জনির মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো................................. ছেলেটাকে দেখলেই বড়রা ওকে বলত, "খাও খাও। বেশি বেশি খাও । ভালো ভালো খাবার খাও।".............................. আইসক্রিমের কোণ চাটতে চাটতে দুগ্গা ঠাকুর দেখছিলাম। এমন সময় পকেটে কি যেন খরখর করে উঠলো........ ... ...
“আহা মরি কী বাহার” গুপী-বাঘা থাকলে গুরুর ছোট্টদের সাজানো প্যান্ডেল দেখেটেখে ঠিক মহানন্দে গলা ছেড়ে আবার গেয়ে উঠত এই গানটা ।সত্যি,কী সুন্দর এঁকেছ তোমরা, মা দুগগা যেন সশরীরে নেমে এসে ছুটির মেজাজে আয়েস করে বসেছেন। তা,পুজো কেমন কাটল তোমাদের? নিশ্চয়ই হাজারো মজায়, ফুর্তিতে আর আনন্দে কাটিয়েছ। আমি তো দিল্লীতে থাকি,আর আমাদের পাড়ায় অনেকদিন ধরে পুজো হয়ে আসছে। কিন্তু এইবার পুজোয় একদম অন্যরকম একটা মজা হল,বলি শোন সেই গল্পটা। ... ...
যুবকরা যত্রতত্র বাজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যুবক বয়স হল খাটনির সময়। হাতের মুঠোয় ধরা জলের মতো যৌবনকে গলে যেতে দেবেন না। রাজ্য প্রগতির পথে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে, রথের রশিতে হাত লাগান। ঘাম ঝরান। যুবকরা স্বামী বিবেকানন্দের পথ অবলম্বন করে ফুটবল খেলুন, যুবনেতাদের অনুসরণ করে প্রোমোটারি করুন, মেয়ে দেখলে সিটি দিন, পাড়ার ক্লাবে তাস পেটান, চোর পেলে পিটিয়ে মারুন, যা খুশি করুন। কেবল আলস্য অভ্যাস করবেন না। গপ্পো থেকেই আসে গুজব। গুজবের সঙ্গে অপপ্রচার, আর অপপ্রচার মানেই চক্রান্ত। অলস মস্তিষ্ক হল মাওবাদীদের কারখানা। হীরকরাজ্যে আলস্য ও চক্রান্ত দুইই নিষিদ্ধ। যুবকরা নিজেরা নিজের মূল্য না বুঝে অকারণ রাজনীতি ও চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লে তাদের চোখে আঙুল্ দিয়ে বোঝানো হবে। অলস যুবক দেখলেই নাগরিক কমিটি গড়া হবে। শোধরানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও কাজ না হলে থানায় গিয়ে কড়কে দেওয়া হবে। এর নাম বেলঘরিয়া পদ্ধতি। এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পাড়ার ক্লাবে নাম লেখান, নাগরিক কমিটির হয়ে মাতব্বরি করুন, বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করুন। মোট কথা গঠনমূলক কাজে ঘাম ঝরান, কারণ কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। ... ...
দ্যাখো, বাঙালিরা জাতি হিসেবে সত্যিই ভীরু প্রকৃতির। ওদের দলের সভাপতি তপন ঘোষকে আমি খুব ভালো করে চিনি। কয়েক বছর আগে, গঙ্গাসাগরে এক মাড়ওয়ারি সোসাইটির গেস্টহাউসে থাকাকালীন, হিন্দু সংহতির কয়েকজন সদস্যের সাথে স্থানীয় মুসলমানদের খুব ঝগড়াঝাঁটি হয়। মুসলমানরা ওদের আক্রমণ করে। সঙ্ঘের লোকেরা তখন তাদের বাঁচায়। কিন্তু সঙ্ঘেরও কিছু নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে, সঙ্ঘ সব কিছুতে জড়াতে পারে না। এমনিতে হিন্দু সংহতির মত দলগুলোর দরকার আছে ঠিকই। ওদেরকে (মুসলমানদের) ধরে পেটানো খুবই দরকার। একবার তপনদা আমাকে অনুরোধ করেছিল কয়েকজন হিন্দু সংহতি সদস্যকে আশ্রয় দেবার জন্য। কিন্তু আমি ওদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, কারণ আমি শুনতে পেয়েছিলাম ওরা সঙ্ঘের নামে খারাপ খারাপ কথা বলছে। ... ...
