আপ রুচি খানা? কে বলে মশাই? সব্বার আগে দরকার ভাই এটিকেট জানা। বিলেতে খানা খেতে খেতে কদাচ যেন না ওঠে বিশ্রী ঢেকুর। নাইজেরিয়ায় আবার খাবার নিমন্ত্রনে ব্যাঘ্র গর্জনে ঢেকুরই দস্তুর। বিলেতে চা বা স্যুপ পানে, সুড়ুৎ শব্দটুকু হওয়া মানে মহাসব্বোনাস। ওদিকে জাপানে, যাবতীয় পানে শোনা যাবে এমন হুসহাস, যেন শত অ্যানাকোন্ডায় ফেলছে নিশ্বাস। ইত্যাকার এটিকেট জেনে পাও গুড ম্যানার্স সার্টিফিকেট। দুনিয়ার কোনও দেশে নিমন্ত্রনে খেতে বসে পড়বে না ঢিঢি। শিক্ষা দিতে ইত্যাকার আচার, যথারীতি হেঁশেলে হুঁশিয়ার রয়েছেন ডিডি ... ...
আমাদের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বালিয়ায়। সেখানে একরকম ছোটো দানা লালচে কমলা রঙের পাতলা পাতলা ভাঙা মুসুর ডাল পাওয়া যেত। দোকানে বলত, মারুতি-ভাঙা ডাল। ঐ ডালে মা ফোড়ন না দিয়ে, শুধু ডালসেদ্ধ করত। কাঁচা ডালে জল দিয়ে, তাতে কাঁচা সর্ষের তেল, নুন, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বসিয়ে দিত। সে ডালে কি যে ছিল! ঐ সেদ্ধ ডাল যেন অমৃত লাগত খেতে। আমার বিয়ের পরেও কিছু বছর আড়বেলেতে ঐ ডাল পেয়েছি। আমার কর্তাও ঐ ডালসেদ্ধর প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু এখন আর পাই না। আর মাঝে মাঝে মা রাতে সাদা কাপড়ে ডাল বেঁধে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ফেলে দিত। তারপর সেই টাইট ডালের বল কাঁচা সর্ষের তেল আর নুন দিয়ে মাখা হত। বেশ খেতে লাগত। ... ...
এশিয়ান পাম সিভেট। এক প্রকার ভাম বিড়াল। তাকে বাধ্য করা হয় কফি ফল খেতে। সেই কফি খেয়ে সে করে মলত্যাগ। সেই মল থেকে বেছে নেওয়া কফি বীজ প্রসেস করে তৈয়ার হয় দুনিয়ার সব থেকে দামি কফি—কোপি লুয়াক। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। পরিবেশবিদরা চান এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক। চেখে দেখলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ... ...
জাহাঙ্গিরি খিচড়ি বাংলায় প্রবেশ করে বিপ্লবের মুখোমুখি হল! তাতে এই প্রথম চাল পড়ল। দম পড়ল। এবং খুব সাবধানে আধুনিক রান্নার প্রথম অধ্যায়ে আলতো করে পা রাখায় ‘পরিমিত লঙ্কা’ পড়ল। আর আমরা জানলাম ‘খেচরান্ন’ এক ছোকরা শব্দ—অর্বাচিন সংস্কৃত, যার সঙ্গে খেচর বা পাখির কোনো সম্পর্ক নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। যে ‘বাজরাখিচড়ি’ ওরফে ‘লাদরা’-র এমন নাম রটাল ডাকসাইটে কেতাব জাহাঙ্গিরনামা, কী সেখানা? আদৌ যাবে কি জানা? এ প্রশ্ন ধাওয়া করেই আমরা ঢুকে পড়েছি মুঘল বাদশাদের মহাহেঁশেলে, যেখানে একবার ঢুকলে বার হওয়া কঠিন! আর সেখানেই আমরা দেখব, কীভাবে আগমার্কা ভারতীয় খিচড়িতে এসে মিশে গেল আফগান ধারা। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
খাওয়ার আগে গালি খাওয়াবে, আছে এমনও রেস্তোরাঁ এ ভবে। কিংবা খাবেন পলিটিকাল খানা? সে হদিশও দিব্যি জানা। রান্না ছাড়ুন, এ কিস্তিতে ঘুরেই আসুন, তেমন নানা খানাঘরে, আর দেরি না করে। হলেন নাকি রেডি? পথ দেখাতে তৈরি আছেন দেখুন স্বয়ং ডিডি ... ...
