মাওরী লোককথা অনুযায়ী আকাশপিতা রাঙি আর ধরিত্রীমাতা পাপার সন্তানেরা আমাদের খাবারের সংস্থান করেছেন, খাবার “উপহার” দিয়েছেন | তাঁদের আকাশরূপী সন্তান টানে আমাদের পাখী দিয়েছেন খাবার জন্য; সমুদ্র, আরেক সন্তান, যার নাম টাঙারোয়া, দিয়েছেন মাছ, হাউমিয়া দিয়েছেন জঙ্গলের বুনো খাবারদাবার, আর রঙো দিয়েছেন চাষবাস করে উৎপন্ন খাবার। সেকালে মাওরীরা প্রধানত তিন ভাবে রান্না করত, ঝলসে বা গ্রিল করে, সেদ্ধ করে, আর মাটির নীচে আগুণ জ্বালিয়ে উমু বা হাঙি পদ্ধতিতে। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো নামের একটি শহরে পৌঁছোন। ১০ ঘণ্টা ফেরি করে সেখানে পৌঁছে, একটি গির্জায় রাত কাটানোর বিবরণ এই কিস্তিতে। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার পথ। ছোট্টো এক জনপদের মানুষরা যাপন করছেন এক পরমাশ্চর্য গ্রাম্য জীবন। দারিদ্র্যের তাড়নায় বাধ্য হয়ে নয়, স্বেচ্ছায়। তাঁরা আমিশ খ্রিশ্চান। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ। তাঁরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন না। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রেন, প্লেনে চড়েন না। স্কুলে শেখেন না এ কালের শিক্ষা। পেনসিলভানিয়া প্রদেশের ল্যাঙ্কেস্টার কাউন্টি। বিরল এক মিউজিয়াম। বৈশাখী মিত্র ... ...
জাহাঙ্গিরি খিচড়ি বাংলায় প্রবেশ করে বিপ্লবের মুখোমুখি হল! তাতে এই প্রথম চাল পড়ল। দম পড়ল। এবং খুব সাবধানে আধুনিক রান্নার প্রথম অধ্যায়ে আলতো করে পা রাখায় ‘পরিমিত লঙ্কা’ পড়ল। আর আমরা জানলাম ‘খেচরান্ন’ এক ছোকরা শব্দ—অর্বাচিন সংস্কৃত, যার সঙ্গে খেচর বা পাখির কোনো সম্পর্ক নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
এই বাজারে গুরু নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ এক সামাজিক মাধ্যম। শারদ সংখ্যা পড়তে ঢুকে পড়ুন গুরুতে। আর বেরোবেননা। শরৎ থেকে বসন্ত, বইমেলা থেকে নববর্ষ, জমে উঠুক মোচ্ছব, নজরদারির বাইরে। গুরুর পাতায় পাতায়। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, প্রতিদিন অল্প কয়েকটি লেখা। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ... ...
শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন?শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন? ... ...
মিষ্টিমহলের আনাচাকানাচে ঘোরাঘুরিতে একটা জিনিস মনে হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টি বা মিষ্টান্নের প্রধান উপকরণ ছিল তিনটি। গুড়, দুধ আর ধান। গুড়ের সঙ্গেই ছিল শর্করা। মানে চিনি। এই চিনি কিন্তু এখনকার চিনির মতো নয়। তৈরি করাও বেশ শ্রমসাধ্য ছিল। দানা যুক্ত সার গুড় পাত্রে রেখে তার উপরে পাটা শ্যাওলা চাপা দেওয়া হত। সাত-আট দিনের মধ্যে চাপা দেওয়া গুড়ের উপরিভাগের কিছুটা অংশ চিনি হত। সেই চিনি তুলে নিয়ে বাকি গুড় আবার শ্যাওলা চাপা দিয়ে রাখতে হত। কয়েকদিন পরে বাকিটাও চিনি হত। এই চিনি শুধু খাওয়া হত। সেটাই ছিল মিষ্টি। নয়তো অন্য উপকরণ যোগে মিষ্টান্ন তৈরি হত। ... ...
