“গ্রিগরি, এতক্ষণ আপনি আমি দু’জনেই প্রভূত রেড ওয়াইন পান করেছি। একটা ল্যাটিন প্রবাদ আছে – ভিনো ভেরিতাস। মদ্যে নিহিত আছে সত্য। তাই বলি, আমরা আফ্রিকাতে যাদের সঙ্গে কারবার করি, তাঁদের পূর্ণ সততা সম্বন্ধে সন্দিহান হওয়া স্বাভাবিক। সে সন্দেহ আমাদের আছে। যে ঋণ গ্রহীতাদের কথা বলছেন, নিজেরাও জানেন তাঁদের সততা বিবাদিত। তাঁরা এটাও জানেন যে আমরা ব্যাঙ্কাররা সেই একই সন্দেহ পোষণ করি। সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। তাই যে বৃহৎ খনিজ তেলের ডিলগুলির কথা আপনি ভাবছেন – যেমন এঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো – সেখানে আমরা সম্যক সাবধানতা পূর্বক ঋণ দিয়ে থাকি। এক পয়সা মারা যায়নি। আমাদের রাশিয়ান অভিজ্ঞতা বলে আপনাদের দেশেও সেই একই সমস্যা। আপনাদের ব্যাবসায়িক কর্মকর্তারা আরমানি স্যুট পরে দারুণ আমেরিকান ইংরেজিতে বক্তিমা দিলেও আমাদের সন্দেহ দূরীভূত হয় না। সেটি প্রকাশ করলে আবার আপনারা ক্ষিপ্ত হন”। ... ...
কতক্ষণ লেগেছিল পৌঁছোতে? দু আড়াই ঘন্টা হবে। সে দেখিয়ে দিয়েই চলে গেল। আমি ব্যাগ কাঁধে দরজা খুললাম। দরজা খুলেই হাঁ হয়ে গেলাম। দেখি গাদাগাদি করে মানুষ ঘুমোনো। কেমন বলেন তো! যেদিকে একজনের মাথা সেইদিকে আরেক মানুষের পা। মানে অল্প জায়গায় বেশি মানুষ আঁটাতে গেলে যেমন ভাবে শুতে হয় তেমন। প্রায় দেড়শ লোক এক ঘরে। কত বড় ঘর! ছোট। ওইটা আসলে একখানা ফ্ল্যাট। এই আমাদের এখানে যেমন ফ্ল্যাট বাড়ি দেখেছেন সেই রকম। হাসব্যান্ড ওয়াইফ একটা কী দুটো বাচ্চা নিয়ে থাকার যে ফ্ল্যাটবাড়ির ঘর হয় সেইরকম। দুটো রুম। কিচেন। আর পায়খানা বাথরুম কটা? একটা। ... ...
কাকিমা বলছিল, আরে! শুকদেবের হাতেও মোটা কাঠ ছিল, কুড়ুলও ছিল। ঝামেলা শুরু হবার আগে সে কাঠ কাটছিল, চাইলেই সে সেগুলো ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সে তা না করে মাথা ঠান্ডা রেখে শুধু ঢালের মতো করে মোটা কাঠ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে গেছে। নাহলে রক্তগঙ্গা দ্বিগুণ হতো, শানু! ... ...
আর আমি?– প্রশ্ন করে কাজি। তুমি? তুমিই খানিকটা আমার প্রেরণা বলতে পার। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিতে যখন তুমি প্রথম কবিতা পাঠালে করাচি থেকে, আমি তখন সমিতির সহকারী সম্পাদক। তার আগে দুয়েকখানা চিঠিও তুমি লিখেছিলে। কিন্তু ক্ষমা নামে একটা কবিতা যখন পাঠালে, তা ছাপা হল। তোমার প্রথম ছাপা কবিতা। ছাপাবার সময় শুধু কবিতাটার নাম আমি বদলিয়ে দিয়েছিলাম, ক্ষমার বদলে মুক্তি। তুমি রাগ তো করলেই না, চিঠি লিখে ধন্যবাদ দিলে। ... ...
