আমি গেছি দূর মফঃস্বলে চাকরি করতে। তখন যা দিন, মোবাইল ফোন কেন সেই মফঃস্বলে ইলেকট্রিকের আলো ছিল না, পোস্ট অফিস ছিল না। চিঠি ফেলতে ভিন গাঁয়ে যেতে হত। চিঠি দিলে একমাস আগে কলকাতা পৌঁছত না। বাস থেকে নেমে এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে হত অফিস মানে হল্কা ক্যাম্পে পৌঁছতে, এমনই সে জায়গা। ছোটনাগপুরের মালভূমির লেজা সেই অঞ্চল। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের একটি কন্যা। বয়স তার আড়াই তিন। সে তার ঠাকমাকে বলল, ছেলেধরা নিয়ে গেছে বাবুজিকাকাকে। হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না। শিশু যা শোনে তাই বলে। তাকে যা বলে ভয় দেখান হয়, সেও তাই বলে ভয় দেখায় ঠাকমাকে। মা তখন পিতামহী। মায়ের ঘুম আসে না। ছুটিতে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করে মা রাধারানি, কী খাই, কেমন জায়গা। ডাল আলু সেদ্ধ আর কুঁদরি পোস্ত ? মাছ হয় না? মাংস ? সকাল বিকেল মুড়ি, কেন পরোটা লুচি করে দিতে পারে না ? জানেই না মা ওসব। আমাদের দেশটা আসলে খুব গরিব। গ্রামটা আরো গরিব। শুনতে শুনতে মা চুপ। বুঝতে চাইছিলেন দেশটাকে আমার চোখ দিয়ে। ধরা গলায় বললেন, তুই বরং চাকরি ছেড়ে দিয়ে আয়, অন্য কিছু দেখ। না, চাকরি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দেশটাকে আমি চিনতে পারছি দিনে দিনে। মা চুপ করে থাকলেন, অবশেষে বললেন, দেশ সব জায়গা থেকে চেনা যায়। জমি মাটি মানুষ না চিনলে বড় হওয়া যায় না। মা বলল, বড় হবি তুই ? কী করে, প্রমোশন কবে হবে ? প্রমোশন না মা, লিখতে চাই, গল্প লিখছি, শুনবে? আমি কী বুঝব, কিন্তু তুই যদি নিজে বুঝিস হচ্ছে, তবে ছাড়বিনে, ধরে রাখবি, ছাড়বিনে একদম। মন্ত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। ... ...
আমি খেজুর চাচার তাঁতঘর পাড় হয়ে থানার ঘাটের দিকে হাঁটা শুরু করি। তাঁতঘরে একজন দু'জন তাঁতী এরইমধ্যে চলে এসেছে। মাকুরের খটাস খটাস শব্দ সকালের বাতাসে কেমন উদ্দেশ্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি মনিপিসির জন্য আর দেরী করি না। দ্রুত হাঁটতে থাকি থানার ঘাটের দিকে, মনিপিসিটা কিচ্ছু বোঝে না। ডলি ফুপুদের বাড়ি থেকে গন্ধরাজ ফুল নিতে হবে তো আমার। কিন্তু থানা ঘাটের মোড় আসতেই মনিপিসি গলা চড়ায়, মনি ওদিকে না, আগে কলমি ফুল নিয়ে আসি চল্। আমি চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাই। উত্তরে শুধু মনিপিসিকে অনুসরণ করার ইঙ্গিত পাই। আমি পায়ে পায়ে থানা ঘাটের ঠিক পাড়ে এসে দাঁড়াই। ওটা নদী নাকী পুকুর আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ... ...
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট স্থানীয় মহিলাদের বেকিং কম্পিটিশন। তা নিউজিল্যাণ্ড বেকিং এর সবচেয়ে তুখোড় উদাহরণ পাভলোভা আর পাই। আমাদের যেমন রোল, পাটিসাপটা, সিঙারা, যাকে সাদা বাংলায় পথের খাবার বা স্ট্রীট ফুড বলা যেতে পারে, নিউজিল্যাণ্ডের স্ট্রীট ফুড বলতে যদি কিছুকে নির্দেশ করতে হয়, সে হবে পাই | যে কোন মাংস (বীফ, পর্ক, ল্যাম্ব, মুরগী, মাছ, মায় মেটে) এবং শাকসবজি আর মিশিয়ে রান্না করে পাইয়ের খোলের মধ্যে ভরে দিন; তারপর তার ওপরে চীজ কুরিয়ে বা কেটে পরতে পরতে রাখুন, এবার পাইয়ের ময়দার খোলের “ঢাকনা” বন্ধ করে দিন, বন্ধ করার পর ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে বেক করুন | পাই তৈরী। ... ...
