আমি ঝুরিভাজার ঠোঙাটা সেই বারান্দায় রেখেই বাড়ির ভেতরে ঢুকি, ঠাকুমা আমাকে খুঁজছিলে কেন? বাড়ির উঠোনে ক'খানা ধামায় ভরা আধা ভানা ধান। ক'দিন আগেই মাদলা গ্রাম থেকে হিজলদিঘি, কাদম্বিনী আর ঝিঙেশাইল ধান এসেছে। এক রোদ দেওয়া ধানগুলো ঠাকুমা কালথেকেই ঢেঁকিতে ভানছে। আজ শেষবার ধান ঢেঁকির গড়ে পড়বে। চালের গায়ে লেপ্টে থাকা শেষ ধানের পরতটুকু উঠে গেলেই ধবধবে সাদা চাল ঠাকুমার মাটির ডোলে জায়গা করে নেবে। ঢেঁকিতলা পরিষ্কার করতে করতেই ঠাকুমা উত্তর দেয়, সকালের ভাত খেয়েই বেরিয়েছো দিদি; কোথায় ছিলে? আহ্লাদী আসকারার আভাস পেয়ে আমি পায়ে পায়ে ঠাকুমার কাছে যাই, ও ঠাকুমা শংকর জ্যাঠার দোকানে আর কাঠি বিস্কুট আসবে না, জানো? ... ...
যেটুকু বুঝেছি, বাবু ডঃ সুভাষ কাশিনাথ মহাজন ভার্সেস স্টেট অব মহারাষ্ট্র মামলাটি শুধু সুপ্রিম কোর্টের রুলিং নয়, নিজস্ব গতিপ্রকৃতির কারণেও খুব কৌতূহলদ্দীপক। দলিত চাকুরের কনফিডেনসিয়াল রিপোর্টে ভিত্তিহীন খারাপ কথা লেখার অপমান সহ্য করতে না পেরে দলিত মানুষটি যখন দলিত নিপীড়ন আইনের সাহায্যে মামলা দাখিল করতে চায় তখন তার বড় সাহেব সুভাষ মহাজন সেই অনুমতি দিতে অস্বীকার করে দিনের পর দিন। তখন মহাজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, অথচ তার কিন্তু আগাম জামিন পেতে কোন অসুবিধে হয়না। আগাম জামিনের প্রসঙ্গ মহাজনের আবেদনে ছিলই না, সে চেয়েছিল কেবল মামলা প্রত্যাহার। কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, শেষ অব্দি এই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে আদালত আর্টিকেল ২১, যা কিনা ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে, সেই ধারা বিচার করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে দুমদাম গ্রেপ্তারির আগে সবারই আগাম জামিনের অধিকার থাকা উচিৎ। সরকারের সরবরাহ করা তথ্য নাকি দেখিয়েছে দলিত ক্লেশ নিবারণী আইনেরও অনেক অপব্যবহার হয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের মতে, প্রথমে দলিত অভিযোগের একটি প্রাথমিক তদন্ত জরুরী, তারপর এফ, আই,আর এবং চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে শেষে দরকার নিয়োগকর্তার অনুমতি। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুমতি আসবে পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট (SSP)কাছ থেকে। এরপর আদালতে মামলা উঠবে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এখনই জগদ্বিখ্যাত। এরপর সে খ্যাতি অন্য গ্রহেও পৌঁছবে এই আশঙ্কা কি সত্যিই অলৌকিক ? ... ...
এবার প্রশ্ন, গাছ তো লাগানো হবে, কিন্তু কোন প্রজাতির গাছ? জানা থাকা ভালো যে, সমস্ত গাছ দূষণকে সমানভাবে রোধ করতে পারে না। গাছেদের এই ক্ষমতা পরীক্ষা করার যে সূচক তাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় বায়ু দূষণ সহনশীলতা সূচক (Air Pollution Tolerance Index বা APTI). এই APTI সংখ্যাটি ধূলিকণা এবং বায়বীয় দূষকের প্রতি গাছের সহনশীলতা বুঝতে সাহায্য করে। এটি পাতায় ক্লোরোফিল, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, অম্ল-ক্ষারক অনুপাত বা pH ফ্যাক্টর এবং জলীয় সামগ্রীর স্তরের উপর নির্ভর করে। এর মান যত বেশি, গাছের দূষণ রোধ করার ক্ষমতাও তত বেশি। গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন গাছের APTI মানের সাধারণ গড় হচ্ছে: পর্ণমোচী ১৪-২৪, চিরহরিৎ ১২-২০, ঝোপঝাড় ১০-১৮ এবং ঘাস ১৬-২৯। এগুলি সাধারণভাবে প্রাপ্ত APTI মানের ভিত্তিতে সংজ্ঞাবদ্ধ করা হয়েছে। এই হিসেব অনুযায়ী আমাদের খুব চেনা কিছু গাছের গুণ দেখে নেওয়া যাক। ... ...