আমাদের দুটো গ্রাম। পাশাপাশি। দুটো জমি পেরোতে হয়। একটা চার বিঘা। আরেকটা তিনবিঘা। চার বিঘা এক সময় আমাদের ছিল, ফুটবল খেলার ম্যাচে বুট না থাকায় মার খাচ্ছে গ্রামের ফুটবল দল। অতএব বুট কিনতে চার বিঘা জমি বিক্রি করে দিলেন বাবা। এ-সব শোনা। মায়ের পতি নিন্দার আবশ্যিক উপাদান: উড়িয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিলে। এবং অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি: ঘর জ্বালানে পর ভালানে। ... ...
আপনার ধন কেমন ভাবে নিবেশিত হবে তার স্ট্রাটেজি তৈরি করেছিলেন ফান্ডের দুই ডিরেক্টর – অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত মাইরন শোলস এবং রবার্ট মেরটন। নোবেল বিজেতারা আম জনতাকে জানালেন, নির্ভয়ে থাকুন। আমাদের নিবেশন কৌশলটি এমনই ফলপ্রসূ এবং অভ্রান্ত, যে কোনো ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় না ঘটলে আপনাদের অর্থ এবং তার মুনাফা সুনিশ্চিত থাকবে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ ধরণের ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় এক শতাব্দীতে একবার মাত্র ঘটতে পারে। চার বছর বাদে রাশিয়াতে প্রভূত লোকসান করে এল টি সি এম তাঁদের গ্রিনিচ কানেকটিকাটের অফিসে তালা দিলেন। ... ...
দাদু বলেন, একে নবজাগরণই বলা যায়। ইংরেজ আমলেও ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে থাকা বাঙালি বঙ্গের ভাবধারা – তার চিন্তন মনন ও আদর্শকে রূপদান করতে লাগল। শাসক আর শাসিতের মধ্যে সংঘর্ষ, কখনও বা সম্মিলনে গড়ে উঠতে থাকল বঙ্গের রূপরেখা। সেই নবজাগরণের কালে দক্ষিণ রাঢ়বঙ্গ ও দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশ হলেন তার একজন সহযোগী। ... ...
কাজিকে এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে দেখে খারাপ লাগে মুজফ্ফরের। একেই ওর শরীর ভালো নেই, তার ওপর আবার বকাবকি করল সে। সত্যিই তো, বেচারার স্বভাবই এরকম। কাজি বিশ্বাস করে না ভূ-ভারতে এমন কোন মানুষই নেই। কেউ যদি ঠকিয়েও নেয়, কাজি হজম করে নেবে বিনা বাক্যব্যয়ে। মুজফ্ফর বলে, তোমার শরীর ঠিক আছে, কাজি? ... ...
ঝলমল করছে দিল্লি এয়ারপোর্ট। ওদের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার কথা কোনো এক অচেনা লোকের। যাকে দেখতে পাওয়ার কথা এয়ারপোর্টের ঝকঝকে আলোতে বাইরে কোথাও দেখা গেল না তাকে। বারবার ফোন করে একখানা এড্রেস পাওয়া গেল কেবল। এক হোটেলের অ্যাড্রেস। একখানা ট্যাক্সি ধরে যেতে হবে সেই হোটেলে। বলল, সে হোটেলের রিসেপশন-এ পৌঁছোলেই জানা যাবে সব কিছু। পাওয়া যাবে ভিসা, পাসপোর্ট আর চাকরির কাগজপত্র। ফোনের ও’পাশ থেকে একটা অচেনা গলার স্বর বলেছিলও এ কথাগুলো। ... ...
একদিন নারায়ণ ফোন করে। "স্যার, ভাবতে পারবেন না এত মাছ হয়েছে! রান্নাপুজোর দিন থেকে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। পাড়া প্রতিবেশী জানতে চাইছে এত মাছ হচ্ছে কীকরে? আপনি সুস্থ হয়ে আসুন৷ আমরা অপেক্ষা করবো। আপনাকে এক লাখ টাকা দেবো৷ আমার ক্ষেত খামার পুকুর সব সাজিয়ে দেবেন।" শুনি আর ভাবি, সোমদা বিভিন্ন ব্লকে কিষাণ কিষাণীদের জন্য যে ব্যবস্থা করে দেয়(কৃষি প্রশিক্ষণ, ফার্ম ডিজাইন) তাতে তাদের যা রোজগার হয় সোমদার বেতন তার চেয়েও কম। ... ...