১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরতে চলেছেন দুই তরুণ। এক জন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন — ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। এ পর্বে অর্থ সংগ্রহের কঠিন পরিশ্রমের কাহিনি। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো নামের একটি শহরে পৌঁছোনো। সে শহরে পৌঁছে পাক্কা পনেরো দিন বসে আছেন অভিযানের জন্য মাল বওয়ার কুলি জোগাড়ের চেষ্টায়। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায়। ... ...
বাংলা রন্ধনশিল্পের যুগপুরুষ বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ‘পরিমিত’ লঙ্কা নিয়ে সুপ্রাচীন খিচুড়ি প্রবেশ করল বঙ্গীয় রেনেসাঁস-এর যুগে। কিন্তু বঙ্গীয় রেনেসাঁসের কালে রসনা-বিলাসের শ্রেষ্ঠ ফসলে নেই জাহাঙ্গিরি খিচুড়ি বলে কিচ্ছুটি। ঊনবিংশ শতকের শেষে ডুব মেরে একশো বছর পরে এক বঙ্গীয় জমিদারি হেঁশেল ফের ভেসে উঠল সেলিম বাদশার নামাঙ্কিত এই আশ্চর্য খানা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে। ... ...
শুধু পাহাড়গুলো চাষের আওতায় আনলেই চলবে না, সব ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলতে হবে, কেননা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। কেননা সেখানে স্থান নেয় নানান বুনো জানোয়ার। এই প্রাণীরা ফসলে ভাগ বসায়, কিংবা মাংসাশী হলে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপরই হামলা চালায়। পাহাড়ে কোনো বুনো প্রাণীর প্রাকৃতিক আশ্রয় থাকা চলবে না। পাহাড়ের মতোই সেই একই ভাবনার নমুনাই আমরা দেখতে পাবো উপকূলীয় অরণ্যের বেলাতেও। উপকূলীয় এই শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদেরা এমনিতেও তখন মারা পড়ছে খাড়ি দিয়ে আসা জোয়ারের লোনা জল বন্ধ করায়, কিন্তু যেটুকু বাকি আছে, সেগুলোও কেটে ফেলার তাগিদ দিচ্ছেন বুখানন। এভাবেই ৯ এপ্রিলের ভুক্তিতে রামুর উপকূলে গজিয়ে ওঠা 'অপ্রয়োজনীয়' সুন্দরী গাছদের জন্যও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বুখানন, নোনা জোয়ারের আগমনে সেগুলোর একটা বড় অংশের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করছেন ... ...
মধ্যমানের ও তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ কর্মী নেওয়ার একটা বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। তা কম খরচসাপেক্ষ। একটু কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করা এবং নির্ভুল হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা না-রাখা, অনেকটা খরচ বাঁচায়। এর ফলে অত্যুচ্চপদস্থ উপরওয়ালা, কম লগ্নির মাধ্যমে আরও একটি আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দিয়ে তস্য উপরওয়ালার সুনজরে থাকতে পারেন এবং নিজস্ব উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার রক্ষাকবচ বজায় রাখতে পারেন। আরও একটি দৈনন্দিন সুবিধাও এর ফলে ঘটে। কম দক্ষতাসম্পন্নরা অনেক বেশি ইয়েস ম্যান গোত্রের হয়ে থাকেন। তাঁদের তর্ক করার প্রবণতা কম থাকে, যে তর্ক একদা নিউজরুমকে জাগরূক রাখত। ... ...
ফ্রম আলপিন টু আল কায়দা – বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধ ফাঁদতে ঘুরে-ফিরে আসতে লাগল সম্পাদকের পছন্দের তালিকায় থাকা একই নাম। ফলে অধিকারীভেদ রইল না, বই কিংবা উইকি-টোকা রচনায় মৌলিকতা পৌঁছোল তলানিতে। লেখক-সম্পাদক ভাই-ভাই হয়ে উঠল আর বিনা বাক্যব্যয়ে লেখা আসামাত্রই চলে গেল কম্পোজে, সামান্যতম কাটাছেঁড়া ছাড়াই। কফির টেবিলে তুফান উঠল না, উঁকি দিয়ে গেল না সারস্বত মতান্তরের লেশমাত্র। কেবল অধ্যাপকের চাঁদমারি হয়ে প্রচ্ছদে আইএসএসএন আর ভিতরে আমাদের নাম ছাপা হতে থাকল ঈষৎ বড়ো পয়েন্টে, সম্পাদক হিসেবে। ... ...
