উত্তরপ্রদেশে তৃপ্তা ত্যাগী বলে যে শিক্ষিকা এক মুসলমান ছাত্রকে ক্লাসরুমে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে হিন্দু ছেলেদের দিয়ে চড় খাইয়েছেন, তার তাৎপর্য অনেক গভীর। ... ...
হাইস্কুলের মণীষাদি খুবই মারকুটে ছিলেন, তিনিও আর বেত মারেন না, তবে অদ্ভুত অপমানজক শাস্তি উদ্ভাবনে এঁর দক্ষতা ছিল অপরিসীম। ক্লাসে কথা বলায় দুজনকে দোতলার বারান্দায় নিয়ে একে অপরের কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া ও পাশে মিনুদিকে পাহারাদার হিসাবে বসিয়ে রাখা, অঙ্ক না পারলে জুতো হাতে নিয়ে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া, দুজন ছাত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মারামারির অভিযোগ পেয়ে নিজের নিজের জুতো দিয়ে একে অপরের গালে মারতে বাধ্য করা ইত্যাদি ছিল তাঁর উদ্ভাবন। ... ...
খুকীর বছর পাঁচেক বয়স পর্যন্ত ওরা ছিল কটকে। অধিকাংশ সময় বাবা থাকত না বাড়ী। কোথায় কোথায় সব ট্যুর করে বেড়াত। ট্যুর শব্দটাকে ভারী অপছন্দ করত ও। বাড়ীর খুব কাছে ছিল কাটজুড়ি নদী। বিকেল বেলা পরমেশ দাদা খেলতে নিয়ে যেত সেখানে। বাড়ীতে কেউ এলে সেখানে একটা পিকনিক মত হত। কাটজুড়ি নদীতে চরা-ই বেশী। খুকীর কির’ম ধারণা হয়ে গেছিল নদীর থেকে পুকুরে বেশী জল থাকে। সেই যে সেবার কোন্নগরে বেড়াতে গিয়ে পুকুর দেখতে চাইল আর ... ...
বর্ষশেষে গুরুর সবাইকে নতুন বছরের অগ্ৰিম শুভেচ্ছার সাথে রইলো ৩৮ বছর আগের কিছু স্মৃতিকণা ... ...
রেখাদি সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বকছেন রাতের খাবার হজম না হওয়া সত্ত্বেও সকালের খাবার খাওয়ার জন্য, স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার না খেয়ে মুখরোচক খাবার খাওয়ার জন্য। উনি জানতেন না কল্পনার বেশীরভাগ দিনই রাত্রে খাওয়া হয় না, সকালেও না। ওর মা দুপুরের পর এসে রান্না করলে ওরা সবাই বিকেলের দিকে একবার খায়। কল্পনার মা যেসব বাড়ী কাজ করে তারা কেউ কোনওদিন রুটি বা মুড়ি দিলে রাত্রে ওরা একগাল খায়, নাহলে আবার সেই পরেরদিন বিকেলে। উনি জানতে চানও নি অবশ্য। মিনুদি কোত্থেকে একঠোঙা মুড়ি এনে ওর হাতে দিয়ে বলে 'তুই আস্তে আস্তে একটু করে জল দিয়ে দিয়ে খা দিকিনি'। রেখাদির দিকে তাকিয়ে বলে 'আপনি ক্লাসে যান দিদিমণি, এই মুড়িটুকু খাইয়েই আমি ওকে ক্লাসে দিয়ে আসছি'। আমরা চুপি চুপি ফিরে আসি। আমি জানি অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে পেটে খুব ব্যথা হয়, বাবা বলত রাত্রে না খেলে অনেকক্ষণ পেট্খালি থাকবে, পেটে খুব ব্যথা হবে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১৪ …দুপুরে বাস থেকে নেমে আশ্রয়ের সন্ধানে প্রাচীন নগরীর সরু রাস্তা ধরে এসেছিলাম। এখন শহরের বাইরে দিয়ে চওড়া কংক্রিটের বাইপাস ধরে হাঁটতে থাকি। বাঁদিকে শহরের সীমানায় পাঁচশো ফুট পাহাড়ের মাথায় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত বিশাল কেল্লা। রীতিমতো সমীহ জাগানো সাইজ। লোকবিশ্বাসে অতীতে নরোয়র ছিল মহাভারতে বর্ণিত নিষধরাজ নলের রাজ্য। তখন তা নলপুরা নামে পরিচিত ছিল। আর এক মতে নরোয়র কেল্লা ও জনপদের প্রতিষ্ঠাতা কুশওয়াহা রাজপুত বংশ। সে গড়ের অতীত গৌরব বর্তমানে ম্রিয়মাণ। কিছু অংশ ভগ্নপ্রায়। অনেকাংশেই জঙ্গলাকীর্ণ। তবু মূলতঃ সেই কেল্লার আকর্ষণেই আমার সেখানে যাওয়া। আয়তনে এ কেল্লা গোয়ালিয়র কেল্লার পরে মধ্যপ্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। কিন্তু প্রচারের অভাবে পর্যটকদের কাছে ব্রাত্য। তাতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। নির্জনে মনের আনন্দে ঘুরেছি। ... ...
