২০১০ সালের অক্টোবর মাস। বুরহান ওয়ানি - তখন ১৬ বছরের - তার বড় ভাই খালিদ ওয়ানি ও আরেক বন্ধুর সাথে বাইকে চেপে ঘুরতে বেরিয়েছিল তাদের ট্রাল এলাকায়, যেমন এই বয়সী ছেলেরা করেই থাকে যে কোন জায়গায়। জম্মু আর কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের একটা পিকেটে তাদের আটকানো হয়, এবং বলা হয় সিগারেট নিয়ে আসতে। খালিদ যায় সিগারেট আনতে, বুরহান ও তাদের অপর সাথী অপেক্ষা করে থাকে। সিগারেট দেওয়ার পর কোন কারণ ছাড়াই ট্রুপের লোকজন ছেলে তিনজনের উপর চড়াও হয়। তাদের মারধোর করা হয়, খালিদের প্রিয়তম বাইকটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। খালিদ এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। সেদিন হয়তো সবথেকে বেশি আহত হয়েছিল ১৬ বছরের বুরহান, তবে সেই আঘাত অদৃশ্য - এমন এক আঘাত যেটা হয়তো যে কোন সেলফ-রেসপেক্টিং তরুণই বোধ করবে যদি তাকে অকারণে মার খেতে হয়। ... ...
ইসকান্দর কাবাব-এর নামকরণ হয় – এটা যিনি আবিষ্কার করেন, সেই শেফ ইসকান্দর এফেন্দি এর নামে – যিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বুরশা বলে একটি জায়গায় বসবাস করতেন। এই ডিশটি বানানো হয় ডোনার কাবাপ এবং গ্রিলড ল্যাম্বের টুকরো দিয়ে, যা বেছানো থাকবে গরম ট্যামেটো সসের মধ্যে, সাথে পিটা ব্রেড – এবং এই সবের উপর ছড়ানো থাকবে দই এবং কোনো কোনো সময় ভেড়ার দুধের থেকে বানানো বাটার। ... ...
২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষের ভাই গোটাবায়া রাজাপক্ষ ডিফেন্স মিনিস্টার হয়ে নির্মমভাবে তামিলদের দমন করলেন। জাফনায় ও অন্যান্য দ্বীপে সেনাবাহিনী অসামরিক জনতাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করল। আন্দোলনের কার্যত সমাপ্তি ঘটল ১৮ই মে, ২০০৯ সালে, লিট্টের সর্বেসর্বা প্রভাকরণ ও অন্যদের মৃত্যুতে। বিশ্বজুড়ে অসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি ও দলিল দেখে মানবাধিকার লংঘনের তদন্তের দাবি উঠল। রাষ্ট্রসংঘের অনুমান অনুযায়ী কয়েক দশকের ওই সংঘর্ষের ফলে অন্তত ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছেন কয়েক লক্ষ নাগরিক। তারপর সিংহলী বৌদ্ধ নাগরিকের প্রবল সমর্থনের ভিত্তিতে আজ রাজাপক্ষ পরিবারের পাঁচভাই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিত্তমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা আদি দেশের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে – যা প্রায় দুর্ভিক্ষগ্রস্ত কিছু আফ্রিকান দেশের কথা মনে করায়। ... ...
আমার বাংলা সাদামাটা বাংলা। চাইলে যে সুমিতদা সেভাবেও লিখতে পারত তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ- বিভূতিভূষণের ‘পোনু’-কে নতুন ভাবে মার্কিন মুলুকে আত্মপ্রকাশ করিয়ে সুমিতদা-র লেখা এক গুচ্ছ ‘পোনুর চিঠি’। পুরোনো ‘অবসর’ আর অধুনালুপ্ত ‘আন্তরিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিগুলো ছিল ব্যাঙ্গ আর শ্লেষে পরিপূর্ণ! অত্যন্ত সুপাঠ্য সেই চিঠির একটাতে হোঁচট খেয়েছিলাম ‘পন্টক’ শব্দটা দেখে - ব্যবহার করা হয়েছে কোনও এক সম্মেলনে কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে। ... ...
