আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন। এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না। ... ...
কবিতার সঙ্গে আপোষহীন এই মানুষটিকে তাই পড়তেই হবে বর্তমান এবং উত্তর প্রজন্মকে। নিন্দিত এবং নন্দিত হওয়া যেকোনো সৃজনশীল মানুষের যাত্রাপথের পাথেয়, কেউ হয়তো ইচ্ছে করেও অধিক আলোচিত হওয়ার জন্য নিজেকে নিন্দিত এবং সমালোচিত হতে দেন, এসময়টা তখনই আসে যখন সৃজনশীলতার গতিপথে সামান্য ছায়া ঘনিয়ে ওঠে, একজন কবির কাছে এই সময়টা হলো সবচেয়ে কঠিন এবং অন্ধকারতম সময়। কোনো কোনো কবি তখন স্তব্ধ থাকেন, সরিয়ে রাখেন নিজেকে, কেউ বা অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠেন, সমস্ত বিষয়েই আক্রমনাত্মক বিচ্ছুরণ, কবিতা তখন শ্লেষ, বিদ্রুপ এবং কবির স্বভাবগত তীক্ষ্ণ মেধা ও শব্দের ওপর আসুরিক ও ঐশ্বরিক দখলে এক একটি যন্ত্রণাদায়ক উল্কির মতো বিঁধতে থাকে পাঠককে, এই চলমান সময়ে কবি প্রবুদ্ধসুন্দরের লেখাকে আমার তাই মনে হয়েছে। ... ...
এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা। ... ...
আর সেই বন্ধুত্ব অটুট ছিল বলেই ১৯৭০-এর দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে, আমেরিকায় ভিয়েতনাম যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন থেকে যে বিপুল লেখাপত্তর উঠে আসছিল, তার সঙ্গে আমায় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল মানবই। আমি তো তখন একেবারে মূলধারার ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলাম। আর মানব কোনোদিন মেনস্ট্রিম ছিল না। মানব আমাকে, মিকিকে আর তিন্নিকে শত শত বই কিনে দিয়েছে। এই সম্পর্কটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকবে কিন্তু এটাই মানবের সঙ্গে ছিল শেষদিন পর্যন্ত। আসলে সেসময়টাও অদ্ভুত ছিল—সেই সত্তরের দশক। চারপাশে আন্দোলন, বিরাট নারী-মু্ক্তি আন্দোলন হচ্ছে। সেসময় আমি আর মানব দুজনেই বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম যে একটা কাগজ দিয়ে কোনো সম্পর্ক নির্ধারণ করা যায় না। আমরা সকলে একটা স্লোগান খুব ব্যবহার করতাম— The personal is political। ... ...
রসানবিদ্যায় অবদানের জন্য এ বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন দুই নারী-বিজ্ঞানী জেনিফার ডাউডনা এবং ইমানুয়েল শারপেনতিয়ের। জিন-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁদের আবিষ্কারে অবিশ্বাস্য রকম কম খরচে কঠিন রোগ সারানোর দরজা খুলে যেতে পারে। লিখছেন ‘ফিটাল মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। ... ...
অজিত যে শুধু গল্প-উপন্যাসই লিখেছে তা নয়। ওর গবেষণা মূলক কাজগুলোও স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে এবং যে জন্য বিপদের মুখেও পড়তে হয়েছিল ওকে। মলয় রায় চৌধুরী অজিতের গদ্য নিয়ে বলেছিলেন, "অজিত রায়ের গদ্য অসাধারণ। জীবিতরা কেউ ওর ধারে-কাছে যায় না।" আমি বিশ্বাস করি। ... ...
