বিক্রম চাঁদে পৌঁছে গেলে, মিঠু ফিরে আসবে - এ ধারণা সনতের মনে বদ্ধমূল হচ্ছিল দিন দিন। ধারণার গোড়ায় কোনো শিকড়বাকড় নেই- সনৎ সেদিকে চোখ ঠেরেছিল বরং আগায় ঝুলে থাকা ফুল ফলের সম্ভাবনাকে আঁকড়ে ধরছিল- যতই সে' সম্ভার তার দিকে নুয়ে আসছিল; তাদের স্বাদে গন্ধে ক্রমশ সে গোড়ার কথা বিস্মৃত হচ্ছিল, চন্দ্রযানের লঞ্চিংএর জন্য নিজেও প্রস্তুত হচ্ছিল - একটা বড় উৎসবের আগে যা করে মানুষ। লঞ্চিংএর ডেট জুলাই মাসের চোদ্দোই । সনৎ ঐ সময় দুদিন ছুটি নিয়ে নিল। নিজের বিয়ের কথা মনে হচ্ছিল সনতের। যেন বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে, কার্ড ছাপা হচ্ছে, সনৎ লজ্জা লজ্জা মুখে অফিসে ছুটির অ্যাপ্লিকেশন দিচ্ছে। সে ইদানিং সর্বত্র এই উৎসবের প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছিল যেন। ... ...
২৮ তারিখে আমরা উগান্ডা থেকে সোয়া তিন ঘণ্টা দূরে বেনটা নামের এক গ্রামে পৌঁছলাম। জঙ্গলের কোলে একটা ছোট সুরক্ষিত গ্রাম। উগান্ডার ভুট্টা ক্ষেতের মধ্য দিয়ে পথ চলেছে। ... ...
পুলিশের সাথে বার্তালাপ পছন্দ করে নি সাবকনসাস। সে বলছে, বাসায় চলো…! রিকশা স্টার্ট নিতেই পেছন থেকে পুলিশের হাঁক—ওই ব্যাটারি, সামনে দাঁড়া! আমি আর রিকশাওয়ালা, দুজনেই, ঘাড় ঘুরিয়ে, পুলিশটাকে দেখে, যেন দেখিই নি এমনভাব করে, গতি না বাড়িয়ে না কমিয়ে, চলতে থাকি। সাবকনসাস টোকা দিতে থাকে--বাসায় চলো! কিছু এগিয়ে এলেই একটা মোড়। মোড়ের আগে অন্ধকার। আলোর কাছে পৌঁছানোর আগেই মোটর সাইকেল। পুলিশ। ‘ওই ব্যাটা, তোকে না দাঁড়াইতে কইলাম!’ রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে যায়। আমি নেমে যাই। ‘হাতে কী?’ ‘কাবাব।' ‘আর?’ ‘মদ।' ‘কী মদ?’ ‘কেরু।' ‘লাল না সাদা?’ ‘লাল।' ‘আপনি তো ভালো মানুষ। কোনো যাতনা ছাড়াই সব বইলা দিলেন। ... ...
অত:পর লোকসভা নির্বাচনেও পর্যুদস্ত সি পি এম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ধাক্কা এবং তজ্জনিত "আত্মসমীক্ষা'র পর্ব শেষ করে, শরিকি অনৈক্যের ফুটিফাটাগুলোয় প্রেমের প্রলেপ লাগিয়ে, ন্যানো বিদায় এবং বিমানবাবুর মানুষের কাছে বারংবার ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশকে পাথেয় করে সি পি এমের মধ্যে যখন ফিরে আসছিল পঞ্চায়েতপূর্ব সেই আত্মবিশ্বাস,তাপসী মালিকের সিডি থেকে শুরু করে সুবোধ সরকারের টিভি শো, বুদ্ধবাবুর প্রকাশ্য ভাষণ থেকে শুরু করে অশোকবাবুর নেপথ্য ভাষণ - সবেতেই যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল '৭০ এর অমিতাভসুলভ সেই যোশ, ঠিক তখনই "কোথা হইতে কি হইয়া গেল, সি পি এম লোকসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হইয়া গেল'। ... ...
