নিজের খুন হওয়ার পিছনে পাখির যে একেবারে কোনও অবদান নেই, এমনটা কিন্তু বলা যাবে না| খুনের মত এতবড় একটা বেআইনি কাজে সেও যে ইন্ধন যুগিয়েছিল তার খবর পাওয়া যাবে রাজারহাট এলাকায় বৌ-ঝিদের এককাট্টা করে সে-ই যে প্রথম জমি বাঁচানোর আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল সেই বিবরণ খুঁজে কিম্বা খুঁড়ে বের করতে পারলে| তার প্রায় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হাত পা ছোঁড়া, এক দালালকে একসময় ঝাঁটাপেটা করার ইতিবৃত্ত জন্ম দিতে পারে নি কোনও বড়্সড় আন্দোলনের| তাই পাখি হঠাৎ লাশ হয়ে যেতে তার সোয়ামি বালু সর্দার ছাড়া আর কেউ তেমন নড়েচড়ে বসে নি| আর বসে নি বলেই অঞ্চলের বা পার্টির কেউ ভাবেই নি 'প্রোমোটার হটাও, পার্টি বাঁচাও' শ্লোগানের মধ্যে এই পাখি বৃত্তান্তটি ঢুকে পড়বে| এমনিতে বালুর অভিযোগ থানায় জমা হওয়ার পরও কেটে যাওয়ার কথা অনেক দিনরাত, আসামী ফেরার এবং কোর্টের ডেট বছরে, দুবছরে একবার করে পড়তে পড়তে আসামীটির একসময় ৬৩ বা ৭৭ বছর বয়সে সিরোসিস অব লিভার বা উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে নির্বিঘ্নে মারা যাওয়ার কথা, কিন্তু বৃত্তান্তটির এমন সরল হওয়ার পথে বাধ সাধল ননী সাহা| রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তার ঘোর প্রতিদ্বন্দী এবং পার্টির 'ভদ্র লবির নেতা'কে নাস্তানাবুদ করতেই ননীর নাকটি তেরচা করে ঢোকে পাখি উপাখ্যানে| ... ...
অ্যাক্রস্টিকের সঙ্গে অ্যাক্রোব্যাটের শব্দগত মিল দেখে অভিধান খোলা গেল। তাতে অ্যাক্রোব্যাটের মানে লেখা আছে মল্ল, মত পরিবর্তনকারী, দড়াবাজিকর, ব্যায়ামবিদ, ঘনঘন দলপরিবর্তনকারী, রজ্জুনর্তক, ব্যায়ামকুশলী। শব্দের মিলটা কিছু না, তবে অ্যাক্রস্টিক লেখার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ, দড়াবাজি, রজ্জুনর্তন, ব্যায়াম - এইসবের অল্প মিল আছে। সমবেতভাবে মনে হল, পুজোর ফুর্তি, হাঁটাহাঁটি, জুতোয় ফোস্কা, বাঁকা এয়ারগানে বেলুন - এসব তো সুদূর, শব্দ, ছন্দ নিয়ে একটু রজ্জুনর্তনই না হয় হোক। ভাবের ঘরে চুরি হলে কী, আমাদের ভঙ্গীও কম নয়। পাঠক যদি আমোদ পান তাহলেই ধন্য। ... ...
কালের নিয়মে একদিন বিয়ে করলাম। নতুন বৌকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাস্তায় দেখা লালি পিসির সঙ্গে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। দেখলাম কাল্টুদের বেড়ার ঘর পাকা হয়েছে, ছাদ হয়েছে। আমাদের দুজনকে বসিয়ে প্লেটে করে দুটি সন্দেশ আর জল দিলেন। তাকের ওপরের কৌটো থেকে একটা দোমড়ানো ময়লা কুড়ি টাকার নোট বার করে দিলেন আমায় বৌয়ের হাতে। বললেন, "বৌমা, কিছু কিনে খেও"। বৌকে নিয়ে গেলাম একদিন ইমাম সাহেবের ডেরায়। আমার স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। হাতে তুলে দিলেন একটি দশ টাকার নোট। চলে আসবার সময়ে বৃদ্ধ মানুষটার চোখের কোনাটা কি চিকচিক করছিল। ... ...