যা ছিল হাহাকার থেকে উদ্ভূত এক বিরাট অনুভূতি-স্থল, দেশপ্রেমের চরম নিশান, তা হয়ে গেল 'বাগান', প্রমোদ-উদ্যান না হলেও ভ্রমণবিলাসীর রম্য কানন! তবে কি পাঞ্জাবেরই একার দায় ইতিহাসের এই রক্ত দিয়ে লেখা অধ্যায়কে অটুট রাখবার? দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তে কিষাণ কিষাণীরা উধম সিং-এর ছবি-আঁকা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করেন আর আমরা দলে দলে ছুটি ওয়াগা বর্ডারে, যেখানে দু দেশের ইউনিফর্ম পরা সৈনিকের দল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের মতো বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোজ অবনমিত করে যার যার দেশের পতাকা। প্রবল করতালি, হাজার মোবাইলের ঝলকে শেষ হয় সেই বিচিত্র নাচনকোঁদন, নকল দেশপ্রেমের উচ্ছাসে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে। অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের ভ্রমণ সূচিতে কদাচিৎ থাকে, ঘরের শিশুটিকে কখনও বলি না উধম সিং, ভগত সিং-এর কাহিনি! এই সত্যিকারের শহিদ-এ-আজমদের ভুলে গিয়ে নির্মাণ হতে থাকে নতুন শহিদ, ব্রিটিশের কাছে লেখা মুচলেকাকে কার্পেটের নীচে ঠেলে দিয়ে শহিদত্ব আরোপকে নতমস্তকে মেনে নিই। এইখানে, এই পরিস্থিতিতে আলোচ্য বইটির গুরুত্ব অসীম। খুবই সুলিখিত, অজস্র সাদা কালো ছবিতে সাজানো বইটি হাত ধরে আমাদের নিয়ে যায় সঠিক ইতিহাসের কাছে, সেই অর্থে সত্যেরও কাছাকাছি। ... ...
মানুষ আসলে বড্ডই বিভ্রান্ত। সে চায় তার জীবন হবে চেনা ছকের, পরিচিত গন্তব্যের। দিনযাপন চলবে প্রত্যাশিত ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করেই; নিশ্চিন্ততার অভিমুখ বরাবর। অথচ অপ্রত্যাশিতের উপর তার ভীষণ লোভ। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও বাধ্য গণ্ডির মধ্যে সে যেমন দাপিয়ে বেড়াতে চায় নিজ ঐশ্বর্যে, আবার তেমনি নতুন এবং অপরিচিতের প্রতিও তার জন্মান্তরের ছোঁকছোঁকানি। মানুষ চায় তার প্রেডিক্টেবল জীবনে মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার মত এক ঝলক আনপ্রেডিক্টেবিলিটি ঢুকে তাকে কাঁচা সুখ দিয়ে যাক। বিপদ বাঁচিয়ে সে চেখে নেবে স্বাদ, দুলিয়ে নেবে ভিতর বাহির। আপাদমস্তক রোমাঞ্চ জাগিয়ে তারপর না হয় দিব্যি ঢুকে পড়া যাবে নিশ্চিন্ততার চিরকেলে আস্তানায়। ... ...
কিন্তু আমার যাদবপুরে এম.এ. পড়তে আসাই হত না যদি না সেই গ্রীষ্মশেষের বিকেলে, কফিহাউসে গিয়ে টেবিল দখলের আগে, প্রেসিডেন্সির সিড়ির তলায় অপেক্ষারত প্রদ্যুম্ন ও আমার কাছে রীতিমত উদয় হয়ে, মানব বার্তা দিত, শহরে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বসেছে এবং তাতে তুলনামূলক সাহিত্য নামে এক নূতন বিদ্যা চালু হচ্ছে। আমাদের অনার্সের ফল বেরিয়ে গেছে, আমরা স্নাতকোত্তরের দরজায়। মানব জানাল, সে কলকাতায় বাংলা না পড়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য পড়বে। সেই বিভাগের প্রধান, বুদ্ধদেব বসুকে সে চেনে; তিনি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ... ...
