পহেলে দর্শনধারী, পিছে গুণবিচারী—এই মত নিয়ে চললে ফসকে যাবে ভূভারতের নানা সেরা খানা। চেহারা উপেক্ষা করিয়া ছাই ঘাঁটাঘাঁটি করিতে পারিলে, পাইলেও পাইতে পারেন রসনার বেমিসাল শিহরণ। যেমন লখনউয়ের ইদ্রিস বিরিয়ানি। বিষাণ বসু ... ...
সাফ সুতরো পবিত্র সমাধির গিরজেতে দেখা দিলো এক ধর্ম সঙ্কট। যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান জ্ঞানে বন্দনা করার অধিকার সকল ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু তাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধল সেই বন্দনার আচরণ প্রক্রিয়া নিয়ে - কে কোথায় কি ভাবে কোন ঘণ্টা বাজিয়ে কোন ধুনো দিয়ে কবার পাখা নেড়ে দিনের মধ্যে কতবার প্রার্থনা করবে তাই নিয়ে লড়াই চলে ; দেবস্থানের ঠিক কোন কোণায় কে দাঁড়াবে তার মীমাংসা হয় নি, এই নিয়ে মারামারি হয়েছে প্রভুর ক্রুশের সামনে। ধর্মের এই কুরুক্ষেত্রের লিগে ছজন প্লেয়ার, ছয় পুরুত, পূজারী পক্ষ – গ্রিক অর্থোডক্স (তাদের গলা সর্বদা উঁচুতে, আমাদের ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছে, বাবা, নইলে কি কেউ জানতে প্রভু এয়েছেন?), আর্মেনিয়ান চার্চ (দুনিয়ার পয়লা ক্রিস্টিয়ান দেশ, যখন বাকিরা পুতুল পুজোয় ব্যস্ত), মিশরের কপটিক (প্রভুর বাল্যকাল কেটেছে আমাদের দেশে), ক্যাথলিক (রোমের সে মহান গিরজে কে বানালো শুনি?), ইথিওপিয়ান চার্চ (সলোমনের বউ আমাগো দ্যাশের মাইয়া), সিরিয়ান চার্চ (ক্রিস্টিয়ানের পয়লা দীক্ষা, দামাস্কাসের পথে?)। প্রত্যেকে চান তাঁদের আপন নিয়ম মাফিক এই গিরজের পরিচালনার ভার এবং চাবি। ... ...
যৌবন গিয়ে প্রৌঢ়ত্ব ছুঁই ছুঁই, এমন সময় ছোটদাদু চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন। তখন চাকরি চলে যাওয়া তেমন কোন বড়ো ব্যাপার ছিলোনা, লোকের হামেশাই চাকরি যেত। পরিবারও খুবই সচ্ছ্বল ছিলো -- চারটি কন্যাসন্তানের পিতা ছোট্দাদু বাড়ি এসে "কোনো ভদ্রলোকের বাচ্চা চাকরি করেনা" ঘোষণা করে তাস পিটতে বসে গেলেন। যৌথ পরিবারের কর্তা, বড়োদাদু মার্চেন্ট আপিসের বড়োবাবু। তিনি নার্ভাস হয়ে পরের মাসেই একটা পাকা চাকরির বন্দোবস্ত করে বাড়িতে এসে ছোটভাইকে বলার পর ছোটদাদু নাকি অট্টহাস্য করে বলেছিলেন, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে বড়দা? সত্তর টাকার মাইনে পেয়ে এসে আমি এখন পঞ্চাশ টাকায় ঢুকবো?"! বলা বাহুল্য ছোটদাদুকে আর কোনদিন উপার্জন করতে দেখা যায়নি, এবং যৌথ পরিবারটি অনতিবিলম্বে স্বখাতসলিলে ধরাশায়ী হয়। তারপরের দুই প্রজন্ম মুখে রক্ত তুলে খেটেও সেই বিলাসিতার ঋণ চোকাতে পারেনি। যে দারিদ্র পাকিয়ে ধোঁয়া টানে কবি, যে দারিদ্রে জলের ছিটে দিয়ে উজ্জ্বল করে তোলে আঁকিয়ে - সেই রাজকীয় শিল্পমন্ডিত দারিদ্র নয়। শস্তা অগৌরবের দারিদ্র। ... ...