এর মধ্যে বাড়িতে একদিন কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে খেতে ডেকেছিলাম। তার মধ্যে রেখা আর আলিশাও ছিল। ওদের আগেই ফুটফুটে দুটো যমজ হয়েছিল আলিশার গর্ভে, সাম্প্রতিক কালে রেখা অন্তসত্ত্বা। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা চারমূর্তি বসে গল্পগাছা করছিলাম। কথাবার্তা ঘুরতে ঘুরতে গে ম্যারেজ, লেসবিয়ান কাপল, আই ভি এফ, দত্তক ইত্যাদি হয়ে কিভাবে যেন কাটজুতে পৌঁছে গেল। আমি বললাম যে প্রাক্তন বিচারপতি কাটজু মনে করেন, বিয়ের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সন্তান উতপাদন ও প্রতিপালন। তাই যেহেতু গে কাপলদের সন্তান হবে না, তাই গে ম্যারেজ অর্থহীন। আইলীন হঠাৎ রেগে গেল। কাটজুর উদ্দেশ্যে কিছু বাছা বাছা গালাগাল দিয়ে শুতে চলে গেল। খানিকবাদে ড্যানও চলে গেল। আইলীন যদিও তুমুল এলজিবিটি সমর্থক তবু এরকম রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত রেড ওয়াইন একটু বেশি হয়ে গেছে। ওরা দুজন চলে যাওয়ার পর আমি এই কথাটা গণেশকে বলতে ও অবাক হয়ে আমাকে বলল, ও তুমি জান না? আমি বললাম, কী জানব? ... ...
কোটিল্য এরপর নানান মদের লিস্টি দিয়েছেন, যেমন মেদক, প্রসন্ন, আসভ, অরিষ্ট, মৈরেয় আর মধু। মধু মানে কিন্তু হানি নয়, আঙুরের থেকে তৈরি ওয়াইন। উনি রেসিপিও দিয়েছেন। একটা শুনুন। মৈরেয় বানাতে কী কী অ্যাডিটিভ লাগে। মেষশৃংগী গাছের ছাল গুড়ের সাথে মিশিয়ে বাটতে হবে। তার সাথে দিন গোলমরিচ ও ত্রিফলা চুর্ণ। ব্যাস,এটাই সিক্রেট রেসিপি। আমের রস থেকেও মদ হোতো। কতো রকমের মদ ছিলো? আয়ুর্বেদে বলে ষাটটি। কোটিল্য উল্লেখ করেছেন প্রায় দশ-বারোটির কথা। অগ্নিপুরাণেও আছে সাত-আটটির নাম। তন্ত্র ঘাঁটলেও গোটা দশেক জেনেরিক মদের নাম পাওয়া যায়। ... ...
আঠারো শতকের শেষভাগে সামান্য কয়েকটা লেখায় বিক্ষিপ্ত প্রয়োগ দেখা গেছে। তবে সেটাকে ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ না বলে ‘হোমো-ইরোটিসিজম’ বলা যায়, যেটা সমকামিতার একটা ‘সাময়িক’ সংস্করণ। দুই পুরুষ বা দুই নারীর মধ্যে ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণমাত্র। ‘ইন্দিরা’তে বঙ্কিমচন্দ্র ইন্দিরা ও সুভাষিনীর মধ্যে এরকমই একটা সম্পর্ক দেখিয়েছিলেন। পরবর্তী যুগে কবিতা সিংহের একটা গল্পে একইভাবে দুই নারীর মধ্যে ‘হোমো-ইরোটিসিজম’ এসেছে। সমরেশ মজুমদার একটি উপন্যাসে হালকভাবে প্রসঙ্গটা ছুঁয়ে গেছেন। ষাটের দশকে হাংরি মুভমেণ্টের সময় অরুণেশ ঘোষের ছোটগল্প ‘শিকার’ ছাড়া আর কোনো নথি চোখে পড়ে নি। একটা ব্যাপার বেশ বোঝাই যাচ্ছে, যৌনতা বস্তুটাই যখন মারাত্মক ট্যাবু ছিল তখন ‘অপর যৌনতা’ নিয়ে কাহিনী নির্মাণ কল্পনারও দূর অস্ত। তাছাড়া সাহিত্যিকরা উপাদান পাবেনই বা কোত্থেকে? ... ...