কুড়ি বছর আগের ঘটনা সেটা, আমি তখন প্যারিসে থাকি। ল্যাটিন কোয়ার্টারে খুব ছোট্ট একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম তখন আমি। মোটামুটি দিন চলে যাবার মত উপার্জন ছিল আমার, একেবারেই বেশি কিছু না। আমার লেখা একটি বই পড়ে সেটি নিয়ে আমাকে উচ্ছ্বসিত চিঠি লিখেছিল সে, আমিও ভদ্রতাবশত ধন্যবাদ জানিয়ে তার উত্তর দিই। তারপরপরই আমি আবার একটা ফিরতি চিঠি পাই। তাতে লিখেছিল, ওই সময়েই প্যারিস হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে সে; এই সুযোগে আমাদের দেখা হয়ে গেলে খুবই খুশি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তার সময়েরও আবার খুব টানাটানি, পরের বৃহস্পতিবারে ছাড়া আর কোনোদিন সময় বের করা খুব মুশকিল হবে। তাই জানতে চেয়েছে সেই বৃহস্পতিবারেই আমি তাকে ফয়ট’স-এ লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করতে পারব কি না। ... ...
জীবনের সব লেনদেন মিটিয়ে মৃত্যুর মিছিল অনবরত যেখানে এসে থামে, সেই ‘উদ্ধারণপুরের বাতাসের সঙ্গে শ্মশান-ভস্মের মধুর মিতালি।... এপারে শিউড়ী, সাঁইথে, কাটোয়া কান্দী, ওপারে বেলডাঙা, বহরমপুর, লালগোলা, কৃষ্ণনগর -- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে উদ্ধারণপুরের চিতাভস্ম। নামে মানুষের মাথায়, নামে ক্ষেত মজুরের বুকে, নামে সকলের তৃষ্ণার জলের আধার দীঘি সরোবরে। মিশে যায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে। সবার কাছে চিতাভস্মের সাদর আহবান পৌঁছে দেয় উদ্ধারণপুরের বাতাস। কেউ টের পায় না কবে কখন উদ্ধারণপুরের অমোঘ আহবান এসে পৌঁছে গেল হৃৎপিণ্ডের মধ্যে। সেই নির্মম পরোয়ান অগ্রাহ্য করার শক্তি নেই কারও’। ... ...
মানুন না মানুন,আমরা সকলেই সংস্কারপন্থী। কেউ সু-এর আর কেউ কু-এর। আর পঞ্জিকা এই দুই-কেই ধারণ করে। সেই কাল থেকে এই কাল পর্যন্ত। বিজ্ঞাপন এই সংস্কারের বাহন। আমাদের জীবনযাপনের দৈনন্দিনতায় যে ওঠাপড়া ছড়িয়ে থাকে, তার হিসেব পাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য উপায় বিজ্ঞাপনসেবন। এতে শরীর ও মন স্বতঃই চাঙ্গা থাকে। অঙ্গে অঙ্গে রংমশাল জ্বলতে থাকে। কী ছিল বঙ্গে, তা কী হয়েছে এই অঙ্গে, এর এক সচিত্র ধারাবিবরণ বিজ্ঞাপন মারফত যেমন যেমন পাওয়া যায়, তেমন তেমন সাজিয়ে দিলাম। ... ...
বাঙালির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথম যে বিদেশীরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বর্ধিষ্ণু বাংলার বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে গ্রামে ব্যবসা করতে আসে, তারা হল পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা বাংলায় এসেছিল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তারও বছর কুড়ি আগে উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করে এদেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল ভাস্কো-ডা-গামা। যদিও এর অনেককাল আগে থেকেই বাংলার বণিকেরা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে। তা হলে বাঙালির ব্যবসার বিমুখতার কথাটা চালু হলো কবে? মোটামুটি ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কথাটার সূত্রপাত অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে। এর প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের কুচক্র। বাঙালি বণিকের জয় গান শোনা গিয়েছিল গুপ্ত যুগেরও আগে, ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকালে, অর্থাৎ ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়ে। সমুদ্রবন্দর তাম্রলিপ্তের রমরমা তারও আগে। কালিদাস, পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য, মনসামঙ্গল, কবিকঙ্কণ, ডাক ও খনার বচনে বাণিজ্যনিপুণ বাঙালির জয় গান শোনা গেছে। সবই তো আর কবির কল্পনা নয়। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, বাঙালি কোনোকালেই ব্যবসাবিমুখ, অলস বা ফাঁকিবাজ ছিলনা। ফা-হিয়েন এর লেখা থেকে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত থেকে ১৪ দিনের পথে সিংহল পৌঁছে যেত বাঙালি বণিকের দল। মুক্ত ব্যবসায়ী বণিকেরা, তেজপাতা পিপুল মসলিনের সওদাগরেরা এই বন্দর থেকেই বিদেশ রওনা হতেন। পান সুপারি ও নারকেলের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তখন থেকেই 'সোনার বাংলা' কথাটা চালু। সোনার বাংলা এমনি এমনি বিনা পরিশ্রমে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে বিদেশীরা বিনা কারণে আসেনি। ‘সোনার বাংলা’র কথা তারা জেনেছিল বাংলার বণিকদের কাছ থেকেই। ... ...
