শিশিরকুমার দাশ। বহুধা প্রবাহিত তাঁর সাহিত্য-প্রতিভা— ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসচর্চার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম, এ দেশে তুলনামূলক সাহিত্যচর্চার দিশারিদের একজন, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যস্রষ্টা, সম্পাদক এবং তরজমাকার। তিনটি গ্রিক নাটকের তাঁর করা তরজমা অনুবাদকলার উজ্জ্বল নিদর্শন। ফিরে পড়লেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অমিয় দেব। ... ...
কুমু নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা করতে খুব পছন্দ করতো। নিজের বয়স বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতো, নিজের ওজনও। সবেতেই হাসিখুসি। ওর লেখা ওর ছোটোবেলার চোরের গল্পটা তো বাংলা সাহিত্যেরই একটা সম্পদ। হ্যাঁ, শুধু ভাটের মধ্য দিয়েই নয়। দু বার দেখাও হয়েছে। একবার ব্যাংগালোরে। কল্লোলের বাড়িতে বিরাট আড্ডায় কুমুদিনি এলেন এক প্লেট ফিস ফ্রাই নিয়ে। নিমেষে ফর্সা। আরেকবার, লাস্ট বার বইমেলায়। শ্যামল আর কুমু। শ্যামলের সাথে প্রথম মোলাকাত। কিন্তু আমি তো শ্যামলকে চিনি। কুমুর সাথে বিয়ের আগের থেকেই চিনি। সবই কুমুর ঘরোয়া লেখার কল্যাণে। তাই আলাপ থেকে আড্ডা- সেটা নিমেষেই হয়ে যায়, রেসিং কারের মতন। কতোজনের সাক্ষাত হলো। অনেক গল্প গুজব হলো। তারপরে বাড়ি ফেরার পালা। তারপরে বাড়ি ফেরার পালা। "আবার দেখা হবে" - এই রকমই অঙ্গীকার ছিলো। ... ...
সে হল এক ভীষণ বচসা। ভোরের খোঁজে পাখিরা ঘুমের থেকে উঠে উড়বার তোড়জোড় করছিল, আবার নিজের নিজের বাসায় গিয়ে ডানা গুটিয়ে ঘাপটি দিল। রাতের শেষে যে ক’জন মাতাল পথের ধুলায় লুটিয়ে পড়েছিল, অসময়ে খোঁয়ারি ভেঙে গালিগালাজ করতে করতে বাড়ির পথ ধরল। টেন্ডারলয়েনের মাথার উপর দিয়ে যাওয়া সেই সকালের রেল কেন যে মাঝপথে আটকে গেল, নিউ ইয়র্ক হেরাল্ডের তাবড় সাংবাদিক কিছুতেই সেটার হদিশ করতে পারল না। আমান্ডা গোল থামাতে মাঝখানে এসে পড়েছিল, আন্তোনিওর দাবড়ানিতে ছাদের থেকে মাকড়সার মত ঝুলে রইল। সেই দুই ষণ্ডা জোয়ান রুথের দুহাত ধরে চ্যাংদোলা করে আন্তোনিওর ঘরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, রুথের চোখের আগুনের গোলায় ওখানেই কাটা সৈনিক হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। ... ...
আচ্ছা জেঠিমা, আমরা তিনজন যে মোহনবাগানের মেয়ে হলাম, সেটা কি ধোপে টিকবে? কেন? টিকবে না কেন? আমরা যে খুব ইলিশ খাই। তাতে কী? মোহনবাগানীরাও ইলিশ খায়, ইস্টবেঙ্গলীরাও চিংড়ি খায়। তাতে ভালবাসা কমে না। লাবণ্যর হাতের একটা রেসিপি করতে পারি, খাবি? কৃষ্ণার কাছে শিখেছি, কাঁচা ইলিশের ঝাল। মা, রান্নাটা কিন্তু দেখব, কীভাবে কর। কুমুদিনী-লাবণ্য-কৃষ্ণা-শারদা – আর একটা নাম জুড়ে যাবে রঞ্জাবতী। মানুষ থাকবে না, রান্নার ঘরানা চলতে থাকবে। কাল কাঁচা ইলিশের ঝাল করলে পরশু ডাব চিংড়ি করবে জেঠিমা। ঠিক হ্যায়, করতেই হবে। আজ ইস্টবেঙ্গলী ইলিশ রান্না হলে কাল তো মোহনবাগানী চিংড়ি রান্না হতেই হবে। তাহলে আমি ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিচ্ছি, কাল, পরশু বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের নামে ফুটবল – খাদ্য উৎসব হবে, অরগানাইজড বাই আওয়ার টু প্রিন্সেসেস। ... ...
