বাংলা রন্ধনশিল্পের যুগপুরুষ বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ‘পরিমিত’ লঙ্কা নিয়ে সুপ্রাচীন খিচুড়ি প্রবেশ করল বঙ্গীয় রেনেসাঁস-এর যুগে। কিন্তু বঙ্গীয় রেনেসাঁসের কালে রসনা-বিলাসের শ্রেষ্ঠ ফসলে নেই জাহাঙ্গিরি খিচুড়ি বলে কিচ্ছুটি। ঊনবিংশ শতকের শেষে ডুব মেরে একশো বছর পরে এক বঙ্গীয় জমিদারি হেঁশেল ফের ভেসে উঠল সেলিম বাদশার নামাঙ্কিত এই আশ্চর্য খানা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
মালয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী সব শহরেরই সমুদ্রের ধারে পেয়ে যাবেন আপনি স্ট্রিট-ফুড বা হকার-ফুড, যা সত্যিকারের প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সন্ধ্যে নামার পর। প্রায় সারি দিয়ে বিচের ধার ঘেঁসে আপনি অসংখ্য ফুড-স্টল পেয়ে যাবেন। অনেকে লাইভ বারবিকিউ করছে দেখতে পাবেন। খুবই সিম্পল ব্যাপার – সাধারণ টেবিল একদম সার দিয়ে বসানো, তাতে প্লাস্টিকের টেবিল ক্লথ দেওয়া। যাতে তাড়াতাড়ি টেবিলের টার্ন-ওভার হয় – আপনার খাওয়া শেষ হল, টেবিল ক্লথ পাল্টাবার কোন চাপ নেই। কেউ এসে প্লেট উঠিয়ে নিয়ে ঝটপট করে মুছে দিল টেবিল – আপনি বসে পড়লেন। প্লেট-ও খুব সিম্পল। আপনাকে একটা প্লেট দিয়ে যাবে – বেশির ভাগ সময়েই এগুলো প্লাস্টিকের – আর সাথে দেবে ন্যাপকিনে জড়ানো একটা চামচ এবং কাঁটাচামচ। ... ...
খাই খাই কর কেন? এসো বোসো আহারে। দুই শো বছর পরে খাবে যা-যা বাহারে, এসো ভায়া ট্রাই করো, আজই খাও তাহারে। আরশোলা-চচ্চড়ি, গুবরের কালিয়া, মশক-পুডিং খেও সেলফি-টি তুলিয়া। আরও দু-শতক পরে, জেনে রেখো নির্ভুল, খানা মানে খাবে শুধু ক্ষুধাহরা ক্যাপসুল! কী হবে রেসিপি তার, ভারী শখ জানবার? এখানে লিখলে যদি ‘গুল’ বলে পড়ে ঢিঢি? দক্ষিণে পাড়ি দাও, কানে কানে জেনে নাও, হেঁশেলেতে যথারীতি হুঁশিয়ার আছেন ডিডি ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
রাজগৃহ। পরিব্রাজনরত গোতম এসে পৌঁছেছেন। বেণুবনে যেখানে কাঠবিড়ালিদের খাওয়ার জায়গা সেইখানে উপবিষ্ট হলেন সন্ন্যাসীসমাগমে। সহসা তাঁর উদরে বায়ু-বিকার দেখা দিল। সন্ন্যাসী আনন্দ দ্রুত সেই রোগের উপশমের লক্ষ্যে এক পথ্য প্রস্তুত করে পরিবেশন করলেন বুদ্ধকে। ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন প্রভু। কিন্তু আমরা পেয়ে গেলাম খিচুড়ির এক সুনির্দিষ্ট পূর্বজ। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
মনুর ধর্মশাস্ত্র সহ নানা শাস্ত্রে খাদ্যকে একটি বিশেষ আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কায়েম রাখার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের যে নির্দেশ রয়েছে খিচুড়ির ইতিহাস খুঁজতে বসলেই মেলে পুরাণগুলোতেও ঠিক সেই চতুর কৌশল। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
সপ্তদশ শতক। শাহ জাহান বাদশার হেঁশেল। মুঘলাই খিচুড়ির রোশনাই। আর তারই মধ্যে একটির নাম খিচড়ি দাউদখানি! সে নাম যেমন রহস্যময়, তেমনই বিচিত্র সে খানা—বলছে খিচড়ি, কিন্তু চাল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত। ... ...
