এখানেও বারবার পায়ের তলার মাটি গঙ্গার জলে তলিয়ে যেতে থাকে। ওরা শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলে আবার খুঁজতে থাকে পায়ের শক্ত মাটি। এভাবে কেটে যায় বছরের পর বছর। নদীর মাছ আর চরের ঘাসে যখন আর পেট ভরে থাকল না ওদের নতুন প্রজন্ম আবার রওনা দিল অন্য অন্য রাজ্যে। দাদন খাটতে। শকুরুল্যাপুরের সামতলী চৌধুরীর বড়ো ছেলে সুজয় চৌধুরী গেছিল দাদন খাটত। রাজ্যের নামটা ভুলে গেছে। ছেলের নামটা সামান্য ভুল হয়ে গেছিল। পাঁচ বছর চলে গেছে মাঝে। পাশের কার থেকে জেনে নিয়ে মনে করে বলেছিল সামতলী। ছেলে মরার কারণটা বলতে পারেনি। শুধু বলেছিল, জানি কি আমি? আমি কি ছিলাম ওখানে? ওই উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ে মরে গেল কি গুম করে দিল কি ওর লাশ পুঁতে দিল কীভাবে বলব বলেন তো দিদিমণি? আমি কি ছিলাম ওখানে? কী করে যাব বলেন দিদি সে কি এখানে? সে তো বিদেশ! ... ...
সুভাষ মুখোপাধ্যায়। জীবনের অন্তিম পর্বের একগুচ্ছ কবিতা। তবু এর পাঠে কদাচ বোধ হয় না এ কোনো অশীতিপরের রচনা। বরং যেন এক পথ-ভোলা পর্যটক, জগতের অসংতিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুতা পাতিয়ে ফেলেছেন নীরবে। এবং তারই মধ্যে সম্পৃক্ত তাঁর কবিতার অতি-পরিচিত রাজনৈতিক দর্শন, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, রসিকতা, ব্ল্যাক হিউমর, এসমস্ত কিছুই। পড়লেন হিন্দোল ভট্টাচার্য। ... ...
প্রত্যেক গানের এক বা একাধিক গল্প থাকে। কখনও তা লিখিত হওয়ার গল্প, কখনও সুরারোপের, কখনও-বা পরিবেশনের। আবার যেসব গান কিংবদন্তি হয়ে যায় সেগুলি ঘিরে গড়ে ওঠে নানা কাহিনি। তেমনই গল্পের সমাহারে তৈরি একটি বই। পড়লেন শুভদীপ সাহা। ... ...
মণিশংকর বিশ্বাস। তাঁর কবিতার সংকলন। অতিনাটকীয়তা, তথাকথিত মোচড় ও চমক পরিহার করে, কবি বেছে নিয়েছেন এক মৃদু, অনুচ্চকিত ও প্রায়-নিরলংকার উচ্চারণ। পড়লেন শৌভ চট্টোপাধ্যায়। ... ...
লোকটির প্রশ্নগুলো কিছুই বুঝতে পারছিল না নিমাই। দুর্বোধ্য, অব্যক্ত একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল তার ভেতরে। জেরার পর জেরায় খুবই ক্লান্ত বোধ করছিল। তীক্ষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে ছিল সার্টিফিকেটটার দিকে। আর কান পেতে শুনছিল গির্জার ঘণ্টাধ্বনি। এই শব্দটি ওর খুব প্রিয়। গির্জার ফ্রেস্কোগুলোও খুব সুন্দর। কালই একবার গিয়ে দেখতে হবে। শুধু একবার যদি ওই ধুলোয় ধূসর হয়ে যাওয়া কাগজটা ওর হাতে দিত লোকটা। খুব যত্ন করে আগে ধুলোগুলো পরিষ্কার করত সে। তারপর সেটাকে ল্যামিনেশন করে নিজের আলমারির লকারে রেখে দিত। কিন্তু লোকটা এখনও দিচ্ছে না কেন? কেন ওইভাবে ধরে আছে কাগজের টুকরোটা? বিশ্রিভাবে ওর চোখের ওপর নাচাচ্ছে? চোখের ইশারায় ওকে ধুলোমাখা মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসতে আর ক্ষমা চাইতে বলছে? নিমাইয়ের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় ... ...
