গুরুতে ১৮.১.২৪ সহস্রলোচন শর্মার - “এক কাল্পনিক পুস্তক বিক্রেতার গল্প” - লেখায় জাক ফঁসের চরিত্রে নৈতিকতার পরিচয় পেয়ে মনে পড়লো শংকরের একটি লেখায় আচার্য্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুর চরিত্রে ঠিক তার বিপরীত দিশার পরিচয় পেয়েছি। সেই প্রেক্ষিতেই এই লেখা। ... ...
বাতাসের সাথে লেগে থাকা জলকণা ঘরে ঢুকে ভিজিয়ে দেয় না ঝোলানো ছবির অলিভ বাগান চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে ইচ্ছে করে সেই নকশা কাটা ধূসর পাতায় আঁকিবুকি করে ফুটিয়ে তুলি নরম পায়ের শব্দ কিংবা গ্রীলের ওপাশে গল্প করতে আসা পশমের ওম ... ...
আমেরিকায় ভোরবেলায় শাঁখ বাজেনা। কখনোই বাজেনা। আমার পুরোনো শহর কলকাতায় বাজে। এখানেই আমি থাকি। এসেছি আবার। ... ...
স্তালিনের মৃত্যুর পরেরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরু ভারতীয় সংসদে স্মৃতিচারণ করে লম্বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেন, যে, স্তালিনের গুরুতর অসুস্থতার কথা যখন কানে আসে, তখন তিনি মস্কোর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের পাঠানো একটা প্রতিবেদন পড়ছিলেন। সেই শেষ সাক্ষাৎকারে স্তালিন কথা বলেছিলেন ভারতের নানা ভাষা নিয়ে। তাদের শতকরা বিন্যাস, প্রভাব, সম্পর্ক, এইসব নিয়ে। এতটাই বিশদে, যে, নেহরু স্তালিনের জ্ঞানে কিঞ্চিৎ বিস্মিতও হন। ... ...
ট্রেন থেকে কিছুই মরুভূমি দেখা গেল না। স্টেশন থেকে বেরোতেই যেটা সহজেই বোঝা গেল - জায়গাটা বেশ নোংরা। অথচ জয়পুর উদয়পুরের মত এখানেও প্রচুর জার্মান আর অন্যন্য ইউরোপীয় পর্যটকদের ভিড়। সকালবেলা রাস্তাঘাট সরু , নোংরা এবং ঘিঞ্জি। কিছুদূর হেঁটে গেলে যোধপুরের বিখ্যাত ঘন্টাঘর। তাকে ঘিরে যোধপুরের প্রধান বাজার। সকালবেলা পেঁয়াজ কচুরি আর দুধের চা। কচুরির পুরের ভেতর পেঁয়াজ ছড়ানো থাকে বলে এরকম নাম। ... ...
১৯৭১ সালে পুলিশ বীনাকে গ্রেপ্তার করে নক্শাল সন্দেহে। সপ্তাহখানেক হাজতে রাখে, জেরার নামে প্রতিদিন, ক্রমাগত মারধোর করে, তারপর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত, অর্ধচেতন অবস্থায় জেলে পাঠায়। কোনরকম একটু সুস্থ হওয়ার পর আবার হাজতে, আবার এক সপ্তাহ জেরা ও নৃশংস মার। আমার সঙ্গে যখন দেখা তখনও বীনার সর্বাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন, কানে চোট লেগে মাথা ঘোরে, যন্ত্রনা আর থেকে থেকে জ্বর। কিন্তু বীনা শক্ত মেয়ে। বীনার সব থেকে বড় রাগ ছিল, পুলিশ ওর ঋতুশ্রাবের সময় কোন কাপড় পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। জেলেও অবস্থা তেমন কিছু আলাদা ছিল না। হাজারিবাগে কখনো কখনো নোংরা, উকুনে ভরা কাপড়ের বান্ডিল গরাদের ফাঁক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া হত- বেচেবুছে পরিস্কার করে ঋতুশ্রাবের সময় ব্যবহার করার জন্য। জামশেদপুরে ওসবের আলাদ কোন ব্যবস্থাই ছিল না। মেয়েরা তাদের শাড়ি থেকে, কখনো কম্বল থেকে কাপড় ছিঁড়ে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করতো। বীনার সঙ্গে আমার য্খন দেখা তখন সদ্য ওর বাবা মারা গেছে। বাড়ির কাউকে ও অনেকদিন দেখেনি - কারন জামশেদপুর আসতে দশ টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে, আর জেলের দরজায় ঘুষ দিতে হয় - ঐ টাকা জোটানো বীনার বাড়ির লোকের পক্ষে সম্ভব না। ওকে দেখে বুঝতে পারতাম বীনা কখন ওর বাড়ির মানুষের কথা ভাবছে। আবহাওয়ার সামান্য বদলে বীনা বিষন্ন হয়ে পড়তো - ফসলের কী হবে, ফসলের ক্ষতি হলে বাড়ির মানুষের কী হবে। ফসল ভালো না হলে স্থানীয় মহাজনের থেকে ১০০% সুদে ধান কর্জ নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ... ...