সর্বভারতীয় বলে পরিচিত যে ইংরেজি কাগজগুলো, সেগুলোর শিরোনামে প্রায়শই হিন্দি শব্দ/শব্দবন্ধ নিয়ে খেলা লক্ষ্য করা যায়, রোমান হরফে পুরোপুরি হিন্দি শিরোনামও দেখা যায়। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ২০১০ এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এন ডি এ জোট জয়ী হওয়ার পর ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর শিরোনাম ছিল ‘Rajnitish’। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ র পাতায় অভিনেত্রী জেসি রনধাওয়া সম্বন্ধে প্রতিবেদনে ‘Jesse jaisi koi nahin’ শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে। স্পষ্টতই এইসব কাগজের হিন্দিভাষী সম্পাদকরা ধরে নেন যে পাঠকের মাতৃভাষা হিন্দি নয়, সে-ও হিন্দি বোঝে। বাংলা, ওড়িশা বা দক্ষিণ ভারতের পাঠকদের অসুবিধার কথা ভাবা হয় না। ... ...
বই ছাপতে গেলে প্রথমে কী লাগে? বা কী কী লাগে? মাল মানে অর্থ লাগে, লগ্নি লাগে – তার পর তো অন্য কথা। অর্থাৎ একজন ইনভেস্টর চাই – কিন্তু তাঁকে তো ইনভেস্ট করিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া যায় না – সুতরাং…। তাহলে দাঁড়াচ্ছে, একজন গাইড করার লোক চাই, এবং সেই মালটিই আসল মাল যে মাল এনে দেওয়ার রাস্তা দেখাবে। হ্যাঁ, ইনিই হলেন এডিটর বা সম্পাদক – আসলে দুকান কাটা এবং চার অক্ষর। ... ...
আলমুদেনা গ্রান্দেস। দীর্ঘ স্বৈরাচার থেকে সদ্যমুক্ত স্পেনের সাহিত্যে ঘটিয়েছিলেন নারীদৃষ্টিকোণের বিস্ফোরণ। ‘লুলুর নানা বয়স’ নামক উপন্যাসে। সমালোচক ও সাধারণ পাঠক উভয়েরই সমাদৃত এই লেখক। বহু পুরস্কারে ভূষিত। তাঁর লেখালিখিতে মেলে সাহিত্যিক বেনিতো গালদেস ও ডেনিয়েল ডেফো এবং চলচ্চিত্রকার লুই বুনুয়েলের ছায়া। লিখছেন জয়া চৌধুরী ... ...
সতেরোটি গল্প। প্রাতিষ্ঠানিক খ্যাতির প্রসাদধন্য নয়। কিন্তু প্রত্যেকটি কাহিনিই লেখকই তার নিজস্ব বাকশৈলী ও বক্তব্যের গুরুত্বে গভীরে নাড়া দিয়ে যায় পাঠকমন। বিস্মৃতির গর্ভে লুপ্ত হওয়া থেকে এগুলিকে উদ্ধার করে উপযুক্ত সম্পাদনায় গ্রন্থবদ্ধ করেছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র। পড়লেন লেখক বিপুল দাস ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। প্রথম দুটি লিখেছেন রন্তিদেব। তৃতীয়টি লিখেছেন নবকুমার ... ...