আজ ‘যৌনকর্মী’ কথাটা উচ্চারণ যতটা সহজ লাগে নব্বইয়ের দশকে তা ছিল না। আশির দশকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নব্বইয়ের দশকে এইডস মহামারী সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। রোগটা ছড়াচ্ছিল মূলত যৌনকর্মীদের যৌনরস ও রক্ত থেকে, তাঁদের থেকে অন্যেরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, অন্যের থেকে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এই রোগকে বাগে আনতে ১৯৯২ সালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর তরফে এসটিডি/এইচআইভি ইন্টারভেনশন প্রজেক্ট-এর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়ে স্মরজিৎদার উপর। এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে শুরু হয় ‘সোনাগাছি প্রজেক্ট’। কিন্তু কাজ শুরু করার কিছুদিন পর তাঁর মনে হয়েছিল, শুধু প্রচারের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের শিক্ষিত করে, আক্রান্তের চিকিৎসা করে এইসব রোগের সংক্রমণ থামানো যাবে না। যৌনকর্মীদের কালেক্টভ বার্গেইনিং পাওয়ার না বাড়াতে পারলে এইডস বা সিফিলিস, গনোরিয়ার মত সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিস (এসটিডি) কমানো যাবে না। সংক্রমণ বাগে আনতে গেলেও যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে যৌনকর্মে কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই পর্যন্ত তাঁর ভাবনা ছিল বিশেষজ্ঞের। এ কথা বলে তিনি সরে যেতে পারতেন। বলতে পারতেন যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়ন একজন ডাক্তারের কাজ নয়। তা না করে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইসব রোগ নির্মূল করার কাজে নেমে পড়লেন। সারা জীবন ধরে রয়ে গেলেন তাদের ভালমন্দে। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হল যৌনকর্মীদের মর্যাদার লড়াই। ... ...
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?” ... ...
কখনও একটা গোটা বাজারকে প্রাণভয়ে দৌড়োতে দেখেছেন? আজ তাই দেখতে হলো। আট থেকে আশি সবাই দৌড়াচ্ছে। দেখলাম এ দৌড়ের কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, বয়স নেই, লিঙ্গ পরিচয় নেই – কিচ্ছু নেই, বিশ্বাস করুন কিচ্ছু নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল ভয়, প্রাণের ভয়। সবকটা লোক তেড়ে পালাচ্ছে। ... ...
শুন সবে ভক্তগণ, শুন দিয়া মন, দুঃখের কাহিনী এক করিব কথন-- অগ্রে দিব পরিচয় শুনে রাখো নাম, অতীব দুঃখী আমি বাঙালির রাম। ... ...
সাধারণ সময়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল, ঠিক ভারত নয়। আর যখন সেখানকার বাসিন্দারা রেগে ওঠেন, তখনই রাষ্ট্রের কাছে গোটা উত্তর পূর্ব হয়ে ওঠে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ক্রুদ্ধ নাগরিকরা স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে, চিহ্নিত হন শত্রুদের ক্রীড়নক হিসেবে। এরই মাঝে থেকে আসামের অঙ্কুর তামুলি ফুকন লিখছেন তাঁদের কথা, নিজেদের কথা। ... ...
“জানি না”, অস্থির সীতাপ্রসাদ মাথার চুল খামচে ধরল। “কিন্তু গত বছরের সব কটা ঘটনা পর পর খেয়াল করে দেখো। মে মাসে প্রভুজির হুকুম আসল। আমরা ত্রিশূল নিয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে কবরখানায় হামলা চালালাম। এখানে, ঠিক এই জায়গাতে,” সীতাপ্রসাদ এলোমেলো হাত চালাল চারপাশে, “এখানে আমাদের গোটা দল এসে কবরগুলো একটার পর একটা খুঁড়লাম। এমনকি পচে গলে যাওয়া বডিগুলোকেও ছাড়িনি । যেসব জেনানারা কংকাল হয়ে গিয়েছিল তাদের বাদ দিলাম শুধু। তারপর কাজ হয়ে গেলে লাশগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলাম যাতে সকলে দেখতে পায়। পরদিন থেকে টেনশন শুরু হল। বলা হল ওরা অ্যাটাক করবে, তাই পার্টি অফিস থেকে রাত্রিবেলা তলোয়ার আর ত্রিশূল বিলি হল। আমরা হামলা চালালাম। খুনখামারি যা হবার তা তো হল, ওদের সবাই চলে গেল রিফিউজি ক্যাম্পে। সব কিছুই জুন মাসের মধ্যে মিটে গেছে। ভোটার লিস্ট চেক করে দেখো, যে কয়খানা ঘর এখনো টিকে আছে তাদের একটাতেও কোনো জোয়ান মদ্দ নেই। আগাছা সাফ করে দেবার মত উপড়ে ফেলেছি। তাহলে এতদিন বাদে এই মার্চ মাসে এমন কাজ করল কে? কে এমনভাবে খুন করল তিনজনকে? আশেপাশের গাঁও গুলোর কেউ নয় কারণ এই কাজ করবার জন্য গায়ের যা শক্তি লাগে তা ওই কয়েকঘর বুড়োহাবড়াদের মধ্যে নেই। আর এমনভাবে বডিগুলো সাজিয়ে রাখল ঠিক যেভাবে আমরা ঐ লাশগুলোকে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ... ...
