অগ্নি ছিলো সূর্যে, আকাশে বিদ্যুতে, জীবন্ত আগ্নেয়শৈলের জ্বালামুখে, অরণ্যে দাবানলে ও সমুদ্রে বাড়বানলে। কিন্তু সে ছিলো না হিমকন্থা প্রস্তরগুহায়, ছিলো না বৃক্ষচারী প্রায়মানবের সন্নিধানে। তীব্র শীতপ্রবল উত্তরী অক্ষের দেশে ছিলো কুয়াশা,ছিলো নিষ্ঠুর তুষারঝঞ্ঝা ও হিমজমাট প্রান্তর। হিমকন্থা প্রায়মানবেরা অগ্নিকে আহ্বান করেছিলো ভাষাহীন চিৎকৃত প্রার্থনায়। ... ...
এক ঝিমধরা চৈত্রের আধবিকেলে ভুরুদুটো কুঁচকে ও মুখটা গোমড়া করে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ওরফে ছেনু একলা ছাদে উঠে বসেছিলেন আর মাঝেমাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি জানি কি ভাবছিলেন। হাওয়ায় এখনো গরম তেমন নেই, সূর্যটা ঝাপসা মেঘে ঢাকা কিন্তু চারদিকে একটা গুমোট ভাব চেপে বসেছে। এমনি সময় কাঁধে কেউ একটা হাত এসে হাত রাখায় মহারাজ পিছন ফিরে তাকালেন, এ হল তাঁর পেয়ারের কোটাল বেনারসিপ্রসাদ যাকে তিনি আদর করে বেনা বলে ডাকেন। -কি হল বাবু, একলা ছাদে এসে বসে আছো, যাও যাও খেলোগে যাও। -আমার আর ভাল্লাগে না। -ভাল্লাগেনা? কেন কি হয়েছে? ... ...
সেই মেয়েটা ------ ভেলভেলেটা ...... চলতে থাকে ...... চলতে থাকে ...... চলতে থাকে ...... চলতেই থাকে ..... চলতেই থাকে। পথ শেষ হয় না, ঠ্যাঙাড়ে হীরু রায়ের বটতলা পেরিয়ে, সোনাডাঙার মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতি পেরিয়ে,পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ দিয়ে,বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে পথ যে চলে এসেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্য্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডি এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশে ... ...
শরীরের সুড়ঙ্গ ধরে ঢুকে যাছে, ঠোঁট ফাঁক করে কষ বেয়ে নেমে আসছে ফেনা ফেনা। বস্তুটা যে কি তাও যদি ভালো করে জানতাম। যারা কমলালেবু খায় তারা একে বলে প্রেম। বাকিরা কেউ বলে ছ্যাঁচড়ামো, কেউ বলে উদ্ভিদ, কেউ বলে হ্যারি পটার। বইমেলার ধুলোর গন্ধ ময়দান ছেড়ে বাইপাসে পালাচ্ছে। তাই দেখে উড়ন্ত এলোজাহাজ ঐ নেমে গেল গভীর বিকেলে। এই ধোঁয়া ধোঁয়া অন্ধকারের ইমেজে মিশে যাচ্ছে সেই সন্ধিক্ষণ। নাকি আমার বিভ্রান্তি সবটাই। দিবাস্বপ্ন। হ্যালুসিনেশন। ... ...
প্রথম যেবার স্টল করি সে কি মজা সারা রাত জেগে রঙ করছি নিজেরাই তখন তো নিজেরাই সব কিছু এমন কি পেরেক দড়িও নিজেরাই বুঝলে আলম সে ভারি মজার সব কেস সারা রাত সবাই মিলে মাঠময় তারপর রঙ খুঁজতে বেরোতাম বড় বড় স্টল বালতিতে ... ...
অনেকক্ষণ ধরে জল ফোটায় শিউলি। চাপাতা। দুধ। চিনি। সব ফুটলে একটা আরামের গন্ধ পাওয়া যায়। পায়ের পাতা টনটনায়। কড়া হয়ে গেছে পা। ফাটা জায়গাগুলোতে হাত বোলাতে বোলাতে চায়ের ঘ্রাণ নেয়। এইসময়টা তার একেবারে নিজের। মোতি বা পার্বতী থাকতে পারে। রচনা থাকতে পারে। কিন্তু তারা যেন নিজের মনে কথা বলে যায়। শিউলি জবাব দিল কি না দিল, কিছুই এসে যায় না। ... ...
