠঘাটের ভেতর অন্ধকারের কায়ারূপী এক দেবি রয়েছেন বুঝি, যিনি কঠিন, তবে মাটি ফুঁড়ে যেভাবে ফল্গু উৎসারিত, সেভাবেই তার বুক ফুঁড়ে আলোর ঝরণা ঝরে পড়ছে নিরন্তর। ... ...
আর দ্যাখো, গলায় গামছা বাঁধা ফ্যান থেকে ঝুলন্ত সমুদ্রগুপ্তের মুখের দিকে প্রথমে আমার চোখ পড়ল না! আমার নজর গেল কিনা তার পায়ের অ্যাসিডে পোড়া বুড়ো আঙুলের দিকে? ও কি আমাকে বলতে চাইল – দ্যাখো, আমি কিন্তু তোমার কাছে পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছি? অথচ মুখে তো ওর স্বভাবসুলভ লাজুক হাসিটা নেই? বরং ঘাড় বেঁকে গেছে, চোখ বিস্ফারিত ও দৃষ্টিশূন্য। সারা মুখে কেমন একটা ছাপছাপ কালচে দাগ। ... ...
আমি তো এসেছি হারিয়ে যাওয়া গল্প খুঁজতে। তার ভেতর কেমন পাশ কাটিয়ে এর ওর ফাঁক গলে এই গল্পটা ঢুকে পড়েছে।তা পড়ুক, ওকে আমার দরকার নেই তেমন, তাই ওকে ফসকান্তি করে সরিয়ে দিলাম। দরকার হলে আবার টেনে আনলেই হবে। পিসির বাড়ির বার দরজায় দাঁড়িয়ে গল্পটার আগের অংশটা ঝালিয়ে নিলাম। সেই যে এক মধুসূদনটাইপ মামা আমার সারাজীবনের ভয় ভাঙালেন, তারপর আমি একেবারে বাঁধা গরু ছাড়া পেলাম যেন। ... ...
আসন্ন ভূত-চতুর্দশী, মাকালীর আরাধনা ও দীপাবলির অগ্রিম প্রীতি, শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই সকলকে। ভূত-চতুর্দশীতে ভূতেরা সত্যিই কী চতুর হয়ে ওঠে? এবং সেই কারণে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে তিথিটাকে ভূত-চতুর্দশী বলাটা ঠিক হয় কি? এই গল্পটি পড়ার পর আপনাদের এ বিষয়ে একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করবো। শব্দহীন হোন। আলোকময় হোন - খুব ভালো থাকবেন, প্লিজ। ... ...
চা-ওয়ালা ছেলেটা হো হো করে হাসল, তারপর বলল, “জমি কিনতে গেছিলাম।” আমার মুখ দেখে ছেলেটা কিছু একটা বুঝল। বলল, “বিশ্বাস হল না, না ?” আমি চুপ। সত্যিই বিশ্বাস হয়নি। “কিছু মনে করবেন না স্যার, আপনি কত মাইনে পান? পাঁচ হাজার? সাত হাজার? দশ হাজার?” আমি চুপ। ১৯৯৬ সালে দশ হাজার টাকা মানে বেশ ভাল মাইনে। আমি তার চেয়ে অনেক কম পাই। “আমার ডেইলি প্রফিট ৫০০ টাকা। সেল নয়, প্রফিট,” বলল ছেলেটা। ... ...
যে কোনও কিছুর শুরু আর শেষের মধ্যে একটা বর্ণময় আলো-আঁধারি থাকে। থাকে এক অনন্য প্রাপ্তি। অসীম নীলাকাশ। আর সীমাহীন বারিধি। যেখানে জীবন ঢ্যালা মাটির সাথে মণিমাণিক্যও কুড়িয়ে নেয়। রোদের কস্তূরী ভেঙে ভেঙে ঐরাবত মেঘগুলো ধেয়ে আসে বাঁধনের শিকল কেটে। মুক্তি। উল্লাস। চাওয়া পাওয়ার বাষ্প জমলেই ক্লান্তি নামবে বুকের পাঁজর ঘেঁষে। রোমকূপে বাসা বাঁধে তখন মন খারাপের ঢেউ। মহাবিশ্ব জুড়ে জমতে থাকে চাপ চাপ রক্তের মতো আলকাতরা অন্ধকার। হয়তো বা এটাই সেই উলঙ্গ সত্য। নির্মম বাস্তব। ... ...
ধরুন আপনি আঁকতে শিখছেন। আবার ধরুন আপনি বেড়েপাকা। তাই ধরে ধরে আইডিয়াল ঘোড়া না এঁকে একেবারে চক্ষু মুদে আঁকতে গিয়ে খচ্চর এঁকে বসেছেন। আবার ধরুন আপনি গান গাইতে চান। কিন্তু সারেগামা না সেধে একেবারে খাম্বাজ রাগিণী ধরতে গিয়ে এবারে স্টেজের উপর টম্যাটোর দোকান বসিয়ে দিলেন। কিংবা ভাবুন আপনি কর্পোরেট থ্রিলার লিখতে চান। অনেক আগে জয়েস পরেছিলেন। ইদানিং ম্যান্টল। তারপরেই কেমন গা ঘুলিয়ে উঠে ভক করে নামিয়ে ফেললেন সাহিত্যিক উদবমন। একবারে নয়। কিস্তিতে কিস্তিতে। ... ...
(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি।) ... ...
কী করব বলুন, আদতে বীরভূম জেলার লোক তো, ঢেঁকিতে চড়ে সেখানকার আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে নারদ মুনির কী অবস্থা হয়েছিল জানেনই তো। অ, জানেন না, তাইলে শুনুন। বেলা তখন দশটা হবে। প্রভু নারায়নের নাম জপতে জপতে বীরভূমের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন নারদ। হঠাৎ সোঁ সোঁ করে একটা অদ্ভুত শব্দ। কী ব্যাপার? মেঘ করল নাকি? ঝড় এল? না তো, আকাশ দিব্যি পরিস্কার। ওদিকে সোঁ সোঁ আওয়াজটা হয়েই চলেছে। ভয় পেয়ে স্পিড বাড়িয়ে দ্রুত চলে গেলেন নারদ। নারায়নের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে জিজ্ঞেস করলেন, “ওটা কিসের শব্দ ছিল?” ... ...
- আমাদের বাড়িটা খুলে দিতে পারি? - মানে ঢুকতে ভিসা পাসপোর্ট লাগবে না? - স্টপ ইট। বলছি আমি একা মানুষ। নানান বাড়িতে ঘোরাঘুরি করে দান সংগ্রহ আর প্যাক করার চেয়ে ভালো হয় যদি সেই সব দান আমাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তাহলে বাড়িতে বসে আমি আর কয়েকজন সেগুলো বেঁধে দিতে পারি। শুক্র থেকে রবিবার মায়াও সাহায্য করবে। - তাহলে চালাঘর আর সুইমিং পুলটাও খুলে রাখো। এখন কেউ কি আর জলে নামবে? ... ...