এই বই লেখা শেষ করে প্রকাশকের কাছে জমা দেবার সময় রুশদি অবশ্য জানতেন না এর বেশ কিছু মাস পরে তাঁকেও এক ধর্মান্ধের আক্রমণে একটি চোখ হারাতে হবে। এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে আমার এর লিঙ্গ রাজনীতির পরিব্যাপ্তি। পম্পা কম্পনার সৃষ্ট রাজ্যে মেয়েরা প্রচলিত সামাজিক নিয়মে লিঙ্গ নির্ধারিত ভূমিকায় বাঁধা নয়, তারা কবি কিম্বা শ্রমিক, শিল্পী কিম্বা উকীল, চিকিৎসক কিম্বা যোদ্ধা বেছে নিতে পারে যে কোন পেশা তাদের ইচ্ছেমত। সিংহাসনে মেয়েদের উত্তরাধিকারের চেষ্টা করতে গিয়েই সর্বস্ব খুইয়ে প্রাণ হাতে করে অজ্ঞাতবাসে যেতে হয় নিজের তিন মেয়েকে নিয়ে, তবু সেই সমানাধিকারের স্বপ্ন ছাড়ে না সে। ... ...
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, কোনও আন্দোলন অহিংস না সহিংস হবে – এই প্রশ্ন অবান্তর। হিংসা তো সর্বত্র, সর্বব্যাপী; রাষ্ট্র তো সামান্য অজুহাতে নিরীহ, অসহায় নাগরিকদের দমন-পীড়ন করে, গুলি চালায়, হত্যা করে। আসল ব্যাপারটা হল, ‘কীভাবে’ জিততে হবে। তিনি কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ উত্থাপন করেন, কীভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রকে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম্যুনিস্টরা কোনদিনও এসব নিয়ে ভাবেনি। তারা ভীষণ গোঁড়া, সংকীর্ণমনা, উদ্ভাবনী চিন্তাকে আমল দেয় না; বাস্তবে কোনও নতুন চিন্তাকে নেতৃত্ব বিপজ্জনক মনে করে এবং সেই ব্যক্তিকে দলে টার্গেট করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র কথা ধরা যাক। তত্ত্বগতভাবে এর থেকে বেশি গণতান্ত্রিক কিছু হয় না, কিন্তু বাস্তবে নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের খুশি মত যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ... ...
কোভিড-এর আক্রমণে সবই যখন সামাজিক দূরত্বের বিধানে অসম্বদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখনই একদিন অনেকদিন পর হঠাৎ মনে পড়ল, ফাদার রোবের্জ-এর খোঁজ পাইনি অনেকদিন। ফোনে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম, উনি দীর্ঘদিন অসুস্থ, ঘরবন্দি! তারপর বুধবার সকালে (২৬ অগাস্ট, ২০২০) মৃত্যুসংবাদ! ... ...
হেরিটেজ ওয়াকে দেখানো হয় না এই কলকাতা। কলকাতা-বিশেষজ্ঞ কলমচিদের অধিকাংশ কেতাবের গালভরা গল্পে এ কলকাতা অনুপস্থিত। শহরের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সৌন্দর্যের যুক্তিতে এ কলকাতার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন, যেমনটা দেখিয়েছিল ‘অপারেশন সানশাইন’। এ কলকাতা বাস করে ফুটপাথে। গৃহহীনদের কলকাতা। ভিখিরিদের হোটেলের কলকাতা। জঞ্জাল-কুড়ুনি শিশুদের কলকাতা। রাস্তায় দাঁড়ানো গণিকার কলকাতা… একটি বই। পড়লেন শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য। ... ...