ভিড়ভাট্টা যে হয়না তা নয় তবে ‘উত্তেজিত মাতাল’ সবিশেষ আসে না। এদের অনুশাসন কড়া। আর চাট বলতে মিলবে শুধুই ফল। তবে এ স্থানটি সঙ্গীত মুখর। মূলত মহঃ রফির গানে এই ঠেক ভরে থাকে। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একটু পেছনো যাক। যদিও এ সব রচনা মাতলদের পদক্ষেপের মতোই। এগিয়ে পিছিয়ে চলে। একটা সময় খালাসিটোলায় আসতো জন। ফর্সা টুকটুকে চেহারা। নিজেই রফির গান গাইতো। সঙ্গে নাচতো। সে নাচ ছিল দেবদর্শন দুর্লভ। মাঝে মাঝে একটা অদ্ভুত বাংলা গান গাইত – ‘ আমার এল না এল শ্যাম/আমার হলো না মালা গাঁথা’। আর ছিল যাদব। গোটা ঠেকটা ঘুরে বেড়াতো। ... ...
পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকতম কোনো বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ে উঠবে, সেরকম আশা নেই। কিন্তু মূল বিষয়গুলো, যেমন লকডাউনের অভিজ্ঞতা, অর্থনীতির মন্দা, রোজগারের সমস্যা, কৃষকের সমস্যা এই ব্যাপারটা পশ্চিমবঙ্গেও মোটামুটি একই রকম। একইভাবে কৃষি বিলের প্রভাবও খুব আলাদা কিছু নয়। এইসব গুলোরই একটা সর্বভারতীয় চরিত্র আছে, যেমন সর্বভারতীয় শ্রমিক ধর্মঘটের আছে। এইসবগুলোকে যদি আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও একই রকম আলোড়ন তোলা সম্ভব। কেন্দ্রে বা রাজ্যে আলাদা সরকার থাকাটা এক্ষেত্রে সমস্যা নয়। সমস্যা হল, ২১শে রাম এবং ২৬শে বাম, এরকম একটা কথা ফিসফিস করে ছড়ানো হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই কোনো বামের মাথা থেকে বেরোয়নি, বুদ্ধিটা আরএসএস এর। কিন্তু কথাটা ছড়িয়ে গেছে। বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা বিভাজন তৈরির জন্যই ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, কৃষকদের নিয়ে, শ্রমিকদের নিয়ে, শিক্ষানীতি নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে আশা আছে। ... ...
ডাঃ বোস বেশ জোরের সঙ্গে বলেছেন যে গাঁজা টানেন এবং ভাং পান করেন কলকাতা শহরের জনসংখ্যার প্রায় একের আট ভাগ মানুষ। যে সমস্ত শ্রমজীবীরা হাড়ভাঙা খাটুনির ক্লান্তি দূর করতে গাঁজা-ভাং ব্যবহার করেন, কিংবা জলবহনকারী ভিস্তির দল ও বাড়ির চাকরেরা, তাঁদের প্রতি খুবই অবিচার হবে যদি তাঁদের গাঁজা- ভাং বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই কোনোরকমেই নিষেধাজ্ঞা একটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হতে পারেনা। শুধু যে এতে মদের ব্যবহার বেড়ে যাবে তাই নয়, রাজনৈতিক অসন্তোষও ধূমায়িত হতে পারে। তাঁর চিকিৎসক জীবনে তিনি মোট তিরিশটা ইন্স্যানিটির কেস দেখেছেন কিন্তু কোনোটারই কারণ গাঁজা-ভাং ব্যবহারের জন্য নয়। গাঁজা-ভাং ব্যবহারে উন্মাদ রোগ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন নি। ... ...