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন চর্চায় আমরা বারবারই এই প্রশ্ন তুলি, যে দেশভাগ কি এড়ানো যেত না ? তা কি অবশ্যম্ভাবী ছিল ? কীভাবে এড়ানো যেতে পারত দেশভাগ তার উত্তর দিতে গিয়ে নানাজনে নানা কথা বলেন। সম্প্রীতি উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে দৃঢ় করার চেষ্টা থেকে ফেডারেল কাঠামোর কথা ভাবা – নানা প্রসঙ্গই সেখানে আসে। দেশভাগ যে দাঙ্গা, ভিটে ছেড়ে যন্ত্রণাযাত্রা আর উদ্বাস্তু জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত – তা আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, সিনেমা সহ নানা সাংস্কৃতিক পরিসরে উঠে এসেছে। আমরা এখন পড়তে চাইছি এরকম কিছু বইয়ের পাঠ, যা দেশভাগকে নানা দিক থেকে দেখেছে। ... ...
আমি ভিখারীর মতো হাত পেতে দাঁড়াই। দয়াপরবশ হয়ে একটা দু'টো টুকরো যদি কখনও ভেসে ওঠে! কখনও জাগর চোখে তার অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করি। কিন্তু আসে কি! অসম্ভব ঔদাসীন্যভাব তার। হবেই নাই বা কেন! কতটুকু সাধনা করতে পারি আমি? অন্তরের কাছে পৌঁছানোর জন্য কতটুকুই বা চেষ্টা আমার! আর মুক্তি! ছোটবেলা থেকে আমি মৃদুভাষী। বুকের মধ্যে অসংখ্য কথা, শব্দ, অক্ষর কিন্তু প্রকাশ করতেই যত বাধা। ভাইবোনদের বললেই ওরা হেসে কুটিপাটি। মায়ের সংসার। অবসর নেই! একা বারান্দায় এসে দাঁড়াই। রাতের কালপুরুষ কথা বলে, সকালের রোদ কথা বলে, শব্দ দেয় প্রবল নৈঃশব্দ। এরাই একদিন বন্ধু হয়ে ওঠে। ... ...
২২ জুন, দ্রৌপদী মুর্মুর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার খবর আসে। তার ঠিক ১০ দিন পরে, মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা থেকে খবর এলো যে সাহারিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা, রামপ্যারিকে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ৬ বিঘা জমি দেয়া হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কাগজপত্রও ছিল। কিন্তু জমি দখল করে বসেছিল আদিবাসী নন এমন সমাজের মানুষেরা। জবরদখল করার পরে তারা আবার সেখানে কৃষিকাজও করছিল। উপরন্তু, রামপ্যারির পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছিল ওরা। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তা আগে, রামপ্যারি ও তাঁর স্বামী অর্জুন, পুলিশকে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানায় এবং তাঁদের কাছে সুরক্ষাও চায়। কিন্তু, কিছুই করা হয়নি। রামপ্যারি যখন মাঠে গিয়ে আপত্তি জানান, তখন তারা সেখানেই ওঁর গায়ে ডিজেল ছিটিয়ে ওঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও-ও পাওয়া যায়। এইবারে আমি ভাবতে বসলাম, যদি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন তাহলে কি রামপ্যারি ও তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন? ... ...
এই হতাশার ছবি, এই ক্লান্তির ডকুমেন্টেশন করে চলেছেন কোনো না কোনো শিল্পী - পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে - নিশ্চিত। শিল্পীদের মতো করে এই অনুভূতি চিরকালীন করতে পারেন আর কে-ই বা। হ্যাঁ, এই ডিজিটাল দুনিয়াতেও - হাজারে হাজারে বা লক্ষ লক্ষ ছবি বা ভিডিও - যার কতক সত্যি, কতক মিথ্যে - সেই ক্যামেরাবন্দী ছবির ভিড়ে চিত্রকরের ছবির আবেদন ভিন্ন অবশ্যই। মুনখ-ই বলেছিলেন, ফটোগ্রাফ কখনোই পেইন্টিং-এর যথার্থ বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না - অন্তত ততোদিন পর্যন্ত নয়, যতোদিন না স্বর্গে বা নরকে ক্যামেরায় ছবি তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। ... ...
