আমার মনে হয় ২০২০ দেখে আমরা বুঝতে পারি মানুষ ইচ্ছে করলে কঠিন সময়েও প্রায় সব কিছু করতে পারে। ... ...
টিয়েছানারা বিপদের হাত থেকে বাঁচলে কী হবে! বিপদে পড়েছে মধুমালতী নিজে। আশাপাশে যত পাখপাখালি আছে, যাদের ডিম ফুটে ছানা বেরনোর সময় হয়ে এলো বলে, তারা সব মশারির অর্ডার দিয়ে গেছে। বুলবুলি, ময়না, ফিঙে আরও কতজনা। মধুমালতীর আপত্তি নেই মশারি বুনতে, কিন্তু মুশকিল হল হাত তো মোটে আটটা। তাই দিয়ে কতই বা বুনবে সারা দিনমান। শুধু তাই নয় জাল বোনার সুতোতেও এবার টান পড়ছে। সুতো তৈরি করাও তো মুখের কথা নয়। ... ...
যখন উত্তরপাড়া স্টেশন এল আমি জানালা দিয়ে দেখলাম একটা লোক মাথায় হাঁড়ি করে ট্রেনে উঠছে। আমি ভাবতে লাগলাম এই হাঁড়ির মধ্যে কি খাবার আছে? ঠিক তখনই আমি শুনতে পেলাম লোকটা বলছে 'গরম ঘুগনি খাবে গরম ঘুগনি আছে'। এটা শুনে আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। ... ...
যত জোর ছুটতে পারে রাজু ছুটল, কিন্তু এক নুড়ির ওপর পা হড়কে পড়ে গেল। ডাইনোসর রাজুকে প্রায় চাপা দিয়ে দিচ্ছিল যখন…… ... ...
সুপ্রভাত। আমি মিনি। আমি একটা সাদা বেড়াল। ... ...
ছোটো থেকেই রবি আর শশী এমন করেই বড়ো হয়েছে। নিজেরাই জঙ্গলে ঘুরে খাবার জোগাড় করে, নিজেরাই রান্না করে আর বাবাকেও খাওয়ায়। কোনোদিন কিছু কিনতে গ্রামে গেলে সবাই কেমন থাকায়। ওরা বোঝে লোকে ওদের ভয় পায়। পছন্দ করে না একদম। ওরাও রেগে রেগে থাকে। শুধু বাবাকে ভালোবাসে। কারণ কোনো কোনোদিন বাবা ওদের সঙ্গে আদর করে কথা বলে। মায়ের কথা শোনায়। রবি আর শশী মায়ের কথা ভাবে আর ঘুমিয়ে পড়ে। ওদের কেউ নেই তো! ... ...
একদিন হঠাৎ তিতি জানালা দিয়ে দেখতে পেল ওদের পাশের বাড়ির বাগানের গাছপালা কাটার তোড়জোড় চলছে। তিতি খুব ভয় পেয়ে গেল...."জাম গাছটা কেটে ফেলা হবে না তো, ওখানে যে আমার পাখি বন্ধুরা থাকে।" এক ছুটে ও বাবার কাছে গিয়ে বলল, সেন কাকুদের বাড়ির বাগানের গাছ কাটা বন্ধ করতে বলার জন্য। বাবা তিতিকে অনেক বোঝালেন, কিন্তু কিছুতেই তিতির কান্না থামানো গেল না। ... ...
যেমন চিত্রণ-অলংকরণে, তেমনই ভাষার প্রয়োগে বৈচিত্র্যের অভাবিত-অপ্রত্যাশিত চমক সমগ্র বই জুড়ে অব্যাহত থাকে। মায়ামৃগবধের দৃশ্যে মায়াচরীদের নৃত্যসহ গীতে ‘সহসা আসি সহসা মিলাই/নয়ন ভুলায়ে মনেরে দুলাই/জাগায়ে দুরাশায় ডুবাই নিরাশায়—/হাওয়ায় হাওয়ায় সোনার ধূলার/ ঘূর্ণা বায়ে পায়ে পায়ে হারায়ে চলি—/নিরুদ্দেশে মরুমরিচীকা দলি নব নব সাজে/অভিনব দিনে রাতে—গহিন ছায়া রঙিন মায়াচরী’কুল আড়াল হয়ে যান পাণ্ডুলিপির পাতায় বন্ধ দরজার আগলে, আলতো বন্ধ দরজার পাল্লায় লেখা ফুটে ওঠে, ‘Behind Closed Doors Because...’ ... ...
বাংলার সমাজে জাতপাত ভিত্তিক উচ্চনীচ ভেদাভেদের বিরুদ্ধে চৈতন্যদেব যে এক বিপুল সাড়া জাগান আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন - এমনটাই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু কেমন ছিল চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব যাপন? গৌড়ীয় বৈষ্ণবমণ্ডলে কি অবহেলিত ছিলেন চৈতন্যদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী? ইত্যাকার নানা বিষয় চর্চিত একটি বই। পড়লেন অঞ্জন সেন ... ...