সেই কুকিং ইভেন্টের আয়োজন হয়েছিল আমস্টারডাম শহরের একপ্রান্তে, মানে মূল শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে ‘দি কুকফ্যাব্রিক’ (বাই ফার্ম কিচেন) নামে সেই কুকিং ওয়ার্কশপ। আইডিয়া বেশ সিম্পল – সব অংশগ্রহণকারী একসাথে রান্নাবান্না করবে। নিজেদের মধ্যে টিম বানিয়ে কম্পিটিশন করবে, পুরো কোর্স মিল বানিয়ে বা বেশি সময় হাতে না থাকলে এক একটা টিম ডিনার/লাঞ্চ-এর এক একটা পদ বানিয়ে। আমার যেখানে গিয়েছিলাম, কুকফ্যাব্রিক-এর সেই ওয়ার্কশপটা বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে আছে – প্রায় ১২০০ বর্গমিটার। বিখ্যাত ডাচ টিভি শেফ জুলিয়াস জেসপার এই মুহুর্তে জড়িয়ে আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁর তৈরি মেনুই এখানে রান্না করা হয়। মোটমাট ১৮টি কুকিং স্টেশন আছে, আর আছে ৩টি ডেমোনস্ট্রেশন কিচেন। সব মিলিয়ে ২৭০ জন মত পাবলিক এখানে বসে খেতে পারে। আর মর্ডান কিচেনে যা যা থাকে, সবই পর্যাপ্ত সাপ্লাই দেওয়া হয় – তাই ছানা কেটে গেলে বলতে পারবেন না, যে হাতের কাছে নাড়ার কিছু ছিল না বলে এমন হল! ... ...
এই কথায় ঝর্নার জলের মত স্রোতস্বিনী আমিনা থমকে দাঁড়াল যেন কোন জিন পরী ওকে হঠাৎ পাথরের মূর্তি বানিয়ে দিয়েছে, তার আর নড়াচড়ার তাকত নেই, যেন শুধু আমিনা না তার চারপাশের পৃথিবীটাই ওমনি চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অস্ফুটে বলল আমিনা যার অর্ধেক কথা নোনা বাতাস চুরি করে নিয়ে গেল, আর বাকি আধখানা সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গেল। তারপর আমিনা ধীর গতিতে নিজের দুই হাতের পাঞ্জা এক করে নিজের মুখের উপর পান পাতার মত ছড়িয়ে দিল। পরক্ষণেই এক দমকা হাওয়ার মত কোথায় চলে গেল আমিনা, আলেফ আর দেখতে পেলো না। ... ...
সাধারণভাবে বিজেপিকে হারানোর আহবান এবং নিজেদের প্রার্থী বা অন্য কমিউনিস্ট দলগুলিকে ভোট দেওয়ার আহবান আমাদের বিচারে স্ববিরোধী নয়। কারণ বিজেপিকে হারানোর পাশাপাশি আমাদের কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তিকে নির্বাচনী সংগ্রামেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব রয়েছে। কারণ শেষ বিচারে ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে হারানোর ক্ষমতা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদেরই রয়েছে। অন্যান্য মূলধারার দলগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপিকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে মাত্র, কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে পরাজিত করা সম্ভব নয়। ... ...