-"শুনেছিস?" -"হুঁ, শুনলাম।" -"কখন? কে বলল?" -"এই তো একটু আগে। মিসেস চৌবে ফোন করেছিল। অনুপমকেও কে জানি ফোন করেছিল।" -"ছি: ছি:, কী লজ্জা বলতো? আমরা বাঙালীরা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারব? সবাই তো মওকা পেয়ে নিন্দের বন্যা বইয়ে দেবে। বলবে "বঙ্গালীলোগ এয়সে হী হোতে হ্যায়"। ছি:" রুমেলা বিরক্ত হল। যা হয়েছে তা খুবই বাজে ঘটনা, শুনে অবধি তার মেজাজ খারাপ, তবু এসময়ে দেবযানীর এইসব টীকাটিপ্পণী সহ বক্তব্য আর নেওয়া যাচ্ছেনা। সে ফোনপর্ব শেষ করার ইঙ্গিত দেয়, -"ওসব ভেবে কী লাভ। যাদের যা বলার তারা এমনিতেও বলবে, অমনিতেও বলবে। ওতে কান না দেওয়াই ভালো। যাক শোন, অনুপম অফিস বেরোবে। ব্রেকফাস্ট রেডি হয়নি এখনো। এখন রাখ, সারাদিন পড়ে আছে। এসব আলোচনা পরে হবে।" ... ...
ঠাণ্ডা হাওয়ায় প্রতীক কবরস্থানের নিশুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে ঘন ঘাসের উপর। লম্বা লম্বা চারকোলগুলি মাথার চাপে ভেঙে গেছে। নাকে মুখে কালো রঙ লেগেছে। কার্টিস পেপারগুলো হাওয়া হাওয়ায় ফর ফর করে ওড়ে। সঙ্গে ওড়ে দীর্ঘ একটি চুল। চুলে জবাকুসুম। অগ্রভাগ সামান্য বাঁকা। লোটাসের চুল। লোটাস নসু কাকার মেয়ে। স্কুল পাস করেছে। সাইকেলে যায়। ওর লাল দোপাট্টা মল মল করে ওড়ে। হি হি করে হাসে। বলে, আমার নাম লোটাস নয়কো। পদ্ম--পদ্মরাগমণি। পদ্মপুকুরে বাড়ি। তোমার লগে আড়ি। ... ...
আজ দশ বছর পর সেই ঘরে দাঁড়িয়ে তিন ভাই-বোন। বহুদিন পর সবাই মিলে এক জায়গায় হওয়া গেছে। দিদিভাইয়ের বাচ্চা দুটো সারা ঘর জুড়ে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। আলমারি ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ ছোট মেয়েটা একটা পুরনো শিশি বার করে এনে পিউকে দেখিয়ে বলল, "এটাতে কী আছে মিমি? তোমরা এরকম ধুলোবালি জমিয়ে রাখো কেন বোতলে করে?' উত্তরে অবাক হয়ে দেখল তিন জনের মুখে হাসি, চোখে জল। ... ...
একটা পাখি বলেছে "তুমি ভালো করেছ'। কাক বলল ভাল থাকতে হবে। কাক বলল আজ থেকে আমি কুমিরের বন্ধু। কাক খুব খুশি- কুমির আসবে দুটো বাচ্চাকে নিয়ে। ... ...
রাতের চন্দ্রাহত জানালায় একফালি নরম কলজে রেখে এসেছি। জানালা বন্ধ করেছি ঠিকঠাক। এখন ভোরের অপেক্ষায় অ্যাশট্রে জ্বলছে নিভছে। জানলায় রেখে আসা কলজের টুকরোটায় আমার ইতিহাস কতখানি মিশে আছে, আর কতখানি তাতে এ শহরের স্বাদ- গন্ধ- রং, তা জানি না। শুধু মনে পড়ে জেসিকা আমাকে বলেছিল- সাধারণ মেয়েরা ভাল থাকে, খারাপ থাকে। ডাইনিরা শুধু জেগে থাকে। চিরকাল। অনন্তকাল। ... ...