আগে যাঁরা ভাগাড়পাড়া স্কুলের গল্প পড়েছেন তাঁদের অনেক জায়গাই রিপীটেশান মনে হবে। বস্তুত ঐটা আর এদিক ওদিক লেখা আরো কিছু কুড়িয়ে বাড়িয়েই এটা চলবে। আরেকবার ফিরেদেখা। কেউ যদি পড়ে মন্তব্য করেন সম্ভবতঃ উত্তর দেব না, কারণ এটা আমার নিজের জন্যই নিজের সাথে কথা বলা। আগাম মাপ চেয়ে রাখলাম। ... ...
হল্যান্ডের গাঁ-গঞ্জে, পথে-ঘাটে আমলকীর দেখা না মিললেও স্কিফোল এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোলেই ডিসেম্বরের শীতের হাওয়া আপনার শরীরে নাচন লাগাবেই। আর তার সঙ্গে যদি থাকে বৃষ্টি, তবে ষোলো-আনা পূর্ণ! এবার যদিও দিন-দশেকের জন্যে যাওয়া আর কাজের চাপের জন্য খুব বেশী ঘোরাঘুরি হয়ে ওঠেনি, তবুও বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষের তরঙ্গ রোধিবে কে! সুতরাং তার-ই মাঝে ‘হরে মুরারে’ বলে বেরিয়ে পড়া; তবে এবারের ঘোরাঘুরি খুব-ই সংক্ষেপে সারা, তাই এই লেখা অনেকটাই হবে যাতায়াতের পথ আর ছবি-নির্ভর। আগের বার নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে আর আশেপাশের বেশীর ভাগ জায়গাই দেখা হয়ে গিয়েছিল, তাই এবার ভেবেছিলাম সুযোগ পেলে পাশের দেশ বেলজিয়ামে-ও ঢুঁ মেরে আসবো। আর আগেরবার জ্যানসে স্ক্যানসের প্রসঙ্গে কিন্ডারডাইকের কথাও উঠে এসেছিল, তাই মাথায় ছিল সেটাও যদি দেখে আসা যায়। ... ...
উপরোক্ত লেখাটির ওপর kk, জিজ্ঞাসু, dc, যোষিতা, ফরিদা, দীমু, পলিটিশিয়ান, রঞ্জনদা ও কিশোরদা কিছু মন্তব্য করেছেন। প্রথম পর্বটি অনেকের ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় পর্বটি কারুরই পছন্দ হয়নি। তবে ভালো বা মন্দ যাই লাগুক তার প্রকাশ উপরোক্ত পাঠকগণ করেছেন মার্জিত আঙ্গিকে। এটাই বাঞ্ছিত। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। তাদের মন্তব্যই এই পুনশ্চঃটি লিখতে উৎসাহিত করেছে ... ...
গণিতের সঙ্গে লেখকের প্রেম ও অপ্রেমের এক বর্ণময় ব্যক্তিগত আখ্যান — যার পর্বে পর্বে উন্মোচিত হবে হাজারো জিজ্ঞাসা, ফিরে ফিরে আসবে নানান স্মৃতিভার। সুপাঠ্য ঝরঝরে ভাষায় গণিতের আলো-আঁধারি পথে এ এক নতুন পদচারণার অভিজ্ঞতা। ... ...