কার্যত এখন দুয়ারে বাজার। বাড়ি থেকে বেরোলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি, ফল সবই সারি সারি। দু’পা এদিক ওদিক হাঁটলেই পথের পাশেও ছোটখাটো বাজার – মাছ, মাংস সবই মিলছে। মলে ঢুকলে অজস্র পণ্যের মধ্যেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেলোফেনে মোড়া থার্মোকলের পাত্রে টুকরো করে কাটা সবজি। ছোট পরিবারের উপযোগী শুক্তো রাঁধতে গেলে যে যে আনাজ প্রয়োজন সবই সাজানো রয়েছে তাতে। তবে সে সবজির সতেজতা, কোটার নিপুণতা – এসব যাচাই করার সূক্ষ্ম বিচারবোধসম্পন্ন দক্ষ বাজারু আজ আর কোথায়? গুছিয়ে বাজার বা রসিয়ে রান্না করার সেই মানসিকতা বা অবসর কোথায় আজকের অণু-পরিবারের ব্যস্ত জীবনে? ছেলেমেয়ের পড়াশুনো সামলে কর্তা-গিন্নি নাজেহাল কর্পোরেট যুগের চাকরি বাঁচাতে। আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কবেই বিদায় নিয়েছে শিল-নোড়া। মডিউলার কিচেনে স্থান করে নিয়েছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার বা ফুড প্রসেসর। আদা-বাটা, রসুন-বাটা তো পাউচেও হাজির। সর্ষের পাউডার প্যাকেট থেকে বের করে উষ্ণ জলে গুলে নিলে সর্ষেবাটাও রেডি। সাবেকি সিনেমা হলের নস্টালজিক সাদা-কালো ছবির জায়গায় এখনকার মাল্টিপ্লেক্স বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যে যেমন বিশেষ ধরণের মুভির চল, ঠিক তেমনই খেয়াল করলে দেখা যাবে নোনা-ধরা, হলুদ দেওয়ালের রান্নাঘর থেকে বেরনো সেই সব অতুলনীয় পদগুলির জায়গা নিয়েছে আজকালকার ফিল-গুড ফ্যামিলির টিপটপ মডিউলার কিচেনের উপযোগী হালফিল ক্যুইজিন। ... ...
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে। ... ...
ষোলো তারিখ বুধবার রোজকার মতো সকাল ন’টার মধ্যে ভাত খেয়ে বেরিয়ে গেল পিনাকী। দুপুরে বাড়ি আসে না, সকালেই খাওয়া সেরে নেয়। প্রথমে একবার যাবে যাদবপুর। সেখান থেকে নির্মলের দোকান। একবার দাঁড়াতে হবে মুখোমুখি হুল উঁচিয়ে। ইলিয়াস বা মদনকে বললে অবশ্য দু-চারটে মোষ নিঃশ্বব্দে গায়েব হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয়। কেমন ভাবে আস্ত মোষ অদৃশ্য হয়, ম্যাজিশিয়ানরা বলে না। কিন্তু মোষ খ্যাদানো বড় কথা নয়। বড় কথা হল অপমানিত পরাজিত লিঙ্গের পুনরুত্থান। হেরো পুরুষ বলে কিছু হয় না। হেরে যাবার পর আর পুরুষ থাকে না। তার কুন্ডলিনী অনন্ত শয্যায় শায়িত হয় মূলাধারের চৌবাচ্চায় জিলিপির মতো বেবাক পেঁচিয়ে। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখে, মণিপুর চক্রে দশ পাপড়ি নীল পদ্মের ওপর দাপাদাপি করছে এক কৃষ্ণকায় মোষ। কী বলিষ্ঠ তার গড়ন! মোষ নাচছে, পদ্মের পাপড়ি দুলে উঠছে। শ্বাস ফেলছে আর মেঘের মতো জেগে উঠছে দু’গাছা মেয়েলি চুল। ঘুমের মধ্যে সে কঁকিয়ে ওঠে, কিন্তু বাধা দিতে পারে না। ... ...