টেবিল টেনিস ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্ডোর স্পোর্টস। মোটামুটি একটু জায়গা আর মাথার উপর ছাদ থাকলেই, ক্লাব, অফিস, কলেজ, স্কুল, রিক্রিয়েশন রুম এমন কি পাড়ার ফাঁকা জায়গাতেও একটা টেবিল টেনিস বোর্ড গজিয়ে যায়। বাংলা, কেরালা, তামিল নাড়ু বা মহারাষ্ট্র হলে অবশ্য ক্যারম সে জায়গা নিয়ে নেবে। কিন্তু টেবিল টেনিসের জন্য রাজ্যের নামের দরকার পড়ে না। তবুও বিশ্বের দরবারে টেবিল টেনিসে ভারতের সেরকম সাফল্য নেই বললেই চলে। ... ...
জেল থেকে বেরিয়ে অবধি কাজির মনে পড়ছে দুলির কথা। সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছিল ও। সে সময় মাসিমাকে ও বলে এসেছিল, ছাড়া যখনই পাব, চলে আসব আমি, সে যতদিনেই হোক না কেন। কাগজ-পত্রে জানতে পারবেন সবই। দুলিকে বলবেন, ওর জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকব। দুলি অপেক্ষা করে আছে, ওকে যেতেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ... ...
৯৯৬ এর ১৭ই মে। আলফা আন্দোলনে তখন ভাঁটার টান শুরু হয়েছে। হিতেশ্বরের কুশলী প্রয়োগে আলফা ভাগ হচ্ছে। আত্মসমর্পন পন্থী আলফারা তৈরী করেছে সালফা। সারেন্ডারড আলফা। স্কুটারে চড়ে ছোট ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরাগ। অসমীয়া ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনের সম্পাদক। গৌহাটির চাঁদমারীতে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে গুলি করে মারে চারজন সালফা সদস্য। সিবিআই চার্জশিট দেয়। ছয় জন অভিযুক্তের মধ্যে তিন জন মৃত। দু জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটই জমা পড়েনা। আর একমাত্র মৃদুল ফুকন ওরফে সমর কাকতি তেরো বছর কেস চলার পর প্রমাণাভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। ... ...
আমরা জানতাম, এই রোগে সারা পৃথিবীতেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী করে আক্রান্ত হচ্ছেন - আক্রান্ত হলে মৃত্যুহারও তাঁদের মধ্যে বেশী - ঝুঁকির কথা আমাদের মাথায় থাকে না, এমন তো নয়। আমরা জানতাম, হাসপাতালে মাস্ক-স্যানিটাইজার অকুলান হলেও আপনাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে যে বিপুল পরিমাণ মাস্ক-স্যানিটাইজার জমিয়েছেন, তা দিয়ে একটা হাসপাতালের একটা বিভাগের মাসখানেক চলে যেতে পারে। এ-ও জানতাম, আপনাদের সমাজসেবার অদম্য তাগিদ - একেকজন হাজার মাস্ক বা কুড়ি লিটার স্যানিটাইজার কিনে উচ্চবিত্ত হাইজিং-এ প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে যাচ্ছেন - এবং আপনাদের এবম্বিধ সমাজসেবার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী আমরা, যারা কিনা মাথা খুঁড়েও হাসপাতাল বা দোকান কোথাওই এগুলো পাচ্ছি না - তবুও, সিরিয়াসলি বলছি - খুব ভালো লেগেছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। ... ...