সময় জয়মালিকার কাছে বড় দামি। দু বছর তো এই কলেজেই সময় নষ্ট হয়ে গেলো তার, বিকাশদার কথা শুনে। শুনছে বিকাশদাও নাকি ছেড়ে দেবে, সরকারি কলেজে জয়েন করবে নাকি। কিন্তু জয়মালিকার তো সময় নেই, সে অপেক্ষা করতে চায় না। সে শুধু চায় আরও বেশি বেশি লোক তার ছবি দেখুক। মিসেস পাণ্ডে সেই স্কুলের সময়েই বলেছিলেন সে আঁকে অন্য সবায়ের মতো নয়, ঠিক নিজের মতো কোরে। তার মানে তার নিজের স্টাইল তো তৈরি হয়েই গেছে, তাহলে আর কেন কলেজে যাওয়া ! জয়মালিকা ভেবেছিলো অন্তত একজন তাকে ঠিক ঠিক বুঝবে। তাই শক্তিদার সমর্থন চেয়েছিলো ও। কিন্তু শক্তিদা, শক্তিদার মতো মানুষও, ঐ বিকাশদার মতোই কথা বললো। সব আর্টেই অনুশীলন করতে হয় রে জয়ি, কঠোর অনুশীলন, বলেছিলো শক্তিদা। কিন্তু কেন? কেন সবাইকেই অনুশীলন করতে হবে? ... ...
আমার ক্যাম্প অফিসে। করণ্ডায়। মানুষের মুখের কথা বলি। যে মুখগুলি মনে আছে তার ভিতরে প্রধান মুখটি নিখিল প্রধানের। নিখিলবাবুকে আমি প্রথম যখন দেখি আমি তখন ২৩, তিনি ৫০। তিনি সেটেলমেন্টের ডি-গ্রুপ কর্মচারী। উপরওয়ালা স্যার, বাবুদের কাছে পিয়ন। এখন পিয়ন শব্দটি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে। কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ —চার শ্রেণীতে ভাগ করে সেইভাবেই অভিহিত করা হয়। এর অন্যথা হলে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদ এবং সংগঠিত থেকে তাঁরা কিছুটা সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। তবে এখনো সামান্য হোমগার্ড জেলার এস,পি, র বাড়ির বাজার করেন কি না, জামা কাপড় কাচেন কি না, ফাই ফরমাস খাটেন কি না জানি না। হয়তো বদল হয়েছে, হয়তো বদল হয়নি, এ ঘটনা সামান্য কনস্টবলের মুখে শোনা। ... ...
১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। গন্তব্য—আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে আটকে গেছে অভিযান। এ কিস্তিতে অভিযানের জন্য কুলি জোগাড়ের হাজার ঝামেলার কথা। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
জানা গেছে খিচুড়ির এক পূর্বজর নাম কৃসর। ভরতমুনির নিদানে নাট্যমঞ্চ নির্মাণে সে খানার আছে বেশ জরুরি ভূমিকা। কিন্তু মুশকিল হল, এ খাদ্যের সঙ্গে যে আজকের খিচুড়ির কোনোই মিল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
১৯৮৯ সালে পিনোচেতের একনায়কতন্ত্রে দাঁড়ি টানার পর চিলি দেখেছে গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মেলবন্ধন। কারণ একেবারে সহজ। পিনোচেত রাজত্বে বড়লোক গরিবের যে পাঁচিল, তা তো আর একদিনে ভাঙার কথা না। তাই গণতন্ত্র যেমন বৃষ্টিধারার মত সবার মাথায় পড়ল, তেমনভাবে কিন্তু দেশের সম্পদ চটজলদি জনগণের মধ্যে ভাগ হল না। ... ...
১১ নভেম্বর, মেক্সিকোর বিদেশমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্দ মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয়দানের কথা ঘোষণা করেন। কিউবা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, উরুগুয়ে এবং ভেনেজুয়েলার সরকার বলিভিয়ার ঘটনাকে ‘সামরিক-আমলাতান্ত্রিক ক্যু’ হিসেবে ঘোষণা করে। পরদিন, ১২ নভেম্বর, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন অতি দক্ষিণপন্থী জেনাইন অ্যানেজ। মোরালেস মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্যকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। এমনকী ৩৮ সদস্যের ইলেক্টোরাল কমিশনের সমস্ত সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়। ... ...
এবছর ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে তরুণ ভারতীয়রা ওপিনিয়ন পিস লিখেছেন, টেলি কলিংয়ের মাধ্যমে প্রচারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিগত কাজে সহায়তা করেছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রচারে যেসব ভারতীয়রা ছিলেন তাঁরা ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তাঁর চিরভক্ত। ধরে নেওয়াই হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভক্ত ভারতীয়রা আগেরবারের রিপাবলিকান প্রার্থীদের চেয়ে ২০২০ সালে আরও বেশি করে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাতে পারেন। ... ...
