‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ... ...
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক। নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর: ... ...
মতুয়াদের অসন্তোষ যে বিজেপি দলের বাংলা দখলের পথে সব থেকে বড় অন্তরায় হতে চলেছে এই আশঙ্কা করেই নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দিতে গিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি মনে করছেন যে, মতুয়া বিধিমতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারলেই ভারতের মতুয়াদের মধ্যে একটি আলাদা আবেগ সঞ্চারিত হবে এবং মতুয়াদের সামনে রেখে বাংলা দখল সহজ হয়ে যাবে। ... ...
মৃত্যুরাখালের তো গর্বের শেষ নেই। যে জীবন নিয়ে মানুষের এতো অহমিকা, স্বজন-পরিজন সংসারের তৃপ্ত আবহ, অর্থ-কীর্তি-সচ্ছলতার উত্তুঙ্গ মিনার, তা'কে এক ফুঁয়ে সে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। তার সামনে নত হয়ে থাকে রাজার রাজা, ভিখারির ভিখারি, সম্মান-অসম্মানের ভিতে গড়া অনন্ত নক্ষত্রবীথি, পাবকের পবিত্র অগ্নি থেকে মৃত্যুরাখাল কাউকে রেহাই দেয়না। সে তো ভাবতেই পারেনা একটা রক্তমাংসের মানুষ সদানন্দ হয়ে নিজেকে ঘিরে রেখেছে আনন্দের সমুদ্রে। রাখাল তার নাগাল কখনো পাবেনা। তার কিন্তু চেষ্টার কমতি নেই। সদানন্দের আশি বছরের দীর্ঘ জীবন জুড়ে বারম্বার হননপ্রয়াস চালিয়ে গেছে সে। কিন্তু ঐ সমুদ্রটা কখনও পেরোতে পারেনি। সে হেরে যায় সদানন্দের কছে। জগৎসংসার জানে সে হলো জীবনের শেষ কথা, সদানন্দ বলে সে হলো অনন্ত সম্ভাবনার দ্বার। ... ...
বর্ণ গন্ধ ধ্বনির এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রেক্ষাপটটা জরুরি। না হলে সব উন্নয়ন বিতর্কই শেষ পর্যন্ত মাথা কোটে অসার নাগরিক তাত্ত্বিকতার আবর্তে, “কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেই হয়” জাতীয় বুলিতে। যারা পাচ্ছে, তাদের যে কিছুই হারাতে হচ্ছে না, আর যারা হারাচ্ছে তারা যে পাচ্ছে না কিছুই – আবহমান এই নির্মম সত্যিটা খোদাই হয়ে থাকে একটি যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে, একটি নীরব চোখের ভাষায়, একটি ঠোঁটের কুঞ্চনে। তেমন এক মুখের সামনে এসে মুখোমুখি বসতে হয়। ঠিক তেমনই একটি পাহাড়ের মাথায় এক স্বচ্ছ শীত অপরাহ্ণে, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বনটিয়ার ঝাঁক আর কাঠঠোকরার ঠক ঠক শব্দে, আর্দ্র বনজ গন্ধে তিরতিরে ঝর্নার ধ্বনিতে, প্রতিভাত হয় ধর্মস্থানের সংজ্ঞা। পুরাণকথার নায়কের আঁতুড়ঘরের হালহদিশ নিয়ে যখন দেশ পোড়ে, সাম্প্রদায়িকতার দাঁতনখ শানিয়ে ওঠে, তখন এক কন্ধ রমণীর বাচন – “ তুমো মন্দির ইটা বালি রে তিয়ারি, আমো মন্দির গাছা লতা পাথরো ঝরনা জন্তু রে!” - ঝোড়ো হাওয়ার মতো আমাদের সনাতন দেবালয়ের পোড়ো দরজাটা সমূলে নাড়িয়ে দেয়। ... ...