সাত সকালেই চড়া রোদ। গুমোট হয়ে আছে বাতাস। ঘাম মুছে শেষ করা যাচ্ছে না। ক্ষণে ক্ষণে চশমার কাচে জমছে বাষ্প। মাথায় গামছা চাপিয়ে ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছি। ঘুরছি মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকলের কয়েকটা গ্রামে। কোথায় বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, কোথায় পাওয়া যাবে নির্মাণ শ্রমিকদের, খোঁজ নিচ্ছি লোকজনের কাছে। এই জেলার নির্মাণ শ্রমিকের বেশিরভাগই পরিযায়ী। কাজ করতে যান ভিন রাজ্যে। মূলত কেরলে। ভিন রাজ্যের যে কোনও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হন এঁরাও। প্রবল বন্যায় কেরল ভেসে গেলে হাহাকার পড়ে যায় মুর্শিদাবাদের ঘরে ঘরে। কখনও বা ঘরে ফেরে শ্রমিকের কফিনবন্দী লাশ। কলকাতায় উড়ালপুল ভাঙলে চাপা পড়েন এই জেলার নির্মাণ শ্রমিকরাই। কোনও পরিসংখ্যান না থাকাই কখনও কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক শ্রমিককে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন এভাবেই এগিয়ে চলে। ... ...
রথে শুধু বাদশা নেই, আছে বেগমও। যদিও সবার মুখে মুখোশ, মেয়ে হলে তাদের আবার বুকের কাপড় আলগা। তোবা! তোবা! বেলুজ্জেরা তার মধ্যেই দু’হাত আসমানে তুলে নাচগান জুড়েছে। মাঝে মাঝে রাস্তার দু’ধারে মুঠো-মুঠো পুঁতি ছুঁড়ে দিচ্ছে। আলেফরা নিচু হয়ে পুঁতি কুড়াবে, না ঘাড় উঁচু করে ফর্সাপানা মেয়েছেলের কেচ্ছাকাণ্ড দেখবে? এত উৎসব, উত্তেজনা আর খাওয়া দাওয়ার ধূম কোনো বাপের জন্মে দেকিনিকো। রাতে বাড়ির পথ ধরে ওদের মুখে শুধু এই বুলি। মারদি গ্রাঁ দিনরাত মানে না, তেমনি চলছে যেন কারো কোনো ক্লান্তি নেই। ... ...
আসল কারণটা অন্য। গতকাল ওই যে খিলাফৎ কমিটির নোটিশটা ছাপানো হয়েছিল, সেটার জন্যেই বন্ধ করল কাগজটা, রাগ আর সামলাতে পারল না। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ওই নোটিশ কাল বসুমতীতেও বেরিয়েছে? কই, তাদের তো বন্ধ করেনি। কিন্তু, সে যাই হোক, করেছে, ভালোই হবে। আজকের কাগজের জন্যে যে এডিটরিয়ালটা লিখেছিলাম – দুর্যোগের পাড়ি – সেটা মোসলেম ভারতে ছাপিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি। নবযুগকে আজ জুলুম করে বন্ধ করার খবরটা নিশ্চয়ই বেরোবে দুয়েকটা অন্য কাগজেও। যারা এতদিনেও নবযুগ পড়েনি, বাংলা খবরের কাগজের সেই পাঠকদেরও নবযুগের ব্যাপারে কৌতূহল বাড়বে। এখন যতদূর তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কাগজটা আবার বের করা চাই। আমার তো মনে হয় একটু কষ্ট করে হলেও ওই দুহাজার টাকা আজই জমা দিয়ে দেওয়া উচিত। ... ...
আমি যখন অষ্টম বা নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন আমাদের গ্রামে প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়। আমাদের কাজ মূলত: ছিল কর্মকর্তাদের ফরমাশ খাটা - বাজারের জিনিসপত্র বয়ে আন রে, মণ্ডপঘর পরিষ্কার কর রে, আঙিনা ঝাঁট দে রে ইত্যাদি । এতে ঠিক পুজোর আমেজ ছিল না । মনে এই ভাব জাগতো, "পুজো তো বড়দের ব্যাপার। আমাদের কি?" তবে ওই দূর্গাপুজোর দুটো ব্যাপার মনে আছে এখনো । এক, পদ্মফুল আনার গল্প । দুই কাকুর সাথে আমরা কমবয়েসী দুজন গিয়েছিলাম ধোয়া চাদর নিয়ে পদ্ম তুলতে । চাদরে পোটলা বেঁধে ফুল ভর্তি করে নিয়ে এসেছিলাম। আর মনে আছে আমার এক পিসতুতো বোন, নাম ছিল ডলি, প্যান্ডেলের সামনে আরতি নেচে আরতি করেছিল। দুটো পদ্ম ফুলের মধ্যেকার পদ্মচাকি ফেলে দিলে একটা ঝুমকোর মতো দেখায়। ওর সাজগোজ হয়ে যাবার পর দুটো পদ্মের ঝুমকো ও কনুই-এর ওপরে পদ্ম দিয়ে একটা গয়নার মতো বেঁধে দিয়েছিলাম। ... ...