এ এক অদ্ভুত শিউড়ে ওঠা সময়ের কাহিনী। আমরা সেই সময় অতিবাহিত করছি যখন আমাদের মনে পড়ে যায় “পিচ্ছিল নেপথ্যে আজও রয়েছে মানুষ – একা – নরক দর্শন করে, তবু অন্ধ নয়, খোঁড়া নয়; ... ...
উনুনের আগুনে টগবগ করে ফুটছে কড়াইয়ের জল। সেই জলে ঠাকুমা হাত বাঁচিয়ে কোরার মণ্ড দিয়ে দিলো। একটু পরেই রঙ বদলে সাদাটে হয়ে ভেসে উঠলো কোরার মণ্ড। ঠাকুমা মণ্ডটাকে আরোও কিছুসময় ফুটতে দিলো। এরপর ঠাকুমা উনুন থেকে কড়াই নামিয়ে জল ঝরিয়ে নেয় কোরার মন্ডের। ধোঁয়া ওঠা মণ্ডকে লোহার খুন্তা দিয়ে ঠাকুমা অনেকগুলো টুকরো করে নিলো। ... ...
দু’দিকে দুটো লোক – সামনে আর পিছনে দুটো হ্যাজাক ধরে আছে। মালকোঁচা মেরে পরা ধুতি বা গামছা, প্রায় আধ-ন্যাংটা কালোকোলো সন্ন্যাসীরা পরস্পরের এক হাত আর তাদের হাতের দণ্ড ধরে অর্ধ গোলাকৃতি একটা বেড় তৈরি করেছে। নাচছে ভূতের মত। মাঝে মাঝে – বল গঙ্গাধরের চরণের সেবা লাগি, বল তারকনাথের চরণের সেবা লাগি মহাদেব – ইত্যাদি শিবের নানান নাম করে টেনে টেনে বলে চলেছে। যেটা সবচে’ আশ্চর্য লাগে, তা সন্ন্যাসীদের অমন গলা ছেড়ে মহাদেব – ডাকও নয়, ছায়া-ছায়া ভূতুড়ে নাচও নয়। আশ্চর্য হল – সেই বেড়ের মাঝখানে আমাদের ক্ষুদিরাম মাস্টারমশাই যে! এবং তিনি নাচছেন! এগিয়ে – পিছিয়ে। তিনি তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে পথ শেষ করতে চাইছেন, কিন্তু সেই উপবাসী, আধন্যাংটা সন্ন্যাসীরা – কোথা থেকে এত জোস পেল কে জানে, তারা কিছুতেই এগোতে দিতে চায় না। সামান্য পথ আসতেও তাই দীর্ঘ সময় লাগে। রাগী, ছাত্র-পেটানো অথচ ছাত্র-দরদী, স্নেহ বৎসল মাস্টারমশাই-এর সব গাম্ভীর্য ওই গাজনের সন্ন্যাসীরা ঘুচিয়ে দিয়েছে। ধুলো হয়ে উড়ছে হ্যাজাকের আলোয় – তাঁরই অটল গম্ভীর মুখোশখানা। ... ...
মেক্সিকোর শিল্পী ফ্রিদা কালো। তাঁর ডায়ারির বাংলা তরজমা। মৃত্যু, যন্ত্রণা, ভিতরের চাপা বেদনা—এ সবই লিপিবদ্ধ পাতায় পাতায়। কিছু টুকরো টুকরো শব্দ। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝা দায়। হয়তো তাদের ভিতরে কোনো সংকেত আছে। বিভিন্ন শব্দের আশ্চর্য সম্মোহক সব স্বরভঙ্গির ওঠাপড়া। লিখছেন শিল্পী হিরণ মিত্র। ... ...