পখাল একটা বিরাট লেভেলার। রাজা প্রজা, ধনী নির্ধন, সাধু ভণ্ড, সৎ অসৎ, সাহসী দুর্বল, মন্ত্রী জনগণ সব্বাইকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটা কী? নিঃশর্ত পখালপ্রীতি। এই একটিমাত্র বিষয় যেখানে কোন মতপার্থক্য চলবে না। রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনটুনির ঘরেও সেই ধন আছে! নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, পখালরাজের চরণে। এমনকি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেবও স্নেহ করেন তাকে। ... ...
“ও মনি, শহরে কিরাম করে থাকিস তুই? ঠাকুমা ছাড়া দিন কাটাতি কষ্ট হয় নারে?”, কড়াইয়ের ফুটন্ত জলে কুমড়ো শাক ছেড়ে দিতে দিতে বলল গোলেনূর দাদি। গরম জলে শাক পড়তেই সবুজ রঙ আরও গাঢ় হয়। শাকের সেই রঙের দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বলি, “দিন তো কাটে গোলেনূর দাদি, কিন্তু রাতে ঠাকুমার কোল ঘেঁষে ঘুমাতে পারি না বলে ঘুমের ভেতর স্বপ্নে বারবার কেঁদে উঠি।” তবে সেসব কথা লুকিয়ে আমি একমনে গোলেনূর দাদির উনুনে ভাপানো গাঢ় সবুজ শাকের দিকে তাকিয়ে থাকি। ... ...
যদি আপনি খাবার এবং বাজার ভালোবাসেন, তাহলে এখানে ঘুরতে ঘুরতে আপনি আচ্ছন্ন হয়ে যাবেন। অনেক দোকানের সামনে দেখবেন, চাখার জন্য স্যাম্পেল রাখা আছে – ইচ্ছেমত ট্রাই করে যেতে পারেন। খুব ছোট ছোট কিছু রেস্টুরান্ট আছে, যারা দুই-একটা টেবিল বা বসার টুল নিয়ে স্পেশালিটি কিছু খাবার বিক্রি করছে। এখানে খাবার পাওয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। ইচ্ছে হলে চট করে খেয়ে নিন – কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখবেন – জাপানে খেতে খেতে হাঁটা-কে ব্যাড ম্যানারস্ হিসাবে ধরা হয়। ... ...
দক্ষিণ ইওরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দেশ। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য, মধ্যযুগীয় মুসলমান শাসন, প্রাক-আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তি, আধুনিক কালে দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র ও পরে গণতন্ত্রের মিশ্রণে বিচিত্র রঙিন সংস্কৃতি। ঠিক পর্যটক হয়ে সাইট-সিয়িং নয়। কখনও শিক্ষার্থী, পরে তরজমাকার হয়ে এদেশের নানা শহরের অন্দরমহলে উঁকি-ঝুঁকির অভিজ্ঞতা। এ কিস্তিতে কুইম্ব্রার কাফে, রেস্তোরাঁয় খাস পোর্তুগিজ খানা-পিনা। ঋতা রায় ... ...
প্রাণকৃষ্ণ দত্তের কলিকাতার ইতিবৃত্ত বইতে পড়লাম, কলকাতার বহু প্রাচীন পরিবারে এখনও সতীর সিঁদুর পুজো করা হয়। তার অর্থ, আমার মামার বাড়ির পরিবার, বইয়ে বর্ণিত তেমনই একটি পরিবার। জেনে-ইস্তক আমার শরীরের শিরা উপশিরা কাঁপছে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য – বইতে যেমন পড়েছি, সালঙ্কৃতা, মাথায় সিঁদুর, পায়ে আলতা, আলুলায়িত কেশ, খালি পা, বধূকে পথ দিয়ে ধরে নিয়ে চলেছে নাপিতানীরা। সিদ্ধি জাতীয় কিছু খাইয়ে চেতনা কিছুটা বিস্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝেমাঝেই লোকেরা এসে সতীর সিঁদুর নিয়ে যাচ্ছে। চিতার ওপরে মৃত স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে চিতায় বসেছেন বধূ, ডালপালা দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল। অগ্নিসংযোগ করা হল, লোক ভেঙে পড়েছে, চারিদিকে ঢাক-ঢোল বাজছে, জয়ধ্বনি উঠেছে – লেলিহান আগুনের শিখায় জ্বলে যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাস, চৈতন্যের ভক্তিবাদ, সন্ন্যাসীদের শিবজ্ঞানে জীবসেবা – কান মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। ছি ছি ছি! আর আমি ভাবতে পারছি না। ছয় প্রজন্ম আগে, কে মা তুমি প্রাণ দিয়েছ? তোমার মৃত্যু নয়, জীবন জানতে চাই আমি। তুমি কোন বাড়ির মেয়ে, কি তোমার নাম? কোনো সূত্র তো নেই। ... ...