- এই অবস্থায় অফ লাইন পরীক্ষা হলে তো নম্বর কমে যাবে ম্যাডাম, সবার কাছে অসম্মান হবে, যদি পাশ করতে না পারি! ইউনিভার্সিটি কি কোনোদিন আমাদের কথা বুঝবে না? চমকে উঠি ওদের কথা শুনে। এই তো কদিন আগে লকডাউন চলাকালীন ওদের কত ভয় ছিল, ‘আমাদের সবাই করোনা ব্যাচ বলবে, আমরা কোথাও চাকরি পাব না’ – সেই দূরের ভয়গুলো তুচ্ছ হয়ে এখন কাছের ভয়গুলো বড় হয়ে উঠেছে! সত্যিই তো, গত দু’বছর প্রাণ খুলে হাসা হয়নি, বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি হয়নি, টিফিন ভাগ হয়নি। বন্ধু, বা শিক্ষক কাউকে মনের কাছাকাছি পায়নি – তাই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাত্মতা হয়নি। এরা নিজেদের খুব একা ভাবছে মনে হচ্ছে। আর সেজন্যই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিপক্ষ ভাবছে। হায় হায়! এতদিন আমি কেবল নিজের দুঃখ নিয়ে বিলাস করছিলাম। এদের দুঃখ, ভয়, টানাপোড়েন আমার চেয়ে শতগুণ বেশি। বরং এই প্রৌঢ়ত্বে এসে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সামলে আমি নিজে যতটা শান্তভাবে এই মনখারাপের মোকাবিলা করছি, এরা তো সেটাও পারছে না। হঠাৎ চিন্তাসূত্র ছিন্ন হয়ে যায় এক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ক্লাসের ছাত্রীর কথা শুনে, - ম্যাডাম দিল্লির দিকে তো বেশ কিছু করোনা কেস হচ্ছিল। পরীক্ষার আগে যদি এদিকে একটু বেড়ে যায়, তাহলে খুব ভাল হয়। ... ...
খাপ কিন্তু শিল্প। চপসিল্পোর মতো খাপসিল্পো। এখানে এডিট স্ক্রিনিং স্ক্যানিং--- ইত্যাদির ব্যাপক কারুকাজ চলে। তো, ওই সুচারু ইন্টেলেকচুয়াল কারুকাজে কমেন্টের 'বাবা উক্ত' শেষের 'ভালোবাসা' 'মানবিক মুখ' কথাটথা ঝড়াকসে বাদ চলে গেলো। এবং ন্যাজাবিযুক্ত স্ক্রিনশটটি পোস্ট হইতে পোস্টান্তরে বাহিত হইতে লাগিলো। ... ...
জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের রাজনীতির বিষয়ী কে? একজন জাজ। জাস্টিস রাজনীতি মানবাধিকার রাজনীতিকে তার নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। মানবাধিকার রাজনীতির ভূমিকা আমরা আগে একটু আলোচনা করেছি। মানবাধিকার রাজনীতি কোনো স্বাধীন রাজনীতি নয়। সর্বমঙ্গলের রাজনীতির যে মাতব্বরী, যে গায়ে পড়া ভাব, তার কমপ্লিমেন্টারিটি বা পরিপূরক। জাস্টিস রাজনীতির একটা অবশ্যম্ভাবী পূর্বশর্ত আক্রমণ। অভিজিত নন্দী ফেসবুকে লিখেছিলেন, “কখনো একটি মেয়ে, কোন পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হলে, তার পরিচয় হয়ে ওঠে সেটাই। সেই পরিচয়টা তখন তাকে ধারণ করে। মেয়েটি তার সবকিছুকেই সেই ছাঁচে ফেলতে বাধ্য হয় – অনেক সময় বাধ্য হচ্ছে না জেনেই। তার চারিপাশের পৃথিবীটা সম্বন্ধে তার ধারণা গড়ে উঠতে থাকে একটি আক্রান্ত মেয়ের প্রাসঙ্গিকতা থেকেই। যাবতীয় ব্যক্তিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা এবং সহানুভূতিও তাকে সেদিকেই ঠেলে দেয়। একই ঘটনা ঘটে যখন একটি দলিত মানুষ বা একজন মুসলমান যদি আক্রান্ত হয় কোন বর্ণহিন্দু দ্বারা। 'আক্রান্তের দর্শন' একটি অবশ্যম্ভাবী এবং বিপজ্জনক সম্ভাবনা আধুনিক পৃথিবীতে।" এইখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোনো একজন ব্যক্তি (বা দশজন ব্যক্তি) র 'আক্রান্ত' নামে একটা পরিচয় গড়ে ওঠা বা গড়ে তোলা এবং তার মধ্যে দিয়েযেন বা পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি হিসেবে জাস্টিস রাজনীতির অনুপ্রবেশ। কিন্তু এইবার আসল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা। আক্রান্ত কি রাজনীতির বিষয়ী? সে নিজেকে বিষয়ী মনে করলেও সে কি আদৌ বিষয়ী? নাকি এখানেও কোনো ছুপা বিষয়ী আছে? ... ...