কুপার কোম্পানির টার্গেট ক্রেতা ছিলেন ব্যাচেলর গ্রাহকরা। সমকালীন নানা পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায় কুপার কোম্পানির তাদের নবজাতক পণ্যটির জন্য বানানো নানা মজাদার বিজ্ঞাপন, যাঁর একটির এক ছবিতে লং জনস পরিহিত ছিন্নবোতাম বেচারামুখ এক উদাস ব্যাচেলর আর অন্যটিতে বোতাম আর সেফটিপিনের ঝঞ্ঝাটবিহীন নতুন কুপার অন্তর্বাসে এক ঝকঝকে ব্যাচেলর। এর সঙ্গে লেখা ছিল, ‘যে সমস্ত যুবক অবিবাহিত এবং সিঙ্গেল, যারা জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে নিতে পারবেন না, এ জামা তাদের জন্যই!’ চলুন, একটু ফিরে দেখা যাক আট থেকে আশি, কচি মেয়ে থেকে বুড়ো দাদু সক্কলকে অন্যতম প্রিয় পোশাক টি-শার্টের ইতিহাসকে! ... ...
ভ্রমণ নিয়ে যে বিশাল লেখাপত্র ফেঁদে বসব এমনটা খুব বেশ দিন আগেও ভাবি নি। আর আগে তেমনটা আগে ভাবি নি বলেই মোটা ডায়েরী নিয়ে ঘুরেছি বা ঘুরে এসেই সব লিখতে বসে গেছি – এমনটাও হয় নি। অন্যদিকে দেখতে গেলে গত কুড়ি-পঁচিশ বছরে ঘোরা ঘুরিও কম হল না! এই কুড়ি এত ঘুরেছি যে সেটাই যেন স্বভাবিক এমন ভাবনায় মস্তিষ্ক নর্মালাইজড হয়ে গিয়েছিল! ... ...
ভূমিকা ম্যাথু আর্নল্ড বলেছিলেন একাকিত্বের সঙ্গে সাহচর্যের যোগ সাধন করে পত্রলেখা। লিখি বটে একা কিন্তু সেটি স্বগতোক্তি নয় , এমনকি একাকি গায়কের গানও নয়, এ যেন কারো সঙ্গে কথা বলা। প্রত্যুত্তর শুনতে পাই না তৎক্ষণাৎ কিন্তু জানি পাবো ! ঠিক সেই অভিলাষে আড্ডার এই ধুনিতে ধোঁয়া দেওয়া । ফরাসি অনুই , ইংরেজি স্মার্ট অথবা জার্মান গেম্যুটলিখকাইটের বাংলা হয় না। অভিমানের প্রতিশব্দ অন্য কোন চেনা ভাষায় পাই নি । বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময়ে দেশটার পরিচয় করাতে গিয়ে টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল বাঙালি ( তখনও বাংলাদেশি শব্দটা চালু হয় নি) আড্ডা নামক এক বস্তুর প্রেমে আবদ্ধ , তাঁদের মতে এ শব্দের অনুবাদ হয় না । * আড্ডা আমাদের একান্ত আপন- সেখানে কোন নির্দিষ্ট বিষয় নেই , স্থান কাল পাত্র নেই : কেউ গুরু সেজে টঙে চড়তে চাইলে তাকে তৎক্ষণাৎ মাটিতে আছাড় দেওয়া, লঘুকে লঘুতর করাই প্রত্যহের আনন্দ । আড্ডা নিয়ম বর্জিত । তার চার ইয়ারি বা বারো ইয়ারি হতে কোন বাধা নেই। আড্ডার নেই কোনো সিলেবাস , ইতিহাস, ভূগোল, অতীত , বর্তমান । এখানে কেউ কিছুই হয়ে ওঠেন না তাই এখানে বসে কি হনু কি হনু ভাবার সুযোগ নেই ! আড্ডার শুরু বা শেষ খোঁজা বাতুলের কর্ম । আড্ডায় আছে খোলা হাওয়ার স্বাধীনতা , তাই দিয়ে শুরু করি বৈঠকি আড্ডার আসর । * Bengalis are given to a passion known as Adda which they claim couldn’t be translated in to any other language! ... ...