শরৎ চাটুজ্জের শ্রীকান্ত রেঙ্গুনের রাস্তায়, খুঁজছেন, বাঙালি কিধার হ্যায়? দেখে শেষে ল্যাজ খান, বাঙালিকে চিনে যান। বাঙালির নয়, ছি-ছি, মৎসের ল্যাজা সেটি, হাতে থলি বাজারের, তাতেই প্রমাণ ঢের—বাঙালিকে দুনিয়ায়, মাছ দিয়ে চেনা যায়। এইবার যদি চাও, চিংড়ি-পুলাও তাও রেঁধে ফেল, ভয় কী?, এই নাও রেসিপি, পড়বে না আর ঢিঢি, হেঁশেলে যে হুঁশিয়ার স্বয়ং হাজির ডিডি ... ...
ছোটবেলায় আমরা সাহিত্যিকদের নামের তালিকা বানাতাম। দেখতাম সব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়তে ভর্তি। মানে ভট্টাচার্য, চক্রবর্তীর সংখ্যাও কম।শিবরাম অবশ্য একাই একশো। কৌলিন্যের এমন দাপট। "ঢোঁড়াই চরিত মানস" টাও ভাদুড়িতে চলে গেল।ঐ একজন বুদ্ধদেব বসু বা বিমল কর বা রমাপদ চৌধুরি পেলে "ঐ তো রে আছে" মার্কা এক্সপ্রেশন। এটি সংগীত শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তাই। এ তো গেল মজার কথা।কিন্তু তত মজা নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি যে সাহিত্য বহন করে আমরা শুধু তাই জেনেছি সিস্টেমের চাপে। আমরা ঢোঁড়াই দের আসল গান শুনিনি।চাপা পড়ে গেছে।শেষ হয়ে গেছে।এথনিক বলে মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখলে আহা বাহা পাওয়া যায়। ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়? এখন যে ট্রোলিং হচ্ছে, তা ঐ ক্ষমতা চলে যাবার আশংকায়। ... ...
- আপনারা তো প্লাস্টিক সার্জারি করেন। - করি। আপনার না অন্য কারো? - আমার। - নাক সোজা করতে গেলে ২৫ লাখ। গাল তোবড়াতে গেলে ৩০। অবিকল পড়া মুখস্থের মতো বলে মেয়েটা, মেয়ে না কলের পুতুল কে জানে। - ঠোঁটও ঠিক করি। কিন্তু মেলদের ওটা লাগেনা। - আপনার বাজেট কত? মনির গলা কেঁপে যায়। - মানে, মুখে না, একটু নিচে। - ঘাড়, গলা, এগুলোয় হবেনা। ওগুলো ভগবান দিয়েছেন। যা দিয়েছেন তাই নিয়েই খুশি থাকুন। ওখানে আমরা হাত দিইনা। বুকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করি। সেটাও আপনার লাগবেনা। ভুঁড়ির ফ্যাট বার করে দেওয়া যায়। রেট কত চেক করে বলতে হবে। তবে সিক্স প্যাক হবেনা। ওটা আপনাকে নিজেকেই বানাতে হবে। - মানে, ভুঁড়িও না। তলপেটের সাইডটা। - বুঝিয়ে বলুন। চোখ-কান বুজে মনি বলে ফেলে - ওই জেনিটালস সাইডটা। আঃ। বলে ফেলে কী আরাম। ... ...