এই ছবিতে শ্যাম বেনেগাল সচেতনভাবে যে সিদ্ধান্তটি নেন এবং যথার্থ শিল্পী হিসাবেই নেন – তা ছবিটিকে দেশভাগকেন্দ্রিক অন্যান্য ছবিগুলির থেকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। মূলত তিনি নিবিষ্ট-চেতনার আলোয় ৭০-এর দশকের সেই গা-ছমছমে সময়ে, একজন প্ৰান্তিক মানুষের অবস্থানকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর অসামান্য শৈল্পিক মেধা জানত, যে শতাব্দীর শেষে যখন মানুষ একটি নতুন ভোরের খোঁজে আকুল, তখন ৪৫ বছর আগের এক রাজনৈতিক অবিচক্ষণতা মানুষকে আর নতুন করে বিব্রত করতে পারে না। একমাত্র মানবিক সম্পর্ক, স্মৃতি এবং সমকালের সমাজচিত্রের মধ্যে দিয়ে উস্কে দেওয়া সম্ভব সেই দগদগে ঘায়ের ছোপ ছোপ স্মৃতি। ... ...
মিয়া কোতু। আফ্রিকার মোজাম্বিকে বংশানুক্রমে বসবাসকারী শ্বেতাঙ্গ পোর্তুগিজ। পোর্তুগিজ ভাষার শ্রেষ্ঠ আধুনিক সাহিত্যিকদের অন্যতম। পোর্তুগাল ও ব্রাজিলের যুগ্ম ভাবে দেওয়া পোর্তুগিজ সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার কাময়েঁশ (২০১৩) সহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত। অ্যানিমিস্ট রিয়ালিজম শৈলীর লেখক। তাঁর সেরা উপন্যাস ত্যারা সুনাম্বুলা (স্বপ্নচারী দেশ)। ১৯৭৫-এ মোজাম্বিকের স্বাধীনতা ও পরবর্তী কালের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে লেখা এক নিরন্তর খোঁজের কাহিনি। পড়লেন পোর্তুগিজ ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার ঋতা রায়। ... ...
‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’ গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ফ্রান্সে, অলিম্পিয়া প্রেস থেকে, ১৯৫৬ সালেই। আমেরিকায় মিলারের ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’-এর ওপর দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে চলা অশ্লীলতার অভিযোগ তথা আইনি নিষেধাজ্ঞা ১৯৬৪-৬৫ নাগাদ উঠে যাবার পর ওঁর অন্যান্য বইয়ের সাথে এই উপন্যাসিকাটিও আমেরিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। প্রকাশক, গ্রোভ প্রেস। মিলারের ফোটোগ্রাফার-বন্ধু জর্জ ব্রাসেই ওঁর ‘হেনরি মিলার : দ্য প্যারিস ইয়ার্স’ বইতে জানিয়েছেন যে, মিলারের মতে (‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’র) ‘টাইটল ইজ কমপ্লিটলি মিসলিডিং’। ... ...
লার্স ভন ত্রীয়েরের নতুন ছবি, অ্যান্টিক্রাইস্ট নিয়ে অনেকদিন ধরেই বাজারে নানান গুজব ভেসে বেড়াচ্ছিলো। সেইসব ভাসমান গুজবের অধিকাংশই একমত যে সিনেমাটা অত্যন্ত দগদগে রগরগে ধরণের হয়েছে। যেন পাড়ার উঠতি ছোঁড়া এসে হাত নাড়িয়ে বলছে - পাগলা খাবি কি রে, ঝাঁঝেই মরে যাবি। এ ধরণের গুজব, শহুরে রূপকথা, যেমন - এক্সরসিস্ট দেখতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা বিবরের মতো সাহসী সাহিত্য গত একশো বছরে হয় নি, এগুলি আসবে ও যাবে। কিন্তু গুজবটা এক্ষেত্রে বেশ বড়ো করেই পৃথিবীতে ছড়ালো, কান চলচ্চিত্র উৎসবে বহু দর্শক ছি ছি করে বেরিয়ে গেলেন, অথচ সেই সিনেমার হিরোইন পেলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। ... ...