সময় হলে মৌলানাসায়েব নামাজ শুরু করবেন।নামাজে আমরা সবার জন্যে মঙ্গলকামনা করবো। আমাদের চলে যাওয়া সবার ভালো চাইবো। যে বৃদ্ধ মানুষটি ভয় পাচ্ছেন যে আগামী ঈদের নামাজে তিনি হয়ত থাকতে পারবেন না তিনি সবার কাছে কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাইবেন। আমরা তার দীর্ঘ জীবন চাইবো।মৌলানা প্রতিটি মানুষের মঙ্গল চাইবেন খোদাতলার কাছে।আপনি দেখবেন এইসময় আমাদের প্রবীণ মৌলানা মানুষটি কেঁদে ফেলেন।আমার মতন উদাসীন লোকেরও বুকের বাম দিকে কোথাও হাল্কা ব্যথা শুরু হয়। নামাজ শেষ। আসুন, এবার আমরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে। সমস্ত বৈরিতা দূর হোক। আমার-আপনার সবার কুশল হোক। এবার চলুন বাড়ির দিকে হাঁটি।আব্বার জন্য দাঁড়াতে হবেনা। উনি সবার শেষে ঈদগাহ থেকে বের হবেন। প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আলিঙ্গন ক'রে। ... ...
কুফরি থেকে ফাগু দুই বা সওয়া দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘোড়া চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট। বোধহয় পৃথিবীর নিকৃষ্টতম রাস্তা এটা! পুরো রাস্তা এক – দু বিঘৎ পরিমাণ পাথরে ভরা। উঁচু-নিচু আঁকা-বাঁকা ছয় সাড়ে ছয় ফুট চওড়া রাস্তার দুধারে কোথাও কোথাও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কিছুটা রাস্তা গেলে দেখা গেল পাঁচিল আর নেই, তবে সে জায়গায় রাস্তা বলেও কিছু নেই। পাথরের চাঙর ভর্তি ঢালু ভূমি,আর পাইনের জঙ্গল। রাস্তা কর্দমময়। বেশ খানিকটায় ঘোড়ার পুরীষ আর কাদা মেশানো ঢলঢলে একটা স্তরে প্রায় হাঁটু ডুবে যায়। সীতারামের হাঁটু তক গামবুট থাকলেও সওয়ারিদের পায়ে সেই কাদা ছিটকে আসে। প্রতি মুহূর্তে ভয়। একটি ঘোড়া পড়লে সওয়ারীসহ বাকিগুলোও সেই কাদার নালায় পপাত ধরণীতল হবার সমূহ সম্ভাবনা ষোলো আনা। ... ...
এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের (ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...
এর মধ্যে যেটা জানা, তা হল চাকরি বাকরি হারানোর মধ্যেই লাফিয়ে বাড়ছে করোনার কেসের সংখ্যা। সিএনএনএর সঞ্জয় গুপ্তার মতে, এখন যে তথ্য জানা যাচ্ছে, সেটা আসলে দুসপ্তাহ আগের। এবং কার্যত সংখ্যাটা প্রতিদিনই দ্বিগুণ হচ্ছে। ফলে সংখ্যাটা এখন কোথায়, এবং কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা কঠিন। অবশ্য, এসবই খুব বেশি হলে আন্দাজ। আসল সংখ্যা কী, তার মাপ কী, কী অভিঘাত, কেউই জানেন বলে মনে হচ্ছেনা। প্রভূত রোগির আশঙ্কায় নিউ-ইয়র্কের গভর্নর জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে একটি ভেন্টিলেটার দিয়ে দুজন রোগির চিকিৎসা করে দেখা হবে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে নতুন এবং জটিল। চিকিৎসা নিয়ে অন্যান্য জটিলতাও আছে। যথেষ্টই আছে। আমেরিকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি নয়, পুরোটাই বীমানির্ভর। বীমাকোম্পানিরা জানিয়েছে, যে, করোনার পরীক্ষা হবে বিনামূল্যে, কিন্তু চিকিৎসার খরচ পুরোটা তারা বহন করবেনা। এখন শোনা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে পরীক্ষাও বিনামূল্যে হচ্ছেনা। অর্থাৎ কাগজেকলমে পরীক্ষা বিনামূল্যেই বটে, কিন্তু তার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফি, ইত্যাদি হাবিজাবি যোগ করে, কাউকে নাকি ৩০০০ ডলারও বিল করা হয়েছে। ... ...
একটা বিশেষ প্রয়োজনে স্বাধীনতাপূর্ব ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে একটু খোঁজখবর করা দরকার হয়ে পড়েছিল। খোঁজ নিতে নিতে ভাবলাম যা কিছু টুকে রাখছি সেটা বরং গুরুচণ্ডালী’র পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেই। ফলে আমার জানায় যা কিছু খামতি বা ভুল আছে সেটা শুধরে যাবে। ... ...