বনমালী দেশোয়ালিরা জানে, জল, হাওয়া পেলে পাথরেও গাছ জন্মায়, আর এখানে তো উর্বর জমি প্রস্তুত! জল, হাওয়াও আছে যথেষ্টই, শুধু সলতে পাকানোর কেউ ছিল না এতদিন। সেই শূন্যস্থানও পূরণ হয়ে যেতেই জঙ্গলমহলে গ্রামের পর গ্রামে মানুষ সাড়া দিতে শুরু করল। যদিও লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সেদিকে আর বিশেষ নজর দেওয়ার সময় পেল না পুলিশ প্রশাসন। ... ...
যৌবনে নারীর শীতল প্রত্যাখানে অপমানিত পৌরুষ হয়ে যেতে পারে কর্কশ, বিপথগামী। সবল পুরুষের হবে সংযমী হৃদয়, তাতে অযথা উঠবে না ভাবাবেগের তরঙ্গ, উঠলেও তার পাথরপ্রথিম মুখচ্ছবিতে ফুটবে না অন্তর্লীন বেদনার সামান্য আঁকিবুঁকি, একান্তে ক্ষণিক ক্রন্দনও সর্বৈব নৈব নৈব চ। এই হচ্ছে সমাজে পুরুষের প্রচলিত ম্যানলি ইমেজ। অজান্তেই এই ইমেজ অনুশীলনে রত অধিকাংশ মেল শভিনিস্ট। যারা এ ছকে পড়ে না, নারীর মধুর আন্তরিক সঙ্গ তাদের মননকে করতে পারে গভীর সংবেদনশীলতায় সমৃদ্ধ। সুমনের কাছে কেতকীর সাহচর্য ছিল সেরকম। গন্তব্য নয়, যতদিন সম্ভব সখ্যতার সহযাত্রাই ছিল সুমনের কাছে অতীব আনন্দময়। ... ...
এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই। ... ...
আমেরিকাতে থাকার সময় কয়েকবার বাইবেল স্টাডি গ্রুপের মেম্বারদের সাথে দেখা হয়েছিল। তারই একখান এনকাউন্টারের গপ্পো ... ... ... ...
খুব স্পষ্ট না হলেও কাঁটাকলের অর্থনীতি বিভাগে আমরা ছিলাম দুটো দলে বিভক্ত – একদিকে আমার মতন পাতি বাংলা স্কুল, অনামধন্য কলেজ থেকে আসা বৃহৎ ছাত্র সমষ্টি , অন্যদিকে ইন্দ্রজিৎ দেবের মতন কয়েকজন ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল, সেন্ট জেভিয়ারস , প্রেসিডেন্সি কলেজের, আলাদা পেডিগ্রির কিছু উজ্জ্বল তারকা; তারা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে, জুতো পরে ক্লাসে আসে । সিঁথি বরানগরের বিদ্যেয় ইংরেজি বাক্য আমার মুখ থেকে বেরোয় না। কুণ্ঠিত ভীত সন্ত্রস্ত মনে তাদের দূর থেকে দেখি। হাঁদুর জন্যে ঠনঠনের বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার আসতো প্রতিদিন সাড়ে বারোটা একটার মধ্যে । ব্রাঞ্চে যোগ দেওয়ার প্রথম দিনেই হাঁদু জিজ্ঞেস করেছিল ‘ হ্যাঁরে দুপুরে কি খাবি ? ‘ আমার মায়ের পক্ষে সে রকম কোন ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল । জানালাম রাস্তায় কিছু একটা খেয়ে নেবো। পরের দিন হাঁদু বললে ‘ আয় আমার সঙ্গে বসে খাবি । মা বলে দিয়েছে আজ থেকে তোর জন্যেও খাবার আসবে রোজ ‘। হাঁদুর কাছে এটা দুপুরের খাবার , ‘লাঞ্চ ‘ নয় ! হাঁদু আর তনুশ্রী পুরী যাবে দু সপ্তাহের ছুটিতে। শুক্রবার অফিসে এসেই বললে ‘ যাক বাবা, দু সপ্তাহ এস পি সেনের মুখ দেখতে হবে না ‘ । তার পরেই চিন্তায় পড়ে গেল “ আরে, তোর খাওয়ার কি হবে ?’ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম ‘হাঁদু, ওটা আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব ‘ । বিকেল বেলা হাঁদু বললে, ‘ শোন, মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে , সোমবার থেকে তোর জন্যে খাবার আসবে , বুঝলি ? ‘ যে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে আসে সে বসে থাকবে তোর খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ি নিয়ে যাবে এমন মানুষও হয় ? ... ...