ঈশ্বর এক্সেল ফাইল খুলে জায়গা জমির চৌহদ্দি আব্রাহামকে দেখিয়ে দিলেন। সেখানে অন্য মানুষজন বাস করছে দীর্ঘদিন- এখন মা কা বা ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আব্রাহাম এই বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করতে পারেন না। তাঁর লোকবল নেই। ত্রিকালজ্ঞ মুনির মতন ঈশ্বর জানালেন এসব জমি এমনি এমনি পাওয়া যাবে না, লড়কে লেনা হ্যায়। এখন সরজমিন তদন্ত করে যাও, তবে আমি লিখে রেখেছি এ তোমাদের হবে একদিন। তোমার বংশধর লড়াই হত্যা ধ্বংস করে এই কানান দখল করবে, সেটা তোমার একার কাজ নয়। ... ...
শুধু পাহাড়গুলো চাষের আওতায় আনলেই চলবে না, সব ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলতে হবে, কেননা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। কেননা সেখানে স্থান নেয় নানান বুনো জানোয়ার। এই প্রাণীরা ফসলে ভাগ বসায়, কিংবা মাংসাশী হলে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপরই হামলা চালায়। পাহাড়ে কোনো বুনো প্রাণীর প্রাকৃতিক আশ্রয় থাকা চলবে না। পাহাড়ের মতোই সেই একই ভাবনার নমুনাই আমরা দেখতে পাবো উপকূলীয় অরণ্যের বেলাতেও। উপকূলীয় এই শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদেরা এমনিতেও তখন মারা পড়ছে খাড়ি দিয়ে আসা জোয়ারের লোনা জল বন্ধ করায়, কিন্তু যেটুকু বাকি আছে, সেগুলোও কেটে ফেলার তাগিদ দিচ্ছেন বুখানন। এভাবেই ৯ এপ্রিলের ভুক্তিতে রামুর উপকূলে গজিয়ে ওঠা 'অপ্রয়োজনীয়' সুন্দরী গাছদের জন্যও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বুখানন, নোনা জোয়ারের আগমনে সেগুলোর একটা বড় অংশের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করছেন ... ...
লুন্ডা বা লোন্ডা দেশে পা রাখার পরেপরেই, কাজেম্বে শাসিত এলাকায় প্রবেশ করার আগে, লিভিংস্টোন চাম্বেজি নামের একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ নদী পেরিয়েছিলেন। দক্ষিণের সেই ব্যাপ্ত, বিশাল নদী, যে নদীর নামের সঙ্গে লিভিংস্টোনের নাম চিরকাল জড়িয়ে থাকবে, তার সঙ্গে এর খুবই নামের মিল। ব্যাপারটা সেই সময়ে লিভিংস্টোনকে বিভ্রান্ত করেছিল, আর সেই কারণেই , তিনি এই নদীকে তার প্রাপ্য মনোযোগ দেননি, বিশ্বাস করেছিলেন যে চাম্বেজি তাহলে আদতে জাম্বেজিরই উৎস ধারা, আর তাই তিনি মিশরের যে নদীর উৎসের সন্ধান করছেন, তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। পর্তুগিজ তথ্যের সত্যতার উপর গভীর বিশ্বাস রাখাই তার দোষ হয়েছিল। এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য তাকে অনেক, অনেক মাসের ক্লান্তিকর পরিশ্রম করতে হয়েছে, অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ... ...
অথচ সেই মুহূর্তে বাস্তব তার ‘ইন্টারোগেশন’ নিয়ে তাঁর সমস্ত ইচ্ছেকে ধূসরিত করছে, না মানলেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার কলঙ্ক লাগানো শহীদদের প্রতি বর্বরোচিত আক্রমণের নগ্নতায় বিপন্নতা দেখা দিচ্ছে। কবিতাকে সশস্ত্র করছেন আদিবাসীর বল্লম, চর দখলের সড়কি, বর্শা, তীক্ষ শর, বন্দুক ও কুরকি দিয়ে। আবার কয়লাখনির মিথেন অন্ধকারে হিরের মতো জুলন্ত চোখের শাসানির যে ভয় শাসককে দেখালেন তা দেশকালের সীমানার বাইরে চির প্রতিস্পর্ধী এক কবির। নবারুণ স্থির থাকবেন কী করে, তিনি যে দেখেছেন তরাই থেকে সুন্দরবনের সীমা সারা রাত্রি কান্নার পর শুষ্ক দাহ্য হয়ে আছে। (এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না) ... ...