“হোক ঝঞ্ঝা” শুরু হয়েছিল একটা স্পেসিফিক ঘটনা থেকে। বয়েজ হোস্টেলের কাছে একটা ফেস্টিভ্যালের সময়ে একটি মেয়ে মলেস্টেড হয়েছিল। উপাচার্য থেকে শুরু করে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমপ্লেন্টস কমিটি কেউ সঠিক স্টেপ নেয়নি। কোন অ্যাকশনই হয়নি প্রথমটা। পরে, যখন কমপ্লেন্টস কমিটি বসল, অধ্যাপিকা সঙ্ঘমিত্রা সরকার, ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের হেড, কমিটির চেয়ার পার্সন মেয়েটির বাড়ি গিয়ে বলে বসলেন, তুমি সেদিন কী জামাকাপড় পরে ছিলে? তুমি কি মদ্যপান করেছিলে? ওয়্যার ইউ আন্ডার এনি কাইন্ড অফ ড্রাগস? মেয়েটি, মেয়েটির পরিবার অপমানিত বোধ করে। ভিক্টিমের চরিত্র হনন করে, ভিক্টিম অ্যাবিউজ করে, অপরাধের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া পুরনো ট্যাকটিক্স। কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রদের কেরিয়ার বাঁচাতেই , কমপ্লেন্টস কমিটি এভাবে মেয়েটির ওপর কিছুটা দায় চাপিয়ে একটা হালকাফুলকা অভিযোগ লিখিয়ে অল্প শাস্তির মধ্যে দিয়ে ছেলেগুলোকে ছাড় দিয়ে দিতে চাইছে। ছাত্রছাত্রীরা এটাই বুঝল। আর ফেটে পড়ল হোক ঝঞ্ঝা। ... ...
গোড়াতেই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যায় – এরকম হিংস্রতা, রক্তপাত, অবান্তর মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস আমাদের কাছে খুব অজানা বা অপ্রত্যাশিত ছিল কী? ওপরে যে ছবিটি আছে সেরকম ছবি তো আমরা যখন তখন দেখে থাকি। আমাদের স্নায়ু বা চিন্তার ওপরে আদৌ কোন ছাপ ফেলে কি? আমরা তো সইয়ে নিয়েছি। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মনন, অনুভূতি বা, একটু বাড়িয়ে বললে, আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তি এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। Numbing of our collective consciousness – আমাদের সামগ্রিক চেতনার বিবশতা। কিন্তু এগুলো তো একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে, প্রতি মুহূর্তে সমস্ত রকমের মিডিয়ার অপার মহিমায়, ছাপার অক্ষরে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় (যদি কখনো কিছু হয়ে থাকে) আমরা একটি অসংবেদনশীল পিণ্ডে পরিণত হচ্ছি? যদি সমাজতত্ত্ব এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের প্রেক্ষিতে দেখি তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিকারক যে ফলাফল জন্ম নিচ্ছে তার চরিত্র হল শিশু থেকে কিশোর এবং সদ্য যৌবনে পা-রাখা (বাংলা শুধু নয়, সমগ্র ভারত জুড়েই) প্রজন্ম একে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। এমনকি হিংস্রতার মাঝে আমোদও পাচ্ছে। ... ...