আনি আর্নো। এ সময়ে ফরাসি সাহিত্য-নক্ষত্রদের অন্যতম। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর আত্মজৈবনিক লেখাগুলি। তেমনই একটি বই ‘লেজ়ানে’, ‘বছরগুলো’। বিশ্ববন্দিত। পড়লেন পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মানেই কিছুটা আলো-আঁধারি ভাষা এবং স্মার্টনেস। এই-ই মোটামুটি বোঝাপড়া। আরেক ধাপ এগোলে বড়জোর রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরানা কমলকুমার মজুমদারের। আলোচনা মোটামুটি এই স্তরেই ঘোরাফেরা করে। কমলকুমারের ভাষাশৈলী নিয়ে রাঘব বন্দ্যোর কাজকর্মও সেই ভাবনাটিতেই জল-হাওয়া দেয় বটে। এই লেখা সেই ভাবনাধারা থেকে একটি ছেদ ঘটায়, অন্য আরেক চিন্তাভুবনে পাঠককে নিয়ে যেতে চায়। সে বৃত্তান্ত অন্য বটে, এবং অনন্যও। ... ...
ব্যাপার হল গিয়ে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে আমি তার কতটুকুই বা জানি! অথবা নিজেকে যদি এমনভাবে বোঝাই যে, আমিই একমাত্র জানি যে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে, তারপরও রাঘবের সাহিত্যে যা আছে, তা কিন্তু রাঘবের সাহিত্যেই থেকে যাবে। ... ...
ছক বহির্ভূত, নামবিহীন, সময়স্তব্ধ শূন্য কোনো পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাঘব? নাকি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ-বছর-মাস প্রভৃতি খোপে বদ্ধ কথার ভগ্নাংশ কুড়িয়ে, জুড়ে তাকে অসীম, মুক্ত ক্রমনির্মীয়মাণ পরিসরে স্থাপন করেছেন? কথা যেখানে অমর, সম্পৃক্ত, অবিনির্মিত, অনুক্ষণ! ... ...
জোছনার পিদিম জ্বলা দিগন্তে নির্জন পৃথিবী। তবু এই নির্জনতায় কেউ যেন কাউকে খোঁজে, বাতাসের কোট পরা অদৃশ্যমানতাকে জনে জনে জিজ্ঞেস করে। সবুজ লাউয়ের লতায় পেঁচানো কুঁড়েঘর হয়ে যায় নির্বাসিত এক গভীর দ্বীপ। আগত শীতের হিম আঙ্গুল ঘাড়ের দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। যেন ভয় নেই কোন, নেই আহত হওয়ার সতর্কতা, কোথাও কোন তিক্ততার আঁচড় ছাল ছিঁড়ে চিহ্ন রেখে যায় নাই- শুধু ভালবাসা আছে ঘাসে ঘাসে শিশির হয়ে, চাঁদের অপূর্ব দৃষ্টি হয়ে। এই বোধ নিয়ে জোনাকি উড়ে যায়, লক্ষ লক্ষ বরই ফুল হাসে পাতার ফাঁকে ফাঁকে, দূরে কোন অচেনা পাখি ডেকে ওঠে অচেনা মানুষের গাঁয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দার ভিতরে বাঁশি বাজিয়ে বসন্ত নড়েচড়ে ওঠে। ... ...
কুসুমপুরের ঝোপঝাড় জলশূন্য ডোবা, পুকুর পেরিয়ে দমকা একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়ে। এই মাঠ, কুসুমপুরের বিশাল ডাহি, সামান্য চড়াই উৎরাই, পাথুরে গেরুয়া ভূমি, মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ, দিগন্তে বিলীন এই বিশাল পৃথিবীতে আলো গাঢ় হয়ে আসছে। গাঢ় আলোর ভিতর কৃষ্ণবর্ণের মানুষ একা হাঁটছে; এখন এই রকম দৃশ্য। যেতে হবে বহুদূর। মাঠ পার হয়ে গাঁ পেরিয়ে জঙ্গল, সেই জঙ্গল পেরিয়ে আবার মাঠ জঙ্গল গ্রাম ডাহি এই রকমই তো পথ। কত বছর আগে এই গাঁয়ে এসেছিল বুড়ো তা আর স্মরণে থাকে না। সেই যে বার যুদ্ধের উড়োকল ভেঙে পড়েছিল নিশ্চিন্তার ওপারে তারও অনেক আগে। যুদ্ধের উড়াকল। হ্যাঁ। ঘড়ঘড় শব্দে সে আকাশে চোখ মেলে। মাথায় পাখা ঘুরিয়ে হেলিকপ্টার যাচ্ছে কলাইকুন্ডার দিকে। ... ...