যাইহোক, ও তো স্বরূপ। সেই কথায় ফিরে আসি। এ হল আমাদের স্বরূপ। স্বরূপ বাজারে হাঁসের ডিমের দাম পায়নি। বাজারের স্বরূপ তার জানা নেই। জানার কথা নয়। এই না জানা তার খুব ক্ষতি করলেও অপরাধ তার একার নয়। স্বরূপের হাঁস মরে গেছে, সাদা মাছ সব মরে গেছে বন্যায়। কই স্বরূপকে দেখে আপনাদের তা মনে হচ্ছে? শ্রমের রঙ সাদা হয় কিনা জানিনা। কালো ধলো সবতো বলে জেনেটিক। কিন্তু এত বেশি মানুষ এত কম মানুষের হাতে অত্যাচারিত শোষিত যে শ্রমজীবী মানুষকে আমরা অনেকে হয়তো কালো বা বাদামী রঙে দেখতে ভালোবাসি। ... ...
তারা আসল দরিয়ায় নয় এখন। সোমনাথপুরের বর্ষায় আউশ ধানের ক্ষেত, জলাভূমি, শ্রাবণের পূর্ণিমার জোবায় সাগর থেকে ঠেলে-পুরে দক্ষিণাঞ্চলে যে-জল উঠেছে তা নামার আগেই আবার অমাবস্যার জোবা এসে গেছে। ফলে পুরো দিনের আলো ঝড়ের সন্ধ্যা-আকাশের রূপ ধরেছে। পাগলাটে আকাশে গুড়ো বৃষ্টি উড়ছে বর্ষার নির্মেঘ আকাশে যেমন গুটিপোকার পঙ্গপাল নামে। জোয়ারের জল ক্ষেতের পেট ফাঁপিয়েছে মরা গোরুর মতো। বীজধানের ক্ষেত তো কথাই নেই, ভিটার পাটক্ষেতও ভাসিয়েছে তুফান। বিশাল ক্ষেতের কোথাও আলের উপর বেড়ে-ওঠা নিসঃঙ্গ খেজুর গাছগুলোই দাঁড়িয়ে আছে বাতাসের ঝাপটায় বিধ্বস্ত মাথা নিয়ে। এ-গ্রাম ও-গ্রামের মাঝখানে অবাধ জলরাশিতে ঢেউয়ের হিল্লোলে কলম ফরাজী নাতিদের এটা দরিয়াই ভেবে নিতে বলেছে। ডুবে যাওয়ার আগে বিলের মাঝে যে ছোট খাল ছিল তার শেষমাথার জলায় শাপলা ধরেছে প্রচুর। জল পেয়ে শাপলা আরও দীর্ঘ হয়ে উপরে ভাসিয়েছে মাথা। লম্বা শাপলার ঝাড় তুলে এনে রেঁধে ভাওর দিন চালিয়ে নেবে এমন পরিকল্পনা করে কলম ফরাজী নৌকায় উঠে বসে। আমগাছের শেকড়ের সঙ্গে বাঁধা নৌকার রশির বান খুলে নাতিদের ‘জোংরা’সহ আসতে বলে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির হাত থেকে পিঠ বাঁচানোর জন্য। বড় নাতি হাবেলের পরনের লুঙ্গি খুলে দুভাই লুঙ্গির দুপ্রান্ত বাতাসের উলটোদিকে ধরে নৌকার গলুইর গুড়ায় দাঁড়িয়ে বাদাম-নামক পাল তোলে। নাতিদের বানানো লুঙ্গি-পালে বাতাস লেগে নৌকা জোরে চলা শুরু করার পরই দাদু হাল ধরে শান্ত হয়ে বসে দিগম্বর নাতিদের খোঁচা মেরে কথা বলে--‘মোর হালাগো দেহি লজ্জাশরমের মাতাডা খাওয়া গেচে। দুইডা ছিলা ক্যালা, ল্যাংডা ফহির অইচে।’ এর পরই দাদুর লুঙ্গি বাতাসে উলটে যায় যেমন পুঁটিতে ঠোকর বসাবে বলে অপেক্ষারত স্থির বলাকারা পাখা অনাকাক্সিক্ষত দমকা বাতাসে উলটে গিয়ে ডানার নিচের বিবর্ণ মাংস বেরিয়ে পরে। আর তখনই নাতিরা চেঁচিয়ে ওঠে--দাদুর বেগগুইন জিনিস দেহন যায়। ... ...