আমাদের একতলার ছাদ। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়ছে সেই ছাদে। আর ছাদটাকে আমার মনে হচ্ছে যেন একটা তেপান্তরের মাঠ! অথচ চারপাশে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা বহুতল আমাদের এই ছাদটাকে কেমন গায়েব করে রেখেছিল। জানো আব্বা, ইদানিং আমি ছাদে উঠলে খুব অসহায় বোধ করতাম। আকাশ দেখতে পাই না বলে নিজেকে মানুষ ভাবতে পারতাম না। দিগন্ত দেখতে পাই না বলে আমার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। তাই পারত পক্ষে আমি আর ছাদে উঠতাম না। কিন্তু এখন মায়ের খোঁজে এসে এ কী দেখছি আমি? ছাদটা যেন আমাদের ছাদ নয়, সত্যিকারের একটা তেপান্তরের মাঠ হয়ে বিরাজ করছে। আমার অদ্ভূত লাগছে। ... ...
পাশেই একটা জায়গায় একটা জিরাফ একা একা দাঁড়িয়েছিলো। তাকে দেখে রাজের বড় দু:খ হল, কারণ ওই জিরাফটার কোনো বন্ধু ছিলো না। তাই রাজ ওই মাঠে আর একটা জিরাফ এঁকে দিলো আর তার পাশে দুটো গাছ এঁকে দিলো, যাতে ক্ষিদে পেলে ওরা গাছের পাতা খেতে পারে। জেব্রা, সিংহ আর চিতা দেখে কুমীরের দিকে যাওয়ার সময় রাজ দেখলো দুটো ছোট ছেলেমেয়ে উটের পিঠে চড়ে ঘুরছে। কুমীরের পুকুরের সামনে গিয়ে রাজ দেখলো পুকুরে একটুও জল নেই - কুমীরটা ডাঙায় শুয়ে আছে। তাই দেখে রাজ পুকুরে জল এঁকে দিলো। আর কুমীরটাও অমনি সরসর করে জলে নেমে গেলো। ... ...
রক ভিজে গেছে বলে চায়ের দোকানে বর্ষার দিনে গুলতানি করছেন? পাড়ার মোড়ে হেজিয়ে হেজিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? পাশের বাড়ির মেয়ের স্কার্টের দৈর্ঘ্য নিয়ে আলোচনায় অরুচি এসে গেছে? জীবনে উত্তেজনার নতুনতর খোরাক খুঁজছেন? হাতে প্রচুর সময়, কিন্তু তা দিয়ে কি করবেন জানা নেই? কিচ্ছু ঘাবড়াবেননা। ফোকটে দেশসেবা করার মোক্ষম সুযোগ এখন আপনার সামনে। ... ...
সমুদ্রের দিক থেকে প্রবল হাওয়া উড়ে আসছিল। ঋষির মাথায় অবিন্যস্ত চুলগুলো এলোমেলো উড়ছিল সেই হাওয়ায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে একবার ভাল মতো চোখ বুলিয়ে নিয়ে ও বলল ‘এক্সেলেন্ট।’ মাঝারি মাপের একটা জমির ওপর হোমস্টে-টা। তিনদিকে ছোট ছোট ঘর। মাঝখানে একটুকরো ঘাসে ঢাকা লনমতো। বসে বিশ্রাম নেবার জন্য বা সময় কাটানোর জন্য গোল খড়ের চালায় ছাওয়া জায়গা। হোমস্টের পেছনে বড় বড় কেওড়া গাছের জঙ্গল। গড়ান গাছও আছে। এই হোম স্টে থেকে বিশ/পঁচিশ মিটারের মধ্যেই সমুদ্র। সবসময়ই সামুদ্রিক হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এই হোমস্টে-এর গা ছুঁয়ে। এমন হাওয়ায় অবিন্যস্ত এলোমেলো হয়ে যেতে খুব ভাল লাগে। চতুর্দিকে সবুজের পাহারাও খুব সুন্দর। ... ...
যতবার পেছনে তাকাচ্ছি একটা বিরাট রেলগাড়ি ঝমঝম করে কলকাতা থেকে নাগপুর সারারাত ছুটছে। জানলার বাইরে অন্ধকার একদম স্থির, দমকা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দিচ্ছে তপনের চুল। এ হাওয়া তো আর একভাবে বয় না। কখন সেই বেরোনোর আগে একবার চিরুনিতে হাত পড়েছিলো, তারপর এদিকে ওদিকে সরে গেছে - পশ্চিমবঙ্গের সীমা পেরোনোর অনেকটা আগে তপনের চুল এসে ছড়িয়ে পড়েছে ওর কপাল বেয়ে। ... ...