মাল্যবান, জলপাইহাটি, বাসমতীর উপাখ্যান লেখা হয়েছিল পেনসিলে। গোপনে লিখতেন কবি, আর ভাই অশোকানন্দ দাশের বাড়ি গিয়ে ট্রাঙ্কে জমা করে ফিরে আসতেন। ১৭২/৩ রাসবিহারী এভিনিউয়ের সেই বাড়ি অতি সম্প্রতি ভাঙা শুরু হয়েছে। সেখানেই ছিল সন্দেশ পত্রিকার অফিস। বাড়িটি পেনসিলে আঁকা বাড়ির মতো ধূসর হতে হতে মুছে গেল। ট্রাঙ্কগুলি অনেকদিন আগেই জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা পড়েছিল। অনুজ প্রতিম লেখক আফসার আমেদ তা কপি করে আনত ন্যাশানাল লাইব্রেরি থেকে। ভাইরাস আক্রান্ত এই অন্তরীন কালে আমি আমার জীবনের কথা বলব ভাবছি। জীবনানন্দ মুছে যাননি, আমার লেখা অস্পষ্ট হতে হতে হারিয়ে যাবে জানি। আমি সামান্য মানুষ, জীবনভর কলমে লিখেছি, তার উপরে জল পড়ে লেখা ধুয়ে গেছে কতবার। আমি আমার কথা পেনসিলে লিখতে শুরু করলাম। ... ...
অনেক হয়েছে ভায়া ন্যাকা-নস্টালজিয়া। ‘মায়ের রান্না’, মনে পড়তেই সে কী কান্না। আহা পিসির হাতের সেই চ্যবনপ্রাশ-ভাতে! তার চেয়ে বরং ছেড়ে সব ঢং রেঁধেই ফেলুন তুখোড় ‘পটাটাস মাতাদোর’। কিংবা ছেড়ে আজেবাজে কথা, রাঁধুন ‘চিকেন বনলতা’। ভয় নেই, বলেছি তো সেই কবেই, পড়বে না মোটে ঢিঢি—মিছে ঘাবড়াচ্ছেন, রেসিপি বাতলাচ্ছেন স্বয়ং ডিডি ... ...
অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবি মহিলারা এই ছুটি পাবেন না –প্রথমদিকে এই যুক্তির ব্যবহার দেখে একটু হাসি পেলেও পরে এর বহুল ব্যবহার দেখে মনে হল নাঃ এই নিয়েও দুই কথা বলা দরকার। হ্যাঁ একদম ঠিক কথা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবি মহিলারা এফওপি লিভ পাবেন না। ঠিক যেমন তাঁরা আসলে কোনওরকম ‘লিভ’ই পান না, ‘সিক-লিভ’ বা ‘মেটার্নিটি লিভ’ও নয়, তেমনি এটাও পাবেনই না ধরেই নেওয়া যায়। তেমন অসুস্থ হলে সবজিওয়ালিমাসি বাজারে বসতে পারেন না, বিকল্প কেউ বসবার না থাকলে তাঁর অনুপস্থিতি আসলে তাঁর বেরোজগারি হয়ে দাঁড়ায়। একই কথা প্রযোজ্য দিনমজুর, ইটভাঁটার কর্মী ইত্যাদিদের জন্যও। পরিচারিকাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে একটু ভাল। তাঁরা ছোটখাট অসুস্থতায় সবেতন ছুটি পান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, তবে সন্তানধারণকালে যতদিন পারেন কাজ করেন এবং যখন পারেন না, চেষ্টা করেন পরিচিত কাউকে কাজটি দিয়ে যেতে যাতে ফিরে এসে আবার পাওয়া যায়। প্রসবকালীন ছুটির পয়সা খুব কমক্ষেত্রেই পান। আমার পরিচিত গৃহকর্মসহায়িকাদের মধ্যে (সংখ্যাটি একশোর উপর) মাত্র ৪ জন এই সুবিধা তাঁদের নিয়োগকারি গৃহ থেকে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সত্যি বলতে কি অনেক বাড়িতে একটু বয়স্ক কিম্বা নিতান্ত অল্পবয়সী পরিচারিকার খোঁজ করা হয়, যাতে দুম করে সহায়িকাটি প্রসবকালীন ছুটি চেয়ে না বসেন। অসুস্থতাও যদি দীর্ঘকালীন এবং/অথবা খরচসাপেক্ষ হয়, পরিচারিকার কাজটি যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কারণ এখানেও ‘আনপেইড লিভ’ বলে কিছু হয় টয় না। একজন পরিচারিকার আর্থারাইটিস বা চোখে ছানি পড়লে তাকে বিদায় করে আরেকজনকে রেখে নেওয়া হয়। তা এগুলো তো আমাদের সব সুযোগসুবিধার সাথেই দিব্বি সহাবস্থান করছে। কিছুক্ষেত্রে এমনকি অফিসে কর্মরত মহিলাটি নিজের গৃহকর্মসহায়িকাটির কাছে বছরের ৩৬৫ দিনই উপস্থিতি আশা করেন উইকডেজে তিনি বেরিয়ে যান এবং ছুটির দিনগুলি তাঁর একমাত্র বিশ্রামের সময় বলে। তো এই অসঙ্গতিগুলি চোখের সামনে দেখলেও আমরা কখনো ভদ্রতার খাতিরে, কখনো বা অন্যের ব্যপারে মাথা না গলানোর সুশিক্ষায় বিশেষ কিছু বলি না। তাহলে অফিসে কর্মরত মহিলাটি যদি এফওপি লিভ পান এবং তাঁর পরিচারিকাটি না পান, তাহলে খুব নতুন কিছু বৈষম্যের সৃষ্টি হবে না। বরং অসংগঠিত ক্ষেত্রের দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে এই দাবিটিও জুড়ে নেওয়া যায়, নেওয়া উচিৎ। ... ...
একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে – যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। যদি এ পরিমাপ ৪০-৫০%-ও হয় তাহলেও এরকম একটা পরিসংখ্যানে পৌঁছুনো কার্যত অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৯৯ জনের (সমগ্র ভা্রতের চেয়ে অনেক বেশি) সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭% আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষ উজার হয়ে গেলেও শেষ অবধি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে কিনা সন্দেহ আছে। ... ...
প্রথমদিন তোমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে লেগেছিল হার্ডলি সাঁইত্রিশ সেকেন্ড, কিন্তু মাথার অ্যালবামে পজ বাটনের প্রিভিলেজ আছে। কারও রসিকতায় হেসে ওঠার মুহূর্তটায় তোমাকে স্থির করে দিই। ঠোঁট নয়, গলা নয়, শরীরের ভরকেন্দ্র থেকে ঘূর্ণি তুলে বেরিয়ে এসেছে তোমার হাসি যেমন আসে, কক্ষপথ থেকে ছিটকে দেয়, পতন সামলাতে তোমাকে আশেপাশের কাউকে বা কিছুকে আঁকড়ে ধরতে হয়। এগিয়ে যাই। এত কাছে যাতে আমার নিঃশ্বাসে তোমার ঘাড়ে লেপ্টে থাকা চুল উড়তে পারে। প্রদক্ষিণ করি। মনোযোগ দিই গ্রীবার বাঁকে। বোজা চোখের পলকে। দাঁতের সুসংবদ্ধ শুভ্রতায়। জিভের গোলাপি আভায়। কাঁপুনি ধরে প্রতিটি রোমকূপে। শরীরের ভেতর আরেকটা শরীর জাগে। জানালার ওপারে আমগাছের মাথায় গনগনে চাঁদ। পূর্ণিমা আসন্ন, বা সদ্য গত। সে গলন্ত সোনার আঁচে শুয়ে তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ছাই হয়ে যাই। ... ...