রোমানিয়া শেঙ্গেনে ঢুকে যাচ্ছে মার্চ মাসে। এখন প্রতিনিয়ত আমাকে শুনতে হয় যে আমি কেন ফিরে যাচ্ছি না! আমি যে সমস্যায় পড়ে ফিরে এসেছি তার কোন সমাধান হয়নি। তাই ফিরে যাওয়ার আশা করা দুরাশা আমার জন্য। আমার খালাত বোন যে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, সে আমাকে বিসিবির যে প্রধান ডাক্তার ডাক্তার দেবাশিষের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি এই সব ব্যাপারে সেরা ডাক্তারের মধ্যে একজন। জ্যোতির সাহায্য ছাড়া উনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইতে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হত আমার। তিনি আমাকে অনেকখন সময় নিয়ে দেখছেন। একটা থেরাপি দিয়েছিলেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। এবং তিনি আমাকে শেষ কথা বলে দিয়েছেন যে আমার পক্ষে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা হার্ড ওয়ার্ক ইত্যাদি কাজ আর করা সম্ভব না। পায়ের অবস্থা তিনি দেখে চমকে গিয়েছিলেন। উনি স্টেরয়েড দিতে চেয়েছেন কিন্তু আমি এখনও ওইটা দিব কি না সিদ্ধান্ত নেই নি। বাড়িতে থেকে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে পায়ের ব্যথাও বেড়েছে! ব্যায়াম দিয়েছি কিছু, ওইটা করলেই একটু আরাম হয়, কুশন দেওয়া জুতা পরতে হচ্ছে। এই ভাবেই চলতে হবে আমাকে। আমি অপারেশনের কথা বলে ছিলাম। তিনি এক বাক্যে না করে দিয়েছেন। এই না আমাকে রোমানিয়ান ডাক্তারও করে দিয়েছিল। আমি দেশে চিকিৎসার জন্য চলে আসব শুনে উনি বলেছিলেন যে আমি জানি না তোমার দেশের চিকিৎসার অবস্থা কেমন, কিন্তু আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি যে কোনমতেই তুমি অপারেশনের দিকে যেয়ও না। আর আমি আসলে দেশে অপারেশনের জন্যই আসছিলাম। মনে করছিলাম বিদেশিরা এগুলা করতে ভয় পায়, আমাদের এখানে ঠিকই করে ফেলবে কিছু একটা। তো, এই হল আমার সর্বশেষ অবস্থা। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেকেই আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদেরকে এই সুযোগে জানিয়ে দিলাম আমার অবস্থা। ... ...
এতদিন ধরে যে দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল, তা যখন সত্যিই এসে হাজির হয়েছে তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় সিংরাইয়ের। বাবা-মা’র মাঠ থেকে ফিরতে প্রায় তিনটে বেজে যাবে। বাড়ি ছাড়ার সময় ওদের সঙ্গে দেখা হবে না, প্রথম যখন ভাবনাটা মাথায় আসে মুহূর্তের জন্য একটু খারাপ লাগে সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেটার। কিন্তু তারপরই ওর মনে হয়, এর জন্য তো মানসিক প্রস্তুতি সে অনেকদিন ধরেই নিচ্ছে। আজ না হয় কাল তো চলেই যেত বনমালীর সঙ্গে। আজ যে বাড়ি ছাড়ার সময় দেখা হচ্ছে না বাবা-মা’র সঙ্গে তাতে কীই বা এসে যায়! বাড়ি ছাড়ার সময় দেখা হলেই বা কী এসে যেত! ... ...