সংস্কৃত ‘পর্ণ’ শব্দটি থেকে এসছে পান। এই পান মঙ্গলকারী ও সৌভাগ্যের প্রতীক। একবার নাকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় পানের জন্য দুনিয়া তোলপাড় করেন পঞ্চপাণ্ডব। হস্তীনাপুর ছাড়িয়ে নানাদিকে খোঁজ পড়ে যায়। কিন্তু কোথাও পান নেই! খুঁজতে খুঁজতে সন্ধানীরা পৌঁছান পাতালপুরীতে। সাপের রানির ঘরে। তখন বাসুকী তাঁদের উপহার দেন হাতের কনিষ্ঠ আঙুল। সেই আঙুল মাটিতে পুঁতলে জন্মায় পানের বল্লরী। সেগাছের ফুল নেই, ফল নেই। কেবল কচি সবুজ পাতা। সংস্কৃতে তাই পানের আর-এক নাম ‘নাগ বল্লরী’। ... ...
যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল: - এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার? - না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে। - হোটেলে ফিরতে হবে? কেন? - তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে? - হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ... ...
আমার যেমন হয় – সন্ধেবেলা হলেই খিদে পেয়ে যায়! গেস্ট-হাউসে ঢুকেই খাবার টেবিলে বসে পড়ার ধান্ধা করছিলাম, যে কোনো একটা চেয়ারে। পিছন থেকে টান দিল এক কলিগ – সেই প্রথম জাপানে বসার এটিকেটের সাথে পরিচয়। এই নিয়ে আলাদা করে একটা লেখা হয়ে যাবে – পদমর্যাদা অনু্যায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। যারা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার লোকজন – তাদের বসার ব্যবস্থা প্রথমে এবং তারা যেখানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘কামিজা’। কম পদমর্যাদার লোকেরা যে স্থানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘সিমোজা’ .... আমাদের বসতে বলল সেই ঘরে ঢোকার দরজার থেকে দূরের চেয়ার গুলোতে। এটাও একটা রীতি – অতিথিদের বসতে দেওয়া হয় দরজার থেকে দূরে, আর দরজার কাছে থাকবে হোস্ট। এর কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং – এই রীতি চালু হয় বহু বহু আগে, জাপানের ফিউডাল পিরিওডে – যেখানে দুমদাম শত্রুর আক্রমণের বেশ চল ছিল। আমাদের মত জাপানীদেরও বিশ্বাস অতিথি নারায়ণ – তাই অতিথিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রবেশদ্বারের থেকে সবচেয়ে দূরে বসতে দেওয়া হত। ... ...
আজকের গল্প ভিয়েতনামের সেই লাঙ-কো টাউ এলাকার ফ্লোটিং রেস্টুরান্টে খেতে গিয়ে। বড়ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা – ভৌগোলিক ভাবে দেখতে গেলে এই জায়গাটা হচ্ছে মধ্য-ভিয়েতনামের একদম পূর্বদিকে, লাপ-আন লাগুন এবং ভিয়েতনাম-সি এর মাঝখানে। এই গোটা এলাকাটাই সি-ফুড এর জন্য বিখ্যাত। আপনি ওই ফ্লোটিং রেস্টুরান্টে খেতে গিয়ে অবশ্যই যা ইচ্ছে খেতে পারেন সি-ফুড ছাড়াও – কিন্তু সি-ফুড না খেলে জার্নি অসম্পূর্ণ থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। কত সিম্পল ভাবে রান্না করে সি-ফুডে স্বর্গীয় স্বাদ আনা যায়, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া না এলে ঠিক বোঝা যায় না। এখানে বেশ কিছু ফ্লোটিং রেস্টুরান্ট আছে – তবে লাঙ-কো কিন্তু বিখ্যাত তার সেই বিস্তৃত সাদা বালির বিচের জন্যও। তা দেখতে অপরূপ – গোটা জায়গাটা আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে ছোট ছোট পাহাড়ের মতো থাকায়। এখানেই কিছু দূরে আছে বাখ-মা্ ন্যাশনাল পার্ক – পাহাড়ের আশেপাশে কিছু উঁচুতে উঠলে আপনি পেয়ে যাবেন প্যানোরামিক ভিউ! দেখে চক্ষু জুড়িয়ে নিতে পারেন খাওয়া দাওয়ার পরে – ... ...