নজরুল চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা, বলে, আলি যখন বিয়ের প্রস্তাব দেয় আমাকে, আমি তখন জিজ্ঞেস করেছিলুম, আপনি কি আপনার ভাগ্নীর মতামত নিয়েছেন? সে কি চায় আমাকে? যে উত্তর আমি পেয়েছিলুম তা হল, আপনি চাইলে ও এক কাপড়ে আজ রাতেই বেরিয়ে যাবে আপনার সঙ্গে। বিয়ের দিন রাত্তিরে যখন বুঝতে পারলুম ওদের ওই আকদের শর্ত কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে, তখন বাসরে আমি নার্গিসকে প্রস্তাব দিয়েছিলুম – মনে রেখো মুজফ্ফর ভাই, আকদে আমি সই করিনি, কিন্তু ইজাব কবুল তো হয়েছিল – আমি প্রস্তাব দিয়েছিলুম, আমার হাত ধর, আমরা বেরিয়ে যাই। গলাটা ধরে আসে কাজির। কিছুক্ষণ নিঃশব্দ বসে থাকে সে। তারপর বলে, ও রাজি হয়নি। ... ...
অনন্তর কানে কিছুই গেল না, যেন সে বধির, যেন বা অন্ধ। আর এক দিকের দাঁড়ে আজ লোক নেই, তাই আজ এই মহাবিপদের সামনে পড়ে গেল তারা। “পাঁচু, সামাল” বলতে বলতে সে ততক্ষণে হালে বসে পড়েছে। দু’জনে প্রাণপণ চেষ্টা করে নৌকো সোজা করার। কিন্তু ঘূর্ণিতে পড়ে গেছে নৌকো। মোচার খোলার মতো তারপর জলের কুটিল প্যাঁচাল টানে সেটা একমুখে ছুটে গেল প্রথমে, তারপর ঘুরতে লাগল ঘূর্নির ভেতর।নৌকো ভয়ঙ্করভাবে দুলতে দুলতে হেলে গিয়ে জল ঢুকতে লাগল। দুজনেই তখন অন্ধ।ইষ্টদেবতাকে ডাকতেও ভুলে গেল তারা। স্বর্ণকেশিনী ময়াবিনী নারীর মতো নৌকো সমেত সোনালি পাট তাদের জ্ঞানহারা করে দিলেও সমানে তারা চেষ্টা চালাতে লাগল, তবু নৌকো ছেড়ে লাফ দেবার কথা প্রথমে মাথায় এল না। ... ...
১৯৯৭/৯৮ সালে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া (আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) ডলার আর রুবলের বিনিময় মূল্যের একটি মান বেঁধে দিয়েছিল। এক ডলারের দাম ৫ আর ৭ রুবলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। যদি রুবলের দাম কমে, বাজার থেকে ডলার কিনে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া রুবলকে চাঙ্গা করবে। আর যদি রুবল শক্তিশালী হয়ে এক ডলারের বদলে ৫ নয়, ৪ রুবলের দিকে চলে যায়, বাজারে ডলার বিক্রি করে ব্যাঙ্ক রুবলের ভাও আবার পাঁচে নিয়ে আসবে। এর কেতাবি নাম ভাসমান গাঁটছড়া (ফ্লোটিং পেগ) বা ম্যানেজড পেগ। এই ভাবে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রুবলের মূল্যরক্ষার শপথ নিলো। কাগজ-কলমে এই পদ্ধতি আগ মার্কা শুদ্ধ। কিন্তু এটির শক্তি নির্ধারিত হয় যেকোনো দেশের ডলারের ভাঁড়ারে সঞ্চিত ধন (ডলার) এবং দেয় সুদের হার অনুযায়ী। মাত্র ছ’ বছর আগে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এইরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করে পাউন্ডের দাম ধরে রাখতে সম্যক ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিরক্ষা প্রয়াস একদিনেই বিধ্বস্ত হয় – কালো বুধবার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯২। এই জুয়োয় দান দিয়ে জর্জ সোরোস একদিনে এক বিলিয়ন ডলার লাভ করেন। ... ...