উদ্দেশ্য আমার কাছে অন্তত খুবই স্পষ্ট ছিল। এন আর সি, সি এ এ এবং ছাত্র ছাত্রীদের উপরে পুলিশ তথা সরকার সমর্থক গুন্ডা দের হামলা ইত্যাদি নিয়ে সারা দেশে যে নানা প্রতিবাদ হচ্ছে, কলকাতায় থেকে তার যতটুকু আঁচ পাওয়া যায়, সেটা অনুভব করার , চাক্ষুষ করার চেষ্টা করা। এবং গুরুচন্ডালি তে লিখে ফেলা, যতটা পারা যায়।। ... ...
মহাশয়, আমাদিগের কপালে পাকিস্তান হইয়াছিল কেন তাহা লইয়া কত কথাই না শুনা যায়। শুনা যায় মোগলদিগের সহিত কোচবিহারের মহামান্য নৃপতির যুদ্ধ হইয়াছিল। মোগলের প্রতিনিধি রংপুর ঘোড়াঘাটের নবাব সৌলৎ জং এসে আমাদিগের মহারাজা উপেন্দ্রনারায়নকে ঝাড় সিংহেশ্বরের প্রান্তরে লড়াই করে হারিয়ে দিল এক কালে। সেই যুদ্ধে আমাদিগের মহারাজার অন্দরমহলের বিভীষণ এক জ্ঞাতি ভাই দীনেন্দ্রনারায়ণ সিংহাসনের লোভে মোগলদিগের সহিত গোপনে যোগাযোগ করেন। এবং আমাদিগের মহারাজা উপেন্দ্রনারায়ণ পরাস্ত হন ঝাড় সিংহেশ্বরের যুদ্ধে। সেই লোভী জ্ঞাতিভাই দীনেন্দ্রনারায়ণকে সিংহাসনে বসায় মোগল সম্রাটের তরফে ঘোড়াঘাট-রংপুরের নবাব সৌলৎ জং। কিন্তু পরের বছরই আমাদিগের পরাজিত মহারাজা আবার যুদ্ধ করেন ভূটান রাজার সাহায্য লইয়া। এবং তাঁহার জয় হয়। জয় হয় বটে কিন্তু কিছু মৌজার প্রজা নাকি সাবেক শাসক মোগলদের প্রতি তাঁহাদের আনুগত্য বজায় রাখেন। কেন, না তাঁহারা নাকি মোগল সৈন্য ছিলেন। প্রথম যুদ্ধের পর মোগলের হাতে কোচবিহার গেলে এই সমস্ত অঞ্চলে বসবাস করিতে থাকে মোগল সৈন্যদের কিছু অংশ। মোগল প্রতিনিধি রংপুরের নবাবের নিকট তাঁহারা খাজনা দিতে থাকেন। কোচবিহারের মহারাজা তাঁহার উদারতায় এই বিষয়ে আর দৃকপাত করেন নাই। সামান্য কয়েকটি গ্রাম যদি খাজনা না দেয়, কী যায় আসে। আমাদিগের পূবর্পুরুষ মোগল সৈন্য ছিল কি না জানা নাই, কিন্তু কৃষিই ছিল তাঁহাদের মূল জীবিকা তা আমাদিগের অবগত। স্বাধীনতার পর রংপুরের নবাব যেহেতু পাকিস্তানে মত দান করেন, সেই কারণে ভারতে থাকিয়াও আমরা পাকিস্তানি হইয়া গেলাম। ইহাতে আমাদিগের দোষ কী? আমাদিগের কাহারো কাহারো নিকট রংপুরের নবাবের প্রজা হিসাবে খাজনার রসিদ রইয়াছে সত্য, কিন্তু তাহা স্বাধীনতার আগের কথা। স্বাধীনতার পর আমরা আর খাজনা দিই নাই রংপুরে গিয়া। আমরা কোচবিহার রাজাকেও খাজনা দিতে পারি নাই, কেন না রাজার প্রজার তালিকা হইতে আমরা বাদ ছিলাম সত্য। ... ...