দেশে ফিরছেন? কলকাতায়? অনেককাল বিদেশে আছেন কি? এই ধরেন আট-দশ-বারো বছর? একা না দোকা? নাকি পোঁটলা-পুঁটলি, থুড়ি ছানা-পোনাও আছে? তাইলে পড়ুন ভাট প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত "দেশে ফেরা ফর ডামিজ' - অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পান, জেনে নিন কি কি আপনার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, কোথায় কখন কি করবেন এবং করবেন না। এই বই এক কথায় আপনাকে তৈরী করে দেবে দেশে পা রাখার জন্যে। ... ...
আসিয়া জাবার। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম স্বর। তবে ফ্রান্সের মানুষ নন তিনি, আলজেরিয়ার। তাঁর শানিত লেখনী যতটা ফরাসি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী, ততটাই নারী স্বাধীনতার পক্ষে। এবং তাঁর লেখালেখির প্রধান দ্বন্দ্ব নিহিত স্বাধীনতা-উত্তরকালে নিজস্ব পরম্পরার অন্বেষণে—ফরাসি, না আরবি না বারবের? তাঁর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘Vaste est la prison’ (‘বিস্তীর্ণ এই কারাগার’)। পড়লেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
কলেজস্ট্রিটের এক ফুটপাথে থাকেন কয়েকজন টানা রিক্সা চালক। ফুটপাথেই তাঁদের সংসার। ফুটপাথের এক কোণে মাটির তোলা উনুন। ফুটপাথ লাগোয়া বাড়ির প্রবেশ দরজার পাশেই বড় স্টিলের ট্রাঙ্কের মধ্যে তাঁদের যাবতীয় জিনিসপত্র; হাড়িপাতিল থেকে জামাকাপড়। কর্পোরেশনের টাইম কলে স্নান করা, কাপড় কাচা, বাসন ধোয়া। ফুটপাথে দাঁড়িয়েই জামাকাপড় বদলে নেওয়া। ফুটপাথের ওপর টাঙানো দড়িতে শুকোয় তাঁদের পোশাক। পার্ক করা টানা রিক্সায় রোদ এসে পড়েছে। তাতেও শুকোতে দেওয়া কয়েকটা ছোট জামাকাপড়। মহেশ্বরী প্রসাদ (৪৫) এখানেই থাকেন। সাত বছর কলকাতায় আছেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সতেরো/আঠেরো বছর বয়সে শহরে আসেন। প্রথমে মুটেগিরি করতেন। একশ কেজি, আশি কেজির বোঝা বইতেন। শেষে টানা রিক্সা চালানোই পেশা হিসেবে নেন। ... ...
স্বাস্থ্য বাজারের সওদাগররা – অর্থাৎ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল - এই সার্বজনীন বিমা ব্যবস্থার পুরো ফয়দা তোলার জন্য নানারকম রাস্তা নিতে পারে যার সবগুলিই খুব স্বচ্ছ বা সৎ নয়। বস্তুত এরকম ব্যবস্থায় চিকিৎসার ব্যয় আরও দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কারণ হাসপাতাল বা রোগী কারোরই খরচ কমানোর কোন উৎসাহ থাকে না। উভয়েই জানে সরকার টাকা দিচ্ছে; সেক্ষেত্রে একটি অসাধু হাসপাতাল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকিৎসা দেখিয়ে বিল ফাঁপিয়ে তুলতে পারে রোগীর অজান্তেই বা রোগীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। এই দুর্নীতির রাস্তা বন্ধ করা খুবই কঠিন, বিশেষত যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অস্তিত্ব খুব দৃশ্যমান নয়। ... ...
