আমার গ্রামজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ ছিল এই মাঠপাহারার দায়িত্ব পাওয়া। সপ্তাহে একদিন পালা পড়তো বাড়ি পিছু। মনে হতো রোজ যাই। ধানের খড়ের ঘরে কী উষ্ণতা অকল্পনীয়। আমি যদি নিজে ছবি বানাতে আপ্রি তবে এই দৃশ্য রাখবোই। সবচেয়ে ভয়ের ছিল, বউ মারার মাঠে রাখপাহারা। ভূতের ভয়ে যেতে চাইট না। আমি আর সিরাজ, বছর পাঁচেকের বড়, নাম ধরেই ডাকতাম, গ্রামের প্রথা অনুযায়ী, বেছে নিতাম ওই মাঠ। নুরপুর পলাশনের লোকদের সঙ্গে দেখা হতো। গল্প হতো। ওইটা ছিল আমাদের গ্রামের মির শেষসীমা। ... ...
যাব ব্রাতিস্লাভা। স্লোভাকিয়া দেশটি সবে আপন পতাকা উড়িয়েছে; আগে সে দেশে যাওয়ার পথ ছিল পুরনো চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ দিয়ে (১৯৭৭ সালে প্রথম ইউরোপে পৌঁছে সেখানে প্লেন বদল করেছি)। রাজধানী হলেও ব্রাতিস্লাভার বিমানবন্দর আকারে অতি ক্ষুদ্র। ১৯৯৬ সালে ব্রাতিস্লাভা এয়ারপোর্টে নেমে কোন ট্যাক্সি পাই নি। আরেকজনের সঙ্গে কোনমতে বাবা বাছা করে ভাগের গাড়ি চড়ে শহরে গিয়েছি। লন্ডন থেকে কোন প্লেন সরাসরি সেখানে যায় না- ইউরোপের কোথাও প্লেন বদলাতে হয়। ভিয়েনা-ব্রাতিস্লাভার ফ্লাইট কিছুকাল চালু ছিল কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের এই উড়ানে খরচা পোষায় না বলে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। তার চেয়ে সহজ তাদের প্রাক্তন প্রভুর দেশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে গিয়ে গাড়ি, নৌকো ( স্পিড বোট ) বা ট্রেন ধরা। সময় লাগে বড়জোর এক ঘণ্টা। দূরত্ব মেরে কেটে ৮০ কিমি। সীমান্ত খুলে গেছে। ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেখালেই অবারিত দ্বার; বড়জোর একটা ছাপ মেরে দেবে। ... ...
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। ... ...
অসুস্থ সুভাষ তখন জামাডোবায়, তাঁর চিকিৎসক-বড়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সারা বাংলা যখন ক্ষোভে উত্তাল, বিশেষ একটি উচ্চকিত কবিকণ্ঠের কোন স্বর শোনা গেল না কিন্তু সেই মুহূর্তে। সে-কণ্ঠটি বেশ কিছুদিন ধরেই নীরব হয়ে আছে। শুধু রাজনীতিতেই যে সে নীরব তা-ই নয়, সবাই জানে কবিতা সে আর লেখেই না প্রায়, গ্রামোফোন কম্পানীর রিহার্স্যাল রূমের বাইরে যা বলে সে, তাতে ঘন ঘন আল্লাহ্ বা কোন ভগবানের নাম শোনা যায়, কোন পরম শক্তির অস্পষ্ট ইচ্ছার কথা সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বেও হয়তো শোনা যায় কখনও কখনও! তরুণ সুভাষ যে “জ্যান্ত মানুষের” নেতৃত্বে কংগ্রেস দলকে উজ্জীবিত করবার আশায় ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক সময়, সেই নজরুল – আজকের প্রায় নিঃস্ব নজরুল – কী করছিলেন তখন? শোনা যায়, অনেককেই তখন পণ্ডিচেরিতে স্থিত অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর যোগ-শরীরে সাক্ষাতের কাহিনী কেমন-একটা ঘোরের মধ্যে শোনাতেন তিনি সেই-সব দিনে। অরবিন্দকে যোগ-শরীরে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে নজরুল কি পরামর্শ করছিলেন কিছু? তাঁর যাবতীয় বঞ্চনার কাহিনী অন্তত মনে-মনেও নিবেদন করছিলেন যোগাভ্যাসের পায়ে? ... ...