বিয়ের পরে নতুন বউ, শ্বশুর বাড়িতে দুর্গাপুজো, শাশুড়ি বরণ শেখাচ্ছেন, সিঁদুর খেলা, বরের ক্যামেরায় সিঁদুর মাখা মুখের ছবি, মত্ত হয়ে ছিলাম। বাড়িসুদ্ধ সবাই মাতোয়ারা। হঠাৎ চোখে পড়লো, সবার প্রিয় বড়দি, আমার বড় ননদ ঘরে মুখ চেপে ডুকরে কাঁদছে। বিধবা বলে এই আনন্দে তার অধিকার নেই, নিজের বাড়িতেও। সেদিন বিজয়ার আর একটা নির্মম মানে বুঝলাম - সধবার স্বীকৃতি আর আনন্দের তলায় বিধবার দুঃখ। সধবার অধিকারের উলটো দিকে রয়েছে বিধবার নিঃসঙ্গতা - একরকম সামাজিক বহিষ্কার। এ চাবুক চোখে দেখা যায়না, তাই আসল চাবুকের চেয়ে অনেক কঠিন আর ধারালো, চামড়া কেটে গভীরে বসে যায়। ঐ দৃশ্য দেখার আগে বিজয়া দশমী যে কিছু মেয়ের জন্য এতটা অপমানের তা বুঝতে পারিনি। এখন দশমীর বরণে পারুল কে ডাকি। অল্প বয়সে পারুলের বর সুরাটে কাজ করতে গিয়ে এইডসে মারা যায়। তিনটি শিশু সন্তানসহ একঘরে পারুলকে শাশুড়ি আশ্রয় দেন। পারুল বলে, "হ গো বৌদি, মো কি ঘরো পূজা করিনা? শুধু সিন্দুর দিবানি, প্রদীপ, ধূ্প, মিষ্টি, জড়ো, পানো সবু দিবা"। প্রথাগত শিক্ষার নাগালের বাইরে থাকা আত্মবিশ্বাসী নারীকে বড় ভালো লাগে। ... ...
উন্যানিয়েম্বে জায়গাটা এখন আমার কাছে মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের মতন। লিভিংস্টোনও কম খুশি নন; তিনি একটা আরামদায়ক ঘরে ছিলেন, উজিজিতে তাঁর কুঁড়েঘরের তুলনায় সেটা একটা রাজপ্রাসাদ। আমাদের ভান্ডারের জিনিসপত্র এসেছে বাগামোয়ো থেকে, দেড়শও বেশি কুলির মাথায় চেপে। কাপড়, পুঁতি, তার ও হাজার-একটা ভ্রমণ সংক্রান্ত লটবহর তো আছেই। এছাড়াও অজস্র ঐহিক বিলাসদ্রব্যে ভরা সে ঘরগুলো। আমারই পঁচাত্তর বস্তা হরেক রকম জিনিস আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী এখন লিভিংস্টোনের হাতে তুলে দেওয়া হবে, নীল নদের উৎসের দিকে তাঁর অভিযানের জন্য। ... ...
রমাপদ চৌধুরীর একটি বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ভারতবর্ষ’। গল্পটি বহুচর্চিত। আপাত একটি গল্পের আড়ালে যে বার্তা তিনি দিয়েছেন, সেটি চিরকালের সংকটের কথা। একটি সার্থক গল্পের ভেতরে তো সব সময় অন্য একটি গল্প লুকিয়ে থাকে। একটি অন্তর্লীন মেসেজ থাকে মননশীল পাঠকের জন্য। নইলে গল্প তো ঘটনার হুবহু বর্ণনায় খবরের কাগজের রিপোর্টিং হয়ে যেত। এই গল্পেও সেই বার্তাটুকু রয়েছে। একটি জনজাতি, এ গল্পে প্রোটাগনিস্ট তাকেই ‘ভারতবর্ষ’ বলেছেন, মাহাতোগাঁয়ের কালো কালো মানুষগুলো কেমন করে ভিখারি হয়ে গেল – খুব নিরপেক্ষ ভঙ্গিতে সেই আখ্যান বর্ণিত হয় এই গল্পে। ... ...
প্লাবনের বিষয় হিমালয়ে নতুন নয়। ২০০০ সালে শতদ্রু নদের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে হিমাচল। ২০২৩ সালে অবশ্য বার বার এসেছে বিপর্যয়। এই বছরে মেঘ ভাঙার ঘটনা এবং তার ফলে হড়পা বান, এসব ঘটেছে বার বার। সারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। হিমালয় ব্যতিক্রম নয়। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যোগ হয়েছে মনুষ্যকৃত কিছু হঠকারী কার্যকলাপ। সেই কাজের মধ্যে অন্যতম হল যথেচ্ছ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি গড়ে তোলা। ... ...