দীর্ঘ এগারো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজও সুবিচার অধরা। একটি নিরস্ত্র, আত্ম-নিরাপত্তাহীনা কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএসএফের বিশেষ আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে। ২০১৫ সালে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা মামলায় সেই একই আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে পুনরায় নির্দোষ ঘোষণা করেছে। ফেলানি ও তার বাবা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং একই কায়দায় তারা আবার স্বদেশে ফিরতে চেয়েছিল। সেটা নিশ্চিতভাবে বেআইনি কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধই বটে। কিন্তু এ হেন অপরাধের শাস্তি কি মৃত্যু হতে পারে? আর এই মৃত্যুদণ্ড তো বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত-স্বীকৃত নয়! সীমান্তরক্ষীবাহিনীর কি কোনো নিরস্ত্র অনুপ্রবেশকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে? ... ...
ক্রিশ্চান গোষ্ঠীর সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের ইতিহাস নতুন না। গ্রাম স্টেনের কথা হয়তো অনেকেই মনে রেখেছেন। কিন্তু এখানে যে জিনিসটি নতুন, তা হল বিজেপির অ্যাজেন্ডার রাজনৈতিক সম্প্রসারণ। গোটা ভারতবর্ষে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে রুখতে নরম-হিন্দুত্বের ঝোঁক দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূলের গণেশ-পুজো থেকে শুরু করে কেজরিওয়ালের কাগজের নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপানোর প্রস্তাব পর্যন্ত। কিন্তু সংখ্যালঘুর 'দাঙ্গা' বাধানোর পরিকল্পনাকে রুখতে বিজেপি মডেলে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরা, বিজেপির গণমঞ্চের নিচে আসা, এটা বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম দেখা গেল। এর পরে কাউকে আদৌ বিজেপি-বিরোধী কেন বলা হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা বেনুগোপাল, একে 'অশুভ আঁতাত' বলেছেন। রাজ্যপালের চাপের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেছেন। যদিও তাঁর পার্টির অবস্থানও প্রশ্নচিহ্নের ঊর্ধ্বে না। আদানির বরাতপ্রাপ্তি কংগ্রেস জমানাতেই। ... ...
১৮৫৭-র যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে ম্যাক্সমুলারের রান্না করা ‘ভারতভূমিতে ককেসাসিয় আর্য আগ্রাসন তত্ত্ব’ (এখন থেকে আর্যতত্ত্ব) ঔপনিবেশিক বাজারে সভ্যতা-বিস্তার আর সাম্রাজ্যরক্ষার ককটেল বানিয়ে খাইয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে প্রাচীন আর্যতত্ত্বের নবতম রূপকার ম্যাক্সমুলার প্রথমে আর্যকে জাতিবাচক অভিধায় অভিহিত করে যতদূর-সম্ভব ভুল করেছিলেন। কিছু পরে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃত ভাষায় বডিন অধ্যাপনার প্রতিযোগিতায় ছিটকে গিয়ে তিনি পূর্বের নিজ-অবস্থান সংশোধন করে, আর্য শব্দের জাতিবাদিতা কেড়ে, তার নখ-দাঁত বিচ্ছিন্ন করে নিরীহ ভাষাগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিলেন। কিন্তু ততদিনে আর্যতত্ত্ব মোটামুটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি এবং তাকে জোরদার করার কাজে সহায়ক হয়েছে। কেশবচন্দ্র শুধু যে ‘বৈজ্ঞানিক’ আর্যতত্ত্ব অবলম্বনে ব্রিটিশদের ভারতবর্ষের ‘বিছড়ে হুয়ে ভাই’ বলবেন না, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ‘গডসেন্ড, ভগবৎ-ইচ্ছা’ আখ্যায় ভূষিত করে ব্রাহ্ম ভাইবেরাদারদের উপনিবেশ লুঠে ছোটতরফ ভদ্রবিত্তের চাকুরি, দালালি, উমদোরির অংশিদারিত্বও নিশ্চিত করবেন.... ... ...