প্রতিবাদে বাবাও বোধহয় কাঁসার থালাতেই খেতেন। 'হিন্দু' বাড়িতে কাঁসার থালা সম্মানসূচক হলেও আমাদের বাড়িতে যতদিন ঠাকুমার শাসন ছিল, কাঁসার থালা ছিল সংরক্ষিত। গেলাম। খেলাম। কাঁসার থালায় চুড়ো করে ভাত। পাশে আলু ভাজা, একটা সব্জি, ডাল আর হাঁসের মাংস। হাঁসের মাংস ততো মশলাদার নয়। খেলাম তো বটে, মনে মনে খচখচ করতে লাগল, ভাতটা কি পাথর হয়ে পেটে থেকে যাবে। রাত কাটলে, দিব্যি সব, পায়খানা হয়ে বেরিয়ে গেল। তা অনেকেই বোধহয়, এখনো আমার ঠাকুমার মতো হয়ে আছেন। ... ...
আমার বাবার মুখে শ্রদ্ধেয় কয়েকজন নেতার নাম উচ্চারিত হতো। মুজফ্ফর আহমেদ, আবদুল হালিম, পি সুন্দরাইয়া, হরেকৃষ্ণ কোঙার এবং নাগি রেড্ডি। পি সুন্দরাইয়া ১৯৭৬-এ পার্টি সংশোধনবাদী হয়ে যাচ্ছে বলে চিঠি লিখে পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদ ও পলিটব্যুরো সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ায় কষ্ট পান। জনসঙ্ঘের সঙ্গে হাত মেলানোয় ছিল মূল আপত্তি সুন্দরাইয়ার। বাবা অবশ্য ইন্দিরা জমানার অবসানে প্রাণপণ লড়ে যান। ... ...
পাঁচশ বছরের অটোমান রাজত্বে মাসিদোনিয়া কোন রাজ্য (সঞ্জক) ছিল না, ভারদার নদী বয়ে গেছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, সেই নদী অথবা প্রধান শহর উস্কুপ (আজকের স্কপয়ে) এর নামেই তার নাম। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসের (এন আর সি) প্রশ্ন ওঠে নি, কোনো রাজদপ্তরে পাসপোর্ট জন্মকুণ্ডলীর কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয় নি, তাঁরা কেউ ঘুসপেতিয়া নন। মাসিদোনিয়ানরা কোন স্বতন্ত্র জনজাতি নয়, আজকের বুলগারিয়া গ্রিস আলবানিয়া সর্বত্র মিলে মিশে বাস করেছেন – তাঁরা সংখ্যালঘু কিন্তু সুলতানের কাছে সবাই প্রজা। ... ...
বিদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি, বিশ্বব্যাঙ্কের শর্ত, বিদেশে মস্তিষ্ক পাচার তথা ব্রেন ড্রেন, এক চব্বিশ হাজার রকম ব্রান্ডের ওষুধের বদলে শুধু একশো চব্বিশ রকমের জেনেরিক নামের ওষুধ চাই, শিক্ষা স্বাস্থ্য কৃষি বীমা ব্যাঙ্কে বেসরকারিকরণ চাই না--এইসব ধ্বনিতে তখন আকাশ বাতাস মুখর। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা লেখা থাকতো পেট্রল ডিজেল কেরোসিন কয়লা গ্যাসের এক টাকা দুই টাকা দাম বৃদ্ধির খবর। খবরের কাগজ তোলপাড় করে ফেলতো দুধ পাঁউরুটির দাম ১০-২০ পয়সা ( টাকা নয় পয়সা) বাড়লে। ... ...
আনিসকে কেন্দ্রে রেখে আসরাফুলের আর আদমখোরের ব্যাপারে দুটো সুস্পষ্ট মত বেরিয়ে এসেছে।প্রথম মত , ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সার্চ পার্টি খুবই তৎপর ছিল কিন্তু তারা আসরাফুলের শরীরের কিছু পাচ্ছে না। দ্বিতীয় মত, করবেট আর ডাঃ রাওয়াতের টিম খুঁজে পাচ্ছে আসরাফুলের ডান হাত যা আদমখোর খায়নি। দুজনে মিলে এই সিদ্ধান্তে এলেন : বাঘটা মেয়ে বাঘ, যার সঙ্গে দুই সাব অ্যাডাল্ট। দ্বিতীয় মতটা যেহেতু ববিচাঁদের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মেলেনি, তাই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সাহাবরা ওটার সম্পর্কে চুপ। মিডিয়াও ববিচাঁদের কথাই বলে চলে কারণ সে জীবিত ,কথা বলতে পারে, যা হাজার চেষ্টা করলেও আসরাফুল পারবে না। ... ...