বিতর্ক আর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই ত্রয়ীর নাম ডেভিড কার্ড, জশুয়া আনগ্রিস্ট এবং গিডো ইম্বেন্স। পুরস্কারের অর্ধেক কার্ডের এবং অর্ধেক বাকি দুজনের। এঁদের কর্মক্ষেত্র যথাক্রমে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলে, এম আই টি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। একাডেমির বিবৃতিতে বলা হয়েছে এঁদের বিশেষ অবদান যথাক্রমে শ্রম বিষয়ক অর্থনীতি (labour economics) ও কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের পদ্ধতিতে (analysis of causal relationships)। তিনজনেই করেন পরিসংখ্যান (data) ভিত্তিক গবেষণা (empirical research)। চারপাশের দৈনন্দিন ঘটনাবলী আসলে একেকটি স্বাভাবিক পরীক্ষা (natural experiment)। তাকে বুঝতে হলে এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে তার কারণ ও ফল বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ... ...
চরের মানুষের জীবন সংগ্রামের এই গল্প জাদু-বাস্তবের ঘরানা অনুসারী না বাস্তবতা-নির্ভর তা তর্কযোগ্য। কিন্তু এই উপাখ্যানে অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীসত্তার প্রাধান্য, জল জঙ্গম ও মানবমনের রক্ষাকর্ত্রী নারীশক্তির উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠা। অমর মিত্রের ধনপতির চর, পড়লেন প্রতিভা সরকার। ... ...
জাঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিও। নোবেলজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক। কিন্তু হৃদয়ে তাঁর আফ্রিকা। নিরন্তর লিখেছেন আফ্রিকান নানা জনগোষ্ঠীর ওপর ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির মর্মান্তিক হামলার কথা। সংশয় প্রকাশ করেছেন ইওরোপীয় সংস্কৃতির মূল্য নিয়েই। আত্মজৈবনিক একটি প্রবন্ধসংকলন। পড়লেন পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের (ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে। ... ...
লীলা মজুমদার অথবা নবনীতা দেবসেন নাকী দুজনেরই প্রভাব আছে তোমার লেখায়- এই সব নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু, এই যে আমরা- আমরা তো তোমার লেখায় মায়া খুঁজতে এসেছি- একটা ট্যামটেমি, সবুজ স্যুটকেস, নীল ওড়না, নবমীর চাঁদের আলোয় দুর্যোধন আর চিত্রাঙ্গদার ছায়া টায়া নিয়ে ফিরে গেছি। তারপর আপিস গিয়ে সারাদিন গুনগুন করেছি- 'নেড়ুমুন্ডে নতুন পাতা, বেরুচ্ছেন, বেরুচ্ছেন'। প্রভাব ট্রভাব নিয়ে আর তো ভাবিই নি। ... ...
সূর্য দীঘল বাড়ি। যে আয়তাকার বাড়ির দুই সমান্তরাল দীর্ঘ বাহু পূব থেকে পশ্চিমে টানা। এই ধরণের বাড়িতে থাকে স্থায়ী অমঙ্গলের ছায়া। এখানে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না, নইলে নির্বংশ হয়। এইখানটায় এসে আমি থমকে যাই। জীবনে একটাই বাড়ি বানিয়েছিলাম – আরে সেটাও তো ছিল এক সূর্য দীঘল বাড়ি! সে বাড়িতে কতদিন ছিলাম? মাত্র দশ বছর। আমার পেছনের আরেক সূর্য দীঘল বাড়িতে দুই ছেলে মারা যাওয়ায় বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। কেনে আমার পরিচিত এক উদীয়মান কবি। একবছরের মধ্যে মারা যায় রক্তবমি হয়ে। তবে কী - ! ... ...
জেম্স র্যান্ডি। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। পেশায় দুরন্ত জাদুকর, ম্যাজিশিয়ান। হুডিনি-র একটি রেকর্ড ভেঙেছিলেন। কিন্তু নেশায় ও মননে ছিলেন জ্যোতিষী, সাইকিক ইত্যাকার অলৌকিক শক্তির দাবিদারদের বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। এরিক ফন দানিকেন থেকে উরি গেলার পর্যন্ত বহু বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়ে লিখেছেন একাধিক বই। সেগুলির মধ্যে একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম—ফ্লিম-ফ্ল্যাম! পড়লেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান পরিষদের সচিব, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...