কার্যত এখন দুয়ারে বাজার। বাড়ি থেকে বেরোলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি, ফল সবই সারি সারি। দু’পা এদিক ওদিক হাঁটলেই পথের পাশেও ছোটখাটো বাজার – মাছ, মাংস সবই মিলছে। মলে ঢুকলে অজস্র পণ্যের মধ্যেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেলোফেনে মোড়া থার্মোকলের পাত্রে টুকরো করে কাটা সবজি। ছোট পরিবারের উপযোগী শুক্তো রাঁধতে গেলে যে যে আনাজ প্রয়োজন সবই সাজানো রয়েছে তাতে। তবে সে সবজির সতেজতা, কোটার নিপুণতা – এসব যাচাই করার সূক্ষ্ম বিচারবোধসম্পন্ন দক্ষ বাজারু আজ আর কোথায়? গুছিয়ে বাজার বা রসিয়ে রান্না করার সেই মানসিকতা বা অবসর কোথায় আজকের অণু-পরিবারের ব্যস্ত জীবনে? ছেলেমেয়ের পড়াশুনো সামলে কর্তা-গিন্নি নাজেহাল কর্পোরেট যুগের চাকরি বাঁচাতে। আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কবেই বিদায় নিয়েছে শিল-নোড়া। মডিউলার কিচেনে স্থান করে নিয়েছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার বা ফুড প্রসেসর। আদা-বাটা, রসুন-বাটা তো পাউচেও হাজির। সর্ষের পাউডার প্যাকেট থেকে বের করে উষ্ণ জলে গুলে নিলে সর্ষেবাটাও রেডি। সাবেকি সিনেমা হলের নস্টালজিক সাদা-কালো ছবির জায়গায় এখনকার মাল্টিপ্লেক্স বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যে যেমন বিশেষ ধরণের মুভির চল, ঠিক তেমনই খেয়াল করলে দেখা যাবে নোনা-ধরা, হলুদ দেওয়ালের রান্নাঘর থেকে বেরনো সেই সব অতুলনীয় পদগুলির জায়গা নিয়েছে আজকালকার ফিল-গুড ফ্যামিলির টিপটপ মডিউলার কিচেনের উপযোগী হালফিল ক্যুইজিন। ... ...
ইউটিউবের বদান্যতায় যে বাঙালির এখন ঘরে ঘরে শেফ, বিভুঁইয়ের মাস্টারশেফের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীদের ড্রিবলিং করে টিকে থাকা শীর্ষ তিনের একমাত্র মহিলাটির জটিল-কুটিল খাবারের বদলে এই 'সাধারণ' রান্নাটি ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশনায় তাঁরা কিঞ্চিৎ পাজল্ড। এমনিতেই ক্লান্তিকর মানিমেকিং সর্বস্ব মধ্যবিত্ত মিডিওকার বাঙালি, আঁতেল প্রমাণান্তে, এট্টু গাঁয়ের ছোঁয়া পেলেই আহা উহু করতে করতে গায়ের ক্যামাফ্লোজখানা নালেঝোলে ভিজিয়ে ফেলেন; তাঁরা গালভরা নাম দেন 'ফোক', তাপ্পর ফোকি (রি নয়, সেটার সহমর্মী কোনভাবেই নন বলেই বাহুল্য) সেজে নববর্ষে পান্তা ইলিশ খান, মাঝেমাঝে মাটির দেওয়ালে সাজা রেঁস্তোরায় কচুভর্তা খেয়ে ভাবসমাধি যান। অতএব, এই পান্তাকে অ্যান্টিক্লাস স্ট্রাগলের মর্যাদা না বাঙালির নেকু স্মৃতিরোমন্থনের সোৎসাহ পৌষপার্বণ বলা হবে সে সিদ্ধান্তে আসতে তাঁরা গলদঘর্ম হচ্ছেন, বৈকি। ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে এসে ভিড়েছিল ‘শোলে’, খিচুড়ির আফগানি চলন। এ কিস্তিতে আমরা এই শোলে-ধারার খোঁজে আফগানিস্তান পার করে পৌঁছে যাব ইরানে! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ঠাকুমা কলতলা থেকে এসেই স্টোভের আঁচ বাড়িয়ে দিল। পুঁইয়ের কচি ডগাগুলো হাত দিয়ে ভেঙে নেয় ঠাকুমা। লোহার কড়াইয়ে সেই পুঁইয়ের পাতাডগা, হলুদ, লবণ আর কাঁচামরিচ ফেলে ঠাকুমা তাতে ঢেলে দিল অনেকটা সর্ষের তেল। আলতো নয়, বেশ জোর দিয়েই ঠাকুমা তা মাখাতেই পুঁইয়ের পাতাডগা সব এলিয়ে পড়ল। ঠাকুমা এবার তার উপরে শুইয়ে দিল কতগুলো ইলিশমাছের চাকা। হাত-ধোয়া জল জড়িয়ে গেল মাছগুলোর গায়ে। ... ...