আফস্পা ১৯৫৮ বা সোলজার্স ইনসাইড এর মত ছবি ফেস্টিভ্যাল চত্বরের বাইরে বেরোতে পারে না। দেশে বা দেশের বাইরে হাতে গোনা কয়েকটা ফেস্টিভ্যাল ঘুরেই এগুলোর দৌড় শেষ। বলতে গেলে এও এক ধরনের টোকেনিজম। ফেস্টিভ্যাল আহ্বায়করা এগুলো ফেস্টিভ্যালে রাখেন যাতে করে একটা গণতন্ত্র গণতন্ত্র আবহ তৈরী করা যায়। যেন মনে হয়, গণতন্ত্রে ‘সঠিক পথে’ ওঠা আওয়াজ কেবল যে শোনা হয়, তাই নয়, তাকে তার উপযুক্ত মর্যাদাও দেওয়া হয়। তাই যে রাষ্ট্রপতি গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড দেন, তাঁকেই দেখা যায় উত্তর পূর্বে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সেলুলয়েডে তুলে ধরা এক সংবেদনশীল পরিচালককে পুরস্কৃত করতে। আপাতভাবে গণতন্ত্রের উপস্থিতি প্রকাশ পায়। আফস্পা নামক একটা ড্রাকোনিয়ন আইন চাপিয়ে দিয়ে তারপর নাগরিকদের যন্ত্রনার কথা সহানুভূতির সাথে শোনার জন্য কিছু মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হয়, স্বীকৃতি দেওয়া হয়, অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। যাতে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যন্ত্রনাকে আর ততটা যন্ত্রনা বলে মনে না হয়। ঠিক প্রেসার কুকারের মতো। ভিতরের প্রেসার খুব বেশি বেড়ে গেলে কুকার ফেটে যেতে পারে। তাই নজর রাখা হয় যেন কোন ভাবে ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি না হয়। এদিকে আফস্পা-র নাম করে গণহত্যা চলছে, ওদিকে বিশেষ মঞ্চে অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হচ্ছে। ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় না কারণ, প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে দেওয়াই হয় না। পুরস্কার-স্বীকৃতি প্রদানের এই টোকেনিজম ব্যান করার থেকে বেশি কাজ করে। নাগরিক সমাজের পক্ষে এই দেখনদারি টোকেনিজম এর মোকাবিলা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ... ...
ঘটনাটা ঘটেছিল দুহাজার ছয় সালের পয়লা ফেব্রুয়ারী। আমার সেই ভাঙাবাড়ি এখন প্রায় গোটা। সে বাড়িকে অনেক রকম নির্মান এবং স্থাপত্যকলার সাহায্যে বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। মা আগেই এসেছিল, ক’দিন হ’ল বৌ ছেলেও চলে এসেছে। মেয়ে এখন বিলেতে, তবে ফিরলে এবাড়িতেই উঠবে। টানা হ্যাঁচড়া ক’রে কিছু একতলার মাল ওপরে তোলা হ’ল, কিছু ওবাড়ি থেকেও এসেছে কিন্তু ওপরে এত জায়গা নেই যে সব ধরে যাবে তাতে। তাই একতলাতে কিছু জিনিষ থেকে গেল। পয়লা ফেব্রুয়ারী একটু রাত করেই ছেলে ফিরল ক্যারম ট্যারম খেলে। আমি বললাম, যে শেষে ঢুকবে, তালা লাগানো তার কাজ। যা নীচে সবগুলো তালা লাগিয়ে আয়। মিনিট দশেক পর সে উঠে এসে বলল, বাবা, অনেক চেষ্টা করলাম, তালা কিছুতেই লাগছেনা। আমি বললাম,সেকী! ঠিকই তো ছিল, নেমে দেখলাম নাঃ ঠিকই তো আছে। তবে ও কেন লাগাতে পারলনা ? আসলে ওটা ইঙ্গিত ছিল, বুঝতে পারিনি। ... ...