মঞ্চে প্রবিষ্ট অভিনেতার ওপর কবি তো আলো ফেললেন, সে আলো পাঠককে চিনে নিতে সাহায্যও করলো কী সেই অদম্য প্রকাশবাসনার উৎস, কী সে বক্তব্য যা না বলে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে কবির পক্ষে। কিন্তু সেখানেই কি কাজ শেষ হলো? এই জায়গায় এসেই সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় আত্মজিজ্ঞাসা। সাধারণভাবে কবিতা কেন লেখা হচ্ছে এই বিষয়ে আমরা কথা বললেও এখনও পর্যন্ত একটি বিশেষ কবিতা কেন লেখা হচ্ছে সেকথায় আসিনি। "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" সৃষ্টি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন চোখের ওপর থেকে পর্দা সরে যাওয়া, লিখেছিলেন "বিষাদের আচ্ছাদন" ভেদ করে আলোর প্রবেশের কথা (জীবনস্মৃতি)। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছিলেন ঐ বিষাদের আবরণ বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া - কবির এই উপলব্ধির কথা মনে রাখলে “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের” বিস্ফোরণ বহুগুণে স্পষ্ট হয়। এই চমৎকার উদাহরণে আমাদের কাছে দুটো ব্যাপার স্পষ্ট হয়। কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা আমাদের চোখ খুলে দেয় অন্যতর অর্থের দিকে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো আত্মজিজ্ঞাসা ও সততা। যে বিষাদ বা আনন্দের প্রকাশে কবিতা লেখা হচ্ছে, সেই প্রকাশ কতখানি কবির নিজস্ব, কতখানি আরোপিত সেই অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি না হয়ে তাঁর উপায় নেই। উপায় নেই কবিতা যে ব্যাপ্তি দাবি করে তা এড়ানোর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে কবিতা নিয়ে উদ্বেল হবে সেই কবিতা লিখতে গেলে নিজের মধ্যে যেমন ডুব দেওয়া চাই, তেমনি নিজের বাইরে বেরোনোরও দরকার আছে। দরকার আছে আবেগের সাথে দূরত্ব তৈরী করে, ধীরভাবে সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশের। আমাদের আশা প্রথম দুই পর্বের মত তৃতীয় পর্বের কবিতা সংকলনেও সেই বহিঃপ্রকাশ পাঠক আবিষ্কার করবেন। লিখেছেন - শৌভ চট্টোপাধ্যায়, মজনু শাহ, বোধিসত্ত্ব সেন, রামিজ আহমেদ, শাকিলা তুবা, তনুজ সরকার, ঈশিতা ভাদুড়ী, অনিকেত মৃণালকান্তি, অর্পিতা আচার্য্য, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম, রুদ্রদীপ চন্দ, মাজুল হাসান, শ্ব, মিঠুন ভৌমিক। ... ...