এবার শুরু নতুন ধারার শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরীর কাজ। এ যাবৎ ট্রেড ইউনিয়ন বলতে লোকে বুঝত শ্রমিকদের আর্থিক দাবী-দাওয়া আদায়ের সংগঠনকে, যা বেতনবৃদ্ধি-বোনাস-ছুটি-চার্জশিটের জবাব ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলন করার সংগঠন। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক-জীবনের এক-তৃতীয়াংশ, আট ঘন্টার সংগঠন, যে আট ঘন্টা শ্রমিক কলে-কারখানায় কাটান। নিয়োগী শ্রমিকদের খন্ড-বিখন্ড মানুষ হিসেবে দেখতেন না, দেখতেন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে, যে মানুষ উৎপাদনের কাজ ছাড়াও পরিবারে-সমাজে থাকে—খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যা, নিজের অবসর বিনোদন, সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য যাকে ভাবতে হয়, যাকে সম্পর্ক রাখতে হয় সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে। নিয়োগীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন ইউনিয়নের কর্মসূচীতে সামিল হল আর্থিক দাবীর লড়াইয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ-ইতিহাস চেতনা-নারী মুক্তি-সমাজের অন্যান্য শোষিত অংশের মুক্তি, নিপীড়িত জাতিসত্ত্বার মুক্তির মত বিষয়গুলি। ... ...
রামকমল যখন কলকাতার শাসক কেষ্টুবিষ্টুদের সঙ্গে দিনরাত ওঠাবসা করছেন, সেই সময় ১৮৩০-এর অগাস্টের গোড়ার দিকে কলকাতায় পাদ্রি হিলের প্রথম বক্তৃতা। বক্তা একে প্রণম্য ইওরোপীয় পাদ্রি, তায় বক্তৃতার বিষয় রাজার ধর্ম, [কলকাতার] হিন্দু সমাজের পাঁজর পর্যন্ত কেঁপে উঠল। কলকাতার সমাজ কাঁপল ইয়ং বেঙ্গলিদের নতুন খাদ্যাভ্যাসে। রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, কলিকাতার কথায় লিখছেন, ‘... হিন্দু কলেজের ছেলেরা হেনরী ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং হেয়ার সাহেবের শিক্ষায় প্রকাশ্যভাবে অখাদ্য খাইতে আরম্ভ করিয়াছিল ও হিন্দুধর্মের প্রতি অনাস্থা দেখাইতে লাগিল। মহেশচন্দ্র ঘোষ ও কৃষ্ণ[মোহন] বন্দ্যোপাধ্যায় খৃষ্টান হইল। রামমোহন ব্রাহ্মধর্ম (তখনও ধর্ম হয়নি) প্রচার করিলেন। সমাজে ও কলিকাতার হিন্দুধর্ম গেল গেল রব পড়িয়া গেল। রামকমল সেন হিন্দু কলেজ হইতে উক্ত ডিরোজিওকে ছাড়াইতে গেলেন, কিন্তু উইলসন, হেয়ার ও শ্রীকৃষ্ণ সিংহের (কালীপ্রসন্ন সিংহের পিতামহ) জন্য তাহা পারিলেন না। উক্ত সেনকে মিন্টের ও ব্যাঙ্কের দেওয়ান করিয়া কোম্পানি বশ করিয়া ফেলিল। ডিরোজিও নিজে ইহাদের ধন্যবাদ দিয়া চাকরি ছাড়িয়া দিলেন। ... ডিরোজিওর ছাত্রেরা সকলেই কোম্পানির বড় চাকরীয়া ডিপুটি কলেক্টর হইল’। ... ...