আরও কুড়িটা নাম। এবারও নিমাই বাদ। কুড়িবার যেন ছুরি মারল কেউ। নিমাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল ধ্রুপদী। বেশ ভালোই প্রাপ্য জুটছে তার। অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, নির্বিকারভাবে তাকিয়ে রয়েছে মঞ্চের দিকে। ধ্রুপদী আগেই জানত। তবু একদম নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। দেশের পঁচিশজন তরুণ অভিনয়-প্রতিভার নাম! অথচ কোথাও নিমাই নেই! অচ্যুৎ সবার প্রথমে। এত এত সাধনা। কোনো স্বীকৃতি নেই তার? নিমাইয়ের পাণ্ডিত্যের কোনো শেষ নেই। ত্যাগ ও মগ্নতারও। অবিরাম তার সাধনা! এ দেশে তাহলে সাধনার জায়গা কোথায়? আস্তাকুঁড়ে? দেশের সেরা প্রতিভাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিলে সেই দেশের নিজেরও আস্তাকুঁড় হতে বেশি সময় লাগে না! জোরে চেঁচিয়ে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করল ধ্রুপদীর। নিমাইয়ের জন্য নয়। নিজের জন্য। তার নিজের হাত-পা কেউ যেন বেঁধে দিয়েছে। কে সে? ফিসফিস করে নিজেকেই শোনালো ধ্রুপদী, নিয়তি! ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
মধ্য হাওড়ার এই অঞ্চলটিতে এক কামরার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক। বেশির ভাগই কিঙ্করদের মতো দেশভাগতাড়িত, কিন্তু কিছু কিছু এমন পরিবারও আছে যারা হাওড়া-হুগলি-মেদনিপুরের গ্রাম থেকে আসা। এদের অল্প-স্বল্প জমিজমা আছে, এক সময় হয়তো বেশিই ছিল, কমতে কমতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে জমির আয়ে সংসার এখন আর চলবার মতো নয়। গ্রামের এই নিম্নবিত্ত ভদ্রলোকশ্রেণীর মানুষরা এখন শহরে ছোটখাটো চাকরি-বাকরি করে, তাদের আর্থিক সামর্থে ছোট কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাড়ি বা অধুনা গজিয়ে-ওঠা কোন ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া চলে না, অতএব বাঙাল-রিফিউজিদের সঙ্গে ঝগড়া-সমঝোতা করে ভদ্রলোকদের জন্যে চিহ্ণিত নাগরিক দোতলা-তিনতলা পাকাবস্তিই এদেরও আবাসস্থল। ... ...
আমি একটি গল্প লিখে নিয়ে নকুলদাদের কাছে গেলাম। নকুলদার বস্তিবাড়িতে রবিবার সকালে সাহিত্যের আড্ডা হত। সেই আড্ডায় একদিন সুবিমল মিশ্র এলেন। দুটি গল্প শোনালেন। আমি শিহরিত। তখন তাঁর হারাণ মাঝির মড়া… প্রকাশিত হয়েছে একাল প্রকাশনীর বই হিশেবে। একালের আড্ডায় আর আসতেন গল্পকার, ডাক্তারির ছাত্র কৃষ্ণ মণ্ডল, দিলীপ সেনগুপ্ত, অজু মুখোপাধ্যায়, যিশু চৌধুরী, আমার স্কুলের বন্ধু রণজিৎ দত্ত এবং অতি নবীন লেখক তপনজ্যোতি মিত্র। রণজিৎ এবং তপনজ্যোতি যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত। এই সময়ে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। কিছুই হয়নি এখন বুঝি। সেই গল্প ছাপাও হয়নি। এরপর ‘একটি আত্মহত্যার বিবরণ’। সেই গল্প অনেকের পছন্দ হয়েছিল। ছাপা হলো একাল পত্রিকায়। ... ...
আগের পর্বের আলোচনাটা অনেক বেশী দিল্লী-কেন্দ্রিক ছিল। এই পর্বে বিজাপুর, লক্ষ্ণৌ এবং মাইসোরের আলোচনা হল। এবার বলব বাংলার কথা। অর্থনৈতিকভাবে মুঘলযুগে বাংলার বিশেষ স্থান ছিল, কিন্তু যে কারণেই হোক, বাংলায় খুব আড়ম্বরপূর্ণ সমাধি নেই। বাংলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধিসৌধ হল ত্রিবেণীর জাফর খাঁ গাজী মসজিদ, মালদহের একলাখি সমাধিসৌধ আর ফতে খাঁর সমাধিসৌধ, এবং মুর্শিদাবাদের আজিমুন্নিসা বেগমের সমাধি। এর মধ্যে প্রথম দুটি সুলতানি যুগের, শেষের দুটি মুঘল বা মুঘল-পরবর্তী যুগের। প্রথমটি সমাধির থেকেও দরগা এবং মসজিদ হিসাবে বেশী পরিদৃষ্ট হয়। দিল্লীতে আমরা যেরকম দেখেছি, বাংলায়ও একইরকম বিবর্তন দেখা যায়। ... ...