ঠিকই বলেছেন আপনার শাশুড়ি, বলে ভূতসিদ্ধ। সম্ভবত ওই মেয়ের ভূতই ঢুকেছে আপনার স্ত্রীর শরীরে, আর খুড়িমা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ওর আক্রমণ রুখতে। যাই হোক, বলতে থাকে ভূতসিদ্ধ, গত দশ দিনে ওকে – মানে ওই ভূতকে – আমি অনেকবার নামিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওকে বুঝিয়েছি ও ভুল মানুষকে ধরেছে। তাকে ছেড়ে ওর চলে যেতেই হবে। ও রাজি নয়। অনেক ভয় দেখিয়েছি আমি, তবুও ছেড়ে যেতে ও রাজি নয়। এখন রাস্তা একটাই। ভূত তাড়াবার মহৌষধ একজন ভূতকে দিয়েই আমি তৈরি করিয়ে নেব। কিন্তু শুধু যে সময় লাগবে তাই-ই নয়, অনেক কষ্ট অনেক খরচ। পেরে উঠবেন আপনি? সময় ধৈর্য এবং খরচ, এ-চিকিৎসায় এই তিনটের কোনটাই কম হলে চলবে না। ... ...
জলবায়ু পরিবর্তনকে এই বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি দায়ী করা যেতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সম্মুখভাগের অর্ধগলিত অংশে হ্রদ তৈরি হয় প্রাকৃতিকভাবে। এই হ্রদের তিন পাশের দেওয়াল নির্মিত হয় হিমবাহ বাহিত মোরেন দ্বারা। মোরেন শব্দটির অর্থ হল যে পাথর ও পলি হিমবাহ পাহাড় ক্ষইয়ে ভেঙে বয়ে নিয়ে আসে। এই মোরেন-এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় আকারের পাথর থাকে। সূক্ষ্ম দানার পলি খুবই কম। কারণ হিমবাহের গতি শ্লথ; ভেঙে আনলেও পাথর বেশিদূর বহন করে নিয়ে যায় না। ... ...
মাসিদোনিয়াতে তাঁরা জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি বললেন জনশ্রুতি এই যে মাসিদোনিয়ান সরকার তাঁদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আলবানিয়ান ভাষা শেখানো হয় না, ছেলে মেয়েদের আলবানিয়ান নাম দেওয়া নিষিদ্ধ, সরকারি দফতরে, আর্মিতে চাকরি জোটে না। ক্লিনটন সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু আপনাদের জানাতে পারি এটি সম্পূর্ণ অসত্য। মুশকিল হলো প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি এমন সব রাজনৈতিক ইসু তুলে ধরলেন যার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা ছিল না। ... ...
রাইফেলের মাছি ওর কপালে তাক করে ঘোড়ায় চাপ দিলাম আর , ঘোড়াটা টেপার সঙ্গে সঙ্গে সেফটি ক্যাচটাও খুলতে থাকি যাতে ওটা খোলা আর গুলির আওয়াজ এক সঙ্গে হয়। রাইফেল ছোড়ার এই উল্টোমুখি কায়দায় কী ভাবে কাজ হয় জানিনা , কিন্তু কাজ অবশ্যই হয়েছিল ; আর যখন কাছ থেকে ছোড়া শক্তিশালী রাইফেলের গুলি ওর কপাল ফুঁড়ে দিল শরীরটায় একটা ছোট কম্পন হয় ,ওর ল্যাজটা ছড়ানোই থাকে , পেছনের পাটা চারা গাছটার ওপরের ডালে যেমন ছিল রয়ে যায় ; উঁচু নাকটা এখনো স্বর্গের দিকে। ও যেমন ছিল ঠিক তেমনই রয়ে যায় যখন আমি প্রথমটার পরপরই সম্পূর্ণ অকারণেই , দ্বিতীয় একটা গুলি মারলাম। যে বদলটা চোখে পড়ে তা হল পেটের ওঠানামা বন্ধ হওয়া; আর কপালের দুটো আশ্চর্য রকমের কম ছোট ফুটো থেকে রক্ত চুইয়ে পড়তে থাকে। ... ...