কনফারেন্সে এমন জবরদস্ত লাঞ্চ হলে, তার নেগেটিভ দিক হচ্ছে, লাঞ্চের পরের টকগুলোতে খুব কম লোক হাজির হবে। যারা হাজির হবে, তারাও অনেকে ঢুলবে! আমাকে দু’একবার কোন কোন সেশনের চেয়ারম্যান হতে হয়েছিল, তাই স্টেজ থেকে একদম সামনা-সামনি দেখি অডিয়েন্স কেমন ঢুলছে! আর যদি কোনো সরকারি কোম্পানির বড় কর্তা টক দেয়, তো রুম ভরে যাবে – সেই ভরা রুমে লোকে ঢেকুর তুলছে, কেউ নিঃশব্দে বাতকর্ম করে দিল ধরুন – মাটন রোগান জুসের ঢেকুর বা পাদের গন্ধ কি আর রুম ফ্রেশনার দিয়ে আটকানো যায়! ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে আফগানিস্তান পার করে এসে মিশেছিল ইরানি ‘শোলে’। এ কিস্তিতে আমরা সেই জাহাঙ্গিরি খিচড়ি আর বাজরা খিচড়ির রহস্যভেদের তাগিদে নেতি নেতি করতে করতে হাজির হব ইরান ফিরতি দিল্লি হয়ে সোজা বর্ধমান! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ছেলেটা অর্ডার নিতে এলে – পিৎজা এদের স্পেশালিটি কিনা জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ বলল। আমার কি মনে হল - এও না সেই অন্য রেষ্টুরান্টের মত পিৎজার ইতিহাস ব্যাখ্যা করা শুরু করে! তাই সে-ই কিছু বলার আগেই আমি বললাম – আমি জানি পিৎজা বলে আধুনিক কালে আমরা যে জিনিসটিকে চিনি তার জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে ইতালির নেপলস্-এ। একসময়ে নেপলস্-এর বাজারে যা পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে, সেই পিৎজা খেয়েই রাণী মার্গারিটা কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন, যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ব্যাস, সেই থেকে এই পিৎজার নাম হয়ে গেল ‘পিৎজা মার্গারিটা’ সেই ওয়েটার দেখি আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে – ... ...
বৃষ্টি এখানে কম। এখানে বিশ্বচরাচর নিঝুম করে শুরু হয় স্নোফল। কিন্তু কুছ পরোয়া নেহি। বরিষণমুখরিত দিনে যারে খাওয়া যায়, নিঃশব্দ তুষারপাতেও তারে পাওয়া যায়। ধুমায়িত খিচুড়ির কোনো জবাব নেই। মৌমিতা ভৌমিক ... ...
ইসলামি শাসনকালের রন্ধনপ্রণালীর যেসব তাক-লাগানো কেতাব আমাদের হাতে এসেছে, তার মধ্যে ‘নিমতনামা’ সংকলনটি বেমিসাল। আর তাতে হরেক আজগুবি খানার সঙ্গে পেয়ে গেলাম নানা কিসিমের খিচড়ি, এবং তার সহচরদের। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
হায় সেই কাছাখোলা বাঙালি- শেষ পাতে সাবানের সুপে কাত/ বিপ্লব ও আইসক্রিম হাতে হাত - ভুসুকু খাইলি ফিস ওরলি। কিচাইনে এক ঋতু অবসান - ফিরিঙ্গি নালে ঝোলে চণ্ডাল / ডিডি ভনে বেমালুম ইতিহাস/ বিরতিতে কাঁটা বেছে বেছে খান ... ...
আমি আগে বাঙাল, পরে বাঙালি। আজীবন ইস্টব্যাংগল, আমরণ লালহলুদ। শবাসনে ক্যান্ডিক্রাশ খেলতে খেলতে বাঙালদের জেদ, পরিশ্রম, স্ট্রাগলের গৌরবের আঁচ পোহাই।... ইলিশ না ভালোবেসে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব। আশৈশব পান্তা না ছুঁয়ে বড় হলে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব। আমি শুঁটকির ওমে বেড়ে উঠেছি, কচুর কন্দ, ডাঁটা, লতি, পাতার পাহাড়ে চাপা পড়ে গেছি, জেনেছি যে পৃথিবীতে একমাত্র বিষাক্ত না হলে সমস্ত ঘাসপাতা বেটে খাওয়া যায় - খালি পান্তা আমার সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে। অথচ পড়ার কথা ছিল না। পড়তে থাকুন... ... ...
এখন কি আমার খাবার সময় আছে? ব্যাগে পেন্সিলখানা, আমটা আর চিরুনিখানা ঠিকঠাক উঠল কিনা দেখতে হবে তো। সেসব খুঁজে দেখতে ব্যাগ খুলতেই চোখে পড়ে ম্যানোলা স্নো, মিল্লাত পাউডার, রবিন লিকুইড ব্লু আর বল সাবান। সাথে বেলা বিস্কুটের প্যাকেট। বাবা সব এনেছে বাড়ির জন্য। সে সবের ভিড়ে অবশ্য উঁকি দিচ্ছে আমার আধা ফুরানো নাবিস্কো বিস্কুটের প্যাকেট, নতুন পেন্সিলটা আর কাঁচামিঠে আমটাও। ... ...
ইসলামি শাসনকালে প্রাচীন হিন্দু বিজ্ঞানশাস্ত্রের চর্চা গলা টিপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এই হিন্দুত্ববাদী প্রচারের গালে একটি বিরাশি সিক্কার চড় ভাবপ্রকাশ নিঘণ্টু। মুঘল আমলে রচিত এ কেতাবকেই পণ্ডিত ও গবেষকেরা মনে করেন ‘আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মেটেরিয়া মেডিকা’। আর তাতেই রয়েছে আধুনিক খিচুড়ির প্রথম রেসিপি। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...