যত ঘুরছি, কথা বলছি, জানছি, শিখছি, একটা বিষয় পরিস্কার হচ্ছে। ফৌজি-কৃত ভায়োলেন্স এবং মাইনিং-এর মধ্যে একটা আলবাৎ-কোরিলেশান রয়েছে। যে সব জায়গায় মাইনিং আরম্ভ হয়, সেই সব অঞ্চলে তার আগ-আগ দিয়ে বন-বাদাড় সাফ করে গড়ে ওঠে আধাসামরিক ক্যাম্প। ক্যাম্প বলতে মূলতঃ কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলায় বর্ডার সিক্যুরিটি ফোর্স এবং সশস্ত্র সীমা বল এবং বস্তার, দান্তেওয়াড়া, সুকমা, বীজাপুর জুড়ে সি-আর-পি-এফ, মূলতঃ তাদের ‘এলিট’ শার্প-শ্যুটার কোব্রা ব্যাটেলিয়ন। বস্তার সম্ভাগ দেশের কোনো বর্ডারের ধারেকাছে নয়, তাই বি-এস-এফ বা সশস্ত্র সীমা বল এ’খানে কি করছে তা সভ্রেনেরই মালুম। ... ...
এখন সরব নয় গাছের পাতারা আর সামান্য বর্ষায় ঝোলে ঝালে অম্বলে দিনযাপনের পর মনে কিছু নেই তার ঠিক কোন কথাগুলি ভেসে গেল জলে? এখন কয়েকদিন ধরে বাসাগুলো সারাবে পাখিরা ফের গুটি গুটি কুটোকাঠি জুড়ে বর্ষার শেষে পিঁপড়েরা অফিসে বেরোবে নতুন পাতারা স্কুলে এল আগমনী সুরে। বর্ষার জলে গাছের অন্তর কেঁপে ওঠে এখন সহজ রস শিরায় শিরায় ছমছমে হয়ত শব্দ পায়, উচ্চারিত অদৃশ্য ঠোঁটে শ্যাওলার কাঁথা পেতে ধরে যত জল জমে। প্রতি বর্ষায় গাছ আয়ু থেকে বেড়েছে বয়েসে যতখানি হারিয়েছে, তত বেশি জল ভালবাসে। পড়তে থাকুন, এই বর্ষার কবিতাগুচ্ছ। ... ...
শনিবার বাড়ি থেকে সরাসরি ডাক্তারের কাছে গিয়েছে মিঠু। বিপ্লব আর ছন্দা ওর সঙ্গে আজ; ফেরার পথে কেনাকাটা র প্ল্যান রয়েছে- পুজোর বাজার এখনই শুরু না করলে পরে বড় ভীড় হয়। আল্ট্রাসাউন্ড, এন্ডোস্কোপি হয়ে গিয়েছিল; টিস্যু স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে । সমস্ত রিপোর্ট এখন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে। আজও সেই কনকনে ঠান্ডা চেম্বার, অপেক্ষারত জনা পনের মানুষ, চশমা চোখে ছেলেটি আর তার কমপিউটার-ঘড়ির কাঁটা টিকটিক ঘুরছিল। -সেদিনও এতক্ষণ তোকে বসতে হয়েছিল? -হ্যাঁ "একা একা বসে ছিলি-ইশ, বড্ড স্লো না এই ডাক্তার" ছন্দা বিজবিজ করল। -স্লো কেন? যত্ন করে পেশেন্ট দেখেন- সময় লাগে। -বেশি দেরি হলে, আজ আর কেনাকাটা হবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে। শনিবার না? পাঁচ নম্বরে ডাক পড়ল মিঠুর। ডাক্তার আজ গম্ভীর। মাথা নামিয়ে মিঠুর রিপোর্ট দেখছিলেন। "সব রিপোর্ট এসে গেছে" এই বলে সামান্য থামলেন ডাক্তার "ভালো তো সব?" ছন্দা আগ বাড়িয়ে বলল। মুখ তুলে তাকিয়ে চশমা ঠিক করলেন ডাক্তার। ... ...
স্পষ্ট সূর্যের আলোয় আবার বেরিয়ে আসার পরে, শিকারের সন্ধানে আরও খানিকটা হাঁটলাম। এই সময়ে দেখলাম, এমটাম্বু উপত্যকার বাঁদিক ঘেঁষা এই জঙ্গলে একটা বিশাল, লালচে রঙের, অতি ভয়ঙ্কর দাঁতওলা বুনো শুয়োর চড়ে বেড়াচ্ছে। কালুলুকে একটি গাছের আড়ালে মাটিতে শুয়ে থাকতে বললাম, আর আমার সোলার হ্যাট-টা কাছের আরেকটা গাছের পিছনে রেখে দিলাম... ... ...