মহাকাব্যের পুনঃকথনের জন্য কারিয়ের এই বিচিত্র রচনারীতি চয়ন করেছেন যাতে আখ্যানের একাধিক স্তরের স্পর্শে-সংঘাতে পুরাতন কাহিনি সঞ্জীবিত হয়। ব্যাসের কল্পনায় কাহিনি তৈরি হয়ে ওঠে; স্রোতা ও দর্শক দুই ভূমিকাতেই কিশোর ও গণেশ; কিশোর ভবিষ্যতের মানুষ তথা পুরাকাহিনির পাঠক; ব্যাস এই কাহিনির নির্মাতা-রচয়িতা; মাঝে মাঝে তিনি তাঁর চরিত্রদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন, কখনও বাধাও দেন, আবার তাঁদের আচরণ বিচারেও প্রবৃত্ত হন। রচয়িতার সৃষ্টিকর্মে কখনও কুশীলবেরা স্বতঃপ্রবৃত্ত, স্বাধীন চরিত্র হয়ে ওঠে, কখনও রচয়িতার কল্পমায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে সেই মায়ালোকের অন্তর্গত হয়ে যায়; সেই মায়াবৃত্তান্ত তখন দৃশ্যকাব্য। ... ...
দুই মলাটের মধ্যে চোদ্দটি ভারতীয় ভাষার ছাব্বিশটি গল্পের বাংলা তরজমা। ওড়িয়া ও উর্দু গল্পের সংখ্যা সর্বাধিক। রয়েছে বাঙালি পাঠকের কাছে প্রায় অপরিচিত সিন্ধি, কাশ্মীরি আর ডোগরি ভাষার গল্পও। একটি সাম্প্রতিক সংকলন। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
আন্তনিউ লোবু আন্তুনেশ। পোর্তুগালের অন্যতম সাহিত্যিক। বহু পুরস্কারে সম্মানিত। বিখ্যাত উপন্যাস ‘উশ কুশ দ্য জুদাশ’ রূপকার্থে ‘তেপান্তরের পারে’। আঙ্গোলার স্বাধীনতাসংগ্রাম দমনে নিযুক্ত পোর্তুগিজ ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হওয়ার অভিজ্ঞতায় জারিত কাহিনি। পড়লেন পোর্তুগিজ ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার ঋতা রায় ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
জায়গাটার কথা ভাসা ভাসাই বলেছিলেন গণেশদা, কম কথা বলেন; খোঁজ কোরে কোরে জয়ি পৌঁছিয়ে গেলো একদিন জি-সি-লাহার দোকানের উল্টোদিকে ন্যূয়র্ক সোডা ফাউন্টেন রেস্টোর্যান্টে। এখানে ওখানে নানা টেবিলে ছড়িয়ে বসে আছে অনেক চেনা মুখ। দাড়িওয়ালা যে ভদ্রলোক এগজিবিশনে ওর ছবিটাকে বাঁধিয়ে আনতে বলেছিলেন দেখা গেলো তিনি বসে আছেন গণেশদার সাথে। জয়ির অভ্যেস আছে বিনা আহ্বানে বসার, কফি হাউজে এরকম বসেছে বিস্তর, বসে গেলো। ... ...
পেট্রাতে এখন গেলে যা দেখা যায় তার নব্বই শতাংশই হল সমাধিসৌধ। আর এগুলো সবই পাহাড় কেটে তৈরী- অজন্তার মত। আর বেশীরভাগই বাড়ীর মত দেখতে লাগলেও এদের খুব বেশী আভ্যন্তরীন অংশ নেই। অর্থাৎ সামনেটা বাড়ীর মত, কিন্তু ভেতরটা একটু এগোলেই নিরেট পাথর। মূলতঃ গ্রীক শৈলীতে তৈরী- কিছু মেসোপটেমীয় প্রভাব আছে। তবে মূল গ্রীক শিল্পে এই ধরনের পাহাড় কেটে তৈরী বাড়ী বিশেষ নেই। পেট্রার আগে এই ধরনের পাহাড় কেটে তৈরী সমাধি মিশর, তুরস্ক আর ইসরায়েলে দেখা যায়। ... ...
বাড়ি ফিরেছি একটু রাতে। বেরিয়েছিলাম আবার আড্ডা মারতে। ফিরছি যখন তখন দেখি লকাই( আমার লেখায় আগে এসেছে লকাই) সব ছোট ফ্লাগগুলো এক জায়গায় জড় করছে। ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েছে যেগুলো। বাকীগুলো ছিঁড়ে নামাচ্ছে। কেউ দেখছে না। আলো ঝলমল আমাদের পাড়ায় একটু দুরেই হুল্লোড় করছে কিছু ছেলে। আমি লকাইকে বললুম - কেন জড় করছিস এগুলো? কাল বেচে দিবি বলে? লকাই ফুল লোডেড থাকে সব সময়। কালও ছিল। কেঁদে ফেললো লকাই। বললো - কাকু, কাল এগুলো পা দিয়ে পাড়িয়েই সবাই যাবে। আমার দেশের ফেলাগের একটা দাম নেই। ... ...