সেকালে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলেই ছেলেরা ক্লাব বানাতো।এখন কী করে? আর কেউ কেউ কবিতা লিখতো। ১৯৭৮-এ আমি সপ্তম শ্রেণি। আমরা গ্রামের ছেলেরা একটা ছোটোদের ক্লাব করে ফেললাম। নাম অরুণোদয় সংঘ। বাড়ি বাড়ি বই চেয়ে একটা ছোটো লাইব্রেরি গড়া হল। আমাদের বৈঠকখানা ঘরের আলমারি হলো সেই বইঘরের ঠিকানা। ক্লাবের দপ্তর আমাদের বৈঠকখানা। বাবাকে বলতেই রাজি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হৈহৈ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হতো। জুনিয়র হাইস্কুলে ছুটিই থাকে। আমরা ১৫ আগস্ট পতাকা তুলে গোটা গ্রাম ঘুরে মাতিয়ে দিলাম। ... ...
কেমন করে সময় দেখতাম আমরা? সত্তর দশকে? বাড়িতে প্রথমে একটাই ঘড়ি। যে ঘড়ি বাবা ষাট বছরের বেশি সময় পরেছেন। পরে দাদার একটা ঘড়ি হয়। কিন্তু দাদাও তো বাইরে থাকেন। আমরা সময় মেলাতাম নানা পদ্ধতিতে। একটা ছিল পাশের বাড়িতে একটা দেওয়াল ঘড়ি ছিল হরিণের শিংয়ের পাশে। কাঠের পেন্ডুলাম দেওয়া ঘড়ি। সবসময় যেতে ইচ্ছে হতো না। একটা তো মায়ের ওঠা। মা কী করে উঠতেন মা-ই জানেন। এছাড়া ভোর চার ১৫ মিনিটে ফজরের আজান। সবসময় শুনতে পেতাম না। দুই, সকালে গুঁড়ুভাইয়ের হাঁক ডাক করে আসা। ঠিক ছটায়। কই, শাশুড়ি চা কই? তিন, নোটনমণি ফুলের ফোটা। ঠিক নটায়। চার, ঝাঁটার কাঠির ছায়া মেপে। পাঁচ, বালি ঘড়ি করে। ... ...
বিয়ের দিন স্থিরই হয়ে গেল, শুভস্য শীঘ্রম যেমন বলেছিল আকবর। জ্যৈষ্ঠ পেরিয়েই। আষাঢ়ের তেসরা। আসমতুন্নেসা মেয়েকে নিয়ে এখন এই বাড়িতেই থাকছে, বিয়ে মামাবাড়ি থেকেই হবে। নজরুলের আত্মীয়স্বজনদের খবর দেওয়া হবে কীভাবে, জানতে চাইলেন আলতাফ আলি। আমার কোন আত্মীয় নেই, বলে নজরুল, কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারই আমার আত্মীয়, বিরজাসুন্দরীই আমার মা, ওঁদের জানান। আলতাফ বলে, তাহলে কুমিল্লায় চলেই যাই, ওঁরা তো আমাদেরও আত্মীয়, বিশেষ করে আকবরের আর আমার। নজরুল বলে, যাবার আগে আমাকে বলবেন, আমি একটা চিঠি লিখে দেব মাকে। ... ...
নব্বই সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের আঘাত এত দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে বিশ্বের তাবড় বড় অনেক রাষ্ট্র ঝাপটে পড়েছে। অর্থনীতি মুচড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সীমানা আর জনগণের নাগরিকত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুঁজিবাদ নিপাত যাক বলে লাল ঝাণ্ডার পাণ্ডারা আর ফান্ডা দেখাতে পারছে না। বিপ্লব হিমঘরে। নেতাদের চরিত্র পালটে সম্পূর্ণ বিপরীতে এসে ঠেকেছে। সমাজতন্ত্র ভাগাড়ে আর ধর্মনিরপেক্ষতার মরণ হয়েছে। গণতন্ত্র সেজে উঠেছে ভোগবাদী আভিজাত্যে। এর সঙ্গে ধম্মো ধম্মো বোল উঠেছে আকাশ বাতাস মাটিতে, নদীতে। আজকাল দেখি অনেকেই স্ত্রী সহবাস, স্বামী সহবাসের দোআ মুখস্থ করার পাশাপাশি হাগতে যাওয়ার দোআও মুখস্থ করে ফেলছে। মন্দিরা শঙ্খ বাজিয়ে তিন বেলা সাড়ম্বরে পূজা করছে। পাঁচ বেলা পড়ে নামাজ পড়ে কপাল ঘষে ঈমানী ছাপ বসাচ্ছে। তবে ধর্ম যত জোরে শোরে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ঘরে ঘরে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দাঁত শূলাচ্ছে তারচে বেশী জোরে নৈতিকতা পালিয়ে গেছে। মানুষ বেশি বেশি মুসলমান হয়েছে। বেশি বেশি হিন্দু হয়ে গেছে। ... ...