আমরা নবম দশম শ্রেণিতে বাড়ি থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভর্তি হয়েছি। গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। পুরানো পাঠকদের মনে থাকতে পারে এ-সব কথা। আগের স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলে সরস্বতী পূজা করার দায়িত্ব পাওয়া যেত। করেছি ধুমধাম করে। তবে গ্রামে খিচুড়ি খাওয়ার চল ছিল না পেটপুরে। প্রসাদ মিলত। লুচি সুজির হালুয়া নানারকম ফল। খাওয়া নয়, পূজার আয়োজন ছিল আসল। অন্যদিন শীতকালে লাইতে (নাইতে/ চান করতে/ শহুরে স্নান করতে) ইচ্ছে করতো না, ওইদিন ভোর ভোর উঠে পুকুরে ডুব দিয়ে নতুন জামা পরে ছুট স্কুলে। ধুপধুনোর গন্ধ আমাকে খুব টানতো। আমার তো পরে ইচ্ছে করতো, বর্ধমানে অমল ব্যানার্জিদের পারিবারিক দুর্গাপূজার আয়োজন দেখে, একটা আস্ত দুর্গাপূজা একাই করতে। ২০১১ থেকে ২০২২ একটা দুর্গাপূজার অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে আমি পূজা পরিচালনা করেছি। ভোর পাঁচটায় উঠে রাত বারোটার সময় ঘরে ঢুকেছি। চারদিন দুবেলা খাওয়ার আয়োজন (পেটপুরে প্রসাদ ধরলে চার বেলা) একশো পরিবারের। সাড়ে তিনশো থেকে সাড়ে চারশো মানুষের। ... ...
চমৎকার ঘাস কাটার হাত ছিল উমার। ছাগলের জন্য বেছে বেছে কালচে ঘন নরম ঘাস কাটতো। আমিও আমাদের ছাগলের ঘাসের জন্য উমার সাগরেদি করেছি। তালপুকুরের পাড় থেকে শুরু করে আশপাশের ধান কাটা জমিতে ভালো ভালো ঘাস কেটেছি। এছাড়া উমার একটা গুণ ছিল, এক ধরনের লম্বা ঘাস হতো। তাকে বলা হতো, ব্যাঙের বাড়ির ঘাস। ভিতরটা ফাঁপা । হাত দিয়ে টিপলে পটপট করে আওয়াজ হতো। আমাদের গ্রামীণ জীবনে ওইগুলোই তো ছিল আনন্দের উৎস। সেই ঘাস দিয়ে উমা দারুণ ঘর বানাতো। দোতলা তিনতলা। ... ...
১৯৬৭ সালে ইজরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। ওদিকে এই যুদ্ধের আগে থেকেই গাজার এক-পঞ্চমাংশ ইজরায়েলের দখলে। ২০০৪ সালের পর থেকে গাজাও যেন জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ইচ্ছেমত প্যালেস্টাইনিদের পশ্চিম তীরের বাসস্থান থেকে হঠিয়ে দিয়েছে। আরবরা যখনই প্রতিবাদ করেছে, তাদের বা আইডিএফের হিংসার শিকার হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আরবরা বসতি দখল ও নির্যাতন সইছে। ইজরায়েলিরা পশ্চিম তীরের ৫৯ শতাংশ দখল করে নিয়েছে, ইজরায়েলি বসতি বানিয়ে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন পৃথিবীর নজর যখন গাজার উপর, সেই অবকাশে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরে আরবদের বাড়িতে ঢুকে বাসিন্দাদের মারছে, গাড়ি, ফলের বাগান জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বসতিতে ঢুকে এমন সন্ত্রাস করছে যে ভয়ে সবাই বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। ... ...
মোহন ফরেস্ট চেক পোস্টে যখন আসে সে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। তার জিনসের প্যান্ট ফেঁড়ে গিয়ে পায়ে অল্প অল্প রক্ত বেরোয়। নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলল তার নাম আনিস। তার কথাবার্তা ঠিক ছিল না। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কেইবা ঠিকঠাক কথাবার্তা বলতে পারে। অনেকটা ঘোরের মধ্যে সে বার বার তার মোটর বাইকের দিকে দেখাচ্ছিল। আর বলছিল একমাত্র প্ল্যাটিনা নামের বাইকে চড়েছিল বলে সে পালাতে পেরেছে। ব্যাপারটা কী , কার হাত থেকে সে পালাতে পেরেছিল, এসব না বলে খালি বাইকের কথা বলায় অভিজ্ঞ ফরেস্ট গার্ডরা সব বুঝতে পারে আর এক গ্লাস গরম দুধের ব্যবস্থা করে। সেই দুধ খেয়ে ধাতস্থ হয়েও আনিস খানিকক্ষণ চুপ মেরে বসেছিল তারপর ধরা গলায় আদমখোরের কাহিনী শুরু করল। ... ...