হ্যাঁ, তারা সকলেই নাস্তিক এবং ধর্ম সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নিজ নিজ চিন্তা ভাবনা, বিচার বিশ্লেষণ রয়েছে। তারা কেউ খুন করে নি, ডাকাতি করেনি, গাড়ি পোড়ায় নি, মসজিদে আগুন দেয় নি, কোরআন পোড়ায় নি। গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতারের সময় একটি প্রশ্নই করেছিল, "আপনারা কী নাস্তিক?" উত্তরটা হ্যাঁ হবার সাথে সাথেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর এই গ্রেফতার হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের চাপের কারণে। অর্থাৎ নাস্তিক হওয়া বাঙলাদেশে একটি অপরাধ বলেই গণ্য হচ্ছে! তাদের ভাল পুরষ্কারই দেয়া হল। ... ...
কিন্তু পত্রিকার একটা ইসে আছে না? মানে ক্যারেকটার। সেই বুঝে খুব উদাসীন ডিরেকশন থাকে। যেমন ধরুন লেখা আছে "এবারে প্যাঁজ দিন"। আপনি যদি প্রশ্ন করেন, আরে,পেঁয়াজ যে দেবো, কতোটা তো বলবেন? তার কোনো সদুত্তর মিলবে না। বড়জোর উত্তর পাবেন, "দিন না, দিন না। এক খাবলা দিয়ে দিন"।তবে এও ঠিক মাপ জোক দেওয়াও মুষ্কিলের। সারা বিশ্বজুরে পাঠককুল - এক মাপে সবাইকে বোঝাবেনই বা কী করে? যদি বলেন তিনটে পেঁয়াজ দিন - তো সেটা কলকেতার তিনটে বিমর্ষ মুড়ির মোয়া সাইজের হতে পারে আবার টেক্সাসের পাঠিকার কাছে থান ইঁট সম ইডাহোর রাক্ষুসে আলুও হতে পারে। ... ...
এ কি! এটা আবার কার ঘর! তার বেড়াল এঞ্জেলের বদলে মোটা, কালো, মস্ত একটা ল্যাব্রাডর কী করছে? ওরে বাবা!! কামড়ে দেবে না তো! আর ওর সুন্দর ফুল ফুল আঁকা ঘরটা? ওটা তো পুরোটাই গ্রে হয়ে গেছে! মা বাবার ঘরে যাবে বলে যেই না দরজাটা খুলেছে, অমনি ঊর্মি সোজা রান্নাঘরে! রান্নাঘরের দরজাটা খুলে দ্যাখে, রাস্তা!!আর একটা পোস্টারের ওপর কী যেন হাবিজাবি লেখা আছে। একটু তলার দিকে ইংলিশে লেখা আছে, “প্যারিস – ওয়ান কিলোমিটার ইস্ট”। আর তার তলায় লেখা, “লোরেইন – ওয়ান কিলোমিটার ওয়েস্ট।“ ... ...
পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে বাংলাদেশ যেমন তিস্তার জল পাওয়ার দাবী তুলেছে, তেমনি আমাদেরও একটি উল্টো দাবী জানানোর জায়গা রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। সেটাও নদীর জল নিয়েই। যে সমস্ত নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে, তার মধ্যে যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, যমুনা আর উত্তর দিনাজপুরের কুলিক রয়েছে। এই নদীগুলোর ওপর ‘রাবার ড্যাম’ দিয়ে জল আটকে রেখেছে বাংলাদেশ। এটি হল জাপানি টেকনোলজি। দেখতে অনেকটা লম্বা টিউবের মত। যেখানে বাতাস ভরে ড্যামের আকৃতি তৈরি করে নদীর জলের প্রবাহ রোধ করা হয়। আর তার ফলে ভারতের দিকের নদী পাড়ের স্থানীয় এলাকার মানুষেরা জল সংকটে ভুগছে। চাষের ক্ষতি হচ্ছে। ... ...
আনন্দবাই-এর জীবন বড়ো সুখের ছিলনা। মহারাষ্ট্রের কল্যাণে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে জন্ম ৩১ মার্চ, ১৮৬৫। পরিবারের ১০ সন্তানের মাঝে ৬ নম্বর সন্তান তিনি। তাঁর আরও পাঁচ বোন এবং চার ভাই ছিল (অবশ্য দুজন পুত্র সন্তানের অকালমৃত্যু হয়)। মাত্র ৯ বছর বয়সে ৩১ মার্চ, ১৮৭৪ সালে বিয়ে হল তাঁর চেয়ে ২০ বছরের বড়ো গোপালরাও যোশীর সাথে। আনন্দবাই স্বামীর রাখা নাম – “হৃদয়ের আনন্দ”, বাবার বাড়িতে নাম ছিল যমুনা। আনন্দবাই-এর ১৪ বচর বয়সে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে এক সন্তানের জন্ম হয়। ১০ দিনের মাথায় সে সন্তান মারা যায়। তাঁর গভীর উপলব্ধি হল যে উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকার জন্য শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা তাঁকে চিকিৎসক হবার ব্রতের দিকে যেতে উজ্জীবিত করে তুললো। সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁর উপলব্ধি আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায় – “একটি শিশুর মৃত্যু তার পিতার কোন ক্ষতি করেনা, কিন্তু মা চায় না তার সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যাক।” ... ...
তার মানে ভুলেও ভাববেন না যে আমি খেলাধুলো ও শরীরচর্চাকে (এমনকি বিনোদনকেও) গুরুত্বহীন মনে করছি। সেটা একেবারেই নয়, বরং প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছুটা শরীরচর্চার গুরুত্ব বোঝার মত সচেতনতা আসাটাকে আমি সামাজিক অগ্রগতির একটা দিক বলেই মনে করি। সুস্থ শরীর মানুষের জীবনযাত্রার একটা প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান আর সেই কারণেই জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের একটা ধাপ হল নিয়মিত শরীরচর্চা। অনেকে সেটা খুব ভালবেসেই করেন, যেমন আমার পরিচিত একটি ছোট্ট মেয়ে রোজ দশ কিলোমিটার দৌড়োয়, যেটা না করতে পারলে নাকি তার মন ভাল থাকে না! কিন্তু সেইটুকু শরীরচর্চার জোরে তো অলিম্পিকের মানে পৌঁছানো যায় না। অলিম্পিকের বিজয়ী ক্রীড়ানক্ষত্ররা জীবনের অনেক কিছু বাদ দিয়ে ক্রমাগত যে অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে প্রায় যন্ত্রের সমকক্ষতায় নিয়ে যান, স্বাভাবিক জীবনে তো সেই মানের শরীরচর্চার প্রয়োজন নেই। এই মানে পৌঁছতে পারার পেছনে সেই প্রতিযোগীর অসীম পরিশ্রম, মনোযোগ, আত্মত্যাগ অনেক কিছু আছে কিন্তু এই এতসব করে শেষ পর্যন্ত তিনি যা করলেন (মানে কয়েক ফুট বেশি লাফানো বা কয়েক মিলিসেকেন্ড কম সময়ে দৌড়োনো) তা মানুষের মৌলিক উন্নয়নে কি কোথায় কাজে লাগল? যদি কিছু না-ই করে, তবে কেবল কিছুটা বিনোদনের স্বার্থে আমরা কতটা অপচয়কে ‘দরকারি’ বলে মেনে নেব আর কেনই বা নেব! বুলফাইটও তো একসময় দারুণ জানপ্রিয় বিনোদন ছিল, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মরক্ষার স্বার্থে কুস্তির মারপ্যাঁচ জেনে রাখব সেটা ভালো কথা কিন্তু বিনা প্রয়োজনে দুটো লোক পরস্পরকে ঘুষোচ্ছে এই দেখে আমরা আমোদ পাবো, এটা কতটা স্বাস্থ্যকর বিনোদন, একবার ভেবে দেখব না? ... ...