রাঢ়ের এই অঞ্চলের অতীতের ইতিহাস আমরা মঙ্গলকাব্যগুলোতে পাই। ... তারা কি দুর্যোধনের মত মারাত্মক? ব্যাপক সামাজিক ধ্বংস, হত্যালীলার নায়ক? মাহুদ্যা আর ভাঁড়ুদত্তের মধ্যে প্রথম জন কেমন যেন মাথা গরমের, আর দ্বিতীয় জন লোভী, কুচুটে। যারা ঝিল বোজাতে চায়, তারা ব্যাপকভাবে অন্ধকারের মানুষ এমনটা নয় কিন্তু! চরম ধ্বংসাত্মক মনোভাব এখানকার মানুষের তেমন নেই। উচ্চকিত মন্দ নেই, গড়পরতা ভাল, গড়পরতা মন্দ।” বলতে বলতে আচমকা হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, “তোমরা যদি কখনও উপন্যাস লেখ, এই এলাকার পটভূমিতে মহৎ উপন্যাসের সাদা মানুষ কালো মানুষ নিয়ে মুশকিলে পড়বে। আপাদমস্তক “কালো” মানুষ বোধহয় আঁকতে পারবে না, যদি বাস্তব থেকে চরিত্র খোঁজো। আবার সব ভাল মানুষের পো যদি সেই লেখার চরিত্র হয়, তবে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না নিশ্চিত। কৃত্রিমতার অভিযোগ উঠতে পারে কিন্তু! ... ...
য়োখেন আমার গভীর সংশয়ের আখ্যান শুনে বললে, জ্ঞান দিও না। .... এই যেমন তোমরা সিটি ব্যাঙ্ক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার যোগাড় করে আফ্রিকার ঘানা কোকো বোর্ডকে ধার দিচ্ছ, আর সেটা ফেরত পাচ্ছ কোকো বোর্ডের নেসলে প্রমুখ খ্যাতনামা ইউরোপীয় চকোলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। ঘানা কোকো বোর্ডকে চেনে দুনিয়ার কোন বান্দা? কিন্তু এক বিলিয়ন ডলার দিতে বাজার পিছপা হচ্ছে না – কারণ তারা চেনে নেসলেকে, যারা কোকো থেকে চকোলেট বানায়। কোকো গেছে নেসলের ঘরে। তোমার আমার ছেলেমেয়ের দাঁতের সর্বনাশকারী চকোলেট বেচে তারা ঠিক টাকা দেবে। আমরা সেরকম একটা কিছু করতে চাইছি। ... ...
সৌম্য বলল, “এটাকে আসলে বলে ইন্টার্নালাইজড হোমোফোবিয়া। অনেক হোমোফোবিক মানুষ আসলে নিজেরাই গে বা লেসবিয়ান। নিজেদের ওরিয়েন্টেশনকে ঢাকতে এরা ওভার কম্পেনসেশন করে আরো বেশি বেশি হোমোফোবিক হয়ে যায়। এরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, যে যদি এরা কুইয়ার মানুষজনকে সাপোর্ট করে, তবে লোকে এদের কুইয়ার ভাববে। তুষারবাবুও তাদের মধ্যে একজন। তার সাথেই ছিল কনজারভেটিভ ভোটব্যাংক হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে উনি ওই রকম হোমোফোবিক হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুধু তুষারবাবু নন, মনে রাখিস আমাদের পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এর শিকার। আমি ধরে ধরে এরকম বেশ কয়েকজন পলিটিশিয়ানের নাম বলে দিতে পারি। বিশেষত দিল্লি আর ব্যাঙ্গালোরের। আর আনন্দের মত এরকম অল্পবয়সী, আকর্ষক ছেলেরা এইসব হাই এন্ড ক্লায়েন্টদের গোপনে সার্ভিস দেয়, ফর সাম ক্যুইক ক্যাশ। অল গোজ ওয়েল যতক্ষণ না কোনও গোপন ক্যামেরায় কিছু রেকর্ড হয়ে যায়।” ... ...