পাখিদের তো আর শেখানো যায় না যে তোরা হাওড়া ব্রিজে আর মল ত্যাগ করিস না বাপু! এত তো জায়গা রয়েছে! কিন্তু দেখা গেল শুধু পাখি নয়, মানুষদের শেখানোও খুব চাপ – এত পোস্টার, অনেক সচেতনতা ক্যাম্পেনের পরেও পাবলিক পানের আর গুটকার পিক হাওড়া ব্রিজের পিলার গোড়ায় ফেলা বন্ধ করল না। পিলারের গোড়ার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকেও তেমন সাফল্য এল না। আগে যেমন লিখেছি, পানের/গুটখার থুতু বেশ বেশ অম্ল এবং তাই লোহার জন্য ক্ষতিকারক। প্রথমে পিলারের গোড়া গুলি বার বার রঙ করা হচ্ছিল এবং পরিষ্কার করা হচ্ছিল – কিন্তুতেই কিছু হল না। বরং দেখা গেল মাত্র চার বছরে, ২০০৭ থেকে ২০১১ এর মধ্যে পান/গুটখার পিক পিলার ক্ষইয়ে দিয়েছে ৩ মিলিমিটার! দৈনিক হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ (১-৫ লক্ষের মধ্যে)। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগও যদি থুতু ফেলেন, তাহলে দৈনিক পিলারে থুতু ফেলছেন কয়েক হাজারের মত লোক! সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়! ... ...
দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো। সং সুন নামে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এক কোরিয়ান কবির লেখা । রাজদরবারে কাজ করতেন আগে, পরে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান, লেখালিখি নিয়েই জীবন কাটান। এই কবিতাটার পিটার লি-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমি বাংলা করেছি। এখানে যদি একেকটা লাইনকে দেখা যায় আলাদা করে, বোঝা যাবে প্রত্যেকটায় আসলে দুটো বাক্যাংশ আছে, দুটো ছবি। প্রথম লাইনেই যেমন দুটো স্টেটমেন্ট, একটা বলছে দশ বছর পরিশ্রমের কথা, অন্যটা বলছে বাড়ির কথা। দ্বিতীয় লাইনে তো আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে লাইনটাও, বাড়িটারই মত... যার অর্ধেকটায় থাকে বাতাস, আর বাকি অর্ধেকটায় চাঁদ। শেষ লাইনেও অমন দু ভাগ, প্রথম অংশটা বলছে বাড়িতে ঢুকতে/বসতে দেবার জায়গা নেই (যেহেতু বাতাস ও চাঁদ আগেই সবটা দখল করে রেখেছে), আর শেষ টুকরোটা জানাচ্ছে, বাড়ির বাইরেই বরং অতিথিকে গ্রহণ করা হবে। ছোট্ট একটা ছিমছাম কবিতা। তিন লাইনের জাফরির ফাঁক দিয়ে আসা একটুকরো গল্পের আভাস। শিজো আসলে এরকমই। ... ...
সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়। ... ...
এটা কি শুধুই সমাপতন যে একবছর আগে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেবার দিনটি অর্থাৎ ৫ আগস্টকেই বাছা হয়েছে রামমন্দিরের শিলান্যাসের জন্য? নাকি মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সম্পূর্ণ বঞ্চিত ও হতোদ্যম কাশ্মীরের ক্ষতে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে দেশজোড়া সংখ্যালঘুকে বোঝানো হল তার দৌড় কতটা? তৈরি করা হল দুষ্টের দলন শিষ্টের পালন জাতীয় একটি মিথ? বলার চেষ্টা হল কি যে তুমি যদি মুসলমান-বিদ্বেষী হও তবে রামলালা স্বয়ং তোমার রক্ষাকর্তা? সরাসরি সেলিব্রেশন বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে, সুতরাং আইস, আমরা অপ্রত্যক্ষভাবে দুষ্ট-দলন দিবসটিকে যথোচিত মর্যাদায় পালন করিয়া ছাড়ি। ... ...