মাঝে মাঝে এমন হয় যে, গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চোখ দুটো না খুলেই যখন অন্ধকারের গায়ে কান পাতি, নিস্তব্ধ রাতের ভিতরের কোন একটা উৎস থেকে খুব মৃদু ভাবে তবলার বোলের মত শব্দ ভেসে আসতে থাকে। একটা বা দুটা আঙুল দিয়ে খুব আদুরে ভঙ্গিতে যদি বাজানো হয় - সেটা ঠিক তেরে কেটে ধিন হয় না, বদ্ধ ঘরের দরজার এপাশ থেকে ভেতরের গুম-গুম শব্দ শুনতে পেলে যেমন লাগে, অনেকটা সেরকম। ... ...
এগারোটার সময় মৌলিকের অফিসের শেষ ডিনার পাওয়া যায়। তারপর শুধু এককোণে কফি, কেক, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির কাউন্টারে একজন বসে বাকি রাত ঝিমোয় আর খুচরো প্যাকেটের চানাচুর, মধু মেশানো ওট বার উগরে দেওয়া ভেন্ডিং যন্ত্রগুলোতে সারারাত কাঁচের ভেতর নীল আলো জ্বলে থাকে। কিউ আর স্ক্যান করে টাকা দিলেই প্যাঁচানো স্প্রিং ধাক্কা মেরে কাঙ্খিত প্যাকেটকে নীচে ফেলে দেয়। রাতে কাজ করা বাধ্যতামূলক নয় অথচ রাতে একজন থাকলে ভালো হয়, সমুদ্রের ওপার থেকে বারো ঘণ্টা এগিয়ে থাকা দেশ থেকে ভেসে আসা এমনই অনুরোধ। এই শিফটে কেউ রাজি হলে প্রতি রাতে অতিরিক্ত টাকা, বিনামূল্যে খাবার এবং যাওয়া আসার গাড়ি পাওয়া যায়। রাত দশটা থেকে ভোর ছটা এই শিফটটাকে দিনের বেলা অফিসের বাকি সবাই বলে গোরস্থানের সময়। ... ...
মরা সাহেবের টেবিল দিয়েই সেদিন শুরু হয়েছিলো - আসলে কি, অফিসে পরপর দুজন বড়সাহেব একই ঘরে মরে যাওয়ার পর প্রাণে ধরে এমনিতেই ওখানে আর কেউ ঢুকতে চাইছিলো না। প্রথম জন টিকলো একটি গোটা মাস, মরলো শনিবার, অফিস ছুটি হলো মঙ্গলবার। দ্বিতীয়জন বড়দিনের ঠিক আগে জিমখানায় দৌড়তে গিয়ে হাঁসফাঁস করে মাটিতে ঘামতে ঘামতে মরে গেলো, সে ছিলো হপ্তাখানেক। দুর্ঘটনার এখানেই শেষ নয়, এক ভরদুপুরে উড়ো খবর এলো যে ওপরের তলায় ডানদিকের ঘরের সাহেব নাকি ছুটিতে ছিলো,বউবাচ্চা সমেত গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে সেও নাকি মারা গেছে। খবরটা সত্যি। ... ...
ও হ্যঁ¡ আমাদের বাড়ীর পাশে গুরুদয়াল অ¡র উত্তীমলালের খাটাল ছিল। এই দুই যাদবভাই হোলি সিজন মাতিয়ে রাখত। রাত নটা-দশটা থেকে শুরু হত তাদের যাদব-গোষ্ঠীর হোরি-ধুন চৈতি গান ( হা হা গান না ফয়শ) হেঁড়ে গলায় সুরের ভুষ্টিনাশ, তার সঙ্গে ঢোলক ডুম্ডুমাডুমডুম ধ্ম , ঠনঠনাঠন খঞ্জুনি --মাঝে মাঝে পাড়ার নেড়ি কুকুর গুলো ভয়ে উঁউউউউ করে কেঁদে উঠত ( না গানে যোগ দিত, কে জানে) আরও রাত করে শুরু হত নৌটঙ্কি নাচ --কি হুল্লোড়! ছোকরা মেয়ে সেজে নাচত যদিও--তা তাও আমাদের ছোটদের দেখা বারণ ছিল--কারণ ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি বেশ R রেটেড হয়ে উঠত। ঐ খুব চুরি করে জানলা দিয়ে একটু আধটু যা দেখেছি--খুব রাগ ধরত বড়দের ওপর--সবতাতে যে কেন এত না না ছিল, উফ! ... ...