আমাদের চেতনা এবং দেখা শোনা, ঘ্রাণ, স্বাদ নিয়ে দু-একটি বিষয়ের পর্যালোচনা। শুরু হয়েছিল নজরুলের ভাঙার গান নিয়ে | এবারের পর্ব দেখা নিয়ে | ... ...
কলকাতায় বেহালার কাছে যে আবাসনে আমাদের একটি ফ্ল্যাট আছে সেখানে আবাসিকদের হোয়া গ্ৰুপে জনৈক পিকেবাবুর সারমেয় ফোবিয়া বা সমস্যা প্রসঙ্গে একবার কিছু আলোচনা হয়েছিল। যেহেতু খেজুরে লেখায় আমি প্রভূত আনন্দ পাই তাই দিয়েছিলাম একটি বিশদে সাজেশন। এই হালকা রসের রচনাটি সেই প্রসঙ্গে ... ...
১৪ই জানুয়ারি যখন ডাক্তারবাবু মায়ের ব্যপারে আমাদের বলে দিলেন “ইট ইজ নাউ ম্যাটার অফ টাইম”... তারপর মোবাইলের পাতায় এগুলো লেখা হয়েছিল। এর সম্পাদনা হওয়ার নয়। ... ...
ভূতের বেগারের দ্বিতীয় অধ্যায় বা দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে গিগ ইকনমিকে নিয়ে লেখা। ... ...
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাণিজ্যমেলার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মোটামুটি ১৪৭৮ সাল থেকে নিজস্ব বইয়ের সম্ভার নিয়ে শরতের সময় ১সপ্তাহের জন্য এই মেলায় আসতে শুরু করেন বই ব্যবসায়ীরা। ছাপানো বইয়ের সেই আদ্যিকালে অবশ্য বই ছাপানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত সমস্ত ধাপগুলোর কোন আলাদা কেন্দ্র বা ভাগ বিভাজন হয়নি। তাই নিজস্ব কর্মচারী আর শ্রমিকদের সাহায্যে গোটা প্রক্রিয়াটিকে সামলাতেন ১জন বই মুদ্রকই। অর্থাৎ সেকালে বইয়ের মুদ্রকই হতেন বইয়ের প্রকাশক আর বই বিক্রেতাও। ... ...
তাকে থামিয়ে সুভাষ মাহাতো বলে ওঠে, ‘একটা কথা বলুন তো, এই এলাকার কথা উঠলেই আপনারা মাওবাদী সমস্যা বলেন কেন? মানুষের সমস্যা আছে বলেই তো মাওবাদী আছে। মাওবাদীরা সমস্যা হবে কেন?’ সুভাষ মাহাতোর প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় অরিন্দম। কিছু একটা বলার চেষ্টা করতে গিয়েও থেমে যায়, চুপ করে থাকে। ফের বলে ওঠে সুভাষ মাহাতো, ‘আসলে আপনাদের দোষ নেই, সরকার সব সময় বলে মাওবাদী সমস্যা, মাওবাদী সমস্যা, মিডিয়াও বলছে মাওবাদী সমস্যা। আপনারা মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, মানুষ মাওবাদীদের সমস্যা বলে মনে করে কিনা। যেদিন মানুষ মাওবাদীদের সমস্যা বলে মনে করবে, সেদিন সরকার, পুলিশ কিছু লাগবে না, খুন, সন্ত্রাস এমনিই থেমে যাবে। কিন্তু মানুষ যদি মাওবাদীদের সমস্যা বলে মনে না করে, তবে পুলিশ দিয়ে সরকার কিছু থামাতে পারবে না।’ ... ...
পুরোনো দিল্লির বাকি তিন শহর ... ...