মির্জা অসদুল্লা খান গালিব। নিজের কালে পরিচিতই ছিলেন ‘মুশকিল-পসন্দ্’ বলে। তাঁর চারপাশে তৈরি হয়েছে এনিগমার কুহেলি। কারণ তিনি আধুনিক, তিনি যুগের থেকে এগিয়ে। উর্দুর মহানতম কবি। কিন্তু শুধু সেইটুকুই নয়, এ কেতাব জুড়ে উঠে এসেছেন এক রক্তমাংসের মানুষ, সব দুর্বলতা, ব্যর্থতা নিয়ে। ইংরেজিতে যাকে বলে—‘আপ, ক্লোজ অ্যান্ড পার্সোনাল’। তাই এ বইয়ের স্বাদই আলাদা। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
- বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ লড়ছে এমন কিছু মুক্তিসেনা লুকিয়ে আছে ঐ ক্যাম্পগুলোতে। অস্ত্র চালান করা, আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশন অপারেট করা, সবেতে আছে ছেলেগুলো। শিতলখুচি বর্ডার দিয়ে ওরা পারাপার করে। আজ যাদের দেখছো, কাল গেলে দেখবে তাদের মুখগুলো পালটে গেছে। সে যাক, ওদের দেশের স্বাধীনতার লড়াই ওরা কেমনভাবে লড়বে ওরা বুঝবে। কিন্তু খুকি... - খুকি কী ? খুকি কেমন কইরা আসলো এইসবের মধ্যে ? মা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে। - শোনো, তোমার খুকি না হাতে এতোদিন হাতকড়া পরতো, যদি ইন্দিরা গান্ধীর হুকুমে পুলিশ অন্যদিকে তাকিয়ে না থাকতো। রিলিফ দেবার নাম করে চরে যায়, ছেলেগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করে। একটি মুসলমান ছেলের সঙ্গে নাকি সম্পর্কও হয়েছে। সারা টাউনে ঢি ঢি পড়ে গেছে তো। আর তার সঙ্গে তুমি মেয়েকে পাঠিয়ে দিলে! ... ...
রাইটার্সের সামান্য কেরাণী প্রমদাকান্ত, বড় দুই মেয়ের বিয়ের ভাবনাতেই কাহিল হয়ে থাকেন, আবার একটা মেয়ে৷ একটাও কি পাশে দাঁড়াবার মত কেউ জন্মাতে নেই! আর এই তো দেশের অবস্থা! যখন তখন স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে! আরে তোরা পারবি ঐ শক্তিশালী ইংরেজদের সাথে? আর সত্যি তো ইংরেজরা না দেখলে এই দেশটার কি হাল ছিল সে তো জানাই আছে৷ এইসব ভাবনার মধ্যে মানদার চাঁছাছোলা গলা ভেসে আসে ‘অ রুনু মায়ের কাছে একটু বোস দিকি, আমি খুকীটারে একটু পোস্কার করে নিই’৷ জলের স্পর্শে নবজাতিকা তীক্ষ্ণকন্ঠে কেঁদে ওঠে আর মানদার গজগজ চলতে থাকে ‘থাক থাক আর কাঁদে না – ঐ তো মেয়ের ঢিপি – তার আবার অত আদিখ্যেতা কিসের’? সাড়ে ছ বছরের রুনু ঠিক বুঝে যায় এই বোনটা একেবারেই অবাঞ্ছিত৷ ৩ বছরের ঝুনু অতশত বোঝে না, বোনকে দেখতে চায়, হাত বাড়াতে যায় – মানদার ঝঙ্কারে ভয় পেয়ে সেও বোধহয় নিজের মত করে বুঝেই যায় যে বোনটা এমনকি তার চেয়েও বেশিঅনাকাঙ্খিত৷ সরলাবালার জ্ঞান আছে কিনা বোঝা যায় না, চুপচাপ পড়ে থাকেন৷শুধু অনিলাবালা বলতে থাকেন ভগবান যা দেন তাই হাত পেতে নিতে হয়৷ অশ্রদ্ধা করতে নেই৷ তবে বাড়িতে জামাই আছে, তাই গলা তেমন চড়ে না৷ ... ...