এটা রিসোত্তোর রেসিপির বা ইতিহাস লেখার রচনা নয়, তাই সেই সব বিষয়ে ঢুকছি না। তবে যেটা বলার, রান্নার টেকনিক ছাড়াও আর যেটা প্রধান পার্থক্য করে দেয় রিসোত্তো কোয়ালিটির তা হল যে চাল ব্যবহার করা হয় তা। রিসোত্তোর ছবি দেখেই ‘আমাদের গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে এই জিনিস আরো ভালো হত’ এমন হল্লা মাচাবেন না প্লিজ। সব জিনিসের একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে! অবশ্য আপনি নিজের নিজের সিগনেচার ডিস “রিসোত্তো উইথ এ গোবিন্দভোগ টুইস্ট” বানাতে চাইলে কিছু বলার নেই! যদি পারফেকশন আনতে পারেন, কে জানে হয়ত পায়েস ছেড়ে গোবিন্দভোগ গ্লোবাল স্কেলে পৌঁছে যাবে পাতে পাতে! এখানে জাস্ট এটুকু বলে রাখি এই মুহূর্তে রিসোত্তো বানাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় চালু চাল তিনটি – কারনারোলি, আরবোরিও এবং ভিয়ালোনে ন্যানো। আর একটা ছোট্ট টিপস -এই চাল দিয়ে রিসোত্তো রান্নার আগে প্লিজ চাল ধোবেন না বারে বারে! একবারে না ধুলেই ভালো হয়। ... ...
কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভে আমেরিকা উত্তাল। রাজনৈতিক ভাবে, আমেরিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সম্মান অর্জন প্রচেষ্টা আজ এক নতুন বিস্ফোরক বাঁকে। রাজনৈতিক আলোচনা চলবে। এই প্রবন্ধটি তিন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ লেখকদের লেখা প্রসংগে। নবারুণ ভট্টাচার্য্য প্রতিষ্ঠিত 'ভাষাবন্ধন' পত্রিকায় ২০১৭ র উৎসব সংখ্যায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত। ... ...
আমি অবশ্য বাইরে বেরোতাম পাড়ার মাতাল দেখার জন্য। আর অন্য কোনদিন দেখতে পেতাম না। আমার বাড়িতে কস্মিনকালে কাউকে মদ খেতে দেখিনি। দাদু সুনীল-শক্তির যুগে কবি হয়েও খেতেন না। (আত্মীয়দের মতে, এটা ওনার জীবনের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ কীর্তি। প্রথমটা হলো আনন্দবাজারে না লেখা) টিভিতে যদিও দেখেছি উত্তম কুমার মদ খাচ্ছেন। রাজেশ খান্না দোলের দিন মদ খেয়ে আকাশে উড়ছেন, নিচে রেখা। শুধু দোলের দিনই মাতালরা কেন দৃশ্য হয়, এটা সেই আমলে একটা ভাববার মত প্রশ্ন ছিল। আমি বাংলা রচনায় এদের কথা লিখতাম। আমি জানতাম মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধতা একমাত্র গির্জার ঘন্টা আর এদের স্খলিত পদক্ষেপেই ভাঙে। তবুও অনেক জানা বাকি ছিল। ... ...