ছেলেবেলার সে ফলসা গাছের মত এখনও মায়া আঁকড়ে জেগে থাকে কিছু বনেদীবাড়ি। মাথা উচুঁ করা নাজনীন, মোহময়ী ইতিহাসের পরতে পরতে তার মুহব্বত। যবনিকা পড়ে গিয়েও কোন এক ফাঁকে ধরা দেওয়া ক্ষীণ আয়ু। গাছ নেই, ফুল-পাতা শূন্য তবু শেকড়ের কোনো এক ভাঙা মূলটপের মত লেজুড় সে 'বড়বাড়ি'র ইতিহাস। যে জমিদার জমানায় কেউ বিলেত ফেরত কেউবা ডাক্তার-প্রফেসর, সে জমানা ক্রমে বেগানা হতে হতে ধুলো বালি, বালি ধুলো। জমিটুকু সম্বল করে বংশপরম্পরায় বনেদিয়ানা দেখাতে দেখাতে বিস্মৃত হয়েছে শিক্ষা-সাবেকিয়ানা। মেয়েরা হাঁড়ির তলানিটুকু খেতে খেতে বড় হয়েছে অভ্যেসে, গড়পাঠ শেষে তারপর ঢুকে গেছে বিয়ে প্রতিষ্ঠানে। ... ...
কথায় কথায় আমরা সাদা চামড়ার মানুষদের অনুকরণ করি, কদর করি। সেক্ষেত্রে শিকাগো, লন্ডন, নিউইয়র্কের উন্নত মানুষজন পশুহত্যায় সেন্টিমেন্ট দেখান না। ‘ঘোড়া ঘাসের সাথে বন্ধুত্ব করবে তো খাবে কী।” এই সত্যটা সহজে বুঝে নিলেই এতো তর্কের অবকাশ আসে না। ধর্মের প্রসঙ্গ না টেনেও দিব্যি মাংসের উৎসব হওয়া প্রয়োজন। যে মুসলিম ভাইটি কুরবানিতে গরু বা মোষ খাচ্ছেন বলে আপনার এতো অভিযোগ, ঠিক সেই দিনেই আপনি প্রাণভরে মাটন বা চিকেন সাঁটাচ্ছেন। স্থান পৃথক হলেও, কার্যকারিতায় উনিশবিশ। আপনার খাবারের প্লেটও একটি প্রাণের বিনিময়ে সেজেছে। ... ...
- দেখ মা, আমাদের বাড়িতেও গোপীনাথ কৃষ্ণ। আবার তোমার আড়বালিয়ার বাড়িতেও যে সতীমা, আউলচাঁদ – সেখানেও কৃষ্ণের প্রভাব তুমি বলেছিলে। সারা বাংলা জুড়ে এত কৃষ্ণ কী করে এল মা? কৃষ্ণ তো মথুরা, বৃন্দাবনের লোক – মানে উত্তর প্রদেশের। মৃত্যু গুজরাটে। পশ্চিম থেকে এভাবে পূর্বে চলে এল? - সে তো আসবেই। এক দেশ, এক সংস্কৃতি। কিন্তু তুই যেটা ভাবছিস কৃষ্ণের প্রভাব – পুরোটা তা নয়। বহিরঙ্গে আমরা অনেক বেশি দুর্গাপুজো আর কালীপুজো করছি। মাছ, মাংস খাওয়ারও কমতি নেই। কিন্তু গৃহদেবতা হিসেবে যে কৃষ্ণ থেকে গেছেন, সেটা হল চৈতন্যের প্রভাব। - শ্রীচৈতন্যদেব? কিন্তু তাঁর কথা তো খুব একটা ভাবি না। মানে আলাদা করে তাঁর পুজো বা স্মরণ – এসব তো হয় না। - হয়, তুই বুঝতে পারিস না। - কেন বুঝতে পারব না? তুমি বোঝাও। ... ...