কলকাতার মানুষজনেরা এইসবের হুজ্জোতির খবর রাখে না। তাদের মন ভুলোবার হরেক চিজ আছে। এইরকম ঝামেলাওয়ালা জায়গায় দুদিনের ছুটি কাটাতেও কেউ আসে না, যতই জাগ্রত তীর্থস্থান হোক না কেন! এটা একেবারেই সীমান্ত-এলাকা, কাঁটা তারের এ পাশে লাল নিশান ওড়া ভ্রামরী দেবীর মন্দির, খুব জাগ্রত জ্যান্ত তীর্থ, ওপাশে সবুজ মাথাওয়ালা গম্বুজ, সোনা পীরের থান। মানত রাখলে নাকি কেউ খালি হাতে ফেরে না। দুপাশেই যতদূর চোখ যায় সবুজ খেত, যার বুক চিরে দৌড়ে চলে গেছে মানুষ সমান কাঁটাতার। ছুঁচলো কাঁটা, খুব শক্ত তার, আর দবেজ। সেই ছুটন্ত তারের লাইন বরাবর রাতবিরেতে বুটজুতোর মসমস, সন্দেহ জাগলেই ঘন ঘন হুইসিলের আওয়াজ। তবে তাতে কী আর কিছু বন্ধ থাকে! যার যা করার সে তাই করে যায়, কাজের মতো কাজকাম চলে, নদীর মতো নদী বহে যায়। শুধু মাঝেমধ্যে কাঁটাতারের এপাশে ওপাশে আচমকা দুম শব্দের সঙ্গে লাশ পড়ে। চাপা আর্তনাদ, দৌড়োদৌড়ির শব্দ। তারপর সব চুপচাপ। ... ...
ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি কত টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে এ নিয়ে কয়েকদিন আগেও সর্বস্তরের (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক) সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে খবর হচ্ছিল। ইলেকটোরাল বন্ড এবং ওষুধ কোম্পানির নিবিড় যোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। শিক্ষিত জনতার একটি বড় অংশই, আশা করা যায়, এ বিষয়ে অবহিত। শুধু কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক হবার কারণে যোগ করা যায়। এবং, ভেবে দেখতে হবে, এর সাথে আমাদের দেশের ওষুধনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। ... ... হেটেরো গ্রুপসের মতো একই পরম্পরায় ইন্টাস, লুপিন, ম্যানকাইন্ড, মাইক্রোল্যাবস, টরেন্ট ফার্মা, জাইডাস ফার্মা, গ্লেনমার্ক, সিপলা ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে প্রথমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের জন্য হানা দেওয়া হয় এবং এরপরে সবাই ইলেকটোরাল বন্ড কেনে কোটি কোটি টাকার। ওষুধের দামের ওপরে এর প্রভাব সহজেই অনুময়ে। দান-খয়রাতি করার জন্য এরা টাকা খরচ করেনা। ওষুধের মার্কেটিং (যার মধ্যে ডাক্তারকে দেওয়া উপঢৌকনও আছে) ইত্যাদির জন্য কোটি কোটি খরচ করে। না করলে হয়তো ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের আরেকটু নাগালের মধ্যে থাকতে পারত। ... ...
লীলা মজুমদার অথবা নবনীতা দেবসেন নাকী দুজনেরই প্রভাব আছে তোমার লেখায়- এই সব নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু, এই যে আমরা- আমরা তো তোমার লেখায় মায়া খুঁজতে এসেছি- একটা ট্যামটেমি, সবুজ স্যুটকেস, নীল ওড়না, নবমীর চাঁদের আলোয় দুর্যোধন আর চিত্রাঙ্গদার ছায়া টায়া নিয়ে ফিরে গেছি। তারপর আপিস গিয়ে সারাদিন গুনগুন করেছি- 'নেড়ুমুন্ডে নতুন পাতা, বেরুচ্ছেন, বেরুচ্ছেন'। প্রভাব ট্রভাব নিয়ে আর তো ভাবিই নি। ... ...
মণিমালা নীচু হয়ে সুখশয্যায় শোয়া সুকান্তের মুখের সামনে হাত নিয়ে ঢেলে দিল ভাজা মৌরি। সুকান্ত মুখ বন্ধ করে জড়িয়ে ধরল মণিমালাকে, টেনে নিল নিজের বুকের ওপর। সুকান্তর বুকে মণিমালার বুক থেপসে গেল। একটুও আগুন জ্বলল না ঠিকই, কিন্তু সুকান্ত পুড়ে ছাই হতে লাগল। ছাড়ো, ছাড়ো আমার এখনো রাজ্যের কাজ বাকি। আমার পাশে শোয়াটাও তোমার একটা কাজ। ছাই কাজ। ঠিক তাই, সেই থেকে পুড়ে পুড়ে আমি ছাই হচ্ছি। ইস, আমি এখন তাহলে এসে ছাইয়ের গাদায় শুলাম? ছাইয়ের গাদা, উঁ, ছাইয়ের গাদা, দেখাচ্ছি কেমন ছাইয়ের গাদা। নরম ও আরামের সুখশয্যার ওপর সুকান্ত চেপে ধরল আগুনতপ্ত মণিমালাকে। তারপর মণিমালার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে বলল মশলা খাবে? মণিমালার দু চোখে সর্বনাশের ডাক, তার আঁখিপাখি পাখা ঝাপটিয়ে বলল, খাবো। ... ...