পরচর্চার আনন্দ, উত্তেজনা অনস্বীকার্য। তবু চতুর্দিকে ধর্ম, রাজনীতি, দূর্নীতি, হিংসা, যুদ্ধের কলুষতায় আতুর মনের টুকুন মোলায়েম পরিচর্যা হয় - আমার ক্ষেত্রে - মেদুর পরীচর্চায়। তেমন কিছু এনিগম্যাটিক পরী, দক্ষ সাহিত্যিকদের কলম বেয়ে এসেছে আমার মনের আঙিনায় - দিয়েছে সবিশেষ আনন্দ। অণিমা (যাও পাখি), মণিদীপা (মানবজমিন), মনীষা (স্বপ্ন লজ্জাহীন), মার্গারিট (ছবির দেশে কবিতার দেশে), মারিয়ানা (কোয়েলের কাছে), ছুটি (একটু উষ্ণতার জন্য), কিশা (বাংরিপোসির দু’রাত্তির), ঋতা (সবিনয় নিবেদন), সুজান (পুত্র পিতাকে), রেণু (এই, আমি রেণু) … এমন আরো অ-নে-কে। তবে শুধু শব্দের ডানায় ভর করা পরী নয়। অতীতে কিছু বাস্তব পরীর সাহচর্যেও পেয়েছি অমল আনন্দ। এখন আর পরীসান্নিধ্যের সম্ভাবনা নেই। তাই নানা মিষ্টি স্মৃতির জাবর কাটি অবসরে। দুঃসময়ে অনেকে পথে নেমে প্রতিবাদ করেন। অনেকে কোনো ফোরামে করেন পরিস্থিতির সুচিন্তিত বিশ্লেষণ। দেন সম্ভাব্য সমাধান। আমি পড়ে সমৃদ্ধ হই। আত্মকেন্দ্রিক, ভীতু, ক্ষীণ বোধবুদ্ধির মানুষ আমি। তাই পৃথিবীর দুর্দশায় মন ভারাক্রান্ত হলে মাঝেমধ্যে গৃহকোনে একান্তে বসে YTতে ভর করে ভার্চুয়ালি চলে যাই দুর দেশ ভ্রমণে প্রকৃতির মাঝে। বা পড়ি পছন্দের কোনো বই বা দেখি কোনো সিনেমা। তখন বইয়ের বা সিনেমার কোনো পরী তাদের নারীত্বের সুষমায় আমার বিক্ষুব্ধ চিত্তে শান্তির চামর বোলায়। সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই বাস্তব থেকে। তাই আমি পরীদের কাছে কৃতজ্ঞ। পরীহীন পৃথিবী পলায়নবাদীর কাছে অকল্পনীয় অভিশাপ। ... ...
আমেরিকাতে থাকার সময় কয়েকবার বাইবেল স্টাডি গ্রুপের মেম্বারদের সাথে দেখা হয়েছিল। তারই একখান এনকাউন্টারের গপ্পো ... ...
সমাজ সংসার মিছে সব... মিছে এ জীবনের কলরব? ... ...
দুইদিন পর রোজিনা আচলের কাপড় ঘঁষতে ঘঁষতে যখন ছেলের জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করা শুরু করেছিল, রওশানারা তাকে থামিয়ে দিয়ে কণ্ঠটা চিকুন করে জানতে চেয়েছিলেন, “আগে ক, পোলার কুনো ব্যারাম আছেনি?” এক গাল হেসে দিয়ে রোজিনা মোটা কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিল, “ যেই হারে ব্যায়াম করে, ব্যারাম আইবো কোথ থনে? নিশ্চিন্ত থাহেন ফুবুয়াম্মা, পোলারে একটা কাশ দিতেও হুনে নাই কেউ কহনো। ‘’ ... ...