এসব তথাকথিত দুষ্টূমির সঙ্গে মাখা সন্দেশের মত ছিল আমাদের প্রেম। প্রেমে পড়া, প্রেম করা। এক তরফা প্রেম তখনো প্রচুর। কয়েকটা ঠিকঠাক লেগে গেলে দু তরফা হত। তার আবার নিয়ম ছিল। অলিখিত। তিন মাস ঘুরলে একটা চুমু। তখনো জীবনের প্রথম চুমু খাওয়ার জায়গা ছাতের ধার, ট্যাঙ্কের পেছনদিক। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আসছে মেয়েবন্ধু ছেলেবন্ধুদের মেলামেশা। অ্যাসেক্সুয়ালের ভেতর যৌনতার চোরাটান, তবু যেন লুপ্ত নাশপাতির মত নির্বীজ ও নিষ্পাপ। ক্যান্টিনের বেঞ্চি ভাগাভাগি করে গায়ে গা ঠেকিয়ে বসার পর্ব। কিন্তু শরীরী নয় তবু। এক আধখানা কেচ্ছাকাহিনি ঘোরে বাতাসে। অমুককে অমুকের সংগে সন্ধে অব্দি কলেজের পেছনে জলের ট্যাংকের ওপরে দেখা যায় (যাকে ডিরোজিওর কবর বলে ডাকতাম আমরা)। তমুক অমুকের হোস্টেলে ঢুকে বিছানায় সেঁধিয়েছে। ‘শোয়া’ শব্দ কীভাবে জানি তখন থেকে আমাদের জবানিতে একটি সংকীর্ণতর অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকবে। ... ...
১৯৪৮ এ যখন সাড়ে সাত লাখ প্যালেস্তিনীয় বাস্তুহারা হন,তখন এই অর্কেস্ট্রা তাদের ‘যাতায়াতের জন্য ইজরায়েল সরকারের সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করত’।১৯৭৬ তে ইজরায়েলী দখলদারী চলাকালীন(যে অংশ ১৯৪৮ এ দখল হয়নি) জুবিন মেহতা ‘ইউরোপ থেকে একটি অস্ত্রবোঝাই বিমানে করে এসে পৌঁছান’ । ‘১৯৬৭ সালে যুদ্ধ চলাকালীন এই অর্কেস্ট্রা ইজরায়েলী সৈন্যদের সামনেও অনুষ্ঠান করে’ । এবং এই সমস্ত তথ্য কোনো প্রতিবাদী লিফলেট থেকে নয়,বরং ইজরায়েল ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া। এবং ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রা কখনোই প্রকাশ্যভাবে ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন নীতির সমালোচনা করেনি।প্যালেস্তিনীয় মানুষদের সপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয়নি।বিরোধিতা করেনি ‘ব্র্যান্ড ইজরায়েল’ এর।বরং ইজরায়েলী সেনাবাহিনীর সামনে অনুষ্ঠান করার কথা গর্বিতভাবেই ঘোষনা করেছে(এই তথ্যও ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়)। ... ...
আমার যেমন হয় – সন্ধেবেলা হলেই খিদে পেয়ে যায়! গেস্ট-হাউসে ঢুকেই খাবার টেবিলে বসে পড়ার ধান্ধা করছিলাম, যে কোনো একটা চেয়ারে। পিছন থেকে টান দিল এক কলিগ – সেই প্রথম জাপানে বসার এটিকেটের সাথে পরিচয়। এই নিয়ে আলাদা করে একটা লেখা হয়ে যাবে – পদমর্যাদা অনু্যায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। যারা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার লোকজন – তাদের বসার ব্যবস্থা প্রথমে এবং তারা যেখানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘কামিজা’। কম পদমর্যাদার লোকেরা যে স্থানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘সিমোজা’ .... আমাদের বসতে বলল সেই ঘরে ঢোকার দরজার থেকে দূরের চেয়ার গুলোতে। এটাও একটা রীতি – অতিথিদের বসতে দেওয়া হয় দরজার থেকে দূরে, আর দরজার কাছে থাকবে হোস্ট। এর কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং – এই রীতি চালু হয় বহু বহু আগে, জাপানের ফিউডাল পিরিওডে – যেখানে দুমদাম শত্রুর আক্রমণের বেশ চল ছিল। আমাদের মত জাপানীদেরও বিশ্বাস অতিথি নারায়ণ – তাই অতিথিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রবেশদ্বারের থেকে সবচেয়ে দূরে বসতে দেওয়া হত। ... ...
ভোটের মুখে গুরুর গুঁতোয় রামের খোঁজে বেরিয়েছি। ঝোলায়, থুড়ি মাথায়, রয়েছে রামের স্টিরিওটাইপ। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, আমার দৌড় রামরাজাতলা পর্যন্ত। যে যত কম জানে, তার দুনিয়া তত ছোট, আর সে ভাবে সে তত বেশি জানে। হুগলী জেলার ছেলে, হাওড়া জেলার রামরাজাতলা চিনব না তা-ও কি হয়? পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস দিতে দিতে দিব্যি পৌঁছে গেলাম। ... ...