এই তথ্যগুলোর বিচারে বলা যায়, নীতি আয়োগের কৃষি, কৃষক ও কৃষিপণ্য মূল্য নিয়ে যে ধারণা তা অত্যন্ত মায়োপিক। আমাদের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কৃষিপণ্য বাজারে কিছু অ্যাগ্রিগেটরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। নতুন আইন কোনো সমাধানই নয়। তেমনি এখনই এর জন্য কৃষকের ভয়ানক সর্বনাশ হয়ে যাবে এমনও নয়। আবার ফড়ে বলে যে সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে তাও নয়। এটা ঠিক মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা ভোক্তা যে মূল্য পণ্যের জন্য দেয় তার ১০-৭০% বিভিন্ন পণ্যের জন্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা এরা পালন করেছে, তা নানা কারণে কৃষকের পক্ষে যায়নি। যতক্ষণ না সেই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবেই, তা সে ধুতি পরা গ্রাম্য হোক আর কর্পোরেট সংস্থাই হোক। এই মুহূর্তে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করা শুরু হলে খুব দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পণ্যসংগ্রহের জন্য কর্পোরেটকে সেই ফড়েদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। নীতি আয়োগের আলোচনায় আরও যা লক্ষ করা হয়নি তা হল অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভারতের অর্থনীতির যা চেহারা তাতে একে লুম্পেন অর্থনীতি আখ্যা দেওয়াই যায়। কৃষিতে অবাঞ্ছিত শ্রমিক বা এরপর উপার্জন হারানো ফড়ে (ধরে নিলাম হবে) কোথায় যাবে? গ্রামে শুধু নয়, আমাদের শহরেও লুকোনো রয়েছে বেকারত্ব। এসব দেখেও না দেখার ভান করা কৃষিনীতি ও তার ওপর ওপর বিরোধিতা আসলে নিজেদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সরকারের এবং বিরোধী পক্ষের। ... ...
বারলেস্ক থিয়েটার উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিল, থরথর করে কাঁপছিল প্রেক্ষাগৃহ, ছাদের থেকে ঝাড়লন্ঠন এই খুলে পড়ে বুঝি। বাতাসে উড়ছিল মাথার থেকে ছেড়ে দেওয়া টুপি, কারুর গুলি পাকিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ডলারের নোট, সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়া উল্লাস। আক্রাম রুথকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিতেই, সে ডান পায়ের তর্জনীতে ভর করে মঞ্চে অবতরণ করে, তার প্রথাগত ভঙ্গিতে মঞ্চের সামনের ভাগে এসে পা তুলে দিল আকাশপানে, আর একই ঘূর্ণিটানে সবার চোখের দৃষ্টি টেনে নিয়ে ভেসে গেল মঞ্চের পিছনে। নাচের এই শেষ অংশে এসে দর্শককে সেই দুই মুশকো পাহারাদার আর আটকে রাখতে পারে না মোটে। ... ...
প্লেটে রুটি দিয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে অদিতি বলল, "সত্যি কথা! এরকম হবে আমি ভাবিনি, কি করে করছে বলো তো মেয়েগুলো ? এরকম তো আকছারই হয়ে এসেছে। এত বাড়াবাড়ির সাহস পাচ্ছে কি করে এরা?" "এটাই তো ! দ্যাখো, কাউকে ভাল লাগলে তো আমরাও অ্যাপ্রিশিয়েট করি টরি। তোমাকে বলে না কেউ? বৌদি কি দারুণ লাগছেন। ছেলেপুলে একটু আধটু কবে ফ্লার্ট করেছে, তাতেও তুমিও তুমিও করে লাফাচ্ছে।" প্রবাল একটা চামচ তুলে নেয়। "হ্যাঁ। আমিও এটাই ভাবছিলাম জানো। " অদিতি মুখ খোলে। " তোমার শিপ্রাকে মনে আছে? সেই যে আমার মণিপিসির মেয়ে। ঝুনুর বিয়েতে তোমরা দেখেছিলে। অনেক বছর আগে। ভোলোনি হয়ত। অমন চটকদার চেহারা আমাদের কারো ছিল না। বিয়ের দিন , তুমি আর জামাইবাবু খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলে ওকে। চওড়া পিঠের ব্লাউজ পরেছিল আর টপনট। ঘন্টাখানেক পরে দেখলাম চুল খুলে পিঠে ছড়ানো। তোমাদের টানা অ্যাপ্রিশিয়েশানে বেচারির একটু সমস্যাই হয়েছিল। কেঁদে অস্থির হয়ে গেছিল। ছেলেমানুষ তো, মানে লেগে্ছিল ওর। কিন্তু দ্যাখো , কেউ কিছু জানতে পেরেছে? ... ...