বড়জ্যাঠাইমা খুব ভালো গুড়-আমের মোরব্বা করতে পারত আর সেজজ্যাঠাইমার মা দারুণ চিনি দিয়ে আমের মোরব্বা করতে পারতেন। মোরব্বার ক্ষেত্রে কাঁচা আমের নির্বাচন যদি ঠিক না হয়, তবে ব্যর্থ হতে হবে। আমের আঁটি হয়নি – এতটা কচি আম যেমন চলবে না, তেমন আঁটি শক্ত হয়ে গেছে – এমন আমও নিলে হবে না। দুইয়ের মাঝামাঝি দরকার, মানে নরম আঁটি যুক্ত আম চাই। এবারে আঁটির কষি বাদ দিয়ে আমগুলোকে লম্বায় চারফালি বা ছয়ফালি করতে হবে। কয়ফালি কাটা হবে, সেটা আমের আকারের ওপর নির্ভর করবে। এবারে বড়জ্যাঠাইমা আমগুলো নুনে জরিয়ে রোদে শুকিয়ে নিত। এবারে কড়াতে পরিমাণমত ঘি দিয়ে ঐ শুকনো আমগুলো ভাজত। ভাজা হয়ে গেলে গাঢ় চিনি বা গুড়ের রসে আমগুলো ফুটবে। কারোর ইচ্ছে হলে ঐ পাকে আদার রস মেশানো যায়। মোরব্বা তৈরি হলে আঁচ থেকে নামিয়ে এলাচ গুঁড়ো মেশাতে হবে। ... ...
ছেলেটি আগামীকাল “ভোর” চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। ওর বাড়িতে নাকি ‘দুর্গো’ পুজো হয়। শুনেছিলাম দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন দুর্গা। তবে এমন সরাসরি দুর্গোপুজো করতে কাউকে দেখিনি। ওর কথাবার্তায় বাংলাটা অন্যরকম। ও ভোরে বেরোয় না, ভোর ভোর বেরোয় না, ‘ভোর’ বেরোয়। কচুরির দোকান থেকে খায় না। কচুরি দোকান, মিষ্টি দোকান, পান দোকান, মুদি দোকান থেকে জিনিস কেনে, ষষ্ঠী বিভক্তির অস্তিত্ব ওর বাংলায় নেই। ল্যাবে আড়ালে সবাই মজা করে। সে অবশ্য, জগাদার কথাও এরকম। ‘চলে গেলাম’ – বোঝাতে বলে, ‘পালিয়ে গেলাম’। চলে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে আলাদা, ওদের কাছে এক। ... ...
কুমোরটুলিতে দুটো বড় পুজো। সেখান থেকে রাস্তা পেরিয়ে মদনমোহনের বাড়ি। ও’ বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠে, বিশাল ঠাকুর-দালান পেরিয়ে, অপরূপ মদনমোহন দর্শন করতাম আমরা চারজন – বাবা, মা, আমি, বোন। তখন ঘুণাক্ষরেও জানতাম না – ইনি বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের মদনমোহন, যিনি দলমাদল কামান দেগে শত্রু তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। একদিন ঐ বিষ্ণুপুরে আমি দাঁড়াব, বালুচরী নিয়ে পিএইচডি করার জন্য। আর মদনমোহনের মন্দিরে দাঁড়িয়ে শুনব, তিনি তো এখানে নেই, বাগবাজারের গোকুল মিত্রের বাড়িতে বাঁধা পড়ে আছেন। দু’কুড়ি বয়সে মন্দির-চত্বরে এ কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য হলেও মাথা দুলে গিয়েছিল আমার। বালিকা-বেলায়, অবোধ বয়সে দেখেছিলাম তোমায়, বড় সুন্দর। তুমিই কি নিয়ে এলে আমায় এখানে গবেষণার জন্য! ... ...