“কেউ যায় না/ শুধু জায়গা বদলে বদলে/ সব কিছুই/ জায়গা বদলে বদলে/ সকলেই/ থাকে।“ আমাদের পুবদিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকালে যে টালিছাদ বাড়িটা দেখা যায়, তার ইটের দেয়ালে গতকাল সকাল থেকে নীল রঙের প্রলেপ লাগতে শুরু করেছে। নতুন নীল রং। যেন আশ্বিনের আকাশ। ওই বাড়িটার মানুষজনের সাথে আমার ব্যাক্তিগত চেনাশোনা নেই। কেবল সকালে-রাতে একগুচ্ছ সম্পর্ক লক্ষ্য করি। সবুজ হাওয়াই চটি, বেতের চুপড়ি, ছেঁড়া টেডি বিয়ার, কালো চশমা, হাতল ভাঙা চেয়ার, বেগুনি কামিজ – এসবের দৈনন্দিনতায় আঁচ করে নিতে চাই টালিছাদের নিচে বসবাসকারী নারীপুরুষদের, যেমনটা চিনতে চেয়েছিলাম সেই ইমরান নামের কিশোরকে, যার জন্য দিদি জাসমিন ক্যামকর্ডারে গুছিয়ে রাখছিল সুখ-দুঃখ, যেমনটা বুঝে নিচ্ছিলাম ওই দেশপান্ডে আন্টিকে, যে যত্নে লালন করে নিঃসঙ্গ ইলার ভালো থাকা-খারাপ থাকা। লাঞ্চবক্স দেখে এলাম। দু’বছর আগে, সম্পর্ক নিয়ে তৈরী হওয়া আরেকটা ছবির কথা খুব মনে পড়ছে। ধোবিঘাট। ... ...
শ্রীধর তো মানুষই না। সে তো তার থেকে হায়ারার্কিতে অনেক অনেক নীচে। মধ্যিখানে আছে নাজির টাকলুবাবু, মানে শ্রী নিশিকান্ত পরিজা, যিনি রঙিন পর্দা থেকে রেফ্রিজারেটর নাজিরিপনা করে ম্যাডামের সামনে দাখিল করবেন। বিশাল চুনকাম করা বাংলোর প্রতি ঘরে তীব্র চুনকামের গন্ধে মাথা ধরে যায়। তিনটে বাথরুম-পায়খানার একটা পায়খানায় এক-একদিন হেগে দেখা যায় তিনটের মধ্যে দুটোরই নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্লাশ করলে মল যাচ্ছে না। সে কী ট্রমা, আবার ফোন করে পারিজাকে ঝাড়ে সু। প্লাম্বার ডাকে পারিজাবাবু। ওভারহেড ট্যাংকি থেকে জল ঝরছে তো ঝরছেই। বেওয়ারিশ কুকুরে বেড়ালে বাড়িতে এসে যেখানে সেখানে বসে থাকছে। ইঁদুরেরা সোফার ভেতরে বাসা করে সমস্ত স্পঞ্জ গদি কুটিকুটি করে ফেলছে। ... ...
তিরিশ বছর আগে দু দিনের পরিচয়ে হলুদ, ধূলি ধূসরিত ওয়ারশ দেখেছি । রাস্তায় রাশিয়ান লাদা কিছু ট্রাবান্ত গাড়ি। তাদের কেশে যাওয়া ধোঁয়াতে উৎকট গন্ধ - সেগুলো টু স্ট্রোক এঞ্জিনের মোটর। যুদ্ধে আশি শতাংশ ওয়ারশ বিচূর্ণ হয়। সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ কিছু হয়েছে তবে দেওয়ালে অনেকদিন চুনকাম হয়নি। সেনাটোরস্কা ১৬ নম্বরে আমাদের অফিস । জাতীয় থিয়েটারের প্রায় উলটো দিকে। সে বাড়িও পঞ্চাশ বছর রঙ চুন দেখেনি। রাস্তা থেকে একটা গেট দিয়ে যেন কারো উঠোন পেরিয়ে দোতলায় অফিসে ঢোকা। ঝাকশেভো থেকে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেছে। সেই যে বেয়াতা, সন্ধ্যেবেলা একাকী ভারতীয়কে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেখে সন্দিহান হয়েছিলেন, তিনি অ্যালানের খাস সেক্রেটারি। বেয়াতা মিটিং রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন। কর্পোরেট ব্যাঙ্ক আর ব্যাঙ্কিং সম্পর্ক বিভাগ নিয়ে কুল্লে পনেরো জন এলেন আমার বাণী শুনতে । ... ...