সেবারে কুয়ালালামপুরের বুকিং বিনতাং এলাকার বিখ্যাত শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্ত – ভাবছি কোন একটা স্টলে বসে একটু কফি/জুস/শেক কিছু একটা খেয়ে নিলে বেশ হয়। তাই আশে পাশে চোখ রাখছি – হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল একটা দোকানের খাবারের অ্যাডে আমের ছবি দেওয়া! মানে রসে ভরে উঠেছে, একটা পাত্রে টুপটাপ করছে কাঁচা হলুদ বা কমলা যাই বলেন তেমন রঙের আম! ব্যাস আর কী ভাবতে হয়! টুক করে ঢুকে পড়লাম সেইখানে – চারদিক খোলা বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট, শপিং মলের ভিতরে। ... ...
একটা নধর আকারের গোটা পেঁয়াজ, পান্তাভাতের থালার পাশে। এই স্বপ্নটা বিলাস ক’দিন ধরেই দেখছে। আসলে এখন গোটা একটা পেঁয়াজ একবেলায় কে আর খেতে পাবে? অর্ধেক বা সিকিভাগ বরাদ্দ, যা দাম বাড়ল… কিছু করার নেই। বাদ চলেও যেতে পারে একদম। তখন শুধু লঙ্কার আচার দিয়েই… বউ দু’আঙুল দিয়ে যেভাবে সিঁদুর পরত, সেভাবে একটিপ লাল লঙ্কার আচার কৌটো থেকে তুলে নেবে সে। ... ...
কখনও ভেবেছেন কি সিংহ এদেশে গুজরাত ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না, আর বাঘ প্রায় সব রাজ্যে! অথচ প্রাচীন হিন্দু বা বৌদ্ধ ভাস্কর্যশিল্পে সিংহ সর্বব্যাপী আর বাঘ প্রায় অনুপস্থিত। ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভের শীর্ষভাগ- সেখানেও সিংহ। রাজারা বসতেন সিংহাসনে। বুদ্ধও শাক্যসিংহ। সিংহ থেকে সিংহল, সিংহ থেকে সিঙ্গাপুর। ... ...
ন্যায়বিচারের প্রাথমিক শর্ত হল, যেকোনো আদশের পশ্চাতে যে কারণগুলো আছে তা ব্যাখ্যা করা। সকলকে জানানো। কারণ কমিশন নাগরিকের সমক্ষে দাঁড়িয়ে, মানুষের নজরদারির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করার অন্যতম স্বাধীন সংস্থা।কাজের স্বচ্ছতা তাই আবশ্যিক শর্ত। তা অনুসৃত হওয়ার মধ্য দিয়েই কমিশনের মত স্বাধীন সংস্থার জনগ্রাহ্যতা, বিশ্বাস, আস্থা গড়ে ওঠে। দায়বদ্ধতাহীন ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারের জন্ম দেয়। ... ...
তীরে এসে তো আর প্রেস্টিজ ডোবাতে পারিনা, তাই মুখে হিন্দি শেখা ডাকাবুকো অভিনেতার মত হাঁ হাঁ কিঁউ নেহি টাইপের ভাব করে ভেসে পড়তে হলো। এই অঞ্চলটা প্রায় একইরকম তবে বৈচিত্র্য আরো বেশি। মিনিট কুড়ি ধরে সেখানেও কুস্তি করে তারপর একসময় মুক্তি পেলাম। বীরের মত জল থেকে উঠে এলাম, মুখের ভাবটা আরো ঘন্টা দুই জলে থাকতে পারলেই ভালো হতো। শুনলাম ৫০-৫৫ বছরের ঐ ভদ্রলোক, যিনি সপরিবারে স্নরকেলিং করতে এসেছেন, তিনি অগাধ সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে একটা কচ্ছপের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। তারপর এতদূরে চলে যান (এবং কচ্ছপটা এতই দ্রুতগামী) যে তাঁর ভয় হতে থাকে ফিরতে পারবেন না। অতঃপর বুদ্ধিমানের মত ফিরে এসেছেন। বুঝলাম যে লড়াইটা আদপেই সংস্কৃত আর হিন্দির না, বস্তুত তারা হলো "অলসো র্যান" ক্যাটাগরি। আসল হিরো হলো হলিউড, সেখানে সবই সম্ভব। কচ্ছপটা জোর বেঁচে গেছে। ... ...