পিংলা বলে, তুমি যখন বলছ কবিতা লেখা তোমার স্বাভাবিক ভাবে এখন আসছে না, বাদ দাও কবিতা লেখা। সিনেমা অনেক বড় ফীল্ড ওতেই মন দাও না তুমি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ যখন রাশিয়া থেকে ফিরলেন – আমাকে নয়, কিন্তু – গুরুদেবের আশপাশে যে-সব গুণী মানুষরা সব-সময়ই থাকেন, শুনলুম কবি তাদের বলেছেন, ওখানে আইজেনস্টাইন নামের একজনের তৈরি করা ব্যাট্ল্শিপ পোটেমকিন নামে দীর্ঘ একটা সিনেমা উনি দেখে এসেছেন, সেই সিনেমার সঙ্গে এখানে যে-সব সিনেমা দেখেছেন তার কোন তুলনাই হয় না। উনি নাকি বলেছেন, অনেকের ধারণা সিনেমা আর কিছুই না, শুধু ক্যামেরায় তোলা একটা নাটকের মতো। এমনকি, নিজের নটীর পূজা সম্বন্ধেও নাকি বলেছেন, ওটা কোন সিনেমাই হয়নি, সিনেমা আধুনিক মানুষের আবিষ্কৃত একটা সম্পূর্ণ অন্যরকমের শিল্প – এ ছবি-আঁকা-মূর্তি-গড়া নয় যা গুহাবাসী মানুষরাও করত, এ কবিতা-লেখা-গান-গাওয়া নয় যা বেদ-উপনিষদের সময়েও মানুষের আয়ত্ব ছিল – এই শিল্পের ভাষাই অন্য, এবং সে-ভাষা এখন ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে, আর শিল্পের নতুন নতুন চমক শিখছে মানুষ। ... ...
দোকানপাটের চরিত্র বদলে গেছে। আগে শুধু থাকতো সব মিলিয়ে গোটা ১০-১৫ টি দোকান। বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ। বারোয়ারিতলা তথা ওলাইচণ্ডী পূজার কাছে জিলিপি, জিভে গজা, গজা, কাঠিভাজা, এবং রসগোল্লার দোকান। পরপর দুটি। তারপর চপ বেগুনি পাঁপড়ভাজা। আর গোলামহলের দুপাশে মাঝেরপাড়া যাওয়ার রাস্তা ধরে বাচ্চাদের খেলনার দোকান। লাট্টু, কটকটি, তালপাতার সেপাই, বাঁদর লাঠি, ছোট ঢোল ইত্যাদি। থাকতো সংসারের জিনিস। খান দুই তিন দোকান। হাঁড়ি কুড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার কড়াই, তাওয়া, কাঠের বেলুনি, খুন্তি ইত্যাদি। আগে বেশিরভাগ থাকতো লোহার। মাটির হাঁড়ি কুড়ি, জালার দোকানও বসতো। আশির দশকে তার ঘন্টা বাজল। স্টিলের বাসনকোসন ঢুকল ১৯৮৫র পর। ... ...
তার পুব দিকের ঢালের উঁচুতে বড় বড় ওটের ঘাস জন্মেছে। ওই ঘাসবনের পরেই খাড়া পাহাড় সোজা নেমে গেছে কোশি নদীর পাড় অবধি। একদিন খাড়াই পাহাড়ের উত্তর দিকের গ্রাম থেকে একদল মেয়েবউ ওখানে ঘাস কাটছিল। হঠাৎ এক বাঘ তাদের মধ্যে এসে পড়ে, হুড়োহুড়িতে এক বয়স্কা মহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঢাল বরাবর গড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বাঘটা যেমন হঠাৎ আসে তেমনই চিৎকার চেঁচামেচিতে রহস্যময় তার পালানো। খানিকটা ভয় কাটলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে মেয়েরা আর ঘেসো জমির ঢাল ধরে খানিকটা নেমে এক সরু ধাপিতে ওনাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেল। মহিলা কোঁকাতে কোঁকাতে বলেন তিনি মারাত্মক চোট পেয়েছেন। ... ...