পটোলেতে ফুলকপি ব্যাকরণ মানি না। নেই যে দাঁতের তেজ হেরিটেজ জানি না—‘কচি পাঁটা’ হাড়সার, কেনই বা খাব আর, রেওয়াজি-চর্বিওলা খোজা পাঁঠা থাকাতেও?! বাঙালির আলু চাই বিরিয়ানি পাকাতেও। নস্টালজিয়া থাক, নবীনেরা হরগিজ, আলুপোস্তয় দেবে পারমেসিয়ান চিজ! ডিমান্ড ও সাপ্লাই হেঁশেলেতে দিল ধুম, বাঙালি বছরভর খেতে পেল মাশরুম! প্রাণ চায়? রেঁধে যান পড়বে না মোটে ঢিঢি, হেঁশেলে যে হুঁশিয়ার হাজির আছেন ডিডি। ... ...
আমি খুব ধীরে মনের মধ্যে তাকাই। কেউ একটা ছবি আঁকছে সেখানে। জলরঙের মত ব্লেন্ডেড, কিনারা-বিহীণ ছবি। প্লেটের মধ্যিখানে মোটা একটা লাল রঙের ব্রাশ স্ট্রোক। টমেটো, রেড ওয়াইন, রসুন -- মারিনারা স্যস? সরু ফিতের মত সবুজ তাজা গন্ধ। বেসিল নিশ্চয়ই। আর ঐ গোল বলের মত জিনিষটা? ভাজা একটা পরত পেলাম সবার ওপরে, ভেতরটা ক্রীমি, মুখে মিলিয়ে গেলো। তোমার নাম 'আরাঞ্চিনি' না? ইতালিয়ান, ভাজা ভাতের চপের মত? অভিজ্ঞতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। শেকলহীণ নিশ্চিন্ততার হাসি। ... ...
রাত হোয়ে গেল অথচ মেয়ে ভেড়ার পাল নিয়ে এখনো বাড়ি ফিরলোনা দেখে আমার বাবা মা কাকা কাকি এদিক ওদিক হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজে বেড়াতে থাকলো – আমি তো তখন অনেক দুরে, অন্য এলাকার গম্ভীর মাঠের মাঝে নূতন কাটানো খালের একদম নিচের ঠাণ্ডা মাটিতে অঘোরে ঘুমাচ্ছি। ঘন অন্ধকারে, খালের ভেতরে মানুষ দেখবে কি করে? ওই খালের আসে পাশে নাকি মড়া বাচ্চাদের পুঁতে দেওয়া হত তাদেরই কেউ আমায় নিয়ে গেল নাতো? আমাদের এলাকার পেছন দিকে সেই গম্ভীর মাঠ, মাঠের এক কোনায় সেই নূতন কাটানো খাল, আর খালের ওপারে অন্য পাড়া। এপাড়া থেকে হাঁক পাড়া হচ্ছে কেউকি আমার মেয়ে, ভেড়ার পাল দেখেছো নাকি? মাঠ পেরিয়ে ও পাড়া থেকে উত্তর আসছে কই তেমন তো কিছু দেখিনি। আমি তখন অঘোর ঘুমে, আর আমাকে ঘিরে রয়েছে বড়মা আর বাকি সব ভেড়াদের পাল। সন্ধে হলে পোষা গরু ভেড়া ছাগলের দল নিজেরাই পথ চিনে ঘরে ফেরে, আমার ভেড়ার পাল’ও ফিরে যেতে পারত, আমি তো তাদের খোটায় বেঁধে ঘুমাতে যাইনি – কিন্তু ওই, বড়মার তো তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব আছে। তারা সবাই শেয়ালের ভয় ভেঙ্গে আমাকে গোল করে ঘিরে ধরে পাহারা দিচ্ছে ওই যে আমি বলেছিলাম ‘আমি একটু শুলাম তোমরা আমাকে ছেড়ে যেওনা’। ... ...
‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ... ...
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক। নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর: ... ...
মতুয়াদের অসন্তোষ যে বিজেপি দলের বাংলা দখলের পথে সব থেকে বড় অন্তরায় হতে চলেছে এই আশঙ্কা করেই নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দিতে গিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি মনে করছেন যে, মতুয়া বিধিমতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারলেই ভারতের মতুয়াদের মধ্যে একটি আলাদা আবেগ সঞ্চারিত হবে এবং মতুয়াদের সামনে রেখে বাংলা দখল সহজ হয়ে যাবে। ... ...