হলুদ ফুল ছিলো চোখের পাতা ছুঁয়ে শহরও আলোময় পাপে ও উত্তাপে সে ছিলো মধুমাস, মেলাতে কত লোক কেনো যে স্মৃতিরতি, কেনো যে নীরবতা কেনো যে মনে পড়ে, পাথুরে অবকাশে ... ...
সন্ধেবেলা দয়াময়ীর এই কথাটুকু মনে পড়ল দয়াময়ীর দয়াময়ী ছাড়া কেউ নেই। আজানে তখন আকাশ ফেটে গেছে, গলে গলে নামছে অন্ধকারের প্রথম দিককার রঙ। পেয়ারা ফুলের মতো মুখ নিয়ে ও কান পেতে শুনল সরসর করে কোথাও কিছু একটা বাজছে। বোঝা গেল, একেবারে একা একটা তালগাছ মাঠের মাঝখানে হাওয়ায় পাতাদের কাঁপাচ্ছে। ভাত খেতে বসে ওঁর বুক উদাস হয়, একজন কেউ থাকলে ভালো হত। এই এতবড়ো নীলসাদা রঙীন বাড়ি,দেওয়ালে সদ্য চুনকামের গন্ধ বুকে উঠে আসে। চিরকাল মাটির ঘরে, পাতার ঘরে দিন কেটেছে। সরকারি প্রকল্পের একা একা বিধবার মতো ফাঁকা বাড়িতে অস্বস্তি হয়, সন্ধ্যামালতী ফুলের চেয়েও নরম মা দেখে যেতে পারল না এই ঘরদোর। নিজেকে নিজের জল গড়িয়ে নিতে হলে, ভাতের পাতে কাঁচালঙ্কা-নুন বারবার আনতে যেতে হলে ভালো লাগে না। এতো যত্নে করা রান্নাবান্না অর্থহীন হয়ে পড়ে যতোক্ষণ না কেউ সেই খাবার খেয়ে একমুখ হাসিতে তারিফ করে ওঠে। চিংড়ি মাছের মাথার চচ্চড়ি তারিফ না করলেও মুখ তুলে অন্তত বলুক বিচ্ছিরি হয়েছে খেতে, এ রান্না খাওয়া যায় না। পরের দিন সে সব মায়ামমতা ঢেলে এমন মোচাঘন্ট রাঁধবে সেদ্ধ ছোলার তুক কাজে লাগিয়ে যে, কর্তাকে থালা অবধি চেটে খেতে হবে। ... ...
সংখ্যার ভিতরেও অজস্র সংখ্যারা থাকে যেন বাসাবাড়ি, বৃক্ষকোটরে অরণ্য প্রয়াস দরজা জানলা ডালপালা, ফুলফল পাতায় মানুষ বা কীটের বসবাস, যাতায়াত বারোমাস ... ...
সংখ্যার ভিতরেও অজস্র সংখ্যারা থাকে যেন বাসাবাড়ি, বৃক্ষকোটরে অরণ্য প্রয়াস দরজা জানলা ডালপালা, ফুলফল পাতায় মানুষ বা কীটের বসবাস, যাতায়াত বারোমাস ... ...
গলির শেষ প্রান্তে একসময় বাজত সুরের রজনীগন্ধা গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে, শীতের মিঠে রোদে ছাদে উঠে মেলে দিত ছাপা কাপড়, ছড়িয়ে যেত রেক্সোনা সাবানের চেনা গন্ধ কৈশোর চাইত আরো একটু গায়ের কাছে যেতে ঘেঁষে যেত ঝুঁকে আসা গাব গাছের পাতা কাটা কাটা ছায়ায় বসে ফিসফিস করে কানের কাছে কেউ বলত নিষিদ্ধ গল্প – একের পর এক শীতের চাদরের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা দুধ সাদা হাতে আলতা চুঁয়ে পড়া দেখতে বলত মিঠে ফিনফিনে গলা বলত চাদরে জড়িয়ে রাখা আছে সিন্দবাদের গল্পের ঝুলি আলাদিন হবার প্রলোভন দেখাত দুপুরের ছাদ – ... ...
ভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো তোমার মুখোশ ও দস্তানা এসব এমন, এমনই একটা সময় যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুব খানিক তফাত রেখে তোমায় নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওই তার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি, ... ...
সে আমাদের ভুল বানানের চিঠি, সে আমাদের মুগ্ধ চেয়ে থাকা। পাখির ডানায় শেষ বিকেলের আলোয় রাখাল সাজার পাতার বাঁশি রাখা। সে আমাদের গোপন বনলতা, সে আমাদের লুকিয়ে রাখা আলো। ... ...
কোনো সমুদ্রের হোটেলে বন্ধ ঘরের মধ্যে আমি মরে গেছি। ধরো, সেসময় ভোর পেরিয়ে সকাল। ঘরের জানালার কাচে বাইরের সাদা আলো। প্রতিদ্বন্দী অন্য হোটেলের ঘরগুলিতে যারা আছে- যেসব সংসার অথবা একলা মানুষ, তারা এসময় জেগে উঠে প্রকৃতির টানে হয়তো বাথরুমে, হয়তো নির্ভার হয়ে এসে বিছানায়। কেউ রাতের কোঁকড়ানো চুল চিরুনি লাগিয়ে সোজা করছে, কেউ ভুল মোজা ভুল পায়ে পরে তা আবার সংশোধন করছে। সমুদ্রে ঢেউ উঠে পাড়ে ছুটে আসছে পরপর। সকালের নরম, শীতল ঢেউ। সৈকত নির্জন। শুধু বিগতদিনের আস্ফালন, রক্তপাত বা ধস্তাধস্তির ছাপ বালিতে লেগে আছে। জীবন্ত হয়ে আছে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া দুইজোড়া পায়ের ছাপ। বহুদূর তারা পাশাপাশি হেঁটে গিয়ে বাঁক নিয়ে কোথাও অদৃশ্য হয়েছে। ঝাউবন ঠাণ্ডা। তার গোড়ায় গোড়ায় পরিষ্কার বালি। হোটেলের ডেস্কে যে মানুষ কর্তব্য সামলাতে এইমাত্র এসে বসল, সে এখানে আসার আগে বাতাসে তার শেষ হাই ত্যাগ করে এসেছে। সমুদ্রের হোটেলে যে মেয়েরা আছে, এখন তাদের জল দিয়ে ধোয়া পরিচ্ছন্ন যোনি। জামার নীচে শান্ত স্তন। যেসব পুরুষেরা দিগ্বিজয় করে এখানে এসেছে, তাদের পুরুষ্ট লিঙ্গ এখন মৌনসাধকের মতো ক্ষমাশীল। তাদের মুখগহ্বরে শুদ্ধ আত্মার গন্ধ। তাদের আঙুলের গাঁটে বাদশাহের মতো অসংখ্য চুনি-পান্নার আংটি সকালের আলোয় ঝিকমিক করছে ... ...
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে। ... ...